বাতাসে হিমের পরশ। শীত শীত ভাব। সকালের সোনালী রোদ ভারি সুখের! সুদূর সাইবেরিয়া থেকে ওরা ডানা মেলে আসছে, সাঁতরাগাছির ঝিলের পথ চিনতে কখনো ভুল হয়না। পরিযায়ী পাখি। কাগজের প্রথম পাতাটা ওদের মনে হয় কেনা, ছবি ছাপা হলো বলে!
মানুষের নামের আগে পরিযায়ী তকমা বসাল কারা? ভাগ্য ছাড়া আর কিইবা বলা যায়? পাখির কোনো মানসম্মান বোধ নেই। আজ এখানে তো কাল ওখানে। কিন্ত মানুষের তো একটা ঠিকানা থাকবে, যার সে জন্ম মুহূর্তে অধিকারী হয়। তাহলে তাকে পরিযায়ী তকমা বয়ে বেড়াতে হবে কেন?
লোক পথে নামে পেটের তাগিদে। কাজ খুঁজতে ভিন দেশে পাড়ি দেয়। যদি দানাপানি জোটে। আপেল তোলা, মোট বয়ে বেড়ানো, আরও কত রকমের কাজ। ছোট বড় ভেদ করতে নেই, তাহলে তো পেটে দড়ি বেঁধে কলের জল খেয়ে থাকতে হয়। লক ডাউন কে কবে শুনেছে এর আগে ? ওরে বাবারে ! পরিযায়ী তখন থেকেই করুণার পাত্র, মানুষ হয়ে দাঁড়িয়েছে চোখের বালি। পরিযায়ী মানুষ যেন মানুষ ই নয়। কেউই দায়িত্ব নিতে রাজি নয়। তফাৎ যাও, দূর হঠো!
পাখিরা শীতের শেষে যে যা্র ঠিকানায় ফিরে যাবে ডানা ঝাপটে। কিন্তু পরিযায়ী মানুষ? পথেই জীবন গেল কত জনের সে হিসেব কোথাও লেখা নেই। হয়তো কোনো দিন তার প্রয়োজন ও হবে না। জানতে চাইলে জবাব দিতে হবে কোথায় তা লেখা আছে?
অতিমারী মানুষকে দিশাহারা করে দিয়েছে। দিন আনি,দিন খাই অবস্থা এখন অধিকাংশ মানুষেরই। পরিযায়ী মানুষের অবস্থা তো আরও সঙ্গীন। সপরিবারে ভরাডুবি। এ কে কি বাঁচা বলে ? মুখে মুখোস লাগিয়ে আর যাই ঠেকানো যাক, খিদে মেটাতে মুখোস খুলতেই হবে। কিন্তু মুখে ডান হাত উঠবে কি করে ? বিনা পয়সার চাল দিয়ে জীবন চলে না। ভাতের সঙ্গে ডাল লাগলে সেটা জোগাবে কোন মহাজন?
কে জানে ক ঘন্টা পাবে এ জীবনটা। বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা, কোভিড ধরলে এক ছোবলেই ছবি! বয়স্করা তাই অনন্ত কাল ঘরবন্দী। কোভিডের ছোঁয়া বাঁচিয়ে যে কদিন প্রাণে বাঁচা যায়। কে না জানে আপনি বাঁচলে বাপের নাম!
কোভিড আর কতদিন ? কোটি টাকা খরচ করতে রাজি আছেন হয়তো অনেকেই, কিন্তু কে বুক ঠুকে বলতে রাজী হবে? অগত্যা কপাল ভরসা করে, দিনগুলো কোনো রকমে কাটিয়ে দেওয়া! কথায় বলে যে সয় , সে রয়!
কোভিডের প্রতিষেধক ভ্যাকসিন বাজারে আসতে বছর ঘুরে যাবে এ কথা শিশুও জানে। তবু ও চারদিকে কি লম্ফ ঝম্ফ! কথার ফুলঝুরি! পাবলিক কি এতই বোকা? ভোট বড় বালাই! এগিয়ে যেতেই হবে, আশার আলো দেখাতে না পারলে কিসের নেতা?
ইসু যাই হোক, সমাবেশ দিব্যি জমে যাচ্ছে। নিউ নরমালে পাবলিক এখন ডাহা বেকার। কিছু তো করতে হবে! ঝোলে ডালে অম্বলে থাকলে আপত্তি কি? নিজের ভালো পাগলেও বোঝে। হঠাৎ কেস খেয়ে গেলে, দাদা বাঁচাতে আসবে?
রাখে হরি মারে কে? হরি নাম এখন শব মিছিলে শোনা যায়। হরি একালে শুধু তুলসী তলায় পুজো পায়। আলাদা করে কোনো হরিবাবু আমাদের সঙ্গে এক সমাজে থাকেন না। বহুদিন ওই নামে মানুষের বিপদে কাউকেই এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। করোনা কালে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাই রীতি। য পলায়তে স জীবতে!
এই বাজারে জয়ধ্বনি যদি কারো নামে দিতেই হয়, বলতে হয় - জয় বাবা কোভিড নাইনটিন! অনেকটা জয় বাবা ফেলুনাথের মতো, খেল খতম,পয়সা হজম! সত্যিই, কোভিড যে কবে দুনিয়া ছাড়া হবে!