এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  বইপত্তর

  • রান্না ও বই 

    Chayan Samaddar লেখকের গ্রাহক হোন
    বইপত্তর | ১৭ নভেম্বর ২০২১ | ১৮৯৮ বার পঠিত
  • রন্ধনশাস্ত্রকে সংস্কৃতে বলে সূপশাস্ত্র। এটি ছিল অথর্ববেদের অঙ্গ। প্রাচীন ভারতের খাদ্য-শিল্প সম্পর্কে গিরীশচন্দ্র বেদান্ততীর্থ লিখেছেন, ‘আর্য্য সাহিত্যে অতি প্রাচীনকাল হইতেই পাকবিদ্যার সবিশেষ পরিচয় পাওয়া যায়। অন্যান্য বিদ্যার ন্যায় এই বিদ্যাও সভ্যসমাজে বিশেষ পরিচিত ছিল। এমনকি স্বাধীন রাজা এবং রাজপরিবারবর্গও আগ্রহের সহিত এই বিদ্যা শিক্ষা করিতেন। পুণ্যশ্লোক নৈষধ এবং মধ্যম পাণ্ডব ভীমসেন এই বিষয়ে উদাহরণ স্বরূপ উপন্যস্ত হইবার যোগ্য। বাৎস্যায়নের কামসূত্রে এবং তাহার টীকায় এই বিদ্যা চতুঃষষ্টিকলার অন্যতম বলিয়া কথিত হইয়াছে।‘
     
    এত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিদ্যা হওয়া সত্ত্বেও বাংলা ভাষার হাজার বছরের ইতিহাসে উনিশ শতকের আগে কোনও রান্নার বইয়ের খবর নেই। বাংলা ভাষার প্রথম রান্নার বই হলো ১৮৩১এ প্রকাশিত বিশ্বেশ্বর তর্কালঙ্কারের লেখা ‘পাকরাজেশ্বর’। এই বইতে লুচি, কচুরি বা পাঁপর হয়েছে লোচিকা, কর্চরিকা বা পর্পট। আচারের নাম সন্ধানিকা। শেষ ছ’পাতায় রয়েছে সংস্কৃতে লেখা জীর্ণমঞ্জরী। সেখানে এক জায়গায় বলা আছে- মৃগনাভি, জয়িত্রী, কর্পুর, কুঙ্কুম বা নারকেল প্রচুর খেয়ে, অজীর্ণ হলে, সমুদ্রের ফেনা কতটা খাওয়া দরকার! 
     
     এরপর বলতে হয় ১৮৫৮ সালে বর্ধমানরাজ মহাতাব চন্দ-এর বহু অর্থব্যয় করে প্রকাশ করা ‘ব্যঞ্জন রত্নাকর’-এর কথা। এর নামপত্রে বলা হয়েছিল, ‘বর্ধমানাধিপতি মহারাজাধিরাজ শ্রীলশ্রীযুক্ত মহাতাবচন্দ বাহাদুরের অনুমত্যনুসারে ও ব্যয় দ্বারা মুনসি শ্রীমহম্মদী, শ্রী গোলাম রব্বাণী ও তারিণীচরণ গঙ্গোপাধ্যায় এবং শ্রীশ্রী নরনারায়ণ হাজরা কর্ত্তৃক নেয়ামৎ খান পুস্তক হইতে অনুবাদিত হইয়া কলিকাতা তত্ত্ববোধিনী সভার যন্ত্রে মুদ্রিত হইল।‘ রোটী, আঁশ, কালিয়া, পলান্ন, শূল্য, হরীসা, ষষ্ঠরঙ্গ মাংস, তবকী সোমসা, অন্ন, দালি – মোট এই ক’রকম রান্নার বর্ণনা আছে এতে। কত রকমের খাবার! তবে সবই রাজসিক। ছাগতৈল আর পেস্তার গুঁড়ো মেখে দুগ্ধাক্ত শীরমাল; দুধ, দই, জায়ফল, লাহোরীলবণ দিয়ে আরক্ত শীরমাল; তাফতাঁ, ছোয়ারা তন্দুরী, বাখরখানি আর আম্রমাংস-পুরিকা। মাংস, মিষ্টি সবেরই এলাহি ধরন-ধারণ।
     
     
    'ব্যঞ্জন রত্নাকর’-এর দ্বিতীয় সংস্করণ বেরোয় ১৮৬৫তে। এরপর ১৮৮৩ পর্যন্ত রান্নার বইয়ের হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না। ১৮৭৯ সালে ‘পাক প্রবন্ধ’ নামে একটা রান্নার বইয়ের বিজ্ঞাপন পাওয়া যায়। লেখকের নাম ‘বাঙালি ভদ্রমহিলা।‘ দাম-পাঁচ আনা। তাতে ছিল,’দুর্লভ সুচারু মুসলিম, হিন্দু এবং অন্যান্য ডিস-এর পরীক্ষিত পাক প্রণালী।‘ কিন্তু, এ বইটি কেউ চোখে দেখেননি। বাংলা ভাষায় প্রথম ঠিকঠাক রান্নার বই লেখেন বিপ্রদাস মুখোপাধ্যায়।
     
    ১৮৮৩ সালে বিপ্রদাস একটি সচিত্র রান্নার পত্রিকা প্রকাশ করেন। মাসিক পত্রিকা। নাম ছিল তার ‘পাক প্রণালী’। কম খরচে কীভাবে সুস্বাদু অথচ পুষ্টিকর খাবার বানানো যায় বাঙালি মহিলাদের সেটাই শেখাতে চেয়েছিল এই পত্রিকা। বিপ্রদাস তাঁর পাঠক্রমে রেখেছিলেন হাঁসের ডিম, মুঘলাই কোফতা, ইহুদি পোলাও, পর্তুগীজ মিষ্টি, জার্মান নারকেল পুডিং, ইতালিয়ান মাংসের গোলক। বাঙালি হেঁসেলে আন্তর্জাতিকতার ছোঁয়া সেই প্রথম এল।
     
     ১৮৮৯ সালে বিপ্রদাস ‘শৌখিন খাদ্যপাক’ নামে একটি বইয়ের প্রথম ভাগ প্রকাশ করেন। তাতে ছিল : পোলাও, মশলাদার কারি, কোর্মা, শিক কাবাব, কোফতা, চপ, কাটলেট প্রভৃতি। বইটির দ্বিতীয় ভাগে ছিল ফ্রায়েড ফিশ, মাটন চপ, ওমলেট, ইংলিশ কারি, হোয়াইট সস, ব্রেড ইত্যাদি ইংলিশ ডিসের রন্ধন-প্রণালী। ‘শৌখিন খাদ্যপাক’- এর দ্বিতীয় খণ্ডে যুক্ত হয় প্রথম খণ্ডের দ্বিতীয় ভাগও। অবশেষে এই সব কিছু নিয়ে পাঁচ খণ্ডে বেরোল প্রায় পাঁচশ পাতার বই ‘পাক প্রণালী।‘ শেষ খণ্ডের তারিখ ১৮৯৩ সাল। ১৯৮৭তে প্রকাশিত এর প্রথম আনন্দ – সংস্করণে চোখ বোলালে যে কেউ বিষয়ের ব্যাপ্তি আর রাঁধার উপায়ের বৈচিত্র্য দেখে অবাক মানবেন। এখানে বলে রাখি মূল বইয়ের ‘মিষ্টান্ন পাক’ অংশটি এই সংস্করণে নেই। ‘মিষ্টান্ন পাক’ নাম দিয়েই সেটিকে আলাদা করে ছাপানো হয়েছে।
     
    এই বইতে কী আছে? কী নেই বলা সহজ হবে। মা ঠাকুমা দিদিমারা যত রকম মসলার ব্যবহার জানেন সব বিপ্রদাসে আছে। যত রকম শাকের ব্যবহার জানেন ,আছে তাও। হিঞ্চে শাক, বেতের ডগা, সজনে পাতা, থোড়, গোল আলু, ফুল কপি, বাঁধা কপি, ওলকপি, টম্যাটো; সব রকম মাছ, ইলিশ, নোনা ইলিশ সমেত। মাংসের মধ্যে আছে মেষ, ছাগ, হরিণ, শশক, কুক্কুট,হাঁস, পায়রা, এমনকি ঝিনুকও! দিশি খাবার ছাড়াও আছে প্রচুর বিদেশী খাবার। ইংরিজি ডিসের পাশাপাশি আছে আইরিশ স্টু, পর্তুগিজ ভিন্দালু, সুইস অ্যাপল পুডিং,জার্মান পুডিং, আলুর ফ্রেঞ্চ বল, ডিমের নেপালী কারি, মাংসের ইহুদী কাবাব, মটনের ফ্রেঞ্চ কাটলেট।
     
     মিষ্টান্ন পাক’ অংশে বিপ্রদাস বলছেন কলকাতায় ঊনপঞ্চাশ রকম সন্দেশ পাওয়া যায়, ক্ষীরের মিষ্টি আঠারো রকম, গুড় বা চিনির মিঠাই এগারো রকম। ঘিয়ের খাবার বা জল খাবার পঁচিশ রকম। লেডি ক্যানিং পান্তুয়া লেডিকিনি নামে আজও টিঁকে থাকলেও, লর্ড রিপন, গুড মর্নিং, চালতাফুল, জোড়া পরী এসব সন্দেশের নামই শোনা যায় না আজকাল। নিরামিষ খাবারের মধ্যে আছে একুশ রকম লুচি, চৌত্রিশ রকম রুটি আর একত্রিশ রকম পরোটা। এর চেয়েও আকর্ষক হলো ‘স্ত্রীলোকদিগের শরা সাজাইবার ব্যবস্থা।‘ এখানে বলা হচ্ছে, ‘ভোজের দিন স্ত্রীলোকেরা মাছ ও মিষ্টান্ন পুরুষদিগের তুলনায় অনেক বেশি খাইয়া থাকেন এবং প্রচুর খাইবার পরেও তাঁহারা নিজেরা, তাঁহাদের সন্তানগণ ও দাসীরা হাতে করিয়া মিষ্টান্নের শরা লইয়া যাইতে বিশেষ পছন্দ করেন। স্ত্রীলোকদিগের শরায় অন্ততঃ আট প্রকার বৃহৎ গরণের মিষ্টান্নাদি দিতে হয়। যেমন- অমৃতি, বালুশাহী, খাজা, উত্তম মতীচুর, বা মন্ডা, পান্তুয়া, সন্দেশ, কচুরী ও সিঙ্গোড়া।‘
     
     এসব ছাড়াও বিপ্রদাসের বইয়ে আছে রোগ বালাইয়ের জন্য পথ্যাপথ্যের খবর, খাদ্যসমূহের গুণাগুণ এবং সবশেষে দশটি আদর্শ মেনু। যুগ পরিবর্তনের একটা ছবিও পাওয়া যাচ্ছে এখানে –
     
    ‘আজিকালি অনেক স্থানে পাথুরিয়া কয়লার জ্বালে রন্ধন শুরু হইয়াছে। কয়লার উনুনের রন্ধনপ্রণালী স্বতন্ত্র। নানা আকারের লৌহের উনান ব্যবহার আরম্ভ হইয়াছে।‘ এছাড়াও আছে ‘স্পিরিট স্টোভ’ ও ‘কেরোসিন স্টোভের’ উল্লেখ।কাঠ চকমকির দিন ফুরিয়েছে। সভ্য উনিশ শতক বদলে দিয়েছে ‘ভদ্র বাঙালি বাড়ি’র পাকশালা।
     
     ১৮৮৪ সাল থেকেই ‘বামাবোধিনী’ পত্রিকা বিশেষ বিশেষ রন্ধন প্রণালী প্রকাশ করতে আরম্ভ করে। ১৮৯৫ সালে ‘মহিলা’নামের আরএকটা সাময়িকীও নানারকম রান্নার পদ্ধতি শেখাতে উদ্যোগী হয়। ১৮৯৭ থেকে ‘পুণ্য’ নামের এক পত্রিকার সম্পাদিকা হিসেবে রান্না শেখাতে আরম্ভ করেন রবীন্দ্রনাথের মেজদাদা হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বিতীয়া কন্যা প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবী। ১৮৯১ সালে প্রজ্ঞাসুন্দরীর বিয়ে হয় আসামের লক্ষ্মীনাথ বেজবড়ুয়ার সঙ্গে। বিয়ের পর স্বামীর সাহায্য আর উৎসাহে রান্না নিয়ে রীতিমত গবেষণা আরম্ভ করেন প্রজ্ঞাসুন্দরী। এই গবেষণার ফল হিসেবে ১৩০৭ বঙ্গাব্দ বা ১৯০০ সালে প্রকাশিত হয় ‘আমিষ ও নিরামিষ আহার – প্রথম খণ্ড।‘ এই বইতে ছিল শুধু নিরামিষ রান্নার প্রণালী। শোনা যায় কাছাকাছি সময়ে আরও নিরামিষ রান্না নিয়ে একটা দ্বিতীয় খণ্ডও প্রকাশিত হয়েছিল। ১৩১৪ সন বা ১৯০৭ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর বইয়ের তৃতীয় খণ্ড। বেশ হৃষ্টপুষ্ট বইটি। সম্পূর্ণ ভাবে আমিষ রন্ধনপ্রণালী নিয়ে লেখা। ১৩২১ বঙ্গাব্দ বা ১৯১৪ সালে নিরামিষ আর আমিষ রান্না মিলিয়ে এক সংক্ষিপ্ত গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল। 
     
     প্রজ্ঞাসুন্দরী মারা যান ১৯৫০ সালে। তারপর তাঁর মেয়ে রত্নাবলী দেবীর চেষ্টায় বইগুলো আরএকবার ছাপানো হয়। ১৯৯৫তে নাতনি ইরা ঘোষের সম্পাদনায় প্রকাশিত দুই খণ্ডে আমিষ ও নিরামিষ রন্ধনপ্রণালীগুলি। ষাট বছর ধরে লেখা প্রায় আড়াই হাজার রান্নার পদ্ধতি। এই বইতে চালু রান্না ছাড়াও লেখিকার সৃষ্টি করা নানারকম পদের বর্ণনা আছে। আছে ‘রামমোহন দোলমা পোলাও’, ‘দ্বারকানাথ ফির্নি পোলাও’, ‘বিদ্যাসাগর বরফি’ বানানোর উপায়। রয়েছে ‘কবি সম্বর্ধনা’ বরফির কথা।রবীন্দ্রনাথের পঞ্চাশতম জন্মদিনে কপি, খোয়াক্ষীর, বাদাম, কিসমিস, জাফরান পাতা, আলতা আর সোনারুপোর তবক দিয়ে পরাত ভরে বানানো এই বরফি খেয়ে কেউ বোঝেননি যে এটা ফুলকপি দিয়ে বানানো। এ মিষ্টি খেয়ে রবি ঠাকুর কী বলেছিলেন তার কোনও সন্ধান পাওয়া যায় না। এই বইতে ধরা আছে গাঢ় শোকের চিহ্নও। তাঁর অকালে চলে যাওয়া পাঁচ বছরের মেয়ে ,যে নতুন ধরনের পায়েস করতে ফরমায়েস করেছিল, ‘সুরভি পায়েস’ তারই স্মৃতি। রান্না ছাড়াও প্রজ্ঞাসুন্দরীর বইয়ে আছে সংসারের খুঁটিনাটি, নানারকম টোটকার বিবরণ, পশুপাখির যত্ন, বাসন মাজা,কাপড় কাচা, বাজার দর আর রান্নার পরিবেশ। অর্থাৎ এক কথায় এই বই গার্হস্থ্য বিজ্ঞানের বিশ্বকোষ।
     
     ১৯২১ সালে বেরিয়েছিল কিরণলেখা রায়ের ‘বরেন্দ্র রন্ধন’। ভাজা, পোড়া, সেদ্ধ, আঁশ, নিরামিষ, পোলাও, অম্বল, চাটনি, আচার, কাসুন্দি সবই এতে আছে। শিককাবাব রান্নার বর্ণনা দিতে গিয়ে লেখিকা জানিয়েছেন এটি শ্রীরামচন্দ্রের প্রিয় খাদ্য ছিল; তার অনেক প্রমাণও দিয়েছেন রামায়ণ থেকে, ভট্টিকাব্য থেকে। জানিয়েছেন বরেন্দ্র নিরামিষ রান্নায় হলুদ পড়ে না। বইতে পাতায় পাতায় ছড়ানো আছে প্রবাদ, প্রবচন, পাণিনিসূত্র বা চৈতন্যচরিতামৃতের উদ্ধৃতি। তাঁর অসামান্য প্রবন্ধ ‘রান্নার বই প্রসঙ্গে’তে কল্যাণী দত্ত জানিয়েছেন যে কিরণলেখা ‘খাসি আর ডাহুক পাখি লাউ দিয়ে খেতে ভালো বলতে গিয়ে বলছেন –‘এক ডাহুক সাত লাউ মজায়।‘কচি পাঁঠার কালিয়ার কথায় বলেছেন-
     
    উচ্ছে বীচি, পটল কচি। সাকের ছা, ,মাছের মা।
     
    কচি পাঁঠা বৃদ্ধ মেষ। দধির অগ্র ঘোলের শেষ। (প্রবাদ)।‘
     
     ১৯২৪ এর আশপাশে বেরিয়েছিল বনলতা দেবীর ‘লক্ষ্মীশ্রী’। এতেও আমিষ, নিরামিষ, শাক,শুক্তো, মণ্ডা, মিঠাই ছাড়াও ছিল দুই নতুন পদ – চিংড়ি মাছের মায়ারানী আর উমারানী। এরা কারা কে জানে! কল্যাণী দত্ত বলছেন, ‘রান্নাঘর পরিষ্কার রাখার কথায় লেখিকা বলেছেন,’গৃহিণী রঙীন শাড়ী পরিয়া চুল সামলাইয়া মাথায় রুমাল বাঁধিয়া রান্নাঘরে প্রবেশ করিবেন।‘ মাথার চুল যেন খাবারে না মেশে সে সম্বন্ধে সতর্কতা ছাড়াও রান্নার একটা নান্দনিক দিকও আছে এই কথা ভেবেছিলেন বোধহয় লেখিকা।
     
     ১৩৩৬ সালে শরৎ চন্দ্র দাসের ‘বিশুদ্ধ পাক-প্রণালী’ বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়। প্রথম সংস্করণ বিষয়ে কিছু জানা যাচ্ছে না। বইটির শুরুতেই আছে এক উপক্রমণিকা। তার শিরোনাম ‘রন্ধন’। সেখানে লেখক বলছেন,
     
     “হিন্দু রমণী মাত্রেরই রন্ধন বিষয়ে বিশেষ অনুরাগ থাকা উচিত। রন্ধন –কার্য্য শিক্ষা করা তাঁহাদের বিশেষ আবশ্যকীয়। আমি ধনবানের কন্যা, ধনবানের গৃহিণী, আমার বাড়িতে দশজন পাচিকা বা পাচক আছে, আমাকে রন্ধন করিতে হইবে না, এরূপ মনে করিয়া কার্পেট বোনা, নভেল পড়া ইত্যাদি বৃথা কার্য্যে সময় ক্ষেপ করা নিতান্ত অন্যায়।’
     
     মানছি, বিশ্রী পিতৃতান্ত্রিকতার গন্ধভরা। কিন্তু, যুগসত্তার বাইরে লেখক যান কী করে? তিনি আরও বলেছেন,
     
     “স্বহস্তে সুচারুরূপে পাক করিয়া স্বামী, শ্বশুর, শ্বাশড়ী, পিতা, মাতা ইত্যাদি আত্মীয়- স্বজনকে পরিতোষ পূর্ব্বক আহার করাইতে পারিলে মনে যে কি এক অভূতপূর্ব্ব আনন্দের উদয় হয়, তাহা ভুক্তভূগী ভিন্ন আর কেহই অনুভব করিতে পারে না।”
     
     পিতৃতান্ত্রিক রক্ষণশীলতাটুকু বাদ দিলে কিন্তু, রান্না সম্বন্ধে লেখকের দৃষ্টিভঙ্গীটি যেমন বিজ্ঞানসম্মত, তেমন বাস্তবমুখী। তিনি মনে করেন রন্ধনশিল্প হাতে কলমে আয়ত্ত করতে হয় –“লিখিতে লিখিতে লোকের হস্তাক্ষর ভাল হয়,তেমনই রন্ধন করিতে করিতে একটা বিশেষ দক্ষতা লাভ করা যায়।” দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন রকম রান্নার বই যে ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে, সে বিষয়ে লেখক অবহিত। বিপ্রদাসের ‘পাক প্রণালীর’-র খবর তো তিনি নিশ্চিত রাখতেন। তাঁর নিজের বইয়ের নামই তার প্রমাণ। তিনি বিপ্রদাসের চেয়ে অনেক বেশি ‘বিশুদ্ধ’ ভাবে রান্না ব্যাপারটা জানেন, এমনই যেন তাঁর বক্তব্য; আর তিনি স্পষ্ট বলছেন –‘কেবল পুস্তক পাঠ করিলে রন্ধন কার্য্য শেষ করা যায় না।’ আসল কথা, বিপ্রদাসের বই পড়লে মনে হয়, তিনি একটু সম্পন্ন পরিবারের কথা ভেবে লিখেছিলেন। অন্যদিকে, শরৎচন্দ্র দাস লিখছেন মধ্যবিত্ত গেরস্থালির কথা ভেবে। তাই, তিনি তাঁর বইতে বাসি ভাতকেও না ফেলে দিয়ে, কেমনভাবে টাটকা ভাতের সঙ্গে মিশিয়ে আবার খাওয়া যায়, তার উপায় বলেছেন। টানাটানির সংসারে কোনওকিছুই অপচয় না করলেই ভালো। রান্না সম্বন্ধে বলতে গিয়ে লেখক ভেবেছেন কতজন খাবে, তার কথাও। জানিয়েছেন কোথায় রান্নার কোন উপাদান উৎকৃষ্ট মানে পাওয়া যায়, বাজার করা ধরন, এমনকি রান্নাঘর, উনুন, বাসনপত্তর কী ভাবে ব্যবহার করা উচিত। কীভাবে কম খরচে উৎকৃষ্ট পদ রাঁধা যায় (মাছের পোলাও) বা আমাদের চারপাশে ছড়ানো ছিটনো জিনিস ভ কেমন করে রান্নার কাজে লাগান যায় বলেছেন তাও। দেখা যাচ্ছে তিনি জানেন, ‘কলাইয়ের দাইল মধ্যবিত্ত গরীব গৃহস্থের পরম বন্ধু।’ বলছেন, কয়লার জায়গায় এখন গুল দিয়ে রান্না হয়। দেশি বাঁধাকপি বা ফুলকপি, সাঁতরাগাছির ওল, কালীঘাটের কচি পাঁঠা কিনতে পরামর্শ দিচ্ছেন; জানাচ্ছেন কোন কোন খাবার কফ নাশক,দূষিত রক্তশোধক বা বলবৃদ্ধিকারক। রোগীর জন্য পলতার ডালনা, শিশুদের জন্য কাঁটা ছাড়ান নবাবী মাছভাজা থেকে শুরু করে বিরিয়ানি, কালিয়া, কোর্মা সবরকম রান্নার কথাই বলেছেন তিনি। বিংশ শতকের প্রথমভাগে, বাঙালি মধ্যবিত্তের আর্থ-সামাজিক অবস্থান নির্ধারিত পারিবারিকবৃত্তের মধ্যে তার খাদ্যাভ্যাস ও রসনাতৃপ্তির মধ্যে দিয়ে সম্পর্কের রূপ নিরূপণ করার যে চাহিদা, তারই মূর্তরূপ হলো ‘বিশুদ্ধ পাক-প্রণালী’। 
     
     বিখ্যাত রান্নার বইয়ের শেষ নেই। ১৯৫৩তে এম সি সরকার থেকে বেরোয় সুলেখা সরকারের ‘রান্নার বই’, একই প্রকাশনার স্নেহলতা দেবীর ‘আচার ও মোরব্বা’ (প্রকাশকাল অজানা)তে একটা দারুণ ভূমিকা লিখেছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র। ১৯৭৬ এ পাত্র পাবলিশার্স থেকে বেরোল, বেলা দের 'গৃহিণীর অভিধান' (নাকি আরও আগে বেরিয়েছিল?)। এক সময়ে বাঙালি গিন্নিদের কাছে অপরিহার্য ছিল এই বই। ১৯৭৯তে মেয়ে কমলা চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে লীলা মজুমদার লিখেছিলেন ‘রান্নার বই’। বই তো নয় সে একটা উচ্চ মানের শিল্পকীর্তি। ১৯৮৬তে বেরিয়েছিল পূর্ণিমা ঠাকুরের ‘ঠাকুর বাড়ির রান্না’, ঠাকুরবাড়ির নিজস্ব রান্না নিয়ে লেখা। ১৯৮৮তে প্রকাশ পায় সাধনা মুখোপাধ্যায়ের ‘বাচ্চাদের টিফিন’; ২০০৬তে রুকমা দাক্ষীর ‘মাইক্রা আভেনে রান্না’; ২০১১তে শুভ্রা সেনের ‘রকমারি কাবাব’; ২০১২তে আশা মুখোপাধ্যায়ের ‘চটজলদি জলখাবার’। এই সব বইয়েরই প্রকাশক আনন্দ পাবলিশার্স।
     
     নিশ্চিতভাবে বহু বইয়ের নাম বাদ গেল। তবু বোধহয় বাংলা রান্নার বইয়ের ইতিহাসের একটা মোটামুটি রূপরেখা দিতে পেরেছি। একটা প্রশ্ন মনে জাগে। কী দরকার এসব বইয়ের? ক্লদ লেভি স্ত্রাউস বলেছিলেন সমস্ত কালচার তার রান্নাবান্নার মধ্য দিয়ে একটা বার্তা পাঠায়।বাংলা রান্নার বই সেই বার্তার বাহক। এইসব বই একটা জটিল সংস্কৃতির গল্প শোনায়। একটা ক্রমাগত গড়ে ওঠা কালচারের রুচির, ঠিক-বেঠিকের ধারণার, এমনকি শ্রেণীবিভাজনেরও ডিসকোর্স গড়ে এই বইগুলো। 
     
    এই বিভাজন ধনী দরিদ্রের। কেমন? ধরা যাক, এক রাজবাড়ির কথা। কীরকম রান্নাবান্না হতো সেখানকার হেঁসেলে? তেমন কোনও দলিল পাইনি আমরা। শুধু জানি যে রাজ পরিবারের গৃহদেবতা ছিলেন গোপীমোহন। ফলে অনুমান করাই যায় যে, আদিযুগে বর্ধমান রাজবাড়ির মতো কোর্মা, কালিয়া, কাবাব, রান্না হতো না সে রাজবাড়ির রসবতীতে। এই বংশের আদিপুরুষের মাতৃশ্রাদ্ধের যে বর্ণনা,১৮৬১ সালের মুখার্জীস ম্যাগাজিনে পাচ্ছি তাতে কোথাও মাংসের উল্লেখ নেই। মণ্ডা, মিঠাই, দুধ, দই, ক্ষীরের বর্ণনা। মাছ ছিল কি? বলা শক্ত। বাঙালি বাড়ি যখন, থাকতেও পারে। 
     
     এরপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। বদলেছে বাঙালির খাদ্যাভ্যাস। কী ভাবে বদলেছে তার আভাস রান্নার বইগুলো নিয়ে কথা বলার সময় খানিকটা পেয়েছি আমরা। এবার একটা দীর্ঘ ঊদ্ধৃতি থেকে বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করব বদলটা কীরকম ছিল। ‘রান্না খাওয়া’ প্রবন্ধে অরুণ নাগ শরৎকুমারী চৌধুরাণীর ‘মেয়ে যজ্ঞি’ থেকে অংশবিশেষ তুলে বোঝাতে চেয়েছেন ১৯০৮ সালে কলকাতার ধনীগৃহে শুভ অনুষ্ঠান উপলক্ষে ভোজের মেনু কী হতো। আমরা সেখান থেকেই ঊদ্ধৃত করছি :
     
    ‘রান্না হইয়াছে পোলাও, কালিয়া, চিংড়ির মালাই কারি, মাছ দিয়া ছোলার দাল, রোহিতের মুড়া দিয়া মুগের দাল, আলুর দম, ছোকা, মাছের চপ, চিংড়ির কাটলেট, ইলিস ভাজা, বেগুন ভাজা, শাক ভাজা, পটোল ভাজা, দইমাছ, চাটনি, তার পর লুচি, কচুরি, পাঁপরভাজা; একখানি সরাতে খাজা, গজা, নিমকি, রাধাবল্লভি, সিঙ্গাড়া, দরবেশ মেঠাই; একখানা খুরিতে আম, কামরাঙ্গা, তালশাঁস ও বরফি সন্দেশ; আর একখানায় ক্ষীরের লাড্ডু, গুজিয়া, গোলাপজাম ও পেরাকী।ইহার উপর ক্ষীর, দধি, রাবড়ি ও ছানার পায়স। বাবুদের জন্য মাংসের কোর্মা ছিল, কিন্তু মেয়েরা অনেকেই মাংস খান না, এ জন্য তাহা মেয়েদের মধ্যে পরিবেশন করা হইল না।‘
     
     অরুণ নাগ আরও বলেছেন,
     
    ‘বড়োলোকের কথা থাক, মোটামুটি একই সময়ে কলকাতার সাদামাটা গেরস্থবাড়ির ভোজের মেনু ছিল, শুকতো, দুই বা তিন রকম ডাল, দু’তিন রকম ভাজা, শাকের ঘন্ট, মোচার ঘন্ট, লাবড়া (ছ্যাঁচড়া), মাছের ঝোল, অম্বল, পায়েস, কলার বড়া ইত্যাদি। এই তালিকা দিয়েছেন প্রাণকৃষ্ণ দত্ত, আরও ৬০/৭০বছর আগের (অর্থাৎ ১৮৩০-৪০) কথা বলেছিলেন তাঁর মা,...”পানিহাটী গ্রামে তাঁহার মাতুলের বিবাহে সাতদিন ধরিয়া ভোজ হইয়াছিল, একদিন দুই রকম ডাল‘দেওড়’ (দো আড়া বা দুইবার) দিয়াছিল। দহিমাখা ভাত প্রকাশ্য ভোজে মাছ দিয়া খাইবার রীতি ছিল, নিমন্ত্রিতরা পূর্ব্ব হইতে মাছগুলি পাতের একপার্শ্বে সংগ্রহ করিয়া রাখিত। একদিন দধির পশ্চাতে মুণ্ডি (মিঠাই, অ.না) পরিবেশন হইতেছে দেখিয়া পূর্ব্ব সঞ্চিত মাছগুলি লোকেরা আড়ে গিলিতে লাগিল…।“’
     
     রান্নার সঙ্গে রন্ধনশিল্পীরও উল্লেখ করতে হয়। তাঁর ‘গুজিস্তা লখনৌ’ বইতে শরর ওয়াজেদ আলি শার আমলের লখনৌ-এর বহু নামকরা বাবুর্চির কথা বলেছেন, মছলি মুসল্লম প্রস্তুতকারী আলম আলী, পীর আলি যাঁর সমোসা বা সিঙাড়া ভাঙলে ভেতর থেকে একটা ছোট্ট পাখি ডানা মেলে উড়ে যেত! এমন আরও অনেকে ছিলেন। গেরস্থবাড়ির হেঁসেলে হেঁসেলে, নাম জানা বা না জানা বাবুর্চিখানায়। 
     
     এঁরা আবিষ্কার করেছেন নতুন নতুন রেসিপি। যা চেখেছেন রসজ্ঞরা। এঁরা রচেছেন খাদ্যসংস্কৃতির নতুন বয়ান। সংলাপ রচিত হয়েছে সমাজের স্তরে স্তরে। তাই নিয়ে লেখা হয়েছে। হয়ে চলেছে। এবং চলবে। 
     
     
     
    তথ্যসূত্র : 
     
    অরুণ নাগ : ‘রান্না খাওয়া’, চিত্রিত পদ্মে, সুবর্ণরেখা, ১৯৯৯।
     
    কল্যাণী দত্ত, ‘রান্নার বই প্রসঙ্গে’, পিঞ্জরে বসিয়া, স্ত্রী, ১৯৯৬।
     
    শ্রীপান্থ, ‘প্রসঙ্গ কথা’ পাকরাজেশ্বরঃ ও ব্যঞ্জন রত্নাকর, সুবর্ণরেখা,
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • বইপত্তর | ১৭ নভেম্বর ২০২১ | ১৮৯৮ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    রণছোড় - Chayan Samaddar
    আরও পড়ুন
    মালিক - Chayan Samaddar
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 68.184.245.97 | ১৮ নভেম্বর ২০২১ ০০:২৯501273
  • দেখেছেন তো নিয়ামৎ খান এর গুরুত্ব আমি কতদিন আগেই বুঝেছিলাম, কিন্তু আমার কথায় আর কে পাত্তা দেয়!
    জোকস অ্যাপার্ট, খুব ভালো লাগলো এই লেখাটা। লেখককে অনেক ধন্যবাদ।
  • The Philosopher in the Kitchen | 2600:1002:b119:d2c3:6cb9:9a45:d957:c478 | ১৮ নভেম্বর ২০২১ ০৬:০৩501275
  • বেশ 
  • b | 14.139.196.16 | ১৮ নভেম্বর ২০২১ ১৬:৪৭501284
  • লক্ষ্মীনাথ বেজবড়ুয়া। 
  • santosh banerjee | ১৮ নভেম্বর ২০২১ ১৭:৩৮501287
  • লক্ষ্মী নাথ বেজবরুয়া 'র নাতনী রত্না বরুয়া 'র সান্নিধ্য পেয়ে ছিলাম একবার। রবি ঠাকুরের "বাল্মীকি প্রতিভা" হবে, রিহার্সাল করাচ্ছেন উনি ( ঘটনার স্থান অসমের ডিবরুগড় শহর)। উনি তখন নিজ হস্তে আমাদের রান্না করে খাওয়াতেন।সে স্মৃতি ভোলার নয়।
  • Chayan Samaddar | ১৮ নভেম্বর ২০২১ ২৩:৩১501293
  • অনেক ধন্যবাদ। শুধরে নিয়েছি। এমন বিশ্রী ভুল হয়েছিল কী করে সেটাই ভাবছি!
  • গবু | 223.223.130.197 | ২৩ নভেম্বর ২০২১ ১০:০৬501383
  • ভালো লাগলো! 
     
    গুজিস্তা লখনৌ ইংরেজি অনুবাদ তো অনেক দামি দেখছি। অন্য কোনো গলিপথ আছে পাবার? মানে pdf ইত্যাদি?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট প্রতিক্রিয়া দিন