সানি ডিসুজা অফিসিয়াল প্রোটোকল মেনে তাৎক্ষণিক কোন সিদ্ধান্ত দিলেন না। দিল্লীতে ফিরে কমিটিতে আলোচনার পর নির্বাচনের ব্যাপারে নিয়মমাফিক সিদ্ধান্ত জানাবেন। সাধারণ বুদ্ধি বলে, প্রাথমিক স্কোয়াডে শুভর নির্বাচনে কোন দ্বিমত থাকার কথা নয়। তারপর সামনের অলিম্পিকের জন্য তাদের ক্যাম্পিং এবং ট্রেনিং সেশান চলবে। ডিসুজা এবং সুরিন্দর পরের দিন সকালের ফ্লাইটে ফিরে গেল।
যাবার আগের দিন রাত্রে ফোনে কথা হল সুরিন্দরের সঙ্গে স্পন্দনের। সুরিন্দর বলল, ‘আমরা কাল সকালে ফিরে যাচ্ছি। তারপর দেখা যাক কি হয়। রেশানাল ভিউতে দেখলে ছেলেটার সিলেকশান তো ইউন্যানিম্যাসলি হওয়া উচিৎ। কালকের ট্রায়ালের ভিডিও-ও তো করা হয়েছে। সো ইট শুড বি অল ভেরি স্মুথ। বাট, স্পন্দন ইউ মাস্ট বি ভেরি মাচ অ্যাওয়্যার দ্যাট দেয়ার আর মেনি আ স্লিপ বিটুইন দা কাপ অ্যান্ড দা লিপস। ইউ আর এক্সপিরিয়েন্সড এনাফ উইথ অল দোজ স্ন্যাগস ব্রাদার ..... হা: হা: হা:। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে শুভ যদি সিলেক্টেড না হয় সেটা ন্যাশানাল লস .... উই আর নো পার্টি ইন দিস। ওয়েল লেটস কিপ আওয়ার ফিঙ্গারস ক্রসড .... আই উইল ফায়ার অন অল সিলিন্ডারস, ডোন্ট ওয়ারি .... দেখা যাক কি হয়।’
আর কথা বাড়ায় না সুরিন্দর। ‘ওকে, গুড নাইট’ বলে ফোন ছেড়ে দেয়।
স্পন্দন সবই বুঝতে পারছে। সে জানে আমাদের দেশের দুর্বল পরিকাঠামোর একটা অন্যতম কারণ হচ্ছে ‘ম্যানিপুলেশান’। পাঁচজন নির্বাচক বিভিন্ন প্রদেশের। তাদের ভেটো পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়। তারা প্রত্যেকেই যে যার নিজের প্রদেশের ছেলে ঢোকাবার চেষ্টা করে। ক্রিকেট বা ফুটবলেও এটা হয়। কিন্তু ওই খেলাগুলোয় প্লেয়ারদের পারফরমেন্স জনগনের চোখের সামনে থাকে। তাই অতটা বাড়াবাড়ি করা যায় না। কিন্তু অ্যাথলেটিক্স-এর অন্দরের খবর তো কোন সাধারণ লোক রাখে না। তেমন পাবলিক এক্সপোজার নেই। তাই এখানে বলতে গেলে পুকুর চুরি হয়। টাকাপয়সার লেনদেন হয় বলেও শোনা যায়।
স্পন্দন শুভকে এক সপ্তা নিজের কাছে রাখল। রোজ সকালে মাঠে নিয়ে গিয়ে স্টপ ওয়াচ হাতে রেখে ট্রেনিং করাল। শুভ একশো মিটার মোটামুটি বারো পয়েন্ট পাঁচ ছয় সেকেন্ডে দৌডচ্ছে। ওটা যে করেই হোক এগারো সেকেন্ডে নামিয়ে আনতে হবে। সিলেকশান কমিটির মিটিং এখনও হয় নি। খবর পেয়েছে ডিসুজা নানা অজুহাতে গড়িমসি করছে। কি মতলব আছে কে জানে। স্কোয়াডে ঢুকতে না পারলে স্পনসরের খোঁজ করা যাবে না।
পাঁচদিন কেটে গেল। দিল্লী থেকে সিলেকশানের খবরটা পাওয়া খুব জরুরী। শুভকে এখন মধ্যমগ্রামে রেখে আসবে কিনা বুঝতে পারছে না স্পন্দন।
সন্ধে ছটা নাগাদ সুরিন্দরের ফোন এল। সুরিন্দর বলল, ‘কাল দুপুর একটায় সিলেকশান কমিটির মিটিং আছে। সিলেকশানের ব্যাপারে ওখানেই চরম সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমি এখন দিল্লীতেই আছি। মিটিং শেষ করে জলন্ধরে ফিরে যাব। মিটিং-এর আউটকাম আমি তোকে মেল করব। ফোনও করব। লেটস হোপ ফর দা বেস্ট.... ‘
আজকের দিনটা এমন সাজে বেরিয়ে এল যে ‘শরৎ তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি ....’ গানটা বেজে উঠতে চায় মনে মনে। বাতাসে হেমন্ত ঋতু সুর ভাসাচ্ছে। বিকেলের পর আলো বিষণ্ণতায় বিধূর হয়ে যায়। দিন অনেক ছোট হয়ে গেছে। আলো মরে আসছে বিকেল পাঁচটা বাজলেই।
ধর্মতলার মোড়ে কে সি দাসের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল স্পন্দন বাস ধরার জন্য। এসপ্ল্যানেড ট্রাম ডিপো থেকে বারো নম্বর ট্রাম বেরোচ্ছে গজেন্দ্র গমনে লেনিনের মূর্তির সামনে দিয়ে। এই এসপ্ল্যানেড ট্রাম ডিপোয় ট্রামের সিটেই পায়েলের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। স্পন্দনের বেশ মনে আছে বছর বারো আগেকার সেই বিকেলটাও ছিল শরৎ ও হেমন্তের সন্ধিবেলা। মনোরম আবেশে ভরা ব্যস্ত, কোলাহলমুখর ধর্মতলা। কি আশ্চর্যের ব্যাপার, পরপর দুদিন একই ট্রামের একই সিটে দুজনের দেখা হয়ে গেল। একেই বোধহয় বলে ভবিতব্য। যার সঙ্গে যার গাঁটছড়া বাঁধা আছে ....। সিটের জানলার ধারে স্পন্দন বসে ছিল। কি বিচিত্র সমাপতন !
ঠিক আগের দিনের মতোই তার পাশের আর একজনের বসার জায়গাটা ফাঁকা পড়ে ছিল যেন পায়েলের এসে বসার জন্য। সিটে পায়েল বসার পর দুজন দুজনের দিকে ভীষণ অবাক হয়ে তাকাল। তারপর কি জানি কেন দুজন দুজনের তাকিয়ে হেসে ফেলল। সেই দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলাটা আজও থেকে গেছে। সবই ভবিতব্য । তার জীবনে পায়েলকে এনে দেওয়ার জন্য নিয়তির কাছে স্পন্দন পরম
কৃতজ্ঞ। পায়েলকে তার উত্থান পতন সংকুল জীবনে বিরাট প্রাপ্তি বলে মানে সে। বিয়ের বছর পাঁচেক পরে স্পন্দনের মা এবং বাবা দুজনেই মারা গেলেন। স্পন্দনের বোন ভগ্নীপতি থাকে ভাইজাগে।
আকাশ আজ মেঘের সাথে খেলছে। যেন সুর খেলছে হাওয়ায় হাওয়ায়। সে কত বছর হয়ে গেল। ত্রিচুরাপল্লীতে এক জনমানবশূন্য স্টেডিয়ামে আটশো মিটারের শেষ ল্যাপ টানছে স্পন্দন। মাত্র দু মিটার আগে ছ নম্বর লেনের রানার এক টানে তাকে ফেলে বেরিয়ে গেল। আর মাত্র দু মিটার বাকি ছিল, শুধু দু মিটার। ট্র্যাকের বাইরে বেরিয়ে গিয়ে কেঁদে ফেলল স্পন্দন। বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশানের সেক্রেটারি বিপুল ব্যানার্জি তার বিপুল বুকে স্পন্দনের মাথা চেপে ধরেছিলেন। বললেন, ‘ভেরি ওয়েল ডান মাই সান .... এক্সেলেন্ট পারফরমেন্স ... ভেঙে পড়ো না.... নেক্সট টাইম নিশ্চয়ই হবে।’
সেই ‘নেক্সট টাইম’ তার জীবনে আর আসেনি। একজন অ্যাথলিটের জীবনে একবছর সময় অনেক সময়। প্রতিটি সপ্তাহ মূল্যবান। মাসলগুলোকে কন্ডিশানে রাখা খুব কঠিন কাজ। মাসল-এর প্রতিক্রিয়ায় সেকেন্ডের ভগ্নাংশ দেরি হলে হার অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে। মাসল-এর বয়স কখনও বসে থাকে না। সে কারও অজান্তেই ক্রমশ জীর্ণ হতে থাকে পলে পলে।
এখন তার স্বপ্নের নৌকো শুভ। নৌকো না বলে জাহাজ বলাই ভাল যে যোজনবিস্তারি সাগরজলে পাড়ি দেবে দূর .... বহুদূর। তার আর কোন লোভ নেই। সে শুধু ভাসিয়ে দিতে চায় এই জাহাজখানা বিপুল সাগরজলে। স্বপ্নমাখা চোখে তাকিয়ে থাকে সে ভাবনার দূর দিগন্তের দিকে চেয়ে।
পায়েল স্পন্দনের মুখের দিকে তাকালেই বুঝতে পারে কদিন ধরে তার একান্ত আত্মমগ্নতার কারণ। শুভর নির্বাচিত হওয়া না হওয়া এই মুহুর্তে তার জীবনের একমাত্র বাজি। সে বুঝতে পারে, যতদিন না ব্যাপারটার ফয়সালা হচ্ছে ততদিন স্পন্দনের এই তন্ময়ভাব বদলাবে না। কিন্তু শুভ যদি সিলেক্টেড না হয় !
পায়েল শুভর সঙ্গে অনেক গল্প করে। তার পাড়া, গ্রাম, বাবা, পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়া মা, প্রতিবেশী লোকজন, তৃপ্তি হোটেল, ভ্যানকিক্শা, ব্রজেন বক্সী ..... এইসব কত কথা বলে শুভ। পায়েল তার চেনা জানা জীবনের চৌহদ্দির বাইরের নানা বৃত্তান্ত শুনতে শুনতে আকুল বিভোর হয়ে যায়। কত মানুষ, কত কথা, কতরকম জীবন...... এই জীবনের কতরকম দৌড়। কত রকমের জিত, কতরকমের হার।
আকাশ আজ লাগাতার খেলছে সাদা খরগোশের মত ইতিউতি হেঁটে বেড়ানো মেঘগুলোর সাথে। স্পন্দন সকাল সাড়ে নটায় অফিসে বেরিয়ে গেল।
আজ দিল্লীতে সিলেকশান কমিটির মিটিং বসার কথা দুপুরবেলায়। সুরিন্দরের ফোনের জন্য অপেক্ষা করে করে শেষ পর্যন্ত রাত আটটা নাগাদ দুরু দুরু বুকে মেলের ইনবক্স খুলল স্পন্দন। প্রায় দু ঘন্টা আগে এসে গেছে সুরিন্দরের মেল। স্পন্দনের হৃদস্পন্দন দ্রুততর হতে হতে একসময়ে শান্ত হয়ে গেল।
‘শুভ নস্কর নট সিলেক্টেড ......’
মেলের মূল বক্তব্য হল, শুভ নির্বাচিত না হওয়ার কারণ — ‘হি ইজ ক্লিয়ারলি আন্ডারএজ’ এবং ‘সিমিংলি আনডারওয়েন্ট সাম কাইন্ড অফ স্টিমুল্যান্ট এজেন্ট কনসামপশান অ্যাজ অ্যাপিয়ারড ফ্রম হিজ সুপারলেটিভলি এনার্জাইসড পারফর্মেন্স হুইচ শুড হ্যাভ বিন সাবজেক্ট টু প্যাথলজিক্যাল ডোপ টেস্ট বাট কুড নট বি ডান ফর সাম আনঅ্যাভয়েডবল সারকামস্ট্যান্সেস .....’
স্পন্দন বুঝতে পারল সুরিন্দর কেন ফোন করে নি। আসলে সে ভীষণ লজ্জায় বিড়ম্বিত বোধ করেছে।
স্পন্দন স্থির চোখে মনিটরের স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে বসে ছিল শ্রান্তির ভারে চেয়ারে শরীর এলিয়ে দিয়ে। সে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই আর একটা মেল ঢুকল ইনবক্সে। সুরিন্দর পাঠিয়েছে।
সুরিন্দর যা লিখেছে তা বাংলা করলে দাঁডায় — আমি নির্বাচক কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছি। রেজিগনেশান লেটারের কপি অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনেও পাঠিয়ে দিয়েছি। পাঁচজন সিলেক্টরের মধ্যে তিনজনই ডিসুজার পক্ষে ভেটো দিয়েছে। একজন, মানে ইস্ট জোনের প্রতিনিধি, কি জানি কোন অজ্ঞাত কারণে অনুপস্থিত ছিল। যারা স্কোয়াডে ঢুকল তাদের টাইমিং মোটেই ভাল নয়। বলছি না নির্বাচনে প্রাদেশিকতা আছে বা ফিনান্সিয়াল ইনভলভমেন্ট আছে।কিন্তু আমি এরকম জলজ্যান্ত অন্যায় মেনে নিতে পারিনি। শেষ পর্যন্ত ফাইট করেছিলাম। কিন্তু কিছু করতে পারি নি। আমি পরে তোকে ফোন করব। ডোন্ট টেক প্রেসার। আমি কিন্তু এর শেষ দেখে ছাড়ব। দেশের জাতীয় সম্মান জড়িত আছে এতে। আমি মনে করি শুভ ইজ শিওর টু ইমার্জ টু বি অ্যান অ্যাসেট ইন রানিং ট্র্যাক। শুভরাত্রি’।
‘রেট ইজ নো ইস্যু’ — সুখসাগর হোটেলে রাত্তিরবেলায় সিঁড়ির মুখে দাঁড়িয়ে থাকা কালো কুর্তি পরা ফর্সা মতো মেয়েটার কথা মনে পড়ল স্পন্দনের।
রাত্রে স্পন্দনরা তিনজন এবং শুভ এক টেবিলে খেতে বসেছিল।
স্পন্দন চুপচাপ খাবার নিয়ে নাড়াচাড়া করছিল। তার চোয়াল কঠিন হয়ে উঠেছে। মনে মনে কি যেন বিড়বিড় করছে।
পায়েল বলল, ‘তুমি এত চিন্তা করছ কেন? তুমি নিজেই তো বল অনলি স্কাই ইজ দা লিমিট। দেয়ার আর সো মেনি আদার ওয়েজ টু কনকার।’
স্পন্দনের তন্ময়তা ভেঙে গেল। সে মুখ তুলে তার জীবনতরীর কান্ডারী পায়েলের দিকে তাকিয়ে রইল একদৃষ্টে। শুভ আপনমনে খেয়ে চলেছে। এ সব ব্যাপারের জটিলতা তার সহজ সরল মস্তিষ্কে ঢুকছে না। সে শুধু দৌড়তে পারে । সে দৌড় সুরিন্দরের কথায় ‘ইন্সটিকটিভ’। সে দৌড় কি কেউ থামিয়ে দিতে পারে !
পায়েল বলল, ‘শুভর জন্য বিদেশে চেষ্টা কর না।’
অবাক বিস্ময়ে স্পন্দনের মুখ দিয়ে বেরিয়ে যায় — ‘বিদেশে!’
— ‘ওই যে .... তোমার মুখেই শুনেছিলাম সুইডেনের কোন অর্গানাইজেশান প্রমিসিং ইয়াং অ্যাথলিটদের গ্রুম করে, তারপর সবচেয়ে ভালোদের ইন্টারন্যাশনাল লেভেলে প্রেজেন্ট করে টু গেট দেম প্রপারলি রিক্রুটেড ইন দেয়ার ন্যাশানাল স্কোয়াড।’
— ‘ও মাই গুডনেস .... হোয়াট আ গ্রেট লেডি মাই পার্টনার ইজ !’
স্পন্দন শক্ত চোয়াল নরম হয়ে আসে। সেই আগের মতো দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল। কি ভেবে কে জানে ওদের আট বছরের ছেলে সান্টুও হাসতে লাগল।
শুভ পরম তৃপ্তিতে খাবার চিবোতে চিবোতে সরল চোখে একবার পায়েলের দিকে একবার স্পন্দনের দিকে তাকাতে লাগল। তাকে নিয়ে কি যে হচ্ছে কিছুই তার মাথায় ঢুকছে না।
*********** ***************
নেট সার্চ করে স্টকহোমের বেসরকারি অ্যাথলেটিক উন্নয়ন সংস্থা ‘গ্লোবাল নার্সারি ফর অ্যাথলেটিক্স’ , এককথায় ‘জি এন এ’- এর ওয়েবসাইট খুঁজে পেতে কোন অসুবিধে হল না। জানা গেল ভারতেও ওদের প্রতিনিধি আছে। ওখানে অ্যাডমিশানের সুযোগ পেতে গেলে প্রবেশিকা পরীক্ষা, মানে ট্রায়াল দিতে হবে। সে ট্রায়াল অবশ্য ইচ্ছুক অ্যাথলিটের নিজের দেশেও হতে পারে। কিন্তু ট্রায়ালের বাধা অতিক্রম করতে গেলে যে সব মাপকাঠি পেরোতে হবে তা নি:সন্দেহে অত্যন্ত কঠিন এবং প্রতিযোগিতামূলক। যোগ্য বিবেচিত হলে তাকে কিন্তু স্টকহোমে ওদের ক্যামপাসে গিয়ে অন্তত একবছর থাকতে হবে। কিন্তু স্পন্দন অসীম সাগরজলে দূর দিগন্তের উদ্দেশ্যে শুভর নৌকো ভাসাতে চলেছে, সে বিন্দুমাত্র বিচলিত হল না। ভাবল, আগে তো পরীক্ষায় পাশ করুক, স্টকহোমে পাড়ি দেবার কথা পরে চিন্তা করা যাবে।
সুরিন্দরকে ফোন লাগাল রাত এগারোটার সময়। সব শুনে সুরিন্দর বলল, ‘ও আচ্ছা ...জি এন এ। জানি জানি। গ্রেট জব বাই ইউ। আমিও এই রকম একটা ওপনিং খুঁজছিলাম। প্রসপেকটাস পাঠাবার জন্য ওদের একটা মেল কর। তারপর আমাকে জানাও। উই মাস্ট ক্যাপিটালাইজ অন দিস অপরচুনিটি। আই ওয়ান্ট টু টিচ ডিসুজা অ্যান্ড কোম্পানি এ গুড লেসন। আমাদের এ ক্রুসেডটা জিততেই হবে.... ইয়েস উই মাস্ট..... ’
রাত বারোটার সময় স্পন্দন ডেস্কটপ খুলল মেল কম্পোজ করার জন্য। শুভ এখন ঘুমিয়ে কাদা।
জি এন এ থেকে জবাব এল আটচল্লিশ ঘন্টার মধ্যে। ওয়ার্কিং সেক্রেটারি জেনিফার লেয়নডস্কি ই-মেল করেছেন। পদবী দেখে স্পন্দনের মনে হল ভদ্রমহিলা সুইডিশ নন। খুব সম্ভবত পোলিশ বা হাঙ্গেরিয়ান হবেন। সে যাক, নামে কি বা আসে যায়।
দেখা গেল জি এন এ-তে অন্তর্ভুক্তির জন্য তেমন জটিলতা কিছু নেই যদি বিদেশ গমন সংক্রান্ত কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকে। সে ব্যাপারে ওরা কোন দায় বহন করবে না ওদের ‘কনসেন্ট লেটার’ দেওয়া ছাড়া। তবে সে সব পরের ব্যাপার। সবার আগে বাধ্যতামূলেক হল ওখানে ভর্তি হওয়ার জন্য নির্ধারিত যোগ্যতামান ছোঁওয়া। শুভ যে সেটা পারবে সে ব্যাপারে স্পন্দন নিশ্চিত। সেই বিশ্বাস পুরোপুরি আছে বলেই সে এতটা এগোবার মতো মনের জোর পাচ্ছে। জেনিফারের পাঠানো মেল থেকে একটা আরামদায়ক প্রাপ্তি হল যে, জিএনএ-তে ঢোকার প্রবেশিকা পরীক্ষা মানে, ট্র্যাক-ট্রায়াল অ্যাথলিটের নিজের দেশেই হতে পারে। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই জিএনএ-র প্রতিনিধি আছে, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বে। তৃতীয় বিশ্বে অ্যাথলেটিক্স উন্নয়নের একটা প্রকল্প নিয়েছে তারা অতি সম্প্রতি।
এই মেল চালাচালির যাবতীয় বার্তা সুরিন্দরকে ফরোয়ার্ড করে দিল স্পন্দন।
শেষ শারদের আলোয় ভরা দিন। আজ রবিবার। শুভকে নিয়ে স্পন্দন মধ্যমগ্রামে রওয়ানা দিল। ব্রজেনবাবু ফোন করেছিলেন ছেলের জন্য দেবেশের মন খুব উতলা হয়েছে। জন্মের পর থেকে একটানা এতদিন ছেলেকে ছেড়ে কখনও থাকেনি সে। তার মন বেশ খারাপ।
নতুন ফুলকপি উঠেছে। ঝুড়িভর্তি ফুলকপি আগলে ভ্যানের মাঝখানে বসে আছে একটা লোক। হৃদয়পুরের দিকে যাচ্ছে। তৃপ্তি-র সামনে ‘একটু বস .... আসছি আমি‘ বলে সিট থেকে নেমে গেল দেবেশ নস্কর। সে অপ্রত্যাশিতভাবে দেখতে পেল শুভ এবং স্পন্দন ব্রজেনবাবুর কাউন্টারের সামনে বসে আছে।
ব্রজেনবাবু দাঁড়িয়ে আছেন। দেবেশ তড়িঘড়ি এসে দেখল ব্রজেনবাবু ভীষণ উত্তেজিত। দেবেশকে দেখে শুভ একগাল হাসল। দেবেশ ছেলের মাথাটা বুকে চেপে ধরল।
শুনতে পেল ব্রজেন বক্সী রেগে আগুন হয়ে মুঠি পাকিয়ে বলছে, ‘শালা মাজাকি নাকি.... মগের মুল্লুক পেয়েছে .... শুয়োরের বাচ্চা.... দেখিয়ে দিন তো মশায় .... আমরা আপনার সঙ্গে আছি .... ছাড়বেন না একদম হারামিদের’। রাগের মাথায় আলগা কিছু ভাষা বলে ফেলায় লজ্জিত হয়ে জিভ কাটলেন।বললেন, ‘মাফ করবেন স্যার..... মাথাটা গরম হয়ে গিয়েছিল।’
ওদিকে ভ্যানের ফুলকপিওয়ালা তাড়া দিতে লাগল, ‘আরে ও দেবেশ.... হলটা কি.... এ তো ভাল ক্যাঁচাকলে পড়লাম। হাটের টাইম বেরিয়ে যাচ্ছে .... আগে বললেই পারতে .... কি মুশ্কিল ...’।
দেবেশ চেঁচিয়ে বলল, ‘হ্যাঁ ... এই যাই ....ঠিক আছে আপনারা যা ভাল বোঝেন করেন। আমি সন্ধেবেলায় খবর নোবখনি ....’
দেবেশ গিয়ে ভ্যানের সিটে বসে পড়ে। হাটের টাইম হয়ে যাচ্ছে ....
ঠিক এই সময়ে স্পন্দনের মোবাইল বেজে উঠল। স্পন্দন স্ক্রীনে দেখল — সুরিন্দর কলিং।
— ‘ গুড মর্নিং স্পন্দন .... তোমরা সব ঠি ক আছ তো? টেক কেয়ার অফ শুভ প্রপারলি। হ্যাঁ .... যে জন্য কল করলাম, আমি ওয়েবসাইট থেকে ফোন নাম্বার কালেক্ট করে জিএনএ-তে ফোন করেছিলাম বিকজ আয়্যাম ফ্র্যান্টিক্যালি ইন আ হারি টু সেটল দা ম্যাটার ... এনিওয়ে, জেরার্ড মূলার বলে একজন ফোন ধরেছিলেন। বললেন, উনি ওখানকার পি আর ও । জানা গেল, মোস্ট ফরচুনেটলি ফর আস, বাই সাম উইন্ডফল অকারেন্স, নেক্সট উইকে কলকাতাতেই একটা ট্রায়াল আছে। তাতে ইস্ট এবং সাউথ জোনের তিরিশ জন অ্যাথলিট পার্টিসিপেট করবে। তার মধ্যে ম্যাক্সিমাম ছ জন সিলেক্টেড হবে । এটা অফ কোর্স কোন কম্পিটিশন না। টাইমিংটাই ক্রাইটেরিয়া। এগারো সেকেন্ডের মধ্যে একশো মিটার ফিনিশ করতে হবে। সেটা না পারলে কেউই সিলেক্টেড হবে না। এছাড়া অন্য আরও ইভেন্ট আছে। সেগুলো আমি অতটা কোয়্যারি করিনি। সো কিপ শুভ প্রিপেয়ার্ড অ্যাজ মাচ অ্যাজ পসিবল। এনিওয়ে, আর আর একটা কথা..... অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশান আমার রেজিগনেশান অ্যাকসেপ্ট করে নি। আপাতত হোল্ডে রেখেছে । মেল করে জানিয়েছে উইদিন আ ফর্টনাইট তাদের ডিসিশান জানাবে।’
স্পন্দনের মুখ আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। বলল, ‘নাম্বারলেস থ্যাঙ্কস ফর দা নিউস। আই উইল রিমেন এভার গ্রেটফুল টু ইউ।স্প্লেনডিড জব অন ইয়োর পার্ট ...’
— ‘না না একথা বলছ কেন? ইনিটিয়াল ইনিশিয়েটিভটা তো তোমারই ছিল। আর যেটা বলছিলাম, তোমাকে একটা কাজ করতে হবে । শুভর নামটা এনলিস্ট করাতে হবে অ্যালংউইথ দা স্ক্যানড কপি অফ হিজ বার্থ সার্টিফিকেট ভায়া ই-মেল টু জিএনএ’স মেল অ্যাড্রেস। আর তা না করতে চাইলে ক্যামাক স্ট্রীটে ওদের অফিসে গিয়ে হ্যান্ড চু হ্যান্ড সাবমিট করা যায়। হোয়াটেভার ইউ প্রেফার ..... । উইদাউট এনলিস্টমেন্ট কিন্তু কিচ্ছু করা যাবে না। সো মেক শিওর অফ কমপ্লিটিং দি প্রাইমারি ফর্ম্যালিটিস অন প্রায়োরিটি বেসিস।’
— ‘ ওক্কে ... ওক্কে.... থ্যাঙ্ক ইউ এগেন মাই গুড ফ্রেন্ড।
ব্রজেনবাবু বৃত্তান্ত সব শুনে আনন্দে লাফাতে লাগলেন। আবার দু একটা আলগা কথা আলটপকা তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল— ‘শালা হারামখোরেরা বুঝবে এখন ....’। বলে আগের মতোই জিভ কাটলেন সংকোচবশত: ।
স্পন্দন জিজ্ঞাসা করল, ‘শুভ তোর বার্থ সার্টিফিকেট আছে তো ? ‘
শুভ দোনামোনা করে জবাব দেয়, ‘আমি তো ঠিক জানি না, বাবা জানে। ছিল তো একটা.... দেখেছিলাম মনে হচ্ছে .... সেই ইস্কুলে ভর্তি হবার টাইমে .... ’
সর্বনাশ ! স্পন্দন মনে মনে প্রমাদ গনল। ‘কেন তোর আধার কার্ড টার্ড কিছু হয় নি?’
শুভ নির্বিকারভাবে বলল, ‘না’।
কিন্তু ব্রজেনবাবু বললেন, ‘না না .... ওর বার্থ সার্টিফিকেট আছে। আমি জানি আছে। মিউনিসিপ্যালিটির বার্থ সার্টিফিকেট। দাঁড়ান একটু .... দেবেশ আসুক। ফোন করছি।
দেবেশ ফোনে জবাব দিল, ‘ হ্যাঁ, মনে তো হচ্ছে ছিল একখানা। আচ্ছা রাত্তিরে খুঁজে দেখবখনি। ‘
— ‘আরে না না .... রাত্তিরে দেখলে হবে না ..... এখনই চাই। স্পন্দন স্যার বসে আছে এখানে। তুমি এক্ষুণি চলে এস।’
—- ‘এখন তো যেতি পারব না বাবু । আমি এট্টা কাজে ফেঁসে আছি। রাত্তিরে দেখবখন’
— ‘আরে না না তুমি এক্ষুণি চলে এস সব কাজ ফেলে, ওদের অন্য লোক ধরিয়ে দিয়ে।তোমার মহাজনের টাকা আমি দিয়ে দেবখন। শিগ্গীর এস।’
দেবেশ বোধহয় শেষ পর্যন্ত আসতে রাজি হল। এদের কান্ড কারখানায় স্পন্দনের রক্তচাপ বাড়তে থাকল ক্রমাগত।
যাই হোক, রাত প্রায় দশটা নাগাদ সব উৎকন্ঠার অবসান ঘটিয়ে শুভর বার্থ সার্টিফিকেটটা খুঁজে পাওয়া গেল তক্তপোষের তলায় রাখা একটা ছেঁড়েখোঁড়া বস্তার মধ্যে থেকে। নেহাতই অপ্রয়োজনের একটা জন্মশংসাপত্র। নগন্য অকিঞ্চিৎকর জীবনের অবহেলাময় একটা জন্মপ্রমাণ। শুভ হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।
দেবেশ একগাল হেসে বলল, ‘যাক বাবা পাওয়া গেল.... ঠাকুরের অসীম কৃপা ..... আমি তো চিন্তায় মরি আর কি .... ও..ও:’।
শুভ সিলেক্টেড হলে আধার কার্ড ছাড়া পাসপোর্ট ভিসা কি করে হবে সেটা এখন ভাবতে চায় না স্পন্দন। আগে ট্রায়ালের গাঁট তো পেরোক।
শুভকে ওখানে রেখেই স্পন্দন বাড়ি ফিরে এল। কালই ক্যামাক স্ট্রীটে যেতে হবে জিএনএ অফিসে এনলিস্টমেন্টের জন্য।
সেদিন শুক্রবার। পরিষ্কার আবহাওয়া। গরমও অনেক কম।ট্রায়ালের ভেনু ঠিক হয়েছে রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়াম। জলন্ধর থেকে সুরিন্দরও রবীন্দ্র সরোবরে এসেছে এক বুক আশা নিয়ে। স্পন্দনের সঙ্গে পায়েলও মাঠে এসেছে শুভকে সঙ্গে নিয়ে। তাদের ছোট্ট ছেলেটাও আছে মায়ের সঙ্গে।
একশো মিটারের ইভেন্টে পাঁচটা গ্রুপ। প্রতি গ্রুপে ছ জন করে স্প্রিনটার। শুভর নাম আছে চার নম্বরে, মানে ডি গ্রুপে।
বিদেশী পুরুষ ও মহিলা কর্মকর্তারা তদারকি করছে ব্যস্তভাবে। তাদের দেখেই মনে হচ্ছে তাদের কর্ত্তব্যে তারা যথেষ্ট নিষ্ঠাশীল। ভাব ভঙ্গীতে স্পষ্ট যে, সামনে কোন বিশেষ লক্ষ্য আছে। এটা তো জানা কথাই উদ্দেশ্য ছাড়া সিদ্ধিলাভ হয় না।বেশ কিছু বাঙালী কর্মনির্বাহককেও দেখা গেল সামগ্রিক আয়োজনের মধ্যে।
একশো মিটারের ইভেন্ট হল একেবারে শেষের দিকে। তখন বেলা প্রায় তিনটে বাজে। পুরো ব্যবস্থাটাই বেশ সুবিন্যস্ত।
প্রথম তিনটে গ্রুপের রেস শেষ হয়ে গেল।
এবার ডি গ্রুপের ডাক পড়ল।
ট্র্যাকে নামার আগে স্পন্দনকে অবাক করে দিয়ে পায়েলকে একটা প্রণাম করল শুভ। তারপর স্পন্দনকেও একটা প্রণাম করল। তারা দুজনই কেমন বিহ্বল হয়ে গেল। স্পন্দন শুভকে আলতো করে বুকে জড়িয়ে ধরল। পায়েল শুভর মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।
শুভ ট্রাকশ্যুট খুলে তিন নম্বর লেনের স্টার্টিং ব্লকে গিয়ে দাঁড়াল। তারপর সবার মতো নীচু হয়ে তৈরি হল স্থির দৃষ্টিতে সামনের দিকে চেয়ে। এক দুই তিন চার পাঁচ সেকেন্ড ..... পিস্তলের স্টার্টিং সিগন্যাল হল..... ।
যেন কোন শ্রেষ্ঠ ধনুর্ধর ধনুকের ছিলা টেনে দিল । তীরের মতো নিক্ষিপ্ত হয়ে গেল শুভর শরীর।
কোন কিছু বোঝার আগেই একটা অজানা অচেনা অকিঞ্চিৎকর অস্তিত্বের অসাধারণ দুটো পা বিদ্যুতের মতো পেরিয়ে গেল ফিনিশিং লাইন । টাইমিং হল দশ পয়েন্ট তিন সেকেন্ড। দ্বিতীয়জনের সময় হয়েছে তের পয়েন্ট ছয় সেকেন্ড এবং সে-ই গোটা ট্রায়াল ইভেন্টে শুভর ঠিক পিছনে আছে।
একটা কথা বলা হয়নি এই প্রতিযোগিতায় ডোপ টেস্ট ট্রায়ালে নামার আগেই করে নেওয়া হয়। একজন প্রতিযোগীও বাতিল হয় নি। সকলেই উত্তীর্ণ হয়েছিল ডোপ টেস্টে ।
স্পন্দনের চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগল। ওর দেখাদেখি পায়েলের চোখ দিয়েও জল পড়তে লাগল। নেহাতই বালক সান্টু কিসের ফূর্তিতে কে জানে চারদিকে গঙ্গা ফড়িং-এর মতো ভেসে বেড়াতে লাগল।
কোন জীর্ণ কুটিরের জীর্ণ তক্তপোষের তলা থেকে জীর্ণ চটের বস্তা মোড়া একটা তুচ্ছ জন্মশংসাপত্রধারী সহসা গোটা স্টেডিয়ামে আলোক বিকিরণ করতে লাগল। ট্র্যাকের একপাশে দাঁড়িয়ে এক বিদেশি কর্মকর্তা শুভর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আপনমনে বললেন —- ‘সিম্পলি প্রডিজিয়াস .... উই মাস্ট গেট হিম ইন অ্যাট এনি কস্ট....’।
তার স্বগতোক্তি বোধহয় পাশে দাঁড়ানো আর এক কর্মকর্তা শুনতে পেলেন। তিনি বললেন, ‘ইয়েস অবভিয়াসলি .... ‘
সুরিন্দরকে মাঠ পেরিয়ে এদিকে আসতে দেখা গেল হঠাৎ। স্নায়ুর চাপ তাকে এতক্ষণ কোথায় লুকিয়ে রেখেছিল কে জানে।
মাঠ পেরিয়ে এদিকে এসে স্পন্দনের সামনে দাঁড়াল। কোন কথা না বলে দুজন নির্বাকভাবে দুজনের দিকে তাকিয়ে রইল।
কয়েক সেকেন্ড পরে স্পন্দন বলল, ‘কিন্তু পাসপোর্ট ভিসা ..... আধার এসব ?’
সুরিন্দর হেসে বলল, ‘ওগুলো ওদের ওপরই ছেড়ে দাও না। গরজ তো এখন ওদের। ওরা গুণের কদর করতে জানে।..... হ্যাঁ , বায় দা বায় ...অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশান আমাকে রেজিগনেশান লেটারটা উইথড্র করার জন্য রিকোয়েস্ট করে একটা মেল পাঠিয়েছে। সানি ডিসুজার বিরুদ্ধে নাকি অনেক বছর ধরে অনেক কমপ্লেন্ট জমা পড়েছে। তার বিরুদ্ধে অ্যাসোসিয়েশান একটা তদন্ত কমিটি তৈরি করেছে ফর দেয়ার ইন্টারনাল ফাইন্ডিংস।’
স্পন্দন সব শুনে অবাক হয়ে গেল। তার ওই প্রবাদটার কথা মনে পড়ল — ধর্মের কল বাতাসে নড়ে । সে মুখে বলল, ‘এই সিচুয়েশানে তো শুভর তাহলে আবার ..... ’
সুরিন্দর মাঝখানে বলে উঠল, ‘এক্জ্যাক্টলি.... কদিন ওয়েট করে দেখা যাক না ..... ’
এই সময়ে ব্রজেন বক্সীর ফোন এল স্পন্দনের মোবাইলে । সব শুনে তিনি আবার আলটপকা কটা আলগা কথা বলে উঠলেন— ‘বুঝবে এবার হারামিরা.... শালা শুয়ো.....’
বলে জিভ কাটলেন কিনা সেটা অবশ্য বোঝা গেল না।
বেলা ছোট হয়ে গেছে। আলো অকস্মাৎ ম্লান হয়ে গেল। শুভ বলল, ‘চলুন স্যার .... বাবার কাছে যাব .... অনেকক্ষণ হয়ে গেল .... ’
(এরপর পরের পর্বে )
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।