এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • লকডাউনে অর্থনীতি নিয়ে দু’পয়সাঃ  পরিযায়ী শ্রমিক, বাজেট, নোট ছাপানো ইত্যাদি

    রঞ্জন
    অন্যান্য | ১১ জুলাই ২০২০ | ১৯১৫ বার পঠিত
  • [ হতাশা, ভয় এবং বিপন্নবোধ থেকে লেখাটি লিখেছি। আমার ইকনমিক্সে প্রথাগত  শিক্ষায় ঘাটতি আছে। কাজেই ভুলের সম্ভাবনা প্রচুর। ধরিয়ে দিলে কৃতজ্ঞ থাকব। কিস্তিগুলোতে সময়ের ছাপ ধরে রেখেছি। মানে মে থেকে জুন। তিনটে কিস্তিতে শেষ হবে।]

    লকডাউনে অর্থনীতি নিয়ে দুপয়সাঃ  পরিযায়ী শ্রমিক, বাজেট, নোট ছাপানো ইত্যাদি

    ভূমিকা

    আমরা এখন লকডাউন- ৪ এ;  প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন ১৬ মে নাগাদ ভারতের করোনা আক্রান্তের কার্ভ সমতল হবে। সেটা হয়নি, উলটে আমরা এ’ব্যাপারে চীনকে পেছনে ফেলে একলক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছি । তবে আমাদের মৃত্যু দর ৩.৩ এর মধ্যেই থেমে আছে , যেখানে ইউরোপের দেশগুলোর দর ১৩-১৪%। এছাড়া গ্রামের দিকে ছড়াচ্ছে না । সচেতনতা বেড়েছে, তাই বহু জায়গায় পরিযায়ী শ্রমিকেরা ফিরে এলেও সংক্রমণ মহামারীর আকার নেয়নি। ভারতের সুস্থ হওয়ার হারও বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ, প্রায় ৪০%।আজকে সংক্রমিত ১,০৭,৬২৭ এবং মৃত ৩,৩২৬।[1]কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য সচিব লব অগরওয়াল ৮ই মে’র প্রেস ব্রিফিং এ বলেছেন আমাদের এখন করোনা ভাইরাসের সঙ্গে বেঁচে থাকার অভ্যেস করতে হবে।

    প্রধানমন্ত্রী কোন জ্যোতিষী নন , তাই অনেক ভবিষ্যবাণী ফলেনি। বিদেশ থেকে কালোটাকা এসে গরীবের জনধন খাতায় ১৫ লাখ জমা হয়নি । ২০১৬ সালের ডি-মনিটাজেশন এর ফলে প্রচূর কালোটাকা ধরা পড়ার কথা –হয়নি। বরং ভারতের ইনফর্মাল ইকনমি মার খেয়েছে।

    তাতে কি ? উনি চেষ্টা করেছেন তো !

    ইতিমধ্যে মধ্যবিত্ত ভদ্রলোকের ভারতবর্ষ জেগে উঠে জেনেছে যে আমরা ঘরে বন্ধ রয়েছি বটে, কিন্তু বড় বড় শহর ও মহানগরীতে জীবিকার সন্ধানে কাজ করতে আসা পরিযায়ী শ্রমিকেরা কাজ হারিয়ে মাথা গোঁজার জায়গা হারিয়ে দেড় মাস ধরে অপেক্ষা করার পর বাধ্য হয়ে নিজেদের গাঁয়ে ফিরতে চাইছে। কারণ প্রথম দু’মাস নির্দেশ ছিল যে যেখানে আছ সে সেখানেই থেকে যাও।

    কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার খাবার দেবার চেষ্টা করেছে, সঙ্গে পেয়েছে বেশ কিছু এনজিও , সমাজসেবী সংস্থা  এবং  গুরুদ্বারা আদি ধর্মীয় সংস্থাকে। কিন্তু বোঝাই যাচ্ছেএসব প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল এবং এর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।

    লকডাউনে কাজ হারানো মাইনে বন্ধ হওয়া মানুষের পক্ষে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হলে ৩১ মার্চে সুপ্রীম কোর্ট সরকারের বক্তব্য – কোন পরিযায়ী শ্রমিক রাস্তায় নামে নি, কারণ সরকার সবার থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে—মেনে নিলেন।

    অথচ সেই ১৯৭৯ সালেই আন্তঃরাজ্য পরিযায়ী শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্যে ইন্টারস্টেট মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কমেন (রেগুলেশন অফ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড কন্ডিশন্স অফ সার্ভিস) অ্যাক্ট বলে  আইন তৈরি হয়েছিল যাতে পরিযায়ী শ্রমিকদের এবং তাদের নিয়ে আসা ঠিকেদারদের রেজিস্ট্রেশন ও নথিবদ্ধ করণ ইত্যাদি নিয়ে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া আছে। কেউ মানেনি। শ্রমিকরাও ওঁদের পক্ষে তৈরি এই আইন এবং তাঁদের নায্য অধিকার নিয়ে অন্ধকারে।

    এঁরা সংখ্যায় কত? নির্মলা সীতারামন গত সপ্তাহে তাঁর দ্বিতীয় রিলিফ প্যাকেজে মনরেগায় অতিরিক্ত ৪০,০০০ কোটি টাকার কাজ দেবার ঘোষণা করার সময় বলেন সংখ্যাটি ৮কোটি হবে, এটা রাজ্য সরকারগুলোর কিছু ডেটা নিয়ে অনুমান মাত্র।

    তাহলে কি সরকারের কাছে দেশের পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে ডেটাবেস নেই? জনৈক ভেঙ্কটেশ নায়েকের সূচনার অধিকার সংক্রান্ত (আর টি আই) পিটিশনের উত্তরে চিফ লেবার কমিশনারের অফিস জানিয়েছে যে তাঁদের কাছে পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যওয়ারি বা জেলাওয়ারি কোন তথ্য নেই ।[2]

    ২০১১ সেন্সাস অনুযায়ী এই সংখ্যা তখন ছিল ১৩৯ মিলিয়ন বা ১৩ কোটি ৯০ লক্ষ।

    বাস্তব পরিস্থিতি যে অন্যরকম ছিল তা আজ সবাই জানে। দাবি উঠল শুকনো বা রান্না করা খাবার দেওয়াই যথেষ্ট নয় , ওদের হাতে নগদ পয়সা দেওয়া দরকার। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিত ব্যানার্জি সহ অনেক অর্থনীতিবিদ এই প্রশ্ন তুললেন।

    কিন্তু এপ্রিল ৭ এ সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি মাননীয় বোবড়ে আবেদনকারীর উকিলকে বললেন – শ্রমিকদের খাওয়াপরার ব্যবস্থা তো সরকার করেছে তাহলে টাকা কেন চাই?[3]

    যখন মালগাড়িতে কাটা পড়ে বা ট্রাক উলটে বা চাপা পড়ে বহু শ্রমিকের মৃত্যুর খবর আসছে তখন মে ১৫ তারিখে কোর্ট আরেকটি জনস্বার্থ মামলা খারিজ করে বলল যে পরিযায়ী শ্রমিকদের দেশজুড়ে এই যাতায়াত এবং তার ফলশ্রুতিতে নজরদারি কোর্টের পক্ষে অসম্ভব, এটা সরকারের কাজ।[4]

    যদিও কোর্ট বিগত ১১ই মে তারিখে একটি মামলায় ( সিভিল অ্যাপীল ৪০৭০/২০১৬) রাজস্থানের একটি প্রাচীন মন্দিরের সৌন্দর্য্যকরণ এবং বাগান তৈরির নজরদারির দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে।[5]

    আগে যখন লোকে নিজের রাজ্যে ফেরার চেষ্টা করেছে তখন পেয়েছে পুলিশের লাঠি। লকডাউনের তৃতীয় পর্যায়ে সবাই অনুমতি পেল নিজের রাজ্যে ফেরার। ব্যস, সবাই ভাবল মরতে হয় তো নিজের ঘরে গিয়ে চেনা লোকজনের মধ্যে।

    টিভি চ্যানেলের দৌলতে আমরা জানলাম কীভাবে লোকজন পায়ে হেঁটে সাইকেলে বোঝাই ট্রাক এবং বাসের মাথায় চড়ে ঘরে ফিরতে চেষ্টা করছে এবং দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা গিয়েছে প্রায় দেড়শ’ শ্রমিক।

    কেন্দ্রীয় সরকার চাপে পড়ে শ্রমিকদের ঘরে ফেরার জন্যে স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করল । কিন্তু ভাড়া কে দেবে তা নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের চাপান উতোরে গোটা পরিবারের ভাড়া শ্রমিককেই বহন করতে হল। রেলওয়ে ওদের থেকে নন-এসি কোচে  সুপারফাস্ট চার্জ ৩০ টাকা এবং রিজার্ভড বার্থ চার্জ ২০ টাকা অতিরিক্ত আদায় করল। রেলওয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান ভি কে যাদব ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বললেন –এটা অনেক ভেবে করা হয়েছে। নইলে ভিড় লেগে যেত।[6]

    তারপর কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ এল যে টিকিটের দামের ভার কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার যথাক্রমে ৮৫% ও ১৫% হারে বহন করবে। শ্রমিক ট্রেন চলা শুরু হয়েছে। কিন্তু ঝগড়া এখনও থামেনি। কর্ণাটক হাইকোর্টে রাজ্য সরকারের রেলভাড়া বহন করতে অস্বীকার করা নিয়ে মামলা শুরু হয়েছে।[7]

    ভারতীয় রেলমন্ত্রকের সূচনা অনুযায়ী ১৫ মে মাঝরাত্তির পর্য্যন্ত.১০৭৪ শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনের দৌলতে ১.৪ মিলিয়ন আটকে পড়া শ্রমিক নিজ নিজ এলাকায় ফিরতে পেরেছেন।[8]

    ইতিমধ্যে ১২ই মে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করলেন তাঁর বহুপ্রতীক্ষিত রিলিফ প্যাকেজ। ওঁর ঘোষণার এবার মূল ধুয়ো ছিল ‘আত্মনির্ভর ভারত’। কোভিড -১৯ সংকটকে একটা সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে দেশের অর্থনীতি এবার নিজের পায়ে দাঁড়াবে—হাঁটি হাঁটি পা পা করে নয়, ‘কোয়ান্টাম জাম্প’  মেরে। আরও বললেন এই প্যাকেজের মূল্য হল ২০ লক্ষকোটি বা ২০ ট্রিলিয়ন টাকা যা কিনা মোটামুটি আমাদের জিডিপি’র ১০%। হৈচৈ পড়ে গেল। উনি আরও বললেন যে এ পথে চললে ২১ শতাব্দী হবে ভারতের। আমাদের ‘ভোক্যাল’ ফর ‘লোক্যাল’ হওয়া উচিত।

    সবই চমৎকার, তবে খটকা লেগেছে তিনটে কথায়।

    এক, এই শতাব্দীর গোড়ায় কম্পিউটারের Y2k bug সমস্যার সমাধান করতে ভারত নাকি গোটা বিশ্বকে পথ দেখিয়েছিল। কিন্তু ন্যাশনাল জিওগ্রাফি এবং উইকিপিডিয়া বলছে যে এর জন্যে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের টাকায়  মার্চ ১৯৯৯ এ ওয়াশিংটনে দি ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন সেন্টার খোলা হয়েছিল যা সফল ভাবে বিভিন্ন দেশে এ নিয়ে রিসার্চ ও স্টেপগুলো মনিটর করে। ২০০০ সালের মার্চ মাসে সংস্থাটি বন্ধ করে দেওয়া হয় ।

    দুই, উনি গোটা চল্লিশ মিনিটের বক্তৃতায় একবার পরিযায়ী শ্রমিকদের কথা উল্লেখ করে বললেন – ওঁরা অনেক ‘ত্যাগ ও তপস্যা’ করেছেন। কিন্তু ত্যাগ ও তপস্যা তো মানুষ অন্তরের গভীর অনুপ্রেরণা থেকে করে। এরা তো বৌ-বাচ্চার হাত ধরে  ৪০ ডিগ্রি গরমে রাস্তায় বেরোতে চায়নি। অসহায় হয়ে বেরিয়েছে, পরিস্থিতি বাধ্য করেছে।

    তিন, নিন্দুকে বলছে মোদীজির ২০ লক্ষকোটি সাহায্য নাকি সঠিক চিত্র দিচ্ছে না । এতে রিজার্ভ ব্যাংকের আর্থিক ব্যবস্থা ,মানে সরকারী ব্যাংক ইত্যাদিতে আগেই দেওয়া ৮ লক্ষকোটি টাকা এবং কিছু শুধু ব্যাংক ব্যাবসায়ীকে লোন দিনে তাতে সরকারের জামানত পড়ার প্রতিশ্রুতি সব ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর কৃষকদের বছরে ২০০০ টাকা করে তিন কিস্তিতে সহায়তা দেওয়া, বিধবাদের দু’মাস ৫০০ টাকা করে দেওয়া, জনধন খাতায় ১০০০ টাকা করে দু’মাস জমা করা এসবের আদ্দেক গতবছরের বাজেটেই ছিল এবং অনেকটাই বিত্তমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের ২৬ মার্চ ২০২০তে দেওয়া ১.৭০ লাখ কোটী টাকার প্রথম প্যাকেজের মধ্যে ছিল । বাস্তবে এই প্যাকেজে কাজ হারানো গরীব মানুষকে সরকারের রাজকোষ থেকে সাহায্য বলতে ওই তিনমাস প্রতি ব্যক্তি ৫ কিলো চাল বা আটা এবং প্রতি পরিবার ১ কিলো চানা দেওয়া। ফলে রাজকোষ থেকে খরচা আদৌ ২০ লাখ কোটি বা জিডিপির ১০% নয় , বরং মেরেকেটে ৩ বা ৪ লাখ কোটি টাকা বা জিডিপির ১.৫% বা ২% মাত্র ।

    ব্যস, লেগে গেল ধুন্ধুমার।

    কেউ বলছে দারুণ চাল দিয়েছেন সরকার বাহাদুর। গরীবের হাতে টাকা দিলে বা বসিয়ে খাওয়ালে তাদের ভিখিরি বানানো হয় , আত্মসম্মান নষ্ট করা হয় । তারচেয়ে শিল্পপতি এবং ব্যবসায়ীদের হাতে টাকা দিলে কাজকম্ম শুরু হবে গরীবেরা চাকরি ফিরে পাবে, বকায়া মাইনে পাবে, এইভাবে তাদের হাতে পয়সা আসবে ঠিকই, কিন্তু মালিকের হাত ফেরতা হয়ে। এতে সবারই লাভ, সে কিছু বিদ্যেবোঝাই বাবুমশাই যাই বলুন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী কয়েকবছর আগেই বলেছিলেন “ হার্ডওয়ার্ক ইজ মাচ মোর পাওয়ারফুল দ্যান হারভার্ড”।[9]

    সরকার কি মানুষের ট্যাক্সোর পয়সায় দানছত্র খুলবে? নোট ছাপাবে? একেবারে লাগে- টাকা -দেবে- গৌরী সেন? এই দুঃসময়ে সরকারের কাছে টাকা কোথায়? তাই তো কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে যে সরকারের কোষাগারে চাপ বাড়ছে। তাই  ফেব্রুয়ারি মাসে ডিএ ১৭% থেকে বেড়ে ২১% হলেও এই ৪% একবছর ধরে মানে ২০২০-২১ পর্য্যন্ত দেওয়া যাবে না । এতে ৪৮ লাখ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারি এবং ৬৫ লাখ পেনশনভোগীরা যতই শাপমন্যি করুন না কেন![10]

    শুরু হল শব্দকল্পদ্রুম। খবরের কাগজ ও চ্যানেলের দৌলতে আমরা শুনলাম অনেক নতুন নতুন শব্দ—জিডিপি, ডেফিসিট বাজেট, ফিসক্যাল ডেফিসিট, রেপো রেট, রিভার্স রেপো, এম এস এম ই , ডেট ফাইনান্সিং, বন্ড, মনিটাজিং অফ ডেট , এফ আর বি এম অ্যাক্ট, আরও কত কি!

    আমাদের মত ইতরজন সাধারণতঃ এমন ঝামেলায় পড়লে মহাজনদের শরণ নেয়, যেমন ডাক্তারবাবু যা বলেন। কিন্তু এখানে মহাজনেরাও যে দু’দলে বিভক্ত। কেউ বলেছেন নোট ছাপিয়ে গরীবদের হাতে পয়সা দাও, আগে ওরা খেয়ে বাঁচুক।

    অন্যদল হাঁ-হাঁ করে উঠছেন—খবরদার না। একবার নোট ছাপানোর মত শর্টকাটে অভ্যেস হয়য়ে গেলে সরকার যখন তখন আপনা -হাত-জগন্নাথ করে নোট ছাপাতে লেগে যাবে । ফলে বাজারে জিনিসপত্রের অনুপাতে টাকার ছড়াছড়ি হবে। একেবারে ‘দেবীর নৌকায় আগমন, ফলং প্লাবন, শস্যহানি, প্রাণহানি। মানে রান-অ্যাওয়ে ইনফ্লেশন বা লাগামছাড়া মুদ্রাস্ফীতি হয়ে টাকার দাম হবে খোলামকুচি।

    আমরা কী করব? আমরা সবগুলো মত, সবরকম প্রাসঙ্গিক তথ্য, ইতিহাসের সাক্ষ্য  নেড়েচেড়ে দেখব। কঠিন কঠিন শব্দগুলো এবং যুক্তিজালের জট ছাড়িয়ে টাকা ছাপানোর মোহ আবরণ সরিয়ে ফেলব। কথা দিচ্ছি, পথের শেষে বোঝা যাবে যে এসব কোন রকেট সায়েন্স নয়। তাই আলোচনাটা হবে কয়েক কিস্তিতে; যেমন ১‘মা যা ছিলেন’ – মানে করোনার আগে ভারতের অর্থনীতি কোথায় দাঁড়িয়ে ছিল ,২ ‘মা যা হইয়াছেন—করোনার পরের হাল হকিকত, ৩ ‘বাজেট রহস্য’ –এতে আমরা কত ট্রিলিয়নের মালিক এবং কঠিন শব্দগুলোর মানে বুঝে নেব, ৪ মহাজনবাণী –মানে ইকনমিক্স নামের শাস্ত্রটির ঋষিরা ( অ্যাডাম স্মিথ, মার্ক্স, কেইন্স এবং আজকের অমর্ত্য সেন, অভিজিৎ, রঘুরাম, পিকেটিরা) সরকারের নোট ছাপানো বা ধার করে দেশ চালানো নিয়ে কী কী বলেছেন ।

    এরপর থাকবে প্রধানমন্ত্রীর ‘আত্মনির্ভর ভারত’ প্যাকেজের বিশ্লেষণ এবং আগামী দিনে জীবিকার রূপ বদলের ইঙ্গিত।

    লকডাউন অর্থনীতি ২ --  করোনা আসার আগে মা যা ছিলেন

    করোনা -পরবর্তী ভারতে মহামারী ঠেকাতে সরকারের লকডাউন নামে চারবারের মরিয়া পদক্ষেপ এবং তার ফলে তৈরি হওয়া আর্থিক সংকট ও তার সরকারি নিদান বুঝতে গেলে দরকার করোনা-পূর্ব ভারতের আর্থিক চেহারা কেমন ছিল তা দেখা; নইলে এই সংকটের গভীরতা স্পষ্ট হবে না।

     মা যা ছিলেন

    করোনা মহামারী দেখা দেয়ার আগে ভারতের আর্থিক চেহারাটি কেমন ছিল ? এটা সংক্ষেপে বুঝতে আমরা কয়েকটি তথ্যের উপর জোর দেব। যেমন, গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট (জিডিপি) বা মোট ঘরোয়া উৎপাদন, পার ক্যাপিটা জিডিপি বা মাথাপিছু গড় জিডিপি,বেকারির হাল হকিকত, ফিস্ক্যাল ডেফিসিট বা আর্থিক ঘাটতি, বিভিন্ন শিল্পে মন্দার ছবি, ব্যাংকের হাল ইত্যাদি।

    ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে থেকে হাওয়ায় ভেসে আসছিল কিছু কথা। যেমন ভারত এখন প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন ইকনমি, দ্রুত অগ্রগতির নিরিখে বিশ্বে দু’নম্বরে পৌঁছে গেছে। শীগগিরই চীনকে ছাড়িয়ে যাবে , ফ্রান্সকে ছাড়িয়ে গেছে। দ্বিতীয়বার জেতার পর প্রধানমন্ত্রী দেশের জন্যে নতুন লক্ষ্য ঘোষণা করলেন। ভারতকে আগামী কয়েকবছরে ৫ ট্রিলিয়ন ইকনমি হতে হবে। [11]অর্থাৎ ভারতের জিডিপি এখন প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন, পাঁচবছরে ৫ ট্রিলিয়ন জিডিপির বুড়ি ছুঁতে হবে। চারদিকে ধন্য ধন্য পড়ে গেল। এমন সাহসী প্রধানমন্ত্রী এমন স্বপ্নদ্রষ্টা কেউ গত ৭০ বছরে দেখেনি।

    কেউ কেউ সন্দেহ প্রকাশ করলেন—এরজন্যে দরকার বছরে ১৪% দরে জিডিপি বৃদ্ধি। তাহলে মুদ্রাস্ফীতি ৪% বাদ দিয়ে নীট বৃদ্ধি ১০% হবে। তাহলে ৫ বছরে গিয়ে ৫ ট্রিলিয়ন  হতে পারে । কিন্তু ২০১৬ সালের শেষের দিকে ডি-মনিটাইজেশনের ধাক্কায় সেই যে জিডিপি বৃদ্ধির দর পড়তে শুরু করল আজও থামার লক্ষণ নেই, মেরে কেটে ৫% হবে। তাহলে? অন্যেরা এইসব পন্ডিতি উড়িয়ে দিয়ে বললেন—উৎসাহে কি না হয় , কি না হয় চেষ্টায়! দরকার ৫৬ ইঞ্চি বুকের ছাতি।

    হিন্দি বলয়ে পথেঘাটে শুনলাম—এঁর হাতে দেশের বাগডোর তাই দেশ এখন বিশ্বের মধ্যে দু’নম্বর। ইনি প্রধানমন্ত্রী থাকলে আজ নয় কাল একনম্বর হয়ে যাবো।

    আসুন, আমরা আগে এই দু’নম্বর হওয়ার দাবিটি যাচাই করে দেখি।

    দেশের অর্থনীতির অবস্থা কয়েক দশক আগে মাপা হত জাতীয় আয় বা মাথাপিছু জাতীয় আয় (পার ক্যাপিটা ন্যাশনাল ইনকাম) দিয়ে । যেমন আমাদের ছোটবেলায় কোন বড়মানুষের সম্বন্ধে শুনতাম লক্ষপতি, কোটিপতি। আজকাল মিলিওনেয়ার, বিলিওনেয়ার বা মাল্টি-মিলিওনেয়ার।

    তেমনি এই শতকে তার জায়গা নিয়েছে একটি নতুন সূচক- জিডিপি বা গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও এই টার্মই ব্যবহার হচ্ছে, বিশেষ করে গ্লোবালাইজেশনের সময় থেকে। এই “সমগ্র ঘরোয়া উৎপাদন” এমন একটি সূচক যা কোন দেশে একটি নির্দিষ্ট বছরে দেশের মধ্যে উৎপন্ন সমস্ত দ্রব্য(গুডস) এবং সেবা’র (সার্ভিস) যোগফলের হিসেব কষে আর্থিক অবস্থাকে মেপে নেয়।ইকনমিক্সের ফর্মূলা ধরলেঃ

    জিডিপি= সি + জি + আই + এন(এক্সপোর্ট -ইম্পোর্ট); যেখানে সি= ব্যক্তিগত উপভোগ, জি= সরকারি বা পাবলিক সেক্টরে বিনিয়োগ, আই= কর্পোরেট সেক্টরের বিনিয়োগ এবং এন= আমদানি-রপ্তানির নীট ফল, অর্থাৎ রপ্তানি বেশি হলে প্লাস, আমদানি বেশি হলে মাইনাস।

    সে হিসেবে ভারত এখন ২ ট্রিলিয়ন ইকনমির দেশ। আশা ছিল মার্চ ২০২০ নাগাদ ৩ ট্রিলিয়ন হবে, কিন্তু  মন্দা এবং করোনার কারণে সেটা হয়নি। সে কথায় পরে আসছি।

    গত নির্বাচনে জেতার পর থেকে মোদীজি স্বপ্ন দেখিয়েছেন যে তাঁর কথাশুনে ঠিকমত চললে আমরা ২০২৪ সাল নাগাদ ৫ ট্রিলিয়ন ইকনমি হয়ে যাবো।

    অন্যদেশগুলো? চিন ১৪.১৪ ট্রিলিয়ন ডলার, আমেরিকা ২১.৪৪ ট্রিলিয়ন।

    আসলে ‘ইমার্জিং ইকনমি’ বা ‘সবচেয়ে দ্রূত উঠে আসা ইকনমি’র বিচারে ভারত একবছরের জন্যে চিনকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে ছিল । এই কথাটাই মন্ত্রী-সান্ত্রী-পাত্র-মিত্র-অমাত্যের দল জোরগলায় বলে বেড়াচ্ছিলেন।তবে চিন তার মন্দা অনেকটা সামলে আবার সেই আগের জায়গায়।

    বিশ্বে ইকনমির সাইজে ভারত এখন পঞ্চম থেকে সপ্তম স্থানের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। চিন, জাপান এবং জার্মানি যথাক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ স্থানে রয়েছে।

    দেশ                                   জিডিপি (মার্কিন ডলারে)[12]

    আমেরিকা                              ২১.৪৪

    চীন                                      ১৪.৪৪

    জাপান                                    ৫.১৫

    জার্মানি                                    ৩.৮৬

    ভারত                                      ২.৯৪

    বৃটেন                                     ২.৮৪

    ফ্রান্স                                       ২.৭৩

    তথ্যসূত্রঃ                         ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ড ২০১৯

    এক ট্রিলিয়নে কটা শূন্য?

    আরে হাসবেন না। টিভিতে রাত ন’টার চেঁচামেচির সময় বিজেপি’র  ডঃ সম্বিত পাত্রকে কংগ্রেসের ডঃ গৌরববল্লভ এই প্রশ্নটি করে ভারি বেকায়দায় ফেলেছিলেন। উনিও  অর্থনীতির পিএইচডি।

    ১ ট্রিলিয়ন= ১০০০ বিলিয়ন= ১০০০ x (১০০০ মিলিয়ন)= ১০০০ x ১০০০ x ১০০০ হাজার= ১০০০ x ১০০০ x ১০০০ x ১০০০= ১,০০০,০০০,০০০,০০০। মানে বারোটা শূন্য।  

    - আসলে আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের মত একক, দশক, শতক, সহস্র, অযুত,, লক্ষ, নিযুত, কোটিতে বা দশের গুণিতকে হিসেব না করে হাজারকে একক ধরে হিসেব করে। সোজা কথায় ১ ট্রিলিয়ন মানে ১ লক্ষ কোটি টাকা।

    খটকা কিসের?

    একটা খটকা লাগছে না? মোদীজি বলছেন উনি ২০ ট্রিলিয়ন রিলিফ প্যাকেজ বা আত্মনির্ভর ভারত প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন যা নাকি জিডিপির ১০%। তাহলে জিডিপি হয় ২০০ ট্রিলিয়ন, কিন্তু আই এম এফ/বিশ্বব্যাংকের তথ্যসূত্র বলছে ভারতের জিডিপি ২ ট্রিলিয়নের সামান্য বেশি। কে ঠিক বলছেন?

    দুজনেই ঠিক। মোদীজি ঘোষণা করেছেন ভারতীয় টাকায়, আন্তর্জাতিক বাজার বলছে ডলারে। প্রতি ডলার বিনিময় মূল্য গড়পড়তা ৭৫ টাকা ধরলে ২০০ ট্রিলিয়ন টাকা দাঁড়াবে ২.৬ ট্রিলিয়ন ডলারে।

    পার ক্যাপিটা জিডিপিঃ

    সবাই জানি যে গ্রস জিডিপি বা মোট দেশের সম্পদের হিসেব পুরো ছবিটা তুলে ধরে না। ভারতের মত বিশাল দেশ যার জনসংখ্যা ১৩৪ কোটি  তার মোট সম্পদ তো বড় মাপের হবেই। অন্য দেশের সঙ্গে তুলনা হবে কী করে? সেখানে মাথাপিছু গড় সম্পদ বা পার ক্যাপিটা জিডিপি কিছুটা সঠিক সূচকের কাজ করে। দেখা যাক ১৮০টি দেশের মধ্যে আমরা কে কোথায় দাঁড়িয়ে।

    দেশ                             পার ক্যাপিটা জিডিপি (মার্কিন ডলারে )[13]       র‍্যাঙ্ক

    আমেরিকা                           ৬৫১১১                                            ৭

    চীন                                    ১০০৯৮                                         ৬৫

    ইন্দোনেশিয়া                          ৪১৭৬                                         ১০৯

    ভারত                                   ২১৭১                                         ১৩৯

    আর একটা তুলনা করা যাক। মনমোহন সিংয়ের সময়, অর্থাৎ ২০১৪ সালে ভারতের জিডিপি এবং পার ক্যাপিটা জিডিপি কেমন ছিল ।

    দেশ                        জিডিপি (ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে)  

                                         ২০১৪ [14]       ২০১৯          বৃদ্ধি               

    মেরিকা                         ১৫.১১        ২১.৪৪        ৬.৩৩

    চীন                                  ১০.৩৮       ১৪.৪৪         ৪.০৬

    জাপান                                 ৪.৬২         ৫.১৫          ০.৫৩

    জার্মানি                                 ৩.৮৬        ৩.৮৬          -----

    বৃটেন                                   ২.৯৫        ২.৮৪       --  ০.১১

    ফ্রান্স                                    ২.৮৫         ২.৭৩       -- ০.১২

    ভারত *                                 ২.০৫*         ২.৯৪          ০.৮৯

    • ভারত নবম স্থানে, রাশিয়ার আগে কিন্তু ইতালি ও ব্রাজিলের পেছনে।

    কিন্তু মাথাপিছু বা পার কাপিটা জিডিপির হিসেবে ভারতের স্থান ১৯০টি দেশের মধ্যে ১৩৯তম; পাকিস্তান, নেপাল , বাংলাদেশের থেকে সামান্য উপরে বটে, কিন্তু ভিয়েতনাম (১৩০), মিশর, লাওস (১৩১),ভেনেজুয়েলা(১৩৩), ঘানা (১৩৭), সিরিয়া, ইত্যাদির নীচে।[15]

     তা কী করে হয় ? মোট জিডিপির আয়তনে মাঝে মাঝে ফ্রান্স ও বৃটেনকে পেছনে ফেলে পঞ্চম স্থান অধিকার করা ভারত মাথাপিছু জিডিপির মাপদন্ডে ভিয়েতনামের পেছনে?

    --এর একটা কারণ হতে পারে ভারতের বিশাল জনসংখ্যা—১৩৩ কোটি বা ১.৩ বিলিয়ন। আর বাস্তবিক দারিদ্র্যের কারণ সম্পত্তির কেন্দ্রীকরণে দ্রুত্ বৃদ্ধি। ভারতের শীর্ষ ১% ধনীর হাতে গোটা দেশের সম্পত্তির ৭৩% বা নীচের দিকের ৭০% জনসংখ্যার সম্পত্তির চারগুণ। এটা অক্সফ্যামের অধ্যয়ন যা ওয়ার্ল্ড  ইকনমিক ফোরামের সামনে ২০১৮তে পেশ করা হয়েছিল।  বলা হয়েছিল যে ভারতের বিলিওনারদের সম্পত্তির পরিমাণ সরকারের একবছরের বাজেটের চেয়ে বেশি।[16]

    আয়-বৈষম্য (ইনকাম ডিস্পারিটি)

    এবার ভারতের আয়-বৈষম্য বা ইনকাম ডিস্পারিটি নিয়ে একটু কথা বলা যাক। এনিয়ে টিভি চ্যানেলে কখনই কোন আলোচনা হয় না। কিন্তু আমরা বাঙালী। আমাদের বঙ্কিমচন্দ্র শুধু বন্দেমাতরম শেখাননি, শিখিয়েছেন হাসিম শেখ ও রামা  কৈবর্ত্যের কথাও ভাবতে। কাজেই আমরা পার ক্যাপিটা জিডিপিতে থেমে না গিয়ে জিনি কোএফিশিয়েন্ট নিয়েও কথা বলব।

     জিনি কোএফিশিয়েন্ট হল আয় বা সম্পত্তির  বৈষম্য মাপার সূচক।

    জিনির ভ্যালু  ০ থেকে ১ অব্দি হতে পারে। ০ = পূর্ণ সাম্য, ১= পূর্ণ বৈষম্য।

    এটা মাপা হয় দু’ভাবে। ট্যাক্সের আগের আয় বা ট্যাক্সের পরের আয়ের ভিত্তিতে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক মাপে ট্যাক্স পরবর্তী আয়ের ভিত্তিতে। ওরা বলছিল ২০০৮ পর্য্যন্ত ভারতের জিনি সূচকাংক .৪ এর আশেপাশে ছিল, ২০১১তে ০.৩৮; তারপরে বাড়ছে।

    অনেকের মতে ট্যাক্স পরবর্তী আয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টরকে ধরে না । প্রি-ট্যাক্স ইনকাম বরং বৈষম্য মাপার জন্যে অনেক বেশি নির্ভর যোগ্য ডেটাবেস। পিকেটি তাঁর ‘ক্যাপিটাল’ বইয়ে প্রি-ট্যাক্স ডেটা নিয়েই কাজ করেছেন। অর্থনীতিবিদ লুকাস চ্যান্সেল এবং টমাস পিকেটির মতে ২০১৪ নাগাদ ভারতের ক্ষেত্রে এই সূচকাংক বেড়ে প্রায় ০.৫০ বা তার  কাছাকাছি হয়েছে।[17]

    ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের আয় বৈষম্যের তালিকায় ভারতের নাম ক্রমশঃ ওপরের দিকে উঠছে।

    ফিসক্যাল ডেফিসিট বা রাজকোষ ঘাটতি

    এটি একটি সূচক যা সরকার আয়ের থেকে ব্যয় কত বেশি করছে বা ধার করে কতটা খরচা করছে তা বোঝায়। এই ধার মোট জিডিপি’র কত প্রতিশত তা সরকারের বিত্তীয় নিয়ন্ত্রণ কত দৃঢ় সেটা বোঝায়। আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন রেটিং এজেন্সিগুলো -- মুডিজ, ক্রাইসিল, এস অ্যান্ড পি গ্লোবাল, ইক্রা, ফিচ রেটিং ইত্যাদি —এর ভিত্তিতে সরকার কত সুচারুভাবে আর্থিক প্রশাসন চালাচ্ছে তার সার্টিফিকেট দেয় ।এর স্ট্যান্ডার্ড দর জিডিপির ৩% ধরা হয়। গত পাঁচবছরে এই দর ৩% থেকে ৪% এর মধ্যেই থেকেছে। ফলে বিভিন্ন রেটিং সংস্থা ভারত সরকারকে ভাল রেটিং দিয়েছে যা সরকার তার আর্থিক নীতির সমালোচনার মুখোমুখি হলে ঢালের মত ব্যবহার করেছে। এ নিয়ে পরে বিস্তারিত কথা বলা যাবে।

    কিছু অশনি সংকেত

    বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসা সরকা্রের এই ফিলগুড সময়ে --কাশ্মীরে ধারা ৩৭০ বাতিল করা, হিউস্টনে ‘হাউডি মোদী’ ইত্যাদি—কিছু অশনি সংকেত দেখা যাচ্ছিল। এক, বিশ্বজোড়া মন্দার প্রভাব ভারতের বাজারে ছড়িয়ে পড়া। দুই, বেকারত্বের বৃদ্ধি।

    মন্দার মার

     হঠাৎ সবার চোখে পড়ল যে বাজারে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা ক্রমশঃ দ্রুতহারে কমছে। ইনফ্লেশন বা মুদ্রাস্ফীতি লাগামছাড়া নয়, ৪% এর আশেপাশে, কিন্তু লোকে কিনছে কম। গাড়ি থেকে বাড়ি,  জামাকাপড় থেকে বিস্কুট –সর্বত্র ক্রেতার উপস্থিতি আগের মত নেই। বিজলির চাহিদা, লোকের সেভিং বা জমাপুঁজি তাও বাড়ছে না।

    সরকার বললেন – এ তো এখন গোটা বিশ্বজুড়ে চলছে, আমরা উন্নতদেশগুলোর তুলনায় ভালো আছি।

    নিন্দুকেরা বলল – ২০১৬ সালে রাতারাতি ডি-মনিটাইজেশন বা ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিলের ফলে মার খেয়েছে ভারতের অর্থনীতির অসংগঠিত ক্ষেত্র ।এরা নগদে লেনদেন করে।তার ওপর গ্রামেগঞ্জে ডিজিটাল নেটওয়ার্ক না থাকায় নতুন জি এস্ টি (গুডস অ্যান্ড সার্ভিস ট্যাক্স) সামলাতে না পেরে অনেক ছোট ছোট দোকানপাতির ব্যবসা মার খেয়েছে, লোক কাজ হারিয়েছে।

    কর আদায়

    কয়েকবছর ধরেই কর আদায়ে ভাঁটা পড়ছিল। গত আর্থিক বছরে (২০১৯-২০০ কর্পোরেট এবং ব্যক্তিগত আয়কর মিলে আদায়ের লক্ষ্য ছিল মোট ১১.৭ লাখ কোটি টাকা, আদায় হল ৯.৫ লাখ অর্থাৎ লক্ষ্যের ৮১%।[18]

    অপ্রত্যক্ষ কর বা জিএসটি আদায় হল ৯৭,৫৯৭ লক্ষকোটি, যা লক্ষ্যের থেকে ১ লক্ষকোটি কম।[19]

    ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ড এর স্টাডি টিম বলল ভারতের জিএসটি আদায় তার পোটেনশিয়ালের থেকে বেশ কম।[20]

    ভারতে বেকারত্ব

    ভারত সরকারের ২০১১ সেন্সাস অনুযায়ী  ভারতের রোজগারের ৯৩% হল অসংগঠিত বা ইনফর্মাল ক্ষেত্রে, অর্থাৎ শহুরে স্বরোজগারী বা ক্যাজুয়াল মজুরি পাওয়া শ্রমিকের দল—যাদের শ্রম আইনের রক্ষাকবচ নেই।[21]

    ওয়ার্ল্ড ব্যাংক রিপোর্ট  বলছে – এই কম মজুরিতে কাজ করা, অকুশল , ইনফর্মাল কাজের শ্রমিকেরাই ভারতের শ্রম বাজারে সবচেয়ে চোখে পড়ার মত।[22]

    সংগঠিত ক্ষেত্রে ২০১৪ পর্য্যন্ত ভারতে বেকারত্বের হার ছিল ২.৩%।  কিন্তু মোদী সরকারের ২০১৭-১৮ সালে ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে রিপোর্ট বলল – এই হার এখন ৬.১ % যা গত চারদশকে সবচেয়ে বেশি। সরকার গত নির্বাচনের আগে পর্য্যন্ত এই রিপোর্ট প্রকাশ করেনি। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পরে ওই রিপোর্টকেই সরকারিভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।[23]

    আমেরিকার পিউ রিসার্চ সেন্টার বলেছে “ প্রায় ১৮.৬ মিলিয়ন ভারতীয় কাজ হারিয়েছে এবং ৩৯৩.৭ মিলিয়ন খুব খারাপ শর্তে কাজ করছে এবং কাজ হারানোর ভয়ে খাটছে”।[24]

    ব্যাংক

    গত কয়েক বছরে ভারতের ব্যাংকিং সেক্টর বড় সংকটের মুখোমুখি হয়েছে-- একের পর এক ফ্রড বা জোচ্চুরি আর অনাদায়ী লোন (এন পি এ ) ক্রমাগত বেড়ে চলা।

    ধোকাবাজি/জালিয়াতি/ জোচ্চুরি ইত্যাদি

    রিজার্ভ ব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী বর্ষ ২০১৮-১৯ সালে ব্যাংকে ফ্রড বা ধোঁকাবাজির ঘটনা ৭৪% বেড়ে গেছে।[25]

    বর্ষ                কেস সংখ্যা                       রাশি (কোটি টাকায়)

    ২০১৭-১৮        ৫৯১৬                              ৪১, ১৬৭

    ২০১৮-১৯        ৬,৮০১                             ৭১, ৫৪৩

    চন্দা কোচার,  প্রাক্তন এমডি,আই সি আই সি আই ব্যাংক, নিজের স্বামী দীপক কোচারএর কোম্পানিকে অনায্য লোন দেওয়া এবং সেই লোন এন পি এ হওয়ার ষড়যন্ত্রে সামিল হোয়ার দায়ে অভিযুক্ত। উনি ২০১১ সালে পদ্মভূষণ পেয়েছিলেন।

    জয় টমাস, পাঞ্জাব অ্যান্ড মহারাষ্ট্র কো-অপারেটিভ  ব্যাংকের প্রাক্তন এমডি , ৪.৩৩৫ কোটি চিটিং কেসে গ্রেফতার হয়েছেন।

    বিজয় মালিয়া, নীরব মোদী, মেহুল চোকসি এবং আরও ২৮জন রাঘববোয়াল ব্যাংক- লোন ডিফল্টার্স দেশ ছেড়ে আগেই পালিয়ে গেছেন। তারপর সরকার ৫০ কোটি টাকার বেশি যাদের লোন এনপিএ হয়েছে এমন নতুন ৯১জনের লিস্টি দিয়ে ব্যাংককে বলেছে ওদের পাসপোর্টের খুঁটিনাটি জানাতে।[26]

    এনপিএ, রাইট অফ  ইত্যাদি

    গোদা বাংলায় বললে এন পি এ বা নন-পারফর্মিং অ্যাসেট মানে যে ব্যাংক লোন অ্যাকাউন্টে নিয়মমত ইন্সটলমেন্ট বা সুদ আদায় হচ্ছে না।এতে ব্যাঙ্কের ডাবল লোকসান।

    এক, এ বছরের পাওনা আয় এল না। দুই, সঞ্চিত লাভ থেকে একটি অংশ এর জন্যে সরিয়ে আলাদা খাতায় রাখতে হবে।

    ৩১ মার্চ ২০১৮তে গোটা ব্যাংকিং সেক্টরের এনপিএ   ১০.৩৫ ট্রিলিয়ন টাকা।এর ৮৫% পাবলিক সেক্টর ব্যাংকের—যেমন স্টেট  ব্যাংকের এনপিএ ২.২৩ ট্রিলিয়ন।

     সমগ্র লোনের মধ্যে এনপিএর অনুপাত ২০০৮ সালে ছিল ২.৩%; ২০১৭ সালে গিয়ে দাঁড়াল ৯.৩% ।

    মোদীজির  ফ্ল্যাগশিপ প্রোজেক্ট মুদ্রা লোন যাতে ১০ লাখ পর্য্যন্ত বিনা কোল্যাটারাল  স্মল এন্ড মাক্রো এন্টারপ্রাইজ সাড়ে চার বছরে ১৭০০০ কোটি এনপিএ। । এই মুদ্রা লোনের এনপিএ হবার সম্ভাবনা নিয়ে তৎকালীন রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর রঘুরাম রাজন সতর্ক করেছিলেন।[27] কৃষি ক্ষেত্রে ৯.৪২ ট্রিলিয়ন লোনের ১.০৪ ট্রিলিয়ন মিড ২০১৯শেই এনপিএ হচ্ছিল। ফলে  এনপিএ ১১%। গত পাঁচ বছরে ২.৫ লাখ ট্রিলিয়ন টাকা  কৃষি ঋণ মকুব। নভেম্বর ২০১৮তে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অজানা লোকজনকে ছোট ছোট লোন  যা প্রধানমন্ত্রী শুরু করিয়েছিলেন আগামী দিনের জন্যে খতরা। [28]

    রিজার্ভ ব্যাংকের ফিনানশিয়াল স্ট্যাটাস রিপোর্ট বলছে এবছরে এনপিএ মার্চে ৯.৩% থেকে বেড়ে সেপ্টেম্বর ২০২০তে   গোটা ব্যাংক ঋণের ৯.৯% হয়ে যাবে ।[29]

    রাইট অফ

    রাইট অফ করা মানে ময়লা ঝাঁট দিয়ে কার্পেটের তলায় লুকিয়ে রাখা।

     যে এনপিএ লোনটি আদায় করার কোন সম্ভাবনা নেই—বিজনেস লাটে উঠেছে, ঋণী/ গ্যারান্টর দেউলে হয়েছে , পালিয়ে গেছে বা মারা গেছে, ওর সম্পত্তি লুকিয়ে বেচে দিয়েছে বা আজ তার মূল্য অকিঞ্চিৎকর – তাকে আগে ব্যাড ডেট প্রভিসন ( সঞ্চিত লাভ থেকে সরিয়ে রাখা রাশি) দিয়ে অ্যাডজাস্ট করে ব্যালান্স শীট থেকে মুছে দেওয়া। ফলে ব্যালান্স শীট বেশ তকতকে দেখাবে, এন পি এ কম দেখাবে , কিন্তু লাভ মার খাবে। এটা ঋণ মাফ নয় বটে, কিন্তু কোন অ্যাকাউন্ট একবার রাইট অফ হলে তার পেছনে কেউ খামোকা পরিশ্রম করে না। আজ পর্য্যন্ত রাইট অফ খাতায় আদায়ের গড় হল ১০%।

    এর মধ্যে ব্যাংকিং সেক্টরে ২.৫৪ লাখকোটি এন পিএ  রাইট অফ করা হয়েছে।[30]

    সাকেত গোখলে বলে একজন আরটিআই কার্যকর্তা রিজার্ভ ব্যাংকের কাছে আরটি আই পিটিশন দিয়ে সবচেয়ে বড় ৫০টি ব্যাংক লোনের উইলফুল ডিফল্টার ( যারা ইচ্ছে করে ঋণ শোধ করেনি) এর নাম যাদের ঋণ রাইট অফ করা হয়েছে জানতে চাইলে রিজার্ভ ব্যাংক ১৬ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০তে উত্তর দেয় যে এই সূচনা আইনতঃ দেওয়া সম্ভব নয় । শেষে আদালতের হস্তক্ষেপে ২৪ এপ্রিলে সেই লিস্ট পাওয়া গেলে শ্রীগোখলে লিস্টটি মিডিয়ার কাছে পেশ করেন। তাতে দেখা যাচ্ছে যে বর্ষ ২০১৯-২০তে ওই ৫০ জনের অনাদায়ী লোন রাইট অফ (ব্যালান্স শীট থেকে মুছে দেওয়া) করার ফলে ব্যাংকগুলোর ডুবেছে ৬৮৬০৭ কোটি টাকা।[31]

    দেখা যাচ্ছে যে ওই লিস্টের শীর্ষে রয়েছেন মেহুল চোকসি’র গীতাঞ্জলী জুয়েলােখা(৫৪৯২ কোটি টাকা) এবং ওর আরও তিনটি ফার্ম। মেহুল, নীরব মোদী এরা অনেক আগেই দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন। চারনম্বরে আছে রুচি সোয়া(২,২১২ কোটি )। এই ফার্মটি বাবা রামদেব এর পতঞ্জলি গত সেপ্টেমবরে ৪২০০ কোটি টাকায় কিনে নিয়েছে। রামদেবের ঘোষণা অনুযায়ী ৪০০০ কোটি টাকা দিয়ে রুচি সোয়ার পাওনাদারদের চুকিয়ে দেওয়া হবে। সে না হয় হল, কিন্তু ব্যাংকের বকেয়া টাকা কেউ চোকায়নি। অথচ রুচি সোয়া বাবার অধিগ্রহণের পর মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। স্টক এক্সচেঞ্জে নাম লিখিয়েছে।[32]


    [1]  দি হিন্দু (ডিজিটাল), ২০-০৫-২০২০।

    [2] ভেঙ্কটেশ নায়েকের ২১শে এপ্রিল ২০২০ পিটিশন ও তার উত্তর।

    [3] স্ক্রোল. ইন ১৮ই মে, ২০২০।

    [4] ঐ ।

    [5] ঐ ।

    [6] ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ৪র্থ মে, ২০২০।

    [7] ঐ , ২০ মে, ২০২০।

    [8] হিন্দুস্থান টাইমস, ১৬ই মে, ২০২০।,

    [9] দি ইকনমিক টাইমস, ১লা মার্চ, ২০১৭।

    [10] ঐ; ২৩ এপ্রিল, ২০২০।

    [11] ইকনমিক টাইমস, ৯ জানুয়ারি ২০২০।

    [12] ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, ২০১৯

    [13] ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ড, ২০১৯।

    [14] ঐ ; ২০১৪।

    [15] তথ্যসূত্রঃ বিশ্বব্যাংক এবং ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড।

    [16] বিজনেস টুডে, ৩০ জানুয়ারি ২০১৯; ইকনমিক টাইমস, ২০ জানুয়ারি , ২০২০ এবং পিটি আই।

    [17] মুথুকুমার; ৮ জানুয়ারি, ২০১৮তে হিন্দু গ্রুপের “বিজনেস লাইন” পত্রিকা (ডিজিটাল)।

    [18]  ব্লুমবার্গকুইন্ট, ১৭ই মার্চ, ২০২০।

    [19] ইকনমিক টাইমস, ১ এপ্রিল, ২০২০।

    [20] ঐ, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০।

    [21] “কমব্যাটিং ইউথ  আনএমপ্লয়মেন্ট ইন ইন্ডিয়া” , প্রবীণ সিনহা, (মার্চ, ২০১৩), বার্লিন।

    [22]  ওয়ার্ল্ড ব্যাংক রিপোর্ট, ২০১০।

    [23] বিজনেস টুডে, ইন ; ১৪ই মার্চ, ২০১৯।

    [24] সার্ভে রেজাল্টস, পিউ রিসার্চ সেন্টার , ওয়াশিংটন ডিসি,; ২৫ মার্চ, ২০১৯।

    [25] ইকনমিক টাইমস, ; ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৯।

    [26] ঐ; ১৫ মার্চ, ২০১৮।

    [27] ডেকান হেরাল্ড, জানুয়ারি ১৯ ২০২০

    [28] ঐ; জানুয়ারি ১৯ ২০২০।

    [29] দীনেশ উন্নিকৃষ্ণান , মানিকন্ট্রোল ডট কম, ৪ মার্চ, ২০২০।

    [30] ইকনমিক টাইমস, ২রা অগাস্ট, ২০১৯।

    [31] ফিনানশিয়াল এক্সপ্রেস, ২৮শে এপ্রিল, ২০২০।

    [32]  সাকেত গোখলের টুইটার এবং এনডিটিভিকে দেওয়া ইন্টারভিউ।

    এই পৃষ্ঠভূমিতে ব্যাংকিং সেক্টরে লোন দেওয়া কমে যাচ্ছে। একে বাজার ঠান্ডা; তায় প্রতিবছর এনপিএ আর ফ্রড। ফলে ব্যাংকের ভাঁড়ারে পয়সা যথেষ্ট থাকলেও লোন দেবার ব্যাপারে ওরা খুব মেপে মেপে পা ফেলছে।

    এবার দেখতে হবে এই সংকট থেকে বেরোতে সরকার কী করলেন। তাই ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সালে বিত্তমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বাজেট খুব গুরুত্বপূর্ণ। তার একদিন আগে ভারতে প্রথম করোনা আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। আগামী কিস্তিতে সীতারামনের বাজেট।

                                                                 (চলবে)

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Sekhar Sengupta | ১২ জুলাই ২০২০ ১৩:৪৯732382
  • রঞ্জ,  তুই যে লিখলি-"  আজ পর্যন্ত রাইট অফ খাতে আদায়ের গড় হলো ১০%।" এই তথ্যের সূত্রটা কী? সূত্রটা পেলে লেখাটা শেয়ার করব।

    লেখাটা বেশ ভাল এগোচ্ছে। চালিয়ে যা।

  • Sekhar Sengupta | ১২ জুলাই ২০২০ ১৪:০২732384
  • আর একটা কথা- লোন ওয়েভারের  পরিমাণ সংক্রান্ত  কোনও তথ্য কি জানা আছে?

  • রঞ্জন | 122.180.216.75 | ১২ জুলাই ২০২০ ১৭:৩৭732385
  • @শেখর,

                                                                                                                                 (কোটি টাকায়)

    বর্ষ                         রাইট অফ করা লোন                         রিকভারি                    

    ২০১৬                       ৫৬,৮৪২                                          ৮,০৩৩            

    ২০১৭                       ৭৯,০৪১                                            ৮,৫৩৬

    ২০১৮                    ১,২৪,২৩৬                                        ১০,২৭০             

    ২০১৯                   ১,৭২,৪৬৫                                         ১৮, ৮২০

    মোট                  ৪,৩২,৫৮৪                                         ৪৫, ৬৫৯     (১০.৫৫%)

    সূত্রঃ নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস (ডিজিটাল) ৮ মে, ২০২০তে কুমার বিক্রমের রিপোর্ট, পত্রিকাটি এই তথ্য একটি আর টি আই করে পেয়েছে। এছাড়া এই ডেটাগুলো ইকনমিক টাইমসের বা ফিনানশিয়াল এক্সপ্রেসের বিভিন্ন সংখ্যাতেও বেরিয়েছে। বিভিন্ন চ্যানেলে প্যানেল ডিসকাসনেও 'প্রায় ১০%'  এ'রকম বলা হয়েছে। প্রায় ১১% বললে বোধহয় আরও ঠিক হত ।

  • রঞ্জন | 122.180.216.75 | ১২ জুলাই ২০২০ ১৭:৪৭732386
  • এছাড়া সেপ্টেম্বর ২০১৯শে রাইট অফ ৬৮, ৬০৭ কোটি টাকা।

    সূত্রঃ সাকেত গোখলের আর টি আই ,  ২৮ এপ্রিল,.২০২০; ফিনানশিয়াল এক্সপ্রেস।

  • Sekhar Sengupta | ১২ জুলাই ২০২০ ২২:২১732388
  • রঞ্জন

    লোন ওয়েভারের কোনও ডাটা থাকলে দিস।

  • রঞ্জন | 182.64.117.165 | ১৪ জুলাই ২০২০ ১৮:২৭732401
  • @শেখর,

    দেশব্যাপী লোন ওয়েভার --আমার যতদূর মনে পড়ছে-- শুধু কৃষি ঋণের ক্ষেত্রেই হয়েছিল। ১৯৯০ সালে ভিপি সিং এর জনতা  দলের সরকার প্রথম ১০০০০ কোটি টাকার "ঋণ মাফি" স্কীম আনে । আমাদের ডেটা  তৈরি করে রিজার্ভ ব্যাংকে পাঠাতে ঘাম ছুটে গিয়েছিল।

    আর মনমোহন সিং এর সময়ে ২০০৮ সালে  হয়েছিল ৫২৫.১৬ বিলিয়ন কৃষি ঋণ মাফ।  তবে ২০১৪-১৫ থেকে ১০ টি রাজ্য আলাদা করে কৃষি লোন ওয়েভার ঘোষণা করেছিল। যেমন অন্ধ্র, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, উত্তর প্রদেশ, পাঞ্জাব, কর্ণাটক, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিশগড়।  মোট রাশি ২.৩ লক্ষ কোটি টাকা, মানে ২.৩ বিলিয়ন। তাতে অক্টুবর ২০১৯ পর্য্যন্ত খরচ হয়েছে ১.৪  বিলিয়ন (৬৩%)। সূত্রঃ রিজার্ভ ব্যাংক ডেটাবেস।

    লোন ওয়েভার নিয়ে বেশিরভাগ ইকনমিস্ট এবং প্রতিষ্ঠান খাপ্পা। পক্ষে বিপক্ষের যুক্তি নিয়ে ভালো লেখা দি হিন্দু পত্রিকায় ২৬ জানুয়ারি, ২০১৯শে রামকুমারের প্রবন্ধটি।

    আমার ব্যক্তিগত মতে --যোগেন্দ্র যাদবের মত--  কৃষিঋণ মাফ সমস্যার সমাধান নয় , তবে জরুরি তাৎকালিক রিলিফ। দরকার মার্কেটিংএবং প্রাইসিং এর ব্যবস্থায় পরিবর্তন। প্যারাসিটামলে জ্বর কমে, মূল অসুখ (টিবি, টাইফয়েড, ডেঙ্গি যাইহোক) সারে না । তাবলে কি জ্বর বাড়লে মূল অষুধের সঙ্গে প্যারাসিটামল দেওয়া হবে না ? ঋণ মাফি হল প্যারাসিটামল।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন