তিলোত্তমা মহানগরী বারে বারেই তার রূপ বৈচিত্রে ভারতবর্ষের অন্য শহর গুলোর থেকে স্বতন্ত্র । আর তিলোত্তমার গর্বের মুকুটে শুধু ভিক্টোরিয়া বা হাওড়া ব্রিজ নয়, মহানগরের ট্রাম ও এই শহরের এক অন্যতম আকর্ষণ । ইতিহাস ও আধুনিকতার মিশেলে এ এক অনবদ্য উপস্থাপনা ।
ব্রিটিশ গভর্নর লর্ড কার্জনের প্রচেষ্টায় এশিয়ার প্রথম ঘোড়ায় টানা ট্রাম চালু হয় ১৮৭৩ এর ২৪ শে ফেব্রুয়ারি আর্মেনিয়ান ঘাট থেকে শিয়ালদহ অবধি , যদিও পরিকল্পনার অভাবে সেই বছর ২০ শে নভেম্বর তা বন্ধ হয়ে যায় । এরপর একটি লন্ডন কোম্পানির পরিকল্পনায় ও ভাইসরয় লর্ড রিপনের প্রচেষ্টায় পুনরায় আর্মেনিয়ান ঘাট থেকে শিয়ালদহ অবধি ঘোড়ায় টানা ট্রাম চালু হয় ২২ শে ডিসেম্বর ১৮৮০ তে আর জন্ম হয় এক যুগান্তকারী প্রতিষ্ঠান ক্যালকাটা ট্রাম ওয়েজ কোম্পানি ( CTC ) । ক্রমে এর যাত্রাপথ বিস্তারিত হয় । ১৯০২সালে এশিয়ার প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রাম চালানো শুরু করে CTC ।
২০১৪সালের ২৯ শে সেপ্টেম্বর CTC চালু করে দেশের প্রথম ট্রাম মিউজিয়াম ' স্মরণিকা ' । একটি ট্রামের মধ্যে গোটা ট্রামের ইতিহাস সংরক্ষণ করা হয়েছে, সঙ্গে একটি সুন্দর ক্যাফেটেরিয়া ।
যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নোনাপুকুর থেকে ধর্মতলা অবধি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ট্রাম চালু হয় ২০১৮সালে । কলেজ স্ট্রিট রুটে চালু হয় গ্রন্থাগার ট্রাম ।
মেট্রো রেল , ওলা উবেরের যুগে কোথাও যেন ভাঁটা পড়েছে ট্রামের গ্রহণ যোগ্যতায় । বেশ কিছু ট্রাম রুট বন্ধ ও হয়ে গেছে কিন্তু তার পরেও কলকাতার ট্রাম আজও নস্টালজিক করে তোলে আমাদের । ট্রাম কোথাও যেন শুধুই পরিবহন মাধ্যম নয় - এই শহরের এক জীবন্ত ইতিহাসের সাক্ষ ।
আর আজ আমি এত কথা কেন বলছি যারা ভাবছেন আজকের তারিখ টা একটু খেয়াল করে দেখুন , আজ ২২ শে ডিসেম্বর - CTC এর জন্মদিন ........
এই উপলক্ষেই নাহয় আরো একবার শীতের বিকেলে চেপে বসুন ট্রামে, ঘুরে আসুন কলকাতা আর সাক্ষী থাকুন ইতিহাসের .....
আজকের মত বিদায় বন্ধু,
ফিরে আসবো আবার অন্য একদিন এই শহরের অন্য কোন এক রূপকথার গল্প নিয়ে ।।।।।।।।।।।