এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • সোশ্যাল ওয়ার্ক

    সায়ন্তী মন্ডল
    অন্যান্য | ১১ জুন ২০২০ | ১০০৭ বার পঠিত
  • সোশ্যাল ওয়ার্ক
    নেরাদাদের পাড়ার জাগৃতি সঙ্ঘের নেরাদা প্রেসিডেন্ট। কোন কাজে নেরাদা নেই ,দুর্গাপূজা থেকে সরস্বতীপূজা , নেরাদার ভীষণ ব্যস্ততা যায়। তাছাড়া সারাবছর কিছু না কিছু লেগেই আছে। সামাজিক কাজকর্মে নেরাদার ক্লাবের জুড়ি মেলা ভার। লোকাল কাউন্সিলার দয়ারাম বক্সি বেশ কয়েকবার এসেছেন নেরাদাদের ক্লাবের অনুষ্ঠানে। বেকার অবস্থানেরাদা ছিল সবসময়ের সদস্য। চাকরি বিয়েথা করার পর সারাক্ষণ সময় পায়না।এখন জগা পলটু এরা সবসময়য়ের সদস্য।শুধু সদস্য নয় ,নিবেদিতপ্রাণ সদস্যও।
    তা এই লকডাউন ,করোনায় নেরাদার জাগৃতি ক্লাব কি চুপ করে বসে থাকতে পারে।জগা কথাটা তুলল
    - কিছু একটা করা চাই গুরু ,মান সম্মান থাকছে না গুরু।
    -কি হল?নেরাদা গম্ভীর ভাবে জানতে চায়।
    -কাল ফেসবুকে ছবি দেখনি? জাগ্রুক ক্লাব গরীব্ দের ত্রাণ দিচ্ছে।
    -কিসের ত্রাণ?
    - গুরু করোনা ত্রান।জগা অসহিষনু হয়ে ওঠে।
    -বটে।নেরাদা একটু সিরিয়াস হয়।বিষয়টা ভাবতে হচ্ছে।
    তারপর যেমন ভাবনা তেমন কাজ। জগা তার দলবল নিয়ে মাঠে নেমে পড়ে। টিভিতে করোনা নিউজ শুনে শুনে বাঙালি ততদিনে আত্মগ্লানিতে ভুগছে, টাটা হাজার কোটি, সোরভ পাঁচশ কোটি দিয়েচে ত্রাণ তাহবিলে । জগারা তাই কর্তাকে পাঁচশ চাইলে কর্তা যদিবা একটু কমাতে চাই ,গিন্নি পিছন থেকে বলে “ তোমার সবেতেই কিপটেমি,” বাধ্য হয়ে কর্তা পাঁচশ টাকার নোট বের করে আর বলে” করোনা বলে দিলাম” ।জগা বলে “জীবনে একবারই দেবেন ,এই চাঁদা আর সামনের বছর দিতে হবেনা, ততদিনে ভ্যাকসিন বেড়িয়ে যাবে কাকু”।বাকি সব সরঞ্জাম যা লাগে এই যেমন একটা মঞ্চ মাইক চেয়ার টেবিল সেসব পাড়ার বিশেদার ডেকরেটর থেকে তুলে আনল জগারা। কিন্তু সমস্যা হল গরীব দুঃস্থ লোক কোথায় পাওয়া যায়।জাগারুক ক্লাব যে পাড়ায় সেটার পিছনে একটা বস্তি আছে।তারা তো সব জাগরুকের দুঃস্থ ।এদিকটাতে সেরকম বস্তি নেই। জাগারুকের দুঃস্থদের ধরে আনলে একটা হাতাহাতি হতে পারে।তাহলে উপায়।নেরাদা বলল “ কোয়ই বাত নেহি,আমরা বাইরে থেকে দুঃস্থ আনব।“
    প্রোগ্রামের দিন সকাল থেকে পাড়া সরগরম,মাইকে ঘন ঘন ঘোষণা হচ্ছে “ আপনারা সামজিক দূরত্ব বজায় রাখুন, আর একটু পরেই ত্রাণ বিতরন হবে।“ নেরাদা পাজামা পাঞ্জাবি পড়ে মুখে মাস্ক হাতে গ্লাভস লাগিয়ে রেডি হয়ে এল।এবার দয়াময় বক্সীকে পাওয়া যায়নি। জগা এসে বলল” লাইভ কভারেজ হবে গুরু, ইয়উ টিউবে ছাড়ব।“ চার পাশে চোখ বুলিয়ে দেখল বেশ কিছু লোক ,দেখতে গরীব, একটু দূরে দূরে বসে,মাহিলা পুরুষ দুই আছে। পাড়ার রিকশওয়ালা কে ধরে তার গ্রামের বাড়ি ওই নামখানার ওদিক থেকে এদের আনা।তার জন্য বংশী মানে রিকশওয়ালা বংশী কিছু চার্জ নিয়েছে। যাকগে সেসব কথা। পাড়ার লোকজনও কিছু জমায়েত হয়েছে।
    নেরাদা মঞ্চে উঠতেই মাইকে গলার জোর বাড়িয়ে দিল পলটু।“ আপনারা প্রস্তুত হন ,এখনই ত্রাণ বিলি শুরু হবে । আমাদের আজকের প্রধান ব্যক্তি ত্ত ক্লাবের প্রেসিডেন্ট শ্রীমান নেরাদা আপনাদের হাতে ত্রাণ তুলে দেবেন।“
    এটা কিরকম হল।নেরাদা এগিয়ে গিয়ে পলটুর মাথায় একটা গাট্টা মারল।“ কি রে, ভালো নাম টা বল।“
    পলটু হা করে তাকিয়ে থাকে। নেরাদা আস্তে বলে” শ্রীমান নরোত্তম চক্রবর্তী বল”।পলটু এই প্রথম নাম শুনে বলতে গিয়ে আবার হোঁচট খেল। ওদিকে লোকজন ছটফট করছে ,অনেক দূর ফিরতে হবে তাদের আবার।“
    নেরাদা ত্রাণ বিতরন শুরু করল। খাদ্যসামগ্রী ,মাস্ক, সানিটাইজার এইসব। ওদিকে ক্যামেরা চলছে। জগা বার বার সতর্ক করে দিচ্ছে “এই দিকে তাকাও, “। সমস্যা হচ্ছে লোকজন জিনিস নিয়ে সরে যেতে চাইছে, ওদিকে ক্যামেরাম্যান যতক্ষন ওকে না বলছে নেরাদা ততক্ষন জিনিস হাতছাড়া করতে পারছেনা।এই নিয়ে একটু টানাটানি হতে লাগল।যারা এসছিল তারা হাতে বড়বড় ঝোলা এনেছিল।তা একজন জিনিসপত্র ঘেঁটে দেখে বলল” কষ্ট করে আসলাম,এর থেকে আমাদের রেশনে বেশি চাল ডাল দেয়।“ একজন মাস্ক আর স্যানিটাইজার ফেরত দিয়ে বলল “এর বদলে আর এক প্যাকেট চাল দিন বাবু”।নেরাদা মনে মনে বলল” হতচ্ছারা বংশী , তোর রিকশার হাওয়া বের না করি তো আমার নাম নয়।“ লোকজন অনুযোগ করতে করতে বিদায় নিলয়।
    ত্রাণ বিলি শেষ হলে দেখা গেল যে লোকের তুলনায় জিনিসপত্র বেশি আনা হয়ে গেছে।বুদ্ধিমান পলটু সঙ্গে সঙ্গে ঘোষণা করল” এবার পাড়ার যারা বেকার তরুণ এবার তাদের ত্রাণ বিলি করা হবে”।পাড়ার ছেলেরা যারা জটলা করে এতক্ষণ মজা দেখছিল তারা লাইনে দাড়িয়ে গেল।নেরাদা হাসিমুখে কিন্তু ভিতরে গজরাতে গজরাতে বাকি জিনিস বিলোতে লাগল। শেষে লাইন যখন শেষ দেখা গেল সব শেষে জগা আর পলটু।জগা দাঁত বের করে বলল “ গুরু তোমার হাত থেকে নেব এর সাম্মানই আলাদা।“ পলটু বলল “ সানিটাইজার শেষ ….দুটো দাও গুরু।“
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন