পোস্ট ফিফটি বয়সের ওই এক দোষ। ঘুমের ঘাটতি। রাত্তিরে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লে ঠিক ভোরে ঘুম ভেঙে যাবে। যেদিন এমনটা হয় সেদিন ভোরে উঠে আমি চা বানিয়ে লিখতে বসে পড়ি। যাহোক কিছু লেখা। যা মনের পর্দার উপর ভাসমান। এই আজ যেমন লিখছি সেইরকম।
আমার মেয়ের বাড়িতে যেখানে থাকি সেখানে মসজিদ আছে বোধহয় ধারে পাশে কোথাও। এখন কানে দূর মসজিদ থেকে আজানের শব্দ আসছে। আজান শুনলে আমার ছোটবেলা জড়িয়ে ধরে। যে পাড়ায় শৈশব, কৈশোর কেটেছে সেখানে আজানের সময় মেপেই আমার দিন চলত।
ভোরের আজানে ঘুম থেকে উঠে পড়তে বসা। দুপুরের আজানে বাড়িতে থাকলে স্নান খাওয়া শেষ করার প্রস্তুতি। সন্ধ্যার আজানের আগে খেলা সেরে বাড়ি না ফিরলে মায়ের রক্তচক্ষু।
ভোর, কি সুন্দর ভোর। আমার ছেলের বাড়িতে থাকলে ভোরবেলা সিদ্ধিবিনায়ক মন্দিরের আরতির শব্দ আবছা কানে আসে।
ও আগে যেখানে থাকতো মুম্বাইয়ের সায়ন এরিয়ায় সেখানে গুরুদুয়ারার গুরবানীর আওয়াজ পেতাম।
আমি ঘুম থেকে উঠে হেঁটে চলে যেতাম।
ওদের সাথে ভজন গাইতাম। না গাইতাম বল্লে ভুল হবে, শব্দগুলি তো জানিনা, শুধুমাত্র সুরগুলির অপূর্ব বোধের দোলায় মথিত হতাম। পরে আমার শিখ পুত্রবধূর কাছ থেকে কিছু কিছু গুরবানী শুনে রপ্ত করেছি। একটা অপূর্ব দোলা আছে দোহা গুলোর মধ্যে। সেটাও বেশ লাগে। ভোরের শব্দের সাথে মানুষের ভেতরের শব্দের অনুরনন মিশে গিয়ে গমগম করে ওঠে।
আমার কলকাতার বাড়িতে ভোরে লেকে হাঁটতে গিয়ে আমি প্রায়ই ফেরার পথে ঢাকুরিয়ার প্যাগোডায় যেতাম। চুপচাপ বসে কিছুক্ষণ মেডিটেশন করে ফিরতাম যোধপুর পার্কে সামান্য দৈনন্দিন বাজার সেরে।
আমি খ্রীশ্চান মিশনারী স্কুলে পড়েছি ( বাঁকুড়া মিশন গার্লস হাই স্কুল) । সেখানে প্রতিদিন যীশুর প্রার্থনা করে দিনের শুরু হতো।
" হে আমাদের স্বর্গস্ত পিতঃ, আর আমাদের পরীক্ষায় আনিও না, কিন্তু মন্দ হইতে রক্ষা করো, তোমার আজ্ঞা স্বর্গে যেমন প্রীত, তেমনি পালিত হোক। এই রাজ্য, বাক্য তোমার মহিমায় সদা স্নিগ্ধ থাকুক... আমেন "।
না,,আমার বাড়িতে কোনো দেবদেবীর মূর্তি বা অর্চনা করার স্থান রাখিনি আর এখন আলাদা করে।
এই ভোর, এই আজান, এই দূরাগত ঘন্টাধ্বনি, এই গুরবানীর দোলা, এই প্যাগোডার ড্রামের দ্রিমিদ্রিমি রব, সেই যীশুর মুখ সব আমাকে একই ভাবে মনের ভেতর অদ্ভুত অপার্থিব সুরে গেঁথে তোলে, তাই আমি বুঝতে পারি না কোনটাকে প্রাধান্য দিয়ে ঘরে রাখবো।।
আমার মনে হয়েছে কাউকেই না রেখে নিজেকে যেন আরও বেশি করে খোঁজা যায়।।
ওই দেখ ভোর হচ্ছে।
দেখো অন্ধকার থেকে আলো ফুটে ওঠা কী অপরূপ বিবর্তন।
মানুষের কবে ভোর হবে গো। মানুষ কবে সুরে গেঁথে সত্য ঈশ্বরের অঞ্জলি দেবে গো!!
এমন ছবির মতো ফুটফুটে নীল মন সব্বার অন্তরে দাও হে পরমারাধ্য পরমেশ