এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • বাংলা কল্পবিজ্ঞানের গল্প-এর প্রতিশ্রুতি কতটা

    Milli
    অন্যান্য | ০৪ এপ্রিল ২০০৬ | ২৮৮৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • Milli | 131.95.121.129 | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ ০৫:৫০563526
  • উল্কাবৃষ্টি যখন শুরু হলো তখন তিহা ও তিশান গুহার সম্মুখে সেই চাতালে,ওরা উর্ধ্বমুখে ঐ ফুলঝুরিকাটা আকাশ দেখতে দেখতে মন্ত্রমুগ্‌ধ,বাক্যহত,চলৎশক্তিরহিত হয়ে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো। তিহা কি যেন বলছিলো অস্ফুটে,শব্দগুলো থেকে তিশান বুঝতে পারছিলো ও বলছে সেই মাতৃকাদেবী ও আকাশহৃদয় আদিপিতার আশীর্বাদের কথা।তিহার মুখ উজল হয়ে উঠছিলো সেই অগ্নিআভায় হয়তো বা ওর ভিতরের আগুনের প্রভাবেও। তিশান অস্পষ্টভাবে অনুভবে বুঝতে পারছিলো অলক্ষ্য শক্তির ধারা আকাশ থেকে নেমে এসে তিহার মধ্য দিয়ে বয়ে এসে প্রবেশ করছে ওর মধ্যে।
    তিহার আবিষ্ট মুখ দেখে ওর মনে হচ্ছিলো সে যেন ওদের বিশ্বাসের মধ্যে প্রোথিত সেই অগ্নিময়ী মাতৃকাদেবীকে দেখতে পাচ্ছে ওর স্বপ্নচোখে,তিহার দুইবাহু যা কিনা তিশানের চারিপাশে আলিঙ্গন করে ছিলো, সে উল্কাপাতের তুঙ্গমুহূর্তে সেই হাতের বেষ্টনী খুলে নিয়ে হাতজোড় করে ছিলো।
    একসময় উল্কাপাত কমতে থাকলো,কমতে কমতে শেষ হয়ে গেলো প্রায়।পুব দিগন্তে একখানি জ্বলজ্বলে তারার দিকে চেয়ে ঝুঁকে প্রণত হয়ে তিহা তিশানকে বাহুবদ্ধ করে ওদের গুহাবাসরে প্রবেশ করলো।
    ওদের ব্রত সম্পূর্ণ হয়েছে,আশীর্বাদ ওরা পেয়েছে,সঞ্জীবনী সে মন্ত্র এবারে সংসারে প্রযুক্ত হবে।
    তিশানের মন আনন্দের সমুদ্রে বটপত্রের মতন ভাসছিলো, একখানি ক্ষুদ্র আনন্দকণিকার মতন সেই বটপত্রের উপরে সযতনে ধরা ছিলো তিহা।
  • Milli | 131.95.121.129 | ১৩ এপ্রিল ২০০৭ ২১:২৭563527
  • পুবে যখন ভোরের মৃদু আলো দেখা দিলো,আস্তে আস্তে যখন নিবিড় রাত্রিনীল আর তার মধ্যে মণিকণার মতন জেগে থাকা নক্ষত্রনীহারিকা মিলিয়ে গিয়ে শুধু রইলো কটা গ্রহ আর কৃষ্ণা একাদশীর ক্ষীণ চাঁদের রেখা,তখন দিশা আর অর্চিষ্মানকে দেখা যাচ্ছিলো বালির উপরে পাতা আস্তরণে গভীর নিদ্রাচ্ছন্ন---আলগাভাবে ওদের গায়ের উপরে জামাকাপড়গুলো টেনে নেওয়া,বেশ শীত শীত ভোরের হাওয়া, ভোরের সমুদ্র অদ্ভুত তাজা!কোথা থেকে পাখির নরম ডাক ভেসে আসছিলো---রিকিউ রিকিউ রিকিউ,কেটিৎ কেটিৎ কেটিৎ....রিকিউ রিকিউ রিকিউ....
    ওরা চোখ মেললো সূর্যোদয় হবার পরে, ওদের রাত্রিব্যাপী বাইরে থাকা সার্থক হয়েছে, অমন উল্কাবৃষ্টি বাড়ীর বারান্দা বা ব্যালকনি থেকে কখনোই ওভাবে অত অসাধারণভাবে ধরা পড়তো না।
    সুখী ও পরিতৃপ্ত মানুষের মতন শান্তির হাসি নিয়ে অর্চিষ্মান ও দিশাফিরে চললো সরাইয়ের দিকে,হাতে হাত জড়িয়ে রইলো বাচ্চা বাচ্চা দুটো ছেলেমেয়ের মতন, ওদের মধুযামিনী সত্যই মধুময় হয়েছে,আর অন্তরে কোনো সংশয় নেই।আকাশের অগ্নিময় জ্যোতিরুৎসব ওদের মধ্য থেকে সমস্ত ভয় সংশয় ও অন্ধকার দূর করে দিয়েছে।
    আগামীকালই ওরা ফিরে যাবে অর্চিষ্মানের কাজের জায়গায়, দিশা ফিরে যাবে নিজের শহরে, যদিও সেখানকার পাট চুকিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই দিশা এসে অর্চির ওখানে কাজে যোগ দেবে।
  • Milli | 131.95.121.129 | ১৪ এপ্রিল ২০০৭ ০৪:৩৯563528
  • ********
    কেটে গেছে বহুদিন,বহু মাস,বহু বছর। দিশা-অর্চিষ্মানের ছেলেমেয়েরা এখন বড়ো হয়ে গেছে,ওদের দিকে চেয়ে দিশার নিজের তরুণীবেলার কথা মনে পড়ে। ছেলে অর্ক আর মেয়ে মেঘনা দূরের কলেজে চলে যাবার পরে দিশা বেশ একা হয়ে পড়েছিলো। অর্চিষ্মান তো চিরকালই কাজপাগল, এখনো তেমনিই আছে। ও পরের দিকে ক্লোনের গবেষণাকে স্টেম সেল গবেষণার দিকে নিয়ে যায় যা কিনা বহু দুরারোগ্য পক্ষাঘাতগ্রস্ত মানুষকে নতুন জীবন দিয়েছে। বহু প্রায়- অনারোগ্য অসুখ ভালো করেছে। অর্চিষ্মান ও তার সহযোগীরা ক্রমে হয়ে উঠেছে মিরাকল ওয়ার্কারদের মতন বিখ্যাত, যাদের কাজের উপরে রহস্যের আবরণ,যাদের অসাধারণ অবদান মানুষে স্মরণ করতে বাধ্য হয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে।
    ড: প্রসাদ বৃদ্ধ হয়ে অবসর নিয়ে চলে গেছেন নিজের দেশে।হিমালয়ের পাদমূলে তাঁর জন্মগ্রামটিতে। সেখানে গরীব মানুষের জন্য স্বাস্থকেন্দ্র শিক্ষাকেন্দ্র এইসব গড়েছেন।
    আরুল বীতশোক দুজনেই অর্চিষ্মানের মতনই কাজে ব্যস্ত।তবে ওরা সংসারী হয়েছে, ওদের ছেলেমেয়েরা অর্চি দিশার ছেলেমেয়েদের প্রায় সমবয়সী,ছোটো থেকে একসঙ্গে খেলাধূলা পড়াশুনা হুটোপাটি করে বড়ো হয়েছে।
    এতকাল সংসারের ব্যস্ততার মধ্যে যা মনে পড়েনি,এখন মাঝে মাঝে দিশার মনে পড়ে সেই দু:খ-টলটল মুখ মানুষটাকে, মাত্র কয়েকটা দিন দিশা তার সঙ্গে অনেক নিবিড় মুহূর্ত কাটিয়েছে,সে কি সত্যি অন্য কেউ ছিলো? নাকি অর্চিষ্মানেরই অল্টার-ইগো?
    একদিন বিকেলে বাড়ী ফিরে অর্চিষ্মান বললো,""কতকাল হয়ে গেলো আমরা অনেক বড়ো ছুটি নিয়ে কোথাও যাই নি।আমি কাল থেকে ছুটি নেবো ছমাসের। অনেক হলো, এবারে আমি তোমাকে নিয়ে বেড়াবো।তোমার মনে আছে দিশা, সেই উল্কাবৃষ্টির রাত?""
    দিশা অবাকখুশী,মনে নেই মানে? খুব ভালো মনে আছে।ঐ জ্যোতিরময় রাত্রি না এলে দিশা কিছুতেই জীবন বহন করতে পারতো না,দ্বিধাবিভক্ত স্মৃতির মধ্যে ছিন্ন হয়ে যেতো।
    ওরা দেশ বেড়াতে বের হলো পরের দিন। খুব হাল্কা লাগছিলো দিশার,মনে হচ্ছিলো আবার সেই প্রথম যৌবনের দিনগুলো ফিরে এসেছে।
  • Milli | 131.95.121.129 | ১৮ এপ্রিল ২০০৭ ০৭:৪৫563529
  • এদিক এদিক বেড়িয়ে বেড়ায় ওরা, ছোটো ছোটো সরাইয়ে থাকে কয়েকদিনের জন্য,তারপরে ফের নতুন জায়্‌গার দিকে চলতে থাকে। টুকটাক এটা ওটা কেনে,ফিরে ছেলেমেয়েদের দেবে মনে করে।
    অনেক দিনের ছুটি,প্রায় ছমাস,তাই তাড়া নেই। মাঝে মাঝে বাচ্চা ছেলেমেয়েদের মতন প্ল্যান করে কোনো সুন্দর জায়গায় ছোট্টো বাড়ী বানিয়ে বাকী জীবনটা সেখানেই শান্তিতে কাটাবে। একবার এক নির্জন সোনালী সমুদ্রসৈকত আর অসংখ্য নারিকেল গাছ দেখে ওদের এত ভালোলেগে গেলো ওদের যে সত্যি সত্যি বাড়ীটাড়ীর সন্ধান শুরু করলো। ওখানেই বাকী জীবন কাটাবে ভেবে।
    কিন্তু তিনদিনের দিন এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটলো, হঠাৎ ওদের সেজায়গা ছেড়ে চলতে শুরু করতে হলো সম্পূর্ণ অন্যদিকে।
    ঘটনাটা এরকম, ওখানে সী বীচে বেশী লোক দেখা যায় না, ওটা ট্যুরিস্টের জায়গা না। সেদিন সকালে দিশা আর অর্চিই সী বীচে ছিলো, একটু পরে সমুদ্রস্নান করবে বলে প্ল্যান ছিলো, একদল অল্পবয়সী ছেলেমেয়ে এসে একসময় সী বীচে হৈহল্লা শুরু করলো, ওরা এক্সকারশনে এসেছিলো। দিশা অর্ক ওদের সঙ্গে আলাপ পরিচয় করলো,ওরা বললো নাকি ওদের সকলেরই মেরিন বায়োলজি নিয়ে পড়ার খুব ইচ্ছে।
    ওদের মধ্যে একটি মেয়ে, অপেক্ষাকৃত শান্ত,নাম বললো ইরিনা,সে যখন হেসে দিশার সঙ্গে পরিচয় করলো,হঠাৎ দিশার বুকের মধ্যে ধাক্কার মতন লাগলো, এ মুখ সে কোথায় দেখেছে আগে? না,পরিচিত কারুর সঙ্গে মিল নেই,কিন্তু কোথায় একটা যেন অদ্ভুত মিল দিশার মনে হলো।অনেক দিনের ভুলে যাওয়া তানপুরার ঢাকনা সরিয়ে কে যেন একটা তারে টান দিলো হঠাৎ। মেয়েটার হাসি, সুন্দর চোখের তাকানো যেন দিশাকে কিছু মনে পড়িয়ে দিতে চাইছিলো।
    সী-বীচে সেদিনের আলাপের পর অনেকক্ষণ একসঙ্গে থাকা হলো, ওদের নেমন্তন্ন করলো দিশারা,ওরা উইথ হোস্টেলে উঠেছে বলছিলো,ওরা বললো আসবে পরদিন।
  • Rishi | 59.93.171.197 | ১৮ এপ্রিল ২০০৭ ১২:০০563530
  • এটা কি কোন পিরিয়ডিকাল - দেশ, বিদেশ, বর্তমান বা ভবিষ্যৎ? সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক বা ত্রৈমাসিক? বা কোন বই-য়ের খণ্ডে খণ্ডে প্রকাশিত ধারাবাহিক? কোন প্রকাশনার? লেখক বা লেখিকা কি একজনই?
  • Z | 61.2.6.232 | ১৮ এপ্রিল ২০০৭ ১৯:৪০563531
  • এই ইরিনা তো হলগে তিহা আর তিশানের মেয়ে। তাই না??

    এই যা: সাসপেন্স নষ্ট করে দিলুম :-(((
  • Milli | 131.95.121.129 | ১৮ এপ্রিল ২০০৭ ২১:৪৫563532
  • ঋষি,
    এটা পাঁচমিশিলী। প্রথমে উদ্দেশ্য ছিলো একটা কল্পবিজ্ঞান, কিন্তু মুক্তচিন্তার জগতে প্রাথমিক উদ্দেশ্য যে পরে কোথায় যাবে কেউ জানে না,জানার দরকারও নেই।
    তাই, এখন গপ্পো,আলোচনা,সাজেশান মাঝে মাঝে এনকোর মাঝে মাঝে "অ্যাই কি হচ্ছে?" সবই চলছে দেখছেন না? :-))))
    সাহেবেরা এরেই কয় ফ্রী অ্যাসোসিয়েশান।:)))
  • Milli | 131.95.121.129 | ১৯ এপ্রিল ২০০৭ ২২:০৬563533
  • ইরিনা ও তার বন্ধুরা কিন্তু পরদিন নিমন্ত্রণ রক্ষা আসতে পারলো না, ওদের মধ্যে একজন ফোন করে বিপন্ন গলায় পরদিন সকালে জানালো এক বন্ধু খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে,তাকে নিয়ে ওদের ফিরে যেতে হচ্ছে তক্ষুণি।বন্ধুটি বাড়ী ফিরতে চাইছে, ওর বাড়ী সেখান থেকে অনেক দূরে,মরুভূমির মাঝখানে এক গ্রামে। সকলে চিন্তিত,ট্রান্সপোর্টেশান নিয়ে। ওরা ট্রেনে এসেছিলো,নিজেদের ইস্কুল শহর থেকে। এই বন্ধুটির বাড়ী যেখানে সেখানে ট্রেনে পাঠানোর উপায় নেই।
    অর্চিষ্মান ও দিশা তক্ষুণি দিকনির্দেশ জেনে নিয়ে প্যাক ট্যাক করে সরাই থেকে চেক আউট করে ওদের ইউথ হোস্টেলে গেলো। সেখানে ভাঙা মেলার মতন অবস্থা। মাত্র একদিন আগেই প্রাণশক্তিতে ভরপুর যে ছেলেমেয়েগুলো নানা হৈহল্লা করছিলো,আজকে তারা দিশাহারা।শুকনা মুখে বসে আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে।
    যে ঘরটিতে অসুস্থ বন্ধুটি ছিলো,সেখানে অর্চি-দিশাকে নিয়ে গেলো ওদের গ্রুপলীডার গোছের ছেলেটি।
    ঘরে বিছানায় শুয়ে ছিলো অসুস্থ ছেলেটি, গলা পর্যন্ত চাদর দিয়ে ঢাকা, ছেলেটির শ্বাসকষ্ট হচ্ছিলো,চোখে বুজে ছাই ছাই রঙা মুখ নিয়ে পড়েছিলো, ইরিনা ওর পাশে বসে হাত ধরে ছিলো ওর, নিজেদের ভাষায় কি যেন বলছিলো। হয়তো সান্ত্বনাবাক্য, হয়তো আরোগ্যপ্রার্থনা। অসুস্থ ছেলেটি ইরিনার যমজ-ভাই জুরান।
    অর্চি-দিশা জানালো ওদের গাড়ীতে করে পৌঁছে দেবে ওদের বাড়ী,কিন্তু আগে কোনো ক্লিনিকে যাওয়া দরকার,সেখানে ভালোমতো চিকিৎসা হওয়া দরকার।
  • Milli | 131.95.121.129 | ২৩ এপ্রিল ২০০৭ ০০:৫২563534
  • ইরিনাকে বুঝিয়ে বলে দিশা। ইরিনা প্রথমে ক্লিনিকেই জুরানকে নিয়ে যেতে রাজী হয়, যদিও জুরান যত দ্রুত সম্ভব নিজের বাড়ীতে নিজের বাবামায়ের কাছে ফিরতে চাইছিলো।বারে বারে সে নিজের ভাষায় ইরিনার কাছে আশংকা ব্যক্ত করছিলো দেরি হলে হয়তো বাবামায়ের সঙ্গে আর ওর দেখা হবে না। ইরিনা ওকে প্রাণপণে বোঝানোর চেষ্টা করছিলো হতাশ না হতে,জীবনমৃত্যু ঈশ্বরের হাতে,কিন্তু চিকিৎসার একটা সুযোগ কি সে দেবে না?
    অনেক বোঝানোর পরে জুরান রাজী হলো।
    অর্চি-দিশা ওদের নিয়ে যাচ্ছিলো,ইরিনা অর্ধচেতন জুরানের মাথা কোলে নিয়ে পিছনের সীটে বসেছিলো, সে সংকুচিতভাবে বারে বারে ধন্যবাদ দিচ্ছিলো, ওদের বেড়ানো এইভাবে ভন্ডুল করে দেয়ার জন্য দু:খপ্রকাশ করছিলো--দিশা ওকে বোঝালো কিছুই ভন্ডুল হয় নি,ওদের বেড়ানো প্ল্যান করা বেড়ানো না, সবটাই অজানা, ঘটনা যেদিকে নিয়ে যাবে ওরা সেদিকেই যাবে।
    কাছের শহরের ক্লিনিকে পৌঁছে যতদ্রুত সম্ভব জুরানের চিকিৎসার বন্দোবস্ত হলো।জুরানকে ক্লিনিকে ভর্তি করে অর্চিদিশা আর ইরিনা উঠলো এক হোটেলে।যতদিন না জুরান সুস্থ হয়,ওরা থাকবে সেখানে।
    ইরিনা দিশাকে বলছিলো,ওদের নিজেদের সমাজ ও সংস্কৃতি চারিপাশের মতন নয়,উপজাতির নিজস্ব বিশ্বাস জ্ঞান কৃষি কুটিরশিল্প ভেষজবিদ্যা নিয়ে সে একেবারে ভিন্নরকম একটা জগৎ।সেখান থেকে এভাবে এতদূরে পড়তে আসাই ওদের পক্ষে সম্ভব ছিলো না,ওদের বাবামা ও প্রথমে ভাবেই নি।ওদের ভাষা পর্যন্ত ভিন্ন।
    নানা ঘটনাচক্রে হয়ে গেছে,আসলে প্রধানত ইরিনার জেদেই।জুরান নিজে আসতে এত ইচ্ছুক ছিলো না,কিন্তু শেষ পর্যন্ত যমজ বোনকে সে অজানা পৃথিবীর হিংস্রতায় একা ছেড়ে দিতে পারলো না,সঙ্গে এলো পড়তে।
    ইরিনা খুব ভেঙে পড়ছিলো দিশার কাছে,বলছিলো,""ক্ষুদ্র গন্ডী ছেড়ে বাইরে বেরোতে চাইছিলাম,জানতে চাইছিলাম কি আছে বাইরে,কেমন সেসব,কারা থাকে সেখানে,তারা কিভাবে চিন্তা করে,কিভাবে জীবনযাপন করে।না,আমি এতে কোনো দোষ দেখিনি,জানতে চাওয়া কি অপরাধ? অথচ আজ আমার ভুলেই জুরানকে এতবড়ো খেসারত দিতে হচ্ছে।গ্রামে সেখানে আপন মানুষের মধ্যে থাকলে ওর হয়তো এইরকম অসুখ হোতো না,হয়তো হলেও সেরে উঠতো।এখন? ওর যদি কিছু হয়ে যায়,আমি কি করবো?""
    দিশা সান্ত্বনা দিচ্ছিলো, বলছিলো,""না ইরিনা,আশা ছেড়ে দিও না। ভালোটা ভাবতে হয়,খারাপটা ভাবতে নেই। আমার কথা শোনো,কেঁদো না,জুরান ভালো হয়ে যাবে।""

  • Milli | 131.95.121.129 | ২৩ এপ্রিল ২০০৭ ২১:৫৫563536
  • কয়েকদিনের মধ্যে জুরান একটু ভালো হলো।কিন্তু অত্যন্ত দু:সংবাদের মতন একটি কঠিন অসুখ ধরা পড়লো ওর। বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট না করতে পারলে ওর জীবন সংক্ষিপ্ত হয়ে আসবে। অর্চিষ্মানকে এদের অভিভাবক ভেবে আলাদা ডেকে নিয়ে ওকে জানালেন ডাক্তার।
    অর্চিষ্মান দিশা বা ইরিনাকে জানানোর আগেই প্রথমে যেটা করলো সেটা হলো নিজের রিসার্চ সেন্টারে যোগাযোগ, তারপরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপত্র আনানোর বন্দোবস্ত।
    গোটা টীম এসে পৌঁছলে ইরিনাকে সব বুঝিয়ে বললো সে।কিন্তু এতবড়ো সিদ্ধান্ত ইরিনা একা নিতে চাইলো না,জুরানকে তো জড়ানো অসম্ভবই,সে পুরোপুরি চেতনই নয়।
    ঠিক হলো সকলে মিলে ওদের বাড়ীতে গিয়ে ইরিনা জুরানের বাবামাকে জিজ্ঞেস করে অনুমতি নিয়ে তারপরে যা করার করা হবে।
    সেই মতো ওদের গ্রামের দিকে চললো গোটা টীম,অনেকটা পথ,রাস্তাও খুব সুবিধার না।
    ইরিনা অনেক রিলিভড,সে বুঝতে পেরেছে এরা সত্যি সত্যি সাহায্য করতে পারবেন ও করবেন।
    অবশেষে বাদামী পাহাড় ও ক্যাকটাস দেখা দিলো,শান্ত ছোটো মরুগ্রামটিতে গিয়ে পৌঁছবার পর দেখা গেলো সত্যি সত্যি বিরাট চিকিৎসাগত সাহায্যের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে গোটা গাঁয়ে।
  • Milli | 131.95.121.129 | ২৪ এপ্রিল ২০০৭ ০২:০৭563537
  • গোটা গ্রাম জুড়ে অনেক মানুষ অসুস্থ। অল্পবয়সীদের মধ্যে অদ্ভুত অসুখ দেখা দিয়েছে,শ্বাসকষ্ট,দুর্বলতা,জ্বর।
    গ্রামের ভিষকরা এর কোনো কারণ বুঝতে পারছেন না,প্রতিকারও করতে পারছেন না,এনাদের ভেষজে হয়তো কিছু প্রতিকার আছে,কিন্তু রোগের কারণ ধরা পড়লে তবে তো প্রতিষেধক দেবেন।
    অর্চিষ্মানের টীম যাকে বলে এক্কেবারে সুতায় সুতায় ঠিক সময়ে এসে পৌঁছেছিলো,আর মাত্র ঘন্টাকয়েক দেরি হলেও হয়তো মৃত্যু শুরু হয়ে যেতো।
    সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়ে গেলো সময়মত,অবস্থা ভালোর দিকে গেলে এইবারে টীমের কয়েকজন জুরানের বাবামায়ের কাছে অনুমতি চাইলো জুরানের বিশেষ চিকিৎসার জন্য।ইরিনা ওর বাবামাকে বোঝাচ্ছিলো।
    ইরিনার বাবা ও মা,চিনুক আর তিতি, এই ঘটনাপুঞ্জের দ্রুতগতি দেখে সেই অভিঘাতে হতভম্ব। হঠাৎ গাঁয়ের ছেলেমেয়েরা এরকম অদ্ভুত অসুখে আক্রান্ত হওয়ায় অনেকে এনাদের দায়ী করছিলেন কারণ এদেরই ঘরের ছেলেমেয়েদুটি দূর শহরসভ্যতার সংস্পর্শে এসে কোনো না কোনোভাবে হয়তো সব অপবিত্র করে দিয়েছে,এই ধারণা অনেকের হয়েছিলো।গ্রামবৃদ্ধেরা অনেক কষ্টে জনরোষের হাত থেকে চিনুক আর তিতিকে বাঁচিয়েছে।এই ছেলেমেয়েদুটির এরা পালক পিতামাতা।ইরিনা আর জুরানের প্রকৃত বাবামা তো পুত্রকন্যাকে দত্তক দিয়ে পর্বতশৃঙ্গের কাছে কঠিন সাধনায় রত রয়েছেন, জাতির কল্যাণের জন্য।কঠিন পরীক্ষায় বারে বারে উত্তীর্ণ সেই মানুষ দুটির সন্তানদ্বয় অবশ্যই সমাজে কল্যান আনবে,এই সকলে সুনিশ্চিত বিশ্বাস করে।অথচ এই অদ্ভুত অসুখের হঠাৎ আক্রমণে অনেকের বিশ্বাস টলে গিয়েছিলো।এখন অবস্থা ভালোর দিকে যাওয়ায় সকলে শান্ত।
    তিতি আর চিনুক জুরানের চিকিৎসার অনুমতি দেবার আগে গ্রামবৃদ্ধদের সঙ্গে আলোচনায় বসলেন।ওদের প্রকৃত পিতামাতার অনুমতি প্রয়োজন চিকিৎসার আগে।
    এদিকে সময় গড়িয়ে যাচ্ছে,অর্চিষ্মান আর তার পুরো টীম অধৈর্য্য এসব ননসেন্সে, দিশা আর ইরিনা বোঝাবার চেষ্টা করে যাচ্ছে এসব ওদের কাছে ননসেন্স না,এসব খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
  • Milli | 131.95.121.129 | ২৪ এপ্রিল ২০০৭ ০৭:১৩563538
  • অর্চিষ্মান অনেকক্ষণ এসব বাগবিতন্ডা শুনতে শুনতে ধৈর্য্যের শেষ সীমায়,এরা বুঝতে পারছে না প্রত্যেকটা মুহূর্ত একটু একটু করে কিশোর ছেলেটির সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনাকে কমিয়ে দিচ্ছে।সময় মূল্যবান, খুব মূল্যবান, চিকিৎসা প্রস্তুত, এই সময়ে এভাবে বিতন্ডার কোনো অর্থ হয়?
    ইরিনার মাধ্যমে গ্রামবৃদ্ধদের সঙ্গে অর্চিষ্মান নিজেই আলোচনার বসলো।সে বললো,""আমাদের বিশ্বাস করুন,আমাদের বিশ্বাস করুন,এই যে এত অল্পবয়সী ছেলেমেয়েকে আমরা সাহায্য করতে পেরেছি,সেতো আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া হতো না,এখন এই জুরানের ব্যাপারেও আমাদের বিশ্বাস করুন।আপনাদের ক্ষতি করতে চাইলে তো ইতিমধ্যেই করতে পারতাম।এই যে ইরিনা আমাদের সঙ্গে বেশ কিছুদিনের পরিচিত,সে বলবে আমরা সত্যি সত্যি সাধু উদ্দেশ্যেই এসেছি।আমাদের কি প্রয়োজন ছিলো নইলে এতখানি পথ এইভাবে এত সব জিনিসপত্র লোকজন নিয়ে আসার?""
    বুড়ো ভিষক কিল্মল মাথা নেড়ে কইছেন,""অচেনা অতিথি,তোমরা সত্যই আমাদের সন্তানদের সাহায্য করেছ,তারা মরে যাচ্ছিলো,তাদের বাঁচিয়ে তুলছো।কিন্তু এই জুরান আমাদের সাধক-সাধিকার সন্তান,তাঁদের সম্মতি ছাড়া কিকরে অচেনা চিকিৎসার অনুমতি দেওয়া যায়?""
    অর্চিষ্মান অধৈর্য্যে ঠোঁট কামড়ে চিন্তা করছিলো,তারপরে হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে বললো,""আমি নিজে দায়ী থাকছি, চিকিৎসা শুরু হোক,আমি আর আমার স্ত্রী নিজেরা দুজন গিয়ে জুরানের মা ও বাবার কাছে সম্মতি প্রার্থনা করবো।আপনারা শুধু একবার আমাদের বিশ্বাস করুন।""

  • Milli | 131.95.121.129 | ২৫ এপ্রিল ২০০৭ ০২:১০563539
  • জুরানের জটিল দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা শুরু হয়ে গেলো,মা তিতি বাবা চিনুক জুরানের শিয়রের কাছে রইলেন অতন্দ্র,বৃদ্ধ ভিষক কিল্মল রইলেন কাছেই,দৃঢ়-ওষ্ঠ চিকিৎসক গবেষকেরা সুচ্যগ্র মনোযোগে জুরানের চিকিৎসা করতে থাকলেন।
    ইরিনা পাশের ঘরে একাকী নি:শব্দ প্রার্থনায় রত,কিন্তু সে কি প্রার্থনা করছে সহজেই অনুমানযোগ্য।
    দুই গ্রামবৃদ্ধ অর্চিষ্মান ও দিশাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে চললেন বাদামী পাহাড়ের দিকে,ঐ পাহাড়ের চূড়ার কাছে নির্জন গিরিগুহায় সাধনরত ইরিনা-জুরানের বাবামায়ের কাছে।
    দিশার বুক কাঁপছিলো,সে অনুমাণ করছিলো এক সাংঘাতিক উন্মোচনের,এক অদ্ভুত রহস্য,এক অসহ্য সত্য,যার থেকে সে এতদিন পালিয়ে থাকতে পেরেছিলো সাফল্যের সঙ্গে। অর্চিষ্মান কিন্তু চিন্তিত নয়,জুরানের চিকিৎসা যে মুহূর্তে শুরু হলো, সেই মুহূর্ত থেকেই সে অনেক হাল্কা।
    দিশা প্রত্যেক পদক্ষেপে ভাবছিলো বলে সে আর পারছে না,সে যেতে চায় না,কিন্তু কিছুতেই বলতে পারলো না।মৌন অনুচরীর মতন চললো বিশ্লথ পদে,একসময় সমতল ছাড়িয়ে পাহাড়ী বন্ধুরতায় এসে পড়লো ওরা, অল্পসল্প হোঁচট খেতে খেতে পর্বতারোহণ করছিলো কপালের স্বেদবিন্দু হাতে মুছতে মুছতে।
    একসময়ে দূরে গুহাটি দেখা গেলো,দিশার ভয়ে দমবন্ধ হয়ে এলো,সে কাকে দেখবে? বহুযুগের ওপার হতে সেই দু:খী উদাস মুখটি দেখা দেবে আবার? এতদিনের পরে ছিঁড়ে পড়বে সব কিছু? অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কুটি কুটি হয়ে ছড়িয়ে পড়বে চতুর্দিকে?
  • Milli | 131.95.121.129 | ২৫ এপ্রিল ২০০৭ ২০:২৭563540
  • বিকেল শেষ হয়ে আসছিলো,আকাশে রঙীন মেঘেরা অতি সুন্দর দৃষ্টিসুখ দৃশ্য তৈরী করছিলো।দক্ষিণ থেকে স্নিগ্‌ধ ঠান্ডা হাওয়া আসছিলো,কোন মহাসমুদ্রের আদর জড়িয়েছিলো হাওয়ার ডানায় ডানায়। হাল্কা কমলা ওড়নার মতন মেঘের ফাঁক দিয়ে জ্বলজ্বলে সন্ধ্যাতারাকে সবুজ লাগছিলো।এরকম আগে কবে যেন দেখেছে দিশা? এমন সন্ধ্যা হয়ে আসা?
    ""সন্ধ্যা হলো সন্ধ্যা হলো দেখছি চেয়ে প্রথম তারা/সেই যেন চায় আমার চোখে তার দুখানি নয়নতারা।""
    এই গান কবে যেন গাইছিলো দিশা,কোনো এক খোলা ব্যালকনিতে মাদুর বিছিয়ে বসে,সেখানে অর্চিষ্মান এসেছিলো। সে তখন সদ্যস্নাত,পাটভাঙা নতুন হাল্কা রঙের পোষাক ছিলো ওর,দিশা ওকে দেখে গান থামিয়ে হেসে ফেলেছিলো।ঘর থেকে ধূপের হাল্কা ধোংয়া এসে ওদের দুজনের চারপশে ছড়িয়ে যাচ্ছিলো।ধূপের গন্ধটা অবধি স্পষ্ট মনে পড়লো দিশার।ঠিক মনে পড়াও যেন নয়,যেন সে অনুভবও করতে পারছে সেই সব?
    এটা কি হচ্ছে? কোনো ম্যাজিক? সময় ঘুরে যাচ্ছে? পিছনে চলে যাওয়া সময় সামনে ফিরে আসছে বিশাল বৃত্তচাপ এঁকে?
    সন্ধ্যা আরো মায়াবতী হয়ে এসেছে।একঝাঁক পাখি উড়ে গেলো পুবের দিকে।
    গ্রামবৃদ্ধদ্বয় এগিয়ে গেলেন গুহাটির দিকে,গুহার সম্মুখে একটি সমতল চাতাল,সেখানে দাঁড়িয়ে অতি সুরেলা প্রার্থনাসঙ্গীতের মতন ভাষায় ডাকলেন সাধক ও সাধিকাকে।

  • Milli | 131.95.121.129 | ২৫ এপ্রিল ২০০৭ ২১:২৬563541
  • প্রথমে গুহামুখে দেখা দিলো তিহার মুখ,সে বের হয়ে এলো চাতালে,শান্ত সমাহিত মুখ তাপসী,উজল দুই কালো চোখ, একটুও অবাক না,যেন সে জানতোই এই দিনের এই সময়ে এই লোকেরা ওদের কাছে আসবেন।তিহার বয়স হয়েছে,মুখে অল্প অল্প সেই চিহ্ন পড়েছে,কিন্তু অন্তরের অনির্বান আলো তাকে সময়হীন করে রেখেছে। উপজাতির সাধকদের আলগা লম্বা পোষাক তার পরনে,সে পোষাক স্কন্ধ থেকে জানু পর্যন্ত লম্বিত, হাত দুটি আর চরণ দুটি উন্মুক্ত, হাতে বাহুতে আর পায়ে লালনীলসবুজ রঙ দিয়ে নানা রহস্যময় নকশা, এইএকখানি তন্তুময় লম্বা সরু ফালি কপালের উপর দিয়ে তেকোনা করে বেঁধে চুলগুলোকে সামলানো হয়েছে,ওর চুল এখনো অপর্যাপ্ত,কিন্তু ঘন কালো চুলের মধ্যে মাঝে মাঝে সাদা সাদা কিছু রেখা। চাতালের প্রান্তে দাঁড়িয়ে স্তম্ভিত হয়ে তিহাকে দেখছিলো অর্চিষ্মান আর দিশা। দিশা হঠাৎ হাত বাড়িয়ে অর্চিষ্মানের হাত চেপে ধরলো।এমনি সময় হলে অর্চি অবাক হতো,কিন্তু এখন অবাক হলো না।
    তিহার পরে বেরিয়ে এলো তিশান,তারও পোষাক পরিচ্ছদ একেবারে তিহার মতই,তারও বয়স হয়েছে,তারও মুখ তিহার মতন সমাহিত।দিশা বা অর্চিষ্মান বুঝতে পারলো না,পোষাক নানারঙের উলকি,মাথার ফেট্টির মধ্যে সেই মানুষটি যে কিনা অর্চির প্রতিলিপি।তিশান যখন বেরিয়ে আসছিলো তখন দিশার বুকের মধ্যেটা ধড়াস ধড়াস করছিলো,কিন্তু ও বেরিয়ে এসে চাতালে তিহার পাশে দাঁড়াতে দিশার অস্থিরতা শান্ত হয়ে গেলো।
  • Milli | 131.95.121.129 | ২৫ এপ্রিল ২০০৭ ২১:৪৪563542
  • গ্রামবৃদ্ধেরা তিশান ও তিহার সঙ্গে অর্চিষ্মান ও দিশার পরিচয় করিয়ে দিলেন।তারপরে অনেকক্ষণ ধরে অনেক কথা বলে যেতে লাগলেন তিশান তিহাকে,এর কিছুই অর্চি বা দিশা বুঝতে পারলো না,চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো হতভম্বের মতন। দিশা তিহাকে লক্ষ্য করছিলো,কথা শুনতে শুনতে তিহার মুখ কখনো উদ্বিঘ্ন কখনো হাস্যোজ্জল হচ্ছিলো,কখনো ছায়ায় ঢেকে যাচ্ছিলো কখনো রোদ্দুরে চিকমিকিয়ে উঠছিলো,কথাবার্তা শেষ হলে তিশান তিহা এগিয়ে এসে সাদরে আহ্বান করে চাতালের উপরে ঠিক গুহার সম্মুখে নিয়ে বসালো অর্চিষ্মান আর দিশাকে। গ্রামবৃদ্ধেরা দুজনেই নত হয়ে সম্মান প্রদর্শন করে বিদায় নিলেন।কী গেরো! এবারে কি হবে? এই দুজনের ভাষার বিন্দুবিসর্গ যে অর্চিষ্মান বা দিশা কারুর জানা নেই!
    কিন্তু আতিথ্যের ভাষা দুনিয়ার সকলেই বুঝতে পারে।তিহা ওদের জন্য এনে দিলো মিষ্টি ফল,কিন্তু শুকনো নোনতা খাবার আর ঝর্ণার মিষ্টস্বাদ জল।প্রথমেই জলে চুমুক দিয়ে দিশা অবাক হয়ে গেলো,এমন মিঠা স্নিগ্‌ধস্বাদ জল জীবনে এর আগে কখনো খায় নি সে।
    আকাশে নক্ষত্ররাজি ভরে উঠছিলো,নীহারিকার সূক্ষ্ম ওড়নারাও।সব মেঘ চলে গেছে,এখন শুধু শান্ত রাত্রি ভরে নক্ষত্রমালা।ওরা জানতো না,আকাশ কি খবর গোপণ করে রেখেছে ওদের জন্য।একেবারেই কি জানতো না? প্রথম বসন্তের স্বপ্নে কি কোনোদিন ওরা দেখেনি সেই সোনালী পাখিকে?
    জানতো,ভুলে গেছিলো।হয়তো ভোলেও নি,স্বপ্ন বলে তাকে উড়িয়ে দিয়েছিলো।
    মধ্যরাত্রে শান্ত নক্ষত্রালোককে তুমুল তোলপাড়ে ডুবিয়ে দিয়ে উল্কাবৃষ্টি শুরু হলো।কুড়িবছর আগের সেই উল্কাবৃষ্টির চেয়ে দশগুণ মারাত্মক।

  • Milli | 131.95.121.129 | ২৫ এপ্রিল ২০০৭ ২১:৫৯563543
  • বিরাট সোনালী ধাতব পক্ষীটি অগ্নিপক্ষ বিস্তার করে উড়ে এলো।চাতালে নামার পরে গুটিয়ে নিলো আগুনের ডানা,খুলে গেলো ওর একটি পাশে ছোট্টো একটু জানালা।
    বিকট শব্দে ছোটো মাঝারি উল্কাখন্ড তখন আকাশ থেকে এসে পড়ছে চারিপাশে,একটি গুহামুখে পড়ে প্রবেশপথ আটকে দিলো।আকাশ ভরে যেন অসংখ্য আলোর তুবড়ি দোদমা সাপবাজি চর্কিবাজি ফেটে পড়ছে নীলসবুজলাল আলোর অঞ্জলি হয়ে, অন্ধকার আর নেই, এই অদ্ভুত অপার্থিব দ্যুতিতে রাত্রি উজল হয়ে উঠছে।
    সোনালী পক্ষীটির মাথায় আলো জ্বলে উঠলো,তীব্র অথচ স্নিগ্‌ধ দ্যুতি,তার রঙের বর্ণনা করা যায় না,সে রঙ বদলাতে থাকে অবিরাম।ঝিমঝিমে নেশাধরানো সেই আলোর মধ্যে অসংখ্য উল্কার অবিরাম আভায় ক্রমাগত বিভাময় হতে থাকা রাত্রির মধ্য দিয়ে ঐ ক্ষুদ্র গবাক্ষটির দিকে এগিয়ে যায় চারজন।
    জানা থেকে আলোর সিঁড়ি নেমে এসেছে,কমলা গোলাপী আলোর সিঁড়ি,সেই সিঁড়ির ধাপে ধাপে পা রেখে প্রথমে তিহা,তারপরে দিশা,তারপরে তিশান,তারপরে অর্চিষ্মান উঠে যায়।আলোর সিঁড়ি অদৃশ্য হয়,জানালা বন্ধ হয়,সোনালী পাখির মাথার আলো নিভে যায় ও ডানার আগুন ফের দেখা দেয়।সহস্র সহস্র উল্কার মধ্য দিয়ে অসংখ্য নক্ষত্রের দিকে উড়ে যেতে যেতে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হয়ে আসে সোনালী পাখি।
    চঞ্চল দেশকালের মধ্য দিয়ে ভিন্নপথে নৌকা বাইতে বাইতে জীবন ও প্রতিলিপিজীবন মিলে গেছিলো একবিন্দুতে,এবারে তারা চেনা দেশকাল ছেড়ে পাড়ি দিয়েছে অন্য কোনো দেশেকালে।
    কিজানি সেখানে হয়তো সকলেরই একটি একটি করে প্রতিলিপি রয়ে গেছে।
  • Milli | 131.95.121.129 | ২৫ এপ্রিল ২০০৭ ২১:৫৯563544
  • শেষ।

  • Milli | 131.95.121.129 | ২৫ এপ্রিল ২০০৭ ২২:০৩563545
  • এখানে ওখানে অনেক টাইপো রয়ে গেলো,সেজন্য ক্ষমাপ্রার্থী।
  • Milli | 131.95.121.129 | ২৬ এপ্রিল ২০০৭ ২১:০৬563547
  • টাইপো সারিয়ে পুরোটা একসঙ্গে বা পর্বে পর্বে গাঁথার কোনো উপায় কি আছে ঈশান?

  • Milli | 131.95.120.60 | ০৬ মে ২০০৭ ০৫:১৩563548
  • (স্বগত)সুধী পাঠকেরা দেখি কেউই কিস্‌সু কয় না কেমুন হইলো বা কেমুন লাগলো!!!!!

  • জুম্মি নাহদিয়া | 103.25.248.231 | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ২০:৫০740492
  • গুগুল পদ্ধতি 
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন