এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • শাক্যজিতদার মতামত/পোস্ট খণ্ডন

    Parichay Patra লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৬ আগস্ট ২০১৫ | ১৬২০ বার পঠিত
  • শাক্যদার মত খণ্ডন করার কথা অনেকদিন ধরেই বলেছি। শাক্যদার এতাবধি সবচেয়ে বিতর্কিত পোস্ট ছিল অভিজিৎ রায়ের হত্যার কিছুদিন পরে করা। সেখানে মূল অভিযোগ ছিল নিজের রচনায় পশ্চিমের নিও-এথিজমকে অবিকৃতভাবে কার্যত অনুবাদ করেছেন অভিজিৎ সহ নানাজন, সেটি তাঁদের দেশের পক্ষে উপযুক্ত কিনা তা না ভেবেই, এবং পশ্চিমের এই নিও-এথিজমের তল্পিবাহক হয়ে তাঁরা আদতে সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থই রক্ষা করছেন, নিজেদের জ্ঞানত বা অজান্তে যাই হোক না কেন। আমি বরাবর বলে এসেছি শাক্যদা যে সমস্যা প্রসঙ্গ তুলছেন সেটি একটি তাত্ত্বিক সমস্যা, তাকে তত্ত্ব দিয়েই খণ্ডন করতে হবে, তাঁকে আক্রমণ করে এর কোন সমাধান হবে না। অতএব আমি এখানে যা করব তা হলঃ

    ১। শাক্যদার মতামতকে ২-৩ টি অংশে ভেঙ্গে নেব, একটা বেসিক প্রেমাইস তৈরি করব।
    ২। শাক্যদার মতকে সমস্যায়িত করব।
    ৩। তত্ত্ব দিয়ে শাক্যদার বাচনের মধ্যের সমস্যায়িত অংশগুলিকে চিহ্নিত করব, যাতে করে বেসিক প্রেমাইসটা, টেক্সটটা আনহিঞ্জড হয়ে যায় এবং ভেঙ্গে পড়ে। এখানে আমি ব্যবহার করব প্রধানত উত্তরউপনিবেশবাদী এবং ট্রান্স-নেশন সংক্রান্ত নানা থিওরি।
    এবার দেখুন আমরা শাক্যদার মূল মতামত থেকে কি পাচ্ছিঃ
    ১। নিও-এথিজমের লেখাপত্র প্রধানত অনুবাদ করা হয়েছে।
    ২। তাতে করে পশ্চিমের যে প্রজেক্ট, অর্থাৎ ইসলাম সম্পর্কে ফোবিয়া নির্মাণ তার উদ্দেশ্যই সিদ্ধ হয়েছে।
    ৩। প্রাচ্যদেশীয় কোন মত এ থেকে উঠে আসছে না, প্রাক্তন কলোনির মানুষের ইউরোপের মতবাদগুলিকে গ্রহণ করার প্রবণতাই দেখা যাচ্ছে।

    এবার আসুন আমরা এগুলিকে সমস্যায়িত করি। তার আগে সমস্যাকে দুভাবে আমি ভেঙ্গে নিই। মূল বিষয় দুটি, ১। বাংলাদেশে এই ধরনের পশ্চিমী তত্ত্বের অনুবাদ প্রসঙ্গ, ২। প্রাক্তন উপনিবেশের উপনিবেশবাদীর রচনা অনুবাদ এবং রিসেপশন প্রসঙ্গ।

    এবার দেখুন বাংলাদেশের অ্যাকাডেমিয়ার দিকে। ইতিহাসের প্রেক্ষিতের দিকে তাকালে দেখব বাংলাদেশে সোশ্যাল সায়েন্স বা তত্ত্বচর্চার অ্যাকাডেমিক ক্ষেত্রটিই প্রস্তুত করা যায় নি। দেশভাগের সময় অধ্যাপক-শিক্ষাবিদদের অনেকের পাকিস্তান ত্যাগ, ১৯৭১ এর বুদ্ধিজীবী হত্যা, এবং আশির দশকে সামরিক শাসনামলে বেশিরভাগ অ্যাকাডেমিকের নানা উপায়ে দেশত্যাগ এর কারণ। গণতন্ত্রের অভাবে ইতিহাসচেতনা, চর্চার জায়গা তৈরি হয় নি। পার্টিজান ইতিহাস এসেছে, আওয়ামীপন্থী মুনতাসীর মামুন বা ইসলামপন্থী বাম বদরুদ্দীন উমর যেমন। আলী রিয়াজরা সারাজীবন দেশের বাইরে থেকে কাজ করে গেছেন। মাওলানা ভাসানীর জীবনী লিখেছেন সৈয়দ আবুল মকসুদের মত গান্ধীবাদী অ্যামেচার, তাই গৌতম ভদ্রকে বাংলাদেশ গিয়ে ঘোষণা করতে হয়েছে ভাসানীর উপরে তিনি নিজেই লিখবেন। এই পরিস্থিতিতে ব্লগাররা ইতিহাস, সমাজতত্ত্ব, এবং পশ্চিমের তত্ত্ব নিয়ে লিখছেন। বাংলাদেশে ফুকো আর দেরিদার লেখাপত্রের কিছু কিছু অনুবাদ হয়েছে, আরও কারুর কারুর লেখা হয়েছে। যেমন কিয়েরকেগার্ড নিয়ে গোলাম ফারুকের বই, নারীবাদ বিষয়ে হুমায়ুন আজাদ, সাদাফ নূর-এ-ইসলাম ও মির্জা তসলিমা সুলতানা, পোস্টমডার্নিজম নিয়ে বেহনুসা আহমেদ ইত্যাদি। কিন্তু এগুলি খণ্ডের ছবি, সমগ্রের নয়। পশ্চিমবাংলায় ফুকোর ৪টে গুরুত্বপূর্ণ জীবনী মন্থন করে তাঁকে নিয়ে বই রয়েছে বাংলায়, ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র থাকাকালীন সেই বই পড়ে তারপর আমি মূল জীবনীগুলি, অর্থাৎ ডেভিড মেসি বা জেমস মিলারের ফুকো জীবনীগুলিতে হাত দিয়েছিলাম, যেগুলির নানা অংশ না পড়লে ফুকোর রচনা পড়াই যায় না। দেরিদা বিষয়ক যে অসামান্য সংকলন করেছেন কলকাতার অনির্বাণ দাশ, ‘বাংলায় বিনির্মাণ-অবিনির্মাণ’, তার দ্বারা অনেক উপকার হয়েছে উৎসাহী পাঠকের, সেখানে গায়ত্রী স্পিভাক থেকে দীপেশ চক্রবর্তী, শেফালী মৈত্র থেকে স্বপন চক্রবর্তী, রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য থেকে অজিত চৌধুরী, শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে মৈনাক বিশ্বাস, কে লেখেন নি? আবার সেই সংকলনেই দেরিদার চিঠি এবং কিছু প্রবন্ধের গুরুত্বপূর্ণ অনুবাদ ছিল। বাংলাদেশে সাহিত্যের অনুবাদ অনেক বেশি, অতি সম্প্রতি আমার এক বন্ধু সেখানে এক পত্রিকার বিশেষ মারিয়ো ভারগাস ইয়োসা সংখ্যা সম্পাদনা করলেন, যেখানে আলম খোরশেদ বা রফিক-উম-মুনীর চৌধুরীর মত স্প্যানিশ অনুবাদকরা লিখেছেন। কিন্তু তত্ত্বের জগতে এটা অপ্রতুল। তাই তত্ত্বের, সে যে তত্ত্বই হোক, আরও বেশি অনুবাদ দরকার। নিও-এথিজমেরও দরকার। এই গেল কনটেক্সট। আসুন এবার তত্ত্বের জগতে।
    যেভাবে অভিজিৎদাদের দ্বারা মেসেজ কমিউনিকেট করার (বা না করার) অভিযোগ করা হয়েছে সে বিষয়টিকে বুঝতে আমি রোমান ইয়াকবসনের বিখ্যাত গঠনবাদী ছকটি এখানে দিলাম। নীচে দেখুনঃ

    Context
    Sender--------Message----------Receiver
    Channel
    Code

    এখানে সেন্ডার ব্লগাররা, মাঝে আছে মেসেজ, পাচ্ছে রিসিভার, উপরের কনটেক্সট ইতিমধ্যেই আমরা কিছুটা বুঝেছি, চ্যানেল আর কোড (ইয়াকবসনের ভাষায় ফ্যাটিক আর মেটালিঙ্গুয়াল কর্মপদ্ধতি) দুটি জিনিসের উপরে নির্ভর করে। টাইপ অফ টেক্সট আর টেক্সটের ফাংশন। শাক্যজিতদার গোটা প্রেমাইসটাই দাঁড়িয়ে আছে এই বিষয়গুলির উপরে, শাক্যজিতদা একটি গঠনবাদী ধারণা-কাঠামো নির্মাণ করেছেন। আসুন দেখি আমরা আমাদের উত্তর গঠনবাদী পাঠ প্রক্রিয়ায় এই কাঠামোর মধ্যে ছত্রীসেনার মত অনুপ্রবেশ করতে পারি কিনা।

    শাক্যদার প্রধান অভিযোগ টাইপ অফ টেক্সট নয়, তার ফাংশন নিয়ে, নিজের জিওপলিটিক্যাল ক্ষেত্র অব অরিজিন থেকে দূরে এসে সেই টেক্সট কি করে তা নিয়ে, তা বাংলাদেশ/প্রাচ্যের চিরায়ত ট্র্যাডিশন আর নিজস্ব মডার্নিটির ধারণায় কম্প্যাটিবল কিনা তা নিয়ে। মূল টেক্সট আদতে সাম্রাজ্যবাদীর হাতিয়ার কিনা সেটা এখানে অবান্তর, অন্য এক লোকেশনে তার পঠন প্রক্রিয়াই এখানে বিবেচ্য। এখানে তিনটি তত্ত্বের আলোচনা আনলেই এই কাঠামো হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়বে।

    ১। উত্তর ঔপনিবেশিক তাত্ত্বিক ভাবনায় কেবল রেসিস্তঁসের ধারণা এখন প্রাচীন, মার্ক্সবাদের অবশেষ এবং মৃত। ফ্যানন বা আমিলকার ক্যাব্রালদের যুগ এ নয়, তাঁদের অবদান স্মরণে রেখেই মনে করিয়ে দিই যে আজকের তত্ত্ববিশ্বে miscegenation এর ধারণা অনেক বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। কলোনি আর কলোনিকর্তার এই আদানপ্রদানের সম্পর্ক অনেক বেশি জরুরি। আর এখানে ইনফ্লুয়েন্সের গল্প, সেন্টারে ইউরোপ আর মার্জিনে এশিয়া, এই মডেল আর কার্যকর নয়। আজকে কলিন বার্নেট যখন মণি কাউল আর ব্রেসঁ নিয়ে লেখেন তখন তিনি একজনকে মার্জিন আর একজনকে সেন্টারে রাখেন না, তাদের দুজনকেই নিয়ে আসেন কার্ল পপারের মেথডলজিক্যাল কালেক্টিভিজম আর মেথডলজিক্যাল ইন্ডিভিজুয়ালিজমের দ্বন্দ্বের/বোঝাপড়ার আলোচনায়। এতে অনেকগুলি কালচারাল ফর্মেশন তৈরি হয়। আবার লীলা গান্ধী উত্তর উপনিবেশের আলোচনায় তাই কলোনাইজার পশ্চিম আর কলোনি পূর্বের কিছু কিছু সমমনা ব্যক্তির আদানপ্রদানের কথা বলেন, পশ্চিমের সহমর্মী লেখকের ধারণাকে তত্ত্বায়িত করেন, তার নাম দেন অ্যাফেকটিভ কমিউনিটি।

    ২। ট্রান্স-নেশন, ট্রান্সন্যাশনাল কালচারাল ডিসকোর্স ইত্যাদি ধারণার উদ্ভব। যেমন গায়ত্রী স্পিভাক তাঁর ‘আ ক্রিটিক অব পোস্টকলোনিয়াল রিজন’ এ বলেছেন যে কলোনিয়াল ডিসকোর্স স্টাডিজ থেকে ট্রান্সন্যাশনাল কালচারাল স্টাডিজ যাত্রাই এর বিশেষত্ব। এখন তাই নতুন করে প্রাসঙ্গিক ফ্রাঙ্কো মোরেত্তির গ্যয়টে প্রভাবিত ভেলটলিতারাতুর বা ওয়ার্ল্ড লিটারেচারের ধারণা, যেটিকে কালচারাল ফর্মের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে সিনেমার ক্ষেত্রে, ব্যবহার করেছেন পল উইলেমেন। মোরেত্তি-উইলেমেন মডেলে গুরুত্ব পেয়েছে ফরেন ফর্ম, লোকাল কনটেণ্ট এবং লোকাল ফর্ম এই তিনের যোগাযোগ। তৈরি হয়েছে ট্রান্সন্যাশনাল আলোচনার পরিসর, এক ধরনের কম্প্যারেটিভ মরফোলজি। এ নিয়ে আরও অনেক কিছু বলা যায়, পরে কোনসময় আবার আলোচনা হবে।

    ৩। ইন্ডিয়ান বা সাউথ এশিয়ান মডার্নিটি প্রসঙ্গ। শাক্যদার অবস্থান অনেকটাই আশিস নন্দীর মত অ্যানটি-মডার্নিস্ট। যেমন বিবেক ধরেশ্বর একদা দেখিয়েছেন নেশন-স্টেটের বায়োগ্রাফি কিভাবে সিটিজেন-সাবজেক্ট বা সেকুলার সেলফের (অটো)বায়োগ্রাফির সঙ্গে আঁতাত গড়ে তোলে, মডার্নিটি হয়ে ওঠে এক Bildungsroman। কিন্তু এই অবস্থান মাথায় রেখেও এইটেই যে শেষ কথা নয় তা বলাই যায়, যেমন কোন অবস্থানই নয়। ওয়েস্টার্ন মডার্নিটিকে ইউনিভার্সাল এক প্রেমাইস ধরে নিয়ে আমাদের আধুনিকতা নির্মাণের সমস্যা, ম্যাক্স ওয়েবারের তত্ত্বায়নে ওয়েস্ট এবং তার আধুনিকতার গোলমাল নিয়ে আলোচনা এক পর্যায়ে অনেক হয়েছে। বরং অনেক বড় সমস্যার জায়গা এই মুহূর্তে আদতে এই আধুনিকতা-বিরোধী শিবিরের এক উপমহাদেশীয় স্বতন্ত্র কালচার এবং ইতিহাসের ইতিহাসাশ্রয়ী ধারণা, যেমন মাধব প্রসাদ তাঁর ‘ব্যাক টু দ্য প্রেজেণ্ট’ শীর্ষক রচনায় দেখান। এই ন্যাশনালিস্ট এবং পোস্টকলোনিয়াল ডিসঅ্যাভাওয়াল অব মডার্নিটি যে বস্তুকে বুঝতে সমস্যা ঘটায় তা হল আমাদের বর্তমান, আমাদের কনটেম্পোরারি। রিকভারি অব দক্ষিণ এশীয় আইডেন্টিটি নামক প্যারাডাইমের নানা সমস্যা, নানা অপ্রতুলতা প্রতীয়মান হয় আজকের দিনে, আর তার অন্যতম কারণ এই হিস্টোরিসিজম। দক্ষিণ এশীয় হেরিটেজের মধ্যেই (এর মধ্যে ধর্মীয় হেরিটেজ অবশ্যই রয়েছে, বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে) মীনিং অব কালচারাল প্র্যাকটিস থেকে গেছে এই ধারণা আসলে চ্যালেঞ্জ অব কালচারাল ইন্টারপ্রিটেশন। আমাদের ডেমোক্রেসির কাঠামো অনেক সময়েই তাই গ্লোবাল মডার্নিটিকেই ফ্লড হিসেবে দেখায়, যেমন পার্থ চ্যাটার্জি বলছেন।
    শেষ করছি তাই বিবেক ধরেশ্বরের রচনায় হিস্টোরিসিজমের এই সমস্যা নিয়ে তাঁর মন্তব্যে, ‘প্যারালাইজিং হিস্টোরিসিজম’ থেকে না বেরিয়ে এলে ‘রিসেপটিভিটি টু দ্য প্রেজেণ্ট’ তৈরি হবে নাঃ

    “When…we begin to reflect on the conditions for a critique of our modernity, it would be futile, and intellectually incoherent, to deny our ‘history’ as alien in order then to reach back to a different historicity as our ‘impossible’ history (nonmodern or pre-modern time, culture)…In order to determine a reflective relation to our present we must think the historicity of history itself. Here then is the paradoxical task: we need to deploy historicity against the very notion of history such that historicity is not reabsorbed by historicism.”
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৬ আগস্ট ২০১৫ | ১৬২০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • 0 | 132.163.73.137 (*) | ২৬ আগস্ট ২০১৫ ০২:৪৩67802
  • বিভিন্ন তাত্ত্বিক লেখাপত্রের আরো অনেক বেশী অনুবাদ বাংলাদেশে দরকার - এই প্রসঙ্গে কাউন্টার-আর্গুমেন্টে পরিচয় সম্ভবতঃ যেটা বোঝাতে চেয়েছেন, আমার মতে সেটায় মোটামুটি দুটো ভাগ আছে।

    ১) উপনিবেশ-পরবর্তী সময়ে, মানে বর্তমান সময়ে আর উপনিবেশিত দেশগুলোর মধ্যে প্রতিরোধ-বিরোধিতা নয়, বরঞ্চ দরকার আগের উপনিবেশকারী দেশগুলোর সাথে পারস্পরিক মিথোজীবিত্ব, বিভিন্ন সমাজ সংস্কৃতিকে জুড়ে দেবার প্রক্রিয়া, দেশী-বিদেশী বাণিজ্যিক সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মেলবন্ধন।

    ২) বিশ্বব্যাপী পশ্চিমী আধুনিকতা সব দিক থেকে একটা প্রক্রিয়া হিসেবে কাজ ক'রে এমন একটা অনিবার্য ক্রমপরিণতির দিকে অজান্তে ঠেলে নিয়ে যেতে থাকে, যেখানে কোনো একটা জাতিগোষ্ঠীর অধিবাসীদের মানসিকতা আস্তে আস্তে তার নিজস্ব ঐতিহাসিক চারিত্রিক পরিচয় ও ঐতিহ্য হারিয়ে, অসহায়ভাবে পরিবর্তিত হয়ে, পুঁজিবাদী ভোগসর্বস্ব ধর্ম'অপ্রয়োজনীয়তার দিকে এবং পরে ধর্ম'উদাসীনতার দিকে যেতে বাধ্য হয়।
    এটা অনেকে মেনে নিতে পারেন না। এই ব্যাপারটাকে নিয়ে গোষ্ঠী-পরিচয় রক্ষার ভোট-রাজনীতি চলতে থাকে।
    কিন্তু এ'ভাবে পরম্পরাবাদী অতীত আঁকড়ানো ঐতিহ্যচর্চা থেকে না বেরিয়ে এলে বর্তমান সময়ের থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকাই হবে।

    যেটা বুঝলাম না সেটা হলো -

    ১) 'মূল টেক্সট আদতে সাম্রাজ্যবাদীর হাতিয়ার কিনা সেটা এখানে অবান্তর' - এটা কেন বলেছেন?

    ২) ইসলামবিতৃষ্ণা-নির্মাণ একটা নির্দিষ্ট প্রকল্প --> সেটা পশ্চিমি দেশগুলোর সচেতন প্রয়াস --> তারা এখনও সাম্রাজ্যবাদী নীতি নিয়ে চলে --> নিও-কনসার্ভেটিজ্‌ম্‌ সেই নীতির ওপরেই দাঁড়িয়ে --> ইসলামবিতৃষ্ণা-নির্মাণ প্রকল্প সেই নীতির একটা অংশ মাত্র --> সাবেকি অনীশ্বরতা থেকে এখনকার নয়া-অনীশ্বরতার তত্ত্ব তৈরী করা হয়েছে এই প্রকল্পেরই আওতায়, তার একটা অংশ হিসেবে

    এই সম্পর্কগুলো নিয়ে আলোচনা না করলে শাক্যের লেখার মূল রাজনৈতিক বক্তব্যকে খন্ডন করা যাচ্ছে কিক'রে ?
  • পরিচয় পাত্র | 165.143.176.201 (*) | ২৬ আগস্ট ২০১৫ ০৪:০০67803
  • খুব ভাল বলেছেন, ভাল প্রশ্ন তুলেছেন। এটি আদতে প্রথম পর্ব বলতে পারেন। এখানে খুবই কাঠামোগত আলোচনা করেছি। এর পরের পর্বে হবে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা। আশা করছি লিখে উঠতে পারব। আমি অনেক ক্ষেত্রেই একটা সিরিজ শুরু করে শেষ করতে পারি না।
  • তাপস | 122.79.38.45 (*) | ২৬ আগস্ট ২০১৫ ০৪:০০67793
  • যদিও পরিচয়কে আগেই বলেছি, এখানেও তেমন রেসপন্স পাওয়ার সু্যোগ কম, তবু, কমেন্ট করে দৃশ্যমান করে রাখলুম।
  • . | 152.4.206.228 (*) | ২৬ আগস্ট ২০১৫ ০৪:১৩67804
  • sm এভাবে নিরস্ত করবেন না। টাইমপাস বই তো কিছু না, শাক্যর লিখে টাইমপাস করতে ভালো লাগে আর আমাদের আলোচনা করে টাইমপাস করতে ভালো লাগে। তাছাড়া উইকএন্ড আসছে, এখন একটা কঠিন তাত্বিক লেখা পেলে উইকএন্ডটাও কি সুন্দর কাটবেনা?
  • h | 127.194.253.7 (*) | ২৬ আগস্ট ২০১৫ ০৫:০৪67794
  • যাক বাবা অনেকদিন পরে একটা থিয়োরী লেখা পাওয়া গেল। সইকত তো কিসু লেখে না, আর সইকত দ্বিতীয় তো লেখেই না। শাক্যজিত-পরিচয় বাবুদের ধন্যবাদ। ট্যাপ্স এর এর একটা কালো হাত এর পেছনে থাকতে পারে বলে তাকেও ধন্যবাদ দেওয়া উচিত ;-) সম্ভবতঃ এই বিষয়ে আমরা অনেক হেজিয়েছি। আর নতুন কিসু বলার নেই, কিন্তু বাংলাদেশে তত্ত্ব অনুবাদের অপ্রতুলতা ইত্যাদি নিয়ে বক্তব্য ছিল, এখনকার থিয়োরী চর্চা যাঁরা করেন, তাঁরা মূলতঃ বিদেশে করেন ও ইংরেজি তে করেন। গৌতম ভদ্র / শিবাজী বন্দ্যো রা ব্যতিক্রম্ম যেখানে বাংলায় ক্রিটিকাল থিয়োরীর পরিভাষা ও অনেকটাই এঁদের হাত দিয়ে তৈরী। এটা কি করে একটা সমস্যা হয়? মানে থিয়োরেটিশিয়ান হলে তাঁর কোনো ভাষাই অ্যাকসেসের বাইরে না। ইংরেজি তো নয় ই। ভাসানি কে আলোচনা করতে গেলে সঙ্গে মাতুব্বর কে নিয়েও লিখতে হবে এই ধারণাটা তো বাংলাদেশের লোক না হলে হয়তো থাকবে না, কিন্তু সেটাও তো বড় সমস্যা না। সাহিত্যের অনুবাদ বেশি থাকা তো ভালো। শহিদূল জহির, শওকত আলি র ইলিয়াস এর ইংরেজি স্প্যানিশ অনুবাদ এর খোঁজ হলে দিবেন, অন্ততঃ যোগাড় করে রাখবো।

    মৌলানা ভাসানি কে নিয়ে সত্যি খুব ভালো কাজ আমিও পড়ি নি। তবে আমার রাজমোহন গান্ধীর একটা বই খারাপ লাগে নি (এটা বোধ হয় ওনার থিসিস এর বই ভার্সন) তাতে ভাসানী কে নিয়ে চ্যাপটার ছিল, অ্যাজ অ্যান ইন্ট্রো অলরাইট। আমাদের যদি সত্যি কারের অপ্রতুলতা বলেন সেটা হল জেনেরাল হিস্টরি র , আর জেনেরাল ইন্ট্রো র। শিবাজি রিডার বোধ হয় শিবাজী কেই লিখতে হয়েছে বা হবে ;-) দেশে দর্শন এর যে চর্চা তাতেও এটা মূল সমস্যা, অথচ দর্শন বলে যেটা চলে সেটা তো নিত্যকর্মপদ্ধতি টাইপের মাল।

    ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গের রিফিউজি ক্রাইসিস এর ইতিহাস - একটা পাশাপাশি রাখা ফ্রেম, ইত্যাদি একটা 'আন্ডার কনস্ট্রাকশন' থিসিস সম্প্রতি পড়েছি, খারাপ লাগে নি, তাতে ভাসানি কে যে কেউ ই ম্যানেজ করতে পারছে না সেটার কথা রয়েছেঃ-)
  • h | 127.194.253.7 (*) | ২৬ আগস্ট ২০১৫ ০৫:২১67795
  • আরেকটা কথা বলতে ভুলে গেলাম, সেটা হল গত বিশ-ত্রিশ বছরে যে সব বাঙালি তাত্ত্বিক দের লেখা বিখ্যাত হয়েছে বিদেশে, সাব অলটার্ন স্টাডিজ গ্রুপ এর বিরাট সুনাম হয়েছে, তার একটা জেনুইন ফ্যালাসি আছে।

    যখন লিটেরারি টেক্সট কে হিস্টরিকাল সোর্স হিসেবে ধরে নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে, এমন কথা ইংরেজিতে জাস্ট বলা হয়েছে, যেগুলো আমি অন্তত জ্ঞানতঃ বাংলা ভাষার মাষ্টারমশাই দিদিমণি দের কাছে শুনে হেজে গেছি, কিনু তাত্বিক দের কাছে (অন্তত বক্তৃতায়) বিশেশ কৃতজ্ঞতা স্বীকার পাই নি। আর সোর্সিং ও বেশ অল্পো। অতি বিখ্যাতঃ ঊনবিংশ শতকীয় লেখক রা ছাড়া সোর্স নয়, (মহাশ্বেতা ব্যতিক্রম)। পাকিস্তান থেকে যাঁরা থিয়োরে চর্চায় এশছেন, তাঁরা অন্তত উর্দু সাহিত্যের ১৯২০-১৯৬০ দিকটা নিয়ে একেবারে আলোচনা করেন নি তা না আবার পাঞ্জাবী ট্র্যাডিশন এর কারণে ওখানকার ভক্তি নিয়ে ও কাজ করেছেন, লিটেরারি সোর্স হিসেবে ধরে। আর বিংশ শতকের প্রথমার্ধের পত্রিকা কে সোর্স করে কাজ খুব ই কম হয়েছে, তত্ত্বের জগতে, কিন্তু সাহিত্যের বা ইতিহাসের জগতে হয়েছে। ক্রস রেফারেন্স বিশেশ চোখে পড়ে নি। যেমন ধরুন মান্তো দের অমৃতসর গ্রুপ, একে নিয়ে কোনো কাজ আমি দেখি ই নি।

    মূল তাত্ত্বিক সমস্যা টা মনে হয় এইখানে যে , ঊনবিংশ শতকীয় আধুনিকতার ধারণা র ফ্যালাসি নিয়ে কাজ হলেই, বিংশ শতকের নতুন আর্বানাইজেশনের কারণে যে নতুন ইন্টারেস্টিং ঘটনা ঘটছে, সেটা নিয়া কাজ কম। আর বিংশ শতকের কৃষি তত্ত্বের জগতে। এই সবের কারণে অনেক গ্যাপ আছে। অষ্টাদশ শতক সম্পর্কে যেমন এখন অনেক আগ্রহ বেড়েছে, আশা করা যায় বিংশ শতক একদিন বড় হবে, এবং চল্লিশ আর ষাটের দশক ছাড়াও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
  • Sakyajit Bhattacharya | 116.51.21.134 (*) | ২৬ আগস্ট ২০১৫ ০৫:৩৩67796
  • আমি আজ রাতে উত্তর দেব।
  • sm | 53.251.91.51 (*) | ২৬ আগস্ট ২০১৫ ০৫:৩৬67797
  • পরশু দিলে হয়না?
  • h | 213.132.214.155 (*) | ২৬ আগস্ট ২০১৫ ০৮:৫৬67798
  • হাহাহাহাহাহাহা এইটা sm হেবি দিয়েছে কি খ মাইরি ঃ-)))))))))))))))) সত্যি অনেকে নিশ্চয়ী খুব অবাক হোন, আমরা এতো বাজে বকি কেন? এত সময় ই বা কি করে পাই ঃ-))))))) কি এমন দেশের উপকার হচ্ছে এখানে লিখে ইত্যাদি .................... এই গুলো অবশ্য সব ই সঙ্গত প্রশ্ন ঃ-))))))))))))))))))))))
  • sswarnendu | 138.178.69.138 (*) | ২৬ আগস্ট ২০১৫ ১১:০৯67799
  • আমি তত্ত্ব কিসসু বুঝি না, এসব নিয়ে কথা বলার মত পড়াশোনাও আমার নেই... কিন্তু সাদা বুদ্ধিতে মনে হয় যে এই "অ্যাফেকটিভ কমিউনিটি" র যে ধারণার কথা বলা হল, সেটা প্রবল গোলমেলে... "সেন্টারে ইউরোপ আর মার্জিনে এশিয়া, এই মডেল আর কার্যকর নয়। " লিখে দিলেই উবে যায় না সবকিছু... লেখা থেকেই উদাহরণ টেনে বলি... এই মণি কাউল আর ব্রেসঁ নিয়ে লেখার যে কথা এই লেখাতে উঠেছে, সেটা আদৌ এভাবে আসত কিনা যদি লেখক এর নাম কলিন বার্নেট না হয়ে... ধরা যাক যদি নরেশ্বর পাঠক জাতীয় নাম হত... তখনও আসতেই পারত, যদি এই নামের সাথে কোন পশ্চিমের ইউনিভার্সিটির নাম জুড়ে থাকত... তাহলে আসত... নচেৎ কতদূর আসত খুবই সন্দেহ আছে...
    তো প্রশ্নটা এইটা... এই লেজিটিমাইজেশন এর... পশ্চিমের সীলমোহরই ঠিক করে দেয় কোনটা তত্ত্ব আর কোনটা জিবারিশ...ভৌগোলিক নয়... ইউরোপ শুধু ইউরোপেই নেই, এশিয়াও শুধু এশিয়ায় নেই এটা ঠিক... কিন্তু পশ্চিম আর পূর্ব দিব্যি আছে... মডেল অচল বললেই উবেও যাবে না ........ কলোনি দিব্য আছে... হেজিমনি ও ... নিও-কলোনিয়াল বাস্তবে দাঁড়িয়ে ট্রান্সন্যাশনাল কালচার এর খোয়াব দেখা যায় ঠিকই, কিন্তু সেটা খোয়াবই মাত্র...
  • a x | 83.136.18.161 (*) | ২৬ আগস্ট ২০১৫ ১১:২০67800
  • শাক্যর লেখায় নিও-এথিজম তার নিজস্ব জিও-পলিটিকাল কনটেক্স্টে ভ্যালিড, এটা কোথায় ছিল?
  • cm | 127.247.96.171 (*) | ২৬ আগস্ট ২০১৫ ১২:৫৩67801
  • sm এর পোস্ট আমার বেশ লাগল। নিপাট মজা। আপনারা বাংলা ইংরিজি এসব জবরজঙ্গ ভাষায় কোন গুরুতর আলোচনা করেন কিকরে। একটা কথার দশটা মানে এদিয়ে নাটক নভেল ছাড়া কাজের কথা হয়। শুরুতে ভাষাটা পাল্টান। তারপরে যুতসই ইনভ্যারিয়েন্স প্রিন্সিপল স্টেট করে আলোচনা শুরু করুন।
  • ঈশান | 183.17.193.253 (*) | ২৭ আগস্ট ২০১৫ ০১:৫৯67805
  • পড়লাম। কিন্তু খন্ডনের জায়গা কিছু আসেনি এখনও। আর বাংলাদেশের তত্ত্বচর্চা নিয়ে খুবই কম জানি। লেখা চলুক।
  • h | 127.194.243.104 (*) | ২৭ আগস্ট ২০১৫ ০৩:১৮67806
  • পরিচয় বাবু র এই লেখাটা খুব ই সুন্দর হয়েছে, আরো লিখুন, শাক্য র রিজয়েন্ডার এর অপেক্ষায় আছি। কয়েকটা সাইড স্টেপিং প্রশ্ন আগে করেছি, এখন আবার কটি করে গেলাম -

    ক - মিলার কৃত জীবনী না পড়লে কেন ফুকো পড়া/বোঝা যাবেনা এটা বুঝি নি পুরোটা। আমি আসলে মিলার পড়েছি অনেক পরে, কয়েক বছর আগে, কিন্তু ফুকোর রচনা তো প্রায় ২০-২২ বছর আগে পড়েছি আবার শেষ যত্ন করে পড়েছি ধরুন বছর ৭-৮ আগে। অবশ্যই দর্শন ও রাজনীতি যেহেতু, পুরো টা বুঝবো না, ট্রেনিং ও নেই, কিন্তু আমার ইন অ্যাকসেসিবল মনে হয় নি, অর মিলার পড়ার পরে বেশি বুজছি এটা আমার মনে হয় নি। যুক্তি টা ঠিক কি?

    খ - যদি বলি ঐতিহাসিকতা আর ইতিহাস এর যে প্যারাডক্স সেটা শুধুই দার্শনিক বা চর্চার সমস্যা নয়, মনুষের রাজনইতিক অভিজ্ঞতার তারতম্যের সমস্যা? চর্চায় যেটা আসছে সেটা সেই অভিজ্ঞতার তারতম্যের প্রতিফলন মাত্র। রিসেপ্টিভিটি টু প্রেজেন্ট অন্য অর্থে।

    গ - পরিচয় বাবু যেখানটায় বাংলাদেশে তত্ত্বচর্চার অপ্রতুলতা নিয়ে বলছেন, সেখানে গণতন্ত্র না থাকাটা লেখাপড়ার একটা সমস্যা বলছেন ঠিকাছে, কিন্তু মনে হচ্ছে এটাও বলছেন ('অনুবাদ আরো হওয়া দরকার') যে তত্ত্বচর্চার যে ভাবে ইভোলিউশন হয়েছে পশ্চিমে (প্রথমতঃ নানা ভাবে হয়েছে সেখানেও, এক ভাবে কিসু হয় নি) সেই গতিপথ বাংলাদেশেও প্রতিফল্ত হওয়া দরকার, বাংলায় বলতে গেলে, নিও-অথিজম এর প্রচুর অনুবাদের পরে তারপরে এমন একটা পরিস্থিতি আসবে তার ক্রিটিক গড়ে ওঠার। তো এটা তো হবে না, বিশেষতঃ একেক জায়গায় ইতিহাস তো একেক ভাবে গতি পাবে।
  • h | 213.99.211.133 (*) | ২৭ আগস্ট ২০১৫ ০৫:২০67808
  • ধ্যাত্তেরি, আমি খালি এই নামের মাশটারমশাই এর নাম দিয়ে দি, প্যাট্রিক কোবার্ন।
  • 0 | 132.163.65.50 (*) | ২৮ আগস্ট ২০১৫ ০১:৩৩67814
  • 'something deeply sacred' - কথাটা একজন কম্যুনিস্ট লেখকের চিন্তন থেকে বেরোলেও আমার মতে প্রায় এর কাছাকাছি অর্থবোধক কথা এর আগে স্টুয়ার্ট মিল বলেছেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানুষের শাশ্বত সংগ্রামের প্রেরণাদায়ক শুভবুদ্ধিকে উনি আস্তিক সৃষ্টিবাদের ব্যাখা হিসেবে দেখেছিলেন ।

    “The only admissible moral theory of Creation is that the principle of good cannot at once and altogether subdue the powers of evil, either physical or moral; could not place mankind in a world free from the necessity of an incessant struggle with the maleficent powers, or make them victorious in that struggle, but could and did make them capable of carrying on the fight with vigour and with progressively increasing success. Of all the religious explanations at the order of Nature, this alone is neither contradictory to itself, nor to the facts for which it attempts to account.”
  • ranjan roy | 132.162.248.208 (*) | ২৮ আগস্ট ২০১৫ ০৩:০১67815
  • o,
    পাশ্চাত্ত্য দর্শনের র‌্যাশনালিস্ট ধারা নিয়ে একটা আলাদা টইয়ে লিখুন না! একজন বন্ধু শুরু করেও ছেড়ে দিলেন, হয়ত সময়ের অভাবে।
  • Sakyajit Bhattacharya | 116.51.21.74 (*) | ২৮ আগস্ট ২০১৫ ০৮:৩০67809
  • পরিচয়ের লেখা পড়ে এখনো খণ্ডন বলে মনে হয়নি। পরের সংখ্যার অপেক্ষার অপেক্ষায় আছি। তার আগে আমার যেটুকু বলার বলে যাই। পরিচয় যে তিনখানা তত্বের উপস্থাপনা করেছে তার রেসপেক্টে আমার স্ট্যান্ডপয়েন্টটুকু দিয়ে যাই।

    ১। আমি উত্তরাধুনিকতাবাদী নই। উত্তর-ঔপনিবেশিক ধারণায় অনেক সমস্যা লাগে। রেজিস্টান্স মৃত, গ্র্যান্ড-ন্যারেটিভ ডেড এই ধারণাগুলোতে আস্থা নেই। তবে সবকিছুকেই রেজিস্টান্সের চোখ দিয়ে বা কেন্দ্র-প্রান্ত-র চোখ দিয়ে দেখা উচিত নয় বলেই মনে করি। পারস্পরিক আদান-প্রদানের জায়গা থেকেই অনেক বক্তব্য স্থাপন করেছি। যেমন এক্স ব্রিটিশ কলোনীগুলোতে বিপ্লব হয়নি কোনোকালেই। কারণ সেখানে শাসক শাসিতের মধ্যে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে জায়গা করে নেবার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। সেগুলো স্বাধীন হবার পরেও এই ট্রেন্ড বজায় থাকে। ফলে অধিকার-রক্ষার দাবীতে আন্দোলন কখনোই বার্স্ট করেনা। কিন্তু তাই বলে তার গুরূত্বকে খাটো করা যায়না। বিশ শতকের গোড়ার দিকের ব্রিটিশ সোসালিস্ট জন স্ট্র্যাচি, যিনি লেবার থেকে কমিউনিস্ট হয়ে ফাসিস্ট হয়ে ফের লেবারে ফিরে এসেছিলেন এবং সেই সুবাদে কিছু অসামান্য বই লিখে ফেলেছিলেন, তিনি একবার একটা লেখায় দেখিয়েছিলেন যে ব্রিটিশ কলোনীতে বিপ্লব সর্বদাই চলমান থাকে বলে আলাদাভাবে দেখা যায়না তাকে। সেই বিপ্লব থাকে চেপেচুপে জায়গা করে নেবার মধ্যে, রাইজিং মধ্যশ্রেণীর সাদা শাসকের মতন হবার অ্যাসপিরেশনের মধ্যে, অথবা স্বরাজের দাবীতে। শাসক একটু ছাড়বে, তার বদলে শাসিত আরেকটু দাবী করবে-এই আদান প্রদান দীর্ঘস্থায়ী হয়। এমনকি কাঠামো চলে গেলেও এই সুপারস্ট্রাকচার থেকে যায় বহু যুগ ধরে। তো, এগুলোকে অস্বীকার করে শুধুই রেজিস্টান্সের কথা আমি কখনোই বলিনি। সেইসাথে এটাও বলেছি যে রেজিস্টান্সের থেকে মহত্তম জিনিস আর কিছুটি নেই আমার চোখে।

    ২। এই পয়েন্টটা অসম্পূর্ণ। পরিচয় নিজের বক্তব্য আরো পরিষ্কার করে লিখলে তবে উত্তর দিতে পারব।
  • Sakyajit Bhattacharya | 116.51.21.74 (*) | ২৮ আগস্ট ২০১৫ ০৮:৩২67810
  • ৩। আমি অ্যান্টি-মডার্ন একেব্বারেই নই, এমনকি ইউরোপীয়ান কন্ট্রিবিউশন সম্বন্ধেও উদাসীন নই। ইউরোপ না থাকলে আজ আমাদের এই ফর্মের জ্ঞানচর্চা থাকত না (যেমন ব্যক্তিগতভাবে সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের মতন আমিও মনে করি ইউরোপের মহত্তম অবদান হল উপন্যাস, কিন্তু সে অন্য প্রসংগ)। আমার প্রশ্নটা যুক্তিবাদের ঐতিহাসিক প্রয়োজনীয়তা নিয়ে। কয়েকটা ফর্মে ভেংগে ভেংগে বলার চেষ্টা করছি।
    যুক্তিবাদ যেটা বুঝতে চায়না তা হল কোনো যুক্তিই কোনো যুক্তির শেষ কথা নয়। দেকার্তীয় যুক্তিবিদ্যায় প্রকৃতির নিয়ম ও নিষেধকে চরম ও অলঙ্ঘনীয় আখ্যা দেওয়া হলেও পরে সেই লজিকাল স্ট্রাকচার ভেংগে গেছে পারসেপশনের হাত ধরে। ফলে মানুষের চেতনা যা দুনিয়া জুড়ে রেজিস্টান্স নির্মাণে এক গুরূত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে সে বিষয়ে যুক্তিবাদ আশ্চর্যভাবে নীরব। এই ব্যক্তিমানুষের কোনো স্থান যুক্তিবাদে নেই। কিন্তু আমি তো মনে করি যে মানুষের মৃত্যু হলেও মানব থেকেই যায়। মানুষের একটা কিছু বাকি রয়ে গেছে যা সবসময়েই বাকি। এই শেষ হওয়াটা যখন ঘটে তখন সেটা অন্য কারোর পক্ষে হওয়া সম্ভব নয়। যথার্থ অস্তিত্বের ক্ষেত্রে মৃত্যু একটা ঘটনার প্রত্যাশা যার সামনে দাঁড়িয়ে মানুষ তার অনিবার্য সম্ভাবনাকে প্রকাশ করে, যেমন হাইডেগার বলেছিলেন। আমি এই হাইডেগারীয় কাঠামোকে প্রয়োগ করতে চাই সুইসাইড বম্বার বা ফিদাঁয়েদের সাইকোলজি বোঝার জন্যে। রীজন তাদের টেররিস্ট আখ্যা দেয়, আর আমি তাদের দেখি মানুষ হিসেবে যারা মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে নিজের সত্ত্বাকে উপলব্ধি করে। একজন আল-কায়েদার সুইসাইড বম্বারের প্রাত্যাহিক জীবন থেকে তার যথার্থ অস্তিত্বের কথা হারিয়ে গেছিল এতদিন, তা শুধুমাত্র পূর্ণতা পায় মৃত্যুতে, কারণ সে উপলব্ধি করে যে এইতেই তার চরম ও পরম সম্ভাবনা। সে নিজের ব্যক্তি-স্বাতন্ত্রে মৃত্যুকে বুঝতে পারে, আবার এক-ই সাথে সেই মৃত্যুর প্রত্যাশা তার গোষ্ঠীজীবনে বিলীন হয়ে যাবার সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণ খুলে দাঁড় করায়। তার এই যাত্রা অস্তিত্ব থেকে অনস্তিত্বের দিকে, এবং শেষে আছে স্বাধীনতা। রীজন এই মনোভাব আমাদের বুঝতে সাহায্য করবে না। কিন্তু এর সাথে অ্যান্টি-মডার্ন হবার কোনো যোগসূত্র নেই।
    আসলে বিবর্তনমূলক কাঠামোর মধ্যেই থাকে কাঠামোটির সংশোধনের এক আভ্যন্তরীন ব্যবস্থা, যেটা বাইরের জগতকে মোকাবিলার মাধ্যমে ভেতরের কাঠামোকে ডেভেলপ করে। এবার আমি দেখি এরকমভাবে, যে বাইরের জগত অজানা, এবং অসীম সম্ভাবনাময়। ফলে তাকে মোকাবিলা করতে গেলে ভেতরের কাঠামোকেও অসীম সম্ভাবনাময় হতেই হবে। আর যেহেতু অসীম সম্ভাবনাময়, শুধুমাত্র পাস্ট অ্যানালাইজ করে তার বিকাশের গতিপথ কোন পূর্ব-নির্ধারিত ছকে ফেলে দেওয়া যায় না। এর মধ্যে স্বতঃস্ফুর্ততার যে অংকটা থাকে, যুক্তিবাদ তা ব্যখ্যা করতে পারে না, কারণ তা স্বতঃস্ফুর্ত। সমস্যাটা মার্ক্সবাদের-ও।
    তাহলে যুক্তিবাদের সাথে আমাদের সম্পর্কটা কেমন দাঁড়াবে? রীজন ভার্সাস অ্যান্টি-রীজন, যেমন সোমনাথদা মনে করে? আমার মনে হয় দাঁড়াবে রীজনের এতদিনের ছকটা ভেংগে দিয়ে পালটা রীজন। একটা ছোট এক্সাম্পল দিয়ে বোঝাচ্ছি কি বলতে চাই। দেকার্তীয়ান জ্ঞানচর্চায় জ্ঞানের বিকাশের সাধারণ সূত্র হল P1—TT—EE—P2 যেখানে P1 (Problem) একটা সমস্যা, TT(Tentative Theory) সম্ভাব্য তত্ব, EE(Error Elimination) এবং P2 নতুন সমস্যা বোঝায়। ক্লাসিকাল সমস্ত তত্ব, ইনক্লুডিং মার্ক্সবাদ, এই ছক অনুসারেই আসে। কোনো তত্ব একটা প্রাথমিক সমস্যা হিসেবে আসে যা সম্ভাব্য তত্বের সূত্রপাত ঘটায়। সমস্যার শেষে নতুন ফলসিফায়েবল তত্ব আসে, যেতা নতুন সমস্যার উদ্ভব ঘটায়। ক্যাপিটালিজম থেকে সোসালিজমের গতিপথ এভাবে দেখা যেতে পারে। কিন্তু কার্ল পপার এসে এই ছকটা ভেংগে দিলেন। সম্ভবত পপারের সবথেকে বড় অবদান এটাই যে জ্ঞানের চিরাচরিত ধারাটা পালটে দিয়ে দেখালেন যে আসলে ছকটা হল TT1-P-EE-TT2 । এটা কিন্তু রীজনকে নেগেট করা নয়, বরং পালটা রীজন তোইরী করা যে জ্ঞানের অগ্রগতি আসলে তত্ব থেকে তত্বে, সমস্যা হল সেই তত্বে শান দেবার যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়। সেই হিসেবে দেখলে পপার একটা জায়গায় গিয়ে মডার্নিটির বেসিক প্রেমিসকেই অস্বীকার করছেন যে সভ্যতার অগ্রগতির সূত্র হল সামনে এগিয়ে যাওয়া। পপারের হিসেবে সামনে পেছনে এগোনো বড় কথা নয় বরং দিনের শেষে হাতে পরে থাকে শুধুই এক তত্ব থেকে অন্য আরেক তত্বে উল্লম্ফল। এই যে দেখার চোখকে রিভলিউশনাইজ করা, এটাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। নিহিলিজমে চলে যায় যদি এই ছক এস্টাব্লিশ করা যায় যে EE1-PP-TT-EE2। সেই হিসেবে সমস্ত সমস্যাকেই দেখা যায় একটি ভুলের কারণ হিসেবে, তত্ব জাস্ট একটা যন্ত্র, এবং গন্তব্যের শেষে পরে থাকে নতুন কোনও ভুল। এই ছকে মার্ক্সবাদ বলো বা আধুনিকতা, সব-ই ভেংগে যায় কারণ কোনো কিছুর-ই কোন উদ্দেশ্য থাকে না। সমগ্র ইস্ট-ইউরোপ বা সোভিয়েত জুড়ে মার্ক্সবাদের পরীক্ষা-নীরিক্ষা যদি এক ভ্রান্তি হিসেবী দেখা হয়, তবে তাকে কাটাতে নতুন তত্ব আবির্ভূত হবেই, হয়ত বা পলিটিকাল ইসলামের সংগে মার্ক্সিস্ট-লেনিনিসস্টদের জোট বাঁধার তত্ব, এবং আরব ন্যাশনালিজমের দীর্ঘ বন্ধুর পথ পেরিয়ে তা আবার এসে দাঁড়াবে আইসিস বা জামাত নামক ভ্রান্তিতে। এবং এর কোন নিরাময় নেই। ভ্রান্তি-ই আসল, আর আসল হল রেজিস্টান্স। আমি বলছি না যে এটাই হবে। কিন্তু এইভাবে রীজনের বিপরীতে পালটা রীজন দাঁড় করানো সম্ভব। অ্যান্টি-মডার্ন লাইন (অ্যান্টি-মডার্নিস্ট বলছি না) ফলো করলে দিনের শেষে হাতে ডেলফির দেবতার ওরাকল ছাড়া কিছুই পড়ে থাকে না।
  • Sakyajit Bhattacharya | 116.51.21.74 (*) | ২৮ আগস্ট ২০১৫ ০৮:৩৩67811
  • তাহলে কোথায় যুক্তিকে কতটুকু রাখব আর কতটুকু পালটা দেব? এটা খুব জটিল বিষয়। কারণ ইউরোপ আমাদের সামনে এক অসীম সম্ভাবনা ও সমস্যার অন্য নাম। এখানে আগেও লিখেছিলাম যে স্বাধীন বাজারের যে অর্থনীতি এনলাইটেনমেন্টের শুদ্ধ যুক্তিকে প্রমাণ করেছে, সেই অর্থনীতিই যুক্তির শুদ্ধতাকে ধ্বংস করেছে। ধনতন্ত্রের নিজস্ব নিয়মেই এনলাইতেনমেন্ট রূপান্তরিত হয়েছে সাম্রাজ্যবাদে আর আমাদের মতন তৃতীয় বিশ্বে সেই সাম্ম্রাজ্যবাদ প্রকাশ পাচ্ছে বড় রাষ্ট্রের দাদাগিরিতে। কলোনীতে যে যুক্তির শৃংখলায় সাম্রাজ্যবাদী লুন্ঠন সমর্থিত হয় সেই যুক্তির শৃংখলাতেই একসময় ফ্যাসীজম-ও ভিন্ডিকেটেড হয়ে যায়। যে যুক্তিতে ব্ল্যাক-পীপলদের সাদা সাম্রাজ্যের সামনে নতজানু করে রাখা হয় সেই এক-ই যুক্তিতে ইহুদীদের নির্বিচারে আউশভিৎশেও পাঠানো যায়। তাই এটা কোনো অবাক হবার ব্যাপার আর নয় যে কয়েক দশকের উপেক্ষা আর খণ্ডীকরণের পর ইউরোপ আব্ববার হোমার, দান্তে বা ভার্জিলের পাঠক হয়ে উউঠতে চায় উনিশ শতকের মাঝামাঝি যখন এজ অব রীজনের সীমাবদ্ধতা ধরা পরে গেছে, কমিউনিজমের ভূত ইউরোপকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে।
    এই জায়গা থেকেই আমি ধর্মকে দেখি, ধর্মে অবিশ্বাস-ও দেখি। ধর্মে বিশ্বাস বা অবিশ্বাস আমার কাছে স্পেকট্রাম ছাড়া আর কিছুই নয়। ইস্লামোফোবিয়াও তাই।। কেউ সেই স্পেক্ট্রামের বাইরে নয়। ধর্মের প্রাতিষ্ঠানিক দিক নিয়ে আমি আগ্রহী নই, বরং তার লোকায়ত ও মানবিক সম্পর্কটা নিয়ে আগ্রহী। তার অন্তর্নিহিত রেজিস্টান্স পাওয়ার নিয়ে আগ্রহী। সর্ব কালে সর্ব দেশে আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে প্রথম রেজিস্টান্স এসেছে ধর্মের হাত ধরে। সেই রেজিস্টান্সকে ক্রাশ করলেও তার রেশ থেকে গেছে বহুদিন এবং অন্যান্য রেজিস্টান্স তার হাত ধরে উঠে এসেছে। ইউরোপে ডুয়াল রেভলিউশনের পরে (ফরাসী বিপ্লব+শিল্প বিপ্লব) ফ্রান্স এব্বং অন্য কয়েকটি দেশে অন্যতম উপকৃত হয়েছিল কৃষক সমাজ আগ্রারিয়ান রিফর্মের ফলে কিন্তু তার পরে তারাই সর্বপ্রথম নব্য বুর্জোয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল যীশুর নামে বা জারের নামে (রাশিয়ায়) বা সম্রাটের নামে। তার একটা বড় কারণ ছিল যে পুঁজীবাদী রিফর্মের ফলে উপকৃত হবার পরেও তারা প্রেফার করেছিল সামন্ত সমাজের মানবিক সম্পর্ক (তার ঘর ভাংলে জমীদার বাধ্য থাকত নতুন ঘর তৈরী করে দিতে, খরার সময় সে শস্তায় বীজ কিনতে এনটাইটলড ছিল ইত্যাদি ইত্যাদি)। তাকে সেই রেজিস্টান্সের শক্তি যুগিয়েছিল ক্রিশ্চিয়ানিটি। ভারতে তীতুমীর বলুন বা সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ, প্রান্তিক কৃষক সমাজকে ইন্সটিগেট করে এসেছে ধর্মের বিভিন্ন সেক্ট। যে জিনিসটা আমাদের সেকুলার লিবারালরা কখনো বুঝবেন না যে কলোনীতে জাতীয়তাবাদ বলুন সেকুলারিজম সেগুলোকেও ধর্মের বা মৌলবাদের সাথে ওপেন ডায়লগ চালিয়ে যেতে হবে নিজের জায়গা ঠেলেঠুলে করে নেবার জন্যে, কারণ এই কন্সেপ্টগুলো সর্বপ্রথম যে শ্রেণির কাছে পৌঁছেছে তারা ঐতিহাসিকভাবে তাদের আলোকপ্রাপ্তির মাধ্যমে কলোনিয়াল প্রভুর সেবাদাস হয়েই থেকেছে, এবং সেই কারণে প্রতিরোধী সেক্টগুলো, নিম্নবর্গ, ক্ষুদ্র কৃষক এরা সর্বদাই সন্দেহের চোখে দেখে এসেছে এই শ্রেণীকে। সেকুলারিজমের আইডিয়া দিয়ে তাই রেজিস্টান্স বোঝা দুষ্কর। প্রাথমিক রেজিস্টান্স সর্বদা অতীতচারী হয়, কেন হয় তা নিয়ে সমালোচনা করার অধিকার আমাদের নেই। লেনিন যেমন বলেছিলেন "নো রেভলিউশন ইস পার্ফেক্ট", আয়ারল্যান্ডে জেমস কনেলীরা যখন সমাজতন্ত্রের সাথে ক্যাথলিসিজমের মিশেল ঘটাচ্ছিলেন বলে কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনালের চক্ষুশূল হয়েছিলেন তখন জেমস কনোলিদের পক্ষে দাঁড়িয়ে লেনিন এই কথাগুলো বলেছিলেন, আর সেই সাথে এটাও বাস্তব যে স্বাধীনতা সংগ্রাম এত ব্যাপকভাবে ইউরোপের আর অন্য কোন দেশে হয়নি আয়ারল্যান্ড বাদে, কারণ ধর্ম ঐক্যবদ্ধ করেছিল।
    তো, আমার কাছে রেজিস্টান্স-ই শেষ কথা নয়। তার ফর্ম, কেমনভাবে তা আসছে, কার হাত ধরে আসছে, রেজিস্টান্সের বদলে আদান-প্রদান, অথবা জায়গা ঠেলেঠুলে বসে পড়া, এইসব ইকুয়েশন-ও আমার কাছে সমান গুরূত্বপূর্ণ। আমি সিপিআই(এম)-এর ব্রড লেভেলের অ্যাজেন্ডায় আস্থা রাখি, কিন্তু দিকে দিকে ঘটে চলা রেজিস্টান্সের সবকিছু কমিউনিস্ট পার্টি দিয়ে ব্যখ্যা করা যায়না, এমনকি প্রচলিত যুক্তিবাদ দিয়েও ব্যখ্যা করা যায়না বলে মনে করি। আমাদের দেখার চোখ পাল্টাতে হবে। নতুন কিছু জিনিসকে পুরনো চোখে দেখা সম্ভব নয়। এই কারণেই এই গুরুতেই আল কায়েদাকে অন্যভাবে ইন্টারপ্রেট করতে শুরু করেছিলাম, কেমনভাবে পলিটিকাল ইসলাম তার রেজিস্টান্স পাওয়ার নিয়ে মার্ক্সিজম-লেনিনিজমের ডিকটাট এক্সপ্লয়েট করছে তৃতীয় বিশ্বে, সেটা দেখতে চাইছিলাম। সেই আলোচনা শেষ হয়নি। তবে কোনো কিছুর-ই তো শেষ কথা বলে কিছু হয় না ! এমনকি শেষ কথার-ও শেষ কথা বলে কিছু হয় না। মার্ক্সিজম বলো বা উত্তরাধুনিকতাবাদ বা কমিউনিস্ট পার্টি, কাউকেই অত মাথায় তুলে নাচার কিছু নেই। আমার খুব প্রিয় একটা উক্তি আছে, ১৯৫৬ সালে হাওয়ার্ড ফাস্ট তীব্র অ্যান্টি-কমিউনিস্ট আমেরিকান ঔপন্যাসিক ইউজিন লায়ন্সকে একটা খোলা চিঠিতে লিখেছিলেন, “You see, Mr. Lyons, there is nothing sacred about the Communist Party; if its time is finished, it will go, and perhaps others in the future will judge it better than you or I could. But there is something deeply sacred about man's age-long struggle against oppression and wrong. That must not be betrayed, must not be hampered - because it is the living soul of mankind, his common hope for the future, his legacy to his children and their children and their children's children”। তো, ওই আর কি...
  • ranjan roy | 132.162.248.208 (*) | ২৮ আগস্ট ২০১৫ ১০:৩৭67812
  • শাক্যর এই বক্তব্যটা দারুণঃ
    "সবকিছুকেই রেজিস্টান্সের চোখ দিয়ে বা কেন্দ্র-প্রান্ত-র চোখ দিয়ে দেখা উচিত নয় বলেই মনে করি। পারস্পরিক আদান-প্রদানের জায়গা থেকেই অনেক বক্তব্য স্থাপন করেছি। যেমন এক্স ব্রিটিশ কলোনীগুলোতে বিপ্লব হয়নি কোনোকালেই। কারণ সেখানে শাসক শাসিতের মধ্যে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে জায়গা করে নেবার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। সেগুলো স্বাধীন হবার পরেও এই ট্রেন্ড বজায় থাকে। ফলে অধিকার-রক্ষার দাবীতে আন্দোলন কখনোই বার্স্ট করেনা। কিন্তু তাই বলে তার গুরূত্বকে খাটো করা যায়না। বিশ শতকের গোড়ার দিকের ব্রিটিশ সোসালিস্ট জন স্ট্র্যাচি, যিনি লেবার থেকে কমিউনিস্ট হয়ে ফাসিস্ট হয়ে ফের লেবারে ফিরে এসেছিলেন এবং সেই সুবাদে কিছু অসামান্য বই লিখে ফেলেছিলেন, তিনি একবার একটা লেখায় দেখিয়েছিলেন যে ব্রিটিশ কলোনীতে বিপ্লব সর্বদাই চলমান থাকে বলে আলাদাভাবে দেখা যায়না তাকে। সেই বিপ্লব থাকে চেপেচুপে জায়গা করে নেবার মধ্যে, রাইজিং মধ্যশ্রেণীর সাদা শাসকের মতন হবার অ্যাসপিরেশনের মধ্যে, অথবা স্বরাজের দাবীতে। শাসক একটু ছাড়বে, তার বদলে শাসিত আরেকটু দাবী করবে-এই আদান প্রদান দীর্ঘস্থায়ী হয়। এমনকি কাঠামো চলে গেলেও এই সুপারস্ট্রাকচার থেকে যায় বহু যুগ ধরে।"
    -- আর হাওয়ার্ড ফাস্ট থেকে উদ্ধৃতিটিও।

    ২) পরিচয় পাত্র মনে হয় মাত্র পাতা বিছিয়েছেন--খাবার পরিবেশন শুরু হল বলে।
    সম্ভবতঃ দেখাতে চাইছেন যে অভিজিত রায়েরা বাংলাদেশে তাত্ত্বিক আলোচনার শূন্যতা/ অপ্রতুলতা ভরাতে কী ভূমিকা নিয়েছিলেন।
  • Sakyajit Bhattacharya | 116.51.21.74 (*) | ২৮ আগস্ট ২০১৫ ১২:৪১67813
  • আরো অনেক কিছুই বলা বাকি থেকে গেল। আমাদের দেখার চোখ কিভাবে ঘটনাকে নিয়ন্ত্রণ করে, কিভাবে সেন্ডারের মেসেজ পালটে যায় রিসিভারের হাতে, এবং তার সাথে কিভাবে উপনিবেশের ইতিহাস জড়িয়ে থাকে কেমনভাবে তাকেও পালটা রীজন দিয়ে প্রতিহত করা সম্ভব, এরকম অনেক অনেক কিছু বাকি থেকে গেল। আগে পরিচয় লিখুক
  • 0 | 123.21.69.167 (*) | ৩০ আগস্ট ২০১৫ ০৪:৩৮67817
  • রঞ্জনদা, আমার এ বিষয়ে যোগ্যতা নেই। পড়াশুনো খুবই কম।

    আমার লাস্ট্‌ কমেন্ট্‌টা পড়তে গিয়ে হঠাৎ খেয়াল হলো যে ভুল লিখে ফেলেছিলাম।

    অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানুষের সংগ্রামকে শাশ্বত লিখেছিলাম। তা তো কখনোই নয়। নাস্তিক হয়ে কিক'রে যে এমন লিখলাম!!

    ন্যায়-অন্যায়, শুভ-অশুভ, বিবেকবোধ, এসব মানুষ তার ধীর-বিবর্তিত চেতনায় ক্রমবিকশিত বুদ্ধি দিয়ে বহু সহস্রাব্দ ধ'রে একটু একটু ক'রে "আবিষ্কার" করেছে। বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলোর মতনই এই শুভবুদ্ধির আবিষ্কারের ব্যাপারটাও একদিনে ঘটেনি। বিবর্তনের নিয়ম মেনে প্রাকৃতিক নিয়মের ফলেই হয়েছে।
  • Sakyajit Bhattacharya | 116.51.21.74 (*) | ৩০ আগস্ট ২০১৫ ০৮:৫৮67816
  • খুব চটজলদি পাশ্চাত্য দর্শনের সম্বন্ধে একটা ওপর ওপর আইডিয়া পেতে গেলে "সোফি'জ ওয়ার্ল্ড" পড়ুন। খুব চটজলদি একটা ধারণা পেয়ে যাবেন।

    আর খুঁটিয়ে পড়তে হলে রাসেলের "হিস্ট্রি অফ ওয়েস্টার্ন ফিলোসফি"। চমৎকার লেখা।

    আর নাহলে টি আই ওইজারমানের পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস নিয়ে বইটা। মার্ক্সিস্ট পার্স্পেক্টিভ থেকে লেখা
  • 0 | 132.163.70.198 (*) | ৩১ আগস্ট ২০১৫ ০২:৩১67818
  • প্রথম পোস্টের যুক্তিগুলোর একটা সম্ভাব্য খসড়া ডায়াগ্রামাটিক্‌ মডেল্‌ দিয়ে রাখলাম। পরিচয়ের পরবর্তী পোস্ট্‌গুলোকে এই মডেলের মধ্যেই কোনোভাবে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করবো।

  • কল্লোল | 125.242.140.173 (*) | ৩১ আগস্ট ২০১৫ ০৩:১১67819
  • খুব ভালো হচ্ছে। পরিচয়, আপনার দ্বিতীয় কিস্তির অপেক্ষায় আছি।
  • Sakyajit Bhattacharya | 116.51.21.6 (*) | ৩১ আগস্ট ২০১৫ ০৬:১৯67820
  • ব্বাপ্পো ! ০ এসব কি দিয়েছে? :)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে প্রতিক্রিয়া দিন