পছন্দ | জমিয়ে রাখুন | পুনঃপ্রচার |
https://www.facebook.com/rajkumarauthor.weebly.in/posts/713804815915602
তখন পৃথিবী সুস্থ ছিল। কোনরকম কোন অদৃশ্য ভাইরাস মানুষ নামের প্রানীটাকে কাবু করতে পারেনি তখন। আমি প্রতিদিন ট্রেনে অফিস যেতাম। অটো থেকে নেমে হেঁটে যেতাম স্টেশনে তারপর সেখান থেকে ট্রেন ধরে অফিস।
প্রতিদিনের মত সেদিনও অটো থেকে নেমে দৌড় দিয়েছি স্টেশনের চেনা রাস্তায়। না, প্রতিদিন দৌড়াই না তবে সেদিন বেশ দেরি হয়ে গেছিল। তাই ১১ নম্বরের গাড়িটাকে ফুল পিক আপে চালিয়েছি তখন। চলার পথে চোখে দেখা অচেনা মানুষগুলো কেমন যেন চেনা হয়ে গেছিল ধীরে-ধীরে। আমার ৮ঃ২৩ এর ট্রেনটা ধরার জন্য এই চেষ্টা। তখনই বাজে ৮ঃ২০…আবার ট্রেনের একটা গুন ছিল যেদিন আমার দেরি হত সেদিন উনি সময়মত আসতেন আর যেদিন আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে বসে থাকতাম সেদিন ৫-৭ মিনিট লেট হবেই।
হঠাত একটা “বাপ” ডাকে থেমে গেলাম। পিক আপ এতটাই ছিল যে বেশ খানিকটা এগিয়ে গিয়ে পিছনে ফিরলাম। একজন ভদ্রলোক আর একজন ভদ্রমহিলা একটা পাচ-ছয় বছরের বাচ্ছা নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে আমার দিকে তাকিয়ে। বুঝলাম ওনারাই ডেকেছে আমায়। পিছিয়ে এসে বললাম “ডাকলেন আমায়?” ভদ্রলোক বললেন “হ্যাঁ বাপ। আমিই ডাক্লুম।“ আমার তখন ট্রেন মিস হয়ে যাওয়ার কথা আর মাথায় নেই।
ওনাদের সামনে এসে বললাম “বলুন।“
ভদ্রলোক বললেন “ আসলে আমরা বনগাঁ থেকে আসছি। মেটিয়াবুরুজ যাব এই ছেলেকে নিয়ে। বিনা টিকিটে ট্রেনে এসেছি। কিন্তু এখান থেকে যাওয়ার ভাড়াটুকু নেই। একটু সাহায্য করবি বাপ।“
আমি আর কিছু না ভেবে পকেট থেকে পঞ্চাশটা টাকা বের করে দিলাম। ভদ্রলোক টাকাটা নিয়ে আমার হাতদুটো ধরে আমার দিকে একটা করুন দৃষ্টি দিলেন। ট্রেনের হর্ন এর আওয়াজটা কানে এল। বুঝলাম ট্রেনটা মিস করলাম।
ওনারা চলে গেলেন আমি ধীরে ধীরে ষ্টেশনের দিকে গেলাম।
বেশ কয়েকদিন পর অটো থেকে নেমে হাঁটা দিয়েছি। পাশের সিগারেটের দোকানে ঢুকলাম। দাদুকে বললাম “একটা বড় গোল্ড ফ্লেক দাদু।“ দাদু সিগারেটটা হাতে দিলে লাইটারে দ্বারা আগুন দিলাম তাতে। হঠাত একটা চেঁচামেচির আওয়াজে মুখটা ফেরালাম রাস্তার দিকে ।
দেখালাম সেই ভদ্রলোক আর ভদ্রমহিলা সেই বাচ্ছাটাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে। তাদের ঘিরে বেশ লোক জমেছে। এগিয়ে গেলাম তাদের দিকে।
অচেনা ছেলেটি একটি লোককে বলছে “ জানেন প্রায় প্রতিদিন ওনারা এখান দিয়ে এইভাবে টাকা চেয়ে বেড়ায়। আমি ওনাদের অনেকবার দেখেছি।“
শুনেই সেই চেনা ভদ্রলোকটি চেঁচিয়ে উঠলেন “ হ্যাঁ চাই। কি করবি তুই? ভিক্ষা করি। তোর দেওয়ার ইচ্ছে না থাকে কেটে পর। অন্যকেউ দেবে।“কথাটা শুনে খারাপ লাগলো। পাশ থেকে আর একজন বলল “ গনধোলাই দরকার। ভগবান হাত-পা দিয়েছে তাও কাজ না করে বৌ-বাচ্চা নিয়ে ভিক্ষা করছে। লজ্জাও করেনা।“
আমার সত্যি ভিতর থেকে সেদিন খারাপ লেগেছিল। বিশ্বাসের ভিতটা একটু হলেও নড়ে গেছিল সেদিন। এগিয়ে গেলাম সামনের দিকে। ভাবলাম এদের জন্য একদিন ট্রেন মিস করেছিলাম। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত ওনাদের দেখিনি আমি আর। যাওয়ার পথে এদিক-ওদিক তাকিয়ে খুঁজেছিলাম দু-এক দিন কিন্তু চোখে পড়েননি ওনারা।
বাকিটা পড়ে হবে,মতামত না দিয়ে পড়লে খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলুম।
পছন্দ | জমিয়ে রাখুন | গ্রাহক | পুনঃপ্রচার |