এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  পরিবেশ

  • সুন্দরবন সংলাপ : প্রথম পর্ব

    আমরা এক সচেতন প্রয়াস
    আলোচনা | পরিবেশ | ০৬ জুন ২০২১ | ২৮৮৩ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • সুন্দরবন ডেল্টা আজ অস্তিত্বের সঙ্কটের মুখে। একদিকে গোটা সুন্দরবন ভূমিরূপ গঠনের দিক দিয়ে যেমন নবীন, অন্যদিকে বিশ্ব উষ্ণায়নের সঙ্গে তীব্র হচ্ছে সংলগ্ন জনবসতির ‘ক্লাইমেট রিফিউজি’ হওয়ার সম্ভাবনা। বিশ্ব উষ্ণায়নের সঙ্গে একদিকে যেমন বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের তীব্রতা। একই সঙ্গে তীব্র হয়ে উঠছে বাড়তে থাকা জনবসতির বেঁচে থাকার আর্তি। পরিবেশবিদ ও ভুতাত্ত্বিকেরা সুদুরপ্রসারি দৃষ্টি দিয়ে বাঁচাতে চাইছেন গোটা প্রকৃতি। আর স্থানীয় মানুষ চাইছেন বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় আশু উন্নয়ন। গণদাবী হয়ে উঠছে কংক্রিট বাঁধ। ফলে, ‘বনাম’ হয়ে মুখোমুখি দাঁড়াচ্ছে 'উন্নয়ন’ আর ‘নিসর্গ’। ‘বনাম’ হয়ে মুখোমুখি দাঁড়াচ্ছে ‘কংক্রিট বাঁধ’ আর ‘মাটির বাঁধ’। ‘আমরা এক সচেতন প্রয়াস’ দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় ধরে পশ্চিমবঙ্গে ‘সংঘর্ষ ও সহবস্থান’ নিয়ে সমীক্ষা ও গবেষণার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। আয়লা, আম্ফান ও ইয়াস পরবর্তী ‘উন্নয়ন বনাম নিসর্গ’র এই আলোচনায় অভিনিবেশও তার কাছে আজ সময়ের দাবি। ‘আমরা’ একটি পরিসর তৈরি করতে চাইছে যেখানে বিজ্ঞানী, পরিবেশবিদ, ভূ-তত্ত্ববিদ, সামাজিক আন্দোলনকর্মী থেকে সাধারণ মানুষও তার মতামত রাখতে পারেন। এটি ধারাবাহিকভাবে সুন্দরবনের সংকটের নানা আঙ্গিক ও সমাধান সুত্রের সামগ্রিক পর্যালোচনার একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র। গত ১লা জুন থেকে শুরু হওয়া এই ধারাবাহিক আলোচনার প্রথম পর্বের বিষয় ‘সুন্দরবনের স্থায়ী সমাধান প্রসঙ্গে কংক্রিট বাঁধ বনাম মাটির বাঁধ’।

    'আমরা এক সচেতন প্রয়াস', আমরা এখানে সমবেত হয়েছি একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য। সুন্দরবনের স্থায়ী সমাধানে কংক্রিটের বাঁধ বনাম মাটির বাঁধ। এ বিতর্ক অনেক দিনের পুরনো। এই বিতর্কে জড়িয়ে আছেন প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী, প্রশাসক, জনসাধারণ, পরিবেশবাদী এবং অন্যান্য সকল সেক্টরের মানুষ। প্রসঙ্গটি শুধুমাত্র সুন্দরবন নয়, প্রসঙ্গটি শুধুমাত্র জল নয়, প্রসঙ্গটি শুধুমাত্র মাটি নয়, প্রসঙ্গটি একই সঙ্গে জীব বৈচিত্র, একইসঙ্গে মানুষ ও জীবিকার। যখন আমরা জল নিয়ে কথা বলি, নিশ্চয়ই আমরা বলি এখানে একজন হাইড্রোলজির দরকার, যিনি জল সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ। একইসঙ্গে স্ট্রাকচারের কথা যখন বলি তখন বলি একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের কথা। যখন আমরা বলি এটা সুন্দরবনের কথা তখন একজন ইকোলজিস্ট এর কথা আসে, ম্যানগ্রোভ স্পেশালিস্টের কথা আসে। সুতরাং এই ভিন্ন ভিন্ন মত, ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান, ভিন্ন ভিন্ন জায়গা থেকে আমাদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন অস্তিত্বের প্রশ্ন, সেই প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমরা এই সিরিজ আয়োজন করছি। 'আমরা এক সচেতন প্রয়াস' একটি ছোট্ট স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, যা মূলত প্রকাশ করে তার সমস্ত কার্যক্রমকে- প্রথমত, কনফ্লিক্ট মেকানিজম এর উপরে, তারপরে পরিবেশ সচেতনতার উপর।

    আজকে আমাদের আলোচনার সঙ্গে আছেন দুজন অত্যন্ত সম্মানিত বিশেষজ্ঞ। জনাব অমিতাভ চৌধুরী, পেশায় চিকিৎসক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে সুন্দরবন এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছেন, জড়িয়ে থেকেছেন বিভিন্ন রকমের উন্নয়ন মূলক সংস্কার কাজের সঙ্গে। শ্রদ্ধেয় তুষার কাঞ্জিলালের সঙ্গেও তিনি কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। একদিকে তিনি যেমন পরিবেশ নিয়ে সচেতন, অন্যদিকে এলাকাবাসী মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাঁদের দৈনন্দিন সুখ দুঃখের নাড়ির খবর রাখেন। বাঁধের সঙ্গে মানুষের দৈনন্দিন বাস্তবের আর আবেগের খবর রাখেন তিনি। আমাদের সঙ্গে আছেন অমিতেশ মুখার্জি, যিনি পেশায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সোসিওলজির হেড অফ দি ডিপার্টমেন্ট আর নেশায় সুন্দরবনের নানা অঞ্চল নিয়ে লেখালিখি করা একজন ব্যক্তি। তাঁর পিএইচডির বিষয় ছিল সুন্দরবনের নদীবাঁধ। পরবর্তীকালে তিনি পিএইচডি-র বিষয় নিয়ে একটি বই লেখেন। এ দুজনের পাশাপাশি আমাদের সঙ্গে আরেকজন আছেন। খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন, যাঁর নাম ডঃ সুমন নাথ, প্রফেসর এপিজে আবুল কালাম সরকারি কলেজের। আমরা এই তিনজনকে নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনার শুরু করবো -----

    অমিতাভ চৌধুরী : আমার একটু দ্বিধা রয়েছে এ নিয়ে বলার ক্ষেত্রে, দ্বিধার কারণটা বলি- যে, আমার বিষয় সুন্দরবন বা সুন্দরবনের নদীবাঁধ -বন্যা- ঝড় কোনটাই সরাসরি নয়। কিন্তু গত কুড়ি বাইশ বছর ধরে সুন্দরবনের মানুষের চিকিৎসা করার সঙ্গে যুক্ত থাকার ফলে এগুলো আমাকে ভাবতে হয়েছে, দেখতে বাধ্য হয়েছি এবং এটাকে ল্যাটারাল ভিউও বলা যায়। এটা আমার সাবজেক্ট বা ফোকাস নয়। এখানে যারা চুয়াল্লিশ জন যোগ দিয়েছেন তাদের কয়েকজনকে রীতিমত সুন্দরবন বিশেষজ্ঞ বলা যায়। সেখানে আমি বিশেষজ্ঞ এরকম কল্পনাও যদি কেউ করে আমার পাপ হবে- সেটা প্রথমেই স্বীকার করে নিচ্ছি।

    আমার জাস্ট কতগুলো জিনিস মনে হয়েছে, কতগুলো খটকা লাগে, যেমন এই যে মাটির বাঁধ না কংক্রিটের বাঁধ বিতর্কটা, এটার ভিত্তি ঠিক কী? আচ্ছা যদি ধরে নেওয়া যায় গোটা সুন্দরবনের মানুষ থাকেন যে দ্বীপগুলোতে সেখানে মাটির বাঁধ দিয়ে বা আরো পোক্ত ভাবে ম্যানগ্রোভ লাগিয়ে ভালো করে ঘিরে দেওয়া হল এটা একটা দৃশ্য । আর একটা দৃশ্য হলো, পুরো সুন্দরবনের সমস্ত মানুষ যেখানে বাস করেন সেখানে কংক্রিটের বাঁধ দিয়ে দেওয়া হল। কিন্তু, এরকম কি নির্ধারিত করে বলা যায়, একটা ভালো আর একটা খারাপ? এরকম চয়েস কি করা সত্যিই সম্ভব? সুন্দরবনের যেটুকু দেখেছি ঘুরেটুরে, যে, কিছু জায়গায় হয়তো মাটির বাঁধ-ই যথেষ্ট, আবার কোথাও কংক্রিটের বাঁধ না দিলেও হয়। তাহলে প্রশ্নটা হচ্ছে, কীসের স্বার্থ দেখছি? যদি বলেন যেসব দ্বীপে মানুষ থাকে, অবশ্যই সেখানে মানুষের স্বার্থ-ই আমি দেখছি। কিন্তু, যেখানে মানুষ থাকে সেই দ্বীপের সংখ্যা সুন্দরবনের মোট দ্বীপ-সংখ্যার একটা ভগ্নাংশ মাত্র। পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে সুন্দরবনের যে অংশ পড়ে তার কয়েকটি দ্বীপেই মানুষ থাকে কারণ বহু প্রাচীন দ্বীপ ছিল সেগুলো এখন আর দ্বীপ নেই, সেগুলো মেনল্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে। চারিদিকে জল ঘেরা যে দ্বীপ, সেরকম দ্বীপের সংখ্যা বেশি নয়। এবার, এখানে যেটা লক্ষ্যণীয়, মানে মিডিয়াতে যেভাবে প্রচার হচ্ছে- ধরুন, কলকাতায় আমার পরিবারের সকলেই থাকেন, তাঁরা মিডিয়াতে দেখছেন কিভাবে নদীবাঁধ ভেঙে জল ঢুকছে। সত্যিই, শহরে বসে যদি এটা দেখা হয় মনে হবে সুন্দরবনের সমস্ত দ্বীপ নদীবাঁধ ভেঙে বোধহয় ডুবেই গেল। বাস্তবে 'আয়লা'-য় যে ভয়ঙ্কর রূপ দেখা গেছে, এমনকি 'আম্ফানে' যা রূপ দেখা গেছে, তুলনায় 'ইয়াসে' তার প্রভাব কম। যেটা বলা হচ্ছে না, সুন্দরবনের ক্ষেত্রে বিশেষ করে, ইয়াসের তান্ডব নয় বরং যেটা ঘটেছে এবার তা হল- পূর্ণিমা - ভরা কোটাল - পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ - জলোচ্ছ্বাস। সমুদ্রের জল নদীতে ঢুকে অনেক উঁচু হয়ে গেছে। নদীবাঁধ ছাপিয়ে ভিতরে ঢুকেছে বেশিরভাগ জায়গাতে। তার সঙ্গে বাতাসের জোর একটু বেশি ছিল কিন্তু কখনোই সেটা সাইক্লোন নয় বা তার ধারেকাছেও নয়।

    এখানে, একটা উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, সুন্দরবনে এবার যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, আমি যতটা খেয়াল করেছি তাতে মনে হয়েছে নদীর ধারে যাঁরা বাস করেন তাঁদেরই ক্ষতি হয়েছে। যে দ্বীপগুলো বড়, ধরুন আমি হাইপোথেটিক্যালি একটা দ্বীপের কথা বলছি যেখানে ১০০টা বাঁধ আছে, সেই একশ বাঁধের মধ্যে, মনে করুন, পাঁচ জায়গায় ভেঙে গেছে। তাহলে পাঁচটা পকেটে কিছু ঘরবাড়ি, মাঠঘাট ডুবে গেছে। বাকি দ্বীপটা কিন্তু অ্যাফেক্টেড হয়নি। তাহলে গোটা দ্বীপ জুড়ে নোনাজলের জোয়ার ভাঁটা খেলছে, যেরকমটা আয়লায় দেখা গেছিল, সেরকম কিন্তু ইয়াসের বেলায় দেখা যায়নি। এটাও ঘটনা যে, সুন্দরবনের সমস্ত দ্বীপের সমস্ত নদীবাঁধ ভাঙেনি।

    দ্বিতীয় পয়েন্ট হলো, নদীবাঁধ দিয়ে যেটুকু জল ঢুকেছে, ভেঙেছে, উপচে পড়ে ঢুকেছে, সেগুলো কতগুলো পার্টিকুলার কারণে হয়েছে। সেখানকার লোকেরা জানেন, সেখানকার প্রশাসনেরও জানা যে এই জায়গাগুলোই ভাঙে এবং এগুলোই ভাঙবে। আজ বাদে কাল আবার ভাঙবে। যাঁরা সুন্দরবনে বাস করেন বা প্রায়শই যাওয়া আসা করেন তাঁরা দেখেছেন যে, এবারের বাঁধভাঙা বা জলোচ্ছ্বাসের ঘটনা যেসব জায়গাগুলোতে ঘটেছে, তার মূলত ৮০/৯০ শতাংশ জায়গায় বারে বারে একই ঘটনা ঘটেছে। ঝড় হোক বা না হোক, নদীবাঁধ ভাঙা বা সেখানে জল ঢুকে পড়া এটার পুরোটা সাইক্লোন উদ্ভূত, এরকম কিন্তু নয়। যে জায়গাগুলোয় বাঁধ ভেঙেছে সেগুলোতে আগেও ভেঙেছিল, সাইক্লোন ছাড়াই ভেঙেছিল। তৃতীয় হচ্ছে, এবারে ইয়াসের কারণে নদীবাঁধ ভেঙেছে- কথাটা যেমন আম্ফান বা আয়লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, ইয়াসের ক্ষেত্রে সেরকমটা সুন্দরবনে প্রযোজ্য নয়। পূর্ব মেদিনীপুরে কী হয়েছে বা উড়িষ্যায় কী হয়েছে সেটা আলাদা। এখানে একটা বিষয় খুবই কনসার্নের, সেটা হল গ্লোবাল ওয়ার্মিং। সব জায়গাতে আলোচনা হচ্ছে গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর ফলে সমুদ্রের জল বেড়ে গেছে এবং সমুদ্রের জল বেড়ে যাওয়ার কারণে নদীর জল বেড়ে গেছে। এবার দেখা যাবে, সুন্দরবনের যে দ্বীপগুলোতে মানুষ বাস করেন সেগুলো দেখতে গামলার মতো, চারিদিকটা বাঁধ দিয়ে উঁচু করা হয়েছে আর মাঝখানটা সমুদ্র বা নদীর যে জলের স্তর তার চেয়ে নিচে। এখানে আমাদের মনে রাখতে হবে যে জঙ্গলের ভূমি কিন্তু অনেক উঁচুতে, কারণ, সেগুলোতে পলি পড়ে পড়ে উঁচু হয়েছে। নদীবাঁধ দেওয়ার ফলে এই দ্বীপগুলোতে কিন্তু পলি পড়তে পারেনি, কারণ বাঁধগুলো সেই পলি পড়াটা আটকে দিয়েছে। এই গামলা আকারের হওয়ায় এই বাঁধ দেওয়া দ্বীপগুকো সব সময় একটা ভালনারেবল পজিশনে থাকছে। সমুদ্রের জল যখন বেড়ে যায় তখন ভালনারেবিলিটি অনেক বেশি বেড়ে যায়। এটা হবেই। গ্লোবাল ওয়ার্মিং যে আজকে থেমে যাবে এরকম ভাবার কোন কারণ নেই। সুতরাং সমুদ্রের জল আরও বাড়বে এটা স্বাভাবিক এবং সমুদ্রের সাইক্লোনের সংখ্যা বা সামুদ্রিক ঝড় অনেক বাড়বে এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে, গ্লোবাল ওয়ার্মিং থামানোর এখনো পর্যন্ত কোন আশা দেখছিনা বা সাইক্লোন হওয়া- নদীর জোয়ার ভাটা আমরা ঠেকাতে পারব না। আমরা যে নদীর বাঁধ পোক্ত করলে টিকতে পারবো এমন নয়। খুব সাম্প্রতিক অতীতকালে বললেও অন্তত বছর দশেক আগে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের একটা রিপোর্ট খুব বিশদে বলেছিল যে, সুন্দরবনের এই দ্বীপ অঞ্চলগুলো ত্যাগ করতে হবে। খুব পরিষ্কার চাঁচাছোলা ভাষায় তারা বলেছিল যে, সুন্দরবনের যে পিংক এলাকাগুলো রয়েছে, সমুদ্র এবং জঙ্গল ঘেঁষা যে দ্বীপগুলো সেগুলো কোনমতেই আর ভায়াবেল নয়। সেগুলোতে ডেভলপমেন্ট করা, তার পিছনে পয়সা ঢালা, অমুক-তমুক তৈরি করা এগুলো হচ্ছে সম্পূর্ণ পয়সা জলে ঢালা। আমাদের চেষ্টা করতে হবে যেসব ল্যান্ডগুলো মেনল্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত সেগুলোকেই ডেভেলপ করা, যাতে দ্বীপ এলাকার মানুষ শিক্ষা, কর্ম, চিকিৎসা যেকোনো প্রয়োজনে যদি কোথাও যেতে চায় সে নিজের দ্বীপের মধ্যে সলিউশন না খুঁজে মেনল্যান্ডের দিকে যে সুন্দরবন রয়েছে সেখানে যাবে। সেখানকার ডেভেলপমেন্টের ব্যাপারে এদের নিয়োগ করা যেতে পারে। কারণ সুন্দরবনের এই দ্বীপ অঞ্চলগুলো কিন্তু আর বসবাসের জন্য ভায়াবেল নয়। তো, এবার প্রত্যেক বছর যদি আমরা দেখি, একবার মে মাসে আরেকবার সেপ্টেম্বর মাসে দুবার করে বড় সাইক্লোন সামুদ্রিক ঝড় হচ্ছে। কখনও সে বাংলাদেশ বা উড়িষ্যার দিকে চলে যাবে কিন্তু সব সময় সুন্দরবন থরহরিকম্প হয়ে ভেবে যাবে যে এই ঝড় তাদের দিকে ঘুরে আসতে পারে। সমুদ্রের জল যদি বাড়ে, ঝড় যদি বাড়ে, তার সিকোয়েন্সে যদি বছরে দুটো সাইক্লোন হিসেবের মধ্যেই থাকে আর নদীর বাঁধের কারণে দ্বীপগুলো যদি এরকম গামলার মতো গর্ত হয়ে থাকে, তাকে ঠেকাবে কে! তার সর্বনাশ ঠেকাবে কে!

    এইবার, একদম প্রাণের কথা একজন বলেছেন- সুন্দরবন নতুন জেলা হোক। এটা আমার প্রাণের কথা। বহুদিন ধরে আমি ভেবে আসছি যে শুধু সুন্দরবন নয় প্রতিটি ভৌগোলিক এলাকার কিছুটা হলেও স্বায়ত্তশাসনের প্রয়োজন আছে। আমার আরও একটা জিনিস মনে হয়, আয়লার পর থেকে আরো প্রচণ্ডভাবে মনে হয়েছিল, এখন ধারণাটা আরো পোক্ত হয়েছে যে, এই ব্যর্থতা কার? শোধরানোর রাস্তা কী? আমি বিভিন্ন জায়গায় অনেক লেখা পড়ি, সেখানে একটা জিনিস যেটা আমাকে খুব দুঃখ দেয় এবং চিন্তিত করে এই যে---- ধরুন, মাটির বাঁধ না কংক্রিটের বাঁধ? এই যে সুন্দরবনের দ্বীপগুলো ছেড়ে চলে আসতে হবে না ওই এলাকাগুলোকে আবার সুরক্ষিত করা সম্ভব? এই যে আলোচনাগুলো চলে বা বিভিন্ন লেখাপত্র চলে সেখানে নদীর গতিবেগ, গ্লোবাল ওয়ার্মিং ইত্যাদি বিভিন্ন জিনিস নিয়ে আলোচনা রয়েছে। কেউ কখনও বলে না যে, অতীতেও সুন্দরবনে বহু সাইক্লোন হয়েছে, হয়তো দশবছরে একটা এবং সেই সাইক্লোন সামলে সুন্দরবনের মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তার মানে আজকের সাইক্লোনের মূল পার্থক্যটা কিন্তু ভূগোল না, সমাজ। শুনতে খটকা লাগতে পারে, আগে সুন্দরবনের দ্বীপগুলো কার ছিল? যারা সুন্দরবনের দ্বীপে থাকতো তাদের ছিল। তারা মনে করতো এটা আমার দ্বীপ, আমাদের দ্বীপ; আমরা সমাজের যে বিভিন্ন গোষ্ঠীগুলি এখানে বাস করি, আমরা যারা বনবিবির পুজো করি, আমরা যারা যাত্রাপালা করি, আমরা যারা জঙ্গলে ঘুরি, চাষ করি, মধু আনি এটা আমাদের দ্বীপ। গত প্রায় বছর চল্লিশ ধরে এই আইডিয়াটাকে- এই যে, আমার এলাকা, আমার সমাজ, আমাদের সম্পদ, একে রক্ষা করবো কীভাবে- এই চিন্তাটা মানুষের মন থেকে কুরে কুরে বের করে দেওয়া হয়েছে বা ভালো কথায় বললে আন্ডারমাইন্ড করে দেওয়া হয়েছে। এখন বন্যা হলে ত্রাণ দপ্তরের, নদীবাঁধ হলে সেটা সেচ দপ্তরের, এলাকায় একশো দিনের কাজ দিয়ে নদীবাঁধে মাটি ফেলা হলে সেটা নারেগা প্রকল্পের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। এই যে ধরুন গোটা সুন্দরবনের মানুষকে এরা ত্রাণের, এরা সেচের, এরা একশো দিনের কাজের, এরা বাইরে মজুরিতে যায়, এরা এখানে চাষ করে, এরা জঙ্গল কাটে, এরা সিপিএম-তৃণমূল- বিজেপি ইত্যাদি প্রভৃতি বহুভাবে আমি যদি হাজার ভাগে ভাগ করতে থাকি এবং মানুষকে আমি যদি স্পষ্ট বুঝিয়ে দিই তুমি আসলে একা, তোমার সমাজ বলে কিছু নেই। তোমার বিডিও অফিস আছে, তোমার থানা আছে, তোমার আদালত আছে, তোমার সেচদপ্তর-বনদপ্তর-ত্রাণদপ্তর আছে, একশো দিনের কাজের একটা দপ্তর আছে কিন্তু তোমার সমাজ নেই, সুন্দরবনের দ্বীপগুলো তোমার নয়, সুন্দরবনের জঙ্গলটাও তোমার নয়। এই যে খণ্ডিত করে দেওয়া হল মানুষকে, তার মনে সমাজের প্রতি আস্থা-এফোর্ট সব চলে গেল। আজকে ধরুন যে কয়টা নদীবাঁধের জায়গা ভালনারেবল, খেয়াল করে দেখবেন সেগুলোতে হয় মাছের ফিশারি করা হয়েছে, যেগুলো নদীবাঁধের প্রচন্ড ক্ষতি হয়। হ্যাঁ চিংড়ি, পার্শের বিক্রি বাড়তে পারে তাতে কিছু বৈদেশিক মুদ্রাও উপার্জন হয়। চাষ করলে লসে করত, চিংড়ি চাষ করে অনেক প্রফিট করেছে। কিম্বা ইটভাটা- যে অ্যাক্টিভিটির ফলে চরে ম্যানগ্রোভ গজাতে পারছে না। নদীবাঁধ থেকে জল ঢোকানো হচ্ছে যাতে ফিশারি হয়। এই ধরনের অ্যাক্টিভিটিগুলো কখন সম্ভব? আমার দ্বীপ ডুবুক-ভাসুক, আমার ছমাসের প্রফিটটা যেন উঠে আসে, এই ইচ্ছাটাকে যখন পারমিট করা হয়। শুধু তাই নয়, নদীবাঁধের এপাশে-ওপাশে চরের উপর যথেচ্ছভাবে হোটেল দোকান বাজার বসিয়ে রেখেছে। প্রশাসন খুব সুন্দর ভাবে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে, যখন তিলে তিলে নদী বাঁধের সর্বনাশ ঘটানো হয়েছে। সমাজ, মানুষ মনে করে যে আমাদের তো কোন বক্তব্য নেই। আমি স্রেফ একটা ভোট। একটা মানুষ একটাই ভোট। দ্বীপে লক্ষ লক্ষ মানুষ আছে সবাই যা একত্রে ভাববে আমিও তাই ভাববো, এই যৌথতাবোধ পুরো নষ্ট হয়ে গেছে। এখানে সবাই এখন একক, যে যার নিজের মতো করে সার্ভাইভ করার চেষ্টা করছে। সে নিজের মতো দ্রুত বড়লোক হওয়ার চেষ্টা করছে। সেখানে সমাজের কোনো বাধা নেই, কোনো বাঁধুনিও নেই, গো অ্যাজ ইউ লাইক ইট। প্রশাসন সেই অনুযায়ী তাল দিচ্ছে। আমি প্রশাসনের এককভাবে দোষ দিতে পারিনা। মানুষকেও এককভাবে দোষ দিতে পারিনা। আমি একটা ৪০-৫০ বছরের একটা চলমান প্রক্রিয়াকে দেখতে পাচ্ছি সেটা এখন তার পূর্ণরূপ নিয়ে দাঁত নখ বের করে বসে আছে। এইবার, প্রকৃতির যে ভয়ঙ্কর রূপ এখন দেখা যাচ্ছে তার সামনে যদি মানুষ ঐক্যবদ্ধ না হয়, সুন্দরবনের মানুষ যদি নিজেদের এলাকায় বসে প্ল্যানিং না করে এবং সেটাকে যদি গভর্নমেন্ট - প্রশাসন আমল না দেয়, যদি পাবলিক - প্রশাসন - গভর্নমেন্ট মনে করে ওটা একটা ডিপার্টমেন্টের কাজ, তাহলে সুন্দরবনের কোনো রক্ষা নেই, এ আমি একেবারে স্ট্যাম্প পেপারে সাইন করে লিখে দিতে পারি যে সুন্দরবনকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। এটুকুই আমার বক্তব্য। নমস্কার ।

    সুমন নাথ : অনেক ধন্যবাদ ডঃ অমিতাভ চৌধুরীকে। উনি খুব সুন্দর ভাবে এই সমস্যার যে একটা কমপ্লেক্স ডাইমেনশন আছে, সেইটাকে তুলে ধরেছেন। আমরা যদি ওনার বক্তব্যকে একটু ছোট করে সামারাইজ করার চেষ্টা করি, তাহলে প্রথমত উনি যেটা বললেন সেটা নিয়ে আমাদের নিজেদের মধ্যে একটা আলোচনা চলছিল যে, হোয়েদার দেয়ার ইজ অ্যাকচুয়ালি আ ডিভিশন বিটুইন কংক্রিট ড্যাম আর যেটাকে আমরা মাটির বাঁধ বলছি, সেইটা একটা প্রশ্ন রয়েছে। আর দ্বিতীয় কথা হল যে পয়েন্টগুলো হাইলাইট করার চেষ্টা করলেন সেটা হচ্ছে ফ্যাক্টর অফ ইনহ্যাবিটিটি। আমরা তো রাতারাতি গ্লোবাল ওয়ার্মিং সামলাতে পারবো না, তার সামান্যতম সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে ন্‌ এবং যেহেতু গ্লোবাল ওয়ার্মিং সামলানো যাচ্ছে না তার ফলে যে ডিজাস্টারগুলো নিয়ে আমরা এতটা ব্যতিব্যস্ত, সেই ডিজাস্টারগুলো প্রতিবছর হবে। সেইটা আটকানোর কোনো রাস্তা নেই। এখানে যে জায়গাটিতে ফোকাস করলেন, মূলত উনি ওনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার বলেই এটা তিনি বলতে পারলেন কারণ এইগুলো নিয়ে আলোচনা আমার খুব একটা বেশি চোখে পড়েনি যদিও আমি সুন্দরবন চর্চা করি, এটা হচ্ছে একটা সমাজ সাংগঠনিক দিক, যে দিকটা আসলে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ এবং সত্যি কথা বলতে ওগুলোর কিছু টেকনিক্যাল পরিভাষা আছে। যে, সরকারের মেন্টালিটি---- সেই অ্যাঙ্গেলটাতে কোথাও গিয়ে আগের যে পদ্ধতিতে সামাজিক সম্প্রদায়ের মেলবন্ধনের মাধ্যমে তারা প্রকৃতির সঙ্গে যুঝতেন, লড়াই করতেন সেইটা মিসিং। সেটা যত মিসিং হবে তত প্রবলেমটা বাড়বে। এটা খুব পরিষ্কার যে ইন্টার ডিপার্টমেন্টাল কো-অর্ডিনেশন এটা পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সর্বত্রই ল্যাক করে, সুন্দরবন যে তার এক্সসেপশন হবে তা ভাবার কোন কারণ নেই। কিন্তু সুন্দরবন যেহেতু প্রচন্ড ভালনারেবল তার ফলে সুন্দরবনের সমস্যাটা অনেক অনেক বেশি। পরিশেষে উনি যেটা বললেন সেটা হচ্ছে যে মানুষের সম্পর্কের জায়গাটা যে কোনভাবে পুনরুদ্ধার করতেই হবে আর সেটা যদি আমরা না করতে পারি তাহলে কংক্রিট বাঁধ বলুন, নদীবাঁধ বলুন কোনটাই কিন্তু কাজে আসবে না এবং সুন্দরবন এলাকার বাণিজ্যিক ব্যবহারের ফলে আমরা আলটিমেটলি পিছিয়ে পড়ছি সুন্দরবনের মানুষ তথা কলকাতার মানুষ বা এক অর্থে দেখতে গেলে গোটা দক্ষিণবঙ্গের যে ভার্নারেবল এরিয়া প্রত্যেকের ওপর এই প্রভাবটা তৈরি হবে।

    অমিতেশ মুখার্জি : সুন্দরবনের সমস্যার বিষয় নিয়ে যে থিমটা সিলেক্ট হয়েছে এখানে, সেটা অসম্ভব কমপ্লেক্স একটা বিষয়। আমার বহুদিনের বন্ধু অমিতাভ চৌধুরী আমার কাজটা অনেকটাই সহজ করেছেন এবং আমার ধারণা আমার বলার পরিসর যেটা অলরেডিই ওনার বক্তব্য চেহারা নিয়েছে। আমার দীর্ঘদিনের সুন্দরবনের সাথে ওঠা বসা, তার একটা বিরাট অংশ জুড়ে অমিতাভ চৌধুরী রয়েছেন। আমি দীর্ঘদিন তাঁর সান্নিধ্য ও সাহচর্যে থেকে সুন্দরবনকে চিনেছি।

    সুন্দরবনের নদীবাঁধের বিশেষজ্ঞ বলতে যাদের বলা হয়, সেই বিশেষজ্ঞ আমি নই। কারণ স্থপতি বা ইঞ্জিনিয়ার সহ সেচবিভাগ মিলে সুন্দরবনের নদীবাঁধ নিয়ে যে ভীষণ আয়োজন সেখানে তাদের ধারেকাছেও আমি আসি না। আমার আকর্ষণ মূলত সুন্দরবনের নদীবাঁধ কেন্দ্রিক। সেটা নিয়ে চর্চা করার কারণটা পুরোটাই ছিল আমার বিষয়। এবং খানিকটা সেটা ধরে নিয়েই আমি সুন্দরবনের বৃহত্তর সামাজিক চেহারাটা জানার চেষ্টা করেছি। সেখানে নদীবাঁধের যে বিরাট মাটির একটা দেওয়ালটা আছে সেটা আমার কাছে মনে হয়েছে শুধু একটা ফিজিকাল অবজেক্ট নয় বা কেবলমাত্র একটা ভৌগোলিক বা ভূতাত্ত্বিক বিষয় নয়। বরং সেইটার মধ্যে দিয়ে আমি সুন্দরবনের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক পরিসরে পৌঁছতে পারি। সেইখান থেকেই নদীবাঁধের প্রতি যে কৌতূহল সেটা উঠে এসেছে। আমার নদীবাঁধ নিয়ে আলোচনাও সেই পরিসরে। এই চর্চা করার মধ্য দিয়ে আমার যে জিনিসটা মনে হয়েছে, বিগত কয়েক বছরে প্রত্যেকবার সাইক্লোন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সুন্দরবন যে একটা বিশেষ জায়গা, কলকাতা ও কলকাতার পাশ্ববর্তী মধ্যবিত্ত জগতে মধ্যে সেটা খুব জোরদারভাবে উঠে আসছে, আবার কিছুদিন পরে চলেও যাচ্ছে। তার কারণ হচ্ছে আমি যখন সুন্দরবনে কাজ করতে যাই তখন শুনেছিলাম যে, ঝড় হলে এখানে কীরকম পরিস্থিতি হয়। লোকমুখে শুনেছিলাম ১৯৮৮ তে আশ্বিনের যে ঝড়, সেই ঝড়ে সুন্দরবনের বহু ক্ষয়ক্ষতি- মানুষের জীবন ইত্যাদি গেছে। সেই ঝড়-ই একমাত্র ঝড় যেটা মানুষ মনে রেখেছে, তখন ঝড়ের আগে নামকরণের রীতি আমরা জানতাম না। এখন, আমরা যত এগিয়েছি দেখা যায় ক্রমশ ঝড়ের প্রকোপ এবং তার ফ্রিকোয়েন্সি বেড়ে চলেছে এবং ঝড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সুন্দরবন আমাদের আলোচনা ইত্যাদির ক্ষেত্রে আসে। আবার সময়ের সাথে সেটা অনেক পিছনে চলে যায়।

    আবার আরেকটি ঝড়, তার পূর্বাভাস এবং সুন্দরবনে আছড়ে পড়া। তার সঙ্গে সুন্দরবনের মানুষের ভাগ্য ইত্যাদি সুন্দরবনকে আবার আমাদের আলোচনার স্তরে নিয়ে আসে। কিন্তু আমরা যদি এটাকে ভাবার চেষ্টা করি যে সুন্দরবনের বিষয়ে এই যে সুমনবাবু বললেন, সরকারের উপর নির্ভরতা বা গভর্নমেন্টালিটি, ওটা কিন্তু এমন নয় যে আজ থেকে ৩০ বছর আগে গভর্নমেন্টালিটি ছিল না, আজকে গভর্নমেন্টালিটি অত্যন্ত বেড়েছে বলে সামাজিক যে সুন্দরবন তাকে আমরা নানানভাবে বাণিজ্যিক বা প্রশাসনিক ভাবে ভাগ করে ফেলেছি, ইনফ্যাক্ট সুন্দরবনের সবচেয়ে কাছের যে ইতিহাস, (সুন্দরবনের অনেক ইতিহাস তো আমরা শুনে আসছি) যে সময়টা থেকে নদীবাঁধ ইত্যাদি আলোচনার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছে, সেই সময়টা হচ্ছে মূলত ঔপনিবেশিক উন্নয়ন, সেটাকে আমি বলছি যে সেটাও একটা গভর্নমেন্টালিটি এবং সেই গভর্নমেন্টালিটি না থাকলে কিন্তু আজকে যে সুন্দরবন নিয়ে আমরা আলোচনা আলোচনা করছি, অর্থাৎ, নদীবাঁধ কতটা স্থায়ী - সেটা সিমেন্টের বাঁধ করলে স্থায়ী হবে কিনা- মাটির বাঁধ কতটা স্থায়ী, এই আলোচনাটার সূত্রপাত একটা নির্দিষ্ট সময় থেকে বলে আমরা ধরে নিতে পারি যেটা ঔপনিবেশিক সময় থেকে। যেখানে প্রথম একশো বছর ধরে নেওয়া হয়েছিল ঔপনিবেশিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে জলাভূমি-জঙ্গল একটা ধরনের অন্তরায়, সেই গভর্নমেন্টালিটিটা তখনকার সময় তখনকার কালে সেটাই তার উন্নয়নের মাপকাঠি ছিল। সেটার জন্য সুন্দরবনে ঢালাও লোকজনের বসবাস করা, সেখানকার জমিজায়গাগুলোকে তৈরি করা বসবাসের জন্য, সুন্দরবনে বৃহত্তম যে ডেল্টা বা হাঙ্গেরি বদ্বীপ তার সাথে সুন্দরবনকে যুক্ত করা, একইসাথে সুন্দরবনে ভবিষ্যৎ বা অদৃষ্টকে।

    ঔপনিবেশিক গভর্নমেন্টালিটির লক্ষ্য ছিল একটা স্টেবল রোজগারের জন্য আনস্টেবল জায়গাকে চাষের জন্য তৈরি করা।যে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত গাঙ্গেয় বদ্বীপের অন্যান্য জায়গাগুলোকে নির্ধারণ করেছিল, সুন্দরবনে সেই চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হয়ত হয়নি, কিন্তু নানারকম বন্দোবস্তের এক্সপেরিমেন্ট চলতেই থাকে এখানে, যাতে সুন্দরবন ক্রমশ এই গঙ্গেয় বদ্বীপের অন্যান্য অঞ্চলের মতই কৃষি ইত্যাদিতে ভরে ওঠে, যার জন্য দ্বীপের চেহারা অনেকটা বেসিনের মতো। যে কারণে তার ভিতরকার যে জমি বা মাটি সেটার লেভেল অনেক নীচে থাকে। অনেক আগে একটা জমি সেটল করা হয়। পরে সেটার চারিদিকে বাঁধ দেওয়ার প্রশ্ন এসেছে। বাঁধ না দিলে জমি তৈরি করার যে প্রসেস, যেখানে চাষবাস হবে, রেভিনিউ খাজনা আসবে, এটা তৈরি হবে কি করে, যদি না আমি বাঁধ দিতে পারি। স্বভাবতই আমি যদি দক্ষিণ থেকে আসার চেষ্টা করি দক্ষিণটা অনেক উঁচু এবং ক্রমশ যদি উত্তর দিকে যাই এই বেসিন বা সেটলটি আমরা দেখতে পাবো। এটা দীর্ঘদিন চলেছে, এমন নয় যে অ্যাক্ট চালুর সাথে জঙ্গল কেটে বসতি বন্ধ হয়ে গেছে, এটা বহুদিনই চলেছে। এবং চলার মধ্য দিয়ে সুন্দরবনের একটা নির্দিষ্ট ভবিষ্যৎ তৈরি হয়েছে এবং সেই ভবিষ্যতটা অনুসরণ করেই পরবর্তীকালে আমরা যখন স্বাধীনোত্তর ভারতবর্ষ বা সত্তরের দশকে যাই তখন আমাদের মনে হতে থাকে যে এই কৃষি বসতি, জঙ্গল কাটা, জঙ্গলকে উপেক্ষা করা, এটা বোধহয় ঠিক হয়নি। বন-জঙ্গল রক্ষার অ্যাক্টের মধ্য দিয়ে আমরা যে জায়গাতে এসে পৌঁছেছি।

    আমাদের মনে হয়েছে জঙ্গল রক্ষা দরকার। সুন্দরবনের আজকের যে চেহারা, জগতজুড়ে তার যে একটা পরিচিতি সেটা মূলত তার জনবসতির জন্য নয়, অন্যকারণে। ম্যানগ্রোভ অরণ্য, রেয়ার প্রজাতির গাছপালা এবং জীবজন্তু ইত্যাদি এবং সেটা রক্ষা করা জরুরি। কিন্তু গভর্নমেন্টালিটির প্রয়োজনে ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে বহুমানুষের বসবাস এখানে হয়েছে ওসেই মানুষজনের এই জায়গা নিয়ে ইন্টারেস্ট ও অ্যাসপিরেশন তৈরি হয়েছে।

    এক একটা ঝড়ের ফলে সুন্দরবনের ভবিষ্যত কী হবে এটা আমরা কয়েকজন যারা ভাবছি, আমরা কিন্তু এটা ভেবে কোনো সমাধান বের করতে পারব না। তার প্রধান কারণ হচ্ছে এইটাই যে সুন্দরবনের নদীবাঁধ শুধু ঝড়ে-ঝাপটায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না। জল উপচে পড়ার কারণে, অনেকটা সরু আলের মতো চেহারা বা স্ট্রাকচারে নোনা জল ঢুকে ধসে যাওয়ায় ভাঙছে। নদী নিজের খেয়ালে চলতে থাকে এবং সে নদীবাঁধকে রক্ষা করে বইবেই এমনটা তো নয়। নদীবাঁধের যে দুর্বল জায়গা সেখান থেকেও সে বইতে থাকবে। এবং বইতে বইতে নদীবাঁধকে খেতে থাকবে। এইভাবে খেতে থাকলে নদীবাঁধের ক্ষয়ে গেলে, বাঁধের যে দেওয়ালটা আমরা ভাবছি দাঁড়িয়ে আছে সেটা একসময় হালকা হয়ে হঠাৎই ভেঙে পড়ে। এইটা হচ্ছে একটা অদৃশ্য প্রক্রিয়া, কিন্তু এটা হয়েই চলেছে। আয়লা-আম্ফান-ইয়াস যেমন এক একটা বড় ইভেন্ট যেগুলোর জন্য আমাদের নজর বারবার সুন্দরবনের দিকে ফিরছে। একটা আমফান আর একটা ইয়াসের মাঝে সুন্দরবন আবার নজরের পিছনের দিকে চলে যায়। চলে গেলেও যেটা থেকে যায়, সেটা হচ্ছে এই নদীর গতিপথের ক্রমশ অবক্ষয় ঘটানো। অবক্ষয় ঘটনোটা কিন্তু একটা প্রতিদিনের ঘটনা , তাই সেটা আলাদা করে আমাদের নজরে আসে না। এটা যখন ঘটতে থাকে তখন কিন্তু নদীবাঁধটা ভেঙে যেতে থাকে। এখানে কিন্তু সিমেন্টের বাঁধ কংক্রিট এর বাঁধ মাটির বাঁধ আমার ধারণা খুব একটা বিভেদ করবে না। আমার ধারণা, সুন্দরবনের অনেক জায়গাতেই কিন্তু সিমেন্টের এবং ইটের গাঁথুনি গড়া আছে কিন্তু সেখানে জলের উচ্চতা যে স্তম্ভ তৈরি করছে সেটা সে আটকাতে পারলেও তলা দিয়ে যে অবক্ষয় হচ্ছে সেটা কতটা আটকাতে পারবে এটা আমার কাছে একটা প্রশ্ন। অর্থাৎ এই ধরনের বাঁধ যে নিচু জায়গাগুলোতে আটকে রাখার চেষ্টা, এইটা যদি লং রানের কথা ভাবি সেটা কতটা সাসটেন করবে এটা খব বড় একটা প্রশ্ন, যে প্রশ্নটা কিন্তু আয়লা-আম্ফান-ইয়াসের ক্ষেত্রে যতটা প্রযোজ্য সুন্দরবনে যখন আয়লা-আম্ফান থাকে না তখনও কিন্তু ইকোয়ালি ইম্পর্টেন্ট। এই জায়গাতেই আমার মনে হয় যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হল এই যে, নদীর চলার পথ নিয়ে একটা ধারণা, নদী কীভাবে কোন দিকে যাচ্ছে। নদী একদিকে যাচ্ছে সে বাঁধ খেয়ে নিচ্ছে, সেখানকার জমি সে নিয়ে নিচ্ছে কিন্তু একদম একই সময়ে অন্যদিকে সে জায়গা তৈরি করে দিচ্ছে। জমি তৈরির একটা প্রচেষ্টা রয়েছে। সুন্দরবনের প্রেক্ষিতে এইটা নিয়ে খুব ভালো করে ভাবার দরকার আছে বলে আমার মনে হয়। আমি জানিনা, এখানে কীসব ইন্টারেস্ট জড়িত। আমি যেটা বলার চেষ্টা করছি যে একটা পলিসিগত সলিউশন দেওয়ার চেষ্টার মধ্য দিয়ে এখানে আরো কতগুলো দিক উন্মোচন হবে যেগুলো খুব জরু্রি। আমরা বারবার সুন্দরবনের ভালনারেবিলিটির সমস্যাসংক্রান্ত প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি এইখানে। ২০১০-১১ থেকে সুন্দরবনে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক WWF এর একটা বৃহৎ প্রোগ্রাম তৈরি হয়েছে যেখানে নানান ন্যাচারাল সায়েন্টিস্টরা কন্ট্রিবিউট করছেন এবং জোরালো ভাবে বলার চেষ্টা করছেন যে সুন্দরবনের দ্বীপগুলিতে আর মানুষের থাকা যাবে না, এটা থাকার যোগ্য থাকবে না, এখানে মানুষের শুধুমাত্র দুর্দশা-ই বাড়বে এবং সেই জন্য ম্যানেজ রিট্রিট বলে একটা বক্তব্য তাঁরা নিয়ে আসছেন। ম্যানেজ রিট্রিটের অর্থ হল আগামী ২০৫০ মধ্যে একটা সুন্দরবনের কুড়ি লক্ষ মানুষকে স্থানান্তরিত করতে হবে অন্য জায়গায় এবং গোটা সুন্দরবন দ্বীপে বাকি যে মানুষ থাকবে তাদের পরবর্তী শতাব্দীর শুরুর মধ্যে স্থানান্তরিত করে সুন্দরবনকে সম্পুর্ণ খালি করে ফেলতে হবে । অর্থাৎ দ্বীপগুলিকে সম্পূর্ণ জনশূন্য করে ফেলতে হবে, বলা হচ্ছে এটিই একমাত্র রাস্তা সুন্দরবনকে বাঁচানোর। সুন্দরবনের যে বৃহত্তর হেরিটেজ সাইট এবং তার যে জীববৈচিত্র এবং তার গাছপালা পশুপাখি সবমিলিয়ে সুন্দরবন যেভাবে ছিল একেবারে ঔপনিবেশিক সময়ে শুরুর দিকে সেই জায়গাতে তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে। এটা যদি করা যেত খুব ভালো হতো । এটা একটা সাংঘাতিক ম্যানেজ রিট্রিট। কতগুলো টেকনিক্যাল সমস্যার বাইরেও এতে অনেক অনেক বড় কিছু প্রবলেম জড়িয়ে আছে, যে প্রবলেমগুলো এগজেসটেনসিয়াল, রাজনৈতিক, সামাজিক এবং ইকোনমিক। এখানে যে বক্তব্যটা বলে আমি শেষ করবো সেটা হচ্ছে যে এই জায়গাতে থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া শুরুর থেকেই ভুল হয়েছে। দ্বীপগুলোতে নদীবাঁধ সত্যিই ভঙ্গুর এবং নদীবাঁধ গুলো স্থায়ী সমাধান করা অত্যন্ত দুরূহ। এরকম করা যায় কিনা জানিনা, কিছু কিছু দ্বীপে নদী বাঁধের উচ্চতা বাড়িয়ে সেখানে টেম্পোরারি একটা এক্সপেরিমেন্ট মত করা যায় যে পরবর্তী প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সেখানে জল ঢুকলো কিনা, তারপর সেই উচ্চতায় বাকি বাঁধগুলোকে এলিভেট করা যায়। এর জন্য সেচদপ্তরকে নদী বিভাগের সাথে কথা বার্তা বলতে হবে। আমাদের পশ্চিমবঙ্গে রিভার্স রিসার্চ ইনস্টিটিউট বলে একটা অর্গানাইজেশন আছে। কল্যাণীতে তার একটা বৃহৎ অফিস আছে। কিন্তু সেই অফিসকে কোনদিন সুন্দরবন বিষয়ক কোন দপ্তর কখনো কন্সাল্ট করেছে কিনা আমি জানি না। নদীর বিহেভিয়ার, তার গতিপথ, চলাফেরা ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে মানুষকে এখান থেকে ওখানে স্থানান্তর করা, যেখানে জমি পাওয়া যাচ্ছে সেখানে তাদের বসবাস করা যায় কিনা, যে জমিটা হারিয়েছে ওখানে সেটা জমিটা পাচ্ছে কিনা, এইভাবে ভাবনা চিন্তার কোনো অবকাশ আছে কিনা আমি নিশ্চিত নই।

    আমার কাছে ম্যানেজ রিট্রিট পার্সপেক্টিভ অবাক করে এই জন্য যে কতগুলো টেকনিক্যাল নো হাউ ও কতগুলো খুব গুরুগম্ভীর কথার মধ্য দিয়ে কতগুলো মানুষকে স্থানান্তরিত করব, এটা বলার মধ্য দিয়ে আমরা কিন্তু একটা খুব বড় সমস্যায় ঢুকে যাচ্ছি, যেটা পরবর্তীকালে কী রূপ নেবে তা কিন্তু আমাদের কাছে একদমই পরিস্কার নয়। এই সুন্দরবনের মানুষকে নিয়ে কথা বলছি, এই যে আমরা বলার চেষ্টা করছি তাদের জমি দেওয়া এবং নতুন চরে পাঠানো ইত্যাদির মধ্য থেকে জমির একটা আশ্বাস দিচ্ছি, জলমগ্ন লোকগুলোর জীবন-জীবিকার মধ্যে সবসময় কি সেরকম জমি থাকছে? এটা একটা বৃহৎ প্রশ্ন। হ্যাঁ, তারা নানা ধরনের অন্যান্য কাজ করছে। কলকাতায় গিয়ে মজুরের কাজ করছে। মাইগ্রেন্ট শ্রমিক হিসেবে অন্য শহরে চলে গিয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আম্ফানের পরেও বহু লোক ঘরে ফিরেছেন এবং দ্বীপের জমিজঙ্গল নিয়েই তাদের জীবন-জীবিকা নিয়ে চলাফেরা করছে। বহুবিধ জীবিকার মধ্য দিয়ে জলের স্থলের এক অদ্ভুত একটা নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হয়েছে তাদের কাছে। এবার সেই সম্পর্কটা থেকে উৎখাত করে ম্যানেজ রিট্রিটের মাধ্যমে তাকে যদি বলি অন্য জায়গায় নিয়ে ফেলতে হবে, তাহলে কিন্তু মুশকিল। সুন্দরবনের মানুষে ভালনারেবিলিটি , দুর্দশা সবকিছুই ভাবছি কিন্তু সুন্দরবনের মানুষ অ্যট দা সেম টাইম এই জমি- জল, এটা তার পরিচিত জায়গা, এখানকার সব কিছুর সঙ্গে তার একটা নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হয়েছে এবং সেই সম্পর্কটার ফলেই কিন্তু গর্ভারমেন্টালিটিই হোক বা উপনিবেশিক উন্নয়নের প্রয়োজনেই হোক তার বসতি আর জীবিকা দুটোই দিচ্ছে। তার মধ্যে আজকে এগ্রিকালচার যখনই আনসার্টেন হচ্ছে, ভেড়ি তৈরি হচ্ছে। এই ভেড়িটাও তার একটা জীবিকার দিক এবং তার সঙ্গে সঙ্গে তার অন্যান্য যে জীবিকা জঙ্গল-সমুদ্র-নদী পথের মধ্যে দিয়ে চলছে, সেটার মধ্যে স্থল ও জলের এক অদ্ভুত সম্পর্ক আছে সেটা কিন্তু শুধু বৈপরীত্য দিয়ে বুঝলে চলবে না। অর্থাৎ এই জলের মধ্যে থেকে সরিয়ে তাকে স্থলে তুলে দিতে হবে, এটা করে তাকে বিরাট জাস্টিস করবো এটা ভাবার কোন কারণ নেই। আমি তাকে অনেক বেশি ইনজাস্টিসের মুখেও ফেলতে পারি। তাকে যদি সম্পূর্ণ হবে এইখান থেকে তুলে ফেলি এবং অন্য জায়গায় নিয়ে বলি অনেক বেশি স্থায়িত্ব- নিরাপত্তা দিচ্ছি, পুরোটাই হয়তো তার কাছে অনেক ক্ষেত্রেই মিনিংলেস হয়ে দাঁড়াবে। এই জায়গা থেকে আমার মনে হয় নদীবাঁধ এবং যে বিষয়টা নিয়ে আজ আপনারা সবাই একত্রিত হয়েছেন ও ভাবছেন এটা সত্যিই খুব উৎসাহব্যঞ্জক দিক কিন্তু এই ভাবনাটা ভাবতে হবে মানুষের নানাবিধ ইচ্ছের মধ্যে দিয়ে। অর্থাৎ কমপ্লেক্সিটি অফ ইস্যু এন্ড ডাইভার্স অফ ডিজায়ার্স এর মধ্য দিয়ে আমাদের ভাবতে হবে সুন্দরবনের নদীবাঁধ এবং নদী বাঁধ নিয়ে মূল সমস্যাটা কী?




    গ্রাফিক্স: মনোনীতা কাঁড়ার
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০৬ জুন ২০২১ | ২৮৮৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Anindita Roy Saha | ০৬ জুন ২০২১ ২১:০৭494673
  • পার্টিসিপেটরি ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট একটি পরীক্ষিত সফল পদ্ধতি।স্থানীয় মানুষের অংশগ্রহণ অত্যন্ত ফলপ্রদ হয়েছে আফ্রিকার নানা দেশে। 


    পরবর্তীকালে পুরো সুন্দরবন এলাকা বাসযোগ্যতা হারালেও তার রক্ষণাবক্ষণ যেন অবহেলার মুখে না পড়ে  সেটা দেখা জরুরী। ভারতবর্ষে ফুরিয়ে যাওয়া অরণ্য বা সুনামিতে ডুবে যাওয়া দ্বীপকে সংরক্ষিত এলাকার তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেওয়ার নজীর আছে। 

  • স্বাতী রায় | 117.194.37.159 | ০৬ জুন ২০২১ ২৩:৩৩494680
  • খুবই ভাল লাগল আলোচনাটা। পরের পর্বের জন্য সাগ্রহে প্রতীক্ষায়।  অনেক গুলো কথাই আমার বই পড়া ধারণার সঙ্গে মিলে যাচ্ছে , তাই আরও আগ্রহে অপেক্ষা করছি। 


    কটা জিনিষ জানতে চাইছি। পশ্চিমবঙ্গের সাইক্লোন সেন্টার গুলোকে সরকার পরিচালিত থেকে কমিউনিটি পরিচালিত করার একটা প্রস্তাব এসেছিল। সেটা কি আদৌ হয়েছে ? হয়ে থাকলে তার স্টেটাস কি কেউ জানাত পারবেন ? তাদের যদি কপাল ফিরে থাকে তাহলে কমিউনিটির উপরেও ভরসা ফিরবে।  আর  সাইক্লোন শেল্টার গুলোর একটা consolidated লিস্ট ও খুঁজছি। সেটা কি কোথাও পাওয়া যায়? 

  • Sudarsan Brahmachari | ০৭ জুন ২০২১ ২০:৪৯494709
  • মানুষ আর নিজের দ্বীপ বলে গর্ব করছে কিনা সেটা বড়ো কথা।ভেড়ি, রিসর্ট তুলে দিতেই হবে।কংক্রিট নয় মাটির বাঁধ বাাাঁচাতে গাছ চাই। যারা আধুনিক হতে চায় তাদের সরিয়ে আনা উচিত। 

  • Somenath Guha | ০৮ জুন ২০২১ ১৩:৪০494736
  • তথাকথিত ম্যানেজ রিট্রিট অসম্ভব। মরিচঝাঁপির মতো রক্তারক্তি হয়ে যাবে।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন