এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  সিনেমা

  • অটোগ্রাফ : পরিচালকের সাক্ষাৎকার

    ঋতব্রত ঘোষ লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | সিনেমা | ১৪ জানুয়ারি ২০১১ | ৮৯১ বার পঠিত
  • অটোগ্রাফ ছবির নির্দেশক সৃজিৎ মুখার্জীর সাক্ষাৎকার নিলেন ঋতব্রত ঘোষ -

    র: তুমি কি আঁতেল ডিরেক্টর?
    স: যদি ধরে নিই আঁতেল কথাটা ইন্টেলেকচুয়াল থেকে এসেছে, তাহলে হ্যঁ¡ ... কিন্তু সাধারণত আঁতেল কথাটা যে ধরনের ফিল্ম বা ফিল্মমেকারের সঙ্গে ট্যাগ করা হয় ... অটোগ্রাফ মোটেও সেই ধরণের ফিল্ম নয়, এটা বলতে পারি।

    র: তুমি কি ডিরেক্টর?
    স: লোকজন তো তাই বলছে .. আমি যদিও নিজেকে একজন স্টুডেন্ট হিসেবেই দেখছি .. যার সঙ্গে ফিল্ম ক্যামেরার পরিচয় হয়েছে মাত্র এক বছর আগে। ভালো একটা গল্প বলার তাগিদ থেকেই যে এই কাজটা করতে এসেছে এবং যে ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র এবং ফেলো কলীগ সবার কাছ থেকে সিনেমার খুঁটিনাটি শিখতে ভীষণ উদগ্রীব।

    র: ভালো গল্প বলার তাগিদ থেকেই কি চাকরি ছাড়া?
    স: অনেকটাই। তুই জানিস আমি বাঙ্গালোরে চাকরি করার সমেয়ও প্রফেশনাল থিয়েটার করেছি .. তার জন্য স্ক্রিপ্ট লিখেছি .. মাইন্ডগেম, ফেলুদা ফেরৎ তারপর চেকমেট। থিয়েটারের অভিজ্ঞতা আমায় ভীষণ ভাবে এনরিচ করেছে ... কিন্তু সমাজের বৃহৎ অংশের কাছে পৌছনোর মাধ্যম ফিল্ম, থিয়েটার নয় .. এটা জানতাম। আর আমার স্বীকার করতে দ্বিধা নেই আমি একটু লোভী .. আমার গল্প অনেক মানুষ দেখবে, শুনবে .. অ্যাপ্রিসিয়েট করবে .. এই লোভ বা আকাঙ্খাটা ছিলই .. সেখান থেকেই কলকাতায় ফেরৎ আসা .. অঞ্জনদার "Madly Bangali"তে ওনার অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করি .. তারপর রিনাদির "ইতি মৃনালিনী'.. এনাদের কাছেই আমার ফিল্ম বানানোর হাতেখড়ি বলা যায় ..

    র: থিয়েটার এর অভিজ্ঞতা তো হেল্প নিশ্চই করেছে .. চাকরি -র অভিজ্ঞতা করেনি?
    স: হাহাহা.. হ্যা তো ! স্ট্যাটিস্‌টিকাল অ্যানালিস্ট ছিলাম .. MS Excel-এ বাজেট বানাতে .. কস্ট মিনিমাইজ করার ফর্মুলা গুলো অ্যাপ্লাই করতে কাজে লেগেছে ... অন এ সিরিয়াস নোট, কর্পোরেট দুনিয়ায় ছিলাম .. বাঙ্গালোরে আমার আন্ডারে ৬ জন ছিল .. হিউম্যান রিসোর্সকে ঠিকভাবে ম্যানেজ করার শিক্ষাটা ওখান থেকেই পাওয়া, এই ইন্ডাস্ট্রিতে যেটা ভীষণ প্রয়োজন ..

    র: তার আগে পড়াশোনা? এই একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে রিসেন্টলি কেউ টলিগঞ্জে ফিল্ম বানাতে এসেছেন বলে তো মনে হয় না .. তাই সেটাও দেখছি একটা চর্চার বিষয় ..
    স: হ্যঁ¡, সেটা নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলছে … কিন্তু সমস্যা হলো, আমি চাইলেও আমার স্কুল, কলেজ বা ইউনিভার্সিটির নাম বদলে ফেলতে পারবো না .. তবে পড়াশোনা নিয়ে এর বেশি কিছু বলার নেই ...

    র: আচ্ছা, অটোগ্রাফ নিয়ে কথাবার্তা শুরু হোক, অটোগ্রাফ এর শুরু কিভাবে?
    স: সেটা একটা বলার মত ঘটনা .. ফেলুদা ফেরৎ এ তপসের বউ অর্থাৎ মৃন্ময়ীর ক্যারাক্টারটার জন্য আমি নন্দনাকে কাস্ট করার কথা ভেবেছিলাম ... ওকে অ্যাপ্রোচও করেছিলাম .. যদিও সেটা ফাইনালি হয়ে ওঠেনি ডেট নিয়ে সমস্যার জন্য … কিন্তু ওই সময় আমাদের মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে .. বাঙ্গালোরে সি.সি. ডি.তে বসে আড্ডা মারতে মারতে আমরা নিজেদের পছন্দের ফিল্ম নিয়ে আলোচনা করছিলাম এবং দ্যাখা গুলো দুজনের খুব ভালোলাগার ফিল্মগুলোর মধ্যে কমন হলো সত্যজিত রায়ের নায়ক। তার আগেই অটোগ্রাফের গল্পের একটা আদল আমার মাথায় ছিল এবং সেটা ওকে বলি .. ও খুব উত্‌সাহ দেখানোয় আমিও তাড়াতারড়ি স্ক্রিপ্টটা লিখতে বসি ... দিন কুড়ি লেগেছিল লিখতে ... তারপর ও একদিন বুম্বাদাকে এস.এম.এস করে আমার কথা এবং স্ক্রিপ্টটার কথা জানায় এবং রিকোয়েস্ট করে স্ক্রিপ্টটা শোনার জন্য ... ২০০৮ এর শেষের দিক এর কথা বলছি ..

    র: বুম্বাদা .. মানে প্রসেনজিত কেন?
    স: নয় তো কে?

    র: নাহ .. মানে
    স: শোন, স্ক্রিপ্ট লেখার আগে থেকেই আমি জানতাম .. যে নায়ক যেমন গুরু ছাড়া হত না .. এই গল্পটা নিয়ে কাজ করতে গেলেও টলিগঞ্জ-এ বুম্বাদা ছাড়া আর কেউ নেই .. জাস্ট নেই। অরুন চ্যাটার্জীর রোলটা ভাব .. বম্বেতে এটা করতে গেলে যে কেউ শাহরুখকেই চাইবে ... আমি সিওর .. ঠিক সেই কারণেই বুম্বাদা ...

    র: ওকে, তারপর?
    স: হ্যঁ¡, তারপর একদিন NT 1-এ বুম্বাদার শুটিং চলছে .. আমি পৌঁছে গেলাম .. বাইরে ওয়েট করছি .. উনি ব্রেকে বেরিয়ে এলেন .. আলাপ পরিচয়ের পর বললেন যে নেক্সট উইকে উনি স্ক্রিপ্টটা শুনবেন .. তখন কি জানি কী হলো ফস করে বলে ফেললাম .. "আপনার সময় হলে আজই হতে পারে, আমার সময় আছে!' তো উনি কোনো একটা ফিল্ম এর কাজ করছিলেন ... তখনও ঘন্টা দুয়েকের কাজ বাকি .. আমি সেই ফাঁকে যাদবপু্‌রের দত্ত থেকে স্ক্রিপ্টটা প্রিন্ট করিয়ে নিলাম .. কারণ ওটা পেন ড্রাইভে ছিল .. ওয়ার্ড ফাইল হিসেবে .. তারপর বাকিটা বুম্বাদা বহুবার বলেছেন .. উনি স্ক্রিপ্টটা শুনে সাতদিন সময় চাইলেন .. তারপর তো .. [হাসি]

    র: আর ইন্দ্রনীল?
    স: ইন্দ্রনীলের রোলটা শুরুতে করার কথা ছিল পরমের। ও আমার স্কুলের জুনিয়র .. এবং ফেলুদাতেও কাজ করেছে আমার সঙ্গে .. ও প্লটটা নিয়ে ইন্টারেস্ট দেখিয়েছিল .. আমিও ওকে মাথায় রেখেই লিখেছিলাম .. কিন্তু তারপর ও বাইরে পড়তে চলে যাবে আমাকেও নতুন করে খুঁজতে হলো .. এর আগে ওর কিছু কাজ দেখেছি .. ভীষণ শার্প চেহারা .. অভিনয়, বডি ল্যাঙ্‌গুয়েজ সব কিছুর মধ্যেই একটা ভীষণ আরবান একটা ব্যাপার আছে, যেটা শুভব্রতর সঙ্গে ভীষণ যায়। আর তাছাড়া এই চরিত্রে এমন একটা ফেস হলে ভালো হত যে ওভারএক্সপোজ্‌?ড নয় .. তাই ইন্দ্রনীল।

    র: তা তুমি নাকি প্রসেনজিতকে দিয়ে ওয়ার্কশপ করিয়েছ?
    স: হ্যঁ¡, শুনতে অবাক লাগলেও এটা ঘটনা। ইন্দ্রনীল-নন্দনার সঙ্গে বুম্বাদা আগে কাজ করেননি .. তাই আমার মনে হয়েছিল শুটিং শুরু করার আগে একটা ওয়ার্কশপ করিয়ে নেওয়া দরকার। সোহাগ সেন এই ব্যাপারটার দায়িত্বে ছিলেন। এখন কোনো কোনো অভিনেতা আছেন যাঁদের রিগরাস এক্সার্সাইজ্‌এর মধ্যে নিয়ে গেলে বেটার রেসাল্ট পাওয়া যায় .. আবার কারুর ক্ষেত্রে তার ফল হয় উল্টো, তাদের ad-লিব এক্সপ্রেশনগুলোই সিনেমার সম্পদ হয়ে উঠতে পারে। সেই মত কার কতটা ওয়ার্কশপ জরুরি সেটা ঠিক করা হয়েছিল।

    র: প্রথম দিন এর শুটিং এর কথা মনে আছে?
    স: বাব্বাহ, প্রশ্ন টা অদিতির মত হলো তো ! হ্যঁ¡, মনে আছে। গঙ্গায় শুট করা হয়েছিল। প্রচন্ড হাওয়া দিচ্ছে .. জোয়ার এর সময় ..আমরা একটা লঞ্চে ক্যামেরা নিয়ে আছি, হঠাৎ অন্যদিক থেকে প্রডিউসাররা দেখতে এলেন .. তার মধ্যেই একটা ক্রিটিকাল সিন .. যেটা ক্লাইম্যাক্সও বলা যায় .. শুট করা হলো .. অদ্ভুত অভিজ্ঞতা।

    র: ওকে, এবার মিউজিক নিয়ে কিছু প্রশ্ন। অটোগ্রাফ যে পুজোর বাজারেও লোকজন সময় বের করে হল্‌এ ভিড় জমিয়েছে, তার একটা কারণ প্রসেনজিত হলে দ্বিতীয়টাই ছবির মিউজিক। ছবিতে এতগুলো গান কিভাবে ব্যবহার করা হবে সেই নিয়ে ভাবনাচিন্তা ..
    স: হ্যঁ¡, প্রথমেই বলে রাখি .. শুরু থেকেই চেয়েছিলাম এই ছবির গানগুলোর মধ্যে পর্‌যাপ্ত ভ্যারাইটি রাখতে। যাতে একটা অ্যালবাম হিসেবেও গানগুলো একটা বিশেষ জায়গায় পৌঁছয়। ছোটবেলা থেকে যে গান শুনে বড় হয়েছি, বিশেষত হিন্দি, সেগুলো কিন্তু ফিল্ম অ্যালবামই। আবার আমি লিপ-সং রাখতে চাইনি.. গানগুলো সিনেমাতে জাস্ট আইটেম হিসেবে না থেকে যাতে গল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে সেদিকেও নজর দিতে হয়েছে। দেবুদা অসামান্য কাজ করেছেন, আর লোকজনের ভালো লাগছে মোস্ট ইম্পর্টান্টলি ডাউনলোড না করে অনেকেই অ্যালবামটা কিনছেন, বাড়িতে একটা ওরিজিনাল কপি রাখা প্রয়োজন মনে করছেন এটাও যথেষ্ট আনন্দের।

    র: দেবজ্যোতি মিশ্রর সঙ্গে কাজ করার এক্সপেরিয়েন্স কেমন?
    স: ভালো আর বাজে, দুরকমই। বাজেটাই আগে বলি .. দেবু দা একজন সঙ্গত কারণেই .. এত ব্যস্ত মানুষ, যে এরকম অনেকবার হয়েছে .. দরকার এর সময়ে ফোনে ওনাকে পাওয়া যায় না। তখন পাগল -পাগল লাগে কিন্তু একবার যদি সময় করে বসা যায় তারপর বাকিটা ম্যাজিকাল এক্সপেরিয়েন্স। আর শুধু গানগুলোই নয়, ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরটাও খুব ইম্পর্টান্ট .. ঠিক কোথায় কতটা প্রয়োজন, আর কোথায় একেবারেই প্রয়োজন নেই এই ব্যাপারটা দেবুদার মত বুঝতে আমি অন্তত এখনকার দিনে কাউকে দেখিনি ..

    র: আর শংকর মহাদেবন, শ্রেয়া ঘোষাল, রূপম অ্যালবাম বিক্কিরির ব্যাপারটা কি আগে থেকেই মাথায় ছিল? বলছি এই জন্যই যে শংকর মহাদেবনের গানটা বড়জোর দু'লাইন ব্যবহার করা হয়েছে ফিল্মে ..
    স: নাহ, ওই ভাবে বিক্কিরির ব্যাপারটা মাথায় ছিল না। কিন্তু হ্যঁ¡, আগেই বললাম .. মিউজিক অ্যালবাম হিসেবেও যাতে অটোগ্রাফ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয় সেটা মাথায় ছিল অবশ্যই।

    র: মিউজিকের ব্যাপারে চটপট দুটো প্রশ্ন। এক, বেঁচে থাকার গান দুবার দুজনের গলায় ব্যবহার করার কারণ কী? দুই, অনুপমকে দিয়ে "আমাকে আমার মত' গাওয়ানো কি একটু রিস্কি ছিল?
    স: আচ্ছা, বেঁচে থাকার গান টা অরিজিনালি অনুপম একটু অন্যরকম লিখেছিল। ফিল্মের প্রয়োজনে সেটা পরে পাল্টাতে হয়েছে। ফিল্মের শুরুতে ব্যবহার করার পক্ষে সপ্তর্ষির ভার্শনটাই সুটেবেল ছিল, আর রূপমের রেন্ডিশনটা গল্পের শেষেই ভালো যায়। আর অনুপমের ব্যাপারটা নিয়ে আমরা প্রচুর আলোচনা করেছি নিজেদের মধ্যে .. একটুও রিস্ক ইনভলভড ছিল না সেটা বলব না। ওই গানটার জন্য দু একটা নাম আলোচনাও করা হয়েছিল। অ্যাকচুয়ালি প্রথমবার অনুপম প্রথমে একবার রেকর্ড করে, পরে বাঙ্গালোর থেকে ডেকে পাঠিয়ে আবার গাওয়ানো হয়। এবারের ভার্শনেতে ওর গলায় ইমোটিভ যে আপিলটা ছিল ওই "যদি উড়ে যেতে চাও, তবে গা ভাসিয়ে দাও .. দুরবীনে চোখ রাখব না'.. যখন উচ্চারণ করছে তখন স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে হি মিনস ইট .. এরপর আর ভাবার কিছু ছিল না।

    র: অটোগ্রাফের প্রচারে একটা জিনিষ অনেকেরই নজর কেড়েছে .. রাস্তাঘাট এ হোর্ডিং বা পোস্টার প্রায় নেই .. কিন্তু কাগজে, FMএ, TVতে সারাক্ষণ শুধুই অরুণ চ্যাটার্জি।
    স: হেহেহে .. অ্যাকচুয়ালি এর জন্য টাইমিংটা দায়ি। পুজোর সময় বিজ্ঞাপনে কলকাতার স্কাইলাইন এমন ক্লাটার্ড থাকে যে পোস্টারগুলো সেভাবে আর চোখে পড়ে না। উল্টোদিকে এই সময় মানুষ TV দেখে অনেক বেশি .. আমি না, রিপোর্ট তাই বলছে .. প্রচারটা খুব ইম্পর্টান্ট ছিল .. মানুষ এই সময়ে ঘুরতে যাব, ঠাকুর দেখা, খাওয়া দাওয়া নিয়ে এমন ব্যস্ত থাকে যে একটু বাজ্‌ না ক্রিয়েট করতে পারলে লোকজনকে হল্‌এ নিয়ে যাওয়া মুশকিল ছিল। ইনফ্যাক্ট এই সপ্তমী রিলীজ নিয়ে আমি বেশ নার্ভাস ছিলাম। কিন্তু ভেঙ্কটেশ থেকে বলল যে ওরা চোখের বালিও পুজোতেই রিলীজ করেছে, চিন্তার কিছু নেই। আর মিউজিক ডেফিনিটলি হেল্প করেছে। নয়তো অষ্টমীর সন্ধের শো তে আইনক্সে মোর দ্যান ৭০% আটেনড্যান্স ভাবা যায় না।

    র: ‘Bloody, fickle public’এর ওপর ভরসা রাখছ তাহলে?
    স: হাহাহাহাহাহা .. অবশ্যই।

    র: এবার বল, অটোগ্রাফ কি পারফেক্ট ফিল্ম?
    স: ডেফিনিটলি নট। বেশ কিছু ভুলভ্রান্তি আছে, থাকবেই। কিন্তু এটা একটা অনেস্ট ফিল্ম। একেবারেই প্রিটেনশাস নয়। এটা আমি জোর গলায় দাবি করতে পারি এবং এটাই আমার অহংকারের জায়গা। এই চরিত্রগুলোকে আমি খুব ভালো করে চিনি, জানি। ঠিক যে কারনে এটা ভীষণ আরবান ফিল্ম।

    র: ফিল্ম নিয়ে দু-একটা প্রশ্ন করে নিই আমার নিজের জিজ্ঞাসা বলতে পার। সেকেন্ড হাফে শুভর ট্র্যানজিশানটা কি হঠাৎ করে হয়েছে মনে হয়না?
    স: হ্যঁ¡, হয়ত। একচুয়ালি আমরা কয়েকটা এডিট প্যাটার্ন নিয়ে ডিসকাস করেছিলাম। দিলীপ রায়ের সীনটা আগে দিলে হয়ত কার্ভটা আর একটু স্মুথ হত .. কিন্তু তার অন্য কতগুলো অসুবিধে ছিল .. বেস্ট পসিবল অপশনটাই নিতে হয়েছে।

    র: নায়কে বীরেশের সঙ্গে অরিন্দমের যে পোর্শনটা ছিল, সেটা এখানে একদম বাদ। কেন? বিতর্কে জড়াতে চাও না বলে?
    স: নট রিয়্যালি। ছোটবেলা থেকে বাড়িতে যথেষ্ট রাজনীতির আবহাওয়া ছিল। প্রেসি, JNUতে অ্যাকটিভ পলিটিক্স করতাম। আর এখন চারপাশে যা অবস্থা .. ওই পোর্শন টা রাখলে সেটা রেলেভান্টও হত। কিন্তু আমি ফিল্মটাকে যেভাবে ট্রিট করতে চেয়েছি তাতেই ওই অংশটা কিছুটা বেমানান ছিল ... আর সত্যি বলতে কি, শুভ যে ফিল্মটা বানাচ্ছে .. "আজকের নায়ক' .. তাতেই ওই অংশটা থাকতে পারে .. হয়ত আছেও .. কিন্তু অটোগ্রাফে সেই অংশটা দেখানো খুব প্রয়োজন বলে মনে হয়নি।

    র: ফিল্মটা কি একটু বেশি লম্বা? আজকাল সব ফিল্ম যেখানে 1 hr 45 minsএ শেষ হয়ে যাচ্ছে ..
    স: আই ডোন্ট এগ্রী। দু -একটা সীন, যেমন ধর, প্লেনে "মা ছিন্নমস্তা'র সীনটা, আরো দু একটা .. বাদ দেওয়া যেত হয়ত .. কিন্তু ছবির পেস নিয়ে আই অ্যাম পারফেক্টলি ওকে। অনেকেই জীবনের অনেক কাজে প্রচুর সময় ব্যয় করেন .. যদি ছবিটা শেষ পর্‌যন্ত দেখতেই আসেন, মনে হয় না ১০-১২ মিনিটের জন্য তাঁদের খুব অসুবিধে হয়েছে বলে। হলে আমি দু:খিত, বাট কান্ট হেল্প।

    র: আর বড্ড বেশি ক্লোজ-আপ। চোখে লেগেছে, সিরিয়াসলি।
    স: হ্‌ম্‌ম্‌ .. আসলে অভিনেতাদের , বিশেষ করে বুম্বাদার এক্সপ্রেশন বা মুখের মাংসপেশী, চামড়া .. তাদের ভাষাকে বেশি ধরতে চেয়েছি শুধু ডায়ালগের চেয়ে .. এখানে অনেকেই আমায় এই ব্যাপারে অভিযোগ জানিয়েছেন .. বাইরে দেখলাম ওরা এই ব্যাপারটা মোটামুটি ভালই নিয়েছে।

    র: আর এক্সপ্রেশনের কথা যখন এলো, নন্দনা সেন কি অটোগ্রাফ এর উইকেস্ট লিঙ্ক?
    স: নাহ্‌?! আমার মনে হয় নন্দনা যথেষ্ট ভালো করেছে। ইনফ্যাক্ট, বুম্বাদার সঙ্গে যে সীনগুলো ছিল .. আমি বলব ফাটিয়ে দিয়েছে .. যদি অন্য কোথাও কোনো খামতি থেকে থাকে, সে দায় পুরো আমার।

    র: চারপাশ থেকে কানে কী আসছে?
    স: ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়ররা, রিনাদি, ঋতুদা, মাধবী পিসি .. আরো অনেকে অসম্ভব প্রশংসা করেছেন .. সাপোর্ট করেছেন .. বন্ধুরাও বলেছে তাদের ভাললেগেছে .. আর সাধারণ মানুষের ফোন, sms, মেইল .. অ্যাকচুয়ালি কিছু মানুষের আমাদের কাজ ভালো লাগবে এটা আমি এক্সপেক্ট করিনি বললে মিথ্যে বলা হবে .. কিন্তু এখন দেখছি সেই সংখ্যাটা এত, এত, এত, এত বেশি .. যে নিজেই নিজেকে মাঝে মাঝে চিমটি কাটছি। একটি ছেলে চারবার সিনেমাটা দেখে আমায় পোস্ট করেছে তার স্ক্রিপ্টের কোন কোন জায়গা ইন্‌?কন্সিসটেন্ট লেগেছে .. অনেকেই জানিয়েছেন তাঁদের মাঝে মাঝেই অরুণ চ্যাটার্জী আর কুমারজিতের মধ্যে কনফিউশন হয়েছে ড্রিম সিকোয়েন্সটা অনেকেই ভেবেছেন অরুণ চ্যাটার্জীর, কিন্তু পরের বার দেখতে গিয়ে ধরতে পেরেছেন ..আসলে ওটা কুমারজিৎ .. একজন অচেনা ভদ্রমহিলা ফোন করে বললেন .. অমুক সীনটা দেখে আই অ্যাম মুভড .. কিন্তু এই সীনটাতেও সম্ভাবনা ছিল, কেন জানি না ওই অনুভূতিটা হলো না .. পরের ছবিতে যেন হয় ... আমি কৃতজ্ঞ ওদের প্রত্যেকের কাছে। তবে ওই যা হয় .. কেউ কেউ অহেতুক আমার ওপর রেগে যাচ্ছেন, গুরুজনরা বলছেন মাথা ঠান্ডা রাখতে .. দেখা যাক।

    র: আর রিভিউ? কাগজপত্রে যা লেখা হয়েছে রিভিউ হিসেবে, তুমি স্যাটিসফায়েড? মনে হয়নি এই ফিল্ম আরো বেটার রিভিউ ডিসার্ভ করে?
    স: ভালই তো বলছেন অনেকে .. অ্যাকচুয়ালি যিনি রিভিউ লিখছেন তাঁর সঙ্গে মতের মিল হলে বেশ মজা লেগেছে .. আবার না হলে মনে হয়েছে .. ও আচ্ছা ! উনি ব্যাপারটাকে এই ভাবে দেখছেন, আমি এই ভাবে ভেবেছিলাম ... কিন্তু তাঁকে সেটা বোঝানোর উপায়ও নেই .. সব মিলিয়ে আমি খুসি।

    র: অ্যাওয়ার্ডের কথা মাথায় আছে? অন্তহীনের পর কি ..
    স: দেখ, তুই বোধয় ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড মীন করছিস .. আমি অদ্দুর ভাবছিই না। লোকজন প্রচুর ভালোবেসেছেন, প্রডিউসাররা কনফিডেন্স পেয়ে আরো থিয়েটারে রিলীজ করছেন .. যেটা শুরুতে ছিল ৪০, আবু ঢাবিতে যথেষ্ট ভালো রেসপন্স পেয়েছি ফেস্টিভালে অন্য ডিরেক্টরদের থেকে .. ব্যাস ! তবে হ্যঁ¡, বাংলায় যে সমস্ত অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয় .. তাদের মধ্যে বেস্ট ফিল্ম, বেস্ট অ্যাক্টর আর মিউজিকে তো নমিনেশন অবশ্যই এক্সপেক্ট করছি।

    র: এর পর কী?
    স: জানি না রে। অনেস্টলি। একটা স্ক্রিপ্ট নিয়ে ভাবছিলাম, কিন্তু এই মুহূর্তে সেটা হচ্ছে না। দেখা যাক। কটা দিন একটু এনজয় করি। লোকজন অলরেডি অনেক কিছু প্রত্যাশা করতে শুরু করেছে .. তাই একটু সময় নিতে হবে।

    র: কাগজ কিন্তু অন্য কথা বলছে ..
    স: হ্যাঁ, শুনলাম। বলছে .. কিন্তু আমি বলছি না।

    র: ফিল্মটা রিলীজ করার পর বেশ পপুলার হয়ে গেছ কলকাতায়, ফেসবুকে বন্ধুর সংখ্যা প্রায় চার গুণ বেড়ে গেছে .. কী মনে হয়, এই ছবিটার জন্য লোকজন তোমাকে কেন মনে রাখবে?
    স: খামোখা মনে রাখতে যাবে কেন? তবে যদি একটা কারণ বেছে নিতেই হয় .. আমি বলব "সেন্স অফ হিউমার '। অ্যাট লিস্ট আই উড লাইক টু থিংক সো। সুধু ডায়ালগ নয়, কোনো কোনো জায়গায় একটা সিকোয়েন্সকে যেভাবে প্রেজেন্ট করা হয়েছে তাতে একটা অদ্ভুত হিউমার রয়েছে .. হয়ত একটু ড্রাই .. বাট আছে। আমি এখানে তিনজনের নাম করতে চাই .. একটা সাধারণ ঘটনা, সাধারণ সীনকে কীভাবে হিউমারাস করে তুলতে হয় সেটা আমি জানতাম না তিনজন না থাকলে। সুকুমার রায়, অস্কারওয়াইল্ড আর পরশুরাম। আর সেকন্ডলি, একজন ফিল্মের স্টুডেন্ট .. যে ফিল্মের আর্ট, কমার্স আর অঙ্ক .. তাদের মধ্যে যে কেমিস্ট্রি, যে রহস্য সেটা বোঝার চেষ্টা করছে মাত্র .. পারছে না , কিন্তু চেষ্টা করছে .. করতে করতেই একটা গল্প বলার অ্যাটেম্পট নিয়েছে, যেটা পারফেক্ট হয়ত নয়, কিন্তু অনেস্ট।

    র: লাস্ট কোশ্চেন, ডিরেক্টর নিজে প্রথম ফিল্মকে কত দেবে? লেটার মার্কস?
    স: উফ ..এটা বলা খুব শক্ত .. শুনতে ক্লিশে লাগবে কিন্তু নিজের ছেলেকে কেউ ঐভাবে নম্বর দেয়? তবে যদি জোর করিস .. ১০এর মধ্যে .. অ্যাকটিং এ আড়াই, স্ক্রিপ্ট এ দুই, মিউজিকে চার .. লেটার কতয় হয় যেন?
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১৪ জানুয়ারি ২০১১ | ৮৯১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত মতামত দিন