এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • জলতলে রোহিণী শুয়ে আছে

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
    আলোচনা | বিবিধ | ২৮ অক্টোবর ২০০৭ | ৭৪১ বার পঠিত
  • এটি একটা মেয়ের গল্প। যাকে আমি চিনিনা। বা যাকে আমি চিনি। যাকে চোখে দেখেছি, কিন্তু অন্ধকারে। চিনি, কিন্তু ছায়ামূর্তিকে যেভাবে চেনে মানুষ, সেইভাবে। জলতলে শুয়ে থাকা রোহিণীর মুখ যতটুকু চেনা যায়, ততটুকুই।

    আশির শেষ বা নব্বইয়ের শুরু। খবরের কাগজের সিজন অনুযায়ী, সেটা ছিল মহিলাদের উপর অত্যাচারের ঋতু। শুরু হয়েছিল বানতলা দিয়ে। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার গাড়িকে "ছেলেধরা' বলে তাড়া করেছিল স্থানীয় জনতা। গাড়িটি পালাতে গিয়ে আটকে গেলে টেনে নামিয়ে আনা হয়েছিল আরোহী মহিলাদের এবং পুরুষ ড্রাইভারকে। পিটিয়ে, খুঁচিয়ে জনসমক্ষে হত্যা করা হল তাঁদের। জ্যোতিবাবু বললেন, এমনটা তো হয়েই থাকে। খুব হইচই হল। এতো টিভি চ্যানেল ছিলনা, কাগজে কাগজেই হল। কদিনের মধ্যেই বানতলার পরে, তালিকায় যুক্ত হল আরও কয়েকটি নাম। বছর ঘোরার আগেই রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে দেয়ালে দেয়ালে জ্বলজ্বল করতে লাগল বানতলা - বিরাটি - সিঙ্গুরের নাম।

    জনতার স্মৃতি ভঙ্গুর। আমারও। বিরাটিতে কি হয়েছিল, ফ্র্যাঙ্কলি, মনে নেই। বানতলার টা মনে আছে, কিন্তু স্মৃতির মলাটে ধুলো। জ্যোতিবাবুর উক্তি স্পষ্ট মনে আছে। সিপিআইএম এর তরফে বলা হয়েছিল, জ্যোতিবাবুর উক্তিটা আসলে মিডিয়া প্রচারিত অর্ধসত্য । "রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা কি ভেঙে পড়েছে?' এরকম একটা প্রশ্নের উত্তরে জ্যোতিবাবু নাকি বলেছিলেন -- "এরকম তো হয়েই থাকে, কিন্তু তার মানে কি আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে?'। এইসব স্পষ্ট মনে আছে, কারণ মূল উৎসাহটা ছিল রাজনৈতিক বাদানুবাদে, ঘটনায় নয়। ঘটনা প্রায় সবই ভুলে গেছি। নিহত মহিলাদের নামধাম ভুলে গেছি, যে সংস্থার গাড়ি থেকে তাঁদের নামিয়ে আনা হয়েছিল,সেটা যতদূর মনে পড়ছে, ইউনিসেফের, কিন্তু নিশ্চিত নই। নেটে একটু দেখে নিলেই পুরোটা জানা যেত, কিন্তু দেখবনা। এই লেখা শুধু স্মৃতি থেকে হবে। রিজওয়ানুরের ঘটনা যে স্মৃতিকে উস্কে দিল, উলঙ্গ করে দিল। এ লেখা একটা পরীক্ষা। কতটা মনে থাকে, কতটা সত্যিই মনে রাখি, তার। কেউ দিতে বলেনি, কোনো বাধ্যবাধকতাও নেই, এই পরীক্ষা আমার নিজের কাছে, আমার। কোনো সেফ খেলার চেষ্টা এখানে করা হবেনা।

    বিরাটি বিলকুল ভুলে গেছি, কিন্তু সিঙ্গুর মনে আছে অল্পবিস্তর। কারণ, তখন, সেই নব্বইয়ের শুরুতে, আমার, সিঙ্গুরে বাস। দেয়ালে দেয়ালে যে তিনটি জায়গার কথা তখন লেখা হত, তার শেষটিতে। টাটার কারখানাকান্ডের আগে, সিঙ্গুরের যেটুকু এলিটত্ব, পরিচিতি ছিল, তা ঐ কারণেই। মনে আছে, কোথায় থাকি জানার পর, অনেকদিন পর্যন্ত, লোকে ইয়ার্কি মেরে বলত, সিঙ্গুর?, মানে যেখানে রেপ হয়? শুনে সবাই হ্যাহ্যা করে হাসত। এখন, সেসব গণস্মৃতি থেকে হাওয়া হয়ে গেছে। আমার স্মৃতি থেকেও। সিঙ্গুরের বাস কবে চুকে গেছে, শুধু পার্মানেন্ট অ্যাড্রেস হিসাবে অফিশিয়ালি এখনও ঐটাই লিখি। কলকাতায়, এই সেদিন, এক সরকারি অফিসে পার্মানেন্ট অ্যাড্রেস দেওয়ার পর, কেরানি ভদ্রলোক হাসিহাসি মুখ করে বললেন, সেকি মশাই ডেঞ্জারাস জায়গায় থাকেন তো। অর্থাৎ, সিঙ্গুর মানেই টাটার কারখানা। এবং গোলমাল। অত:পর আমি তাঁকে একটি মার্লবোরো লাইটস অফার করি, এবং হাসিতে যোগ দিই।

    কিন্তু এ লেখা দুহাজার সাত নিয়ে নয়। বরং নব্বইয়ের শুরুর সেই বিস্মৃতপ্রায় "বানতলা - বিরাটি - সিঙ্গুর' দেয়াললিখনের গপ্পো। যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমার কৈশোর, যৌবনবেলার শুরু। সেইসব দেয়ালের গায়ে তারপর বিস্তর চুনের দাগ পড়েছে। কতকিছু হয়ে গেল তারপর, ছেলেদের প্যান্টের কাটিং দুবার বদলে গেল, কলকাতার মেয়েরা স্লিভলেসে অভ্যস্ত হয়ে গেল, বাবরি মসজিদ ভাঙল, ভেঙে গেল সোভিয়েত, ওয়াইটুকে পার করে আমরা সব দলে দলে সফটওয়্যারের কেরানি হয়ে গেলাম,স্লোগানে স্লোগানে কতোবার ঢেকে গেল মুখ, -- প্রেম এবং রাজনীতি, আঘাত আর অভিজ্ঞতায় আমরা সব পোক্ত হয়ে উঠলাম। কতগুলো ভোট হয়ে গেল, বিধানসভা, লোকসভা, পঞ্চায়েত, আর অবধারিতভাবেই ভুলে গেলাম সেই মেয়েটির মুখ, রিজওয়ানুরের ঘটনা না ঘটলে যার কথা আর হয়তো মনেই পড়তনা।

    এই লেখা, সেই মেয়েটির কথা। বিস্মৃতির জলতলে শুয়ে থাকা রোহিণীর মুখ যতটা দেখা যায়, ততটুকুই। একটুও বেশি নয়। কমও নয়। মেয়েটির নাম, যতদূর মনে পড়ে, কাকলি সাঁতরা। কাকলি টা শিওর। সাঁতরা নাও হতে পারে। একদিন, সেই উত্তর বানতলা, উত্তর বিরাটি পর্বের একদিন, সিঙ্গুর বাজারে সাতসকালে আড্ডা দিতে যাবার পথে শুনলাম, গতরাতে থানায় মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে। তখনও মেয়েটির নাম জানিনা। কেউই জানেনা, কিন্তু জনতা উত্তেজিত। চায়ের দোকানে তুফান ওঠে। ততক্ষণে থানার সামনে জমতে শুরু করেছে ভিড়। কংগ্রেসের নেতারা এক কোণে মাইক খাড়া করে জ্বালাময়ী বক্তব্য রাখতে শুরু করেছেন। সিপিএম ও একখানা মিছিল করে ফেলেছে। আমরা উঠে পড়ি। আমাদেরও যেতে হবে। "সাইকেল গুলো রেখে যা', কে যেন বলে, "গোলমাল শুরু হলে আর পাওয়া যাবেনা'। কে বলেছিল, এখন আর মনে পড়েনা। আমরা নিজেদের সাইকেলগুলিকে বাড়িতে রেখে আসতে যাই। নিজ নিজ মাল, সাইকেল হোক বা কেরিয়ার, সামলে তবেই না বিদ্রোহ, বিপ্লব?

    ফিরে থানার সামনে আসতে আসতে আরও আধঘন্টা। ততক্ষণে এলাকায় জনজোয়ার। কংগ্রেস এবং সিপিএমের নেতারা ডেপুটেশন ইত্যাদি দিয়ে বাড়ি চলে গেছেন। এখন শুধু পাবলিকের জমানা। তারা থানা ঘিরে রেখেছে। আর পুলিশ থানায় বন্দী। এই লেখার পাঠক যারা, তারা জানেন কিনা জানিনা, প্রতিটি এলাকাতেই গোলমাল পাকানোর কিছু স্পেশালিস্ট লোক থাকে। এমনি সময়ে, শান্তির সময়ে, তারা জমির দালালি, নেতাদের মোটরবাইক চালানো, বা ওয়াগন ভাঙা জাতীয় বিভিন্ন ধান্দায় লিপ্ত থাকে। আর বিপ্লবের সময়ে, সে হাইওয়েতে অ্যাকসিডেন্টের পর ট্রাক ড্রাইভারকে পেটানোই হোক, বা দাঙ্গা, বা গণবিদ্রোহ, তারা জনতাকে নেতৃত্ব দিতে সামনের সারিতে চলে আসে। ততক্ষণে এই "জননেতা'রা এসে গেছে এলাকায়। রেললাইনের ধার থেকে পেশাদারি দক্ষতায় তুলে আনা হচ্ছে ঝুড়ি ঝুড়ি গ্র্যানাইটের টুকরো। না তৈরি হওয়া বাড়ির প্লট থেকে হাপিস হয়ে যাচ্ছে ইটের পাঁজা। আর পাবলিক, তার রোষ, তার ফুর্তি উগরে দিচ্ছে, সেইসব পাথরের টুকরো, রাশি রাশি ভাঙা ইট ছুটে যাচ্ছে ব্রিটিশ আমলের সেই সরকারি ভবনের দিকে, যার নাম থানা। জনতা ইট ছুঁড়ছে। কারো চোয়াল শক্ত, মুখে ক্রোধ। কারো মুখে হাসি, পিকনিকের মেজাজ। কিন্তু সকলের হাতে ইট।

    এইভাবে চলে ঘন্টাখানেক। ট্রেন বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাস্তাও। তারপর, যা হয় আর কি। জেলা পুলিশ চলে আসে। যতদূর মনে পড়ে, সঙ্গে আসে র‌্যাফ। প্রথমে কাঁদানে গ্যাস। জনতা পালায়না। অতএব গুলি। একটি ছেলে মারা যায়। রাস্তার পাশে একটা দোকানে কাজ করত। হাতে একঠোঙা মুড়ি নিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখতে গিয়েছিল, কি দেখতে ভগবানই জানেন, গুলি সোজা এসে মাথায় লাগে। তার নাম ছিল নিরাপদ দাস। পরদিন, কোন একটা কাগজ যেন হেডলাইন করেছিল "নিরাপদ দাসের আর মুড়ি খাওয়া হলনা'। আরও দুচারটি ছেলের গায়ে গুলি লাগে, তাদের মধ্যে একজন আমাদের সহপাঠী, কিন্তু আঘাত গুরুতর ছিলনা। গুলি চালাতেই জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়, তখন র‌্যাফ বেধড়ক লাঠি চালায়। পুলিশ বহু লোককে তুলে নিয়ে যায়, যার বেশিরভাগই স্রেফ হুজুগে লোক, মজা দেখতে এসেছিল। ইত্যাদি ইত্যাদি।

    তখনও আমরা মেয়েটির নাম জানিনা। সে তখনও একটি মেয়ে মাত্র। মুজতবার সেই কয়েদির মতো, তার কোনো নাম নেই, শুধু শরীর আছে, যা ধর্ষণযোগ্য। নামধাম জানা যায় পরদিন সকালে খবরের কাগজ থেকে। নাকি সন্ধ্যেবেলায়ই জানা গিয়েছিল? মনে পড়েনা। কিন্তু সে নিয়ে কোনো মাথাব্যথা ছিলনা। তার কি হল, সেটাও জানতে চায়নি কেউ। মাথাব্যথা শুরু হয় সরকারি স্তরে তদন্তের আদেশ দেবার পর। তখনই জানা যায়, জানা আগেই ছিল, আমাদের খেয়াল হয়, যে, মেয়েটির একটি নামও ছিল। একটি পরিচিতি ছিল। জীবন ছিল। আর মেয়েদের জীবন নিয়ে মাথাব্যথার একটিই কারণ থাকতে পারে, তা হল তার চরিত্র। চারিদিকে শুরু হয় ফিসফাস। দেখতে শুরু করি, চেনা মানুষগুলোর, চেনা মাসি-পিসি-দাদা-দিদিদের মুখ কেমন বদলে যাচ্ছে। ঘরের কোণে ফিসফিস মহিলাসমিতির জটলা, নির্ঘাত কাকলির প্রাকধর্ষণ জীবনের যৌন কেচ্ছা নিয়ে আলোচনা চলছে। চায়ের দোকানে সর্বজনশ্রদ্ধেয় প্রবীণ মানুষটি আরও কয়েকজনকে কিছু বলছিলেন, আমাদের মতো চ্যাংড়া ছোঁড়াদের দেখেই থেমে গেলেন, অর্থাৎ, কাকলি এবং তার চরিত্রের শ্রাদ্ধ হচ্ছিল। সত্যকথনের স্বার্থে অবশ্য একথা বলে নেওয়া উচিত, মেয়েটি, যতদূর শুনেছি, একটি ছিটপিটে ধরণের কমবয়সী মেয়ে, গান্ধীবাদী চরিত্র বিচারে নির্ঘাতই পাশ মার্ক পাবেনা। কিন্তু সে আমাদের মধ্যে কতজনই বা পাবে? নাকি কমবয়সে ব্রাহ্মচর্য পালন না করলে ন্যায়বিচার পাওয়া যাবেনা? এসব নিয়ে তর্কবিতর্ক হয়। চলতে থাকে। চলতে থাকে তদন্ত। আদালতে শুনানিও চলতে থাকে। কমবয়সী মেয়ে। লেখাপড়া জানেনা। পয়সার জোরও নেই। উকিল টুকিল দেওয়া হয়েছিল কিনা কে জানে, আর দিলেও তিনি কি জাতীয় সওয়াল করেছিলেন তাও জানা নেই, মহামান্য আদালত মেয়েটিকে পাঠিয়ে দেয় লিলুয়া হোমে। অফিশিয়ালি সেই হোম নামক বস্তুটি আদতে কমবয়সী মেয়েদের সংশোধনাগার। সেতো জেলখানাও নাকি সংশোধনাগার, আমাদের এলাকার লোকে তাই লিলুয়া হোমকেও জেল বলেই জানত।

    এরপর আমাদের উৎসাহ কমতে থাকে বিষয়টায়। দুনিয়ায় আরও মাথা ঘামানোর মতো অনেক জিনিস আছে। নতুন সিনেমা, নতুন বিপ্লবী থিয়োরি, নতুন লেখা, নতুন বান্ধবী, খবরের কাগজের নতুন ইস্যু, একই জিনিস নিয়ে চর্বিতচর্বণ কি পোষায় নাকি? অন্যদিকে দীর্ঘস্থায়ী সরকারি তদন্ত, আদালতের বিচার চলতে থাকে নিজের গতিতে। তিন বা পাঁচ কতবছর পরে কে জানে তদন্তের একটা ফলও বেরোয়। কোনো পুলিশের কোনো শাস্তি হয়েছিল কি? মনে হয় না। তবে আদালতের নির্দেশে ধর্ষিতা নারীটি বসবাস করতে থাকে কারাগারের আড়ালে। আইপিসির কততম ধারায় যেন, তাকে শোধরানোর মহান দায়িত্ব আদালত নিজের কাঁধে তুলে নেন। এবং তার স্থায়ী ঠিকানা হয় লিলুয়া হোম। শান্ত সিঙ্গুরের বদ্ধ জলায় তা নিয়ে একটি বুদবুদও ওঠেনা।

    গপ্পো এখানেই শেষ করা যেত। কিন্তু এটা গল্প নয়, বাস্তব। আমার চোখে দেখা, কানে শোনা ঘটনা। এটা সেই রিয়েলিটি যা গল্পের চেয়ে অনেক বেশি অবাস্তব। ফলে এর পরেও কাকলি সাঁতরা, আবার বলছি, সাঁতরা কিনা শিওর নই, তার সঙ্গে আরও বার দুই মোলাকাত হয় আমার। সামনাসামনি নয়, খবরের কাগজের তিন বা পাঁচের পাতার ছোট্টো ফিলারে। প্রথম খবরটিতে জানা যায়, কাকলি আরও কয়েকটি মেয়ের সঙ্গে লিলুয়া হোম থেকে পালাতে গিয়েছিল। পালাতে পেরেওছিল মনে হয়। কিন্তু পুলিশের হাতে ধর্ষিতা হবার অপরাধে তার পিছনে পুলিশ লেলিয়ে দেওয়া হয়। ফলে শেষমেশ ধরা পড়ে যায়। পুরোটাই, বাইরে থেকে দেখলে, কমিক রিলিফের চূড়ান্ত। জীবন দিয়ে জানলে কেমন, জানা নেই। শোনাও নেই। দ্বিতীয় খবরটি এর কিছুদিন পরের। দুমাস, ছমাস, না দুবছর তাও মনে নেই। এবং খবরটা ততটা কমিকালও নয়। দুই লাইনের খবরে জানা যায়, লিলুয়া হোমে একটি মেয়ে মারা গেছে। তার নাম কাকলি সাঁতরা। দুই লাইনেরই খবর, ফলে মৃত্যুর কারণ জানা হয়না। খবরটা দু-চারদিন মনে থাকে, দুচারজনকে ক্ষোভ উগরে দিই, তারপর, স্রেফ ভুলে মেরে দিই।

    কতো কিছুই তো ভুলে যাই, এ আর কি এমন কথা। ভুলতে ভুলতেই তো বড়ো হই। আমি, আমরা। বুড়ো হই। রাজনীতি করি, ইতিহাস মুখস্থ করি। সন্দীপন আওড়াই, সিনেমা করি, সিভিল সোসাইটি মারাই। গান শুনি। প্রতুলবাবু প্রেসিডেন্সির মাঠে জীবনের গান গেয়ে যান, শুনি। সব মরণ নয় সমান। জনতার দুশমনিতে যারা মরে, তাদের মরণ নাকি পাখির পালকের চেয়েও হাল্কা। আর সবহারা জনতার তরে যারা জীবন উৎসর্গ করে, তাদের মরণ হিমালয়ের চেয়েও ভারি। এই দুই মরণের কোনোটাতেই কাকলিকে ফিট করানো যায়না। অতএব, খেলা শেষে, আমরা, শিশুগণ মন দিই নিজ নিজ পাঠে। তেভাগা আন্দোলনের কালপঞ্জি মুখস্থ করি। চন্দনপিঁড়ির শ্মশানে ঠিক কতজন মারা গিয়েছিল হুবহু বলতে পারি। সামাজিক কর্তব্যহেতু মাঝেমধ্যে ধর্ষণের প্রতিবাদে থানায় ইট মারি। সেসব কভার করে মিডিয়াও সামাজিক কর্তব্য করে। সরকার তদন্তের আদেশ দিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলে। আদালত হোমে পাঠিয়ে পতিতা নারীকে উদ্ধার করে। মাছের কাঁটা গলায় আটকে গেলে আমরা শুকনো ভাত খাই। আর অস্বস্তি এড়ানোর জন্য ভুলে যাই। স্রেফ ভুলে যাই।

    ওদিকে জলতলে রোহিণীরা শুয়ে থাকে। একা।

    অক্টোবর ২৮, ২০০৭
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২৮ অক্টোবর ২০০৭ | ৭৪১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন