এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ‘দা ফ্লাইং ডাচম্যান’ নামে ভূতুড়ে জাহাজের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা 

    AR Barki লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ৪৯৯ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • ১৮৩৫ সালে একটা খবর সারা বিশ্বে বেশ আলোড়ন তোলে। ব্রিটিশ নৌবাহিনীর এক জাহাজ হঠাৎ করে মুখোমুখি হয় পালতোলা এক জীর্ণ শীর্ণ জাহাজের। জাহাজটি যে এগিয়ে আসছে, কেউ দেখে নি। আচমকাই যেন উদয় হয়েছে। সংঘর্ষ হতে হতেও শেষ মুহূর্তে ইংরেজ নাবিকরা সামলে নিল যেন অলৌকিকভাবে।

    তাদেরকে অবাক করে দিয়ে নেদারল্যান্ডের পতাকা ঝুলানো জাহাজটা যেন হাওয়ায় মিলে গেল নিমিষে। ঘটনাটি পত্রিকায় ফলাও করে ছাপা হয়। জার্মান নাট্যকার রিচার্ড ভাগ্নার ঘটনাটা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে লিখে ফেললেন গীতিনাট্য ‘দা ফ্লাইং ডাচম্যান’। যে কাহিনী এতদিন লোকমুখে শোনা যেত, ভাগ্নারের গীতিনাট্য সেটা দাবানলের মত ছড়িয়ে দিল সারা ইউরোপে।

    ১৮৮১ সালে HMS Bacchante নামক এক জাহাজে করে বিশ্বভ্রমণে বের হয়েছিলেন ওয়েলসের রাজপুত্র জর্জ, পরবর্তীতে ইংল্যান্ডের রাজা পঞ্চম জর্জ, তার ছোট ভাই রাজপুত্র ভিক্টর, এবং তাদের শিক্ষক জন নিল ডাল্টন। ১৮৮১ সালের ১১ জুলাই তারা অবস্থান করছিলেন অস্ট্রেলিয়ার উপকূলে। ভোর চারটার দিকে জর্জ এমন কিছু দেখলেন যেটা কল্পনারও অতীত। লগবুকে লেখা তার অভিজ্ঞতাটা ছিল -

    " জুলাই ১১। ভোর চারটে। আমরা ফ্লাইং ডাচম্যানকে দেখলাম আমাদের জাহাজ অতিক্রম করতে। ওর শরীর থেকে লাল রঙের অদ্ভুত এক আলোকচ্ছটা বের হচ্ছিলো চারিদিকে। সেই আলোতে জ্বলজ্বল করছিল জাহাজের পাল, আর মাস্তুলগুলো। ওটার সাথে আমাদের দূরত্ব ছিল দুইশ ইয়ার্ড।

    বন্দরে যে অফিসারটা পাহারায় থাকে, সেও পর্যন্ত দেখেছে ফ্লাইং ডাচম্যানকে। জাহাজের ডেকে যে কর্মচারীরা ছিল, তারাও দেখেছে। কিন্তু হঠাৎ গায়েব হয়ে গেল ওটা। শান্ত সমুদ্র। বোঝার উপায় নেই যে খানিক আগে একটা জাহাজ চলছিল এখানে। বিষয়টা মরিচিকা বলে উড়িয়ে দেবারও উপায় নেই, কারণ এক সাথে মোট ১৩জন মানুষ দেখেছে ওই ফ্লাইং ডাচম্যানকে। "

    ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান নৌ অফিসার অ্যাডমিরাল কার্ল তার বাহিনী নিয়ে ডুবোজাহাজে করে পাড়ি দিচ্ছিল সুয়েজ খাল। তখন তারা দেখেছে, ডাচম্যান তাদের দিকে তেড়ে আসছে। ঘটনাটি তারা রিপোর্টও করেছিল হিটলারের কাছে।

    ফ্লাইং ডাচম্যান মিথ চালু হওয়ার বহু আগে থেকেই এমন বহু কাহিনী পাওয়া যায় নানা সভ্যতায় নানা ভাবে। হোমারের Odyssey মহাকাব্য এবং গ্রিক মিথলজিতে পাওয়া যায় ওডিসিয়াস (Odysseus) এর কাহিনী। যেখানে নায়ক ওডিসিয়াস দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর ট্রয়ের যুদ্ধের পর চাইছিল তার ভালোবাসার নারীর কাছে ফিরে যেতে।

    কিন্তু নানা ঘটনার পরম্পরা তাকে বাধ্য করে টানা দশ বছর সমুদ্র অভিযানে। আবার তেরো শতকে ইউরোপে শোনা যায় এক ইহুদীর কাহিনী। সেই ইহুদি যীশুখ্রিস্টকে অপমান করেছিল। যার কারণে ঈশ্বরের অভিশাপ নেমে আসে তার উপর। শেষ বিচারের আগ পর্যন্ত তাকে ঘুরে বেড়াতে হবে সারা দুনিয়া জুড়ে। যার কোনো মৃত্যু নেই, যার কোন শান্তি নেই।

    যদি সত্যিই নানা কাহিনী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ফ্লাইং ডাচম্যানের সূত্রপাত ঘটে, কিন্তু তাই বলে এতগুলো মানুষ কি ভুল দেখেছে? বছরের পর বছর ধরে অভিযাত্রীরা ভূতুড়ে জাহাজ দেখার কথা লিখে গেছে লগবুকে। এর ব্যাখ্যা কী? এই রহস্য ভেদ কি হয়েছে?

    উত্তর হচ্ছে পদার্থবিজ্ঞান এই রহস্য ভেদ করেছে। মূলত দৃষ্টি বিভ্রমের কারণে এই দৃশ্য দেখা যায়। Fata Morgana নামক এক মরীচিকা। এ ধরনের মরীচিকা হল superior mirage-এর একটা জটিল রূপ। যার কারণে অভিযাত্রীরা সবাই একত্রে ফ্লাইং ডাচম্যানকে দেখেছে। আগ্রহী পাঠকেরা গুগল সার্চে Fata Morgana বা superior mirage লিখে সার্চ দিতে পারেন।

    মূলত দৃষ্টিবিভ্রমের কারণে এই দৃশ্য দেখা যায়। এগুলো দেখা যায় যখন আপনার দৃষ্টিরেখার নিচের বায়ু ঠাণ্ডা এবং উপরের বায়ু উষ্ণ থাকে। দিনের বেলায় সাধারণত বায়ুমণ্ডলের নিচের দিকের বায়ু উষ্ণ আর উপরের দিকের বায়ু শীতল থাকে।

    যখন এই হিসেব উল্টে যায়, তখন দৃষ্টিবিভ্রম ঘটে। ঠাণ্ডা আর উষ্ণ বায়ুর উল্টো অবস্থানের কারণে আলো বাঁকা হয়ে যায়, ফলে যে বস্তুটা দৃষ্টিরেখা বরাবর দেখার কথা ছিল, সেটা দেখতে পাওয়া যায় দৃষ্টিরেখার চেয়ে উঁচুতে। ফলে মনে হয় বস্তুটা ভেসে আছে। একই কাহিনী ঘটেছিল নাবিকদের বেলায়।

    তারা মূল জাহাজ না দেখে দেখেছিল জাহাজের প্রতিবিম্বকে, যে প্রতিবিম্ব ছিল সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উঁচুতে। একারণে মনে হত জাহাজটা উড়ছে, আর সেখান থেকেই নাম হয়েছে ফ্লাইং বা উড়ন্ত ডাচম্যান। যখন তারা প্রতিবিম্বের জায়গায় যেত, ততক্ষণে আসল জাহাজ চলে গেছে বলে প্রতিবিম্বও মিলিয়ে যেত। একারণেই কেউ খুঁজে পেত না ঘটনার কারণ। আর ব্যাখ্যাতীত ঘটনা সবসময় জায়গা করে নেয় ‘ভূতুড়ে’ হিসেবে।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে প্রতিক্রিয়া দিন