এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • অনন্যা নারী 

    Sayanti Mandal লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ৭২৭ বার পঠিত
  • পর্ব ৩ 

    রেজিস্ট্রি অফিস থেকে বেরতে জয়িতাদের সন্ধ্যে হয়ে গেলো। জয়িতার একটা হাত অর্ণবের মুঠোতে ধরা। জয়িতা যে এখনও ঠিক স্বাভাবিক হতে পারে নি সেটা বোধহয় অর্ণব বুঝতে পেরেছিল। জয়িতা একটা লাল বেনারাসি পড়েছে। হালকা কিছু গয়না। অর্ণব পাজামা পাঞ্জাবি। তনিমাই জোর করে পড়িয়েছে। গলার মালাটা খুলে হাতে নিয়েছে জয়িতা। অর্ণব নির্বিকার। মালা তার গলাতেই শোভা পাচ্ছে।

    এম এ ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে গতসপ্তাহে। অর্ণব আগেই প্রস্তাব দিয়েছিল। জয়িতাই এড়িয়ে যাচ্ছিল। বাবা মা কে কিছুই জানানো হয়নি। এভাবে কিছু করতে জয়িতার মন ঠিক সায় দিচ্ছিল না। কিন্তু অর্ণবের ডাকে সাড়া না দিয়েও কি জয়িতা পারত। ফাইনাল ইয়ারের শেষ কয়েকটা মাস অর্ণবের সাথে সম্পর্ক অন্য মাত্রা পেয়েছে। দুজনে দুজনকে না দেখে একটা দিনও থাকতে পারে না। তবু এতটাও জয়িতা ভাবে নি। অর্ণব বিয়ের কথা তুললেই বলত, “আচ্ছা বিয়ে তো করবে, বউকে খাওয়াবে কি?” অর্ণব নির্বিকারে উত্তর দিত, “কেন এখন আমি যা খাই তাই খাবে”। জয়িতা বুঝিয়ে পারে না বিয়ে তো শুধু খাওয়া নয়, তার সাথে যে একটা সংসার লাগে। নিদেন একটা বাসস্থান। বাবা মা  হয়ত ফেলে দেবে না, কিন্তু সেটা যে কোন সমাধান নয় সেটা জয়িতা অর্ণবকে বোঝাতে পারে না। অর্ণবের নিজের সে সমস্যা নেই। কলকাতায় সে হোস্টেলে থাকে। অর্ণবের মা থাকে শান্তিনিকেতনে। “মা তো খুশিই হবে তোমাকে দেখে” - অর্ণবের অকপট উক্তি। জয়িতা চুপ করে শুধু ভাবে। সংসার করতে গেলে যে অনেক কিছু লাগে। সেটাই জয়িতা বলেছিল, “একটা চাকরি না পেলে…”।
    জয় একটা ট্যাক্সিকে হাত দেখিয়ে দাঁড় করাল। তারপর সবাইকে তাড়া দিয়ে তুলে দিল। জয়িতা অর্ণব তনিমা পিছনে, জয় সামনে। ড্রাইভারকে লক্ষ্য করে জয় বলল, “চেতলা চলিয়ে”।
    - একবার বাড়ি গেলে হতো না? জয়িতা অস্ফুটে বলতে চেষ্টা করলো।
    - তোর মা বাবা তোর জন্য ওয়েলকাম ফ্লাওয়ার নিয়ে অপেক্ষা করছে? ন্যাকামো রাখ। কাল গিয়ে পায়ে পড়ে যাস। জয় ফুট কাটে।
    - কাকিমা যা রাগি, আমার তো বেশ ভয় হচ্ছে। তনিমা বলে ওঠে।
    জয় আর তনিমা জয়িতাদের বিয়ের বর আর কনে পক্ষের সাক্ষী।
    অর্ণব এতক্ষণ চুপ করেই ছিল। এবার মুখ খুলল।
    - দেখ তুমি যখন বলো নি আগে তখন কি হবে আর ভেবে লাভ নেই। যে রকম রিয়াকশন হবে মেনে নিতে হবে। আগে চেতলা চলো। ওখানে গিয়ে ধীরে সুস্থে চিন্তা করা যাবে কি কর্তব্য। তোমার পাল্‌স যে রেটে চলছে, আগে একটু থিতু হওয়া দরকার।
    - হাঁ এখনও মেইন পার্টই তো বাকি। ভোজন ছাড়া কি অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।
    - সে সব পরে একদিন হবে। অর্ণব জয়কে থামিয়ে দেয়।
    - ধুর, তুই ব্যাটা আর পরে খাইয়েছিস।
     
    জয়িতা গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের রাস্তা দেখে। কোনো কথা তার যেন ঠিক মাথায় ঢোকে না। শুধু এক অপরাধবোধ ভিতরে ভিতরে ডুকরে যায়। বাবা মা কে সে বিশেষ কাছে পায় নি ঠিক। শান্তিপিসি, তার আয়াই তাকে সারাদিন দেখত। তবু মা হসপিটাল থেকে ফিরলেই যেন মনটা খুশি হয়ে যেত। বাবার ফিরতে আরও একটু দেরি হত। রাত্রির খাবার তারা একসাথেই খেত। জয়িতা সারাদিনের কথা বকবক করে যেত। মা বার বার থামিয়ে দিয়ে বলত, “আগে খেয়ে নাও তুলি”। জয়িতার বাড়ির নাম তুলি। বড় হবার পরও এই অভ্যাসটা জয়িতার যায় নি। আজ কি মা বাবা তাকে খাবার টেবিলে না দেখে চিন্তিত হবে না? কি করবে তারা তখন। চোখ দিয়ে সকলের অলক্ষ্যে জল গড়িয়ে যায়।
    চেতলার ফ্ল্যাটটা ভাড়া নেওয়া হয়েছে। এক কামরার ছোট ফ্ল্যাট। ডাইনিং, কিচেন, একফালি বারান্দাও আছে। জয়ই খোঁজ দেয়। এখানেই জয়িতাদের নতুন সংসার পাতা হবে। অর্ণবরা আগে এসে টুকটাক সাজিয়ে গেছে। আনাড়ি সবাই। তবু তার মধ্যে যেটুকু পেরেছে।
    - নতুন জীবনের নতুন গৃহে গৃহলক্ষ্মীকে স্বাগত। জয় কাব্য করে। তনিমা হাত ধরে নিয়ে যায় জয়িতাকে। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখায় সব। বেডরুমে এসে কানে কানে বলে, “এবার নিজের বর কে নিজের করে নে”। পিছন পিছন জয় আর অর্ণব আসছিল। জয়িতা তাই উত্তর দিল না। 
    - কি ফ্ল্যাট পছন্দ হয়েছে তো? অর্ণব জিজ্ঞেস করে।
    জয়িতা ঘাড় নারে।
    - বাবা এই টাকায় এর চেয়ে ভালো ফ্ল্যাট কলকাতা শহরে থাকলে আমি কান কেটে ফেলব। জয়ের স্বদরভ উক্তি। “এবার একটু চা না হলে চলছে না। তানিমাদেবী কি কৃপা করবেন, না এই অধমকেই সে পার্ট নিতে হবে?”
    - আমিই যাচ্ছি। তনিমা ভ্রূকুটি করে জয়ের দিকে। তারপর রান্নাঘরের দিকে চলে যায়।
    - আমি যাই তোর সাথে।
    - কোন দারকার নেই ম্যাদাম। আপনি আপনার বরের সাথে গল্প করুন। বলে তনিমা চলে যায়।
    অর্ণব খাটে গা এলিয়ে দেয়। জয় একটা চেয়ার দখল করে বসে। জয়িতা জানালার কাছে এসে দাঁড়ায়। বাড়ি ফিরে মা তাকে না দেখলে শান্তিপিসিকে জিজ্ঞেস করবে। তারপর যত রাত্রি হবে ……জয়িতা আর ভাবতে পারল না। একটা ভয় ভিতরে কাজ করছে তার, কিন্তু বলতে পারছে না।
    রাতের খাবার বাইরে থেকে আনা হয়েছিল। জয়িতা কিছু খেতে পারে নি। যত রাত্রি হচ্ছে তত তার এক চিন্তা আকরে ধরছিল। জয় তনিমা চলে যাবার পর জয়িতা চুপ করে খাটের এক কোনে বসে ছিল। অর্ণব এসে তার পাশে বসল। জয়িতার একটা হাত নিজের হাতে নিয়ে বলল
    - আমি তোমার কাছে ঋনী জয়ি।
    জয়িতা অবাক হয়।
    - কিসের ঋণ? জয়িতা জিজ্ঞেস করে 
    - আমাকে তোমার উপযুক্ত ভাবার জন্য।
    জয়িতা কোন উত্তর দেয় না। মাথা নিচু করে থাকে।
    - কি হয়েছে জয়ি। তুমি কি…?
    জয়িতা আর কান্না আটকে রাখতে পারে না।
    - মা বাবা না জানি কি অবস্থায় আছে। আমি কিছুতেই পারব না এভাবে।
    অর্ণব এক মুহূর্ত স্থির হয়ে থাকে। তারপর উঠে পরে । জয়িতাকে হাত ধরে খাট থেকে টেনে নামায়। তারপর গম্ভীর হয়ে বলে
    - চলো তোমার বাবা মা কে দেখা দিয়ে আসি।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • dolon | 2a00:23c5:7701:c501:3478:6fc6:8f0c:18c2 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০০:১৭503812
  • অনন্যা নারী  কেন? এই কাহিনীর নায়িকা অর্থনৈতিকভাবে সমর্পূণ ভাবে পরনির্ভরশীল , মানসিক ভাবে বালিকা সুলভ , অন্তত তাই মনে হয়। নিজের ভরনপোষন এর জন্য ভাবী স্বামীর চাকরীর মুখাপেক্ষী , যদিও নিজে একই মাত্রার শিক্ষার সুবিধা পেয়েছেন কিন্তু নিজে কিছু উপার্জনের কথা ভাবেন নি  যেটি "অনন্যা " হলে  ভাবা যেত  । বিয়ের রাতে বাবা মার "অনুমতি " চান  যেটি মনেহয়েছে বাবা  মার আর্থিক স্বাচ্ছল্য ( বাবা মা  কে পেশাদারবলে দেখানোহয়েছে ) যাতে পুরোপুরি না  হারায় তার পথ খোলারাখার চেষ্ঠটা ধরেরাখা. 
    নায়কের ভূমিকা খুবি অষ্পষ্ট , তবে সেটা লেখিকা হয়তো সেভাবেদেখাতে চাননি .
    আমার কাছে নায়িকা একেবারে sadharn, অবশ্য সবাই যে অসাধারনহতেই অসাধারন কিছুকরতে হবে তাও নয়। সাধারণ পাঠক হিসেবে সাধারণ জীজ্ঞাসা মাত্র। লেখাটি পড়তে খারাপ লাগেনা 
  • Sayanti Mandal | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৫:১৬503844
  • লেখাটি  পড়ার  জন্য ধন্যবাদ। নারী সে যতই  সাধারণ হোক সে অনন্যা ই আমার  মত।পাঠক এর ভিন্নমত ও আমার কাছে সমান ভাবে স্বাগত। খুব ভালো  লেগেছে যে  এতটা  ভেবেছেন। লেখাটিশেষ  করার  অনুরোধ  রইল।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন