এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • নবারুণ ভট্টাচার্য বিষয়ে আমার মনে হওয়া কথাগুলি

    যশোধরা রায়চৌধুরী লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ০২ আগস্ট ২০১৬ | ২২১১ বার পঠিত
  • এক।

    দু বছর আগের বর্ষায় নবারুণের মৃত্যুর পর কতগুলো অজানা জিনিশ  জানা গেল। জানা গেল  নবারুণ একজন অতি জনপ্রিয় লেখক, এবং সর্বপূজ্য একজন আইকন। পিলপিল করে তাঁর কোটি কোটি অনুগামী গজাল, তাঁর বিদায়ের বেদনায় ফেসবুকচাপড়ানিতে কান পাতা দায় হল। তাঁর লেখা পড়ুক না পড়ুক, অন্যের লেখায় তাঁর নাম বসিয়ে বা তাঁরই দু একটি অতি পরিচিত পুরনো কবিতা জেপেগ করে, রাশি রাশি ভাইরাল করা হল। সবচেয়ে যেটা হল, সেটা হচ্ছে খিস্তিখাস্তা করে বাংলা লেখার একটা চেষ্টা হঠাৎ যেন ভীষণ ফ্যাশনদুরস্ত হয়ে গেল। সবাই লিখতে লাগলেন ‘নবারুণীয়’ ভাষায়, বাল, বাঁড়া, শালা, বাঞ্চোৎ ইত্যাদি সমাকুল এক একটি স্ট্যাটাস পোস্ট।

    নবারুণ কবির চেয়েও বেশি আইকন, একজন গড়পড়তা গদ্যলেখকের চেয়ে অনেকগুণ বেশি বৈপ্লবিক ভূমিকা তাঁর... এবং সাহিত্যিকের চেয়েও বেশি বড় সংগঠক। ভাষাবন্ধন একটা আন্দোলন নিশ্চয়তই। কিন্তু ভাবছি একটাই কথা। নবারুণের জীবিত কালে তিনি যদি দেখতেন তাঁর লেখার এত “ফলোয়ার” আছে তাদের প্রতি তাঁর সুভাষিতানি কী হত কে বা জানে। তাঁর সুপ্রাচীন কবিতা নিয়ে টানাটানি হচ্ছে দেখলেও কী যে বলতেন? যাহোক, আপাতত তিনি নেই, তাই কারুর কিছু বলার নেই। যে কেউ যা খুশি লিখতেই পারে।

    তবে নবারুণ যে “অননুকরণীয়” (যাকে উচ্চারণ করতে গেলেই বাঙালির জিভ জড়িয়ে আসে, এবং ‘ননু’ হয়ে যায় অন্য কিছু, কাছাকাছি কিছু, অসভ্য কিছু) অর্থাৎ সাদা বাংলায় ইনিমিটেবল, এই কথাটি মনে রাখা ভাল। যে কেউ ত্যাঁদড়ামি করতে চাইলেই ভাষা সেটা গ্রহণ নাও করতে পারে।

    দুই।

    আমার নিজের পাঠে নবারুণ। উপভোগ করেছি তাঁর লেখা। একটা অত্যন্ত দ্রুতগামী জ্বলন্ত ছুঁচোবাজির মত গদ্যটা। এই গদ্যের ভেতর কী আছে কী নেই, আমার সীমিত বুদ্ধিতে তার একটা লিস্টি পাকাতে চাইলে তা হবে এই রকম :

    ক। উত্তর কলকাতার মেজাজ। রকের আড্ডা। 

    খ। বিদ্যুত ঝলকের মত একটা উইট ও মেধা। যেটা নিচু মেধার লোক হওয়ার ফলে সব সময় ধরতে পারিনা, ফসকে বেরিয়েও যায়।

    গ। সব কিছুকে তুশ্চু করে দেওয়ার অদ্ভুত একটা অ্যারোগেন্স, যেটা সত্যিই অননুকরণীয়। এটা খুব বড় একটা গ্রুমিং, গজানো। পারিবারিক প্রাপ্তি, সামাজিক প্রাপ্তি, বড় হবার প্রক্রিয়া সব মিলিয়েই, নবারুণের যে শিকড় বাকড়, সবকিছুকে দেখা, বোঝা ও  তুলোধোনা করা ঔদ্ধত্যের মেজাজটা তাঁকে দান করেছে বলে মনে হয়।

    ঘ। একটা স্ববিরোধ। যেটা ডিকোড করে সঠিক পারিনা, (ওই নিচু মেধার লোক হবার ফলেই)। এই যে কোন “অ্যান্টি এস্টাবলিশমেন্ট” এর যেটা থাকেই। ওনার লেখায় উনি যে সবাইকে নিয়ে হাসছেন, এবং হাসতে হাসতে নিজেকে নিয়েও হাসছেন, কিন্তু আসলে হাসছেন কি? এই ধাঁধাটা আমার থেকেই যায়। ফ্যাতাড়ুর মূল প্রণোদনাই, ইতিহাস মোছা, শ্রদ্ধাভক্তি মোছা, আইকন ভাঙা একটা ইচ্ছাকৃত পতনশীলতা। সমাজের শ্রেণী ভেঙে ভেঙে গিয়ে উত্তর কলকাতার ভাঙাচোরা বাড়ির ততোধিক মূল্যবোধ হারানো রোথো লাথখোর পাবলিক হয়ে যাবার ইচ্ছে।

    এ ইচ্ছেটা যতটাই তীব্র, ততটাই কি আসলে তীব্র হয়ে ওঠে না, সেই মূল্যবোধগুলোকে কোথাও খুব খুব পাত্তা দেবার একটা অন্তরতম স্থান? 

    তিন।

    নারী-পাঠে নবারুণ / মেয়েলি ডিকোডিং : শেষ মেশ এখানেই এসে পৌঁছতে চাইছি আসলে। নারীবাদী হিসেবে, নারী বয়ানের একনিষ্ঠ সাপোর্টার হিসেবে, নবারুণকে কীভাবে দেখছি আমি?

    সেই নবারুণ, যার লেখা থেকে অসংখ্য উদাহরণ টেনে আনা যায় মিসোজিনি বা নারীবিরোধিতার, মূলগতভাবে সামাজিক নির্মাণে নবারুণের কলম যেভাবে ‘মাগি’ অথবা ‘খানকি’ শব্দ দুটিকে ব্যবহার করে তার, ডি এস-এর (ফ্যাতাড়ুর অন্যতম) বউ বাচ্চা-র যে ভূমিকা (যা আমাকে পরশুরামের উদো চরিত্রের ‘বউ’ কে মনে করায় বাধ্যতামূলকভাবে) যেভাবে বর্ণিত হয় তার। যে কোন নারী সংক্রান্ত বিষয় যেভাবে উচ্চারিত হয় তার। যেভাবে বর্ণিত হয় প্রতিটি যৌন অনুষঙ্গবাহী শব্দগুচ্ছ, তার।

    নবারুণ কে যদি নারীবাদীরা পাঠ করতেন, যেভাবে হেনরি মিলারের, নরম্যান মেইলারের, ডি এইচ লরেন্সের নারী-দর্শনের পুঙ্ক্ষাণুপুঙ্ক্ষ ডিকোডিং পড়েছিলাম, রবিন মরগ্যান অথবা কেট মিলেট এর কলমে, সেইভাবে? হয়ত “সে অনেক শতাব্দীর মনীষীর কাজ”।

    কিন্তু একইসঙ্গে আমি যখন নবারুণ পড়ছি, অসম্ভব রকমের আনন্দ পাচ্ছি, সে আনন্দের ‘ইন্টেলেকচুয়াল’ তরঙ্গভঙ্গিমা আমাকে তূরীয় এক উন্নয়নের দিকে ঠেলে দিতেই পারে। কারণ আমার পাঠক সত্তাও একটি নির্মিত সত্তা, তার অনেকটাই পুরুষকলম পড়ে পড়ে তৈরি। তার ভেতরের আস্বাদনের মুকুলগুলোকে দান করেছে বহুযুগের মনীষীদেরই লেখা, যাদের অধিকাংশ পুরুষ।

    যে কারণে আমি পরশুরাম পড়ে উদবেলিত, মেনস্ট্রিমের মেনস্ট্রিম শরদিন্দু পড়েও। যে কারণে আমি সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় পড়েও উদবেলিত। এই সব লেখকদের তুমুল তুমুল পুরুষতান্ত্রিক কলম, নারীকে, বা নারীর কিছু কিছু স্টিরিওটাইপ রচনা করে সামাজিক কার্টুনের চিহ্নিত করণের অসম্ভব সক্ষমতা, অবলীলাক্রমে ভাঁড়-টাইপগুলোকে চেনা লাগা জনিত আমাদের পাঠক উল্লাস (দু একটা উদাহরণ : পরশুরামের চিকিৎসা সংকটের ডক্টর বিপুলা, দ্বান্দ্বিক কবিতার সেই শঙ্করী দেবী যাঁর কবিতায় উদ্দাম লিবিডো লক্ষ্য করা গেছিল) ... অথবা অনায়াসে নারীকে শুধুমাত্রই ভোগ্য বলে চিহ্নিত করা (শরদিন্দু), বা যৌন সম্পর্কের ডিসব্যালান্সে এক পেশে এবং মনস্তাত্ত্বিক অত্যাচারী বলে (সন্দীপন) ... আমাদের আইডেন্টিফিকেশন, আমার পাঠক আইডেন্টিফিকেশন, থাকে আমার পরিচিত পুরুষ লেখনীটির সঙ্গেই, পুরুষ প্রোটাগোনিস্টের সঙ্গেই।

    এই সমস্ত ব্যাপারটাতেই আমি প্রথম পাঠে খেয়াল করিনা, ঐ ঐ তথ্যগুলি। নারীকে স্টিরিওটাইপ করার ওই ওই লক্ষণগুলি এড়িয়ে গিয়েই আমার রসাস্বাদন হয়।

    কিন্তু দ্বিতীয় ও সচেতন পাঠে আমি দেখতে পাই এই সব ক্রিয়াকর্ম। ঠিক যেভাবে ছোটবেলায় আস্বাদন করে, প্রায় চেখে চেখে চেটে চেটে পড়া উপেন্দ্রকিশোরের টুনটুনির গল্প-এর বাঘের বাচ্চাদের মেরে কেটে ঝুলিয়ে রেখে তেলের মধ্যে টপ টপ রক্ত পড়ার ছ্যাঁক ছোঁক আওয়াজ ও বাইরে বসে বাঘ বাবাজির সে আওয়াজে পিঠে ভাজা হচ্ছে ভাবার ঘটনা, আজকের আমার সচেতন দৃষ্টিতে, পরিবেশপ্রীতি ও পশুপ্রীতির দৃষ্টিতে বিষম, অসহ্য, পলিটিকালি ইনকারেক্ট, গ্রহণীয় নয়। ঠিক যেভাবে প্রায় অধিকাংশ রসালো প্রাচীন কাহিনি আজ হয় পাগল, নয় শারীরিকভাবে অক্ষম, নয় কোন না কোন ভাবে শোষিত মানুষের অ-সংবেদনশীল বিবরণের কারণে পরিত্যাজ্য হয়ে যাচ্ছে।

    আমাদের এই সময়ের চোখ, এই সময়ের পাঠক সত্তাও পরিবর্তিত হচ্ছে ক্রমাগত। আর তাই ক্রমাগত আমরা অসন্তুষ্ট হচ্ছি।

    অসন্তুষ্ট হবার মত এই সবই আছে নবারুণের লেখায়।

    কিন্তু একই সঙ্গে, নবারুণ তো এটাই চান। তিনি তো পলিটিকালি ইনকারেক্ট হতে বদ্ধপরিকর। তিনি তো সব নির্মিতি, প্রগতি, ও  বিশুদ্ধতার পরিপন্থীই হতে চান। তিনি কি চান না, পুরুষকেও এক একটি সামাজিক ভাঁড়, স্টিরিওটাইপে বিসর্জিত করতে, যেরকম মেয়েদেরও?

    সুতরাং তাঁর রচনায় ঘুরে ফিরে আসছে মিস পিউ মিস ঝিনুকের মত “সেলিব্রিটি–অভিনেত্রী”, যাদের বগলদাবা করে স্টেজে উঠছে নবনী ধর নামের বিশাল বপু মাল্লু টেনে টাইট বহুপ্রজ লেখক সেলিব্রিটি। তাঁর রচনায় আসছে রাস্তাঘাটের মেয়েরা, যারা দেখতে খানকি না হলেও আসলে খানকি। সকাল সকাল তারা রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে পুরুষ ধরতে। ডি এস বা পুরন্দর দাঁড়িয়ে যাচ্ছে “দর কত?” জিগ্যেস করতে।

    আসলে হেনরি মিলারের লেখা নিয়ে যেমন এক পোস্ট ফেমিনিস্ট বলেই ফেলেন, রাজনৈতিক সঠিকতাকে এক পাশে সরিয়ে রেখে তবেই পড়তে হবে এই নব্য ক্লাসিক, এবং ব্যক্তি জীবনে আমরা যে যে ধরণের সভ্য ভদ্র শাণিত এবং “ভাল” পুরুষদের সঙ্গে মিলব মিশব বলে আশা করি, তা থেকে ভিন্ন হলেও কলমের সঙ্গে কথোপকথনের ক্ষেত্রে আমাদের সরিয়ে রাখতেই হবে শুচিবায়ুগ্রস্ততাকে, পাঠক চোখকে রাখতেই হবে নিজের সামাজিক ভূমিকা থেকে বিচ্ছিন্ন, একইভাবে পড়তে হবে হারবার্টকে, তার মা –জ্যাঠাইমা – বছর এগারোর বুকি–কে। পড়তে হবে খেলনা নগরের  ভবিষ্যৎ ডিসটোপিয়া অথবা যুদ্ধ পরিস্থিতি-র আয়ুর্বেদ গ্রন্থের রমণ-রতি-বীর্য্য স্তম্ভ-র বিবরণকেও।

    চার।

    নবারুণের লেখায় আরো যা পাচ্ছি তা শৈশবের ইস্কুলে অভিনীত নাটকের মত, নারী চরিত্র বর্জিত তকমা লাগানোর মত আদিগন্ত পৌরুষ। ভিন্ন কনটেক্সটে, ভিন্ন অর্থে এই একই পৌরুষ সত্যজিৎ লীলা মজুমদারের কিশোর সাহিত্যেরও একটা দুর্বলতা ছিল। পৌরুষ এখন ঘেঁটে গেছে, তাই রকের বা বারোয়ারি পুজো মন্ডপের বা চকমেলানো পুরনো যৌথ পরিবারের বাবা জ্যাঠা কাকাদের কর্কশ, পরুষ, প্রচন্ড বীরত্বগুলো সব স্মৃতি। সেরকমই, নবারুণের এই অল-পুরুষ নৈর্ব্যক্তিকতা, শিব-সুলভ অনন্যতা, এক ধরণের আনন্দময় স্মৃতি দেয় আমাদের, মুক্তি দেয়, নস্টালজিয়াও দেয়।

    এও কাঙ্ক্ষিত রচিত অথবা নিজের অজানিতেই প্রবেশ করতে দেওয়া অন্ধত্ব তাঁর?

    আমি শুধুই আমার কিছু চিন্তার সুতো রেখে যাচ্ছি এখানে। তাবড় বিশ্লেষকরা এগুলো নিয়ে আর একটু খুঁড়ুন। আরো অনেকটা সময় দিন। হয়ত কিছু বেরোতেও পারে।

     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০২ আগস্ট ২০১৬ | ২২১১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Kallol | 116.212.208.9 (*) | ০৪ আগস্ট ২০১৬ ০১:৩৬81268
  • কোন লেখকই তার সময়কার তার সাঙ্গষ্কৃতিত শ্রেণী মূল্যবোধের বাইরে নন। চ্ন্ডীদাস, রবীন্দ্রনাথ, উপেন্দ্রকিশোর, সুকুমার নবারুণ কেউই নন।তারা তাই লেখেন যা লিখলে মানুষের ভালো হবে বলে তারা মনে করেন।ব্যতিক্রম অসাধু সিদ্ধার্থের লেখক, জগদীশবাবু।
  • cm | 127.247.96.27 (*) | ০৪ আগস্ট ২০১৬ ০১:৪২81269
  • যাক কল্লোলদা ব্যাক ইন সার্কুলেশন।
  • yashodhara | 233.223.128.117 (*) | ০৪ আগস্ট ২০১৬ ০২:০৩81270
  • রেলের টাইম টেবিল ? বেশ।
  • yashodhara | 233.223.128.117 (*) | ০৪ আগস্ট ২০১৬ ০২:০৫81271
  • পাঠ্ক -কে বেশ কিছুটা ধন্যবাদ।
  • h | 212.142.105.87 (*) | ০৪ আগস্ট ২০১৬ ০৫:৩৭81272
  • চমৎকার ক্লিয়ার লেখা। নো মেসিং অ্যারাউন্ড। ফ্যান্টাস্টিক। সোমনাথ/ইপ্সিতা/সৈকত আর যারা এই উদ্যোগে জড়িত, মানে কে জড়িত তাই জানি না, সকলকে ধন্যবাদ, এইটা একটা ছোটো মত মাইলস্টোন হলো, এই সংগ্রহটা, নবারুণের স্মৃতিতে।জ্জিও।

    আমার পার্সোনালি যেটা মনে হয়, মেয়ে নই, বা আইডেন্টিটি পলিটিক্স এ তেমন ভরসা রাখিনা বলে হয়তো খেয়াল করিনি, নবারুণ এর যৌনতা/প্রেম/সম্পর্ক এই গুলো লেখার বিষয় হতে পারে সেটা মেনে নিলেও, এই গুলো তাঁর লেখার বিষয় হোক সেটা চাননি, এবং আরেকটা কথা, চরিত্র নিয়ে প্রচুর লিখলেই, আসলে লিখছিলেন রাজনীতি এবং কনটেক্স্ট, তাই যা বলতে যার মুখ দিয়ে বলতে নিজের সব চেয়ে কম ইনহিবিশন লেগেছে, বলে দিয়েছেন।তাই কখনো কখনো রিপ্রেজেন্টেটিভ মনে হয়েছে। ডরিস লেসিং তো নবারুণ কে ক্ষমা করেই দিয়েছেন, পুরুষ হীন উপন্যাস লিখে ঃ-)))
  • ranjan roy | 24.96.161.80 (*) | ০৪ আগস্ট ২০১৬ ০৬:১১81273
  • পুরুষ/নারী একেকটা প্রেক্ষিত মাত্র।
    যশোধরার কলম পড়ে আমার মনের সুপ্ত প্রশ্নটি যেন শরীর পেল--"এ ইচ্ছেটা যতটাই তীব্র, ততটাই কি আসলে তীব্র হয়ে ওঠে না, সেই মূল্যবোধগুলোকে কোথাও খুব খুব পাত্তা দেবার একটা অন্তরতম স্থান?"
    -অব্শ্যই। এই তীব্র নিহিলিস্টিক নেগেশন যেন এর বিপ্রতীপে আস্থার খোঁজ।
    যে নাস্তিক প্রসাদ ছুঁতেও ভয় পায় যেন তার মতন।
    অবশ্যই একান্ত ব্যক্তিগত মত! অন্যেরা বলুন।
  • paThok | 69.160.210.3 (*) | ০৪ আগস্ট ২০১৬ ১১:১৪81266
  • অনেকগুলো ভাবনা, এবং একেবারে স্বকীয় ভাবনার সুতো সত্যিই। উদাহরণ সহ এক একটা কে নিয়ে আরেকটু খোঁড়াখুঁড়ি করলেই খুব রিচ একটা প্রবন্ধ তৈরি হয়, তবে এখানে যেটা এল সেটা একেবারে নির্মেদ, সটান, ক্রিস্প লেখা। অবজারভেশন অনেকগুলিই ইউনিক। সবগুলোর সাথেই একমত।
    দুই-এর ঘ কেই কি আমরা সাবভার্সান বলছি?
  • একমত | 188.20.55.18 (*) | ০৪ আগস্ট ২০১৬ ১২:২৮81267
  • শুচিবায়ু থাকলে যেকোনো সাহিত্য পড়াই চাপ । উপেন্দ্রকিশোর, শরদিন্দু, নবারুণ সবই । পলিটিকাল কারেক্ট বই চাইলে ট্রেনের টাইম টেবিল চলতে পারে ।
  • h | 212.142.105.87 (*) | ০৫ আগস্ট ২০১৬ ০৩:২২81274
  • একটু গোদা করে ও 'সঙ্ক্ষেপে' ;-) বক্তব্য আমার এই ছিলঃ এটা ভোগী গল্পে 'ডবকা মাগী' এই সব শব্দের ব্যবহারে প্রচন্ড অসোয়াস্তি তে পড়ার পরে লেখা। 'খানদানি খানকি' এই শব্দটার ব্যবহার আমার ততটা আশ্চর্য্য লাগে নি, কারণ যে কনটেক্স্টে বলা হয়েছিল, সেটা একটা ডি জেনেরারেশন কে দেখানো র জন্যৈ বলা। কিন্তু অটো ও ভোগী গল্পের অটো গল্পটায় 'ডবকা মাগী' শব্দবন্ধের হঠাৎঅ ব্যবহারে আমি খুশি হই নি, এবং সেই থেকেই বোঝার একটা চেষ্টা করেছিলাম।

    সংগঠন ও প্রতিনিধিত্ত্ব – এবং প্রতিনিধিত্ত্বের গাড্ডা
    ---------------------------------------------------
    ইউরোপে, বলশেভিক বিপ্লবের আগে, অযথা কেন্দ্রায়িত ' লেনিনিস্ট' অর্গানাইজেশন গড়ে ওঠার আগে, অসংখ্য ধরণের সোশালিস্ট, অ্যানার্কিস্ট, স্রেফ বিপ্লবী ব্যক্তিত্ত্বদের একসংগে রাস্তায় নামার একটা ঐতিহ্যছিল, এটা স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধের সময়েও ছিল, যারা কিনা ফরাসী বিপ্লবের বা পারীক মিউনের সাংগঠনিক দৃষ্টিভংগীতে নিজেদের গড়ে তুলেছিলেন।নবারুণের লেখার মধ্যে একটা বিচিত্র 'অনসম্বল' আমরা যে পাচ্ছি, তারএকটা বাম-রাজনইতিক ঐতিহ্যওরয়েছে। ভিক্টর সার্জের লেখা আত্মজীবনী বা১৯১৭ রইতিহাস, বা ডগমাটিক মার্ক্সবাদী ঐতিহাসিক বলে পরিচিত হবসবমের লেখা আনার্কিস্টদের প্রতি একটি শ্রদ্ধার্ঘে এই খবর পাবেন।
    এই মিশ্র নাগরিক বাস্তবতায়, দেহোপজীবী মহিলারা যেমন প্যারিস শহরে একটা সময়ে এলুয়ার সম্পাদিত 'লে হিউম্যানিতে' বিক্রি করতে পারেন, তেমনই, ফ্যতাড়ুরা নিজেদের ভদিসমাচার প্রকাশ করতে পারে, গ্রামীন ভোগী ট্যাক্সির জানলা দিয়ে মুচকি হেসে নগর দেখতে বেরোতে পারে, ভুতের কারবারী আর বিপ্লবী একই গল্পে জায়গা পেতে পারে, বা আলা আল আসওয়ানি রচিত 'দ্য ইয়াকুবিয়ান বিল্ডিং' গল্পটির মত কাইরোর ফ্ল্যাটে জোচ্চোর, প্রেমিকা, ইঞ্জীনীয়র, দর্জি, অসংখ্য বিচিত্র মানুষের সমাহার ঘটতে পারে।
    ৭০দশকের পর থেকে, আমাদের সাহিত্যে বাঙালি মধ্য উচ্চ মধ্যবিত্তের মনন জগতের একবর্ণীকরণ, বিশ্বায়নের পরে, গোটা জায়গাটার ঝিনচ্যাক অর্থনীতি র খেল হয়ে ওঠার বাস্তব কে নবারুণ অতিক্রম করতে চেয়েছেন মনে হয়েছে। এবং সেই কাজে নাগরিকতাকেই ব্যবহার করছেন। কারণ নগরে আর যাই থাকুক বিশুদ্ধতা নাই। এ কাজ, প্রতি-প্রাতঃস্মরণীয় স্বয়ং সাদাত হাসান মান্তো ছাড়া সফল ভাবে বেশি কেউ করতে পারেননি, অত সোজা না। নন ফিকশনে অবশ্য সুকেতু মেহতা পেরেছেন।

    তবে এদের কাজ শুধু বৈচিত্র প্রদান কিন্তু না। শুধুই একাকিত্ত্বে নিমজ্জিত বুদ্ধিজীবি এরা না, অপরাধে বা নেশায় আচ্ছন্ন যুবাও না।তাহলে নবারুণ ভট্টাচার্য্যের সংগে আর কারো কোন পার্থক্য থাকতো না, নবারুণের চরিত্ররা নাটকীয়, বিষন্ন হলেও তাদের অসহায়তার একটা অর্থনইতিক সামাজিক কারণআছে, শোষনের একটা বিশ্লেষণ আছে, ব্যংগ আঘাত করার একটা প্রচেষ্টা আছে, বসে থাকার লোক তারা না।তবে অসহায়তাও রয়েছে, স্টীমরোলার বা হালালঝান্ডা গল্পের চরিত্ররা যতটা সাহস দেখাতে পারছে, ফ্যাতাড়ুরা আরো বেশি নিঃসংগ, তাদের প্রান্তীকরণ অনেক বেশি সম্পূর্ণ, নিজেদের জগতের মধ্যে রয়েছে, তাদের অপেক্ষাকৃত গভীরতর অসহায়তা একধরণের তীর্যক রসিকতার জন্ম দিচ্ছে, ম্যাজিক আমদানি করতে হচ্ছে নবারুণকে কারণ সত্যি কথা বলতে কি, কারখানা , শোরুম, গ্যারেজ দখল বা প্রতিবাদ আক্রমণ যতটা কঠিন, তার থেকে ঢের কঠিন, অবয়বহীন, চাকুরীহীন বৃদ্ধির সময়ে ফিনান্স ক্যাপিটালের গতিরোধ করা বিশেষ করে নেতৃত্ত্বহীন অবস্থায়।

    তো বক্তব্য যেহেতু রাজনৈতিক, লিখনে সমস্যাটা তাই মূলতঃ সাংগঠনিক। কাদের নিয়ে এই জরদ গব অচলায়তনে ধাক্কা দেব, কে আমাকে সংগে নেবে, ইতিহাসের, কালের প্রশ্নের উত্তর কি ভাবে দেব, নীতি বা কৌশল কখন কি হবে, পূরবসুরিদের দায় কখন নেব, কখন নেব না, কখন শিখব, কখন ইতিহাস গড়ার আত্মবিশ্বাস রাখব, কাকে অচলায়অতন বলবো, কেন বলব, ক্ষমতাশীল রাজনীতির বিস্তৃত শৃংখলের ঠিক কোথায় আঘাত হানব, কোন বিতরকে কখন অংশগ্রহণ করব, কখন কোন মঞচ গড়ব, রাজনইতিক শত্রু চিহ্নিতকরণের প্রক্রিয়া কতটা ব্যক্তিগত হবে বা কতটা নৈর্ব্যক্তিক বিশ্লেষনাত্মক, কি গোপন করব বা কেন, বিকল্প গঠনের চেহারাটা, প্রতিটি দৈনন্দিন প্রকরণ থেকে বড় করে দেশ গড়ার কাজ ঠিক কি হবে, স্বৈরাচারী সম্ভাবনার নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা কি হবে, তাতে সংশয়, দৃঢ়তা আর ক্রোধ ঠিক কি মিশেলে থাকবে, মহাযানের আয়নায় প্রতিফলিত ঐতিহাসিক দৃশ্যাবলীর মতই এইসব প্রশ্নের থেকে যে কোন সিরিয়াস রাজনইতিক বুদ্ধিজীবীর মুক্তি নাই।

    শ্লোগান তৈরী, সংগঠন পরিচালনা, অসংখ্য মানুষের স্বপ্নের সাথী হতে পারা, অবিচার অসাম্য যেভাগ্য নির্ধারিত কিছুনা এইটে মানুষকে বোঝানো, এই প্রাথমিক কাজগুলির থেকে এই প্রশ্নগুলোর গুরুত্ত্ব কিছু কম না।তবে পলায়ন সম্ভব, শত্রুশিবিরে যোগদানও অসম্ভব কিছুনা, সহানুভূতির শুকনো সাজানো প্রদর্শনীতে মনোযোগ সম্ভব, একাকীত্ত্বে ডুব দেওয়া সম্ভব। তদগত তাত্ত্বিক দার্শনিক চিন্তায়, পড়াশুনোয় ব্যস্ত হয়ে পড়া, সবই সম্ভব।তবে কোনোটাই লিখতে লিখতে মানুষের মিছিলের পাশে থাকার অভ্যেস থেকে নবারুণ ভট্টাচার্য কে সরাতে পারেনি।বলা উচিত মানুশের পাশে থাকতে থাকতে লেখা, অনেক লেখাই ওয়ারক ইন প্রোগ্রেস, পালিশ নাই। এই গোত্রে আমি ‘মাসোলিয়াম’ কে রাখবো।

    এটা মনে করার কারণ নেই, শৈলী নির্বাচন, ভাষার ঐতিহ্যের বিপুলতার মধ্যে নিজের স্বরটি খুঁজে পাওয়া, অথবা মূলধারার প্রকাশনার পছন্দের তোয়াক্কা না করে সম্পূর্ণ একটা সমান্তরাল মুদ্রিত জগত তৈরি করে ফেলার ক্ষমতা বা সৈনিকের যোগান রাখার সমস্যা কিংবা সত্য বা বাস্তবতা সংক্রান্ত লিখনের দার্শনিক সমস্যা সমূহকে ছোটো করে দেখছি, কিন্তু লেখক নবারুণ ভট্টাচার্য্যের কাছে বামপন্থী রাজনীতির ঐতিহাসিক ও সাংগঠনিক সমস্যা, অন্তত আমার মনে হয়েছে, নিয়ন্ত্রক ভূমিকা পালন করেছে।

    অথচ পার্টি সংগঠন জিনিসটা সোভিয়েত নিরীক্ষাটির ব্যর্থতার পরে বিশেষতঃ যখন একেবারেই নির্জীব বাজে আমলতন্ত্রে ভর্তি, পরিবর্তনে নেতৃত্ত্ব-প্রদানে অক্ষম মনে হচ্ছে, তখন বিভিন্ন প্রতিনিধিত্ত্বমূলক সংগঠনের জন্ম হচ্ছে রাজনীতিতে। এনজিও বস্তুটার জন্ম হচ্ছে। জন ক্ষমতায়নের একটা সরকারী এবং শান্তিপূর্ণ সময়ে অনুমোদিত গ্রহণযোগ্য চেহারা তৈরী হচ্ছে।

    লেবার-কনজারভেটিভ-কংগ্রেস-কমিউনিস্ট- ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদী- উগ্র জাতীয়তাবাদী এইসব নানা প্রকার ছাড়াও, ধরুন বিকল্প সন্ধানেও কিন্তু একক বিষয়কে কেন্দ্র করে ভাবনা ও সংগঠন গড়ে উঠছে।

    এমনকি আমেরিকার কৃষ্ণাংগ আন্দোলন বা দক্ষিন আফ্রিকার বর্ণ বৈষম্যবাদী আন্দোলনেও যে রাজনইতিক জেনেরালিটি ছিল, তাকে প্রথম চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ছে নারীবাদ। বিষেষতঃ সেই নারীবাদ যেটা রাজনইতিক অঙ্গন থেকে সরে আসছে খানিকটা, অথচ ব্যবহারিকতায়, দৈনন্দিনে যে অনেক বেশি ব্যাপক। বিকল্প সন্ধান তার বিস্তৃত এবং অদ্যাবধি স্বীকৃত সাধারণত্ত্ব হারাচ্ছে। বিকল্প গঠনে মার্ক্সবাদী জেনেরালিটির নেতৃত্ত্বের অবস্থান শেষ হচ্ছে। পরিবেশ সংক্রান্ত রাজনীতিতেও একই সংকট আরো ঘনীভূত হচ্ছে। আমাদের দেশের জাতি সত্তার রাজনইতিক প্রকাশের যে উত্থান হচ্ছে, এবং ইসু ভিত্তিক কোয়ালিশন পলিটিক্স যে যার একটা উত্তরণ হচ্ছে, তা অচিরেই একটা প্রতিনিধিত্ত্বের গাড্ডায় পড়ছে, এবং সেই গাড্ডা থেকে উগ্র ধর্মীয় রাজনীতি নতুন গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে।

    কিন্তু নবারুণ এমনকি ইসুভিত্তিক রাজনীতির ফ্যাশনেও পা মেলাচ্ছেন না, অন্তত লেখক হিসেবে।বলতে চাইছি যে কাঙাল মালসাটের প্রকাশের আগে তো সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম ঘটেনি, তাহলে জোয়ারদারদের সংগে একেবারে যুদ্ধ কেন? সেই ১৯৭৯ তেই বুড়া কাহারের গল্পে , ক্ষমতাসীন বামপনথীদের গ্রামীনক্ষেত্রেও বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত করছেন, অথচ যখন গ্রামে সিপিএমএর শাসন সংক্রান্ত গল্প লিখলে মিডিয়া প্রতিষ্ঠানে যে বেশ জায়গা পাওয়া যেত, সে পথে হাঁটছেন না।

    ধরুন সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে একটা গল্প পাছি, কিন্তু ১৯৮৯ থেকে ২০১০এর মধ্যে এই বিষয়ে কোনো ফিকশন পাচ্ছিনা। সমাজের ক্ষমতা বিন্যাসের দিকে ছুঁড়ে দেওয়া তাঁর চ্যালেঞ্জ কোনো 'রাজনইতিকমহল' নামক বিচিত্র খেলনা ঘরেআলোড়ন তোলা নতুন ইসুর উপরে নির্ভরশীল না।সরাসরি মানুষের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর তাঁর লক্ষ্য, তার যাকে বলে পাঁজি লাগে না।

    নারীবাদীরা, পরিবেশবাদীরা, সমকামী বা অন্যান্য প্রান্তীয় যৌনতার আত্মপ্রকাশ ভিত্তিক সংগঠন গুলি, আমাদের দেশে জাতভিত্তিক সংগঠনগুলি গড়ে উঠছে। এই ফ্র্যাগমেন্টেশন বর্ণ আন্দোলনের দেশগুলিতে আগেই হয়েছে, আমাদের একটু পরে হচ্ছে। এইবার মজাটা হল, প্রতিবাদী লেখকের কাজটা কঠিন হচ্ছে। শুধুই শ্রমিকের বা কৃষকের কথা বললে যথেষ্ট বিকল্প থাকা যাচ্ছে না, দলিত বা নারীবাদী বা আদিবাসী, যৌনতা সংক্রান্ত রাজনইতিক ইস্যুগুলির প্রতি সমবেদনা, কোথাও পরষ্পর বিরোধীভাবেও রাখতে হচ্ছে। ধরুন গুজরাটে বাঁধ হলে প্রতিবাদে , জীবন ও যাপনের স্বাধীনতার প্রশ্নে এগিয়ে আসতে হচ্ছে, উন্নয়নের ছকে জায়গা না পাওয়া মানুষদের তারা শুধুই কৃষিজীবি হয়তো নন, আদিবাসীও।

    এখন এই পরিস্থিতিতে বিষেষত দলিত সাহিত্যের একটা অসামান্য কাজকর্মের প্রকাশের ফলে মূলধারার আশেপাশে থাকা সংবেদনশীলরাও একটা গুঁতো খাচ্ছেন। বাঘারু রাজবংশী কিনা জিজ্ঞাসা করতে উৎসাহিত হচ্ছেন কেউ কেউ। শুধু বাঁধে ভেসে যাওয়া হলে চলছেনা। এমতাবস্থায় কিন্তু নবারুণ, ইলিয়াস ইত্যাদিরা যেসব চরিত্র তৈরি করছেন, এমন অনায়াস মুন্সীয়ানায় করছেন, যে এঁরা সমাজের তলানি এটুকু জানলেই তাদের আপন করে নিতে সংবেদনশীল পাঠকের অসুবিধে হচ্ছেনা।

    এছাড়া বাংলায় দলিত সাহিতের বিকাশের কাজটা শ্লথ হচ্ছে, তাতে মূলতঃ উচ্চবর্ণ বামপন্থীদের দায় দেওয়া হয়ে থাকে, ভদ্রলোকের রাজনীতিকে দায় দেওয়া হয়ে থাকে, তার অনেকাংশ হয়তো সত্যি , তবে একথা ভুলে গেলে চলবে না, ফ্যাতাড়ুরা দলিত কিনা বা হাড্ডি খিজির চাকমা কিনা এ প্রশ্ন অবান্তর হচ্ছে মূলতঃ স্রষ্টার দীর্ঘস্থায়ী রাজনইতিক অবস্থানের কারণে।

    কার্ডবোর্ড প্রতিনিধিত্ত্বের রাস্তা এড়াচ্ছেন নবারুণ, উপন্যাসের মহিলা চরিত্ররা যথাযথ এগিয়েথাকা পরিবর্তনের কান্ডারী হয়ে উঠলেন কিনা, এইসব বিশেষ মাথা ঘামাচ্ছেন না, বেগম জনসন কিছুটাব্যতিক্রম।সমকামীতার আত্মপ্রকাশকে নতুন রাজনীতি হিসেবে পাত্তা দিচ্ছেন না (ঋত্বিক প্রসংগে বক্তৃতা), শুধু মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এই বিষয় নতুন না, স্বয়ং টমাস মান ডেথ ইন ভেনিস লিখে গেছেন, আমরা ও খুব ভালো না লাগলেও, আন্দ্রে জিদ এর ইমরালিটি আগেই পেয়েছি, পরে ভাল লেগেছে যখন মানুএল পুইগকে পেয়েছি, রবার্টো বোলানোর লেখায় অসামান্য ভাবে পেয়েছি সমকামী প্রেম।

    কিন্তু এটা নবারুণ ঠিক করেন নি, মানতে হবে যে এই আত্মপ্রকাশের পরিসর আগে ছিলনা বেশি, এখন এসেছে, নারীবাদী আন্দোলনের হাত ধরেই এসেছে, একে সম্মান করতে হবে।

    অথচ আমরা দেখেছি, পরিবেশবাদীদের প্রতি তিনি অনেক বেশি সহজ সমবেদনা পূর্ণ, প্রতিটি প্রাণীকে নিয়ে জড়িয়ে বাঁচতে চান। হতে পারে যৌনতা কে রাজনইতিক আত্মপ্রকাশের বাহন হিসেবে দেখায় একটা প্রাক ষাট-দশকীয় কুন্ঠা তাঁর থেকে গেছিল।

    তবে একটা কথা মানতেই হবে, ৯০ দশক থেকেই বিপুল অসংগঠিত নাগরিক শ্রমশক্তি বা শুধুই শ্রমটম কিছুনা এমনি ফ্যাফ্যা-কার্তিক মানুষ, যারা বেহালা থেকে বড়বাজারে ধনের দর দেখতে যায় অকারণে, যারা হালাল ঝান্ডার আওতার বাইরে, তাদের একটা নতুন জায়গা হয়ে দাঁড়াচ্ছে নবারুণের নভেল।

    এতটাই যে , আজ থেকে অনেক বছর পরে, যদি কাউকে তৃণমূলের উত্থানের ইতিহাস লিখতে হয়, তাকে উপাদান হিসেবে, অন্যান্য সাময়িক পত্র, সরকারি বেসরকারী নথি, পাবলিক কালচারের জিনিসপত্র তো বটেই, সংগে নবারুণের লেখাপত্রও পড়তেহবে।এইটে সত্যি কথা বলতে কি, নবারুণের সবচেয়ে বড় ঐতিহাসিক কীর্তি, স্থানাংকের হিসেবে। সময় মানুষকে দিয়ে লিখিয়ে নেয়, সময়ের ডাকে কজন সাড়া দিতে পারে।এই প্রতিনিধিত্ত্ব বড় সোজা কথা না।

    ৮০ র দশকে ৯০ এর দশকে ক্রমাগত একই সঙ্গে নগরায়ন ডি-ইন্ডাসট্রিয়ালাইজেশনের কারণে, বড় ট্রেড ইউনিয়নগুলির গ্রহণ যোগ্যতা কমে যাওয়ার কারণে, সাধারণ মানুষথেকে বিচ্ছিন্ন নগরায়নের অর্থনইতিক ভিত্তির কারণে, নতুন পরিচয়ের রাজনীতি অনেক রাজনইতিক শক্তিবৃদ্ধি হলেও অর্থনইতিক বা সাংস্কৃতিক সুরাহা কিছু তেমন না হওয়ার ফলে, বিপুল অসংগঠিত শ্রমশক্তি ঢেউ এর মত সারাদেশ জুড়ে আসছে। এরাই নতুন শহরের নতুন তলানি। এদের কে কোন বামপন্থী অ্যাড্রেস এখনও পুরোটা করতে পারেন নি, নবারুণ হয়তো পারেননি, কিন্তু একটা জায়গা দিচ্ছেন।কালীঘাটের ফ্যাতাড়ুদের একটু আদিকালীঘাটী দ্যামাক আছে বটে, কিন্তু অটোর নায়ক, চিতামানুষ, আব্বা কাহিনীর সদাশিব, এরা ভারতীয় সাহিত্যের প্রান্তরে উপস্থিত হওয়া নতুন মানুষ, যাঁরা একটা বিশেষ অর্থনীতির ও রাজনীতির ফসল ও আবর্জনা, একাধারে।
  • b | 135.20.82.164 (*) | ০৫ আগস্ট ২০১৬ ০৩:৫৩81275
  • হনুবাবু একটু বেশি করে লিখলেও তো পারেন
    (ডিঃ ব্যক্তিগত মতামত)
  • pangash | 233.191.26.29 (*) | ০৫ আগস্ট ২০১৬ ০৪:৫১81279
  • অত্যন্ত একপেশে লাগল । অন্য লেখাগুলোর তুলনায় বেশ খাজা ।
  • porchhi | 69.160.210.3 (*) | ০৫ আগস্ট ২০১৬ ০৬:১২81276
  • বোধিদার এটা কি নতুন লেখা না কোথাও প্রকাশিত়?

    ** "ধনের দর" = ধানের দর?
    ** অনসম্বল = ?
    ** ইসু ভিত্তিক কোয়ালিশন পলিটিক্স যে যার একটা উত্তরণ হচ্ছে = ইসু ভিত্তিক কোয়ালিশন পলিটিক্স-এ যার একটা উত্তরণ হচ্ছে ?
    ** নতুন পরিচয়ের রাজনীতি অনেক রাজনইতিক শক্তিবৃদ্ধি হলেও = নতুন পরিচয়ের রাজনীতির অনেক রাজনৈতিক শক্তিবৃদ্ধি হলেও ?
  • bip | 183.67.3.44 (*) | ০৫ আগস্ট ২০১৬ ০৭:৩৩81277
  • নাবারুনের লেখার মধ্যে কোন গভীরতা নেই- বামপন্থার চর্বিত চর্বন। শুধু ভাষার মুন্সিয়ানা- প্রচলিত লিঙ্গোর ব্যবহার। সেই কৃতিত্ব তার প্রাপ্য। কিন্ত ভেতরে কিছুই না।
  • ranjan roy | 127.198.23.3 (*) | ০৫ আগস্ট ২০১৬ ১০:৩১81278
  • বিপের চোখ কি হারবার্ট বা ফ্যাতাড়ুর মধ্যেও "কোন গভীরতা নেই- বামপন্থার চর্বিত চর্বন" ছাড়া কিছুই দেখতে পায় না?ঃ(((
  • উৎসুক | 195.93.182.135 (*) | ০৭ আগস্ট ২০১৬ ০৬:১৫81280
  • লিঙ্গহিংস্রতার শিকার যারা তাদেরই কেউ যদি লেখে যে এখানে লিঙ্গহিংস্রতাকে পাশে সরিয়ে রেখে পড়তে হবে আর তাতে কেউ এসে দোহারকি দেয় যে সরিয়ে না রাখলে সেটা শুচিবায়ুগ্রস্ততা তবে কেমন হতাশ লাগে। তবে অবশ্য নবারুনের কাল্ট হওয়া ঠেকায় কে।
  • ketaki | 11.39.36.108 (*) | ১৩ আগস্ট ২০১৬ ০৮:০১81281
  • পড়ছি।ভালো লাগছে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট প্রতিক্রিয়া দিন