এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  বই

  • কবিতা: শিশু : রবি ঠাকুর

    Chayan Samaddar লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বই | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১৪৫৩ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • ১৯৪২ সালে দেব সাহিত্যকুটীর-এর পূজাবার্ষিকী মধুমালা-তে বুদ্ধদেব বসু বাবার চিঠি নামে একটা কবিতা লেখেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, এরোপ্লেন, বোমা –এই সব কিছুর প্রেক্ষাপটে মেয়ের জন্য মন কেমন করা এক বাবার কথা। এই কবিতা আমার বয়সী অনেকেরই মনে থাকার কথা। কারণ, এটি কিশলয় বইতে সম্ভবত, ক্লাস ফোরে পড়েছি আমরা। এখন যদি কবিতাটি পড়ি, তাহলে দেখব, ব্যঞ্জনা কিছু নেই এর মধ্যে, তবে একটা শাশ্বত করুণ সুর আর অপরূপ ধ্বনি মাধুর্য তাকে ছেয়ে আছে।

    আমি স্পষ্ট মনে করতে পারি, দশ বছর বয়সে, বাবার চিঠি-র শেষ লাইন ক’টা চোখে জল আনত।

    মনে জানি মিথ্যে এসব ভাবা।
    ভাগ্যে তবু এ মিথ্যেটা আছে
    অতি কষ্টে তাই তো জীবন বাঁচে।
    ইতি তোমার হাত পা বাঁধা বাবা।

    এটা পড়লেই মন কেমন করত। হাপিত্যেশ করে থাকতাম কতক্ষণে বাবা আপিস থেকে বাড়ি ফিরবেন তার জন্য। ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ থাক। আমার যেটা বলার সেটা হলো ছোটোদের জন্য লেখা কবিতা নিয়ে বাবার চিঠি-র কবি কী ভাবতেন।

    তাঁর বারোমাসের ছড়া-র একদম প্রথমে বুদ্ধদেব বসু দুটি লেখা লেখেন। দুটিই ১৯৩০ এ রচনা। যথাক্রমে ৮ই মে ও ৩০শে জুন। প্রথমটায় তিনি বলছেন : " তোমরা কি কেউ আমার এ বই পড়বে?" তারপর নিজেই উত্তর দিচ্ছেন :

    মেঘের মত অনেক রঙে রং চড়ানো
    চাঁদের আলো, রোদের আলো
    ঘুমের মত মোমের আলো
    স্বপ্নে ভরা আবছা আলো চোখ জড়ানো
    দেখবে তারা,যারা এ বই পড়বে।

    দ্বিতীয়টিতে প্রাণের বন্ধু অর্থনীতিবিদ পরিমল রায়কে উদ্দেশ্য করে কবি বলছেন:

    এখন মোরা যেথায় আছি দিনরাত
    আটকে আছি সেখানেই
    চাঁদের আলোয় আর নাচে না পরীরা
    ভূত পেরেতের দেখা নেই।
    কিন্তু তোমার সঙ্গে থেকে,পরিমল,
    ফিরল মনে সেই সব
    মনে হলো রাখবো বেঁধে কবিতায়
    তোমার আমার শৈশব।

    ১৯৫৬ সালে এম.সি. সরকার থেকে প্রকাশিত বারোমাসের ছড়া-র মুখবন্ধে বুদ্ধদেব লেখেন: " মনোযোগী পাঠক লক্ষ্য করবেন যে এই কবিতাগুলির সুর ক্রমশ গম্ভীর হয়ে উঠছে; বয়স অনুযায়ী মানসিক ঋতু বদলেরই লক্ষণ এটা; কোনও কোনও কবিতাকে বয়স্ক পাঠ্য আখ্যা দিলেও খুব বেশি আপত্তি হওয়ার কথা নয়। ছোটোদের কবিতায় এটা হয়তো দুর্লক্ষণ বলে মনে হতে পারে; কিন্তু আমার ধারণা ছোটোদের সাধারণত যেমন ভাবি তেমন ছোটো তারা নয়, এবং সাবালক মানুষের মধ্যেও শৈশব স্মৃতি অনবরত কাজ করে যায়। অর্থাৎ, এই রচনাগুলির আবেদন, সব বয়সের কবিতাপাঠকের কাছেই গ্রাহ্য হওয়া সম্ভব।" ( নজরটান আমার।)

    কী দাঁড়ালো তবে ব্যাপারটা? অনেক গুলো ধরে নেওয়া আর গড়ে নেওয়ার ওপর দাঁড়িয়ে আছে আপাত ভাবে ছোটোদের জন্য লেখা কবিতা গুলো। এক তো শিশুর সংজ্ঞা গড়ছেন কবি তাঁর নিজের শৈশবের ওপর ভিত্তি করে, তায় আবার তাকে কবিতা পাঠক হতে হবে! একই সঙ্গে তিনি ভাবছেন, যদি বড়োরা পড়ে, ছোটোদের বুঝিয়ে দেন তাহলে কেমন হয়?

    আসল কথা হলো, ধ্বনি-ব্যঞ্জনা-রস দিয়ে গড়া সত্যিকারের কবিতা অল্পবয়সীরা কী ভাবে গ্রহণ করবে বা করে থাকে, সে বিষয়ে কবি বুদ্ধদেব মনস্থির করে উঠতে পারছিলেন না। আমি বিস্মিত হই এই ভেবে যে, বাংলা কাব্যজগতের অধিবাসী হয়ে এ সংশয় তাঁর মনে আদৌ এল কেন! কী বলতে চাইছি স্পষ্ট করার আগে, একটু অন্য কথা বলি।

    প্রাচীন গ্রীক ও ল্যাটিনে শিশু বোঝাতে ব্যবহৃত Nepios আর Infans এই দুটি শব্দেরই অর্থ হলো যার মুখে ভাষা নেই। এদের মুখে ভাষা ফোটানোর জন্য প্রয়োগ হত কবিতার। হোমারের, ভার্জিলের, হোরেসের। অর্থ নয়, ধ্বনি, ব্যাঞ্জনা, গীতলতা এই ছিল বাঙ্ময় জগতের গোত্র চিহ্ন। আমাদের দেশও বিশ্বাস করেছে আবৃত্তি সর্বশাস্ত্রাণাং বোধদপি গরীয়সী। অর্থ বোঝা বা না বোঝায় তেমন কোনও ইতর বিশেষ নেই। কল্পনা করা যেতেই পারে বৈদিক সূক্ত গুলির ধ্বনি মাধুর্যই আবেদন রাখত শিক্ষার্থীর কাছে, কারণ গুরুগৃহে সে উপনীত হতো মাত্র পাঁচ বছর বয়সে!

    ১৯৭৪, ১৯৮২, আর ১৯৯৩ –তে ইংরেজ আর আমেরিকান শিশুদের কবিতা শুনিয়ে সিলভিয়া ভার্ডেল সিদ্ধান্তে আসেন, যে, ছোটোরা ছন্দ-মিল দিয়ে গড়া, কাহিনি সম্বলিত কবিতা পছন্দ করে। ২০০৩ সালে আমেরিকান ন্যাশনাল টিচার্স অরগানাইজেশনে দেওয়া এক বক্তৃতায় প্রখ্যাত শিশু সাহিত্য বিশেষজ্ঞ রিচার্ড ফ্লিন বলেন, ছোটোরা স্বভাবতই আকৃষ্ট হয় কবিতার মিউজিক্যালিটি বা সাঙ্গীতিকতার প্রতি। অর্থ বুঝুক বা না বুঝুক, কবিতার গীতিময়তা তাকে আবিষ্ট করবেই।

    আর ঠিক এখান থেকেই, বুদ্ধদেবের সংশয় দেখে আমার বিস্ময়কে, আমরা বোঝার চেষ্টা করতে পারি। কারণ, এই বঙ্গভূমে, ওইসব সাহেব-মেমদের গবেষণার ঢের ঢের আগে, গ্রীক-ল্যাটিন পেডাগগি সম্বন্ধে কিছু মাত্র না জেনে, কেবল বৈদিক ঋষিতুল্য কবিপ্রতিভার শক্তিতে ছোটোদের জন্য, সর্বপ্রথম, এবং এখনও পর্যন্ত সর্বশ্রেষ্ঠ, গীতিময়, কবিতা-মন্ত্র রচনা করেছিলেন, রবি ঠাকুর। এবং এক ফোঁটা অ্যাপলোজেটিক হননি। তাঁর বানানো মডেল সামনে থাকতে বুদ্ধদেবের শংকা যে কেন, তা বোঝা দায়।

    ছোটোদের জন্য রবীন্দ্রনাথ প্রথম কবিতা লেখেন ১৮৮৫-তে। তেইশ-চব্বিশ বছর বয়সে। ১৩৩২ সনের ১লা বৈশাখ প্রকাশিত হয় বালক পত্রিকা। বালক –এর প্রথম সংখ্যার প্রথম কবিতা ছিল ‘বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর’।

    মেঘের উপর মেঘ করেছে
    রঙের উপর রঙ
    মন্দিরেতে কাঁসর ঘন্টা
    বাজল ঠং ঠং
    ওপারেতে বিষ্টি এল,
    ঝাপসা গাছপালা।
    এপারেতে মেঘের মাথায়
    একশো মানিক জ্বালা।

    লক্ষ্য করুন, বৃষ্টি নয়, বিষ্টি লিখছেন কবি। একেবারে মুখের ভাষায় লেখা এরকম –খগেন্দ্রনাথ মিত্রের কথায়-সজল সন্ধ্যারূপ, যা ছোটোদের মুহূর্তের মধ্যে একটা গানভুবনে টেনে নেয়, বাংলায় আগে লেখা হয়নি। এরপরই, বর্তমান অনুবিদ্ধ হয় অতীত দ্বারা। অবলীলায় শৈশবস্মৃতি টেনে আনেন কবি।

    মনে পড়ে ঘরের কোণে
    মিটি মিটি আলো,
    একটা দিকের দেয়ালেতে
    ছায়া ছায়া কালো কালো।
    বাইরে কেবল জলের শব্দ
    ঝুপ্‌ ঝুপ্‌ ঝুপ্‌
    দস্যি ছেলে গল্প শোনে
    একেবারে চুপ।
    তারি সঙ্গে মনে পড়ে
    মেঘলা দিনের গান-
    বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর
    নদেয় এল বান।

    ছোটোদের জন্য লেখা কিন্তু, এক বিন্দু খোকাপনা নেই, পাঠককে পেট্রনাইজ করা নেই। নতুন যুগের শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা কবিতা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চায়,

    “নিজের বাল্যকালের কথা যিনি ভালো করিয়া স্মরণ করিবেন, তিনিই ইহা বুঝিবেন যে, আগাগোড়া সমস্তই সুস্পষ্ট বুঝিতে পারাই সকলের চেয়ে পরম লাভ নহে। আমাদের দেশের কথকরা এই তত্ত্বটি জানিতেন, সেইজন্য কথকতার মধ্যে... এমন তত্ত্বকথাও অনেক নিবিষ্ট হয় যাহা শ্রোতারা কখনোই সুস্পষ্ট বোঝে না কিন্তু আভাস পায়-এই আভাস পাওয়ার মূল্য অল্প নহে।”

    ছোটোদের, আজকের জারগনে বলতে গেলে, কালেকটিভ আনকনশাস-সামূহিক অবচেতনা, ঠিক আবছা মতো বুঝে নেয় তাকে, যা তার সচেতন বোধের অগম্য। ধ্বনি আর সংগীতের হাত ধরে সে রসলোকে প্রবেশ করে। মন্ত্রেরই মতো, তার সমগ্রতা নিয়ে, কবিতা তাকে আবিষ্ট করে।

    একটা জিনিস লক্ষ্য করুন। প্রথম কবিতা থেকেই রবি ঠাকুর জানেন, ছন্দে গল্প বললে, ছোটোদের কাছে দ্রুত পৌঁছনো যাবে। কথকতা তাঁর মডেল। পাশ্চাত্য গবেষণার প্রায় একশো বছর আগে তাঁর কবিচেতনা বুঝতে পারছে, ছোটোদের জন্য তাঁকে ঠিক কী জাতীয় কবিতা লিখতে হবে।

    যেহেতু আমার উদ্দেশ্য রবি ঠাকুর ছোটোদের জন্য কী ধরনের কবিতা লিখেছেন, তাই নিয়ে কথা বলা, আমার মনে হয়, কেবল শিশু আর শিশু ভোলানাথ নিয়ে আলোচনা করলেই সে কাজ সন্তোষজনক ভাবে করে ওঠা যাবে। ছড়ার ছবি আমার আলোচনার বাইরে থাকছে কারণ আমি ছোটোদের জন্য লেখা কবিতা নিয়ে কথা বলতে চাই। এই বইদুটি ছড়ার বই নয়। কবিতার বই। ছন্দের বিচিত্র প্রকাশ, ধ্বনির অপরূপ সৌন্দর্য আর রসগাঢ় ভাবমাধুর্যের বাণীরূপ হিসেবে এই বইদুটি বাংলা সাহিত্যে অনন্য। শিক্ষামূলক পদ্য নয়, মনের মধ্যে ঘা দেওয়া, অনেক ক্ষেত্রেই শিশুর জবানি ব্যবহার করা, এই জাতীয় কবিতা বাংলায় এর আগে কেউ লেখেননি।

    এ কথা ঠিক যে, ১৯০৩ সালে প্রকাশিত শিশু-তে কিছু কবিতা আছে যার সঙ্গে ছোটোদের একাত্মবোধ করা শক্ত। ‘জগৎ পারাবারের তীরে ছেলেরা করে খেলা’ বা ‘জন্মকথা’ অথবা ‘ঘুমচোরা’, ‘অপযশ’, ‘খোকার রাজ্য’ –এই কবিতাগুলি ছোটোদের নিয়ে লেখা। এক প্রাপ্তবয়স্ক স্নেহমাখা স্বর, শৈশব নিয়ে কথা বলছে। এরকম লেখা যেহেতু উদ্দিষ্ট পাঠককে ঠিক সমবয়স্ক ও সমমনস্ক ভাবে না, তাদের চোখে বিশ্বও দেখে না, তাই একে সার্থক ছোটোদের কবিতা বলা যাচ্ছে না। তাহলে, ধ্বনি-ছন্দ-রস-কাহিনি –এর সঙ্গে যুক্ত হলো সেই দৃষ্টিভঙ্গি যা চেতনে-অচেতনে ছোটোদের খুব চেনা। এটি না থাকলে, হয়তো শিক্ষার কাজে কবিতার প্রয়োগ চলে, কিন্তু, মনের বীণার তারে আঘাত করে পাঠককে রসলোকে উত্তীর্ণ করা চলে না।

    এদিক থেকে দেখতে গেলে, শিশু-র ম্যানিফেস্টো হলো ‘ভিতরে ও বাহিরে’ কবিতাটি।

    দিঘি থাকে নীরব হয়ে
    দিবারাত্র
    নাগকন্যের কথা যেন
    গল্পমাত্র।
    সুখদুঃখ এম্‌নি বুকে
    চেপে রহে,
    যেন তারা কিছুমাত্র
    গল্প নহে।
    যেমন আছে তেমনি থাকে
    যে যাহা তাই-
    আর যে কিছু হবে এমন
    ক্ষমতা নাই।
    বিশ্বগুরুমশাই থাকেন
    কঠিন হয়ে,
    আমরা থাকি জগৎ-পিতার
    বিদ্যালয়ে।

    এইভাবে বুক ঠুকে বাস্তবের আড়ালে আরেকটা বাস্তব-যা কেবল ছোটোরা দেখে-এর অস্তিত্ব জানান দেওয়া, সুখ-দুঃখ কে বড়োদের গড়া একরকমের কাহিনি বলে উড়িয়ে দেওয়া- বাংলা ভাষা এর আগে দেখেনি।

    এরপর থেকেই পরপর কমল হীরের ঝলক। যার বহু পংক্তি এখন প্রবাদ। ‘রাতের বেলা দুপুর যদি হয়/দুপুর বেলা রাত হবে না কেন?’ (প্রশ্ন); ‘আমি রব না তোর কোলে/আমি বনেই যাব চলে।’ (সমব্যথী); ‘লক্ষ্মণ ভাই যদি আমার /থাকত সাথে সাথে।’ (বনবাস) –এরকম অজস্র উদাহরণ দেওয়া যায়। কবিতা ধরে ধরে না এগিয়ে আমি বরং কয়েকটাকে বেছে নিই।

    ‘মাস্টারবাবু’ কবিতাটা আমরা সবাই জানি। কয়েকটা জিনিস খেয়াল করার মতো।

    আমি আজ কানাই মাস্টার
    পোড় মোর বেড়াল ছানাটি।
    আমি ওকে মারি নে মা বেত
    মিছিমিছি বসি নিয়ে কাঠি
    রোজ রোজ দেরী করে আসে,
    পড়াতে দেয় না তো ও মন,
    ডান পা তুলিয়ে তোলে হাই
    যত আমি বলি, ‘শোন্‌ শোন্‌।’
    দিনরাত খেলা আর খেলা
    লেখায় পড়ায় ভারি হেলা।

    কানাই মাস্টার কথকের শিক্ষক, বোঝাই যাচ্ছে। তাঁর হাতে বেত ভালোই চলে। তিনি ছাত্রকে যা যা বলেন সেগুলোই বেড়ালছানাকে শুনতে হচ্ছে। বড়োদের ছোটোদের পুরোদস্তুর মানুষ বলে গণ্য না করাটা যেভাবে অবলা প্রাণীর মধ্যে এই বালকের নিজেকে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে ঘটেছে, যেভাবে বেতের বাড়ির জ্বালা যেন বেড়ালটাকে না সইতে হয় –এরকম একটা ধারণার জন্ম দিচ্ছে কথক কন্ঠ, তার মধ্যে দিয়ে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, কেন রবি ঠাকুর, রবি ঠাকুর। বাংলার শৈশব যন্ত্রণা কাব্যরূপ পাচ্ছে এই প্রথম।

    শিশু-র জনপ্রিয়তম কবিতা হলো ‘বীরপুরুষ’। এর কারণ, আমার মনে হয়, এর নাট্যরস। এই কবিতায় ডাকাতের গল্প আছে, সব বালক নিজেকে যেমন হীরো দেখতে ভালোবাসে-তা আছে, মায়ের রক্ষাকর্তা হওয়া আছে, অনবদ্য পরিবেশ রচনা আছে, আর সব কিছু ছাপিয়ে আছে একটা প্রসাদগুণ-টোটাল ইফেক্ট। ঠিক নাটকের মতো। রবীন্দ্রনাথের নিজের গলায় এই কবিতার আবৃত্তি যাঁরা শুনেছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই বুঝছেন আমি কী বলছি। শিশু মনস্তত্ত্ব আর অতি উচ্চশ্রেণীর ধ্বনি-ছন্দ-কাহিনি সঞ্জাত প্রসাদগুণ কবিতাটিকে শিশু-র প্রতিনিধিস্থানীয় কবিতা করে তুলেছে। আজও এর আবৃত্তি কচি কণ্ঠে উৎসবে অনুষ্ঠানে শোনা যায়।

    রবীন্দ্রনাথের শিশুসাহিত্য পরিক্রমা করতে গিয়ে খগেন্দ্রনাথ মিত্রের মনে হয়েছে, “কঠোর মানসিক শ্রম থেকে মনকে কিছুকালের জন্য মুক্তিদানোদ্দেশ্যে ‘ছেলেখেলার’ মতো এই সাহিত্য কবি সৃষ্টি করেননি। উচ্চতর সাহিত্য সৃষ্টির মূলে যে আবেগ, এর মূলেও তার অভাব ছিল না। এত ভাবের গভীরতা ও বৈচিত্র্য, এত শব্দচ্ছটা, এত ছন্দ বিচিত্রতা নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার অভাব থাকলে কী কোনও রচনাবলিতে থাকা সম্ভব?”

    এর চেয়ে বেশি সত্যি কথা আর হয় না। বঙ্গভূমিতে সর্বপ্রথম সিরিয়াসলি ছোটোদের জন্য কবিতা রচনা আরম্ভ করেন রবি ঠাকুর। এ ক্ষেত্রে তিনিই পথিকৃৎ। বুদ্ধদেব বসুর বারোমাসের ছড়া থেকে আরম্ভ করে কালীকৃষ্ণ গুহ-র মালেক মাঝির ঘাট কিছুই লেখা হতো না তিনি শুরুটা না করে দিলে।

    রবি ঠাকুর ছোটোদের জন্য কবিতা লেখার ব্যাপারে কতটা সিরিয়াস ছিলেন তা ১৯২২ সালে প্রকাশিত শিশু ভোলানাথ-এর কথা ভাবলেই বোঝা যায়। এই বইয়ের প্রায় সব কবিতা ১৯২১ সালে লেখা। কবিতাগুলো লেখার দরকার পড়ল কেন, তার কারণ কবি নিজে বলেছেন। তিনি বলেছেন, লোকরঞ্জনের জন্য নয়, নিতান্ত নিজের গরজে তাঁকে এইসব কবিতা লিখতে হয়েছিল। এরপর যা বলেছেন, তা একেবারে চমকে দেওয়ার মতো :

    ‘আমেরিকার বস্তুগ্রাস থেকে বেরিয়ে এসেই ‘শিশু ভোলানাথ’ লিখতে বসেছিলুম, বন্দি যেমন ফাঁক পেলেই ছুটে আসে সমুদ্রের ধারে হাওয়া খেতে তেমনি করে। …প্রবীণের কেল্লার মধ্যে আটকা পড়ে আমি তেমনি করেই আবিষ্কার করেছিলুম অন্তরের মধ্যে যে শিশু আটকা আছে তারই খেলার ক্ষেত্র লোকলোকান্তরে বিস্তৃত। এই জন্যই কল্পনায় সেই শিশুলীলার মধ্যে ডুব দিলুম, সেই শিশুলীলার তরঙ্গে সাঁতার কাটলুম, মনটাকে স্নিগ্ধ করার জন্য, নির্মল করবার জন্য, মুক্ত করবার জন্য।”

    বস্তুতান্ত্রিক মার্কিন ভোগবাদ যে তাঁর মনকে ক্ষুব্ধ, মলিন আর বদ্ধ করেছিল, তা এই কথা থেকে পরিষ্কার। তবে, ভিতর-শিশুকে জাগিয়ে তুলে, কবিতা লিখে, সেই বাজারিপনার বিরূদ্ধে রেজিসটেন্স গড়ে তোলা, আমাদের দেশে এই প্রথম ঘটল। এরকম আরেকটা ঘটনার কথা বলা যায়। আয়াতুল্লা খোমেইনির দেওয়া ফতোয়ার জন্য লন্ডনে কড়া পাহারার ঘেরাটোপে থাকা সলমন রাশদি, প্রাণের ভয়, সামগ্রিক উৎকণ্ঠা, চারিদিকের অসহিষ্ণুতা দেখে ক্ষোভ-সব ভোলার জন্য, লিখেছিলেন তাঁর প্রথম ছোটোদের উপন্যাস –হারুন অ্যান্ড দ্য সী অভ্‌ স্টোরিজ্‌। আসলে শৈশবের নির্মলতা বলতে বড়োরা যা বোঝেন, সেটা বাস্তবের গভীর, গভীরতর অসুখের একটা জোরালো প্রতিষেধক।

    আর এগোনোর আগে, একটা কথা বুঝে নিই। শিশু-তে শিশুর কথা ভাবা হয়েছে, আর শিশু ভোলানাথ-এ শৈশবের। সমস্যা হলো একজন প্রাপ্তবয়স্কের শৈশব স্মৃতি তাঁর সে বয়সের দুঃখ-লজ্জা-ভয়-লোভ-স্বার্থপরতা-পরাধীনতা-দ্রুত বড়ো হওয়ার ইচ্ছে, এগুলো বাদ দিয়ে একটা কল্প-বাস্তব গড়ে। বর্তমানের যাপিত বাস্তবের সঙ্গে তার তুলনা করে বলে, সে বড়ো সুখের কাল ছিল। তাই, শিশু ভোলানাথ –এর কবিতাগুলো ছোটোদের জন্য লেখা, এ কথা জোর দিয়ে বলা যায় না। তবু, শিশুলীলা উদযাপন করে বলে তাকে নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।

    আত্মগত আশিসবাবু, মানে, সমাজমনোবিদ আশিস নন্দী বলেন, “Childhood has become a major dystopia for the modern world…Perfect adulthood like hyper masculinity and ultra normality has become the goal of most over socialized human beings and modern societies.” তার মানে যতই কল্প-বাস্তব গড়ি না কেন, মনে মনে আমরা ছেলেমানুষিকে ভয় পাই, ঘেন্না করি। আমরা মনে করি বড়োদের ছোটোবেলা নিয়ে লজ্জিত না হওয়া স্বাভাবিক নয়। যেটা আমরা বুঝি না, সেটা হলো পাকা মুখে কচি কথা, বিচ্ছিরি, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই, কিন্তু, শৈশব উদযাপন আর ছেলামানুষি এক জিনিস নয়। দ্বিতীয়টা একটা খোলা দৃষ্টি পাওয়ার সাধনা, মনের কুটিলতা ঝেড়ে ফেলার ব্রত। কিন্তু, শৈশবভীতি এতই প্রবল আধুনিক সমাজে, যে মানুষজন এটা বুঝেও বোঝেন না।

    আশিস নন্দী এই কথাগুলো বলেছিলেন ১৯৮৭ সালে। রবি ঠাকুরের তাঁর চিন্তা জানার কোনও উপায়ই ছিল না। অথচ দেখুন শিশু ভোলানাথ-এর ‘শিশুর জীবন’ কবিতা আরম্ভ হচ্ছে এই ভয়টার কথাই উল্লেখ করে।

    ছোটো ছেলে হওয়ার সাহস
    আছে কি একফোঁটা
    তাই তো এমন বুড়ো হয়েই মরি
    তিলে তিলে জমাই কেবল
    জমাই এটা ওটা,
    পলে পলে বাক্স বোঝাই করি।

    ছোটো হতে গেলে ভয় কাটিয়ে, সাহসী হতে হবে। হিসেব করতে বসে, প্রাপ্তবয়স্ক আর স্বাভাবিক হওয়ার তাড়ায়, এই মুহূর্তে বাঁচাটা ভুলে যায় অতিসামাজিক মানুষের দল। তাই,

    শিশু হওয়ার ভরসা আবার
    জাগুক আমার প্রাণে,
    লাগুক হাওয়া নির্ভাবনার পালে,
    ভবিষ্যতের মুখোশখানা
    খসাবো একটানে,
    দেখব তারেই বর্তমানের কালে।

    তিনি একটা শৈশব আশ্রিত ভাববিশ্ব গড়তে চাইছেন, যা বস্তুগ্রাসের ঠিক বিপরীত।

    বাল্য দিয়ে যে জীবনের
    আরম্ভ হয় দিন
    বাল্যে আবার হোক না তাহা সারা।
    জলে স্থলে সঙ্গ আবার
    পাক না বাঁধনহীন,
    ধুলায় ফিরে আসুক- না পথহারা।
    সম্ভাবনার ডাঙা হতে
    অসম্ভবের উতল স্রোতে
    দিই না পাড়ি স্বপন-তরী নিয়ে।
    আবার মনে বুঝি-না এই,
    বস্তু বলে কিছুই তো নেই
    বিশ্ব গড়া যা খুশি তাই দিয়ে।

    সুর বাঁধা হয়ে গেল। এবার ‘তালগাছ’ আর ইঙ্গকবির ভরতপাখি এক প্রকৃতি ধরে, ‘রবিবার’ আর গরিব-ঘরের মেয়ে, কথকের মা একাঙ্গী হয়, ‘মনে পড়া’-তে কান্নার সিন্ধু উথলে ওঠে, আর ‘পুতুল ভাঙা’, কবির জন্ম শতবার্ষিকীতে (১৯৬১ সালে), দেব সাহিত্যকুটীরের পূজাবার্ষিকী ‘শারদীয়া’তে, কবির সাক্ষাৎ ছাত্র, সৈয়দ মুজতবা আলী-কে দিয়ে লিখিয়ে নেয়,

    “আমরা কি জানিনে-অন্তত না জানলে এখন তো হৃদয়ংগম হল-যে আমাদের সকলেরই আপন আপন পুতুল আছে; তোমার বয়স ষোল, তোমার পুতুল হয় তো তোমার টেনিস র‍্যাকেটখানা। আমার বয়স আরও বেশী হয়েছে, আমার পুতুল রবীন্দ্রনাথের একখানা প্রথম সংস্করণ-কেউ ছুঁতে চাইলে মার মার করে হেঁকে উঠি।”

    ‘বুড়ি’ কবিতা এক অনবদ্য রচনা। চাঁদের বুড়ি মর্তে এসেছে মায়ের কোল আলো করে। সন্ধে বেলা চাঁদ উঠলে তার মন ঘরে ফিরতে চায়। দুই হাত বাড়িয়ে উপরপানে চায় সে।

    সন্ধেবেলায় আকাশ চেয়ে
    কী তার পড়ে মনে।
    চাঁদকে করে ডাকাডাকি,
    চাঁদ হাসে আর শোনে।
    যে পথ দিয়ে এসেছিল
    স্বপন-সাগর তীরে
    দু’হাত তুলে সে-পথ দিয়ে
    চায় সে যেতে ফিরে।

    এমন ভাবে লেখা, প্রকৃতির মেয়ের প্রকৃতিতে মিশে যাওয়ার কথা মনে পড়ে আমাদের। মনে পড়ে সাগর-পারের কবির লুসি মেয়ের কথা। সত্যিই, এ কথন বিশ্ব গড়া যা খুশি তাই দিয়ে! ‘মুর্খু’, ‘খেলা ভোলা’, ‘পথহারা’, ‘সংশয়ী’, ‘বাউল’- রত্নের পর রত্ন। আবার, একটি কবিতা বেছে নেওয়া যাক, যা নিজের বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল। ছোটো ছেলের চোখ দিয়ে মৃত্যুকে দেখে ‘মর্ত্যবাসী’।

    কাকা বলেন, সময় হলে সবাই স্বর্গলোকে যায়।
    তিনি বলেন, যাবার আগে
    তন্দ্রা লাগে
    ঘন্টা কখন ওঠে বাজি,
    দ্বারের পাশে
    তখন আসে
    ঘাটের মাঝি।
    বাবা গেছেন এমনি করে
    কখন ভোরে
    তখন আমি বিছানাতে
    তেমনি মাখন
    গেল কখন
    অনেক রাতে।

    স্বর্গ খুব চমৎকার জায়গা হতে পারে, কিন্তু তার চেয়েও ভালো –

    ওই আমাদের গোলাবাড়ি
    গোরুর গাড়ি
    পড়ে আছে চাকা ভাঙা,
    গাবের ডালে
    পাতার লালে
    আকাশ রাঙা।
    সেথা বেড়ায় যক্ষীবুড়ি
    গুড়িগুড়ি
    আসশেওড়ার ঝোপে ঝাপে
    ফুলের গাছে
    দোয়েল নাচে
    ছায়া কাঁপে।

    এহেন মরপৃথিবীর ইন্দ্রজালে মুগ্ধ এই বাপ-মরা, কাকির নেওটা (তাহলে মা-মরাও কি?) খোকা সরাসরি মৃত্যুর দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়।

    স্বর্গে যাওয়া দেব ফাঁকি
    বলছি কাকী,
    দেখব আমায় কে কী করে।
    চিরকালই
    রইব খালি
    তোমার ঘরে।

    পৌষ, ১৩২৯, ইংরিজি ১৯২৩ সালে, অর্থাৎ শিশু ভোলানাথ প্রকাশিত হওয়ার এক বছর পরে রবীন্দ্রনাথ একটা গান লেখেন-

    আজ তারায় তারায় দীপ্ত শিখার অগ্নি জ্বলে
    নিদ্রাবিহীন গগনতলে॥
    ওই আলোক-মাতাল স্বর্গসভার মহাঙ্গন
    হোথায় ছিল কোন্‌ যুগে মোর নিমন্ত্রণ–
    আমার লাগল না মন লাগল না,
    তাই কালের সাগর পাড়ি দিয়ে এলেম চ’লে
    নিদ্রাবিহীন গগনতলে॥
    হেথা মন্দমধুর কানাকানি জলে স্থলে
    শ্যামল মাটির ধরাতলে।
    হেথা ঘাসে ঘাসে রঙিন ফুলের আলিম্পন,
    বনের পথে আঁধার-আলোয় আলিঙ্গন–
    আমার লাগল রে মন লাগল রে,
    তাই এইখানেতেই দিন কাটে এই খেলার ছলে
    শ্যামল মাটির ধরাতলে॥

    এখানেও মাটির পৃথিবীর প্রতি তাঁর টান প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু, দাদরা তাল আর পিলুর সুর সেই ওজস্‌ আনতে পারেনি, যা বালককন্ঠে চার মাত্রার দলবৃত্ত ছন্দ প্রকাশ করেছে। বস্তুত, রবীন্দ্রনাথ আর কোথাও মৃত্যুর সঙ্গে ঠিক এই সুরে কথা বলেছেন কিনা আপনারা খুঁজে দেখতে পারেন।

    শিশু আর শিশু ভোলানাথ আর এক দিক দিয়েও অনন্য। এই দুটি বইতে রবি ঠাকুর কোনও আধ্যাত্মিকতা, দেশপ্রেম বা নীতি সম্বন্ধীয় জ্ঞান বিতরণের চেষ্টা করেননি। এই দুই বইয়ের কাব্যবিশ্ব বিশুদ্ধভাবে মানবিক ও নান্দনিক। আর এই নান্দনিকতাই উদ্দিষ্ট পাঠকের সৌন্দর্যবোধ গড়ে তোলে। সৌন্দর্যচেতনা থেকেই আসে শুভবোধ। সরাসরি না হলেও, পরোক্ষে, রবি ঠাকুর যাকে বলতেন, আরো ভালোর সাধনা, তার শরিক হয় কচি-কাঁচারা।

    বাংলা শিশু-কিশোর সাহিত্যে রবি ঠাকুরের অবদান –কবিতা। খুব সচেতন ভাবে, সকলের আগে, অল্পবয়সীদের উপযোগী কবিতা লিখেছেন তিনি। তাদের ভবিষ্যতে কাব্যসুধা পানের জন্য দীক্ষিত করতে চেয়েছেন।

    কিন্তু, এত পরিশ্রম করতে গেলেন কেন তিনি? কেন ভাবলেন, বাংলার ছোটোদের জন্য কবিতা লেখা দরকার? কারণ, তিনি সবরকম অর্থে কবি ছিলেন। সেই কবি যিনি, বিশ্বচরাচরজোড়া বাক্‌-বিদ্যুৎ-তরঙ্গ হৃদয়ে অনুভব করেন। তখন বৈদিক কবির সঙ্গে তাঁর আর কোনও পার্থক্য থাকে না। তাঁর সঙ্গে কন্ঠ মিলিয়ে তিনি বলতে পারেন :

    সহস্রধা পঞ্চদশানি-উক্‌থা
    যাবদ্‌ দ্যাবাপৃথিবী তাবদ্‌ ইত্‌ তত্‌।
    সহস্রাধা মহিমানঃ সহস্রং
    যাবদ্‌ ব্রহ্ম বিষ্ঠিতং তাবতী বাক্‌।

    পনেরটি স্তুতি আছে অনন্ত ঠাঁই
    আকাশ পৃথিবী আছে পূরে,
    আছে অনন্তে অনন্ত মহিমায়,
    ততদূর আছে বাক্‌, যতদূর ব্রহ্ম রয়েছে জুড়ে। (অনু – গৌরী ধর্মপাল)

    রবি ঠাকুরের শিশু-কিশোর পাঠ্য কবিতা রচনাপ্রয়াস তাঁর বাক্‌পতি হওয়ারই নিদর্শন।

    ঋণস্বীকার :

    ১) রবীন্দ্র-শিশুসাহিত্য পরিক্রমা –খগেন্দ্রনাথ মিত্র।
    ২) বেদের কবিতা- গৌরী ধর্মপাল।
    ৩) রবীন্দ্রসঙ্গীত-রাগ –সুর নির্দেশিকা –সুধীর চন্দ।
    ৪) Reconstructing Childhood : A Critique of the ideology of Adulthood –Ashis Nandy.
    ৫) The Cambridge Companion to Children’s Literature- Edited by M.O. Grenby and Andrea Immel.

    (২০২০ সালের শারদীয়া নবপত্রিকা তে প্রকাশিত)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১৪৫৩ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    রণছোড় - Chayan Samaddar
    আরও পড়ুন
    মালিক - Chayan Samaddar
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • রঞ্জন রায় | 171.50.151.204 | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৮:২৩498204
  •  আমি। মুগ্ধ উড়ে গেছ,ফিরে এসো চাকা। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে প্রতিক্রিয়া দিন