এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • স্টপার - ১

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৯ ডিসেম্বর ২০২১ | ৭৮০ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • কৌশিক দত্ত মনোময় মৈত্রকে কনুইয়ের হাল্কা ঠেলা মেরে বললেন, ‘প্লেয়ারটার স্পট জাম্প দেখেছ? মনে হচ্ছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো স্টপারে খেলছে। এয়ারে এখন পর্যন্ত একবারও বিট হয় নি।’

    — ‘হ্যাঁ সেটাই দেখছি ..... গ্রাউন্ডেও দারুণ স্ট্রং। দুর্দান্ত অ্যান্টিসিপেশান .... একটাও ট্যাকল মিস হচ্ছে না....’, গাল চুলকোতে চুলকোতে আনমনে বললেন মনোময়বাবু।

    কৌশিক দত্ত মাঠের খেলা থেকে চোখ না সরিয়েই বললেন, ‘এরকম একটা পেলে হত ....’।

    — ‘তাই তো ....’।

    মাঠটা লম্বায় বড় হলেও চওড়ায় একটু কম। এখন পর্যন্ত এদের গোলকিপারকে একটাও সেটপিসের বল ধরতে হল না। সবই হেডে ক্লিয়ার হচ্ছে রোগামতো স্টপারের মাথা দিয়ে।

    খেলাটার ফলাফল হল ১-১। কৌশিক দত্ত মনে মনে হিসেব করে দেখলেন ছেলেটা না থাকলে ছেলেটার বিপক্ষ দল জেতে ৫-১ এ।

    কৌশিকবাবু বললেন, ‘এরকম একটা স্টপার দরকার ছিল আমাদের। এবারে বাই হুক অর বাই ক্রুক সেকেন্ড ডিভিশনে যেতেই হবে। ডিফেন্সের অবস্থা বিশেষ ভাল না..... খুব চিন্তায় আছি .....’।

    — ‘আমারও তো সেটাই চিন্তা ....ডিফেন্স নিয়েই আসল সমস্যা।’

    মনোময় মৈত্র কৌশিক দত্তর সঙ্গে একমত হলেন। একজন নবারুণ সংঘের সেক্রেটারি আর একজন কোষাধ্যক্ষ। সত্যি কথা বলতে কি নবারুণ সংঘের সংগে এদের নাড়ির বন্ধন। নবারুণ এদের কোলের ছেলে। নবারুণ কলকাতা লীগের তৃতীয় ডিভিশনের ক্লাব। গত বছরে মাত্র দু পয়েন্টের জন্য দ্বিতীয় ডিভিশনে উঠতে পারে নি। দুজনের চোখেই স্বপ্নের মায়াকাজল যে নবারুণ একদিন কলকাতা ফুটবল লীগের প্রথম ডিভিশনে খেলবে। কৌশিক দত্ত বললেন, ‘ও বেশ এজেড মনে হচ্ছে .... প্রায় চল্লিশ হবে। এই বয়েসে এই রিফ্লেক্স কল্পনাই করা যায় না। চেহারাটা এখনও ভারি হয়নি এটাই সুবিধে।’

    — ‘হ্যাঁ .... আমি চিনি ভদ্রলোককে। নামটা যদ্দুর মনে হচ্ছে ..... শংকর সামন্ত। আগে বালী প্রতিভায় খেলত। চোটের জন্য অনেকদিন আগেই কেরিয়ার শেষ হয়ে গেছে’, মনোময়বাবু জানালেন।

    — ‘অ .... আচ্ছা .... কোথায় থাকে জান নাকি?’ কৌশিক দত্ত বলেন।

    — ‘বাড়িটা ঠিক চিনি না ..... ওই পঞ্চাননতলার দিকে হবে ....’।

    সবুজের ওপরে এক ভাই অক্ষর এবং নীচে এক বোন বৈশালি। তাদের বাবা শংকর সামন্তর একটা ছোট স্টেশনারি দোকান আছে। সেখানে কাগজ, কলম, পেন্সিল, রবার এসবও পাওয়া যায়। স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা এবং পরিচিতজন সকলেরই মত এদের তিন ভাইবোনেরই লেখাপড়া হবে না। ‘পড়াশোনা’-য় ‘মাথা নেই’। বড় ভাই অক্ষর ক্লাস নাইনে বার দুই চেষ্টা করার পর হাল ছেড়ে দিয়েছে। শপিং মলে একটা নামী কোম্পানির ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে একটা কাজ জুটিয়ে নিয়েছে। করিতকর্মা ছেলে বলতে হবে। বৈশালি এখনও করার মতো কোন কাজ না পেয়ে সারদামনি স্কুলের ক্লাস নাইনের বেঞ্চে গিয়ে বসছে। সবুজও ক্লাস নাইনে পড়ে একবছরের বড় হয়েও। মানে, স্কুলের খাতায় নামটা লেখানো আছে আর কি। এদের মা কাবেরী অভাবের সঙ্গে লড়াই করতে করতে ম্লান ছায়ায় ঢেকে গেছে। তার স্বামী শংকর সামন্ত খেলাধুলো করে কিছুই গুছিয়ে নিতে পারে নি। হয়ত কিছু হত, কিন্তু হাঁটুতে চোট খাওয়ায় কেরিয়ার সেই যে বসে গেল, আর উঠল না। আর বড় ছেলে অক্ষর হালে কি একটা কাজে ঢুকেছে কে জানে, কটা টাকা পায় কে জানে সংসারের কোন সুরাহা হয় না। শংকরের দোকানটা আগে ভালই চলত। এখন আশেপাশে ওরকম অনেক দোকান হয়ে গেছে। বিক্রিবাটা অনেক কমে গেছে।

    কাবেরী ভাবে, লোকটা বুড়ো হয়ে গেল এখনও খেলার নেশা ছাড়ল না। খেপের ক্লাবগুলোও তেমন। দুদিন অন্তর শংকরদা .... শংকরদা করে ডাকাডাকি করবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে। টাকাপয়সা আদৌ কিছু দেয় কি দেয় না শংকরের কাছ থেকে জানা যায় না কিছু। দিলেও শ দুয়েক টাকার বেশি নিশ্চয়ই নয়। পিঠ চাপড়ানি আর সাবাশির যে কি মূল্য আছে ভেবে পায় না কাবেরী।এদিকে কোনরকমে যদি হাঁটুতে আর একটা চোট লাগে ঘরে বসে থাকতে হবে সারাজীবন। সংসার চালানো তো পরের কথা চিকিৎসার টাকা দেওয়ারও কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না কোথাও।

    বেশ গরম পড়েছে। টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে। নবারুণ সংঘের ক্লাবঘরে বন বন করে একটা সিলিং ফ্যান, একটা পেডেস্টাল ঘুরছে। ময়দানেও নবারুণ সংঘের একটা ছোটখাটো তাঁবু আছে, কাস্টমস তাঁবুর কাছে।

    কৌশিক দত্ত বললেন, ‘ওই স্টপারটার চিন্তা মাথায় ঘুরছে। কি দারুন অ্যান্টিসিপেশান ..... আমাদের ক্যাপাসিটি তো লিমিটেড। ওরকম একটা ডিফেন্ডার যদি পেতাম.... এখন তো খেলা ছেড়ে দিয়েছে .... একটু কমের মধ্যে হয়ে যেত। যদি একটা সিজন খেলে দিতে পারে। জানি না ওর হাঁটুর অবস্থা এখন কেমন ....’।

    মনোময়বাবু এক গ্লাস জল খেলেন ঢকঢক করে। গ্লাসটা ধুয়ে টুয়ে উপুড় করে রেখে বললেন, ‘আমি শংকরের দোকানটা চিনি। পালপাড়ায়। ওখানে সকালে বিকেলে দুবেলাই বসে। গিয়ে দেখা যেতে পারে ..... ’।

    — ‘হ্যাঁ .... তাই দেখি গিয়ে .... সিজন তো শুরু হতে চলল।’

    সকাল এগারোটা নাগাদ শংকরের দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়াল কৌশিক আর মনোময়। দোকানে একজন খরিদ্দার ছিল। সে সরে যাবার পর শংকরের মুখোমুখি হল ওরা।

    ‘হ্যাঁ ... বলুন দাদা ...’, শংকর ওদের সম্ভাব্য ক্রেতা ভাবে।

    কৌশিক দত্ত সরাসরি আসল প্রস্তাবে আসে — ‘খেলার ব্যাপারে একটু কথা ছিল ....’।

    দোকানে এসে হামেশাই অনেক ক্লাবের দাদারা শংকরের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ব্যাপারটায় সে অভ্যস্ত। খেলতে তার এখনও ভাল লাগে। তাই খেলে। কাউকেই ফেরায় না।

    — ‘হ্যাঁ বলুন ..... ম্যাচ কবে? সামনের রবিবার খালি নেই কিন্তু’।

    কৌশিকবাবু বললেন, ‘আমরা নবারুণ সংঘ থেকে আসছি।’

    শংকর চমকে উঠে কৌশিকের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে — ‘নবারুণ থেকে ... মানে সুশান্ত দত্তর নবারুণ সংঘ?’।

    — ‘হ্যাঁ .... আমি কৌশিক দত্ত, ওনার ছেলে’।

    — ‘ও আচ্ছা আচ্ছা .... গতবার আপনাদের পারফর্মেন্স তো দারুণ ছিল। একটুর জন্য প্রমোশানটা হল না। আপনারা হয়ত জানেন না আমার বাবাও একজন ভাল ডিফেন্ডার ছিলেন। তাকে বালী প্রতিভা থেকে এরিয়ানে নিয়ে যাবার ব্যাপারটা সুশান্তবাবু প্রায় পাকা করে ফেলেছিলেন। কিন্তু তখনই তো তার হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেল আর ....। বিএনআর-এর সঙ্গে খেলা ছিল সেদিন মোহনবাগান মাঠে। সবই কপাল .... যাকগে, আপনি কি যেন বলছিলেন ....’।

    মনোময় মৈত্র এতক্ষণ চুপ করে ছিলেন। তিনি বললেন, ‘আচ্ছা আপনার বাবার নাম কি প্রশান্ত সামন্ত? রাইট ব্যাকে খেলতেন?’।

    — ‘হ্যাঁ , ঠিক বলেছেন। বাবার সঙ্গে অনেকে সুধীর কর্মকারের তুলনা করত সেই সময়ে। বাবা বেশিদিন বাঁচে নি। প্রায় বিনা চিকিৎসাতেই .... সামর্থ্য ছিল না। সে যাক, বলুন .... কি জন্য ....’

    কৌশিক দত্ত বললেন, ‘আপনার বাবার নাম শুনেছি। খুব সম্ভবত দু একটা খেলাও দেখেছি সেই সময়। আমি বলেছিলাম যে, আমরা আপনাকে নবারুণ-এ চাই এই সিজনে।’

    প্রস্তাবটা শুনে বেশ অবাক হয়ে গেল শংকর।

    — ‘আমি.... মানে .... এই বয়সে আমি আর কি খেলব এখন!’

    মনোময়বাবু বললেন, ‘আমরা শিওর .... আপনার এখনও কিছু দেবার আছে। আপনি যদি রাজি হয়ে যান খুব খুশি হব। একটা কথা দিতে পারি নবারুণে আপনার অমর্যাদা হবে না।’

    — ‘কিন্তু আমি কি ক্লাব ছাড়া এক্সট্রা গেম খেলতে পারব? বুঝতেই তো পারছেন ..... যা হোক সামান্য কিছু হয় ওগুলো থেকে....’।
    — ‘না, সরি ওটা করা যাবে না। তবে ওটা নিয়ে চিন্তা করবেন না .... পুষিয়ে যাবে’, কৌশিক দত্ত বললেন।
    — ‘আচ্ছা ঠিক আছে তালে ..... একটা দিন সময় দিন ... একটু ভেবে দেখি ...’।
    — ‘হ্যাঁ নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই ..... ভেবে দেখুন .... ব্যাপারটা ফাইনাল হলে কিছু ফর্ম্যালিটিজ আছে .... আইএফএ অফিসে গিয়ে .... মানে কিছু সইসাবুদ আর কি ....’।
    — ‘ঠিক আছে। আমার বাড়িতে একদিন আসুন না। ও..ই যে .... ওই বাড়িটা .... গ্রাউন্ড ফ্লোরে...’ ।
    — ‘হ্যাঁ নিশ্চয়ই .....আপনার বাড়ি তো যেতেই হবে, একবার কেন, অনেকবার। আজ তালে আসি..... আমাকে আবার একটু চেম্বারে যেতে হবে। কিছু ক্লায়েন্টের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে’, কৌশিকবাবু বলেন।

    কৌশিক দত্ত দেওয়ানি মামলার উকিল। মনোময় মৈত্র হার্ডওয়্যার ডিলার।

    ফুটবলের স্টপারকে সারা মাঠের ঝড় ঝাপটা সামাল দিতে হয় বিচক্ষণতার সঙ্গে। স্ট্রাইকারের মতো সে দর্শকের নয়নের মনি হয় না কখনও। তার নেই কোন গ্ল্যামারের মোড়ক। দায়িত্বশীল গৃহকর্ত্তার মতো নিশ্ছিদ্র মনোনিবেশে সদা সতর্ক থাকতে হয় তাকে দলকে নিরাপদে রাখতে। প্রচারের আলো কেড়ে নিয়ে চলে যায় যার পা দিয়ে গোল হয় সে।

    কাবেরী সব শুনে বলল, ‘দেখ যদি ভাল কিছু হয়। ভগবান যদি একটু মুখ তুলে চায়। তিনটে ছেলেমেয়ে কি করে যে মানুষ হবে কে জানে। পড়াশোনা তো কারোরই হল না। অক্ষরের এই কাজের ওপর কিছু ভরসা আছে? দূর .... দূর । কিন্তু চিন্তা হয় তোমার পায়ের হাঁটুর কথা ভেবে। ফের যদি কোন চোট লাগে..... তুমি খেলতে যাও আমি বড্ড চিন্তায় থাকি ..... ’।
    — ‘বাঁ হাঁটুটা ঠিকই আছে। ডান হাঁটুটা নিয়েই চিন্তা। ওই সময়ে যদি অপারেশনটা করিয়ে নেওয়া যেত .... কিন্তু তা তো হল না। পয়সা কোথায়? এখনও যদি অপারেশনটা করানো যায়, আরও কিছুদিন খেলে দিতে পারব। কিন্তু ....’।
    — ‘এদের বলে দেখ না। যদি কিছু ব্যবস্থা করতে পারে ....’।
    — ‘কাদের?’
    — ‘ওই যারা এসেছিল .... নবারুণ সংঘ না কি যেন ....।’
    — ‘আরে দূর .... ওরা এসব ঝক্কি নিতে যাবে কেন? তোমার মাথা খারাপ নাকি! ওরা এসেছিল ওদের ধান্দায়।’

    তবে পরে একসময়ে প্রমাণ হয়েছিল কাবেরীর মাথা খারাপ হয়নি এবং ঝক্কি কেউ কেউ নিতে রাজি থাকে।

    পরের দিন সকালে দোকান থেকে কৌশিক দত্তকে ফোনে ধরল শংকর।
    — ‘হ্যাঁ, হ্যালো ..... আমি রাজি আছি। তবে রবিবারের ম্যাচটা কিন্তু আমায় খেলতেই হবে। ওদের কথা দিয়েছি। মানিকতলায় স্কটিশচার্চ কলেজের মাঠে খেলা।’

    কৌশিক দত্ত বললেন, ‘আচ্ছা ঠিক আছে, তাই হোক। কোন দুটো টিম?’
    — ‘বরানগর ইউনাইটেড আর জর্জ টেলিগ্রাফ। আমি বরানগর ইউনাইটেডে খেলব। ফ্রেন্ডলি ম্যাচ, কিন্তু প্রেসটিজ ফাইট হবে। জর্জে পাঁচটা ফার্স্ট ডিভিশানের প্লেয়ার আছে। টাফ গেম হবে ....’।
    — ‘ও আচ্ছা আচ্ছা ..... রোববার, স্কটিশ চার্চের মাঠে? যেতে পারি ..... অল দা বেস্ট।’
    কৌশিকবাবু ফোন ছেড়ে দিলেন।

    খেলা শুরু হবার সাত আট মিনিটের মধ্যে জর্জ টেলিগ্রাফ খেলা ধরে নিল। একসময়ে একটানা অনেক বছর ফার্স্ট ডিভিশানে খেলেছে জর্জ। সেই ট্র্যাডিশানের রেশ তো থাকবেই।

    বরানগরের ফাইনাল থার্ডে জাঁকিয়ে বসল। প্রচুর পাস খেলতে লাগল। স্কটিশের মাঠ বেশ মসৃন। ভাল ঘাসও আছে। লেফট উয়িংটা এদের রাইট ব্যাককে নাকানি চোবানি খাওয়াতে লাগল। ক্রসের পর ক্রস ভেসে আসতে লাগল। লাগাতার স্পট জাম্পে হাওয়ায় ভেসে উঠতে লাগল একটা চল্লিশ বছরের ছিপছিপে শরীর। হেডিং-এর মাপা টাইমিং-এ ছিটকে যেতে লাগল বল।
    কিন্তু কতক্ষণ এইভাবে আটকে রাখা যাবে টেলিগ্রাফকে! শংকর দেখল বরানগরের মাঝমাঠের কোন অস্তিত্ব নেই। সে পুরো ডিফেন্ডিং জোন একাই কভার করতে লাগল হয় পায়ে, নয় মাথায়। এক স্ট্রাইকারে খেলছে দলটা। স্ট্রাইকারটার স্কিল আছে মনে হল শংকরের। কিন্তু ওকে সাহায্য করার লোক নেই। শংকর চিন্তা করল ওদিকে লোক না বাড়াতে পারলে মুশকিল আছে। লাগাতার এই চাপ কতক্ষণ নেওয়া যাবে! স্ট্রাইকারটা সেন্টার লাইনের কাছাকাছি ঘোরাঘুরি করছে। শংকর খেলছে ডানদিকের স্টপারে। সে দেখল লেফট স্টপারের অল্পবয়সী ছেলেটা মোটামুটি মন্দ নয়। যদিও দশ মিনিটের মধ্যে দুবার বিশ্রীরকম বিট হল। শংকর তার বহুবছরের অনুমান ক্ষমতার জোরে স্লাইডিং ট্যাকল করল ওদের দুটো স্ট্রাইকারের মাঝখানে গিয়ে পেনাল্টি বক্সের বাঁদিকে। কুড়ি মিনিট কেটে গেল। যেভাবেই হোক এখনও আটকে রাখা গেছে জর্জকে। তেইশ মিনিটের মাথায় বক্সের দশ গজের মাথায় জর্জের দশ নম্বর একটা ফাঁকা বল পেল। গোলের মুখ একশ আশি ডিগ্রী খোলা। যে কোন এক দিক দিয়ে বল ঠেললেই হল। দশ নম্বর পা তুলল ইনস্টেপ দিয়ে ডানদিকের পোস্টে ঠেলবে বলে ....

    ঠিক ইটালির সদ্যপ্রয়াত ডিফেন্ডার মালদিনির মতো একটা নি:শব্দ ট্যাকল হল .... সামান্য বডি কন্ট্যাক্ট .... কোমরের একটা মোচড়ে চল্লিশ বছর বয়সী এক স্টপারের পায়ে বল চলে এল। গোলকিপার ততক্ষণে তার আন্দাজ মতো ডানদিকে আগাম ঝাঁপ মেরেছে।

    সে মাটিতে পড়ে থেকে দেখল শংকর সামন্ত একটা নিখুঁত উল্টো টার্ন নিল বল পায়ে। সামনে যে সাত নম্বরটা ছিল টাল খেয়ে কেটে গেল ডানদিকে। জর্জের নজন বরানগরের অর্ধে। শংকর উঁচু করে বল তুলল দলের স্ট্রাইকারের উদ্দেশ্যে। স্ট্রাইকার উজ্জ্বল পালিত বল ধরল বিপক্ষের রাইট হাফের জায়গায় অফসাইড বাঁচিয়ে।
    বরানগর ইউনাইটেডের প্রেসিডেন্ট প্রদীপ ঘোষ বলে উঠলেন ‘শংকরের কোন জবাব নেই এখনও ....’।

    ঠিক এই মুহুর্তে শংকরের ডান হাঁটুতে আচমকা একটা পুরনো ব্যথা কামড়ে ধরল। সে মাঠে বসে পড়ল।

    প্রদীপ ঘোষ আঁতকে উঠলেন।

    রেফারি খেলা থামালেন না। উজ্জ্বল বল নিয়ে ছুটছে। রেফারিও ওদিকে ছুটছেন। বক্সের বাঁদিকে লেফট স্টপারকে উজ্জ্বল একবার ইনসাইড, তারপরে আউটসাইড ডজ করল ছবির মতো। গোলকিপার উপায় না দেখে লাইন ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে।

    উজ্জ্বল মাথা ঠান্ডা রেখে গোলকিপারের মাথার ওপর দিয়ে চিপ করল গোলে।

    প্রদীপ ঘোষের সঙ্গে তার লোকজন আনন্দে উদ্বাহু হয়ে লাফাতে লাগল। গোটা দল হুমড়ি খেয়ে পড়ল উজ্জ্বলের ওপর।

    এবার সকলের নজর গেল মাটিতে পড়ে থাকা শংকরের দিকে। সাইডলাইনের ধারে দাঁড়িয়ে খেলা দেখা কৌশিক দত্ত এবং মনোময় মৈত্রর মুখ যন্ত্রনায় কুঁচকে গেল। কেঁপে উঠল তাদের বুকের ভিতর পুষে রাখা স্বপ্ন।

    (পরের অংশ পরের পর্বে)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন