এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • জার্মানি তে করোনার ইতিহাস ও বর্তমান

    subhra data লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ১৬ মে ২০২০ | ১৯৪৭ বার পঠিত
  • আমি থাকি উত্তর জার্মানির শহর লুবেক এ এদের বিখ্যাত মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি ইউ.কে.এস.এইচ এর ক্যাম্পাসে। তাই খুব কাছ থেকে দেখা আমার অভিজ্ঞতা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করছি। কয়েকদিন আগেই লেখা এই প্রবন্ধটি|

    জার্মানি তে করোনা প্রভাবের পটভূমি:

    সর্বপ্রথম ২৭ শে জানুয়ারি, জার্মানিতে বাভারিয়া অঙ্গরাজ্যের মিউনিখ শহরের পাশেই অবস্থিত ছোট্ট শহর স্টকডর্ফ এ স্থিত ওয়েবাস্টো নামে একটা গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরীর কোম্পানির হেডকোয়ার্টারে এক কর্মীর শরীরে প্রথমবারের মতো করোনা ভাইরাস পাওয়া যায়। তার কয়েকদিন আগে সেই জার্মান কর্মী সাংহাই থেকে আসা এক চাইনিজ মহিলা কর্মী র সঙ্গে একসাথে কাজ করেন একটি ওয়ার্কশপে ২১ শে জানুয়ারী। সেই চাইনিজ মহিলা কর্মী যদিও ২৩শে জানুয়ারী সাংহাই ফিরে যান। সেখানে তার করোনা টেষ্ট রিপোর্ট পজিটিভ বেরোলে তিনি জানান,তিনি জার্মানিতে ওয়ার্কশপে আসার আগেই তার মা বাবা উহান শহর থেকে সাংহাই তে তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। ২৯ শে জানুয়ারি জার্মান এয়ারলাইন্স কোম্পানি লুফথানসা তাদের চীন-জার্মানি রুট এর সমস্ত বিমান পরিষেবা বাতিল করে দেয়। ১ লা ফ্রেব্রুয়ারী জার্মান সরকার সমস্ত জার্মান নাগরিক যারা চীনে ছিলেন তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা শুরু করে ও দেশে ঢোকার পর তাদের কোয়ারান্টাইনে রাখতে শুরু করে। ২৫ শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্তও ১৯ জন পজিটিভ কেস রিপোর্টেড।
    কিন্তু ২৬ শে জানুয়ারী পশ্চিম জার্মানীর রাইন নদীর ধারে উত্তর রাইন ওয়েস্টফালিয়া অঞ্চলে আরও এক দম্পতি অর্থাৎ দুইজনের মধ্যে করোনা ভাইরাস দেখা গেল। জানা গেল তারা আগের সপ্তাহে ওই অঞ্চলের একটি স্থানীয় বড়ো উৎসবে যোগ দেন। এই উৎসব এর নাম কার্নিভাল! বর্তমানে জার্মানি তথা রাইনল্যান্ড-এর সবচেয়ে বড় উৎসব ‘কোলন কার্নিভাল। এই উৎসব চলে প্রায় এক সপ্তাহ, যার মধ্যে সোমবার এদের বিরাট থিম-কেন্দ্রিক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বেরোয় ঠিক সকাল ১১টা বেজে ১১ মিনিটে। অসংখ্য দেশি-বিদেশি দর্শক সমবেত হন এই শোভাযাত্রা দেখতে। এতো বলার মধ্যে দিয়ে যা বোঝাতে চেয়েছি তা হলো, এই উৎসবের জনপ্রিয়তা বা পরিবেশ যা করোনা ছড়ানোর আদর্শ পরিবেশ।
    ২৯ শে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত মোট ৬০ জন করোনা পজিটিভ কেস পাওয়া গেল যারা মিউনিখের ওই কোম্পানী বা রাইন ওয়েস্টফালিয়া অঞ্চলের ওই দম্পতির সঙ্গে কোনো না কোনো ভাবে যুক্ত। ১ লা মার্চ হ্যামবার্গ, ব্রেমেন, লোয়ার স্যাকশনি, বার্লিন অঞ্চল থেকেও একজন করে করোনা পজিটিভ রোগীর সন্ধান পাওয়া গেল! অর্থাৎ, জার্মান সরকার এর আর বুঝতে বাকি থাকলো না যে, জার্মানি তে করোনার কমিউনিটি স্প্রেড শুরু হয়ে গেছে। এরপর পর্যায়ক্রমে, ১৬ই মার্চ ৭০০০ জন, ১৮ ই মার্চ ১২০০০ জন ও ২১ মার্চ ২০০০০ জন মানুষ করোনা পজিটিভ হলেন। ২২ মার্চ থেকে জার্মানি তে লক ডাউন শুরু হল। ৮ কোটি ৩০ লক্ষ জনসংখ্যার দেশ এই জার্মানি। এখনও পর্যন্ত ১ লক্ষ ৫৬ হাজার জনের কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে। তারমধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১ লক্ষ ১০ হাজার জন আক্রান্ত। অর্থাৎ ৭০% রোগীকে এরা সুস্থ করে তুলেছেন। মৃত্যুর হার অন্যান্য ইউরোপিয়ান দেশের তুলনায় অনেক কম। এখন সেই সংখ্যাটা ৫৮০০ জন অর্থাৎ ৪% এর ও কম। চীন এবং ইরানেও এই সংখ্যা যথাক্রমে ৪% ও ৬%। পৃথিবী তে যে ছয় টি দেশে সংক্রমণ ১ লক্ষ ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে, তাদের মধ্যে আমেরিকায় এই মুহুর্তে সংক্রামিতর সংখ্যা সবথেকে বেশী, ৯ লক্ষের ও বেশী। সুস্থ হয়েছেন ১ লক্ষ ১৮ হাজার জন রোগী। অর্থাৎ মাত্র ১৩%। মৃতের সংখ্যা ৫৪ হাজার অর্থাৎ প্রায় ৬% । ইতালি, স্পেন ও ফ্রান্সে সুস্থ হয়েছেন যথাক্রমে ৩২%, ৪২% ও ২৮% এবং এই দেশগুলিতে মৃত্যুর হার যথাক্রমে, ১১%, ১০% ও ১৫%। পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যাচ্ছে জার্মানি অন্যান্য দেশের তুলণায় ভালো অবস্থানে আছে। জার্মানির এই সাফল্যের কারণ কী ?

    সৎ, স্বচ্ছ, মানবদরদী ও দূরদর্শী রাজনৈতিক নেতৃত্ব:

    সর্বপ্রথমেই উল্লেখ্য, এতো বড়ো একটি প্যানডেমিক মোকাবিলায় সবচেয়ে বড়ো ভূমিকা অবশ্যই নিতে হয় যেকোনো দেশের সরকার কে। জার্মানির রাজনৈতিক নেতৃত্ব অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সে দায়িত্ব পালন করছেন। করোনা ছড়িয়ে পড়ার পর ১৮ই মার্চ টেলিভিশনে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল অত্যন্ত ইতিবাচক ও বাস্তবভিত্তিক এক বক্তৃতা দেন জনগনের উদ্দেশ্যে। সেখানে তিনি জোর দেন গণতন্ত্র ও স্বচ্ছতার উপর। তিনি স্পষ্টই বলেন করোনা মোকাবিলায় তার সরকার কোনো তথ্য গোপন করবেন না। বরং চরম বাস্তববাদীতার পরিচয় রেখে তিনি জনগন কে বলেন “আপনারা ভয় পান”। তিনি আরো বলেন “দেশের ৬০-৭০% জনগণ আক্রান্ত হতে পারে। তাই এটা সবার ভয় পাওয়ার বিষয়। কিন্তু একে ভাগ্যের উপর না ছেড়ে, আমরা জনগণের স্বার্থে সবরকম ভাবে মোকাবিলা করবো। এ বিপদ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানির কাছে সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জ!”
    শুধু মার্কেল ই না, সব রাজনৈতিক নেতৃত্ব ই অত্যন্ত পরিশীলিত, দায়িত্বশীল ও মানবিক আচরণ করেছেন। কোথাও ষড়যন্ত্র না খুঁজে, একে অপরকে দোষারোপ না করে, সবাই একযোগে করোনা প্রতিরোধে মনোযোগ দিয়েছেন। মানবতার উদাহরণ স্বরুপ জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক ভাল্টার স্টাইনমায়ার বলেছেন, এটা কোনো জাতি বা সৈনিকের বিরুদ্ধে লড়াই নয়, এটা মানবতা রক্ষার লড়াই। আর তাই মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করেও, করোনা মোকাবিলার স্বার্থে, জার্মানি ইরানকে চিকিৎসা সরঞ্জাম সাহায্য পাঠিয়েছে। জার্মানি, নিজেদের সামলে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে স্পেন, ইতালি থেকে করোনা রোগী দের নিয়ে এসে চিকিৎসা করছে । এখানে সরকারি হাসপাতাল গুলো তে হ্যালিপ্যাড আছে, যেখানে সারাবছর ই দূরের গ্রাম থেকে রোগী দের হেলিকপ্টারে করে নিয়ে আসা হয় সম্পূর্ণ সরকারী খরচে।
    জার্মানির রাজনৈতিক নেতারা জনগণ এর বিপদ কে এতোটাই নিজেদের বিপদ মনে করেন ও জনগণের স্বার্থরক্ষা করাকে এতোটাই দায়িত্বের বলে মনে করেন যে, এই করোনার মতো বিপদ থেকে জনগণ কে রক্ষা করতে পারবেন কিনা, তাদের আশা পূরণ করতে পারবেন কিনা এই আশঙ্কায় জার্মানির হেসে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী থমাস শেফে আত্মহত্যা করে বসেন। এটি ব্যক্তিগত ভাবে তার ভুল সিদ্ধান্ত হলেও এ থেকে বোঝা যায় জার্মান রাজনীতিক রা এই করোনা পরিস্থিতি কে কতোটা গুরুত্বের সঙ্গে দেখেছেন। রাজনৈতিক নেতারা দেশের বিভিন্ন দক্ষ পেশাজীবি ও গবেষক দের সঙ্গে নিয়ে কাজ করেছেন ।

    সম্পূর্ণ বিজ্ঞান ভিত্তিক পদক্ষেপ নেওয়া:

    জার্মানির চান্সেলর অ্যাঞ্জেলা ডরোথিয়া মার্কেল নিজে পি.এইচ.ডি করেছেন কোয়ান্টাম কেমিস্ট্রি নিয়ে। তারপর বেশ কয়েকবছর গবেষক হিসাবে কাজ করেছেন রাজনীতি তে আসার আগে। মার্কেল করোনা মোকাবিলার জন্য চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় পরিকল্পনা নিচ্ছেন দেশের বিভিন্ন গবেষক বিজ্ঞানী দের সঙ্গে আলোচণা করে। এবিষয়ে উল্লেখ্য জার্মানির সংক্রমণ রোগ বিষয়ের গবেষণা কেন্দ্র রবার্ট কচ ইনস্টিটিউটের সভাপতি অধ্যাপক লোথার ভিলার করোনা ভাইরাস এর সংক্রমণ, তার প্রতিরোধ ও লকডাউন বিষয়ে যে গবেষণালব্ধ মতামত দিচ্ছেন, সরকার সেটাকেই সরকারের মতামত হিসাবে স্বীকৃতি দিচ্ছেন। আমার এক বাঙালী বন্ধু তন্ময় মিত্র এখন জার্মানির হেলমল্ট সেন্টার ফর ইনফেকশাস ডিজিজ এ সায়েন্টিস্ট। তাদের গবেষণা সংক্রামক রোগের সংক্রমণ কিভাবে ঘটে সেবিষয়ে গাণিতিক নিয়ম খুঁজে বের করা। তাদের টিম এর গবেষণালব্ধ তত্ত্ব জার্মানির সরকার স্বীকৃতি দিয়েছে। প্রতিটি রাজ্যে নিয়মিত পাওয়া তথ্য থেকে ওদের ম্যাথমেটিক্যাল মডেল কাজে লাগিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, যে কতোগুলো হাসপাতাল ও আই সি ইউ বেড রেডি রাখতে হবে সামনের দিনগুলোর জন্য। আর তার ভিত্তিতেই ঠিক করা হচ্ছে লক ডাউন কতোদিন চালানো দরকার।
    করোনা প্রতিরোধে জার্মানি মূলত তিনটি পন্থা অবলম্বন করেছে ১) অনুসন্ধান ২) আইসোলেশন ও ৩) রোগীর অবস্থা অনুযায়ী চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান।
    ইউরোপের সর্ববৃহত ইউনিভার্সিটি হাসপাতাল “বার্লিন চ্যারিটি হাসপাতাল” এর ভাইরোলজি ডিপার্টমেন্ট এর ডিরেক্টর ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টিয়ান ড্রসটেন জার্মানির করোনা মোকাবিলা টিম এর মুখ্য দায়িত্বে আছেন। তার মতে, জার্মানিতে মৃত্যুহার এত কম হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে জার্মানিতে প্রচুর পরিমাণে করোনার ল্যাব টেস্ট করানো হচ্ছে। দ্রুত ও বিস্তৃত পর্যায়ে পরীক্ষা ও চিকিৎসা ই জার্মানির সাফল্যের মূল মন্ত্র। কোভিড-১৯ আক্রান্তে কোনো উপসর্গ দেখা দিলে তাৎক্ষণিক টেস্ট করানো, টেস্ট পজিটিভ হলে সেই ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা সম্ভাব্য সবার টেস্ট করানো হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে জার্মানি প্রায় ৫ লক্ষ করে টেস্ট করাচ্ছে। ইতিমধ্যে ২০ লক্ষের ও বেশী টেষ্ট করে ফেলেছে জার্মানি। অধিকাংশ হাসপাতালেরই করোনা পরীক্ষার সুবিধা রয়েছে। যদিও, জার্মানিতে মোট পরীক্ষার ৩৬ শতাংশ বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে হয়েছে। এই টেষ্ট সম্পূর্ণ ভাবে বিনামূল্যে। রোগী দ্রুত শনাক্ত করায় নিরাময়ও দ্রুত সম্ভব হচ্ছে। এই টেষ্টের প্রয়োজনে এপ্রিলের শুরু তেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর দের কাছে আবেদন জানানো হয়, যে, যেসকল প্রফেসর আর টী পি সি আর মেশিন তাদের গবেষণার জন্য ব্যবহার করেন সেগুলি করোনা টেষ্ট এর জন্য তারা হাসপাতাল গুলি কে দিযে সাহায্য করতে। সকলেই সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন।
    জানুয়ারী মাসেও জার্মানি তে মোট ২৮০০০ আই.সি.ইউ বেড থাকলেও করোনা মোকাবিলায় সরকার আরও ১২০০০ নূতন আই.সি.ইউ বেড যোগ করেছে। এখন প্রতি লাখ জনসংখ্যায় ৫০ টি করে আই.সি.ইউ বেড জার্মানি তে। সেখানে আমাদের দেশে ১৩০ কোটি মানুষের জন্য ৯৫০০০ এর মতো বেড , অর্থাৎ প্রতি লাখ জনসংখ্যায় মাত্র ৭ টি বেড। জার্মানি তে ২৮০০০ আই সি ইউ বেড এর মধ্যে ২৫০০০ ই ভেন্টিলেটর যুক্ত ছিল। তারপরেও অটোমোবাইল কোম্পানিগুলোকে ভেন্টিলেটর বানাতে উৎসাহিত করছে জার্মান সরকার। এছাড়া স্বাস্থ্যকর্মীরা যেহেতু ভাইরাস এ আক্রান্ত হওয়া ও ছড়ানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকে, তাই প্রায়ই তাদের ব্লক টেষ্ট করা হচ্ছে ।

    অর্থনীতির বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনা:-

    লক ডাউনের ফলে সাধারণ মানুষ যে অর্থনৈতিক ক্ষতির মধ্যে দিয়ে যাবে, সেদিকেও সরকার সমান ভাবে নজর দিয়েছেন। জার্মান সরকার মার্চেই নাগরিক দের অর্থনৈতিক ভাবে আশ্বস্ত করতে ৭৫০ বিলিয়ন ইউরোর (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৬০ লক্ষ কোটি টাকা) সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করে। লক ডাউনের সঙ্গে সঙ্গেই দেশের অধিকাংশ কলকারখানা, ছোট ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শ্রমিক, কর্মচারী, কর্মকর্তা রা যারা এইসব জায়গায় কাজ করতেন অনেকের ই বেতন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। রেস্টুরেন্ট, দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যাদের কাজ নেই এবং কোয়ারান্টিনের কারণে যেসব কর্মী কাজে যোগ দিতে পারছেন না সরকার এদের বেতনের ৬০-৭০% এর দায়িত্ব নিয়ে, প্রতিমাসে এদের বেতন দিয়েছে। এমন কি যারা রোজগারের অভাবে বাড়ি ভাড়া দিতে পারবে না, তাদের জন্য সরকার বাড়ি ভাড়া ও দেবে। এর বাইরেও ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের ১৫ হাজার ইউরো পর্যন্ত অফেরতযোগ্য অনুদান দেওয়ার সাথে সাথে ১০ বছর মেয়াদি বিনা সুদে ৫০-৮০ হাজার ইউরো পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হয়েছে। বড় শিল্পের জন্য সীমাহীন ঋণদানের কথা ঘোষণা করেছে। ব্যাঙ্ক এ লোন ঋণ করতে দেরী হলেও দিতে হবে না বাড়তি জরিমানা। এছাড়া প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য শিক্ষা ও গবেষণা কেন্দ্রগুলি কে সাড়ে ১৪ কোটি ইউরো সাহায্য ঘোষণা করা হয়েছে। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বিরাট আর্থিক সাহায্য ঘোষণা হয়েছে যার মধ্যে, প্রতিটি হাসপাতালকে বেড পিছু মোটা টাকা অতিরিক্ত সাহায্য করা হচ্ছে সরাসরি। ছাত্র ছাত্রী দের পড়াশোনার কারণে সাহায্য করা হবে। এইভাবে সমাজের সকল স্তরের সকল মানুষের মাসিক রোজগার কে নিশ্চিত করা ও ছোট, মাঝারি, বড়ো ব্যবসায়ীদের লোকসানের হাত থেকে বাঁচিয়ে সকলের পাশে দাঁড়িয়েছে সরকার।
    নাগরিক দের সচেতনতা ও সকলের সহযোগিতা: লক ডাউনের সঙ্গে সঙ্গেই জার্মানিতে জরুরী নয় এরকম সব দোকান ও সংস্থা বন্ধ করে দেওয়া হয়। শহরের ঐতিহাসিক টুরিস্ট স্পট গুলো ফাঁকা। সুপারমার্কেট, ওষুধের দোকান, ব্যাঙ্ক এবং পোস্ট অফিস খোলা। শহর এক রকম নিস্তব্ধ। নিয়ম অনুযায়ী এক সঙ্গে দুইজনের বেশি বাইরে বেড়োনো যাবে না। তিনজন কে একসাথে দেখলেই ২৫০ ইউরো মানে ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে প্রতিজন কে। কিন্তু তার প্রয়োজন প্রায় হয় না বললেই চলে কারণ জার্মান রা প্রচন্ড পরিমানে আইন মেনে চলতে অভ্যস্ত। যেহেতেু ভাইরাসটির বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি, জার্মানরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও সচেতনতা বৃদ্ধি কে অন্যতম কৌশল হিসেবে অবলম্বন করেছে। এছাড়াও সুস্থ ব্যক্তিরাও নিয়মিত প্রচুর পরিমাণ শারীরিক ব্যায়ামের মাধ্যমে নিজেদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
    সব ধরনের সভা-সমাবেশ, সামাজিক অনুষ্ঠান গুলি নিষিদ্ধ। একজন মানুষ থেকে আরেকজনের দূরত্ব কমপক্ষে ১.৫ মিটারের বেশি বজায় রাখা হচ্ছে সর্বত্র। সুপারমার্কেট গুলো ও মেঝে তে সেই দূরত্ব মার্ক করে দিয়েছে ও একসাথে দুইজনের বেশী ঢুকতে দিচ্ছে না। সুপারমার্কেট ঢোকার আগে হাতে ও বাজার করার ট্রলির হ্যান্ডেলে স্যানিটাইজার স্প্রে করে দেওয়া হচ্ছে ।
    আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সহ সব বিশ্ববিদ্যালয়েই সব ক্লাস অনলাইনে শুরু করা হয়েছে। গবেষণার কাজে খুব জরুরী না হলে বাড়ি থেকেই কাজ করতে বলা হয়েছে। কিছু গবেষণাগারে যেখানে বিভিন্ন প্রানী যেমন গিনিপিগ, ইঁদুর নিয়ে কাজ হয় সেখানে ওই প্রাণী দের পরিচর্যা ও খাবার দেওয়ার জন্য নিয়মিত আসতেই হয় সেখানে, গবেষক দের গ্রুপে ভাগ করে সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে আসার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

    অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও শক্তিশালী স্বাস্থ্যব্যবস্থার পাশাপাশি রাজনৈতিক দক্ষতা ও স্বচ্ছতা করোনা মোকাবিলায় জার্মান মডেল কে সফল করে তুলেছে। সরকার যেভাবে নাগরিক স্বার্থের কথা মাথায় রেখে বিজ্ঞান ভিত্তিক পদক্ষেপ নিয়েছেন তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। অবশ্যই নাগরিক দের সরকারের উপর বিশ্বাসের সঙ্গে সরকারকে সহযোগিতা, সরকার কে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে সাহায্য করেছে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন