শীতকাল এলেই বেশ চার্চে যাওয়ার জন্য মন কেমন করে , কিন্তু ভিড় আমার না পসন্দ আর সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল এর বাইরে কোথাও যাওয়ার ফন্দি করছিলাম । উপায় বাতলে দিলেন পিতৃদেব - বললেন যাও সেন্ট জনস চার্চ ঘুরে এসো । আমিও ক্যামেরা সঙ্গী করে বেরিয়ে পড়লাম আর অফিস কেটে চলে এলাম হেস্টিং স্ট্রিট ও কাউন্সিল স্ট্রিট এর সংযোগ স্থলে সেন্ট জনস চার্চে । রাস্তার পাশেই প্রবেশদ্বার , আর প্রবেশ মূল্য ও খুব সামান্য ।
ভিতরে ঢুকে কি দেখব ভাবছি এমন সময় আলাপ হল বৃদ্ধা অনিতা গোমস এর সাথে, তিনিই ঘুরিয়ে দেখালেন সবকিছু বোঝালেন কলকাতার বৃহত্তম বা প্রাচীনতম না হয়েও কোথায় এই যীশু গৃহ অনন্য - অনন্য তার স্থাপত্য শৈলীতে । এই চার্চের নকশা তৈরি করেছিলেন লেফটেন্যান্ট জেমস আগ । ইংল্যান্ডের সেন্ট মার্টিন ইন ফিল্ডস চার্চের অনুকরণে এটি নির্মিত , গল্প করতে করতে হাঁটছিলাম, হাঁটতে হাঁটতে উত্তর দিকে এগোতেই দেখতে পেলাম ১৮৬১তে লেডি ক্যানিং এর স্মৃতি সৌধ ( লেডি ক্যানিং ছিলেন গভর্নর লর্ড ক্যানিং এর পত্নী আর এই লেডি ক্যানিং এর নাম অনুসারেই তৈরি হয়েছিল বিখ্যাত মিষ্টি লেডিকিনি )। আরো আগে পশ্চিমে দেখা গেল নব্য ধ্রুপদী শৈলী তে নির্মিত সৌধ যেটি ১৭৯৪এ রোহিলা যুদ্ধের শহীদ সৈনিক দের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত । আরো পশ্চিমে এগিয়ে এবার সত্যি চমকে গেলাম ... ঠিক হলওয়েল মনুমেন্টের নকল যেটি ১৭৫৬য় তথাকথিত কৃষ্ণ গহ্বর (ব্ল্যাক হোল ট্র্যাজেডি) এর শিকার যাঁরা তাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত , জানলাম আদি স্তম্ভটি যেটি জিপিও এর কাছে ছিল ভেঙে দেওয়া হয় ১৯০৬সালে যখন লর্ড কার্জন ভাইসরয় ছিলেন ও সেই সময় আদি স্তম্ভটির অনুকরণে এটি নির্মিত হয় ।
আরো ৫০মিটার এগিয়ে ভাইস এডমিরাল চার্লস ওয়াটসন এর স্মৃতি ফলক , এই চার্লস ওয়াটসন ই নবাব সিরাজউদ্দোলাকে পরাস্ত করতে ও কলকাতা পুনরুদ্ধারে লর্ড ক্লাইভকে প্রভূত সাহায্য করেছিলেন । আর একটু এগোলেই নব্য ধ্রুপদী শৈলীর সঙ্গে ইসলামীয় রীতির মিশ্রনে নির্মিত ছোট্ট একটি স্মৃতি সৌধ জোব চার্নক এর উদ্দেশ্যে । স্মৃতি ফলক টিতে উল্ল্যেখ আছে জোব চার্নক এর মৃত্যুদিবস ১০-০১-১৬৯২ যদিও নির্ভরযোগ্য দলিল অনুযায়ী তাঁর মৃত্যু বছর ১৬৯৩ । জন কেরি , উইলিয়াম মার্টিন সহ আরো অনেকের স্মৃতি ফলক আছে এখানে , যাঁদের ল্যাটিন ভাষায় জ্ঞান হয়েছে তাঁরা পড়তে পারবেন ।
গির্জায় প্রবেশ পথে সিঁড়ির পাশে মার্বেল ফলক থেকে জানা গেল ১৭৮৩ তে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে জমিটি উপহার দেন শোভাবাজারের মহারাজা নবকৃষ্ণ দেব । ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন ১৭৮৪ তে গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস ও তিন বছর পর ১৭৮৭ তে লর্ড কর্নওয়ালিস এর দ্বার উদ্ঘাটন করেন । গির্জায় প্রবেশ করেই বাম দিকে রয়েছে জোফানির আঁকা অপূর্ব সুন্দর " লাস্ট সাপার " । ডানদিকে রঙিন কাঁচের সুন্দর জানলা , অন্দরে একটি ঘোরানো সুন্দর সিঁড়ি নিয়ে যায় দোতলায় যেখাতে একসময় আসন গ্রহণ করতেন উচ্চপদাসীন গভর্নর অথবা গভর্নর জেনারেলরা । প্রতি রবিবার সকাল ৯টায় প্রার্থনা হয়, মূলত যোগদান করেন ভারতীয়রা । আমিও অংশ নিলাম এবার অনিতা গোমস এর সাথে , আর কথায় কথায় বৃদ্ধা খোঁজ দিলেন আরো এক প্রাচীন যীশুগৃহ "আর্মেনীয় চার্চ" ।। সে গল্প হবে অন্য আরেকদিন .........