এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  কূটকচালি

  • পুজোর হুজুগ ২ -- পুজোর রিলিজ

    প্রসেনজিৎ বর্মন লেখকের গ্রাহক হোন
    কূটকচালি | ০৪ অক্টোবর ২০১১ | ১০২৫ বার পঠিত

  • পুজোয় কি কি সিনেমা না দেখলে জীবন বৃথা? চেখে দেখে জানাচ্ছেন লেখক। হ্যাঁ পুজোর রিলিজ বলতে আবার পুজোর মধ্যেই রিলিজ হল ভাববেন না। আমাদের উৎসব ঢের আগেই শুরু হয়ে গেছে।

    প্রথম রিলিজ

    প্রথম গল্প বডিগার্ড সিনেমার। একটু ভূমিকা করে নিই সিনেমার গল্প শুরু করার আগে। যাওয়া নিয়ে বিস্তর ঝামেলা হল বলে বলা। ফার্ষ্ট ডে ফার্ষ্ট শো যাবার ইচ্ছে ছিল। এবার দোষের মধ্যে নিয়ে চারটা টিকিট বুক করে ফেলেছিলাম। পাঁচ রুমমেট। একজন রুমমেট আবার সলমন খানের ডাইহার্ড ফ্যান। আর একজন যাই দেখাবে তাই দেখবে। আর দুজনের একজন অবশ্যই যাবে ধরে ঘরে ফিরে বুঝলাম হিসেবে ভুল হয়েছে। সলমন ফ্যানের আপিস আছে। বাকিরা কেউ যাচ্ছে মাসির বাড়ি তো কেউ জয়পুর। সিনেমা দেখতে যাবার লোকই পাওয়া যাচ্ছে না। ফ্রিতে দেখাবো ঘোষনা করলাম। তাও কেউ রাজি হয়না। লোকজনকে পাকড়াও করে হাতে পায়ে ধরাধরি শুরু করেও দেখি সাকুল্যে তিনজন হল। যথা লাভ। এদিকে এতোশতো করতে গিয়ে হয়ে গেলো দেরি। টিকিটের ঘরে দেখি লম্বা লাইন। লোকে অ্যাডভান্স টিকিটের জন্য ভিড় করে আছে। তার মাঝে টিকিট নিয়ে যখন হলে ঢুকছি তখন দেখছি অলরেডি বিশ মিনিট হয়ে গেছে। তো সিটে বসতে যাবো , দেখি সিট বেদখল!!!! লাও ঠ্যালা। অনেক কষ্টে নিজের সিট নিজের দখলে অ¡য়েশ করে বসলাম।

    বসে দেখি করিনা কাপুরের ঘরে চামচিকে ঘোমটা পরে উড়ে বেড়াচ্ছে। করিনা ভয়ে যেই চিল চেঁচানি চেঁচানি চেঁচিয়েছে তখন দেখি সলমন খান রিস্কা চালিয়ে ওদের ঘরে ঢুকে "কিল হার' বলে ঘরের লোকজন কে ধরে দুমদুম করে মারা শুরু করেছে। উপায়ান্তর না দেখে করিনার বাবা বললেন আর তো পারিনা। বন্দুক তাক করলেন সলমনের দিকে। সলমন ওমনি করিনার বাবাকে প্রনাম করে বললো,'স্যার, আমি তো বডিগার্ড। সেই যে স্যার, আমার বাবা প্রাণ দিয়েছিলেন আপনাদের রক্ষা করতে গিয়ে, মনে পড়ে?????'

    তখন সরতাজ রানা (ঐ করিনার বাপ) বললে, "সাবাশ বেটা'। আজ থেকে তাইলে তুমি আমার মেয়ের বডি গার্ড। আর এট্টু ট্রেনিং টেনিং দিও মেয়েটাকে জুডো ক্যারাটের। কালক্রমে জানা গেলো সরতাজ রানার অঢেল টাকা পয়সা আছে। আর আছে এক খতরনাক দুশমন। যে করিনাকে খতম করতে চায়। সলমন বলে আমি থাকতে করিনার নো চিন্তা। বলেই করিনার পিছু পিছু কলেজে, ক্লাসরুমে, একবার তো ভুল করে লেডিজ টয়লেটেও ঢুকে পড়লো। করিনা কইলো আপদ। এদিকে সে জানে না তার কত বিপদ। শত্রুরা ওত পেতে রয়েছে চতুর্দিকে। শুধু সলমনের জন্য কিছুই করার সাহস পাচ্ছেনা।

    করিনা বললো এটাকে তো আর বরদাস্ত করা যায় না। কারে বললো? ওর একজন প্রিয় বান্ধবীকে। যে করিনার সাথেই থাকে দিবারাত্রি। ওদের বাড়িতে থাকে একজন মোটা চাকর। চাকরানি সবিতা। আর কলেজে থাকে এক বাঁটকুল জোকার। করিনা সলমনকে ডিসট্রাক্ট করার জন্যে প্রাইভেট নং থেকে গলা পাল্টে ছায়া সেজে সলমনের সাথে প্রেম প্রেম খেলা শুরু করলো। আর সবাই মিলে ক্যামন কাতুকুতু দিতে লাগলো। সে কি কাতুকুতু। পেটে বুকে খোঁচা মেরে যাচ্ছে। যত বলি হাসবোনা ততই খুঁচিয়ে যায়। বিপিন দেখি ধুত্তোর বাপ বলে ঘুমিয়ে পড়লো। তো ঘুমোতে চাইলেই আমি ঘুমোতে দেবো ক্যানো হে? প্রতিটা টিকিট পিছু আমার ১৬০ টাকা গেছে। বলি তার হিসেব দিতে হবেনা?

    এরম ইনিয়ে বিনিয়ে চলতে চলতে হাফটাইম হয়ে গেলো। হাফটাইমের আগে উল্লেখযোগ্য ঘটনা বলতে ডিস্কো ঠেকে করিনা যখন ছায়া সেজে সাল্লুভাইয়ের সাথে মজা কত্তে ব্যস্ত তখনি শত্রুদের হামলা ও তাহাদিগকে সাল্লুভাইয়ের উপর্যুপরি বেদম প্রহার। সলমনের এই কর্তব্যপরায়নতা দেখে করিনা লাট্টু। সলমনতো আগে থেকেই লাট্টু হয়ে ছিল।

    কি সাসপেন্স ভাবুন একবার। একদিকে সলমন জানে না ছায়া কে অথচ খুব প্যার করে ছায়াকে। অন্যদিকে করিনার বিপদ। সে ভালোবেসে ফেলেছে সলমনকে এদিকে কিছু বলতে পারেনা। কারন সে জানে সলমন তার বাপকে দেবতা মানে আর তাকে দেবকন্যা। যদি জানতে পারে করিনাই ছায়া তাইলে কি করবে বুঝতে পারছেনা। আর তার চেয়ে বড়ো কথা বডিগার্ডকে বে করলে লোকে কি বলবে। বাপে কি বলবে। করিনা তার বান্ধবীর সাথে পরামর্শ টরামর্শ করে কইলো কি আর করবো বলো সখি। এ জনমের প্রেম এখানেই যে শেষ হল দেখি। বলে গার্ডেনে ডেকে পাঠালো কায়দা করে সলমন কে। কায়দা করে সব চুকিয়ে বুকিয়ে দিতে। আর শত্রুরাও শক্তি সঞ্চয় করছে শেষ প্রত্যাঘাতের জন্য।

    সিনেমার আর আধাঘন্টা বাকি।

    শেষটা থাক? একটু কিহয় কিহয় ভাব রয়ে গেছে? একটু এরম থাক? যদি কেউ দেখতে যান ............. তেনাদের জন্য বাকীটা আর বললাম না।

    এমনিতে বাকি আর কি ই বা রইলো। ঐ কিহয় কিহয় টা। জলের মধ্যে কটা ভালো একশান। আর একদম শেষ বেলায় একটা টুইস্টের মতন দেবার করুণ প্রচেষ্টা। শুধু বলবো শেষ বেলায় করিনার বাপ সলমনকে যখন বলবে "বেটা, তেরা বেটেকা মন বিলকুল সাফ। একদম তেরে জ্যায়সা।' আর সাল্লুর ছেলেটা যখন করিনাকে বলবে "আপ মেরে মা বনোগে?' তখন যেন ভুলেও হাসবেন না। ওগুলো কান্নার সিন। হাসির সময় না হেসে কান্নার সিনে হাসলে সাল্লুভাইয়ের ফ্যানেরা ছেড়ে কতা কইবেনা। আজকাল বাজারে সলমনের অনেক চোরাগোপ্তা ফ্যান ঘুরে বেড়ায়।

    দ্বিতীয় রিলিজ

    পরের গল্প মৌসম সিনেমার। শুরুতেই আপনি যাচ্ছেন মাল্লুকোটে। পাঞ্জাবের এক প্রান্তিক গ্রাম। সালটা ১৯৯২। সময়টা খুব একটা ভালো নয়। এই গ্রামেই থাকে হ্যারি। আরে আমাদের শাহিদ কাপুর গো। এইবার চিনেছেন? সারাক্ষণ পাড়া মতিয়ে রাখে। এই খেলছে, ঘুরছে, বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারছে, লোকের আখক্ষেতে গিয়ে চুরি করে গন্না চুষছে। রাজ্জোর দোকানে গিয়ে কায়দা করে ফোকোটে পুরি সবজি গিলছে। খুব নটখট ছেলে আরকি। দুষ্টু। তাই বলে এ ছেলে এলেবেলে ভাববেন না। এর বাবা প্রফেসর। জামাইবাবু এনআরআই। শুধু তাই নয়। হ্যারি নিজে ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্সের পরীক্ষার সমস্ত ধাপ কিলিয়ার করে বসে আছে। অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার এই এলো কি সেই এলো। খুব ভালো গান গায়। আর সাথে নাচেও। আর আছে একটা বড় মন এবং প্রেমিক হৃদয়। সর্বগুনসম্পন্ন যাকে বলে।

    তো এই ১৯৯২ সাল, সময়টা খুব একটা ভালো নয়। কাশ্মীরে টালমাটাল অবস্থা। একদিকে চলছে বিচ্ছিন্নতাবাদী, আতঙ্কবাদীদের দৌরাত্ম। কাশ্মীরি পন্ডিতদের উপর অত্যাচার ও তাদের কাশ্মীর থেকে বিতাড়ন। অন্যদিকে আমজনতার উপর নিরাপত্তারক্ষীদের নির্যাতন। দুয়ের যাঁতাকলে পড়ে নাগরিক সমাজ বিপর্যস্ত। তাদের সামাজিক নিরাপত্তা বিপন্ন। তাতে করে হল কি, আয়েতের বাপ আয়েতকে, ওই মিষ্টি মেয়েটাকে আয়েতের বুয়ার কাছে মাল্লুকোটে রেখে নিরাপদ বাসস্থানের খোঁজে বেরিয়ে গেল আমেদাবাদ হয়ে বোম্বে। আয়েত, আহারে, মা মরা দুখি মেয়েটা, কদিন একটু নয় হ্যারির সাথে একটু প্রেম প্রেম খেলুক।

    আগে যে রাজ্জোর কথা বললম। গ্রামের মেয়ে উদ্ভিন্নযৌবনা, লাস্যময়ী রাজ্জো। সেই রাজ্জো আসলে আমাদের হ্যারির উপর একটু টাল্লি খেয়ে আছে। ওই, ফ্রি ফান্ডে দোকানে পুরি খাইয়ে দাইয়ে দেয়। রাত্রে ঘর বয়ে টিপিনবাস্কো করে পিন্নি টিন্নি দিয়ে যায়। আর যা যা করে হ্যারির মন পাওয়া যায় তাই তাই করতে প্রস্তুত। কিন্তু এই একেপেশে প্রেমের কি কিছু ভবিষ্যত আছে? বিশেষ করে যাখন মেয়েটা সোনম কাপুর নয়? বলা যায়না ভাই। আগেই বলেছি এটি আর্ট ফিলিমের বাপ।

    কাশ্মীরন আয়েত আসলে সোনম কাপুর। যার প্রেমে হ্যারির পড়ার কথা। তারপর তো যেমন যেমন হওয়ার কথা ছিল তেমন তেমন হল। হ্যারি আয়েত বলতে অজ্ঞান। আয়েতের হ্যারিকে খুব পছন্দ। লুকিয়ে চুরিয়ে দেখাদেখি হল। মিষ্টি প্রেমের গান হল। কালি কলমে প্রেমের বার্তালাপ, বিয়ের আসরে নাচ হল। বৃষ্টিভেজা রাতে প্রেমের প্রথম প্রতিশ্রুতি, তাও হল। আপনার মুখে আর হাসি ধরে না দেখি। খুশিতে একেবারে ডগোমগো। তখনি পঙ্কজ কাপুর বললেন- চোওওওওওওওওপ। ইয়ার্কি পেয়েছো? ভুলে গ্যাছো ডিসেম্বর ৬, ১৯৯২, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিন? আমার কি কোনো সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ নেই? বললেই হবে প্রেম পেয়েছে?

    ব্যাস। বিনা নোটিশে আয়েত মাল্লুকোট থেকে হাওয়া। আয়েতের ঠিকানাটুকুও পেলনা হ্যারি। চিঠি পেল। তবে এয়ারফোর্স থেকে। চাকরির চিঠি।

    এরপর এক লহমায় পেরিয়ে যাবেন সাত সাতটা বছর। চলে আসুন স্কটল্যান্ডে। আয়েত এখন সংগীত ও নৃত্যকলার কোন ইনস্টিতে কর্মী। বাপ আর বাপের বন্ধু অনুপম খের মিলে দোকান ও দেছেন। ফুফা ৯৩ সালের বোম্বে ব্লাস্টে মারা যাবার পর হালাত ওদের স্কটল্যান্ডে নিয়ে আসে। আর কি কাকতলীয় ব্যাপার দেখুন। হ্যারিবাবুও এয়েচেন এখানে এয়ারফোর্স থেকে ট্রেনিং নিতে। ব্যাস। তারপর আর কি। দেখা হল আবার। আবার প্রেম চগিয়ে উঠলো। আবার গান হল। আবার বাজনা বাজলো। হৃদয়ের কোনে কোনে। হাজার প্রেমের ফুলকি। এবার হ্যারি আসবে আয়েতের বাড়ীতে বিয়ে কথা পাকাপাকি করতে। আপনি আবার আহ্লাদে আটখানা। ঠিক তখনি পঙ্কজ কাপুর আবার বললেন- চোওওওওওওওওপ। ইয়ার্কি পেয়েছো? বিয়ে? বলি কার্গিল যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে দেখছোনা? যত্ত সব ডেঁপো ছোকরার দল!!!!

    এবার বিনা নোটিশে হ্যারি হাওয়া। বুলাওয়া চলে এসেছে। যুদ্ধের দামামা বাজছে।

    তারপর থেকে আর বলবো কি মশাই। সময়টাই খারাপ। পুরো সিনেমা জুড়ে দেখি সেই একই জিনিষ চলছে। হ্যারি ফোন করে তো আয়েতের ঘরে কেউ ধরে না। আয়েত চিঠি লেখে তো হ্যারির ঘরে সবাই গেছে সুইজারল্যান্ডে। আয়েত হ্যারির খোঁজে মল্লুকোটে। ঘরে কেউ নেই। তো হ্যারির দিদি জিজাজি আয়েতের স্কটল্যান্ডের ঘর থেকে বিফল মনোরথে ফিরছে। দোকানে তালা ঝুলছে। ঘরে অন্য লোক। পুরো গেছোদাদা কেস। একবার তো আয়েত পুরো ঠিকানা লিখে রাজ্জোর হাতে ধরালো। সবাই ভাবছি এবার তো মিলতেই হবে ভাই দুজনকে। তখনি পংকজকাকু বললো- চোওওওওওওওওপ। ২০০১ এর ওয়ার্ড ট্রেড সেন্টার আর ২০০২ এর গুজরাট রায়ট কে কভার করবে শুনি? আমি না করলে?

    তাই শুনে রাজ্জো পুড়িয়ে দিলো চিঠি। পুড়িয়ে দিলো চিঠি পুড়িয়ে দিলো মন। ধিক ধরে গেছে তখন সিনেমায়। ধুত্তোরি বলে দু তিন জন তো হল ছেড়ে চলেও গেলো। নেহাত গরীব মানুষ বলে আমি হিম্মত জোটাতে পারিনি।

    এর মাঝে আর্ট চলছে। একটা দৃশ্যে ক্যামেরা সোনম কাপুরকে তাক করে আছে কি অদ্ভুত অ্যাঙ্গেলে। টপভিউ ঠিক নয়। এই ধরুন মাথার ০.৭ মিটার উচ্চতা থেকে বামদিকে ০.৩ মিটার আর সামনের দিকে ০.২ মিটার। বলুন দেখি স্ফেরিকালে কি কি ভ্যালু পাচ্ছেন?

    শেষ পর্যন্ত হ্যারি আর আয়েতের মিল হবে কিনা আর বলছিনা। এমনিতে সিনেমা দেখতে দেখতে আমিও আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলাম। চুলোয় যাক প্রেমেকাহানি। অনেক হয়েছে। আর রাতও অনেক হয়েছে। এখন মানে মানে ঘরে ফিরতে পারলেই বাঁচি।

    মাথায় স্ট্রাইক করছিল পরে, তখন যদি ফেসবুক থাকতো, স্ট্যাটাস আপডেট করে দিলেই আর এতো যন্ত্রনা সইতে হত না। সবচে বড়কথা সিনেমাটাই হতনা। তো এই সিনেমাটা দেখতেও হতনা। আমার কাছে এটা তাই একটা যোগাযোগ ব্যাবস্থার ব্যর্থতার গল্প। টোটাল ফেলিওর অফ কমিউনিকেশন সিস্টেম ইন অ্যাবসেন্স অফ ফেসবুক। এটার কিন্তু একটা কন্সপিরেসি অ্যাঙ্গেল ও থাকতে পারে। খোঁজ নিলে হয়তো দেখবেন এই সিনেমার পিছনে জুকারবার্গ পয়সা ঢেলেছেন। বলা যায়না মশাই। সময়টা খুব একটা ভালো না।

    তৃতীয় রিলিজ

    আসু্‌ন, এবার একটু ফুলটুস মস্তির সিনেমার গল্প বলি। মেরে ব্রাদার কি দুলহান।

    গল্প একদম সাদামাটা। মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে লব। এনআরআই। লন্ডনে থাকে। ভালোই কামায় টামায়। কিন্তু মধ্যবিত্ত। বাবা রিটায়ার্ড কর্নেল। লবের ভাই আছে একটা। একদম সহোদর। কি নাম বলুন তো? বলুন বলুন? হ্যঁ¡, ঠিক ধরেছেন। কুশ। বলিউডের উদীয়মান সিনেমা পরিচালক। এইতো, সদ্যই একটা হিট সিনেমা বের করেছে। তবে কিনা গর্ব নেই একদম। আর থাকলেও তা আমার আপনার চেয়ে ঢের কম। আর এও কিন্তু মধ্যবিত্তই। সক্কলেই মধ্যবিত্ত।

    সিনেমা শুরু হওয়া মাত্রই লব আর পিয়ালি ঝগড়া শুরু করলো। আর করতে করতে ওদের পাঁচ বাছরের প্রেমটা গেল ভেঙ্গে, দুম করে। এদিকে বয়সও হচ্ছে। তাইতে করে, মানে নিতান্ত বাধ্য হয়েই, লব ফোন লাগাল কুশকে -- প্রিয় ভাই কুশ, আমার জন্য একটির কন্যা নির্বাচন করা দরকার। সত্বর। আমি বিবাহ করিব। পিতামাতা বৃদ্ধ, তয় অতিশয় ওল্ড ফ্যাশানড। তাই এই নির্বাচন করিবার গুরুভার আমি তোমারই স্কন্ধে অর্পন করিলাম। তোমার পছন্দের কন্যাই আমার পছন্দের বলে জানিবে।

    কুশ আর কি করে। কুশ তখন -- জি ভাইসাহেব, বলে ফোন রেখে দিয়ে বউদি পছন্দ করতে বেরিয়ে পড়লো। কিন্তু খুঁজতে গেলেই যে পাচ্ছে এমন তো নয়। বউদিতো আর গাছে ফলেনা। ফলত: বিস্তর কাঠখড় পোড়াতে হল। আর অতগুলো করে মেয়ের বাড়িতে গিয়ে এন্তার খাওয়াদাওয়া। যার মধ্যে সামোসাটাই সবচেয়ে বেশিবার ছিল। খাটাখাটনি করে খেয়েদেয়ে কুশের পেটে গ্যাস হয়ে যায় যায় প্রায়। চোঁয়া ঢেঁকুর ওঠবার উপক্রম। তাও বউদির দেখা নেই। তারপর ম্যাট্রিমনিতে ছাপলো। ইয়া বড় করে। আর যেই ছেপেছে, তখুনি করে রাখি সাওন্তের কল। কি না, লবকে তার সয়ম্বরে আসতে হবে। কি আবদার!!!! বললেই হল!!!! খট করে ফোন রেখে দিল কুশ। কিন্তু যাবে কোথায়? ফোনের পর ফোন এসে যাচ্ছে। লাগাতার। আর সবই উল্টোপাল্টা। পোটেনশিয়াল বউদি একজনাও কেউ নয়কো। অবশেষে কোন এক কেন্দীËয় মন্ত্রনালয় থেকে সচিব পর্যায়ের ব্যক্তি, মি: দীক্ষিত কল করলেন।

    মায়ের সাথে করে কুশ এল দিল্লী। দীক্ষিতবাবুর বাড়ী। একটু উত্তেজিত। কথা বলতে বলতে চা এল -- এই নিন, আপনার চা। কুশ সবে হাত বাড়িয়ে চা নিয়েছে, তখনই দীক্ষিতবাবু বললেন -এই হল আমার মেয়ে, ডিম্পল। কুশ মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে এ কে!!!! মুখ হাঁ হয়ে গেল। চোখ বিস্ফারিত। হাত কাঁপছে, ঠক ঠক ঠক ঠক। কাঁপতে কাঁপতে ঠকাস। যা:, চা সমেত চায়ের কাপ হাত থেকে পড়ে গেল। বুঝতেই পারছেন, এরকম হল মানে দুজনে পূর্বপরিচিত। একটু ফ্ল্যাশব্যাকে গিয়ে দেখি চলুন, কেমন করে দেখা হয়েছিল দুজনার।

    সেই যে, যেবার কলেজ থেকে কুশরা আগ্রা বেড়াতে গেছিল বাসে করে, তখনি ডিম্পলের সাথে কুশের প্রথম সাক্ষাত। ডিম্পলরাও আগ্রা ঘুরতে গেছিল অন্য বাসে চেপে। তারপর ছেলে মেয়ের দল একসাথে মিশে গিয়ে -- কুশ অবশ্য একটু আলাদাই ছিল। ডিম্পলদের সাথে মাখামাখি করেনি একদম। দূরে দুরেই থাকতো। ভালো ছেলে কিনা। ছেলেমেয়ের দল মিলেমিশে হই হুল্লোড়, নাচা গানা এইসব করছিল। ভালই হচ্ছিল। গোলটা হল পরে। তাঁবুর মধ্যে একটে ছেলে যখন ডিম্পলের সাথে জাপটাজাপটি করতে চাইলো। ডিম্পল আসলে মস্তির পাবলিক। ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে সবার সাথে মিশে যেতে পারে অবলীলায়। কিন্তু তাই বলে তার সাথে যা খুশি তাই করবে? শয়তান ছেলেটাকে এক লাথি মেরে ডিম্পল বসে রইলো টিলার উপর একা একা। খুব মনখারাপ। বিষণ্ন, বিপর্যস্ত। ধুস, বেশ ছিলাম লন্ডনে। ভাবলো মনে মনে। এখানে ছেলেরা সব কেমনতরো। খোলামনে মিশতে গেলে ভাবে মেয়েটা বেবুশ্যে। কুশ বললো না না। আসলে আমরা মধ্যবিত্ত তো। তাই একটু এরকম। তবে বদলাবে। তাজমহলের পাশে সেই টিলায় কুশ বসে থাকলো ডিম্পলের পাশে। আজ এই মনখারাপের দিনে সে কেমনকরেই বা সে ছেড়ে যায়? তারপর একবার হাত মেলায়। হাত মিলিয়ে, মিলিয়ে যায় কুশ। দূরে। ততক্ষনে ডিম্পলের মুখে ফিরে এসেছে প্রসন্নতা। এই ছেলেটা, এই ছেলেটা বেশ অন্যরকম আর ভালোও।

    সেই দেখা আর তারপর এই দেখা। কুশের তো খুব পছন্দ। দাদার যুগ্যি মেয়ে বই কি। তড়িঘড়ি করে বাকি সবাই মিলে বললো হ্যঁ¡ হ্যঁ¡। হয়ে যাক, হয়ে যাক। লব ভাইসাহেব আসবেন বাগদান পর্বের ঠিক আগে। ততদিন তো আর কাজকর্ম গুলো ফেলে রাখা যায়না। কুশ আর তার হবু বউদি, মূলত এই দুজনেই সবকিছু কাজকর্ম করতে লাগলো। কাজকর্ম বলতে বাইকে করে এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি, দেদার আড্ডা, নাচগান করা এইসব। আগে থাকতেই কেমন অনুরাগ মতন ছিল। তার উপর এইসব!!! সব্বোনাশ করেছে। মনের অবচেতনে ব্যথা গভীর থেকে গভীরতরো হল দুজনের। নীরবে। কেউ কিন্তু খেয়াল করছেনা। এমনকি কুশ আর ডিম্পলেরও খেয়াল নেই। সবাই মধ্যবিত্ত বলেই হয়তো। এমনকি ডিম্পল যখন মাল খেয়ে টলমল করে টলছে গাড়িতে বসে, আর হবু বউদির নেশা কাটাতে কুশ যখন টুকুশ টুকুশ চামচে করে দহি খাওয়াচ্ছে তখনও কেউ টের পেলনা।

    বাগদানের ঠিক আগে আগে অবশ্য ডিম্পলের কেমন সন্দেহ হল। কিন্তু কুশ বললো ও কিছু না গো। সব ঠিক হয়ে যাবে। জানোই তো, আমরা হলাম গে মধ্যবিত্ত। আর আমার দাদা খুব ভালো। ঠিক আছে। কিন্তু ঠিক কি আর আছে? বাগদান হয়ে যেতেই কুশ টের পেল যে সে তার হবু বউদিকে ভালবেসে ফেলেছে। আর কি করি করি করতে করতে বলেও ফেললো – ডিম্পল, আই লাভ ইউ। ডিম্পল সাথে সাথে ঠাস করে এক চড় লাগালো- বলি তখন থেকে চেঁচাচ্ছি, কিছু একটা হয়েছে, কিছু একটা হয়েছে, তখন কোন হুঁস নাই, আর এখন যেই বাগদান হয়েগেছে ওমনি ডিম্পল আই লাভ ইউ!!!!!

    প্রেম তো হয়েই গেল। কিন্তু এবার কি হবে? আড়াল থেকে রাহাত ফতে আলি গাঁক গাঁক করে গাইছে। ক্যায়সা ইয়ে ইস্ক হ্যায়। গজবসা রিস্ক হ্যায়।

    কুশ বললো না না ও আমি পারবনা। বাপ দাদা মিলে কেলাবে। ভেগে তো যাবই না। প্রচুর বদনাম হবে। আর আমি তো মধ্যবিত্ত। ডিম্পল কিন্তু নাছোড়বান্দা। কুশকে নিয়ে পালাবেই পালাবে। কুশকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে তুলে নিয়ে গেল। হাইওয়ে দিয়ে হাওয়া হবার তাল। তারপর দেখে কুশের কোন সাড়া নেই। মারা গেল নাকি? ওষুধের ডোজ বেশি পড়ে গেছে? রাস্তাতেই কুশকে মুখে রুমাল ঢাকা দিয়ে শুইয়ে ডিম্পল কাঁদছে হাঁউমাউ করে। কুশ তখন তিড়িংবিড়িং করে উঠে দাঁড়িয়ে বললো, বাড়ি চল। আমার মাথায় এক জম্পেশ আইডিয়া এসেছে। এতেকরে সাপও মরবে। অথচ লাঠিও ভাঙবেনা।

    কি সেই আইডিয়া আর কেমন করে সেই আইডিয়া কাজ করলো জানতে চাইলে চলে যান সিনেমাহলে। টিকিট কাটুন। সিনেমাটা দেখুন। আমায় কেন খামোকা বিরক্ত করছেন? আমি এখন যাই। ঢের কাজ বাকি। এটুকু শুধু বলে যাই, কুশ সেজেছে ইমরান খান। ক্যাটরিনা ডিম্পল সেজেছে। আর লব হয়েছে আলি জাফর। টিকিট কেটে সিনেমাটা দেখলে ঠকবেন না।

    ছবি: সায়ন করভৌমিক
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • কূটকচালি | ০৪ অক্টোবর ২০১১ | ১০২৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে প্রতিক্রিয়া দিন