অচিন পাখি
শেষ যেদিন ওদের বাড়ি যাই, হাঁপাতে হাঁপাতে মইনুদ্দীন বলেছিল, "আর পারি না বাবু।
এবার মুক্তি পেলেই বাঁচি।" পাঁজরের ভিতর শীর্ণ
বুকখানা হাঁপড়ের মতো জোরে জোরে ওঠানামা
করছে। রুগ্ন শরীরের মধ্যে কোটরাগত
একজোড়া চোখ শুধু সাঁঝেরবাতির মতো
জ্বলতে থাকে। পঁচিশ বছর বয়সেই তার চেহারা
হয়েছে পঁয়ষট্টি বছরের বুড়োর মতো। মইনুদ্দীন
সিলিকোসিসে ভুগছে। তার বাপও মরেছে এই
রোগেই। পাথর খাদানে কাজ করা শ্রমিকদের
এই মর্মান্তিক পরিণতিতে কারও হেলদোল
নেই।সরকার উদাসীন, মালিক পক্ষ দায়
নেয় না। যারা অসুস্থ তাদের চিকিৎসার
ও ক্ষতিপূরণের দাবীতে সিলিকোসিস
আক্রান্ত সংগ্রামী শ্রমিক কমিটি ও
কয়েকটা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আন্দোলন
করছে বটে তবে তাতে বিশেষ লাভ হয় নি।
দু' একজন ক্ষতিপূরণ পেলেও বেশির ভাগের
অবস্থা শোচনীয়। এ ব্যাপারে নীতি প্রণয়নে
সরকারের প্রবল অনিচ্ছা। ভোট আসে চলে
যায় মইনুদ্দীনরা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে।
সাংবাদিকতার সূত্রে মইনুদ্দীনের সঙ্গে আমার
আলাপ হয় বছরখানেক আগে। ওর কাছেই পাথর
খাদান বিষয়ে অনেক কিছু জানতে পারি।
কত খাদান যে বেআইনিভাবে চলছে তার
ইয়ত্তা নেই। ওদের কিছু করার নেই। মরবে
জেনেও পেটের দায়ে এমন কাজ করতে
বাধ্য হয়। গত ছ'মাসে যেন মইনুদ্দীনের
অবস্থা শোচনীয় হয়ে উঠল। এ' দৃশ্য আর
চোখে দেখা যায় না।। নিশ্বাস প্রশ্বাসে যেন
জানান দিয়ে যায় খাঁচার ভেতর পাখি
মুক্তির আশায় ছটফট করছে। সপ্তাহখানেক
বাদে সন্ধ্যেবেলা কাগজের অফিসে বসে আছি,
মইনুদ্দীনের ভাইটা দৌড়তে দৌড়তে এসে
খবর দিল, "একবার চল বাবু, খাঁচাটো ফেলে
পাখিটো উড়্যান গেল।" শুনে মনটা বড়ো
খারাপ হয়ে গেল। মইনুদ্দীনরা সাম্রাজ্যবাদের
যে মস্ত খাঁচায় বন্দী হয়ে আছে তার থেকে কবে
যে ওদের মুক্তি কে বলতে পারে। যে অত্যাচারিত সে অত্যাচারিত হতেই থাকে হতেই থাকে হতেই থাকে।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।