এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • বইমেলা

    Sayanti Mandal লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৭ মার্চ ২০২২ | ৬১৪ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • #বইমেলা

    বইমেলা এসে গেল। নাহ এবার বই পড়তেই হবে। ঘুম থেকে উঠে ঠিক করে নিলাম রোজ বই পড়ব। বইমেলা যাব । বেশ কিছু বই কিনে রাখব আর সারাবছর বই পড়ব। না না আর ফেসবুক  হোয়াটসআপে সময় নষ্ট নয়। সব লগ আউট করে দেব। জীবনটা আর বেহিসেবি কাটাবনা। আজ থেকে আমি প্রতিজ্ঞা করলাম………ইত্যাদি ইত্যাদি।  তারপর সেই মাহেন্দ্রক্ষণ এসে উপস্থিত হয়। বইমেলা ঢোকার সাথে সাথে নিজেকে বেশ একটা আঁতেল আঁতেল মনে হয়। অনেকটা এরকম হু হু বাবা আমি ওসব খাদ্যমেলা ,বস্ত্র মেলাতে যায়না। একটা মেলাতেই যায় ।সেটা বইমেলা। আশেপাশের লোকজনের থেকে নিজেকে মনে করি বেশ বিজ্ঞ টাইপ।তারপর বেশ গুরুগম্ভীর ভাব নিয়ে বুকস্টল গুলতে ঢুকি। গভীর ভাবে বইগুলো পর্যবেক্ষণ করি । উলটে দেখি ,যেন একবার উলটে দেখলেই আমি বইটার ভালো মন্দ বুঝে যাব। মাথা নেরে সরে যায় পরের সারিতে। ভাবটা এই ,ঠিক সেরকম দরের বই নয় এগুলো। আশেপাশের লোকজনের দিকে আরচোখে দেখে নি মাঝে মাঝে। কে কি বই কিনছে। মনে মনে ভাব হু হু এই বই কিনল। আমি  বাবা সেরাটা কিনব।বেশ কিছু ভারি বই হাতে তুলে  উলটেপাল্টে দেখি।যেন ভারি বই হল আসল বই। চুপিসারে দামটা দেখে নি। নাহ পকেটের দৌড় অত হবেনা। বিজ্ঞের মতো মাথা নারতে নারতে বইটা যথাস্থানে রেখে দিই। এইভাবে বেশ কিছু স্টল পেড়োই। যে সে স্টল থেকে আমি বই কিনব না বাপু । আনন্দটা কোনদিকে যেন।ততক্ষণে অনেকটা সময়ও পেড়িয়ে গেছে। তখনো একটাও বই কেনা হয়নি। না এবার এস্পার কি ওস্পার। বইমেলা এসে বই না কিনে যাওয়া যায়…।যাক এবার নিশ্চিন্ত ।সেরা সংকলন, দামটাও বেশ কম। এবার একটু বইমেলার খোলা মাঠে দাঁড়িয়ে মেলাটা দেখা যাক।খাবার দোকানগুলো কোথায় যেন। বাড়ি ফিরে তো সেই রোজকার মেনু। মুখটা একটু ছাড়িয়ে নেওয়া যাক। সেরা সংকলনটা না নিয়ে সেরা রহস্যটা নিলে ভালো হত কি ।যাক   যা হয়েছে। পরের বার ঠিক করে কেনা যাবে।

    ছোটবেলায় বাড়িতে ছিল রবীন্দ্ররচনাবলী,শরতরচনাবলী ,মহাভারত।  মধ্যবিত্ত  বাঙালি পরিবারে এর বাইরে বিশেষ কোন বই রাখার  চল ছিল না। আমরা তাই বয়েস হবার অনেক আগেই এসব পড়ে ফেলেছিলাম। মর্ম বুঝি বা নাই বুঝি। এখনকার মতো তখন ছেলেমেয়েরা ইছছে মতো গল্পের বই কিনে পড়তে পারত না। বছরে একবার বইমেলা থেকে  গল্পের বই কেনা হত, তাও খুব সিলেকটিভ গুরুজনদের গাইড লাইন মেনে কিছু গল্পের বই কেনা হত।  হয়ত সারাবছরের জন্য একটি গল্পের বই জুটত । সেরা ভুতের গল্প বা মজার গল্প। সেটাই যে কতবার পড়তাম। আর একটা বই পাবার উপায় ছিল। বার্ষিক পরীক্ষাতে কিছু একটা হলে। তবে স্কুল থেকে যে বই দেওয়া হত সেটা এইরুপ… বিজ্ঞানের  সেরা চরিত্র ,মনিষীদের কথা । সেটা ঠিক গল্পের বই পর্যায়ে পড়ত না। রবিবারের কাগজ ছিল একমাত্র গল্প পড়ার জায়গা।আর কমিক্স বলতে রোজকার কাগজের যে ধারাবাহিক অরন্যদেব আর জাদুকর ম্যানড্রেক।হ্যাঁ পূজাবার্ষিকী শুকতারা বা আনন্দমেলাটা নিয়ম করে বছরে কেনা হত। সেখান থেকেই পরিচয় ,কাকাবাবু সন্তুর সাথে,পাণ্ডব গোয়েন্দা,কিকিরা,অর্জুন এদের সাথে। সাথে সেই সব লেখকদের ………বিমল কর, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার ,  শীর্ষেন্দু  মুখোপাধ্যায়।পরবর্তীকালে যাদের লেখার পরিধি মুগ্ধ করেছে ।একটু সচ্ছল বন্ধু বান্ধবদের বাড়িতে দেখতাম আনন্দমেলা ম্যাগাজিন থাকত। ভীষণ লোভনীয় ছিল সেসব। একটু বড় যারা তাদের বাড়িতে দেশ পত্রিকা আসত। সেসব কখনো কখনো লুকিয়ে চুরিয়ে পড়িনি এমন নয়। তবে গল্পের বইএর জগতটা অধরা ছিল।

    বড় হবার পর সেই জগতে মুখ বাড়িয়েছি। বাংলা সাহিত্যের কথাই যদি ধরি  তার যে কি বিশাল ব্যপ্তি। সেটা পুরোপুরি কখনই কারো পক্ষে ধরা সম্ভব নয়। বইয়ের জগতটা এতটাই বিস্তৃত  সেটা জানাও একজন মানুষের সারাজীবনের পক্ষে কম। বই পড়া তো দূর অস্ত।অসংখ্য লেখক লেখিকা, সাথে অসংখ্য প্রকাশনী সংস্থা । নিরলস পরিশ্রমে তারা সারা বছর বই লিখে চলেছেন,প্রকাশ করে চলেছেন। বইমেলা সেই অর্থে তাদের ব্যবসার ক্ষেত্র। বেশির ভাগ  বাঙালি বই পড়েনা। সারাবছর তো নয়ই।বই কিনে পড়তে হলে আরও কষ্ট হয়।শুধু বইমেলাতেই তারা আসে ,বই কেনে । পড়ে কিনা সেটা খোঁজ নেওয়া হয়না। তবে প্রকাশনা সংস্থাগুলি এই সময় একটু হলেও লাভের মুখ দেখে। আর লেখক লেখিকারা তাদের পারসেন্টেজ  পায় একটু বেশি।  বইমেলাতে অসংখ্য নতুন বইও প্রকাশ পায়। কিছু তো তার বিক্রি হয়। সব হয়ত হয়না। নামিদের লেখক লেখিকাদের কথা বাদ দিলাম।তাদের বই এমনিও বিক্রি হয়। অনামিরা এই বইমেলাতে একটু হলেও প্রানের বাতাস পায় । শুধু নামী প্রকাশক নয় অনামি প্রকাশকও খাতা খুলতে পায়। এই বা কম কি।

    বড় হয়ে চাকরি পাবার পর নিজের পছন্দ মতো বই কিনতে শুরু করি। গল্প উপন্যাস আত্মজীবনী সব কিছুর সাথে পরিচয়  করতে থাকি। ছোটো বেলার না পড়তে  পাওয়া বই ও পড়ে  ফেলি।পরিচয় হয বাংলার  বিখ্যাত সব লেখক লেখিকাদের  কালজয়ী লেখার সাথে।কখনো কোন বই মনকে অসম্ভব নাড়া দেয় আবার বহুল প্রচারিত বই সেভাবে মন ছোঁয়না। বইয়ের থেকে ভালো সোশ্যাল মিডিয়া এখনও হয়নি।না পড়লে জানা যায় না এই বিশ্বাসটা কখন অজান্তে মনের গভীরে ঢুকে গেছে।সারাবছরই খুঁজে খুঁজে বই পড়া চলতে থাকে। বইমেলা এখন তাই অন্য ভাবে আসে । একসাথে এতো বই দেখার একটা লোভ সামলাতে পারি না। সব বই বাড়ি আনার ক্ষমতা আমাদের কারো নেই । তাই দর্শনেই মনের সুখ । গল্পের বই অবশ্যই এখনও মনকে টানে।তবে বিষয়ভিত্তিক লেখা  বেশি টানে। যদিও সেটা ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়।তবে ফেসবুক বা অন্য সোশ্যাল মিডিয়ার একটা ভূমিকা ইদানিং বইমেলা বা বই বিক্রি ক্ষেত্রে সদর্থক ভূমিকা নিচ্ছে।সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচারের ফলেই বহু নতুন লেখক লেখিকা আজকাল আমাদের কাছে পরিচিতি। বই প্রকাশ কালে প্রকাশক সংস্থাগুলি অনেকেই আজকাল নিয়মিত সোশ্যাল মিডিয়াতে তার প্রচার করে। সাথে লেখক লেখিকার । যেহেতু একটা বিশাল সংখ্যক লোক এই মিডিয়ার সাথে যুক্ত তাই তাদের কাছে  পৌঁছানোর একটা উপায় হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা আজ অনস্বীকার্য। তবে বহু ভালো লেখা আর তার লেখক লেখিকারা প্রচারের আড়ালে রয়ে যাচ্ছে। যাদের সাথে বর্তমান প্রজন্ম অপরিচিত থেকে যাচ্ছে। দিনের শেষে বই পড়তে হবে। ভালো মন্দের বিচার পাঠকই নির্ধারণ করবে।

    যাইহোক বইমেলা গিয়ে একটা সেলফি তুলে নিলাম। সোশ্যাল মিডিয়া তে পোস্ট করতে হবে। সাজটা আজ একটু স্মার্ট  যাতে হয় সেটাও খেয়াল রাখতে  হয়েছিল।একটু      ইন্টেলেকচুআল লূক আর কি।সাথে হ্যাস ট্যাগ টু ডে ইন বইমেলা। ইংলিশটাই বেশি ক্যাচি।আশা করছি ভালোই লাইক আসবে। বইটা না হয় ধীরে সুস্থে পড়া যাবে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Neptune_Pluto | 103.221.255.242 | ১২ মার্চ ২০২২ ০১:৪৩504830
  • বেশ মজার লেখা ...
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত মতামত দিন