এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • স্টপার - ২

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৯ ডিসেম্বর ২০২১ | ৫৬১ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • মাঠে মেডিক্যাল টিম বলতে তেমন কিছু নেই। এই ধরণের ম্যাচে থাকেও না। দলের অবৈতনিক ফিজিক্যাল ট্রেনার এবং দুজন রিজার্ভ বেঞ্চের প্লেয়ার মাঠে ঢুকে যতটা সম্ভব শুশ্রূষা করার চেষ্টা করতে লাগল। উৎকন্ঠায় অস্থির হয়ে ক্লাব সভাপতি প্রদীপ ঘোষ মাঠে ঢুকে গেলেন। কিন্তু রেফারির নির্দেশ মেনে তাকে আবার বাইরে চলে যেতে হল। একটানা ঠান্ডা পেন কিলার স্প্রে করতে লাগল ট্রেনার প্রত্যুষ সাহা। একটা পেন কিলার ট্যাবলেটও খাওয়াল শংকরকে। বরফ ঠান্ডা স্প্রের প্রভাবে শংকরের ব্যথা অনেকটা নরম হয়ে আসল।

    বরানগর ইউনাইটেড অপ্রত্যাশিত অগ্রগমনের উৎফুল্লতা হারিয়ে ফেলতে চাইছে না। জানে শংকর মাঠ ছাড়লে তাদের ডিফেন্সের কি হাল হবে। তারা ওকে খেলাতে মরীয়া। প্রত্যুষ শংকরের ডান হাঁটুতে কি একটা জেল আচ্ছা করে লাগিয়ে ক্রেপ ব্যান্ডেজ বাঁধতে বসল। রেফারি কাছে এসে বলল, ‘বাইরে নিয়ে যান .... ’।

    রিজার্ভ বেঞ্চের একজন বলল, ‘দু মিনিট ..... দু মিনিট .... কি আছে ....ফ্রেন্ডলি তো ....’।

    যদিও এরা সবাই জানে ফ্রেন্ডলি হলেও এটা একটা সম্মানের লড়াই। এক ইঞ্চি জমি ছাড়া যাবে না। ক্রেপ ব্যান্ডেজ বাঁধা হলে শংকরের ডান পায়ে ডবল নিক্যাপ কভারিং দিল প্রত্যুষ সাহা। তারপর বলল, ‘দেখ.... দাঁড়াতে পারিস কিনা’।

    শংকর ও-আর-এস-এর বোতলটা নিয়ে ঢকঢক করে খানিকটা খেয়ে নিল। তারপর তড়াক করে লাফিয়ে উঠল। বলল, ‘ঠিক আছে অসুবিধে হবে না .... টেনে দিতে পারব। তারপর হাফটাইমে তো একটু সময় পাওয়া যাবে ....’। প্রত্যুষরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। প্রদীপ ঘোষের বুক থেকে পাথর নেমে গেল আপাতত।

    সাইডলাইনের ধারে দাঁড়িয়ে নবারুণের কৌশিক দত্ত নীচু স্বরে বললেন, ‘ব্যাপারটা কিন্তু ঠিক হল না। ওর বেরিয়ে যাওয়া উচিত ছিল .....’। মনোময়বাবুও চাপা স্বরে কথাটা সমর্থন করলেন— ‘সে তো বটেই .... ’।

    খেলা শুরু হবার আগে টিমের ক্যাপ্টেন গৌতম বনিককে শংকর বলল, ‘অ্যাটাকে আর একজন দরকার। একটা মিডিওকে ওপরে করে দাও। তাতে চাপটা একটু কমবে। নইলে গোলটা ধরে রাখা যাবে না .... ’।

    গৌতম শংকরের কথাটা মেনে নিল। স্বর্নেন্দু বিশ্বাসকে উজ্জ্বলের সঙ্গে দ্বিতীয় স্ট্রাইকার করে দিল। স্বর্ণেন্দুর স্কিল তেমন না থাকলেও গতি আছে। শ্যুটিংও ভাল।

    কিন্তু তাতে চাপ কিছু কমল না। কারণ দলের মিডিওরা স্ট্রাইকারদের বল সাপ্লাই দিতে পারছিল না। নিজেরা বল হোল্ডই করতে পারছিল না। পুরো পেনিট্রেটিভ জোন জুড়ে পাখা মেলে থাকল শংকর। বক্সের ডানদিক বাঁদিক দুটো দিকই কভার করতে হচ্ছিল মাথায় বা পায়ে। এর মধ্যে গোলকিপার অয়ন কর একটা অবিশ্বাস্য সেভ করল। তার ডানদিকে মাঝামাঝি হাইটে একটা বুলেট পোস্ট ঘেঁসে ঢুকছিল। ডানদিকে উড়ে গিয়ে ফিস্ট করল অয়ন। কর্নার হল যদিও। শংকর গভীর স্নেহে অভিবাবকের মতো অয়নের পিঠে হাত রাখল। দারুণ ডেলিভারি ছিল কর্নারটার। বাঁ পায়ের লম্বা ইনসুয়িং ছ গজের মাথায় দাঁড়িয়ে থাকা ষোল নম্বরের মাথায় ভেসে আসছিল অবধারিতভাবে সবাইকে দাঁড় করিয়ে রেখে। বল ওর মাথায় পড়লে গোল না হওয়ার কোন কারণ নেই। যাকে বলে ফ্রি হেডার .... । ওর মাথায় বল পৌঁছতে দেওয়া যাবে না। শংকর সামন্ত বক্সের এক মিটার ভিতর থেকে তার বিখ্যাত স্পট জাম্প দিল। নিখুঁত ভাবে তার মাথার ডানদিকে ঠোক্কর খেয়ে বল ছিটকে গেল সাইডলাইনের বাইরে। প্রদীপ ঘোষ নাগাড়ে তালি দিতে লাগল।

    প্রায় পঁয়ত্রিশ মিনিট হয়ে গেল। জর্জ টেলিগ্রাফ মরীয়া হয়ে উঠেছে। কাউন্টার অ্যাটাকে গোল খেয়ে গুলি খাওয়া বাঘের মতো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। বাইশ গজের মাঝামাঝি জায়গায় জর্জের চারটে প্লেয়ার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ভীষণ তাড়াতাড়ি পাস খেলতে লাগল। ফাইনাল পাসটা হল লেফট আউটকে। সে অনেকটা ভিতরে চলে এসেছে। ছ গজের বক্সে ঢুকে পড়তে পারলে নিশ্চিতভাবে গোলের মুখ খুলে যাবে।। শুধু ফাইনাল পাসটা তার পায়ে পড়ার অপেক্ষা। দ্রুতগতির ফাইনাল পাস গেল সেই দিকেই। তীক্ষ্ণ ইন্দ্রিয়জ অনুমান ক্ষমতায় শংকর জানত পাসটা ওদিকেই যাবে। সচেতনভাবেই ও দিকটা ছেড়ে রেখেছিল। ডান পা বাড়িয়ে ধরে নিল বলটা। পাসার এবং রিসিভারের মধ্য দিয়ে এক ঝটকায় বেরিয়ে গেল বল নিয়ে। সামনে প্রায় কুড়ি গজ ফাঁকা। পিছনে রক্ষণ ফাঁকা রেখে ঝুঁকি নিয়ে তরতর করে ওপরে উঠতে লাগল শংকর। ওদিকে দুটো চনমনে স্ট্রাইকার ছটফট করছে। সামান্য ঝুঁকি ছাড়া জীবনে সফল হওয়া মুশকিল।

    একজন শংকরকে ক্লোজ করতে এল। বহুকালের অভিজ্ঞ ডানপায়ের আউটস্টেপ দিয়ে একটা অনায়াস আউটসাইড ডজ করল শংকর। আর পাঁচ ছ স্টেপ এগিয়ে বাঁ দিকে থ্রু বাড়িয়ে দিল স্বর্ণেন্দুকে। স্বর্ণেন্দুর গতি আছে প্রচুর। সে উইথ দা বল রানিং-এ খুব দক্ষ। এটা তার জায়গা। ছুটতে লাগল মরণপণ বাঁ প্রান্ত ধরে। জর্জের বক্সের মাথায় দুজন ডিফেন্ডার দাঁড়িয়ে গেছে তৈরি হয়ে। সমান্তরালভাবে উজ্জ্বল পালিতও দৌড়তে লাগল জায়গা নেবার জন্য। দায়িত্বশীল গৃহকর্তার মতো একজন চোট খাওয়া বুড়ো স্টপারও রক্ষণের সংসার পিছনে ফেলে রেখে উঠে আসতে লাগল দুই প্রাণবন্ত নওজওয়ানের পাশে দাঁড়ানোর জন্য । পিছন থেকে একজন তাড়া করল স্বর্ণেন্দুকে ধরার জন্য। কিন্তু স্বর্ণেন্দু একবার বল নিয়ে বেরিয়ে গেলে আর তাকে ধরা যায় না। এটা তার জায়গা।

    কর্ণার ফ্ল্যাগের কাছে গিয়ে বল থামাল। তাড়া করা প্লেয়ারটা তখনও চার মিটার দূরে। ক্রস তুলল বাঁ পায়ে .... ছ গজের একটু বাইরে। বল বেরিয়ে যাচ্ছিল। আক্রমণে মদত দিতে অ্যাটাকিং থার্ডে উঠে আসা একজন বুড়ো স্টপার একটা স্পট জাম্প দিল। কপালের টোকায় বল নামিয়ে দিল উজ্জ্বল পালিতের ডান পায়ের গোড়ায় । সে ডান পায়ের স্ট্রাইকার। অসীম কৃতজ্ঞতায় শংকরের দক্ষিণা মিটিয়ে দিল সে। মাটিতে বল পড়ার আগেই ডান পা চালাল। গোলার মতো ভলি চোখের পলক ফেলার আগে ডান পোস্টের কোন দিয়ে জালে আছড়ে পড়ল। দুটো ডিফেন্ডার কোমরে হাত দিয়ে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইল।

    পাজামা পাঞ্জাবি পরা স্থূলকায় প্রৌঢ় প্রদীপ ঘোষ দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য, আবেগে আত্মহারা হয়ে দুহাত প্রসারিত করে মাঠের মধ্যে ধাবিত হলেন ওদের বুকে জড়িয়ে ধরার জন্য। ক্লাবের দুটো ছেলে ছুটে গিয়ে তাকে কোনক্রমে মাঠের বাইরে ফিরিয়ে আনল।

    নবারুণ সংঘের কৌশিক দত্ত এবং মনোময় মৈত্র দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে রইল কোন কথা না বলে। কৌশিকবাবু বললেন, ‘একটা জরুরী কাজ ছিল ব্যাঙ্কশাল কোর্টে .... কিন্তু আটকে গেলাম.... সেকেন্ড হাফটা দেখতেই হবে ....’।

    দু গোলে পিছিয়ে পড়ে জর্জ টেলিগ্রাফ রক্ষণাত্মক হয়ে গেল এই অর্ধটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত।

    রেফারি পাঁচ মিনিট যোগ করলেন নির্দিষ্ট সময়ের সঙ্গে শংকরের আঘাতজনিত সময় নষ্টের কারণে। এই সময়টা জর্জ টেলিগ্রাফ ডিফেন্স জোরদার করে খেলতে লাগল। পাঁচটা ফার্স্ট ডিভিশানের প্লেয়ার নিয়ে খেলা টিম কুঁকড়ে গেল এই সময়টুকুর জন্য।

    হাফটাইমে প্রত্যুষ সাহা একটা বাস্তবোচিত পরিকল্পনা নিল ক্যাপ্টেন এবং শংকরের সঙ্গে পরামর্শ করে। দুটো ক্রিয়েটিভ মিডিওকে বসিয়ে দুজন শরীর নির্ভর রুক্ষ প্লেয়ার নামাল— গৌরব আর তপেশ। তাদের দুজনকে বলা হল সাত নম্বর আর ষোল নম্বরকে ধরতে, অবশ্যই যতটা সম্ভব উল্টোপাল্টা পা না চালিয়ে।

    জর্জ কিন্তু হাফটাইমের পর খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এল। প্রেসিং ফুটবল খেলতে শুরু করল। ঝড়ের গতিতে পাস খেলতে লাগল। দুটো উয়িং দুরন্ত দৌড়চ্ছে দু দিক দিয়ে। গৌরব আর তপেশ সাত কিংবা ষোল কাউকেই ধরতে পারছিল না। গৌরব একবার বিপজ্জনকভাবে পা চালিয়ে হলুদ কার্ড দেখল। একটা ফ্রেন্ডলি ম্যাচ মারকাটারি যুদ্ধের রূপ নিয়েছে।

    পেনাল্টি বক্সের বাঁ দিকে বাইশ গজের কাছাকাছি জায়গা থেকে জর্জের ফ্রি কিক।

    ন নম্বর মনে হচ্ছে ফ্রি কিক বিশারদ। পাঁচ জনের দেয়াল তোলা হল। বরানগর ইউনাইটেডের গোলকিপার দ্বিতীয় পোস্টে জায়গা নিয়েছে।

    বাঁ পায়ে একটা অসাধারণ মাপা ইনসুয়িং মারল। ওয়াল টপকে প্রথম পোস্ট দিয়ে জেট প্লেনের মতো গোত্তা মেরে ঢুকে যাচ্ছে বল নি:শব্দ ঘাতকের মতো। গোলকিপার দ্বিতীয় পোস্টে আটকে .... এখনও নড়ার সময় পায়নি। প্রদীপ ঘোষ বিষ্ফারিত চোখে অসহায়ভাবে তাকিয়ে আছেন ওই মৃত্যুবানের দিকে।

    শংকর নিজেদের গোলের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে প্রথম পোস্টে। বলের থেকে তার দূরত্ব প্রায় চার ফুট। ওখান থেকেই স্প্রিংয়ের মতো ছিটকে গিয়ে হাওয়ার শরীর ভাসিয়ে দিল সে লম্বালম্বি নিজের গোলের দিকে। মাথার মাঝখানে লেগে বল বেরিয়ে গেল ক্রসবারের ওপর দিয়ে। প্রদীপ ঘোষ স্বপ্নে দেখা কোন অবিশ্বাস্য দৃশ্যের পর কেউ যেমন ভ্যাবলা মেরে যায়, সেইভাবে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন।

    কর্ণারটাও হেডে ক্লিয়ার করল শংকর অনায়াস ভঙ্গীতে।

    গৌরব আর তপেশ কিন্তু এবার বেশ ধাতস্থ হয়ে গেল। সাত এবং ষোল দুজনকেই নিখুঁত ব্লক করতে লাগল মাঠের যে কোন জায়গায়। বল ধরতেই দিচ্ছিল না ওদের। ফলে ওদের সাপ্লাই লাইন কেটে গেল পেনিট্রেটিভ জোনে। পুরো ফাইনাল থার্ডে বাঘের মতো ঘুরে ঘুরে পাহারা দিতে লাগল। বুড়ো স্টপারটা তিল তিল করে সঞ্চিত অনুমান ক্ষমতায় বল পাস হবার আগেই রিসিভারের কাছে পৌঁছে যাচ্ছিল। বলটা ধরে না উড়িয়ে মার্কামারা বল প্লেয়ারের মতো দুজন তিনজনকে অনায়াসে ড্রিবল করছিল । প্রদীপ ঘোষ উত্তেজনায় আলুথালু হয়ে সাইডলাইনের ধারে দাঁড়িয়ে রুমাল দিয়ে ঘাড়ের ঘাম মুছতে মুছতে ঘনঘন ঘড়ি দেখতে লাগলেন।

    কৌশিক দত্ত নীচু স্বরে বললেন, ‘দেখতে খুব ভাল লাগছে ঠিকই..... শংকরের কিন্তু এত লোড নেওয়া ঠিক হচ্ছে না। একটা চোট খেল ফার্স্ট হাফে ..... কিছু হয়ে গেলে আমাদের কি হবে.... একটা ফ্রেন্ডলি ম্যাচের জন্য এতটা রিস্ক নেওয়া উচিৎ হচ্ছে না যাই বল .....’।

    সে যাই হোক, খেলায় আর কোন গোল হল না। স্বর্নেন্দু আর উজ্জ্বল আর বিশেষ সুবিধে করতে পারে নি । আটকে গেছে ফাইনাল থার্ডে। কারণ শংকর আর ওপরে ওঠেনি না নিজের রক্ষণ ছেড়ে। সে জানে একই জিনিস বারবার হয় না ফুটবলে। নিশ্ছিদ্র রক্ষীর মতো সে নিজের রক্ষণ পাহারা দিতে লাগল বাকি সময়টুকু। ফল রইল ২-০ । পুরো জর্জ টেলিগ্রাফ স্কোয়াডের বিস্ময়ের ঘোর কাটে নি এখনও।

    এতক্ষণ চেপে রাখা আবেগ এবার উজাড় করে দিলেন বরানগর ইউনাইটেডের কর্ণধার প্রদীপ ঘোষ। ফুটবল এবং তার ক্লাবের ব্যাপারে তিনি টইটুম্বুর আবেগপ্রবণ মানুষ । নাটকীয় ভঙ্গীতে আবেগে ভেজা গলায় তিনি বলতে লাগলেন, ‘আমি জানি.... তোর প্রাপ্য সম্মান আমরা দিতে পারি নি ..... তোর বাবার সম্মানও দিতে পারি নি.... আমরা কেউই পারি নি। কিন্তু তুই আমার সম্মান ফিরিয়ে দিলি। এ গেমটা আমার কাছে একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। তুই আমাদের ক্ষমা কর....’, বলে প্রবল আবেগে ঘাম মাটি মাখা শংকরকে জড়িয়ে ধরলেন প্রদীপ ঘোষ সবার সামনে।

    তারপর আবার বললেন, ‘তোর কাছে আমার ঋণের শেষ নেই। তুই আমার ক্লাবকে অনেক ম্যাচ জিতিয়েছিস। তোর কাছে একটা শেষ রিকোয়েস্ট করব ..... আমি আর কদিনই বা বাঁচব .....’।

    শংকর এবং অন্যান্যরা প্রদীপবাবুর মুখের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।

    প্রদীপ ঘোষ বলে চললেন, ‘এই সিজনটা তুই বরানগর ইউনাইটেডে খেল ক্লাবের রেজিস্টার্ড প্লেয়ার হিসেবে। নেক্সট ইয়ারের ডিসিশান তুই নিজে নিবি। আমি কিছু বলব না। আমি কথা দিচ্ছি তোর কোন অসুবিধে হবে না। টাকাপয়সার ব্যাপারে হয়ত খুব একটা কিছু করতে পারব না ..... অন্য দিক দিয়ে পাঁচটা জায়গায় যাতে তুই সুযোগ সুবিধে .... আমি কথা দিচ্ছি .... তুই এ বছরে আমাদের নর্থ ক্যালকাটা লীগে চ্যাম্পিয়ান করে দে ..... আমি জানি তোর সে ক্ষমতা আছে।’

    — ‘কি যে বলেন প্রদীপদা .... সে আবার হয় নাকি ! ফুটবল হল এগারোজনের খেলা। আমি একা কি করতে পারি । সে যাক, আপনি বললেন যখন, আমি ভেবে দেখব। এক্ষুণি কিছু বলতে পারছি না ....’।
    — ‘ভেবে দেখিস কিন্তু .... আমি দু একদিন বাদে তোকে ফোন করব।’
    — ‘আচ্ছা ঠিক আছে ...’।

    মাঠ থেকে বাড়ি ফিরছিল শংকর পায়ে ক্রেপ ব্যান্ডেজ নিয়ে। হাঁটুর ব্যথাটা এখন টের পাওয়া যাচ্ছে না। হয়ত পেন কিলারের প্রভাবে।

    রাস্তার মোড়ে তারকেশ্বর মিষ্টান্ন ভান্ডারের সামনে এসে দেখল সবুজ দোকানে কি কিনছে। শংকর পিছন দিক থেকে বলল, ‘কিরে সবুজ, কি কিনছিস?’।

    সবুজ পিছন ঘুরে দেখল বাবা দাঁড়িয়ে আছে।

    সে বলল, ‘এ.. ই সিঙ্গাড়া। চায়ের সঙ্গে খাওয়া হবে ....’।

    — ‘কেন বাড়িতে কেউ এসেছে নাকি?’।

    — ‘হ্যাঁ ওই .... কি যেন .... নবারুণ সংঘ থেকে দুজন এসেছে। গাড়ি আছে গো ... গাড়ি করে এসেছে। ওনাদের একজন টাকা দিল .... বলল, নিয়ে এস বাবা ..... তুমি তো আমার ছেলের মতো। সবাই মিলে চায়ের সঙ্গে খাব। তোমার বাবা যতক্ষণ না ফেরে আমরা একটু বসি বরং। আজকেই পাকা কথা বলে যাব। নইলে চারদিকে তো শকুনের অভাব নেই। অসুবিধে নেই তো..... অসুবিধে হলে বরং বাইরে ওয়েট করছি.... তখন মা বলল, না না সে কি কথা বসুন না আপনারা ..... ও এক্ষুণি ফিরবে.....’।

    কাঁধে কিটস ঝুলিয়ে সবুজের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইল বুড়ো স্টপার শংকর সামন্ত।

    ( এরপর পরের পর্বে )
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • aranya | 2601:84:4600:5410:7413:9e55:68a6:cedc | ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ ০৪:১৬502374
  • সুন্দর । মতি নন্দীর 'কমল-দা 'র পরে শঙ্কর, আর একজন বুড়ো ঘোড়া :-)
    ভাল লাগে, এদের লড়াই এর কাহিনী পড়তে 
     
    'বাঁ পায়ে একটা অসাধারণ মাপা ইনসুয়িং মারল' -  ইনসুয়িং মারল - এটা একটু ​​​​​​​অড ​​​​​​​শোনাচ্ছে, অন্য ভাবে লেখা যায়? 
    গোলকিপার লেখাটাতে 'ড্রাইভ করল'  এইরকম একটা শব্দবন্ধ ছিল। তাতে ক্রিকেটের কথা মনে আসছিল, সেটাও পাল্টানো যায় কিনা, ভাবতে পারেন। 
     
    এগুলো জাস্ট নিটপিকিং, লেখা মনোগ্রাহী, উপভোগ্য ​​​​​​​
     
     
  • Anjan Banerjee | ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ ১৮:৩৮502382
  • ধন্যবাদ। হ্যা , ওই ব্যাপারগুলো দেখে নিচ্ছি ।
  • রঞ্জন | 2405:201:4011:c808:68f4:3934:2e6a:73e4 | ০৩ জানুয়ারি ২০২২ ১৯:২৯502479
  • খুবই ভালো লাগল। নবদিগন্ত থেকেই আপনার লেখার ফ্যান। 
    কিন্তু একটা কথা।
    শেষ কিস্তিতে নবারুণের ক্যাপ্টেন গৌতম বণিক, গোলকিপার অয়ন, স্ট্রাইকার উজ্বল এবং অন্য যে ক'জন প্লেয়ার সবাই তো ২ এবং ৩ নম্বর কিস্তিতে বরানগর ইউনাইটেডের প্লেয়ার! 
    আমি কি কিছু মিস করছি যা অন্যরা করছেন না? নাকি তাড়াহুড়োয়?
    লেখাটা ভাল লেগেছে বলেই এই পয়েন্টগুলো তুললাম। আমার ভুল হলে বলে দেবেন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন