এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বইপত্তর

  • 'অবেলার গল্প' --- শাঁওলী মিত্র

    damayantee
    বইপত্তর | ২২ আগস্ট ২০০৬ | ১১৩৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • damayantee | 61.246.23.7 | ২২ আগস্ট ২০০৬ ২১:৪১673109
  • শাঁওলী মিত্র গল্পকার হিসাবে খুব পরিচিত নন। কখনও সখনও কিছু কিছু শারদীয় সংখ্যায় তাঁর লেখা গল্প পড়েছি। মন্দ লাগে নি, আবার খুব যে নাড়া দিয়েছে তাও নয়। তাই সেরকম সচেতনভাবে তাঁর লেখা কখনও খুঁজি নি। সম্প্রতি হাতে এলো তাঁর এই গল্প সংকলনটি। এই বইটিই এখনও পর্যন্ত প্রকাশিত তাঁর একমাত্র গল্পসংকলন।

    মোট তেরোটি গল্প নিয়ে এই 'অবেলার গল্প'। লেখকের নিজের কথায় -- "আমাদের এই সময়টা তো অবেলাই বটে! এই বিভ্রান্ত অবেলায় বাঁচতে বাঁচতে, এক সন্ধিক্ষণে -- আমার দেখা না দেখা কিছু মানুষের কিছু গল্প।"

    "সুর-বেসুরের আসর" --- সম্পুর্ণ সংকলনে একমাত্র গল্প যেখানে কোন নারীচরিত্র সেইভাবে উপস্থিত নেই। গ্রাম থেকে কলকাতায় চাকরী করতে আসা এক যুবকের, শহুরে ওপরচালাক পরগাছা জাতীয় এক যুবকের সাথে বড়লোকের বাড়ী গানের আসরে যাবার গল্প। সুর আর বেসুর ঠিকঠাক মিলেছে। সুরের মায়াজাল আচ্ছন্ন করার পরপরই আসে বেসুরো হ্যাংলাপনা, ঈর্ষা। আর তারই মাঝে আটকে যায় সুর আর বেসুরের এমন অবিচ্ছেদ্য সহাবস্থানে হতভম্ব এক যুবক। লোভ আর ঈর্ষার কদর্য্য চিত্র দেখে পালাতে যায়, কিন্তু আটকে যায় সুরের টানে। তার দ্বিধা, দ্বন্দ্ব, অসহায়তা ফুটে উঠেছে নিখুঁতভাবেই।

    'ভ্রান্তিকাল' এক মেয়ের গল্প, যে তার বারেবারে প্রতারিত হওয়া মা'কে সংসারের চাতুর্য্য ও সুবিধাবাদ থেকে বাঁচাতে গিয়ে মেরেই ফেলে। পড়তে ভালই লাগে, কিন্তু তারপরে আর কোন রেশ রেখে যায় না। 'কুর্চির আপন পর মা', 'অন্বিষ্ট' , 'শম্পাদের বিসর্জন', 'নীলু-মা', 'প্রজ্ঞা ওরফে রীণা ওরফে ১১৭ নম্বর', 'অতসী মাসি', 'অনৃত', 'আনু কিংবা আনোয়ারা', 'দাঙ্গা', 'অপারগতা', 'সন্ধিক্ষণ' --- এই সবকটি গল্পেই নারী এসেছে বিভিন্ন ভুমিকায়। কোথায়ও সেই নারী তার প্রান্তবাসী অবস্থানকে অতিক্রম করে অর্জন করে এক আত্মবিশ্বা, যা তাকে কিছুতেই হার মানতে দেয় না। কোথায়ও বা সে অসহায়ভাবেই হার মানে। কিন্তু একটি গল্পেও অসহায় আত্মসমর্পন করে নি নারী। চেষ্টা করেছে, লড়ে গেছে, হয়ত পেরেছে, হয়ত পারে নি কিন্তু এই লড়ে যাওয়া দেখানোটাই গল্পগুলি সম্বন্ধে এক ভালোলাগা গড়ে দেয়।

    'কুর্চির আপন পর মা' আর 'অন্বিষ্ট' গল্পদুটির পরপর অবস্থান এক ঝটকায় দেখিয়ে দেয় জীবনের বহুমাত্রিকতা। কুর্চির পর মা অনায়াসে তার আপন মা হয়ে ওঠে। আর নীরীর আপন মা তার সাথে পরম শত্রুর মত ব্যবহার করে। নীরীর মায়ের মত মায়েরা, অত্যন্ত কম সংখ্যক হলেও যে আছেন, এই সত্যটিই মনে করায় এই গল্প। আরো দেখায় স্বাভাবিক জীবনযাপনের সব সুযোগ হারিয়েও নীরী আত্মবিশ্বাস হারায় না, কারোকে দোষারোপ করে বিষিয়ে তোলে না তার জীবনের প্রতি মুহুর্ত। জীবনের বিভিন্ন দিকগুলি নিয়ে
    লেখার এই প্রবণতা অবশ্যই অভিনন্দনযোগ্য। শুধুই অন্ধকার দিক নিয়ে লিখলে গল্পগুলি তাৎক্ষণিকভাবে অনেক বেশী সহানুভুতি আকর্ষণ করে, কিন্তু লেখক সেই সহজ রাস্তায় হাঁটতে চান নি।

    'প্রজ্ঞা ওরফে .......' আর 'অতসী মাসি' গল্পদুটিতে নাটক, নাটকের দল এসেছে তার উৎসাহ উদ্দীপনা আর ক্লিন্ন কদর্য্যতা নিয়েই। নাটকের দলের অভ্যন্তরীন রাজনীতি, তার ভেঙে যাওয়া, ব্যক্তিবিশেষের প্রেম, প্রেমহীনতা সবই এসেছে এক নিরাসক্ত কথকের লেখনী থেকে।

    এই বইয়ে আমার সবচেয়ে ভাল লেগেছে 'আনু কিম্বা আনোয়ারা' আর 'দাঙ্গা' গল্পদুটি। দুটিতেই সমাজের ভেতরে আপাত গেরস্তপোষ ভদ্রতার ভেতরে লুকিয়ে রাখা আমাদের দাঁতনখগুলি ---যা বেরিয়ে আসে সামান্য সুযোগেই ---- কে পরিস্কার দেখিয়ে দিয়েছে।

    বেশ কিছু গল্পেই কোথায় যেন একটু মহাশ্বেতা দেবীর লেখনীর ধারা মিশে রয়েছে। সে কি ঐ নিরাসক্ত বর্ননাভঙ্গীতে, না কি সব গল্পগুলির মধ্যেই একটা পজিটিভ মেসেজ দেবার চেষ্টা আছে বলে--- জানি না। তবে আমার যেন সেরকমই লাগল। লেখকের কথায় গল্পগুলি নাকি 'ফরমায়েশী' নয়। তাই কি? কারণ বেশ ক'টি আমি বিভিন্ন পত্রপত্রিকা বা শারদীয় সংখ্যায় পড়েছি। তবে গল্পগুলি নি:সন্দেহে সুলিখিত। পড়তে ভাল লাগে, তরতর করে পড়ে ফেলা যায়, দু একটি গল্প বেশ একটু ভাবায়ও। কিন্তু ঐ পর্যন্তই। তার চেয়ে বেশী কিছু রেখে যায় না। আগামী দুই বছরের মধ্যে এই বইটি যদি আবার খুলে পড়তে ইচ্ছে করে, তো নিজেই খুব অবাক হব। তবে ঐ তাৎক্ষণিক ভাললাগা অথবা একটু থমকে যাওয়া --- সেই বা আজকাল আর কটা গল্প পড়ে হয়! সেইটুকুও কম পাওনা নয়।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত মতামত দিন