এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  সিনেমা

  • শ্যুটিং ডাইরী

    অভ্রদীপ ঘটক
    সিনেমা | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ১৩৮৫ বার পঠিত | রেটিং ২ (১ জন)
  • খুব বৃষ্টির মধ্যে কখনও গভীর জংগলে গিয়ে দাড়িয়েছেন?চারদিকে ঝাপসা হয়ে যাওয়া সবুজ গলে গলে নেমে আসে খয়েরী গাছের গা বেয়ে বেয়ে। হাওয়ার আওয়াজ প্রথমে শোনাই যায় না!কিছু শুকনো পাতায় প্রথম বৃষ্টির আওয়াজ ,তারপর ঝুপ ঝুপ করে একঘেয়ে পড়তে থেকে অনবরত।বড় বড় ঘাসগুলোর ফাঁক দিয়ে জলস্রোত একেবেকে যেতে যেতে কোথায় যেন হারিয়ে যায়।একটু দূর থেকেই বোধহয় ছোট জলস্রোতের শব্দ পাওয়া যায়,বোধহয় কোন ফ্লগু নদীরই হবে!এদিক ওদিক তাকিয়েও কোথাও চোখে পড়ে না কোন নদীর স্রোত।খালি পেছনে বাঁদিকে গাঢ় সবুজ,একটু দূর গেলেই কালো হয়ে আছে।আকাশ ঘোর অন্ধকার।বৃষ্টির বেগ বাড়লো বোধহয়।সামনে ডানদিকে ঘাসবন ছাপিয়ে নেমে গেছে ঢালু পাড়,বেশ খানিকটা, তারপর বিদ্যুতের ফেনসিং।বেশ কিছুটা দূরে চোখে পড়ে সল্ট পিট।এই ঘোর বৃষ্টিতেও কয়েকটা বাইসন সাদা মোজা পায়ে নুন চাটছে একা একা।চারদিক ঘন অরণ্য অন্ধকার।
    ডানদিকে বিশাল বাংলো দাঁড়িয়ে আছে। বা দিকে নজরমিনার।বৃষ্টি টিপ টিপ।

    আমরা ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের জিপ থেকে লাফ দিয়ে নেমে পড়ি।ভিজতেই থাকি অনবরত।ট্রাইপডে রাখা ক্যামেরাও ভিজতে থাকে। যা থাকে কপালে !!অভিষেক দৌড়ে চলে যায় বৃষ্টির মধ্যেই জংগলের দিকে অনেক দূর।ওর হাফ প্যান্ট পড়া পা দুটো কাদায় মাখামাখি হয়ে যায়।মৈনাক গুটিসুটি মেরে দাঁড়িয়ে থেকে একটা গাছের নীচে।আমিও জিপ চলা রাস্তার পাশে ঘাসের ওপর দিয়ে হাটতে থাকি একা একা।একটু পরেই মাথা নীচু করে চোখে পড়ে, আমি আর একা নই, আমার সাথে গোটা ৩নেক জোঁকও হাটছে আমার পায়ে চেপে!!
    একদৌড়ে চলে যাই নজরমিনারের দিকে।আমার পেছন পেছন মৈনাক,আর অভিষেক।নজরমিনারটি প্রায় তিনতলা বাড়ির সমান উচু।

    ওপরে উঠে গেলে,বহুদুর অরণ্য চোখে পড়ে।বিরাট গাছগুলোর পেছনে হালকা নীল ভুটান পাহাড়। অঝোর বৃষ্টিতে প্রায় ঝাপসা
    অতদুর চোখ যায় না।নাকি চালসে পরছে চোখে,কে জানে?
    ক্যামেরা নিয়ে বোকার মত তুলতে থাকি এই বৃষ্টি ভেজা জংগল,যদিও জানি,এই অনাঘ্রাত অরন্য আর ঝিম ধরা বৃষ্টি র ঘোর, বন্দী করার হ্মমতা এই নির্বোধ ক্যামেরার নেই।

    কাঠের ঘোরান সিঁড়ি বেয়ে মচমচ শব্দ করে উঠে আসি বাংলোর দোতলায়, ভেজা রেলিং এ হাত রাখি। ততহ্মনে রেঞ্জার বাবুর সৌজন্যে গরম চা চলে এসেছে।সাথে মেরি বিস্কুট।
    ওদিকে, বাইসনের পাল ও দল ভারী হয়েছে।চার জন থেকে এখন দশ বারো জনহবে। বৃষ্টি কিন্তু হয়েই চলেছে ক্রমাগত।
    আমার পায়ে ইতিমধ্যে খান তিনেক ফুটো হয়ে,রক্ত ঝরছে সমানে।
    বাংলোর কেয়ারটেকার, সুতীর কাপড় পুড়িয়ে নিয়ে এলেন।তার ছাই, নিজের হাত দিয়েই লাগিয়ে দিলেন ওই জোক আক্রমনের হ্মত স্থানে।এটা জংগলমহলের টোটকা।
    অভিষেক খাস দক্ষিণ কোলকাতার,গড়িয়ার ছেলে।,জোক তো দূরে থাক,কেচো অবধি দ্যাখেনি! ওই সব দেখে,প্রথমে বেশ খানিকটা আনন্দ পেলো,তারপর ওই রক্ত ফক্ত দেখে,একটু ঘাবড়ে গেল।শেষে বিষম ভয় পেয়ে খানকতক মেরি বিস্কুট খেয়ে,দোতলার বারান্দার এক কোনার চেয়ারে গিয়ে বসে রইল।

    মৈনাক পেশাগত ভাবে সাউন্ড ডিজাইনার হলেও আমার কাজের হ্মেত্রে মডেল হিসেবে কাজ করছে।সারাহ্মন ধরে ছোট্ট একটা ফাউন্ডেশন কিট আর আয়না নিয়ে ৫ মিনিট পর পর মুখ দেখে বেড়াচ্ছিল।আমার ওই পরিমান রক্তপাত দেখে,ঘামতে ঘামতে,ওর মেক আপ গলে ভুত। ফ্যাকাসে মুখ করে বলল,"ইয়ে দাদা, আমি আর ওই জংগলে যাচ্ছি না।আজকের মত প্লিজ প্যাক আপ কর।"
    আমি ব্যাজার মুখে বসে রইলাম।বৃষ্টি র বেগ আর ও বাড়ল। ঘোর বর্ষা চলছে,তার মধ্যেই ৭-১০ দিন ধরে, এই শ্যুটিং। গভীর থেকে গভীরতম অরণ্যে আমরা ঘুরে বেড়াচ্ছি। পাহাড় থেকে জংগল, বৃষ্টি তে চরে বেড়াচ্ছি, অনেকটা রাস্তা হারানো ছাড়া গরুর মত।
    চাপড়ামারি অভয়ারণ্য মানুষের পায়ে হেটে চলার জন্য একদমই নয়।
    পেটের দায়ে অনেককে অনেক কাজে নামতে হয়,আমরা তো শুধু হাতি,চিতাবাঘ,জোক,সাপ, ভালুক,নেকেড়ে,হায়না( দু চারটে ভ্যাম্পায়ার ও থাকতে পারে,আমরা আর কতটুকুই বা জানি!!) ভরা বৃষ্টি ভেজা অরন্যে এক রাম ভীতু মডেল,আর ও ভীতু কলকাত্তাই সহকারী পরিচালক, (আর বাকী টিম মেম্বার দের কথা আর বললামই না,কারন তারা জিপ থেকেই নামেনি!!!) দের নিয়ে ৩- ৪ মাস ধরে এই তথ্যচিত্র তুলছি।পশ্চিমবাংলার উত্তরাঞ্চলের বেশকিছু অরণ্য চরে বেড়ানোর সুবাদে,বর্ষায় সবুজের রঙ মিলাচ্ছি। ক্যামেরায় উঠছে সামান্যই, মনে থেকে যাচ্ছে অনেকটাই।কিন্তু আজ বোধহয় শ্যুটিং বন্ধ হল।এই বৃষ্টি আজ আর থামবেনা।ধীরে ধীরে নেমে আসছে সন্ধ্যা। আকাশে মেঘ থাকায়,আরো অন্ধকার হয়ে আছে চারপাশ।মাঝে মাঝে নাম না জানা পাখি উড়ে চলে যাচ্ছে বাঁ দিক থেকে ডান দিকের গভীরতম অরণ্যে।ঝিঝির এক ঘেয়ে ডাকে দু চোখের পাতা ভারী হয়ে আসছে।মৈনাক আর অভিষেক কাঠের বারান্দার ইজিচেয়ারে বসে বসে জাস্ট ঘুমিয়ে পড়ল।বাইসন গুনতে গুনতে আমারও চোখ বুজে এল।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Neil Shankar Ray | 2409:4042:2e9c:be2a::90a:1007 | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৯:৩৫732656
  • দারুন লাগলো পড়ে, তৃপ্তি পেলাম লেখনশৈলী র জন্য। মনটাও ভালো হয়ে গেলো।

  • Bappa das | 2401:4900:104e:7697:0:45:96aa:b601 | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৩:০৩732657
  • বেশ ছমছমছমে বেপার। 

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় প্রতিক্রিয়া দিন