এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বইপত্তর

  • বঙ্গানুবাদে শ্রী শ্রী চন্ডী

    tan
    বইপত্তর | ২২ সেপ্টেম্বর ২০০৬ | ৪১২০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • tan | 131.95.121.127 | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ০৪:০৭670957
  • (তৃতীয়া অধ্যায়)
    মহিষাসুর-বধ

    ঋষি বলিলেন।১
    এইভাবে সব দৈত্যসেনা নিপতিত দেখতে পেয়ে,
    অম্বিকারে লক্ষ্য করে চিক্ষুর রোষে চলে ধেয়ে।২

    দেবীর 'পরে বাণ হানিয়া ঢেকেই যেন ফেলালো তাঁয়
    বর্ষামেঘে আচ্ছাদিত মেরুগিরির শৃঙ্গপ্রায়।৩

    বাণ দিয়ে তায় অনায়াসে কাটেন দেবী সেসব বাণ,
    সারথি আর তুরঙ্গে তার যমাগারে সব পাঠান।৪

    তারপরে সেই সাথে সাথেই ধ্বজধনু ছেদন করে
    গাত্র তাহার লক্ষ হাজার তীক্ষ্ণ শরে ফেলেন ভরে।৫

    ছিন্নধনু সেই সুরারি হারায়ে তার রথ সারথী
    খড়্‌গ চর্ম হাতে নিয়ে ভীমবেগে ধায় দেবীর প্রতি।৬

    সিংহশিরে আঘাত করে ছুটে এসে অকস্মাৎ
    মহাদেবীর বামবাহুতে করলো পুন: খড়্‌গাঘাত।৭

    হাতে লেগে ভেঙে খড়্‌গ খান খান পড়ে গেলো খসে,
    শূল নিয়ে ধায় মহাবলী দৈত্য অরুণাক্ষ রোষে।৮

    ভদ্রকালী দেবীর প্রতি উত্থিত যে শূল ভীষণ
    দীপ্ত-রবি-রশ্মি-সম উচ্ছলিল রণাঙ্গন।৯

    দেখতে পেয়ে মহাদেবী আপন শূলে তৎক্ষণাৎ
    কেটেই তাহা,ফেলেন করে মহাসুরের মুন্ডপাত।১০

    হত হলে সেই মহিষের সৈন্যপতি ভয়ঙ্কর,
    অমরারি 'চামর' হলো সমরভূমে অগ্রসর।১১

    দেবীর দিকে নিক্ষেপিল শক্তি-অস্ত্র প্রাণান্তক,
    হুঙ্কার ছাড়েন মহাদেবী,অস্ত্র সব হয় অনর্থক।১২

    ভগ্ন হয়ে পড়লো ভূমে 'শক্তি',হেরে তৎক্ষণাৎ
    শূল নিল সে-দেবীর বাণে তাও হল ভূমিসাৎ।১৩

    সিংহ তখন চামর-বাহন হস্তিকুম্ভ আরোহনে,
    বাহুযুদ্ধ করলো শুরু সেই ত্রিদশারির সনে।১৪

    যুধ্যমান ঐ দুজন শেষে চ্যুত হয়ে ভূমির পরে
    আরম্ভিল যুদ্ধ পুন: হাতে হাতে ক্রোধের ভরে।১৫

    সেই নিমেষে ঊর্ধ লম্ফ দিয়ে নেমে সিংহবীর
    তীক্ষ্ণ ক'রে পৃথক কল্লে চামর-অরির নগ্নশির।১৬

    'উদগ্র'কে মারেন দেবী বৃক্ষ এবং শিলাপাতে
    তাহার পরে'করাল' মরে দন্ত এবং মুষ্ঠ্যাঘাতে।১৭

    ক্রুদ্ধা দেবীর গদায় শেষে 'উদ্ধতাসুর' চূর্ণ হয়,
    'তাম্র' 'অন্ধ' 'বাষ্কলে'র ও বাণেতে কাল পূর্ন হয়।১৮

    'উগ্রাস্য''উগ্রবীর্য'ও'মহাহনু' ত্রিনেত্রার
    শূলাঘাতে ত্বরাণ্বিত দেখতে গেলো যমদ্বার।১৯

    "বিড়ালাসুর" দেহ হতে শির হারালো অসির ঘায়,
    "দুর্ধর" ও "দুর্মুখা"দি বাণে বিদ্ধ অক্কা পায়।২০

    এইভাবে সব সৈন্যরাশি ক্ষয় লভিলে,মহিষবেশে
    মহিষাসুর পড়লো দেবীর গণসৈন্য মধ্যে এসে।২১
  • tan | 131.95.121.127 | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ০৪:৩৮670958
  • ভূমিতলে পড়লো তাহার তুন্ডাঘাতে কেহ কেহ,
    শৃইঙ্গ এবং লেজের ঘায়ে দীর্ন হলো কারও দেহ।২২

    কেউ বেগে,কেউ নাদে আবার কেউ ভ্রমণের ঘূর্ণিপাকে
    নি:শ্বাস বায়ুতে কেহ মূর্চ্ছা খেয়ে 'বাপরে' ডাকে।২৩

    প্রমথগণে নিপতিত করেই গেল সিংহে তাঁর
    বধ করিতে 'মহিষ',তাতে ক্রোধ জাগিলো অম্বিকার।২৪

    বেগেতে ক্ষুর আস্ফালনে ক্ষুন্ন করে মহীতল
    স-হুঙ্কারে শৃঙ্গ তেড়ে কাঁপালো সব ভূমন্ডল।২৫

    বেগ ভ্রমণে বসুন্ধরা পড়লো হয়ে শীর্ণ কায়,
    উচ্ছ্বসিয়া কুল ছাপালো সাগরবারি পুচ্ছঘায়।২৬

    শৃঙ্গাঘাতে ছিন্ন হয়ে মেঘ ভাসিল ইতস্তত:,
    নাকের শ্বাসে পাহাড় খসে পড়লো ভূমে শত শত।২৭

    এমনি রোষোদীপ্ত হয়ে ক্ষিপ্ত যে ঘোর অসুরপতি
    আসছে দেখে নাশতে তারে মহাদেবী রুষ্টা অতি।১৮

    পাশ ক্ষেপনে ততক্ষণে নিলেন করে বন্দী তায়,
    ফন্দীপটি অসুর ত্বরা লুকায়ে তার মহিষ কায়।২৯

    সিংহরূপে রুখলো;দেবী যেই কাটিলেন শিরটি তার
    বের হলো এক খড়্‌গপানি পুরুষ মেরু শৃঙ্গাকার।৩০

    এক নিমেষে দেবী তাঁর খড়্‌গ চর্ম শায়ক দিয়ে-
    কাটেন তারে;অমনি সে এক মত্ত হাতীর মূর্তি নিয়ে।৩১

    শুন্ড দিয়ে-কেশরীরে করতে গেল আকর্ষণ,
    পলক পাতে খড়্‌গাঘাতে হইলো তাহার ভূপতন।৩২

    এবার পুন: সেই মহাসুর মহিষ দেহ ধারণ করে,
    বিক্ষোভিত ব্যাকুলিত করলো সকল চরাচরে।৩৩

    ক্রুদ্ধা হয়ে জগন্মাতা পান করে তার মহা পেয়,
    আরম্ভিলা অট্ট হাসি রক্ত আঁখি শক্ত দেহ।৩৪

    বলদৃপ্ত অসুর সেও হুঙ্কারে স-গর্বে ঢের,
    নিক্ষেপিল দেবীর প্রতি ভগ্নশিখর পর্বতের।৩৫
  • tan | 131.95.121.127 | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ০৪:৪৫670959
  • তীক্ষ্ণবাণে চূর্ন ক'রে সক্কলি যে,পান-বিভোর
    আকুলিত কন্ঠে দেবী বলেন রোষে,""রে অসুর""।৩৬

    দেবী বলিলেন।৩৭
    ""যাবৎ মধু পান করি তুই গর্জে নে রে ততক্ষণ,
    দেবতারা তোর মৃত্য হেরে করবে আশু এ গর্জন।""৩৮

    ঋষি বলিলেন।৩৯
    এই বলে সেই মহাদেবী চরণে তার কন্ঠমূল
    আক্রমিয়া,বক্ষোপরি মারেন মহাতীক্ষ্ণ শূল।৪০

    অসুর তখন মহিষ থেকে বের করে তার অর্ধকায়
    উঠছিলো;স-বীর্যে দেবী করলো অবরুদ্ধ তায়।৪১

    "অর্ধ মহিষ অর্ধ অসুর' এমনিভাবে যুধ্যমান
    অসির ঘায়ে মুন্ড নিয়ে দেবী বধেন তার পরান।৪২

    হাহাকারে দিক ভরিয়া দৈত্যসেনা সব তখন,
    পালালো,আর হর্ষে মেতে উঠলো যত অমরগন।৪৩

    মহর্ষিগণ সঙ্গে দেবীর স্তব করিল দেবদেবীরা,
    গন্ধর্বেরা গান ধরিল,নাচলো যত অপ্সরীরা।৪৪
    (ইতি মহিষাসুর বধ সমাপ্ত)
  • tan | 131.95.121.127 | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ০৪:৪৮670960
  • মহিষাসুর বধ পর্যন্তই থাক আপাতত,পরে সময় করে শুম্ভ নিশুম্ভবধ রক্তবীজবধ এইসব কাহিনি দেওয়া যাবে।বইটা অনেকটাই বড়ো।কাহিনি ছাড়াও মাঝে মাঝে বা আগে পরে বহু স্তোত্র আছ।
  • tan | 131.95.121.127 | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ০৩:৪৭670961
  • আজকে আরেকটু সময় পাওয়া গেছে,অর্গলা স্তোত্র অল্প অল্প করে দিই।

    অর্গলা স্তোত্র

    প্রণিপাত করি পদে দেবী চন্ডিকার।
    প্রকাশ করিতে স্তব দেবী অর্গলার।।
    জয় হোক তব দেবী চামুন্ডা রূপিনী।
    সর্বাগতা কালরাত্রি ভূতাপ হারিণী।।

    জয়ন্তী মঙ্গল কালী ভদ্রকালী আর।
    কপালিনী গলে তব নরমুন্ড হার।।
    দুর্গা শিবা ক্ষমা ধাত্রী স্বাহা স্বধা নাম।
    তোমার চরণে দেবী অসংখ্য প্রণাম।।

    যমজ মধুকৈটভে বধ তুমি কর।
    বিধাতাকে তুমি দান করিয়াছ বর।।
    প্রণমি লভিতে দেবী তব পদাশ্রয়।
    দাও রূপ জয় যশ কর শত্রুক্ষয়।।

    করিয়াছ বধ তুমি মহিষ অসুর।
    ভক্তের আনন্দ তাতে হইলো প্রচুর।।
    প্রণমি লভিতে দেবী তব পদাশ্রয়।
    দাও রূপ জয় যশ কর শত্রুক্ষয়।।

    ধূম্রনেত্র কর দেবী তুমিই সংহার।
    ধর্ম অর্থ কাম মোক্ষ প্রদান তোমার।।
    প্রণমি লভিতে দেবী তব পদাশ্রয়।
    দাও রূপ জয় যশ কর শত্রুক্ষয়।।
    (Cont.)
  • tan | 131.95.121.127 | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ০৬:১০670962
  • রক্তবীজ চন্ডমুন্ড তুমি বধ কর।
    দাও রূপ জয় যশ শত্রু ভয় হর।।
    নিশুম্ভ শুম্ভে নিপাত করিয়া জননি।
    ত্রৈলোক্যের শুভদান করিলে আপনি।।
    প্রণমি লভিতে দেবী তব পদাশ্রয়।
    দাও রূপ জয় যশ কর শত্রুক্ষয়।।
    ব্রহ্মা আদি বন্দে তব চরণকমল।
    আপনি করেন দান সৌভাগ্য সকল।।

    প্রণমি লভিতে দেবী তব পদাশ্রয়।
    দাও রূপ জয় যশ কর শত্রুক্ষয়।।
    রূপ চরিত্র তোমার চিন্তার অতীত।
    সর্ব শত্রুর বিনাশ তোমার বিহিত।।
    প্রণমি লভিতে দেবী তব পদাশ্রয়।
    দাও রূপ জয় যশ কর শত্রুক্ষয়।।
    ভক্তিতে প্রণমি সদা অপর্ণা তোমায়।
    ভক্ত পাপ দূর হয় তোমার কৃপায়।।

    প্রণমি লভিতে দেবী তব পদাশ্রয়।
    দাও রূপ জয় যশ কর শত্রুক্ষয়।।
    যেই জন তব স্তব করে ভক্তিভরে।
    ব্যাধিনাশ কর তার তুমি দয়া করে।।
    প্রনমি লভিতে দেবী তব পদাশ্রয়।
    দাও রূপ জয় যশ কর শত্রুক্ষয়।।
    তুমি মা চন্ডিকা দেবী যুদ্ধে সদা জয়।
    তোমার কৃপায় সর্ব পাপক্ষয় হয়।।
    প্রণমি লভিতে দেবী তব পদাশ্রয়।
    দাও রূপ জয় যশ কর শত্রুক্ষয়।।
    সৌভাগ্য আরোগ্য আদি শ্রেষ্ঠ সুখ যত।
    তোমার চরণে মাগি তাহাই সতত।।
    প্রণমি লভিতে দেবী তব পদাশ্রয়।
    দাও রূপ জয় যশ কর শত্রুক্ষয়।।
    অশেষ কল্যাণ আর ঐশ্বর্য অপার।
    করেন ব্যবস্থা দেবী আপনি তাহার।।

    প্রনমি লভিতে দেবী তব পদাশ্রয়।
    দাও রূপ জয় যশ কর শত্রুক্ষয়।।
    শত্রুর বিনাশ তরে করুন বিধান।
    উৎকৃষ্ট বলে যেন হই বলীয়ান।।
    প্রণমি লভিতে দেবী তব পদাশ্রয়।
    দাও রূপ জয় যশ কর শত্রুক্ষয়।।
    সুরাসুর শিরে রত্ন বহু শোভা পায়।
    তোমার চরণে তাহা সকলি লোটায়।।
    প্রণমি লভিতে দেবী তব পদাশ্রয়।
    দাও রূপ জয় যশ কর শত্রুক্ষয়।।
    বিদ্বান যশস্বী আর হতে লক্ষ্মীবান।
    কৃপা করি কর তার তুমিই বিধান।।
    (Cont.)

    কিছু টাইপো থেকে যাচ্ছে,তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।
  • kd | 59.93.241.102 | ১৪ অক্টোবর ২০০৬ ১১:১৬670963
  • আমার মামাতো ভাই, শ্রীমান রণজিৎ সরখেল তার এই লেখাটি আমায় পড়তে দিয়েছিল কিছুদিন আগে। পড়ে ভাল লেগেছে, তাই ভাবলুম, কালীপুজো আসছে, এখানে share করি। এটি 'মানবমন'এ প্রকাশিত হয়েছে বা শীঘ্রই হবে।

    "শক্তিপূজার স্বরূপ"

    আজকের বাংলার সবথেকে বড় উৎসব দূর্গাপূজা, কালিপুজো এই তান্ত্রিক আচারের সাকাররূপ। কিন্তু এই দেহাত্ববাদী তন্ত্রে সাকার আরাধনা এল কি করে? তন্ত্রকে জানতে গেলে এই বিষয়টির বিশ্লেষণ অত্যন্ত জরুরী। আসল কথা হল দূর্গা বা কালী প্রতিমা বাহ্য শোভার জন্যই রাখা হয়; লোকসাধারণের তুস্টির জন্য প্রতিমার অঙ্গপ্রত্যঙ্গের পুজো ও কিছু করা হয়, কিন্তু মূল পুজো হয় ঘটের - পূর্ণ ঘটের। এই পূর্ণঘট আসলে পূর্ণগর্ভের প্রতীক। এর সপক্ষে এক্টি প্রত্নতাঙ্কিÄক প্রমান পাওয়া গেছে নাগার্জুনকোন্ড থেকে প্রাপ্ত একটি মুর্তি থেকে - "মুর্তিটির ভঙ্গিটি উপবসনরত এবং দুটি পা দুইদিকে প্রসারিত। জননাঙ্গটি উন্মুক্ত এবং তার উপর দিক থেকে নাভি পর্যন্ত অংশটুকু নিয়ে তৈরী হয়েছে সুগঠিত অলংকরণযুক্ত পূর্ণঘট (লোকায়ত 2nd ed. p. 73)" - সুস্পষ্টভাবেই পূর্ণঘটের এই ভাস্কর্যটি পূর্ণগর্ভাবস্তার প্রতীকস্বরূপ। শারীর সংস্থানবিদ্যা (anatomy) মতে নারীর জরায়ু (uterus) গর্ভাধার একটি উল্টোনো ঘটের অবিকল আকৃতিরই হয়ে থাকে। তান্ত্রিকেরা শব সাধনা করতেন, দেহব্যবচ্ছেদের মাধ্যমে নারীর গর্ভাধারের গঠন সম্পর্কে তাঁদের অবহিত থাকাই সম্ভব। আরও মনে রাখা উচিত, যে পদ্ম বা অষ্টদলপদ্মের দূর্গপুজোয় ব্যবহার আবশ্যিক তা তন্ত্রে জননাঙ্গের প্রতীক মাত্র। তন্ত্রে কিন্তু মুর্তিপুজোর চেয়ে মানসপুজোরই গৌরব বেশী। মূল বিষয়টি হল, এই যে গর্ভধাররূপী পূর্ণঘট, এর থেকে সাধক তাঁর মানসরূপকে সৃষ্টি করেছেন। রূপ সাকার হতে বাধ্য, মানুষ যা দেখে তাই আকৃতিবিশিষ্ট, নিরাকাররূপ সম্পর্কে তার ধারণা নেই এবং তন্ত্রের ক্ষেত্রে এই সাকাররূপ কখনই দেবতা নয়, সে শক্তিরূপীনি দেবী - দূর্গা, কালী বা জগদ্ধাত্রী ইত্যাদি। এখন যে লক্ষ্মী-সরস্বতী, কার্তিক-গনেশ সবাইকে দূর্গাপ্রতিমা, এককালে তা ছিল না, শুধুমাত্র সিংহবাহিনী দূর্গাই ছিলেন, প্রত্নতাঙ্কিÄক সাক্ষ্যও সে কথাই বলে। যে সাধক যখন যেমন ধ্যানের মাধ্যমে যে মানস-রূপ প্রত্যক্ষ করেছেন, তিনি সেই রূপেরই প্রতিষ্ঠা করেছেন। এখন কালীমূর্তির যে রূপের আমরা পুজো করি, এই রূপ বিখ্যাত তান্ত্রিক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের সৃষ্টি। দেশভেদে, রুচিভেদে এই সাকাররূপ ভিন্ন ভিন্ন। তন্ত্র বলেছেন - আমাদের দেহে এগারোটি আসক্তি(emotion) আছে, এই আসক্তির সাহায্যেই উপাসনা করতে হয়; যাঁর যে আসক্তি প্রবল, সেই আসক্তির অনুরূপ রূপ কল্পনা দ্বারা তিনি যা মূর্ত করবেন সেই মূর্তিই হবে তাঁর আরাধ্য।

    তন্ত্রে এই ঘট ও পূজা-আনুসাঙ্গিক অপরাপর বস্তুগুলিকে একত্রে বলা হয় "যন্ত্র"। এই যন্ত্র আর কিছুই নয়, নিতান্তই নারী-জননাঙ্গ বা সৃষ্টিদ্বার। এমনকি তান্ত্রিকদের কিছু মন্দিরও ছিল এই যন্ত্র-কল্পনায় নির্মিত। এ প্রসঙ্গে মহেন্দ্রনাথ দত্ত (বিবেকানন্দের মধ্যম ভ্রাতা) উড়িষ্যার লোকনাথ মন্দিরের বর্ণনা করেছেন "কলিকাতার পুরাতন কাহিনী ও প্রথা" বইতে (মহেন্দ্র প্রকাশনী 2nd ed. p 140)। "উড়িষ্যাদেশের লোক্‌নাথের স্বতন্ত্রভাবে নির্মিত হইয়াছে। The uterus, the ovary, and the canal ঠিক পরিদর্শিত হইয়াছে। স্বাভাবিক passage যেমন একটু curve বা বক্রভাবে আছে, নাটমন্দির হইতে গর্ভগৃহে যাইতে যে পথ আছে সেটা ঠিক সেইভাবে ইষৎ বক্র। সমস্ত মন্দিরটি হইতেছে একটি যন্ত্রবিশেষ। এককালে বামাচারীদের ইহা এক বিশেষ স্থান ছিল"।

    পূর্ণঘট ও যন্ত্রের ভাবনাসম্বলিত শক্তিপূজার এই স্বরূপটির মধ্য থেকে তন্ত্রের শারীরবিদ্যা-সংক্রান্ত বিজ্ঞান-ভাবনারও হদিশ মেলে।

    --------

    আমি রণজিৎএর manuscript থেকে এখানে টুকেছি - আমার নিজের কোন লেখাপড়া নেই এসব ব্যপারে। এখন ওর লেখা ভারতীয় দর্শনে অনীশ্বরতা পড়ছি - বেশ বড়, তবে ইচ্ছে আছে একটু একটু করে এখানে নামাতে।
  • saa | 62.254.64.15 | ১৪ অক্টোবর ২০০৬ ১৩:৫০670964
  • কাবলিদা,
    পড়ে সত্যি খুব ভালো লাগলো। আমাদের বাড়ীতে দুগ্গাপুজো হত তখন দেখেছি, দেবীর বোধনের সময়ে বেদী তে জোড়া বেল দেওয়া হত। শুনেছি যে তাও তো স্তনদ্বয়ের প্রতীক।
    তবে ঘটের কথা জানতামনা।
    আরো জানার ইচ্ছে রইলো। পুজোয় দেখেছি পুরোহিত মশায় নানা রকম হাতের মুদ্রা করতেন পুজোর সময়ে, কয়েকটা খুব শক্ত ছিলো করা, আমি আর ভাই প্রানপনে চেষ্টা করতাম ওগুলো কপি করতে, ঐ হস্ত মুদ্রার কথাও যদি লেখেন, শুনলে ভালো লাগবে।

  • tan | 131.95.121.127 | ১৪ অক্টোবর ২০০৬ ২১:০৩670965
  • কাবলিদা,
    খুব ভালো লিখেছেন।
    ভারতীয় দর্শনে অনীশ্বরতা পড়বার অপেক্ষায় রইলাম।

  • tan | 131.95.121.127 | ১৫ অক্টোবর ২০০৬ ০২:৫৩670967
  • জলভরা ঘটের উপরে একটা আমপল্লব আর একটা ডাব যার উপরে দেয় চন্দন আর তেলসিঁদুরের ফোঁটা- এই পল্লব আর ডাবের কি প্রতীকী অর্থ?
  • Pallab | 59.93.241.148 | ১৫ অক্টোবর ২০০৬ ০৪:২৯670968
  • হুম কি দিনকালই না পড়েছে!!! আমাকে প্রতীক বানানোর অপচেষ্টা ছাড়তে হবে।

    আমি সখ করে তিনবার কালি পুজা করেছিলাম।
    হাতের মুদ্রাগুলিও মুলত দেহতঙ্কÄ সম্বন্ধিত। kd লিখুন, বেশ হবে।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ মতামত দিন