এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ভাইফোঁটা

    Sayanti Mandal লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৭ নভেম্বর ২০২১ | ৪৬১ বার পঠিত
  • ঘুমটা তখনও ভাঙে নি। বিছানাতে শুয়ে শুনতে পেলাম

    - কাল বাপের বাড়ি যাব মাসিমা। চারদিন আসতে পারব না। মা-র রান্নার লোক লক্ষ্মীর গলা।

    - সেকি রে। কাল যে ভাইফোঁটা। আমার ভাইরা সব আসবে। কাজকর্ম কে সামলাবে। আসব না বললে কিকরে হবে।

    - আমারও তো ভাইফোঁটা মাসিমা। এই একবারই তো বাপের বাড়ি যাই।

    - অন্তত সকালটা করে দিয়ে যাস। মা-র কাতর অনুরোধ।

    কিন্তু তাতে চিরে, থুরি লক্ষ্মী ভিজল না। মা সারাদিন গজগজ করতে থাকলো। প্রতি বছর এই এক নিয়ম। ভুলেও যদি বলে ফেলছ যে, “মা কুল …।” আমাদের কপালে দুঃখ নেমে আসত।

    “সেই… সারা বছর শুধু তোমাদের আপ্যায়ন করে যাই, একটা দিন যে ভাইদের যত্ন আত্তি করব তার উপায় নেই।”

    আসলে ভাইফোঁটা মার কাছে বিশেষ একটা দিন। শুধু মা নয়, লক্ষ্মী সহ সব বোনেদের যাদের ভাই আছে। আমরা দুই বোন আমাদের ভাই নেই। আমরা মার ধমক খেয়ে নেতিয়ে চুপ করে যাই।

    ভাইফোঁটা বাঙালির ঘরের উৎসব। সারা বছর যতই ভাই দাদার সাথে খুনসুটি লেগে থাকুক না কেন, এই দিনটিতে বোন ঠিক ভায়ের মঙ্গলকামনায় ফোঁটার আয়োজন করে থাকে। সকাল সকাল স্নান করে, প্রদীপ ধুপ জ্বেলে, ধান দুব্বো, চন্দন বাঁটা নিয়ে বোনেরা তৈরি থাকে। ভাইরাও নতুন পাজামাপাঞ্জাবি পড়ে তৈরি হয় যায়। শুধু কি এই। সাথে থাকে বাহারি মিষ্টির আয়োজন। ভাইফোঁটার সাথে মিষ্টির যেন এক অন্য সম্পর্ক। দোকানে দোকানে বাহারি মিষ্টির সম্ভার। সকলেই চায় ভায়ের জন্য স্পেশাল কিছু করতে। তবে শুধু মিষ্টিই নয়, সাথে সকালের পাতে থাকে লুচি আলুরদম। আবার দুপুর হতে না হতে এলাহি খাবারের আয়োজন। কারো বাড়িতে পোলাও কালিয়া, কারো বাড়িতে মাংসের গন্ধ, কারো আবার বিরিয়ানি। সাথে আরও নানা পদের যোগ। ভাইফোঁটা মানেই ঘরোয়া আড্ডা আর খাওয়া। হরে দরে সব বাড়িতেই এই বিষয়।

    ভাইফোঁটা মানে মেয়েদের পিতৃগৃহে আগমন। কাচ্চাবাচ্চা সহ। সারাবছরের সুখ দুঃখের গল্প নিয়ে। ছোটবেলায় পাড়াতুতো এইরকম দিদিদের গল্পের শ্রোতা ছিলাম আমরা… বেকারের দল।আমাদের সমবয়স্ক সোভাগ্যবান কেউ কেউ, যারা মা-দের সাথে মামা বাড়ি যেত, তাদের প্রতি হিংসে যে হত না সেটা বলা যায় না। কারণ মামাবাড়ি ভারি মজা। তাদের কাছে গল্প শুনেই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে হতো। তখন ঘরে ঘরে বাচ্চারা এখনকার মতো চিকেনের দশটা রেসিপির নাম জানত না। গতানুগতিকের বাইরে কিছু একটা নতুন শুনলেই সেটা জীবনের পরম অনাস্বাদিত জিনিস হিসেবে মনে গেঁথে যেত।

    তবে আমাদের ভাই না থাকলেও কি হবে, আমার মা বাবার ভাই বোনের সংখ্যাটা কম ছিল না। বিশেষ করে আমার মার । আমার চার মামার মধ্যে বড়মামা নিয়ম করে প্রতিবছর ভাইফোঁটা নিতে আসত। বড়মামার আসাটা ছিল একটা খুশির হাওয়া। বড়মামা মানেই গল্পের ঝাঁপি, বিকেলে বেড়াতে যাওয়া, আর ভালোমন্দ খাওয়া। কদিন আমাদের পড়াশোনা সব বন্ধ থাকত। মার ভাইফোঁটার আয়োজনে আমারা বরাবর হেল্পার। কিছু একটা করতে পারলে জীবনটা ধন্য মনে হতো। আমরা তিরিঙ বিরিঙ লাফাতাম আর আনন্দ করতাম। বাবাও সেদিন একটু বেশি উৎসাহে বাজার যেত। ভালো মাছ মাংস, তরি তরকারি, মিষ্টান্ন নিয়ে আসত। তবে লক্ষ্মীর জায়গায় তখন হয়ত সরস্বতী ছিল। তবে সেও আসত না। ভাইফোঁটা দিতে বাপের বাড়ি যেত। মার গজগজ তাই চিরকালের। ভাইফোঁটার দিনটায় আমাদের আনন্দের অভাব হত না। ‘বেগানি শাদি মে আবদুল্লা দিবানা …’ আমরা ওই দলে পড়ি। মার ভাইফোঁটাতে আমরা নেচে কুঁদে নিতাম।

    তবে সময় কি চিরকাল এক থাকে। আধুনিক কালে সব কিছুই অনলাইনে বাড়ি বসে হয়। এবার তাই মা কে জিজ্ঞেস করাতে বলল… “দুর্গা এলো কি না এলো আমার কিছু অসুবিধা নেই।( এখন মা র রান্নার লোক দুর্গা) অনলাইনে হোম ডেলিভারি বলে দিয়েছি। রান্নার ঝামেলা নেই”। মাকে রীতিমতো কুল লাগল। যুগের সাথে আরও পরিবর্তন হয়েছে। এখন শুধু ভাইফোঁটা নয়। যাদের ভাই নেই তারা দাদু ফোঁটা, দাদুভাই ফোঁটা, বোন ফোঁটা, ননদ ভাঁজ ফোঁটা…… দিতেই পারে। তাই নিশ্চিন্ত থাকা গেল না।

    ভাইফোঁটার দিন সকালে ফোনটা বেজে উঠল
    - কিরে ঘুম থেকে উঠেছিস? দিদির ফোন

    ঘুমজরানো গলায় বললাম

    - আসল কথাটা বল। কেন ফোন করেছিস।
    - তোকে আমি বোন ফোঁটা দেব ঠিক করেছি।দিদির গলায় রীতিমতো উৎসাহ।

    আমি খুব একটা উৎসাহ পেলাম না। আলসেমি অনেক দিনের।

    - আচ্ছা দিস বলে রেখে দিতে যায়। দিদি ছাড়ার পাত্রী নয়।
    - তাড়াতাড়ি উঠে তৈরি হ। আমি গিফট কিনব তোর জন্য… তুইও আমাকে গিফট দিবি। দিদির অধিকার।

    ও আজকাল তো ভাইফোঁটা মানে গিফটের রমরমা। দিদিকে থামানোর উপায় হাতরালাম।

    - আমার পকেট এখন খালি। তুই ইচ্ছে করলে ফোঁটা দিতে পারিস। গিফটটা নেক্সট মান্থে স্যালারি পেলে দেব। রাজি থাকলে বল। দিদি রাগকরে ফোন কেটে দিল।

    যাক এবছরের মতো নিশ্চিন্ত হওয়া গেল।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন