এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • জ্যামিতিঃ পর্ব ৩

    Swarnendu Sil লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৫ মার্চ ২০১৭ | ১৮৭৮ বার পঠিত
  • http://bigyan.org.in/ ওয়েবসাইটে জ্যামিতির বনিয়াদ নিয়ে আমার এই লেখাটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে...
    এখানে লেখাটা একই ভাবেই দিলাম... আমার ব্যক্তিগত অনুরোধ, আমার লেখাটা না পোষালেও ওয়েবসাইট টায় ঘুরে আসতে ভুলবেন না...

    আজ তৃতীয় পর্ব, যা ৫ই জুলাই, ২০১৫ ( ইংরাজি সন) এ প্রকাশিত হয়েছিল...
    http://bigyan.org.in/2015/07/05/elements-of-geometry-part-3/

    জ্যামিতির গোড়ার কথা : ইউক্লিড থেকে রীমান ( তৃতীয় পর্ব )

    (দ্বিতীয় অংশের পর)

    এইবারে আমরা ঢুকব ইউক্লিডের পঞ্চম স্বতঃসিদ্ধের আলোচনায়। একবার দেখে নি কি বলছে এই স্বতঃসিদ্ধ।

    একটি সরলরেখা অন্য দুটি সরলরেখাকে ছেদ করলে, যদি কোন একটি দিকে অন্তর্বর্তী কোণদ্বয়ের যোগফল দুই সমকোণের কম হয়, তবে সরলরেখাদুটিকে অনির্দিষ্টভাবে বর্ধিত করলে সেই দিকে মিলিত হবে।

    ইউক্লিড ভেবেছিলেন যে এটা একটা উপপাদ্য। অর্থাৎ, এটাকে অন্য স্বতঃসিদ্ধগুলো থেকে প্রমাণ করা সম্ভব। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে কেউ এটা প্রমাণ করতে পারেনি। এই প্রমাণ করার চেষ্টার মধ্যে দিয়েই একদিন বোঝা গেল যে এটাও জ্যামিতিতে একটা দেওয়া জিনিস। অন্য স্বতঃসিদ্ধগুলো থেকে আসে না। কিভাবে বোঝা গেল, সেটা বুঝতে আমাদের কয়েকটা সংজ্ঞা জানতে হবে।

    ১. সরলরেখা বা লাইন — আবার মনে করিয়ে দিচ্ছি: যে সংজ্ঞা আমরা এখানে দেখব, তা গাণিতিকভাবে নিখুঁত কোন সংজ্ঞা নয়। বস্তুত কোন সংজ্ঞাই নয়। জ্যামিতিতে বিন্দুর মতই সরলরেখাও একটা অসংজ্ঞায়িত ধারণা। তবু সেই ধারণাটাকে বুঝতে আমরা কিছু একটাকে, যাকে এই ধারণাটার ব্যাখ্যা বলা যেতে পারে, সংজ্ঞা বলে চালাব।

    যেকোনো দুইটি বিন্দুর মধ্যে হ্রস্বতম দূরত্বের পথটিকে ওই দুইটি বিন্দু দিয়ে যাওয়া সরলরেখাংশ বলা হয়। যেকোনো সরলরেখাংশকে দুইদিকে অসীমভাবে বর্ধিত করলে একটি সরলরেখা পাওয়া যায়।

    ২. সমান্তরাল সরলরেখা বা প্যারালাল লাইন — এটা ইউক্লিডেও যা, আজও সেই সংজ্ঞাটাই ব্যবহার করি আমরা। এই সংজ্ঞাটা দেখায় কতটা দূরদর্শী ছিল ইউক্লিডের প্রতিভা।

    একই তলে অবস্থিত দুটি সরলরেখাকে উভয়দিকে অসীমভাবে বর্ধিত করলে, যদি কোন দিকেই তারা পরস্পরকে ছেদ না করে, তাহলে এই সরলরেখাদ্বয়কে পরস্পরের সমান্তরাল বলা হয়।

    এবার ফিরে যাই ইতিহাসে। পঞ্চম স্বতঃসিদ্ধর ইতিহাস। আগেই বলেছি বহু শতাব্দীর বহু গণিতজ্ঞ চেষ্টা করার পরেও কেউই এটা প্রমাণ করতে পারেন নি। শেষ পর্যন্ত, ১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ নিকোলাই লোবাচেভস্কি নামে এক রাশিয়ান গণিতজ্ঞ ও জানোস বোলেয়াই নামে এক হাঙ্গারিয়ান গণিতজ্ঞ দুজনে প্রায় একই সময়ে এই সমস্যাটার নিষ্পত্তি করলেন।[১]

    কি নিষ্পত্তি? সেটা বুঝতে আমাদের দেখতে হবে তাঁরা ঠিক কিভাবে ইউক্লিডের পঞ্চম স্বতঃসিদ্ধটা প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন। মজার কথা হলো, পদ্ধতিটা ইউক্লিডেরই উদ্ভাবন বলে মনে করা হয় — স্ববিরোধের সাহায্যে প্রমাণ (proof by contradiction)। ব্যাপারটা এরকম:

    আমি যা প্রমাণ করতে চাইছি, তার উলটোটা সত্যি বলে ধরে নিয়ে শুরু করব।
    তারপর তার থেকে আর কি কি প্রমাণ হয়, সেটা দেখব।
    যদি এমন কিছু প্রমাণ করে ফেলি যা যৌক্তিকভাবে অসম্ভব, তাহলে আমাদের প্রথম ধরে নেওয়াটা সত্যি হতে পারে না। যেহেতু যা প্রমাণ করতে চাইছি তার উলটোটা ধরে নিয়েছিলাম, যা প্রমাণ করতে চাইছি, সেটা সত্যি হতেই হবে।

    যেমন ধরা যাক, কিছু একটা বক্তব্য x-কে প্রমাণ করতে চাই। তার উলটোটা, যাকে অঙ্কের ভাষায় বলে, x কমপ্লিমেন্ট, সেটাকে সত্যি বলে ধরে নিলাম। তার থেকে ধরুন প্রমাণ করে ফেললাম, ২ < ২। যেহেতু ২ < ২ অসম্ভব, তাই প্রমাণ হয়ে গেল যে x সত্যি।

    এবার পঞ্চম স্বতঃসিদ্ধের একটা তুল্যমূল্য প্রতিপাদ্য আছে। এর নাম প্লেফেয়ারের স্বতঃসিদ্ধ।

    একটি সরলরেখা এবং ওই সরলরেখায় আপতিত নয় এমন একটি বিন্দু দেওয়া থাকলে, ওই বিন্দু দিয়ে ওই সরলরেখার সমান্তরাল করে একটি এবং একটিমাত্র সরলরেখা টানা যায়।

    এইটা আর পঞ্চম স্বতঃসিদ্ধ যে তুল্যমূল্য, তা বোলেয়াই ও লোবাচেভস্কির অনেক আগে থেকেই জানা ছিল। কেন তুল্যমূল্য, তা আপনারাও একটু ভাবলেই বুঝতে পারবেন। পঞ্চম স্বতঃসিদ্ধ বলছে, একটি সরলরেখা অন্য দুটি সরলরেখাকে ছেদ করলে, যেদিকে অন্তর্বর্তী কোণদ্বয়ের যোগফল দুই সমকোণের কম, সেদিকে মিলিত হতে বাধ্য। তার মানে, সরলরেখা দুটি সমান্তরাল হলে, ছেদকের দুদিকেই অন্তর্বর্তী কোণদ্বয়ের যোগফলকে ঠিক দুই সমকোণ হতে হবে। আর তাই, একটি সরলরেখা ও একটি বিন্দু দেওয়া থাকলে:

    বিন্দুটা থেকে সরলরেখাটির ওপর লম্ব টানব প্রথমে।
    তারপর সেই লম্বটির উপর আর একটি লম্ব টানব বিন্দুটা দিয়ে।

    এই দ্বিতীয় লম্বটিই ওই বিন্দু দিয়ে যাওয়া সমান্তরাল সরলরেখাটি, যা আমরা খুঁজছি। নিচের ছবি দেখলেই বুঝবেন ইউক্লিডীয় দ্বিসামতলীয় জ্যামিতিতে কেন এইটা হবে।



    লোবাচেভস্কি ও বোলেয়াই এই তুল্যমূল্য প্রতিপাদ্যটারই উলটো ধরে নিয়ে শুরু করেছিলেন। এই প্রতিপাদ্যটার উলটো কি? যেহেতু প্রতিপাদ্যটা বলছে এক এবং একটিমাত্র সমান্তরাল সরলরেখা টানা যায় তাই তার উলটো হওয়া উচিৎ এরম:

    একটি সরলরেখা এবং ওই সরলরেখায় অপতিত নয় এমন একটি বিন্দু দেওয়া থাকলে, ওই বিন্দু দিয়ে ওই সরলরেখার সমান্তরাল করে হয় একটিও সরলরেখা টানা যায় না, অথবা একাধিক সরলরেখা টানা যায়।

    তা, ওঁরা দুজনেই শুরু করেছিলেন একাধিক টানা যায়, এইটা ধরে নিয়ে। উদ্দেশ্য ছিল ইউক্লিডের বাকি চারটে স্বতঃসিদ্ধ আর এই একাধিক সমান্তরাল সরলরেখা টানা যাবে, এইটা ধরে শুরু করে একের পর এক উপপাদ্য প্রমাণ করে যাবেন, যতক্ষণ না কোন যৌক্তিক স্ববিরোধ (logical contradiction) খুঁজে পান। দীর্ঘ সময় চেষ্টা করেছিলেন দুজনেই। কেউ কারও কাজের কথা জানতেনও না। মোটামুটি একই সময়ে দুজনেই থেমে যান। এবং না, দুজনের কেউই পঞ্চম স্বতঃসিদ্ধ প্রমাণ করতে পারেন নি।

    তবে থেমে গেলেন কেন? কারণ দুজনেই এক আশ্চর্য কাজ করে ফেলেছিলেন। যৌক্তিক স্ববিরোধ খুঁজতে খুঁজতে তাঁরা দুজনেই একেবারে নতুন জ্যামিতি তৈরি করে ফেলেছিলেন। ইউক্লিডীয় জ্যামিতির মতই তা, আর তাতে কোন স্ববিরোধও নেই। শুধু আছে একটা কিন্তু। কিন্তু কি? তাদের তৈরি করা জ্যামিতিতে উপপাদ্যগুলো যা বলছে, সেগুলো ইউক্লিডীয় জ্যামিতির সাথে মেলে না বেশিরভাগই।

    কিরকম? ধরুন, ইউক্লিডীয় জ্যামিতির একটা উপপাদ্য:

    ত্রিভুজের তিনটি কোণের সমষ্টি সর্বদা দুই সমকোণের সমান।

    লোবাচেভস্কি ও বোলেয়াইয়ের জ্যামিতিতে এই উপপাদ্যটা আর সত্যি নয়। তবে এরকমই একটা উপপাদ্য আছে:

    ত্রিভুজের তিনটি কোণের সমষ্টি সর্বদা দুই সমকোণের কম।

    এখানে মনে হতে পারে, এই তো এই একটা অসম্ভব জিনিস! এই তো পঞ্চম স্বতঃসিদ্ধ প্রমাণ হল! না, তা হল না, কারণ এটা যৌক্তিকভাবে অসম্ভব কিছু না। আমরা খাতার পাতায় ত্রিভুজ এঁকে কোণ মেপে দেখলে দুই সমকোণ বেরোয় ঠিক, তাই এই উপপাদ্যটা অদ্ভুত হতে পারে। কিন্তু ২ < ২, এটা যেমন যৌক্তিকভাবে অসম্ভব (logical impossibility), অর্থাৎ কোন নির্ভুল যুক্তিতেই অমন একটি প্রতিপাদ্য সত্যি হতে পারে না, তেমন কিছু নয়।

    কিন্তু আমাদের রোজকার অভিজ্ঞতার সাথে ওনাদের জ্যামিতির এরকম বহু উপপাদ্যই মিলছিল না। সে এক আশ্চর্য নতুন জগৎ! এতটাই আলাদা জ্যামিতি আবিষ্কার করেছিলেন তাঁরা যে ঠিক কি ঘটেছে সেটা বুঝে উঠতে খানিক সময় লেগেছিল। ১৮৪৮ সাল থেকে গণিতজ্ঞরা এই নিয়ে ভীষণভাবে মাথা ঘামাতে শুরু করেন। এক সময় ফেলিক্স ক্লেইন প্রমাণ করলেন যে, এই জ্যামিতিগুলি যৌক্তিকভাবে স্ববিরোধমুক্ত যদি এবং কেবলমাত্র যদি ইউক্লিডীয় জ্যামিতি যৌক্তিকভাবে স্ববিরোধমুক্ত হয়।

    সমস্তটা বুঝে উঠতে ইতিহাসকে আরো অপেক্ষা করতে হয়েছিল, রীমানের প্রতিভার জন্য। ওনারা যে জ্যামিতিগুলো আবিষ্কার করেছিলেন সেগুলোকে বলে অধিবৃত্তীয় জ্যামিতি (hyperbolic geometry)। পরে, ইউক্লিডীয় জ্যামিতির থেকে আলাদা কিন্তু এগুলোর থেকে অন্যরকম আরও জ্যামিতি আবিষ্কার হয়, সেগুলোকে বলা হয় উপবৃত্তীয় জ্যামিতি (elliptic geometry)। আর ইউক্লিডীয় জ্যামিতির থেকে আলাদা এই সমস্ত জ্যামিতিগুলোকে একসাথে বলা হয় অনিউক্লিডীয় জ্যামিতি (non euclidean geometry)।

    পরের অংশে আমরা দেখব এই জ্যামিতিগুলো কেন এমন অদ্ভুত আর এরা কিই বা বলছে।

    -----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

    [১] বোলেয়াই তাঁর আবিষ্কারের কথা যখন গাউস (Karl Frederick Gauss) কে জানান, ততদিনে গাউস নিজেও এই আবিষ্কার করেছিলেন। যদিও এ নিয়ে তাঁর কোন কাজ কখনো প্রকাশিত হয়নি।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৫ মার্চ ২০১৭ | ১৮৭৮ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    বয়স - Swarnendu Sil
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • cm | 127.247.98.185 (*) | ২৬ মার্চ ২০১৭ ০১:০৪61016
  • "তাহলে আবার সেই পুরনো প্রশ্নঃ গণিতবিদ্যা কি আসলে বাস্তব বিশ্বের অ্যাবস্ট্রাকশান?" অঙ্ক কষতে হলে এই বাস্তব দুনিয়ার (যদিও তার মানেও খুব পরিষ্কার নয়) অ্যাবস্ট্রাকশন হতে হবে কেন? গণিতজ্ঞ স্বাধীন জীব, যা ইচ্ছে হয় কষবেন, ঐ সব দুনিয়ার কাছে বাঁধা থাকবেন কেন! পরে পাটোয়ারি বুদ্ধি নিয়ে কেউ তা কাজে লাগাবে কি লাগাবেনা, অ্যাবস্ট্রাকশন হিসেবে ভাববে কি ভাববেনা সে তার ব্যাপার। ওরকম কোন বাধ্যবাধকতা থাকার কথা নয়।
  • cm | 127.247.98.185 (*) | ২৬ মার্চ ২০১৭ ০১:০৮61017
  • মাইকেলসন মর্লির প্রসঙ্গে, পদার্থবিদ্যা কোনটা, গাছ থেকে আপেল পড়া সেটা দেখা নাকি তার ব্যাখ্যা? নাকি দুটৈ?
  • dc | 181.49.205.145 (*) | ২৬ মার্চ ২০১৭ ০৬:১৮61012
  • তিনটে লেখা পড়তেই ভারি ভাল্লাগলো। আর রীম্যানিয়ান জ্যামিতির কথা যখন এসেইছে তখন একটা অ্যানেকডোট উল্লেখ করি, আশা করি স্বর্ণেন্দু কিছু মনে করবেন না।

    রীম্যানকে নন-ইউক্লিডিয়ান জ্যামিতি নিয়ে পড়াশুনো করতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন ওনার মাস্টারমশাই কার্ল গাউস। তবে সে খুব সহজ কাজ ছিলনা, কারন এর আগে ব্রিটিশ ম্যথামেটিশিয়ান জন ওয়ালিস বলে গেছিলেন যে ফোর্থ বা হায়ার ডাইমেনশনাল জিওমেট্রি স্রেফ মানসিক বিকার বিশেষ। যাই হোক, স্বর্ণেন্দু যেমন লিখেছেম রীম্যান দমে না গিয়ে লোবাচেভস্কি ও বোলেয়াই এর হাইপারবোলিক জিওমেট্রি পড়তে শুরু করেন ও ১৮৫৪ সালে তাঁর নিজের গবেষনার ওপর একটি লেকচার দেন। এই লেকচারের পরে য়ুরোপীয় গণিত জগতে সাড়া পড়ে যায়, আর "রীম্যানিয় জ্যামিতি" বা "ম্যানিফোল্ড জ্যামিতি" র গোড়াপত্তন হয়। তারপর এই নিয়ে বহু ম্যাথামেটিশিয়ান অনেক পড়াশুনো করেন, নানান প্রপার্টি ইত্যাদি আবিষ্কার হয়। কিন্তু সেসবই ম্যাথামেটিকাল প্রপার্টি, বাস্তব জগতের সাথে তার কোন যোগাযোগ নেই, একেবারেই অ্যাবস্ট্র্যাক্ট ব্যাপার।

    এরপর আসে ১৯১২ সাল। তার আগে ১৯০৫ সালে অবশ্য এক কেরানি দেখিয়ে দিয়েছেন যে ভ্যাকুয়ামে আলোর গতিবেগ সবসময়েই সমান আর যেকোন ইনার্শিয়াল রেফারেন্স ফ্রেমে এক। কিন্তু এই কেরানিটি অংকে একটু কাঁচা ছিলেন (পাজি লোকেরা বলে ওনার প্রথম স্ত্রী নাকি ওনাকে সাহায্য করতেন, স্পেশাল থিওরি অফ রিলেটিভিটির জন্য যে ম্যাথামেটিকাল ফ্রেমওয়ার্ক লেগেছিল সেই মিনকাউস্কি জিওমেট্রিও নাকি ওনার স্ত্রী সাজেস্ট করেছিলেন)। যাই হোক, ১৯১২ সালে আইনস্টাইন ওনার জেনারাল থিওরি অফ রিলেটিভিটির হদিশ পেয়ে গেছেন, কিন্তু আবার, সেটার ম্যাথামেটিকাল স্ট্রাকচার তখনও খুঁজে পাননি। তখন উনি মার্সেল গসম্যানের কাছে সাহায্যের জন্য যান, আর গ্রসম্যান সব শুনে বলেন রীম্যানের জিওমেট্রি অ্যাপ্লাই করে দেখতে। আইনস্টাইন তখন রীম্যানিয়ান জিওমেট্রি নিয়ে প্ড়াশুনো শুরু করেন আর দেখিয়ে দেন যে "রীম্যানিয়ান ডিসট্যান্স" নামক যে অ্যাবস্ট্র্যাক্ট ধারনাটা ছিল সেটাকেই ইউক্লিডিয়ান ডিসট্যান্সের সাথে মিলিয়ে দেওয়া যায় যদি এর সাথে গ্র্যাভিটিকে নিয়ে নেওয়া হয়।

    তাহলে আবার সেই পুরনো প্রশ্নঃ গণিতবিদ্যা কি আসলে বাস্তব বিশ্বের অ্যাবস্ট্রাকশান?
  • sswarnendu | 198.154.74.31 (*) | ২৬ মার্চ ২০১৭ ১০:২৩61013
  • dc,
    একদমই কিছুই মনে করব না।
    আর আপনার শেষ প্রশ্নের উত্তর আমার নিজের কাছে হ্যাঁ। আমি যতজন অঙ্কে কাজ করা লোকের সাথে কথা বলেছি তাদের সবারই তাই। এ ব্যাপারে অঙ্কে কাজ করা লোকেরা একদমই প্লেটোনিক, নিজেদের discoverer ই ভাবেন, inventor নয়।

    আর বাকি নিয়ে একটা ছোট্ট ভুলের কথা বলার... "ভ্যাকুয়ামে আলোর গতিবেগ সবসময়েই সমান আর যেকোন ইনার্শিয়াল রেফারেন্স ফ্রেমে এক।" --- এটা কেরানিটি দেখান নি। এইটা একটা এক্সপেরিমেন্টাল তথ্য যা মিচেলসন-মর্লি দেখিয়েছিলেন (১৮৮৭) , যার ফলশ্রুতিতে ফিজিক্সে আমেরিকার প্রথম নোবেল প্রাইজ ( মিচেলসন, ১৯০৭)।
    আর যদি সেই তথ্যটা তত্ত্বের জায়গা থেকে ব্যাখ্যা করাও হয়... তাহলেও...

    মানে বাক্যটা শেষ করতে ভয়ই পাই... কারণ কেরানীটি পদার্থবিদ্যার পোস্টার-বয় বিশেষ... এই বাজারে কার কোথায় অনুভূতি আহত হবে কেউ জানে না... শুধু পঁয়ক্যারে-র এই নিয়ে কাজকর্ম খোঁজ নিয়ে দেখতে বলে যাই বরং :)
  • রৌহিন | 113.214.139.253 (*) | ২৬ মার্চ ২০১৭ ১১:২১61014
  • এখানে মনে হল লোবাচেভস্কি ও বোলেয়াই পরস্পরের কাজের সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল ছিলেন না (যদিও তাদের কাজে প্রচুর মিল ছিল)। দুজনে যে যেখানে থেমেছিলেন, পরস্পরের কতটা কাছাকাছি ছিলেন? কেউ কি দুটি কাজের মধ্যে সমন্বয়ের কাজটা করেছিলেন পরবর্তীকালে?
  • sswarnendu | 198.154.74.31 (*) | ২৬ মার্চ ২০১৭ ১১:৩৬61018
  • গাছ থেকে আপেল পড়ে সেটা জানাটা পদার্থবিদ্যা নয় ঠিকই, কিন্তু এইটা যে একটা অদ্ভুত জিনিস যার একটা ব্যাখ্যা প্রয়োজন, সেইটা নজর করাটা আমার ব্যক্তিগত মতে অবশ্যই পদার্থবিদ্যা, ব্যাখ্যা দিতে না পারলেও। ফলে cm এর শেষ প্রশ্নের উত্তরটা 'দেখা' বলতে কি বোঝানো হচ্ছে তার উপরে নির্ভর করবে। ফল যে গাছ থেকে মাটিতেই পড়ে, মানুষ বাদে আরও গাদা গাদা স্পিসিস সেটা দিব্যি জানে, সেইটা নিয়ে 'কেন?' প্রশ্নটা তারা কেউ করবে না, এইটা একটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ তফাত... প্রশ্নটা তোলা আর তার উত্তর দেওয়ার তফাত তার চেয়ে বেশ কম বলেই আমার মনে হয়।
  • sswarnendu | 198.154.74.31 (*) | ২৬ মার্চ ২০১৭ ১১:৪৯61015
  • রৌহিন,

    লোবাচেভস্কি যে জ্যামিতি আবিষ্কার করেছিলেন, তাকে আজকে বলা হয় অধিবৃত্তীয় জ্যামিতি বা হাইপারবোলিক জিওমেট্রি। বোলেয়াই এর কাজ আর একটু জেনেরাল, হাইপারবোলিক জিওমেট্রিও আবিষ্কার করেছিলেন, তার সাথে এইটাও বুঝেছিলেন যে অন্যভাবেও পঞ্চম স্বতঃসিদ্ধ ভায়োলেট করা যাবে এবং তাতেও আরও অন্য একটা জ্যামিতি পাওয়া যাবে। বোলেয়াই যদিও করেছিলেন লোবাচেভস্কির পরে, কিন্তু কেউই কারোর কাজের কথা আদৌ জানতেন না।

    সমন্বয়ের কাজ এক অর্থে রীমান ই করেছিলেন, তাই তার আগে আর আলাদা করে করতে হয়নি। যদিও ক্লেইন একরকমভাবে রীমানের আগেই এই জ্যামিতিগুলোর মানে কি তাই নিয়ে লিখেছিলেন, সেইটাও একরকম সমন্বয় বলে ধরা যায়। ক্লেইনের কাজের কথা এই পর্বে খুব ছোট্ট করে বলা আছে।
  • dc | 120.227.224.153 (*) | ২৭ মার্চ ২০১৭ ০৪:২৫61019
  • স্বর্ণেন্দু ঠিক বলেছেন, ওই আলোর গতিবেগের ইনভ্যারিয়ান্স প্রথম দেখিয়েছিলেন মিচেলসন আর মরলি। আর ওনাদের এক্সপেরিমেন্টাল অবাসরভেশানের থিওরেটিকাল ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন আইনস্টাইন, লরেন্ট্জ কনট্র্যাকশান ডিরাইভ করে।

    cm, এটা আসলে আলাদা একটা বিরাট বড়ো অলোচনার বিষয়, এখানে আর এ নিয়ে না লেখাই ভালো। তবে স্বর্ণেন্দুও দেখছি ম্যাথামেটিকাল প্লেটোনিজমেই বিশ্বাস করেন। চাইলে ফিলজফি অফ ম্যাথামেটিক্স টই খুলে এটা নিয়ে তর্ক করা যেতে পারে ঃ) আপাতত জ্যামিতির চতুর্থ পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
  • Atoz | 161.141.85.8 (*) | ২৭ মার্চ ২০১৭ ০৮:২৮61020
  • ম্যাকসওয়েলের সমীকরণগুলো থেকেও তো---- ফ্রী স্পেসে যে কোনো ই এম ওয়েভের গতিবেগের ইনভ্যারিয়ান্স ---
  • sswarnendu | 198.154.74.31 (*) | ২৮ মার্চ ২০১৭ ০৭:৩৯61021
  • ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণগুলো সেটা প্রেডিক্ট করছে এইটা আজকের ইন্টারপ্রিটেশন...... স্পেশাল রিলেটিভিটি ছাড়া সেইটাই করছে মনে করার কোন কারণ ছিল না।
    ১৮৬৫ থেকে ১৯০০ দোরগোড়া পর্যন্ত প্রায় তিন দশক ধরে লোকে ভেবেছে ম্যাক্সওয়েল ইক্যুয়েশন নিউটন বর্ণিত 'সহি' ইনার্শিয়াল ফ্রেম এর হদিশ দেবে - ইথার ফ্রেম, যে ফ্রেম এ আলোর গতিবেগ এক্স্যাক্টলি ম্যাক্সওয়েল এর দেওয়া ভ্যালুর সমান, যেকোন ফ্রেম এ আলোর গতিবেগ এর ইনভ্যারিয়ান্স এর কথা বলছে এ কথা ভাবেনি। আবারো আরও একটা উদাহরণ, যেখানে ইক্যুয়েশনস এক্সপ্রেসড মোর দ্যান উই থট ইট ডিড, রিইনফোর্সিং ম্যাথামেটিকাল প্লেটোনিজম। :)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে প্রতিক্রিয়া দিন