এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  সিনেমা

  • ১৫ পার্ক অ্যাভিনিউ

    Ishan
    সিনেমা | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ | ৮৯৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ishan | 192.128.133.68 | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ০১:৪৪499799
  • দেখেই যখন ফেললাম তখন দুকলম লিখেও ফেলা যাক।

    ফিল্মটি অতি সিম্পল। কোনো বিপজ্জনক খাঁজ টাজ নেই, যা দেখে টলে যেতে পারে মানবশরীর। এবং সরলতাই ইহার বিউটি। একগুচ্ছ পুরুষ ও মহিলা চরিত্র নিয়ে গড়ে উঠছে আখ্যান, যাদের কারোরই কোনো গন্তব্য জানা নেই। আছেন প্রেসিডেন্সি কলেজের এক বিদগ্‌ধা অধ্যাপিকা, যিনি সারাদিন ইংরিজিতে কথা বলেন। এছাড়াও তিনি ডিভোর্সি এবং বয়ফ্রেন্ড বিদ্যমান, কিন্তু বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে তিনি আমেরিকা যাবেননা বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। অতএব প্রেম আছে ও পরিণতি নেই। আছেন এক ডাক্তারবাবু যিনি প্রচন্ড ব্যস্ত হলেও রোগির দিদির সঙ্গে ডিনারে প্রচুর সময় কাটান, হুট করে ব্রেক নিয়ে চলে আসেন শৈলশহরে, রণ ও বন থেকে রোগিনীর দিদিকে উদ্ধার করবেন বলে। পরিষ্কার বোঝা যায় ছিপ ফেললেও মাছ তিনি ধরবেনা, কারণ বাড়িতে আছে না ছুঁই পানি বৌ। এখানেও প্রেম আছে কিন্তু হাফসোল নাই। আর আছে এক লালুভুলু প্রেমিক, মানসিক রোগগ্রস্তা প্রেমিকাকে দশ (নাকি বিশ?) বছর পরে দেখে তিনি বৌ-বাচ্চা ফেলে তার সঙ্গে সময় কাটান। এবার যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে তা প্রেম নয়, অতএব তারও কোনো গন্তব্য নেই।

    এসবের পরেও যদি কেউ না বোঝেন, যে, মানুষ আসলে গন্তব্যহীন, কোথা হইতে আসিয়াছে ও কোথায় যাইবে তাহার জানা নাই, তাহলে চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দেবার জন্য আছে অধ্যাপিকার ছোটো বোন, যে, মানসিক রোগগ্রস্ত। তার গন্তব্য ১৫ পার্ক এভিনিউ বলে একটি কল্পিত স্থান যাকে সে নিজের বাড়ির ঠিকানা মনে করে। এবং ফিল্মের শুরু ও শেষে জনতা সদলবলে খুঁজতে থাকে সেই কল্পিত বাড়িটি যার ঠিকানা ১৫ পার্ক এভিনিউ। অর্থাৎ কিনা শুরু থেকে শেষ অবধি সকলেই খুঁজে চলেছে নিজের গন্তব্য, যা আছে কিনা জানা নেই।

    তো, এই হল, সংক্ষেপে ফিল্মটি। খুব উচ্চমানের দার্শনিক চিন্তা হলেও, দেখাই যাচ্ছে, একে দুখানা প্যারাগ্রাফেই এঁটে ফেলা যায়, যা পড়তে সময় লাগে পাঁচমিনিট। অতএব রিলের বাকি অংশটুকু অপচয়মাত্র। রিডান্ড্যান্ট। যা না থাকলেও চলে। ফিল্মটিকে, সংক্ষেপে, আটের দশকের তথাকথিত "আর্ট ফিলিম' সিনড্রোমে প্রবল ভাবে আক্রান্ত বলে মনে হয়। যে, ভালো-ভালো জ্ঞানের কথা শোনাচ্ছি দর্শককে, তাতেই জগৎ ও জীবন উদ্ধার হয়ে যাবে -- স্মার্টনেসের কোনো দরকার নেই। গন্তব্যের সন্ধানে মনোবিকল মানবীর আকুল আকুতির সঙ্গে টিভিতে ভেসে আসছে সাদ্দামের উপর আমেরিকার আক্রমণের খবর, বোঝা যাচ্ছে, শুধু এই কটি চরিত্র নয়, গোটা দেশ, দশ জাতি ও পৃথিবী চলেছে গন্তব্যহীনতার অন্ধগলির দিকে -- এই মহৎ দার্শনিক বক্তব্যের পর আর কি স্মার্টনেসের দরকার আছে ছবিতে? -- এই হল দাবী। ফলে, ইউনিভার্সাল, বিরাট, একখানি ক্যানভাস বানাতে গিয়ে, সেই আটের দশকের আর্ট ফিলিমের মতই স্মার্টনেসটুকু ও হারিয়ে ফেলে ছবিখানি। জায়গায় জায়গায় ঘুম পায়। প্র্যাকটিক্যালি, ডাক্তারবাবু শৈলশহরে এসে পৌঁছনোর পর, আমার, এই আর্ট ফিলিম বিরোধী অপোগন্ডের, মনে হয় একটু বিড়ি খাওয়া দরকার। এবং আমি উঠে সিগারেট খেতে চলে যাই, চলমান সিনেমার সাক্ষী থাকে নির্জন সোফাসেট। বিড়ি খেয়ে এসে আবার দেখতে বসি। প্রসঙ্গত: উল্লেখ থাক, ঠিক পূর্বদিনই "মাই ওয়াইফস মার্ডার' নামক একটি সিনেমা দেখতে দেখতে আমার একই রকম ভাবে বিড়ি খেতে যাই, ফিরে এসে আবার দেখতে বসি, শুধু সিগারেট খেতে ওঠার সময় আমি সিনেমাটিকে থামিয়ে দিয়ে গিয়েছিলাম।

    এখানেই শেষ করা যেত, কিন্তু হিন্দি সিনেমার কথা যখন এসেই গেল, তখন জাস্ট আর দু-লাইন ও লিখে ফেলা যাক। হিন্দি সিনেমার কাহিনীর মধ্যে দুম করে গজিয়ে ওঠা আইটেম সঙ্গীত দেখে যাঁরা রিয়েলিজমের অভাব বলে কোঁচকান, তাঁরা কোঁচকাও নাক সিধে করবার জন্য একবার এই ফিলিম টি দেখে নিন। কলকাতা শহরকে নিয়ে তোলা ছবি, কিন্তু ঝা চকচকে হাসপাতাল, সহৃদয় ডাক্তারবাবু (যিনি কখনই দাঁত খিঁচোননা), ইংরিজি ভাষী প্রেসিডেন্সি কলেজ, আরও আরও অনেক অনেক কিছুতে রিয়েলিজমের একদম গুষ্টির তুষ্টি করে দেওয়া হয়েছে। এর চেয়ে হিন্দি সিনেমা, মাইরি, অনেক রিয়েলিস্টিক। ব্ল্যাকে অন্তত পটভূমিকা একটি শৈলশহর, সালাম নমস্তেতের গপ্পো অস্ট্রেলিয়ার। কিন্তু আমাদের কলকেতা শহর এরকম নয়। কভি নহি।

    ** আমি কিছু রিয়েলিজমের ভক্ত নই, কিন্তু এইটা না বলে জাস্ট থাকা গেলনা। খুব হুড়োতাড়ায় লিখলাম। বানান ভুলও ঠিক করিনি। জনতা, দুপয়সা ফেলুন।
  • tan | 131.95.121.251 | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ০২:২৪499800
  • আহা রাগ করো কেন? হ্যাঁ ঈশান? যা বুঝলাম,তাতে মনে হলো ওটি এক দারুণ কলকাতা!নাহয় নাই হলো রিয়েল!
    খুঁজে যখন কিছুই পাওয়া যাবেনা,তখন সেই বটমলেস ওয়েলের দিকে যেতে যেতে বাইপ্রোডাক্ট হিসাবে যদি অমন এক লালুভুলু কলকেতা মেলে,কিছুদিনের বা কিছু ঘন্টার জন্য,মন্দ কি?
    বড়ো বড়ো লোকেরা আসার কথা থাকলে অনাথ আশ্রমগুলো ধোয়ামোছা হয় না? ছেলেপিলেদের লজেন্স চকোলেট বিস্কুট দেয় না? কয়েক ঘন্টার জন্য ধোপদুরস্ত জামাপাজামা? সেদিনের খাওয়াটা এট্টু মানুষধরণ হয় না?
    তব্যে?
    লোকে পয়সা ফেলে পনেরো নম্বর বাগানবীথি দেখতে যাবে আর এট্টু ভালো ভালো সফেদ সফেদ আইডিয়াল আইডিয়াল কলকেতা দেখবে না?
  • m | 24.166.170.155 | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ০২:৪০499801
  • তনু,
    আমার খান দুই কথা বলার আছে,সিনেমা টা ভালো কি মন্দ সেই বিষয়ে না গিয়ে,
    ১,শাবানা র চরিত্রটা অপর্না সেন নিজে করলেই পারতেন।
    ২,কঙ্কনা র অভিনয় দেখতে দেখতে মনে হয়,শুধু চেহারা টা বদলে দিলেই অপর্না সেন কেই দেখছি।
    পরিচালিকার দীর্ঘ ছায়া তার সমস্ত ম্যানারিজম সমেত ছবি তে ঢুকে গেছে।
  • tan | 131.95.121.251 | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ০২:৪৭499802
  • পরিচালিকা হয়ে অভিনয় করবে? এই ভেবেই নজ্জা পেয়েছে।:-)
    নইলে করতে তো পারতোই।
  • omnath | 210.212.137.6 | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ০৯:৪৭499803
  • ইয়ে লাস্ট সীনটা নিয়ে কিছু বললে না? সেইটে নাকি শুনি - দেখে সবাই বুঝভুম্বুল হয়ে গেছে? একজন বললে লাস্ট সীন টা খুব ভালো লেগেছে, একজন বললে সবটাই ভালো, কিন্তু লাস্ট সীনটা একদম বাজে - কিচ্ছু "বুঝলাম না" !!
    দেখেছো রাঙাদা - মামুও মানে বই ল্যাখে, আর তুমি ক্যাবল আমারেই দুয়ো দাও। :-{(
    স্মার্টনেসের কথায় মনে পড়লো মামু নির্ঘাৎ রং দে বাসন্তি দ্যাখে নাই। :-)
  • samik | 221.134.238.94 | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ১৯:০৫499804
  • পরিচালিকা হয়ে অভিনয় করতে অসুবিধা কোথায়? পারমিতার একদিনে তো করেছিল!
  • dd | 202.122.18.241 | ২৬ মার্চ ২০০৬ ১৩:২৩499805
  • আমি দ্যাখলাম, কালকে।
    খুব ঢিলে ঢালা, মনে হলো খুব প্ল্যান ছাড়াই, একটু আধটু হোঁচোট খেতে খেতে পথ চলা। উদ্দেশ্যহীন।
    মনে হলো, অপর্না শুধু লাস্ট সীনটার কথাই মাথায় রেখে পুরো বইটা সাজিয়েছেন।
    মনে পরলো আশীর দশকে ,বিশেষত: ইস্ট ইউরোপীও সিনেমার লাস্ট সীন নির্ভর ঘরানা। হুবহু সেই গৎ।
    জমে নি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন