এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  নাটক

  • "বড়দা"র "পাতা ঝরে যায়"

    r
    নাটক | ১৭ জানুয়ারি ২০০৬ | ৫৯৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • r | 59.145.67.27 | ১৭ জানুয়ারি ২০০৬ ১১:৪৭450727
  • গ্রুপ থিয়েটারের বড়দা নান্দীকারের দুইটি ছোটো নাটক- "পাতা ঝরে যায়" এবং "বড়দা"।

    প্রথমটি বুদ্ধদেব বসুর লেখা। দ্বিতীয়টি মুন্সী প্রেমচন্দের ছোটো গল্প অবলম্বনে।

    প্রথমটিতে যুগ্ম অভিনয়ে রুদ্রপ্রসাদ এবং স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত। দ্বিতীয়টিতে একক অভিনয়ে গৌতম হালদার।

    "পাতা ঝরে যায়" নাটকটি মঞ্চস্থ করার কি খুব দরকার ছিল? দুই বৃদ্ধবৃদ্ধার শেষ জীবনের স্মৃতিচারণ যেখানে ছেলেমেয়ে অনেক দূরে। এই নাটকের আদলে বেশ অনেকগুলি প্রযোজনা বাংলা এবং হিন্দিতে হয়ে গেছে। নাটকটির কাঠামো নিতান্ত শ্রুতিনাটকের কাঠামো। শুধুই কথা বলা। স্টেজের সামনের দুই চেয়ারে দুজন বসে বসে কথা বলেন। যেটুকু নড়াচড়া করতে হয়, তাও নাটকে নড়াচড়া করতে হয় বলে করা। না করলেও কোনো ক্ষতি হত না। তবে শুধু কথা বলেও নাটক হয়। "তুমহারী অমৃতা"র কথা শুনেছি। কিন্তু সংলাপেও এমন কোনো স্বর্ণালী ক্ষণ তৈরি হয় না যা মনে রাখার মতো। এইরকম স্মৃতিমেদুর নাটক ছোটো শ্রোতৃমন্ডলীর সামনে বসে বসে পড়লে হয় তো অনেক বেশি ভালো লাগে। অথবা হয় তো এইভাবেও ভালো লাগানো যায়- অভিনয়ের দক্ষতায়। দুইজনেও দীর্ঘকালের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন নাট্যযোদ্ধা। স্বাতীলেখা হতাশ করেন নি, রুদ্রবাবু হতাশ করেছেন। স্বাতীলেখার অপটু মেক আপের ব্যাপারটা বাদ দিলে বাকিটুকুতে তিনি বিশ্বাসযোগ্য। রুদ্রবাবু এখনও বৃদ্ধ হন নি। স্তুতি না নিন্দা বলতে পারব না। তবে অসহায় বৃদ্ধের স্মৃতিচারণে একদম বেমানান। দেখে মনেও হল না অভিনয়ের পিছনে অনেক শ্রম ব্যয় হয়েছে। তার উপর মাঝেই মাঝেই বহুচেনা ম্যানারিজ্‌মের উঁকিঝুঁকি। "বড়দা"র পাতা ঝরেই গেল। আলো, মঞ্চ এবং আবহে বিশেষ বলার মতো কিছু নেই।

    দ্বিতীয় প্রযোজনা "বড়দা" অনেক সুঠাম, অনেক বেশি ভালো লাগার। এই নাটকেও গৌতম একটি চেয়ারে বসেই পুরো অভিনয় করে যান। ছোটো ভাই বছর বছর ফেল করা অভিভাবক বড়দার স্মৃতিচারণ করছেন। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে তির্যক ব্যঙ্গ আছে, আছে দুই ভাইয়ের ভালোবাসার গল্প। নাটকের শৈলীও নতুন ধরনের। কথক টি ভিতে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন। কাজেই মঞ্চে কথক বসে অভিনয় করেন। পিছনের পর্দায় তার সাথে সাথে সেই সাক্ষাৎকারের লাইভ টেলিকাস্ট হতে থাকে। দুই মাধ্যমের মিশ্রণের চেষ্টা প্রশংসনীয়। শুধু প্রথম প্রথম একটু সমস্যা ছিল যে পর্দার গৌতমকে দেখব না মঞ্চের গৌতমকে দেখব। বাংলা সিনেমার ইংরিজি সাবটাইটেল থাকলে যে ধন্দ হয় আর কি। শুনেছি নাসিরুদ্দিন শা এই একই গল্পের অবলম্বনে নাটক করেছেন। দেখে ওঠা হয় নি। তবে গৌতম সতেজ, দক্ষ, দর্শককে সুতোয় নাচাতে পারেন। স্বাতীলেখার আবহ সুপ্রযুক্ত। নাটকের সেরা সময় আসে নাটকের শেষে, যখন বড়দা ভাইয়ের সাথে কাটা ঘুড়ি ধরতে দৌড়ান, বাজে তেওহারের রঙিলা বাজনা, জোরে বাজতে বাজতে হল ভরে দেয়, গৌতম চেয়ারে বসে বসেই কুশলী হাতের মুদ্রায় আর শরীরের বিভঙ্গে সেই খুশিয়াল ব্যাপারটা হলের কোণে কোণে পৌঁছে দেন, পর্দার ছবিও নানা রঙে নেচে নেচে ওঠে।
    তবে কয়েকটি মন্তব্য-
    নাটকের এইরকম জগাখিচুড়ি ভাষা কেন? অভিপ্রায় ছিল হিন্দিভাষীদের অ্যাক্‌সেন্টে বাংলা বলানোর। কিন্তু কোনো হিন্দিভাষী এইরকম বিশুদ্ধ বাংলা বলবেন না। আর যদি অ্যাক্‌সেন্ট উত্তর ভারতীয় হয়, তাহলে শিক্‌ষা না বলে শিখ্‌খা বলেন কেন? কাজেই মাঝে মাঝে ব্যাপারটা একটু হাস্যকর হয়ে দাঁড়ায়। বস্তুত:, বাঙালী চেহারাতেই নাটকটা করলে কি ক্ষতি ছিল? কারণ গল্পের মধ্যে এমন কিছু নেই যা সম্পূর্ণভাবে প্রাদেশিক সংস্কৃতির সাথে সম্পৃক্ত।
    গৌতমের অভিনয় থেকে শারীরিক অভিনয় বাদ দিয়ে দিলে পাওনায় ঘাটতি থেকে যায়। সারাক্ষণ গৌতম চেয়ারে বসে থাকার ফলে মনে হচ্ছিল, কিছু একটা কম পড়ে যাচ্ছে। যখন গৌতম শুধুই কথা বলছেন, তখন একটু যেন ঢিল পড়ে। যখন গৌতম বসেই বসেই শরীরকে ব্যবহার করছে, দর্শক জেগে ওঠে।
    গৌতমের সতেজ অভিনয়ের দরুন ম্যানারিজ্‌ম্‌ ঢাকা পড়ে যায়। তবে গৌতমের মুখ এবং বাচনভঙ্গীতে এখনও কিছু ম্যানারিজ্‌ম্‌ অস্বস্তিকর ছায়া ফেলে।

    ব্যক্তিগত ভালো লাগা মন্দ লাগার পরিপ্রেক্ষিতেই আরও একটি কথা বলি। বসে বসে করা নাটককে কেমন যেন অসম্পূর্ণ মনে হয়। মনে হয়, কিছু একটা বাকি থেকে গেল। মনে হয়, এটা কি একটু রংচং লাগানো আর একটা শ্রুতিনাটক?
  • indo | 62.6.139.14 | ১৯ জানুয়ারি ২০০৬ ১৮:১৯450728
  • দুটো নাটকই পুরোপুরি শ্রুতিনাটক হিসেবে আমার শোনা- সিডিতে। কাজেই বক্কাবাজি কিয়ৎ ইনকম্পলিট থেকে যাবে। অতএব, বেশী বক্কা করবো না।
    'বড়দা' নিয়ে পুরো একমত। মানে , শোনার পার্টটা।
    'পাতা ঝরে যায়'-বিষয় নির্বাচন নিয়ে আবার ডিটো দিলাম। কিন্তু আমার শোনা সিডিতে রুদ্রপ্রসাদ ফাটিয়ে করেছেন;আর কিচ্ছু করার ছিল না। হতে পারে বেঙ্গালুরুর ঐ পাট্টিকুলার শো-য়ে কিছু ছড়িয়েছেন।
    ব্যাস, এইটুকুই। তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু প্রযোজনা নয়, কোনোটাই।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন