এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • আঁধি

    Jahar Kanungo লেখকের গ্রাহক হোন
    ০২ ডিসেম্বর ২০২০ | ১৮২৬ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • শেষ রাতের দিকে আঁধি উঠেছিল। ক্ষুব্দ হাওয়ার বদ্ধ জানালা সার্সিগুলির উপর ধমাদ্ধম আঘাত। তারপর ফাঁক  ফোঁকর ছিদ্র খুঁজে ধুলো হাওয়া ঢুকে আনন্দকুঞ্জ এপার্টমেন্টের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরগুলির মধ্যে নিদ্রিত লোকগুলিকে জাগিয়ে তুলে দিল দিল্লীর আঁধি। নিদ্রা চোখে মানুষগুলি ছোটাছুটি করলো কিছুক্ষন এ ঘর থেকে ও ঘরে, রান্না ঘরে, বাথরুমে, এখানে ওখানে, খোলা আধখোলা জানালাগুলি বন্ধ করতে।


    ৫নম্বর গেটের গায়ে  গুলমোহর গাছগুলির ডালপালা ভেঙ্গে পড়ার সশব্দ আওয়াজ শুনেছে অনেকে। তারপরেই তো বিজলী চলে গেল। ধক ধক শব্দে বন্ধ হয়েছে এসি। ইনভারটারের জোরে কিছু সিলিং ফ্যান  ঘুরে যাচ্ছে আপন মনে। বাইরে আরো কয়েক মিনিট মাতামাতি করার পর হাওয়ার শান্ত হয়েছে।  মৃদু  মৃদু মেঘের আওয়াজ ভেসে আসছে দূর থেকে। বাসিন্দারা জানে ধুলোর খেলা শেষ। অল্পক্ষনের জন্য হলেও বৃষ্টি নামবে এবার, আর তারাও নিরবিধায় জানালাগুলি খুলে দিয়ে পাবে ঠাণ্ডা হাওয়া।  


    ভারি সুন্দর বৃষ্টি ভেজা সকাল। গাছের পাতা, ডালপালা,  অজস্র হলুদ,  অমলতাস ফুল ছড়িয়ে আছে রাস্তায়, গাড়ীর ছাদে। স্মৃতি সদনের সামনে জল জমেছে। গাড়ির ছাদে কাদা।   জল কাদা ভেঙ্গে কাগজওয়ালারা বাড়ীগুলির কাছাকাছি হতে চায় নি; ছুঁড়েছে ও পার থেকে। কিন্তু বারান্দার রেইলিং অতিক্রম করতে না পেরে,    টাটকা খবর এখন পড়ে আছে কাদায়।  তিনতলার ট্যান্ডন নীচে গিয়ে তাঁর কাগজটা তুলে  নিলেন।  দোতলার রাহেজা বারান্দার রেইলিংএর উপর ঝুঁকে হাঁক মারলেন তাঁর কাগজটাও নিয়ে আসার জন্য।  ওয়াচম্যান টা গেটের দুই পিলারের উপর বসা বাস্তুচ্যুত বাঁদর পরিবার টিকে তাড়াবার চেষ্টা করল কিছুক্ষন। পরিবার  কর্তা ছোট্ট করে দাঁত খিঁচিয়ে উঠতেই ওয়াচম্যান পিছু হটে এসেছে।  গোড়ালি উঁচু করে জল কাদা  পেরিয়ে কাজের মেয়েরা আসতে আরম্ভ করেছে। ওরা হাসছে। মোটামুটি একটা খুশীর হাওয়া বইছে কলোনিটিতে।


    নটার মধ্যেই বাড়ীগুলির সামনের পারকিং স্পেসগুলি খালি, শুধু স্মৃতি সদনের পিছনে সার্ভিস কোয়াটারের  ভাড়াটে ছেলেটির মোটরসাইকেল টি ছাড়া। গাড়ী ঘোড়া নিয়ে সবাই যে যার স্কুল কলেজ অফিসে কাজে বেরিয়ে  গেছে।  পল্লবী মাথুরেরও বেরোবার সময় হয়ে গেল প্রায় বা তার বয় ফ্রেন্ডটির আসার সময়। ভাবতে না ভাবতেই বয় ফ্রেন্ডটির হালকা নীল রঙের হণ্ডা সিটি নিঃশব্দে এসে দাঁড়ালো স্মৃতি সদনের সামনে।


    ভদ্র সভ্য ছেলেটি। হর্ন দেয় না।  বাইরে বেরিয়ে এসে গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। পল্লবী মাথুর নিচে নেমে আসে। ছোট্ট করে দুজনে হাই হ্যালো করে। তারপর নিঃশব্দে নীল গাড়ীটি বেরিয়ে যায় তাদের দুজনকে নিয়ে। ভালো জুটি। ছেলেটি নাকি মস্ত বড় অফিস চালায়।


    পল্লবী মাথুর আজ সিল্কের ঢোলা সালোয়ার আর হালকা বাদামী রঙের সিল্কের কুর্তা পরেছে।  সোনালী জরি দেওয়া কাজ পায়ের চটির উপর। মুখে হালকা প্রসাধন। ছিপছিপে মেয়েটিকে সুন্দর দেখায় যে কোন সাজে। আজও তাই। লিফট থেকে নেমে খালি পারকিং স্পেসটা অতিক্রম করে রাস্তার কিনারে এসে থমকে দাঁড়ালো। ভুরু দুটি কুঞ্চিত। রাস্তার ওপারে গেটের পাশে গাড়ীর গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো বয় ফ্রেন্ডের দিকে তাকাল। রাস্তায় জল কাদা কি করে পার হয়ে আসবে সে? তারপর ঈষৎ ভাবনা চিন্তার পর চটি জোড়া খুলে হাতে তুলে  নিল। তবুও কাদা জলে পা নামাতে দ্বিধা। কি করে সে? ঠোঁট ফুলিয়ে তাকাল বয় ফ্রেন্ডের দিকে। মুখে চাপা হাসি নিয়ে ফ্রেন্ড সামান্য কাঁধ ঝাঁকাল মাত্র – অর্থাৎ আমি কি করতে পারি? আর তারপরেই সে তার সেল ফোন বার করে দুএকটা ফটো নেয় পল্লবী মাথুরের। 


    যারা রোজ নিজের নিজের ফ্ল্যাটের জানালায় দাঁড়িয়ে সকাল পৌনে দশটার এই ক্ষণটির জন্য অপেক্ষা করে, তাদের মনে হল খুনসুটির পর্যায় থেকে ব্যাপারটা ক্রমশ একটা গম্ভীরতার দিকে চলে যাচ্ছে। সত্যিই তো, করবে টা কি মেয়েটা? জল কাদা ডিঙ্গবে কি করে?  


    বৈকুণ্ঠ এপার্টমেন্টের তিনতলার কাজের মেয়ে রেশমির মনে হল, মুন্ডা কুছ যাদাই কর রহা হে। 


    বাঁশের ডগায় বাঁধা ঝাঁটা নিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করতে করতে নীল উর্দির কর্মচারীরাও নজর করল ব্যাপারটা। 


    ইতিমধ্যে মাথায় হেলমেট পরে ব্যাকপ্যাক টা কাঁধে ঝুলিয়ে মোটর বাইকটা স্টার্ট করতে করতে সার্ভিস কোয়াটারের ছেলেটির চোখে পরল ব্যাপারটা।  সে করলো কি, তার বাইকটাকে আবার স্ট্যান্ডে তুলে, দ্রুত হেঁটে পল্লবী মাথুরের কাছে এগিয়ে এল। তারপর পল্লবী মাথুরকে পাজকোলা করে তুলে রাস্তার জলকাদা পেরিয়ে তার বয় ফ্রেন্ডের কাছে নামিয়ে দিয়ে বাইকটার কাছে ফিরে গেল। তারপর ঢিগ ঢিগ ঢিগ ঢিগ শব্দ করতে করতে বাইকটা বেরিয়ে গেল। 


    দোতলার টেন্ডন সাহেবদের কাজের মেয়ে সুরাইয়া বলে উঠল, চলো মহল্লা কি কুড়ি মহল্লাপেই রহেগি।  


    কউন হে মুন্ডা?


    মাদ্রাসন কে মকান কে পিছে রহতা হে। যভভি দেখো কম্পিউটার লেকে পড়া রহতা হে। আলু পরাটা বহুত পসন্দ হে। 


    নীল গাড়ী চলে গেছে। নীল উর্দির সুইপাররা গাছের ভাঙ্গা ডালপালা রাস্তা থেকে সরিয়ে দিয়েছে। গুলমোহর গাছের পাতাগুলো ঝিরঝির শব্দে নিজেদের মধ্যে বার্তালাপ আরম্ভ করেছে।


    মুখারজি রাহেজার ফ্ল্যাটে নেমে এসে বেল বাজাল। 


    আরে আও আও পার্টনার। বড়া মজা আয়া। চায়ে পিওগে না?


    বুঝলেন রাহেজা সাহেব, এই আঁধির পেছনে কোন না কোন মতলব রয়েছে। শুধু আঁধিই নয়, এই আঁধির আগে পরেও কোন ব্যাপার আছে।


    হুয়া ক্যা পার্টনার?   


    কাল রাতে আমার এসি টা এত গরম টানতে পারছিলনা। গুমোটে থাকতে না পেরে বেরিয়ে পরেছিলাম।  হাঁটতে  হাঁটতে কলোনির বাইরে সনতপুর বস্তির এলাকা অব্দি চলে এসেছিলাম। ভাবছিলাম তারপর এবার কোনদিকে যাওয়া যায়। হটাত লক্ষ্য করলাম ইলেকট্রিক সাব ষ্টেশনের পাশের গলিটা থেকে ছায়া মূর্তির মত কেউ বেরিয়ে এল। আমাকে দেখতে পেয়ে ছুটতে ছুটতে আমার কাছে এসে বলল, আঙ্কেল, থোরাসা মদদ চাহিয়ে।


    এই রাত দুফুরে মদদ চায় শুনে মাথার মধ্যে কর্তব্যপরায়ণ বোধটা জেগে উঠলো আর কি! ভাবলাম কাউকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে বোধহয়।


    কেঁউ নেহি, বোল ক্যা করনা হে?


    আইয়ে মেরে সাথ, বলে আমার হাতটা ধরে প্রায় টানতে টানতে নিয়ে চলল।  


    মাদার ডেইরির পাশে ছোট্ট যে পার্কটা রয়েছে, দেখি এক লোহার বেঞ্চির উপর একটা লোকের পেটের উপর  মোটা মত লোক বসে আছে। শুয়ে থাকা লোকটা হাত পা ছুঁড়ছে।  ছটফট করছে আর কি। ওর মুখে, কপালে রক্ত। 


    আমায় বলল, আঙ্কেল, আপ উসকা দোন হাত পাকারকে রাখিয়ে না! প্লিস।


    আমি কথামত লোকটির হাত দুটো ওর মাথার পেছনে টেনে  ধরে রাখলাম।  তারপর ওরা দুজনে এক একটা ইট নিয়ে ক্রমাগত আঘাত করতে লাগলো লোকটার উপর। মুখে মাথায় যে যেখানে পারছে ইট দিয়ে মারছে।  কিছুক্ষন পরে ‘শালা মরতাই নেহি’ বলে আমার হাতেও একটা ইট ধরিয়ে দিল। আমিও ওর হাত দুটো আরো টেনে এনে, তার উপর বসে, ইট দিয়ে মারতে লাগলাম লোকটার মাথায় বুকে। লোকটা গোঙাল কিছুক্ষন।  তারপর আমারই মনে হল যেন একটা জড় পদার্থের উপর আমরা ইটের বাড়ি মেরে চলেছি।


    মর গিয়া লগতা হে, শালা।


    ফির? রাহেজা প্রশ্ন করলো। 


    তারপর ওরা আমাকে ‘থ্যাঙ্ক ইউ আঙ্কেল’ বলে বলল, ঘর যাকে হাত দোনো ধো লিজিয়ে গা।


    চলো, শরাফত আভি ভি জিন্দা হে।


    হ্যাঁ, আমি বোধহয় তবুও দাঁড়িয়ে রয়েছিলাম। 


    ওরা বলল, ‘জলদি ঘর লউট যাইয়ে আঙ্কেল, আঁধি আ রহা হে’। 


    আমি পা চালিয়ে বাড়ী ফিরে এলাম, আর তারপরেই তো আঁধিটা এল।


    চলো কৈ নেহি। গুগল কর লেনা। কুছ না কুছ মিল জায়েগা। 


    -ইউ গাইস আর সো প্রেডিক্টেবেল! 


    -হোয়াট ডু ইউ মিন?


    -তুমি কি খুশী হতে আমি যদি ওকে একটা চড় মারতাম?


    -আমি তো বলিনি এমন কথা?


    -না বলনি। আমি জাস্ট জিজ্ঞেস করলাম। 


    -তাহলে আমি জিজ্ঞেস করি, তোমার কি তেমন কিছু মনে হয়েছিল?


    -মানে ?  


    -ওকে চড় মারার কথা ?  


    -শোনো, মুহূর্তের মধ্যেই ঘটনাটা ঘটলো।


    -একজন এসে তোমাকে কোলে তুলে নিল, তোমার কোন প্রতিক্রয়া হবে না?


    -ও মাই গড!


    -ওকে, ফাইন। তুমিই বল। 


    -আবার বলছি। সামনে জল ছিল। জল, কাদা। আমি বাড়ী থেকে বেরিয়েছি জাস্ট, তুমি দাঁড়িয়ে ছিলে দেখেছি। কিন্তু    সামনে কাদা দেখে মনটা স্বভাবতই বিগ্রে গেছিল। কি করি আমি ভাবছি। চটি জোড়া খুলে নিলাম। কিন্তু কাদায় নামবো এই সক্কাল সক্কাল?  এরকম কত কি মাথার মধ্যে ঘুরছিল। দেখলাম তুমি আবার আমার ফটোও তুলছো। হাসছো। হাসিও পাচ্ছিল আমার নিজের এই দুর্দশার মধ্যে। সাহায্য চাইছিলাম - মনের অজান্তেই। না না, এরকম না যে তুমি দৌড়ে আসবে বা ওরকম কিছু। ঐ মুহুর্তে আমার পরিস্থিতিটা স্বীকার করে নিয়েছিলাম। হইতো বা ভাবছিলাম, বা বলতে চাইছিলাম হে ম্যান সং এর মত দাঁড়িয়ে না থেকে কাম অ্যান্ড পিক মি আপ। জানিনা ঐ মুহূর্তে মাথায় কি কাজ করছিল। হটাত দেখি পাশে এসে দাঁড়ালো এক মানুষ। ওঃ, চিনি তো ওকে। আমাদের বিল্ডিঙে ই তো থাকে। সাহায্য করতেই এসেছে নিঃশ্চয় – মনের মধ্যে এরকম কিছু একটা এল। ওমা, তুলে নিল পাজকোলা করে। আমার এক হাতে চটি জোড়া, অন্য হাতে ওর কাঁধ ধরে আছি। জামা থেকে পুরনো ঘামের গন্ধ। দেখি ও আমায় জল কাদা পেরিয়েও বয়ে নিয়ে চলেছে -  এক্কেবারে তোমার সামনে এসে নামিয়ে দিয়েই এবাউট টার্ন। দেটস ইট। ধন্যবাদ ও বলতে পারিনি। তুমিও বলনি ওকে।


    -আমি বলিনি মানে? আমি কেন বলবো?  ওককে, বলিনি কারন ও তোমায় নামিয়ে দিয়েই চলে গেল। বাট, হোয়াট   রাবিশ, আমি কেন বলতে যাবো? তোমাদের বিল্ডিং এর মানুষ, তোমাকে সাহায্য করেছে।


    -তা বলে ওর দিকে তাকিয়ে একবার হাসবেও না।


    -ওই মুহূর্তে হটাত ...


    -হটাত কি?


    -জানিনা।  পল্লবী আই এম নট ইন এ মুড।   


    -আসল কথা ওই মুহূর্তে তুমিও বুঝে উঠতে পারো নি তুমি ওকে ধন্যবাদ দেবে, হাসবে, না ওর দিকে চোখ রাঙিয়ে  চাইবে।


    -কি আজেবাজে বলছো, চোখ রাঙাবো কেন? 


    -সেটাই বলছিলাম। হটাত ব্যাপারটা এরকম ভাবে ঘটে যাওয়ায় আমরা সবাই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছিলাম। তারপর সারা  রাস্তা তোর প্রায় নিরবে এলাম। না, তুমি হেসেছিলে একটু। জোক করে কিছু বলছিলে, কেন ভিডিও করলেনা এরকম কিছু নিয়ে আপসোস ও করছিলে।


    -তুমিই নীরব ছিলে সারা রাস্তা।


    -হ্যাঁ, আমি নীরব ছিলাম কারণ আমি ভাবছিলাম তুমি কি ভাবছ। না না, বলছিনা যে তুমি আমার উপর রাগ করেছিলে। ভাবছিলাম, তুমি হয়তো লজ্জা পেয়েছো।


    -লজ্জা! হোয়াট রাবিশ!


    -না না, ঠিক তা নয়। হয়তো একটু বিব্রত বোধ করছো। হয়তো ভাবছিলে, তোমার হয়তো উচিত ছিল আমার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করা, বা হোয়াটএভার।   


    - না। বরং আমার মজা লাগছিল তোমায় ওই অবস্থায় দেখতে। আমি জাস্ট তোমায় দেখছিলাম। অ্যান্ড দেয়ার ইস নাথিং রং ইন ইট। 


    -একদম তাই। আমি জানি তুমি ওরকমই। খেপাও। খুনসুটি কর। তুমিও জানো যে তোমার এই স্বভাব আমার ভালো লাগে।


    -তাহলে সমস্যা টা কোথায়? 


    -সেটাই তো জানতে চাইছি, সমস্যা টা কোথায়? তবুও সারা রাস্তা মুখ গোমড়া করে ছিলে তুমি।     


    -তুমি কেন চুপ ছিলে ? 


    হেসে উঠল পল্লবী।  


    -হাসছো কেন ?  


    -হ্যাঁ ভাবছিলাম ঘটনাটার কথা। ছেলেটার সঙ্গে দেখা তো হবেই আবার। বলতেও হবে কিছু। পাড়ার কয়েকজন নিশ্চয়  দেখেছে। এতক্ষণে নিশ্চয় পুরো পাড়া জেনে গেছে। এটাও ভাবছিলাম যে বকে দেবো ওকে। আবার সেটাও হাস্যকর  হয়ে যাবে। কাজের মেয়েটা আসবে, মুখে ওড়না চাপা দিয়ে হাসবে। এসব ভাবছিলাম। অবশ্যই আমি টেনশনে ছিলাম।


    ওরা দুজন নীরবে বসে রইল।


    -আমি জানি যা হলো, হ্যাঁ বেশ রোম্যান্টিক রোম্যান্টিক। ইয়েস, এটা নিশ্চয় আমার জীবনের – কি বলে, একটা মুহূর্ত  তো  বটেই। এক আজব ঘটনা, যা মনে পড়লেই হাসি আসবে মনে। মনটা ভালো হয়ে যাবে। যখন সংসার হবে,  ছেলে মেয়েরা হাসি ঠাট্টা করবে। তুমিও করবে। দেটস ইট। হ্যাঁ, তোমাকেও খেপাবে সবাই। কিন্তু এই মুহূর্তে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে, না, তোমার মনের ভাব অভিমানের কথা বলছিনা। দেট হেপেনস ম্যান। কথাটা হচ্ছে আমি পাড়ার লোকগুলোকে ফেস করবো কি করে। 


    ওয়েটার এসে একবার ঘুরে যায়।


    -এই শোন, আজ তোমাকে আমি একলা ছেড়ে দিলাম। আমি এক্ষুনি একটা অটো নিয়ে নিচ্ছি। না না, একদম না। তুমি  তোমার কফিটা শেষ কর। আজ তুমি তোমার মত থাকো, আমি আমার মত। কাল সকালে চলে এসো। বাই।  


            


    অটোয় উঠে পড়ল। সন্ধ্যে নেমে গেছে শহরে। মেঘ করেছে। থাকবে না যদিও, তবুও যতক্ষণ থাকে, মন ভালো থাকে।  বৃষ্টি পড়ুক বা না পড়ুক।   


    বারিশ আয়েগি আজ মেমসাব।


    নেহি ভি আ সেকতি হে।


    হাঁ, ও তো হেহিই।


    কিছুক্ষনের মধ্যে আনন্দকুঞ্জ এপার্টমেন্টের সামনে পৌঁছে গেল পল্লবী।


    মুখারজি সাহেব তাঁর সান্ধ্য ওয়াক সেরে ঘরে ফিরছিলেন। 


    -নমস্তে আঙ্কেল।


    -কে? খেয়াল করলেন অটোওয়ালা তাঁকেই সম্বোধন করে বলল।  


    -হাঁ নমস্তে। দায়সারা ভাবেই কথাটা বললেন।


    -কাল আঁধি আনেকা পহলেই পহুছ গেইয়ে থে না?


    -মতলব, বলেই খেয়াল করলেন, আরে এতো কালকের সেই লোকটা।


    অটো ওয়ালা স্যালুএট এর মত কপালে হাত টা ঠেকিয়ে তার অটো নিয়ে বেরিয়ে গেল।


    ------------------------------ 


    -----------------------------


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সমর | 2402:3a80:15f0:50e2:5df6:1671:d85f:9e84 | ০২ ডিসেম্বর ২০২০ ১৭:৪৬100860
  • লেখা ভাবলেশহীন নয়, গতি আর ছন্দ দুটোই গ্রহণযোগ্য। এক ধরনের নতুনত্ব আছে যা অদ্ভুত ভাবে মিশ্রিত হয়েছে সময়ের আর্তনাদে। 


  • মোহিত রায় | 2409:4060:2e16:1e55::ba49:1505 | ০২ ডিসেম্বর ২০২০ ১৮:০২100861
  • জহর কানুনগোর গল্পের আমি উৎসুক পাঠক। ওঁর গল্পে একটা ধোঁয়াশা থাকে যেটা বাস্তবকে নিয়ে লুকোচুরি খেলে। এই গল্পে একটি আকর্ষণীয়া নারীর ছোট্ট সমস্যার সমাধাানে সেই জ্ঞহরের ছোঁঁয়া পেলাম। তবে রাহেজা মুখাাার্জি কথোপকথনের আঁধি কিিছুটা সমস্যায় ফেলে দিল। এটা  লেখক আরেকবার ভাবতে পারেন।  সব মিিলিয়ে বেশ।  অন‍্যরা পড়ে ফেলুন।

  • Averee Chaurey | 122.176.243.167 | ০২ ডিসেম্বর ২০২০ ১৯:০১100862
  • Loved reading the story. How interestingly the writer unfolded the story. Had so many layers. 


    I am a great fan of Jahar s work. . 

  • প্রণব চক্রবর্তী | 59.180.163.131 | ০২ ডিসেম্বর ২০২০ ২১:১৩100868
  • গল্পটাতে পল্লবীর অংশটা খুব ভালো লাগল। কিন্তু মুখার্জি ও রাহেজার অংশটা অবাস্তব মনে হলো  এবং গল্পতে কেন আছে বুঝতে পারলাম না। তবে গল্পটা এক নিশ্বাসে পড়ার যোগ্য।

  • Sudhish Majumdar | ০২ ডিসেম্বর ২০২০ ২৩:১৭100872
  • গল্পের চাল চলন আধিঁর মত। গল্পের কোন কেন্দ্র বিন্দু নেই। ঘটনা ঘটেছে যোগসূত্র ছাড়াই, এককভাবে। দৈনন্দিন জীবনের সাথেই চলছিল  অস্বাভাবিক কিছু সর যন্ত্র। আঁধির আড়ালে। একধরণের অনিয়মিত অনিশ্চয়তা গল্পের  আবরণকে ঘিরে রেখেছে। জীবনের ছন্দ পতনের কাহিনী, সৃতি সুখোকর মুহুর্ত সত্ত্বেও। 

  • সিদ্ধার্থ দাশগুপ্ত | 27.56.187.129 | ০৩ ডিসেম্বর ২০২০ ১৩:৫৪100884
  • গল্প টার গতি সুন্দর। এক  নিশ্বাস পড়ে ফেলার মত। তবে রাহেজা মুখার্জি র এইসব টা একটু বেশিই সূররিয়াল

  • Mrinal Ray Chaudhuri | 122.176.237.178 | ০৪ ডিসেম্বর ২০২০ ০৯:০৭100915
  • Jahor Kanungo’s stories are never uninteresting.  He generally manages to catch the attention of his readers to his tales which are a mixture of the real and the surreal. The present story is no different. Two different incidents – one just before the storm and one after it – hold our attention. The one that takes place before the storm involving a certain Mukherjee is bizarre; Mukherjee first becomes an accomplice and then an active participant in a murder. But it does not seem to have affected him at all as he has seemingly stuck to his daily routine. The other incident involves Pallavi Mathur, another resident of the same housing complex, which seems to have raised a mini storm in her relationship with her boyfriend.  An unusual and eminently readable story embellished by his easy style of narration.

  • সোনালী/সহনা। | 115.96.109.29 | ০৪ ডিসেম্বর ২০২০ ১৭:১১100928
  • বেশ ভালো লাগলো জহর দা।

  • সুব্রত ঘোষ | 2409:4050:e0c:f9fe::b28b:6600 | ০৮ ডিসেম্বর ২০২০ ২০:০৫101014
  • জহর , গল্পটা বেশ লাগলো  । পড়তে শুরু করে শেষ করতে হয় এই ভাবটা বজায় থেকেছে । অর্থাৎ কিভাবে শেষ হয়েছে দেখি । এখানেই লেখকের সফলতা । কিছু প্রশ্ন থাকলেও ভাল   লেখা । পাঠিয়েছিস বলে সাধুবাদ দিই ।

  • Pradip Banerjee | 27.58.128.196 | ০৮ ডিসেম্বর ২০২০ ২২:০৪101017
  • ভালো লাগলো, যখন তুই লিখিস আমার ভালো লাগে. 


    কীপ অন রাইটিং। উইথ a গ্রেট ডিফিকাল্টি কুল্ড রাইট খালি এটুকু , থাঙ্কস। 

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন