এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • আমি কি ১৬ আনা বাঙালি?

    Manab Mondal লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৭ ডিসেম্বর ২০২০ | ৫১৯ বার পঠিত
  • বাজারে কুমড়া দেখেছেন? আমি একটা কুমড়ো‌। না, না, চেহারাটা শুকনো লঙ্কা মতো। বৌ নেই তো, হাতে বিছানা সঙ্গ তাই আর কি। সাতসকালে নিজেকে খিস্তি দিয়ে মন ভালো করতে চাইছি আর কি, তাই এই লেখাটি পড়ে হতাশ হতে পারেন। কুমড়ো বলছি কারণ, উপরটা এখনও লাল, তবে পাড়ার দাদাদের সামনে পড়লেই একটুখানি সবুজ, কিন্তু ভিতরে ভিতরে পুরোপুরি কমলা হয়ে গেছি। 


    সিনেমা হলে হালকা অন্ধকারে নতুন প্রেমিকার বুকে কনুই ঠেকাতে চেষ্টা করার সময়, প্রেমিকা কনুইএর গুঁতোই মনে করিয়ে দিত যে জনমনগণতে দাঁড়াতে হয়। পূজাতে পুড়ুত মালালাকে প্রনামী দেওয়া দূরে থাকা, বড়ো ঠাকুরের প্রনামীর বাক্স থেকে টাকা চুরি করে লিটল ম্যাগাজিন করেছি। অথচ এখন পুরোপুরি ভিতরে রামপন্থী।


    গালাগালি করতে ইচ্ছে করে মাঝে মাঝে, কিন্তু নিরুপায়। রাজনৈতিক চাপ, কখনোই না গোটা বছর বাংলার মুখ দেখি না। জীবনানন্দ দাশ না আমি। তাই সুযোগ পেলে বাংলাতে ফিরতেও চাই না, তবে কেন কমলা হয়ে গেলাম ভিতরে ভিতরে?


    মধ্যবর্তী মেধার মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। টাইটেলের জোরে আবার রাষ্ট্র থেকে সুযোগ সুবিধা পেতাম, কিন্তু মেধাবী না হওয়ায়, খোঁচা খেতে খেতে মাঝপথে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া ছেড়ে, এদিকে ওদিকে অনেক ঘোরাঘুরি করে বিদেশে পাড়ি দিলাম বাসন মাজার কাজ নিয়ে। লেখক হিসেবে পরিচিত হয়েছিলাম এককালে - কবিতা, গল্প লেখা আছে অনেক, তেমন পাঠক পাই নি, তবে দুচারটে প্রেমিকা জুটেছিল। বয়েস বাড়ল, বাড়ি আর প্রেমিকার চাপে বিয়েটাও হল। বৌভাতের দিন বলিয়ে নেওয়া হয়েছিল ভাতকাপড়ের দায়িত্ব নিতে হবে। ঠিকই আছে, মাসে তিরিশ দিনে ২৬ দিন ফ্রিতে সেক্স করবে সেটা কি হয়?


    ভাতকাপড়ের জোগাড় করতে, বিয়ের আগে একটা পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগের চাকরি করতাম, সেটা ছাড়তে হল, হাওয়াই চটি, পাজামা পড়া বাঙালি আদর্শের প্রীতি ছেড়ে টাই বেঁধে কর্পোরেট অফিসে কত সব নুতন নামের আড়ালে সেলসম্যানের চাকরি থেকে পিওনের চাকরি, না পেরে কখনো কখনো ভর দুপুরের বৌদিদের বাড়ি গিয়ে ব্রা-প্যান্টিও বেচেছি দাদা। তবুও টাকা রোজগারটা আমার দ্বারা হল না। চাকরি করা বৌ অবস্থাপন্ন boyfriend জুটিয়ে চলে গেল। লোকে বোঝে না টাকাপয়সা কম ছিল, বাপের সরকারি চাকরি, পেল্লাই একখানা বাড়ি, বড় বাড়ির ছেলের বউ পালিয়েছে টাকাপয়সার অভাবে, নির্ঘাত নুনুটা ছোট ছিল। এ অপমান সহ্য হয়, পুরুষত্বহীনতা নিয়ে প্রশ্ন, ভালো বৌ পেতেই হবে, তাই রোজগার করতে হবে অনেক টাকা, তাই বিদেশে পাড়ি, ছোট থেকে বড় হবার স্বপ্ন নিয়ে।


    বামপন্থা কি দিয়েছে?  চাকরির আশায় বামপন্থী হই নি, তাই দলদাস হই নি, তাই বামপন্থার আসল স্বাদ নিতে দলছুটদের দলেই ছিলাম। না বামের না ডানের, আঁতেল দলে ফেলে দিয়েছিল জনসাধারণ। না ঘরের না ঘাটের ছিলাম আমি। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় বামপন্থী চিন্তাভাবনাগুলো বিকশিত হচ্ছিল আমার। প্রথম ধাক্কাটা ওখানেই। আমার মতে সামাজিক সমতার জন্য রাষ্ট্র সংরক্ষণ ব্যবস্থা করেছে, অথচ দিনরাত বলা হত সীটে নষ্ট করি আমরা। আরো অনেক অভিমান আছে, বামপন্থী বন্ধুবান্ধবদের প্রতি।


    যাইহোক আসল কথাটা বলি কিভাবে আমি কুমড়ো হয়ে যাচ্ছি দিনে দিনে। লেখা আমার কেউ পড়ুক না পড়ুক, লেখালেখি করাটা নেশা। প্রথম প্রথম হিন্দু দেবদেবতাদের নিয়ে মজা করে নানা গল্প কবিতা লিখতাম, দেখলাম বন্ধু সংখ্যা কমে যাচ্ছে, অসুবিধা নেই তাতে, আমি তখন মানুষই ছিলাম, হিন্দু হই নি তখনও। তবে মুসলিমও হই নি, শুনেছি আমার হাতের বিফ কাবাবে নাকি ভাল টেস্ট হয়, কিন্তু দাদা আমি নিজে কোনদিন টেস্ট করি নি, রেসিপিটা জানি, অঙ্কটাও জানি তাই কাজ চালিয়ে নিই। আমার মুসলিম বন্ধুবান্ধব এই নিষ্ঠার প্রতি বেশ আকর্ষিত, আমাকে ইসলামে কবুল করাতে বেশ আগ্রহী, তাই ধর্ম সম্পর্কে কিছু কিছু তথ্য দিতে থাকল। লোকে বলে অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী।  আমি দুমদাম কিছু পোস্ট করে ফেলাম, ইসলাম নিয়ে। অনেকগুলো হুমকি চলে গেল বাড়িতে। কেউ কেউ আবার বলতে শুরু করল আগে নিজের ধর্ম জানো। সেই থেকে কমলা প্রেম। তবে কমলা হয়ে জেনেছি, কমলাটা আসলে বিজেপির রঙ। হিন্দু ধর্মকে সত্য জানলে, বিজেপিকে হয়ত না সমর্থন করতে পারেন। তবে যাই হোক আজ এটুকুই, কেউ পড়ুক না পড়ুক আমি আঁতেল হব।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে প্রতিক্রিয়া দিন