এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • অনন্যা নারী

    Sayanti Mandal লেখকের গ্রাহক হোন
    ১১ জানুয়ারি ২০২২ | ৩৯০ বার পঠিত
  • পর্ব ২ 

    জয়িতা কফি হাউসে ঢুকল যখন তখন বেলা তিনটে। তনিমাকে পইপই করে বলল আসতে, তার নাকি আজ দাদা বউদির সাথে সিনেমা যাবার কথা। নতুন ইংরেজি সিনেমা এসেছে মিনার্ভাতে। মেয়েটা সিনেমার পোকা। সারাক্ষণ ওই সব ভাবছে। চলতে ফিরতে সিনেমার হিরোইনদের মতো হাব ভাব। অনেকবার মনের সুপ্ত বাসনা জয়িতার কাছে বলে ফেলেছে যে সে সুযোগ পেলে সিনেমাতে অভিনয় করবে। তনিমা এমনিতে দেখতে বেশ ভালো। চেহারাতে একটা চটক আছে। অনেকের মধ্যে নজরে পড়ার মতো। কথাবার্তাও বেশ কায়দা করেই বলে। জয়িতা অবশ্য সিনেমা জগতের বাজে দিকগুলো নিয়ে তনিমাকে সাবধান করেছে। কে শোনে কার কথা। তবু জয়িতার প্রাণের বন্ধু বলতে তনিমা। কিন্তু আজ একটু অভিমানই হয়েছে জয়িতার। কত করে বলল তবুও এলো না। একা একা এসব জায়গায় আসতে জয়িতার একটুও ভালো লাগে না।

    ভিতরে ঢুকে আরও অপ্রস্তুতে পড়ল। গিজগিজে ভিড়। ছোট ছোট টেবিলগুলো ঘিরে জটলা। আর কি গমগম আওয়াজ। অনেক লোক একসাথে কথা বললে যা হয়। গরমে, ধোঁয়াতে চারিদিক গুমোট হয়ে আছে। জয়িতা কি করবে বুঝতে পারল না। জয় আসতে বলেছিল, সেই বা কোথায়? ভীষণ রাগ হল জয়িতার নিজের ওপরেই। কেন যে এল। ওপরে নেই তো। একবার সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে দেখবে। দরজার কাছে বেশিক্ষণ দাঁড়ানো যাচ্ছে না। মুহুরমুহ লোক ঢুকছে আর বেরোচ্ছে। একা আসাটা একদম ঠিক হয় নি। জয়িতা ফিরে যাবার জন্য ঘুরতে গেল, অমনি একজনের সাথে ধাক্কা লেগে গেল

    - একি চোখে দেখতে পান না…… জয়িতা বলতে গিয়েও কথাটা গিলে নিল। যার সাথে ধাক্কা লেগেছে সে অর্ণব।

    - ওপরে চলুন, এখানে বেশিক্ষণ দাঁড়ালে সত্যিই ধাক্কা খেয়ে শেষ হতে হবে।

    - জয়… জয়িতা একবার বলতে চেষ্টা করলো।

    - জয় বইএর দোকানে গেছে। চলে আসবে। জয়িতা আর কিছু বলল না। অর্ণবের পিছু পিছু সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে এলো। ওপরে ভিড় একটু কম। জয়িতা এর মধ্যেই ঘেমে নেয়ে গেছিল। শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ মুছল।

    - কি খাবেন? চা না কফি? অর্ণব জিজ্ঞেস করলো।

    - জল। জয়িতা প্রাণ পেতে চাইল।

    অর্ণব ওয়েটারকে ডেকে জল, কোল্ড কফি অর্ডার করল।

    - আপনি মনে হচ্ছে এখানে তেমন আসেন না? অর্ণব প্রশ্নের দৃষ্টিতে জয়িতার দিকে তাকিয়ে।

    জয়িতা চুপ করে থাকে। কি বলবে। বাড়ি আর কলেজের বাইরে সে বিশেষ কোথাও যায় না।

    - আমাদের আসলে এটাই আড্ডার জায়গা। অনেকেই আসে। তবে আরও পরে।

    জয়িতা ম্লান হাসে। তার জীবনের সাথে অনেকের জীবনই মেলে না। তনিমাও অনেক বেশি বাইরের জগতের সাথে পরিচিত। জল আসতেই জয়িতা আগে ঢকঢক করে জল খেয়ে নিল সবটা। কফিও এসে গেছে। ঠাণ্ডা কফিতে চুমুক দিয়ে জয়িতার একটু আরাম বোধ হল।

    - আচ্ছা জয়ের কি দেরি হবে?

    - না দেরি হবে না। তবে বলাও যায় না। একটু তো ভুলোমনা আছে। বই কিনতে কিনতে হয়ত ভুলেই গেল যে আপনাকে এখানে আসতে বলেছে। তা কেন আসতে বলেছে সেটা কিছু বলেছে?

    - না কিছু তো বলে নি।

    - আপনি নাকি কবিতা লেখেন?

    জয়িতা একটু লজ্জা পেলো। এ নিশ্চয় তনিমার কাজ। তনিমা ছাড়া আর কেউ এবিষয়ে জানে না।

    -না সেরকম কিছু নয়। একটু আধটু মনের ইচ্ছে।

    - আপনি আমাকে বেশ চমকিত করছেন।

    অর্ণবের কথা শেষ হবার সাথে সাথে জয় এল। একগাদা বই টেবিলের ওপর দড়াম করে রেখে বলল

    - শুধু চা কফিতে হবে না। কাটলেট বল। উফফ যা পরিশ্রম হল। গোডাউন থেকে বই বের করে কিনে আনলাম।

    - দুএকটা আরশোলাও নিয়ে এসেছিস। অর্ণব একটা বইএর ফাঁক থেকে খপ করে ধরে তুলে ধরল।

    - তাহলে বেশ লাভ করেছি বল? জয় হেসে ওঠে।

    ততক্ষণে জয়িতা উঠে দাঁড়িয়েছে।

    - এসব মজা করলে আমি আসছি। জয়িতা ভয়ার্ত গলায় বলে। আরশোলাকে সে সত্যি ভয় পায়।

    - তোদের মেয়েদের এই এক সমস্যা। আরশোলা কে তোরা জন্ম থেকে শত্রু করে রেখেছিস। জয় ফুট কাটে।

    - না, না, আমি সত্যি দুঃক্ষিত। অর্ণব ততক্ষণে আরশোলাটাকে ফেলে দিয়ে এসেছে। আপনি বসুন।

    - আমাকে কেন ডেকেছিস বলবি কি? জয়িতা জয় কে তাড়া দেয়।

    - দাঁড়া আগে কাটলেটটা আসুক।

    - তাহলে আমি আসি। আমায় অনেক দূর যেতে হবে।

    - জয় উনি অনেকক্ষণ এসেছেন, তুই এমনিতেই দেরি করেছিস। অর্ণব গম্ভীর ভাবে বলে।

    জয় আর একটা কি বলতে গিয়েও কথাটা চেপে গেল।

    - কাটলেটটা এলে ভালো হত, বড় খিদে পেয়েছে। যাই হোক তোর যখন তাড়া আছে। জয় একটু থেমে নিঃশ্বাস নেয়। তারপর বলতে থাকে

    - আমরা একটা ম্যাগাজিন বের করছি সামনের মাস থেকে। তোর লেখা কবিতা দিতে হবে। পয়সাকড়ি কিছু দিতে পারব না। চাঁদা তুলে ম্যাগাজিন ছাপা হচ্ছে।

    জয়িতা এবার হেসে ফেলে। জয়িতা নিজের মনে কবিতা লেখে। কোনোদিন ভাবে নি তার লেখা ছেপে বেড়বে। এটা তাঁর কাছে বেশিই পাওয়া। সেখানে পয়সাকড়ির ভাবনা তাঁর মনে কখনো আসতেই পারেনা। জয় একটু বেশিই ভদ্রতা করে। জয়িতার সত্যি তাড়া ছিল। সে ব্যাগটা কাঁধে ফেলে উঠে দাঁড়াল,

    - কাল কলেজে পেয়ে যাবি। আর কাটলেটটা আমার পাওনা থাকলো। ম্যাগাজিন বেড়লে খাওয়াতে হবে। আজ আসি। অর্ণব একটা বইএর পাতা উল্টাচ্ছিল

    - কবিতা ছাপার পর কি আর আমাদের মনে রাখবেন? সামান্য ছুঁচ ফোটায় অর্ণব।

    - সেটা তখনই দেখবেন, আসি। জয়িতা আর না দাঁড়িয়ে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যায়।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত মতামত দিন