এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • আন্ধার বাতাস হেথা

    দময়ন্তী
    আলোচনা | বিবিধ | ১৬ মার্চ ২০০৮ | ৬৪১ বার পঠিত
  • "আন্ধার বাতাস হেথা, কুসুম কুসুম'

    মান ও হুঁশ দুইই যাহার আছে তাহাকেই মানুষ বলে -- এরূপই প্রচলিত ধারণা। কিন্তু যাহার হুঁশ নাই, তাহার কি মান থাকিতে পারে? অথবা যাহার মান নাই তাহার হুঁশ? না: এইবিষয়ে তেমন নির্দিষ্ট কিছুই প্রচলিত নাই। তবে প্রায়শ:ই দেখা যায় হুঁশ না থাকিলে মানও থাকে না। "হুঁশ না থাকিলে' -- বাক্যবন্ধটির বহুবিধ অর্থ হইতে পারে; কিন্তু আমরা ইহার একটি সংকীর্ণ অর্থই এক্ষণে লইব। হুঁশ নাই অর্থাৎ বেহুঁশ, যাহাকে "পাগল' বলিয়াও উল্লেখ করা যাইতে পারে। "বেহুঁশ'গণ সর্ব্বদাই "পাগল' হন না, কিন্তু আগেই বলিয়াছি, অধিক কথনে কাজ নাই, আমরা একটি সঙ্কীর্ণ অর্থই গ্রহণ করিব।

    আমাদের সমাজজীবনে পাগলদের জন্য সাধারণত কোন স্থান থাকে না। আমরা, অর্থাৎ যাহারা অপরের চক্ষে পাগল নহি, তাহারা হয় পাগলদিগকে ভয় পাই এবং এড়াইয়া চলি অথবা তাহাদের ঘৃণা করি। পথ চলিতে এরূপ কাহারও সম্মুখে উপস্থিত হইলে প্রথমে পাশ কাটাইতে চেষ্টা করি। সফল না হইলে উক্ত পাগলকে খেদাইতে সচেষ্ট হইয়া থাকি। উপস্থিত ভদ্রাভদ্রজনও তাহাতে সাহায্য করিয়া থাকেন। এক্ষেত্রে উপস্থিত পাগলটিকে আর অপর একটি মনুষ্য বলিয়া গণ্য করা হয় না। মনুষ্যসমাজের সাধারণ কৃত্য ও অকৃত্যর সীমানাগুলি যাহারা মনে রাখিতে ও মানিয়া চলিতে অক্ষম, আমাদের সমাজও তাহাদিগকে আপন ক্রোড়ে স্থান দিতে অক্ষম। পাগলদের প্রতি অবজ্ঞা ও হিংস্র আচরণ আসলে জন্তুজানোয়ার অথবা নিস্প্রাণ জড়বস্তুর প্রতি আচরণের সমতুল। আপনার দরোজার সম্মুখে পীঠিকা স্থাপিত থাকিলে আপনি যেরূপ পদাঘাতে তাহা সরাইয়া আপন পথ করিয়া লন, সেইরূপেই সম্মুখস্থ পাগলকেও সরাইয়া পথ করিয়া লন। আবার সম্মুখস্থ সারমেয়র প্রতিও এই ব্যবহারই লক্ষিত হয়। সমাজ ইহাতেই বহুযুগ ধরিয়া এমন অভ্যস্ত যে বদলাইবার কথা কেহ ভুলিয়াও ভাবিলে তাহাকেই প্রায় পাগল বলিয়া গণ্য করা হয়।

    অস্যার্থ: পাগল কোন মনুষ্য নহে। ইহা এক সজীব সচল নিশ্চেতন প্রাণীবিশেষ। ইহার আকাশে নীল রঙ নাই, গাত্রে ব্যথাবেদনাবোধ নাই, চিত্তে মান অপমান বোধ নাই, অঙ্গে বস্ত্র থাকিতেও পারে, নাও থাকিতে পারে, পূর্নিমারাত্রিতে পূর্ণচন্দ্র আছে কিনা সে সম্পর্কে কোনো তথ্য নাই --- নাই নাই নাই। এক ধুষর চেতন ও আন্ধার মানস ব্যতীত প্রায় কিছুই নাই।

    উঁচুনীচু মাংস লয়ে কুসুম কুসুম

    শিশুটি খুব শান্ত নহে। শিশুটি তেমন দুরন্তও নহে। শিশুটি স্থির হইয়া দীর্ঘক্ষণ বসিতে পারেনা, অপিচ সর্বদা যে দৌড়াইয়া বেড়ায় তাহাও নহে। সম্ভবত: চিত্তটি তাহার বড়ই চঞ্চল বলিয়া হস্তপদের ভঙ্গীতেও তাহার কিছু প্রকাশ ঘটে। শিশু দুরন্ত হইলে অভিভাবকগণ সদা সন্ত্রস্ত থাকেন; এই বুঝি কিছু ভাঙ্গিল, এই বুঝি পড়িয়া গিয়া আহত হইল, কোথায়ও চলিয়া গেল, দুষ্টলোকে তাহার কোন ক্ষতিসাধন করিল। এক্ষেত্রে তাহার কিছু ব্যতিক্রম দেখা যাইতেছে। অভিভাবকগণ যত না সন্ত্রস্ত তাহা অপেক্ষা বিরক্তই বেশী। তাঁহাদের বক্তব্যে ফুটিয়া উঠিতেছে বিরক্তি ও ক্রোধ -- শিশুটির এইরূপ চঞ্চল হওয়া উচিৎ নহে, স্বাভাবিক নহে। এমনকি তাঁহারা ইহাও বলিতেছেন যে ইহা অন্যায় ও প্রকৃতিবিরূদ্ধ।

    কারণ শিশুটি "বালিকা'।

    শিশুটি "বালিকা' বলিয়াই তাহার অভিভাবকবর্গের বড় চিন্তা। বালিকাদিগকে ধীর নম্র ও শান্ত হইতে হয় -- এমতই প্রচলিত ধারণা। বালিকা ক্রমে কিশোরী, যুবতী হইয়া জননী হইবে। জননীর চঞ্চলা হওয়া শোভা পায় না। তারই প্রস্তুতি লইতে হয় শৈশব হইতে। ইহাই সমাজের নিয়ম। এই নিয়ম বর্তমানে যদিও কিছু শিথিল, কিন্তু তবুও রহিয়া গিয়াছে আনাচে কানাচে। ব্যতিক্রম সর্ব্বদা আদরণীয় হয় না। বালিকা নিজে বুঝে না কোথায় তাহার ভ্রম হইতেছে, কিন্তু অনাদর ও অবজ্ঞা সে অনুভব করিতে পারে। কালের নিয়মে কৈশোর ও ক্রমে যৌবন আসিলে সে বুঝিয়া যায় তাহার শৈশবের অনাদরের কারণ, ভ্রূকুটিকুটীল মুখমন্ডলের অন্তর্নিহিত বাক্যসমূহ। হয়ত প্রকৃতির নিয়মেই অথবা গুরুজনদিগের তাড়নায় সে অপেক্ষাকৃত শান্ত হইয়া আসে। কিন্তু যদি তাহা না হয় --- যদি শিশুসুলভ চাপল্য রহিয়া যায় -- তবে সেই যুবতীর বড় সমস্যা। অধিকাংশ মনুষ্যই তাহাকে ঠিক স্বাভাবিক মনে করেন না। অথচ সে নিজেও জানে নিজেকে লইয়া কি করিবে। পক্ষান্তরে বহুজনের কাছেই সে "পাগলী' বলিয়া গণ্য হয়। ইহা স্নেহসুচকও হইতে পারে, আবার নিন্দাসুচকও হইতে পারে।

    চঞ্চলাদিগের কথা থাকুক। ধীরাগণও যদি আপন হুঁশ হারাইয়া ফেলেন তবে কি হয়? তাঁহারাও "পাগলী' বলিয়া গণ্য হইয়া থাকেন। পাগল হউন বা পাগলী, আমরা তাঁহাদের অবজ্ঞা ও ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখিয়া থাকি। তবে "পাগলী', "পাগল' অপেক্ষা আরো বেশী ঘৃণার বস্তু, কারণ তাহার শারীরগঠনটি "পাগল' হইতে আলাদা, অথচ সে তাহা লুক্কায়িত রাখিতে সচেষ্ট নহে। এমনকি অনেকসময় সচেতনও নহে। পাগলীগণকে কোথায়ও আবদ্ধ করিয়া রাখিতে পারিলে আমাদিগের "সুশীল' চক্ষুগুলি পীড়াদায়ক দৃশ্য হইতে রক্ষা পায়।

    অপরপক্ষে, অসহায়া নারী, যাহাকে গৃহে রাখিতে কেহ ইচ্ছুক নহে, সে যদি "পাগলী' প্রতিপন্ন হয়, তাহাকেও কোথায়ও আবদ্ধ করিয়া রাখিতে পারা যায়। এই স্থান যদি সাজানো সংসারগৃহ হইতে অনেক দূরে হয়, তবে তাহার চাইতে উত্তম আর কিছু হইতেই পারে না, সাজানো সংসারটি একটি বিসদৃশ বস্তু হইতে মুক্তি পায়। কখনও বা অত্যন্ত দরিদ্র কোন পরিবারও নিতান্ত নিরুপায় হইয়াও "পাগলী'বিদায় করিবার পথ খোঁজে।

    মন নাই সেই ভাল কুসুম কুসুম

    দয়ালু ও মহান রাষ্ট্র, সমাজের প্রয়োজন অনুভব করিয়াই স্থানে স্থানে মানসিক চিকিৎসালয় চালাইয়া থাকেন, যাহাকে চলিত ভাষায় "পাগলাগারদ' বলা হইয়া থাকে। "গারদ' শব্দের ব্যবহার হইতে বোঝা যায়, ইহা চিকিৎসালয় অপেক্ষাও কারাগারের বেশী নিকট। এইসকল "পাগলাগারদ'এ চিকিৎসার সামান্য কিছু ব্যবস্থা থাকে, তবে মূখ্যত এইগুলি সংসার পরিত্যক্ত পাগলদিগকে যাবজ্জীবন আবদ্ধ রাখিবার কারাগাররূপেই ব্যবহৃত হয়। যাহাদের হুঁশ নাই তাহাদের জন্য গারদই সঠিক স্থান - ইহাই প্রচলিত ধারণা। আমরা কেহই সাধারণত কখনও খোঁজ লইবার চেষ্টাও করিনা এই পাগলাগারদগুলি সম্পর্কে। কারণ "পাগল' নামক মনুষ্যসদৃশ কিন্তু মনুষ্যেতর জীবগুলি সম্পর্কে আগ্রহ, সময় অথবা মানসিকতা কিছুই আমাদের নাই। আমরা তো জানিই যে উহারা মনুষ্যের ন্যায় দেখিতে লাগিলেও আসলে মনুষ্যেতর।

    এরূপই এক মানসিক চিকিৎসালয় ওরফে পাগলাগারদ হইল "পাভলভ হসপিটাল', কলিকাতা শহরের এন্টালি অঞ্চলে স্থাপিত, শুধুই পাগলীদিগের নিমিত্ত। ৯ই মার্চ, রবিবারের মনোরম প্রভাতে সর্ব্বাধিক প্রচারিত দৈনিক আনন্দবাজারের প্রথম পৃষ্ঠার খবরে আসে এই গারদের নাম। খবরে প্রকাশ জনৈক আবাসিক রোগিণীর কন্যা ৮ই মার্চ প্রভাতে তাঁহাকে দেখিতে গিয়াছিলেন। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের দেখা করিলে, চিকিৎসক তাঁহাকে লইয়া কথা বলিতে বলিতে অন্দরমহলে রোগিণীদিগের "ওয়ার্ড' অভিমুখে যান। সেইস্থলে গিয়া কন্যা দেখেন তাঁহার মাতা স্নান সমাপ্ত করিয়া বাহিরে আসিতেছেন সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায়। তাঁহার কেশরাশি ও অঙ্গ সিক্ত, তাহা মার্জ্জনা করিবার মত বস্ত্রখন্ডও নাই। সেইস্থলে বাসিন্দা কোন রোগিণীরই গাত্রে কোনোরূপ বস্ত্রখন্ড নাই। কন্যা কোনোমতে একটি শাটিকা সহযোগে তাঁহার মাতার লজ্জা নিবারণ করেন। চিকিৎসকটি উত্তেজিত হইয়া উঠিলে তাঁহাকে জানানো হয় বস্ত্রসকল মার্জ্জনা করিবার নিমিত্ত প্রেরণ করা হইয়াছে, শুষ্ক হইয়া আসিলেই ইঁহারা বস্ত্রাবৃতা হইবেন। আরও জানানো হয়, ইহাই এইস্থলের প্রথা। এস্থলে রোগিণীদের নগ্ন করিয়াই রাখা হয়। যে সকল কর্ম্মচারী এ কথা জানান তাঁহাদের মধ্যে অনেক নারীও আছেন। তাঁহাদেরই মধ্যে কোন এক নারীকে উদ্দেশ্য করিয়া চিকিৎসক জানিতে চাহিয়াছিলেন তাঁহাকে এরূপে রাখিলে তাঁহার কিরূপ লাগিবে। ইহাতে সমগ্র কর্ম্মচারীবাহিনী যারপরনাই অপমানিত বোধ করেন ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।

    খুবই স্বাভাবিক। কর্ম্মচারীগণের হুঁশ বর্তমান, কাজেই মানও আছে। আর মান থাকিলেই "অপমান'এর প্রশ্ন দেখা দেয়। পক্ষান্তরে রোগিণীগণের হুঁশ নাই তাই মানও নাই। সুতরাং অপমানের প্রশ্নই নাই। নির্ব্বোধ চিকিৎসক প্রভূত উচ্চশিক্ষা লাভ করিয়াও যে এই প্রাথমিক জ্ঞানটুকু অর্জ্জন করেন নাই -- ইহা সত্যই বিস্ময়ের। আশা করা যাউক, তিনি শীগ্রই এইসকল প্রাথমিক খুঁটিনাটি জ্ঞান অর্জ্জন করিয়া লইবেন। তাঁহার সহযোগী ও পূর্ব্ববর্ত্তী চিকিৎসকগণ, অন্যান্য কর্ম্মচারীগণ কেহই কখনও এই অপরিসীম নগ্নতার প্রদর্শনীতে বিচলিত হন নাই। এখনও, এই কাহিনী প্রকাশ্যে আসিবার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলিয়াছেন তিনি খোঁজ লইবেন, সত্যই ঘটনা এইরূপ কিনা। তিনি স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তি। কোন চিকিৎসালয়ে বহুসংখ্যক শিশু সহসা মরিয়া গেলেও তিনি কিছুমাত্র বিচলিত হন না, জানেন "জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে'। আর ইহা তো নিছকই কিছু মনুষ্যেতর জীবের নগ্নতা। পাভলভের কর্তৃপক্ষস্থানীয় সকলেই অত্যন্ত বিরক্ত হইয়াছেন সংবাদপত্রের এই অযথা নাসিকাপ্রবেশের চেষ্টায়। মহামান্য হাইকোর্ট অবশ্য একটি তদন্তকমিটি গঠন করিয়া সমগ্র বিষয় অনুসন্ধান করিয়া রিপোর্ট দিতে বলিয়াছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলিয়াছেন তিনি নিজে বিষয়টি সম্পর্কে খবর লইবেন। আশা হয় এইসকল সুন্দর ও সুচারুরূপে নির্ম্মিত ধামার নীচে বিষয়টি চমৎকারভাবে চাপা দেওয়া হইবে।

    সংবাদপত্রে প্রকাশ পাইয়াছে জনৈক রোগিণীকে তাঁহার আত্মীয়গণ প্রত্যেক মাসে নিয়মিত তৈল, টুথপেস্ট, সাবান এবং বস্ত্রাদি সরবরাহ করিতেন। তথাপি সেই রোগিণীর অঙ্গে বস্ত্র নাই, গাত্রচর্ম্ম শুষ্ক, ক্লেদ ও চর্ম্মকীটে পরিপুর্ণ, কেশরাশি তৈলাভাবে রুক্ষ ও জটাসমন্বিত। আরো প্রকাশ যে চিকিৎসালয়ের অভ্যন্তরে বিবিধ পেশায় ও প্রয়োজনে বিভিন্ন কর্মী আসিয়া থাকেন। ক্ষৌরকার নিয়মিত আসিয়া রোগিণীদিগের কেশকর্ত্তন করিয়া যান। এই নগ্নতার প্রদর্শনীই তাঁহাদের পারিশ্রমিক, নাকি কিছু মুদ্রাও তাঁহাদের পারিশ্রমিক হিসাবে ব্যয়িত হয়, সে সম্পর্কে সংবাদপত্রে কোন খবর নাই। এইসকল সাফাইকর্ম্মী, ক্ষৌরকার ও মেরামতীকর্ম্মীগণ সকলেই কি জিতেন্দ্রিয়? অঢেল নগ্নতার মাঝেও তাঁহারা নিজেদের কাজটুকু নিস্পৃহভাবে করিয়াই চলিয়া যান? এ সম্পর্কে সংবাদপত্র কিছুই লেখে নাই।

    এক চিকিৎসক মিত্রের কথায় জানিতে পারি সাধারণ চিকিৎসালয়ের ন্যায় এইস্থলে রোগিণীদিগের আত্মীয়গণকে অন্দরে রোগিণীর কাছে যাইতে দেওয়া হয় না। তাঁহাদের সাথে দেখা করিবার জন্য পৃথক কক্ষ আছে। সেইস্থলে রোগিণীকে আনিয়া তাঁহার আত্মীয়বন্ধুর সহিত দেখা করাইয়া দেওয়া হয়। আরও জানিতে পারি অধিকাংশ রোগিণীর গৃহ হইতে কেহই কদাপি আসে না। অতএব কর্ম্মীগণ যে ইঁহাদের পরিত্যক্ত মার্জ্জারের ন্যায় জ্ঞান করিবেন তাহাতে আশ্চর্য্য কিছুই নাই।

    মানসিক রোগী বা রোগিণীদের বস্ত্র ত্যাগ করিবার একটি প্রবণতা থাকে। সেইকারণে বিশ্বের অন্যান্য মানসিক চিকিৎসালয়ে এরূপ রোগীদিগের জন্য বিশেষ ধরণের পোষাক পরিধান করানো হইয়া থাকে। কিন্তু তাহা এখানে আমরা আশাই করিতে পারি না। কে আবার কবে শুনিয়াছে যে সারমেয় বা মার্জ্জারকে পোষাক পরাইতে হইবে, তাহাও আবার বিশেষ প্রকারের!

    আমরা প্রায়শই শুনিয়া থাকি, আজকালকার নারীগণ স্বল্পবাসে অভ্যস্ত এবং উত্তেজক পোষাক পরিধান করিয়া থাকেন বলিয়া নারীনির্যাতন ও ধর্ষণের সংখ্যা বাড়িয়া গিয়াছে। কয় বৎসর আগে কলিকাতার নগরপালও এরূপ একটি উক্তি করিয়াছিলেন। তাহলে পাভলভে এরূপ একটি প্রথা কাহারা চালু করিলেন? কি উদ্দেশ্যে? খবরটি প্রকাশ্যে আসিবার পরও সমাজ ও সংস্কৃতির গুরুঠাকুরগণ কেহই ইহাতে কোন অস্বাভাবিকতা দেখিলেন না? সংবাদটি প্রকাশিত হইবার পর অপর সংবাদপত্রগুলিও এই বিষয়ে কোনই উৎসাহ দেখায় নাই। এমনকি তাহাদের প্রতিনিধিগণ পাভলভ কর্তৃপক্ষকে একটিও প্রশ্ন করিয়াছেন, এমন কোন লক্ষ্মণ দেখা যাইতেছে না। অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বাণী তাঁহারা কেহ কেহ প্রচার করিয়াছেন। কোন নামজাদা মানবাধিকার সংস্থাও এখনও পর্যন্ত কোন উৎসাহ দেখান নাই। আমাদের রাজ্যে একটি "মহিলা কমিশন' আছে। অনেক স্বনামধন্য নারী তাহার সদস্য। ইঁহাদের কেহ অবশ্য এখনও পর্যন্ত রোগিণীদিগের "চরিত্র' লইয়া কোন মন্তব্য করেন নাই। আশা করা যায় শীঘ্রই তাঁহারা এইবিষয়ে কিছু বাণীবিতরণ করিবেন।

    জানি এই সকলই স্বাভাবিক। যা হইতেছে সেরূপই হওয়া উচিৎ। কিন্তু তবু এক অদ্ভুত আতঙ্ক গ্রাস করিতেছে। আজ আমি পাগল নহি, কিন্তু যদি কাল হইয়া পড়ি এবং পাভলভে বা অমনই আর কোথায়ও বাস করিতে হয়। ঠিক কিরূপ লাগে সর্ব্বসমক্ষে নগ্ন থাকিতে? ঐ চিকিৎসক ও কর্ম্মীগণের অনেককেই হয়ত কোথায়ও না কোথায়ও দেখিয়াছি। তাঁহারাও আমাকে দেখিয়াছেন বস্ত্রে সজ্জিত আমাকে। কাল যদি হুঁশ চলিয়া যায় তখন কিরূপে দেখিবেন তাঁহারা আমাকে? আমাদের?
    "আন্ধার বাতাস হেথা, কুসুম কুসুম
    উঁচুনীচু মাংস লয়ে কুসুম কুসুম
    মন নাই সেই ভাল কুসুম কুসুম
    ...............................................
    আন্ধার বাতাস হেথা ..............*

    ---------------------------------------------------------------------
    * নিবন্ধে ব্যবহৃত কবিতাটি রঙ্গন লিখিত "সরীসৃপ' কবিতার অংশবিশেষ।

    মার্চ ১৬, ২০০৮
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১৬ মার্চ ২০০৮ | ৬৪১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন