ভদ্রলোকের সঙ্গে ট্রেনে আলাপ হয়েছিল। সেটা নব্বই দশকের প্রথমদিক। আমাদের তখন কলেজে ফাইনাল ইয়ার। ষোলজনের দল গেছিলাম বম্বে-পুনা-গোয়া। ফেরার সময়ে বম্বে থেকে ট্রেন ধরেছি। একসঙ্গে সব জায়গা পাওয়া যায়নি। আমি, অসীম আর শেখর আলাদা হয়ে গেছি বাকি তেরজনের থেকে। টু-টিয়ার কামরায় আমাদের সঙ্গে ওই ভদ্রলোক । মিস্টার সেনগুপ্ত। মাঝবয়েসী, বছর পঁয়তিরিশ বয়েস। ব্যবসার কাজে বম্বে গেছিলেন, ফিরছেন। খুব মাইডিয়ার লোক। তখন আমাদের যা বয়েস তাতে কেউ বড়দের মতন ব্যবহার করলে কি সিগারেট অফার করলেই দারুণ ভাল লেগে যায়। সেনগুপ্তবাবু সেসব ... ...
সে অনেককাল আগের কথা। আমার তখন ছাত্রাবস্থা। রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্টশিপের টাকার ভরসায় ইটালি বেড়াতে গেছি। যেতে চেয়েছিলাম অস্ট্রিয়া, সুইৎজারল্যান্ড, স্ট্রাসবুর্গ। কারণ তখন সবে ওয়েস্টার্ন ক্লাসিকাল শুনতে শুরু করেছি। মোৎজার্টে বুঁদ হয়ে আছি। কিন্তু রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্টশিপের টাকায় সুইৎজারল্যান্ড বেড়ান হয়না। অনেক হিসেব-টিসেব কষে দেখলাম ইটালি কোনরকমে হয়ে যাবে। এসেছি ভেনিসে। পকেট তো একেবারে গড়ের মাঠ। তাই ব্যাকপ্যাকিং করছি। থাকছি ইউথ হস্টেলে। খাচ্ছি স্যান্ডউইচ আর ক্যালজোন। একদিন পিজ্জা খেয়ে দেখেছি। ইটালি ... ...
খাওয়া-দাওয়া ছিল বটে স্বাধীনতার আগে। ভারতীয় খানার স্বর্ণযুগ বলতে মুঘল যুগ। শ্রীযুক্ত বাবর যখন ভারতের অধিপতি হয়েই পড়লেন, যে জিনিসটি তিনি সবথেকে বেশি আকাঙ্খা করতেন তা হল তার জন্মস্থানের খানা, বিশেষতঃ ফলমূল। মধ্য এশিয়ার খোবানি থেকে পারস্যের তরমুজের জন্যে তার প্রাণ কাঁদত। তাছাড়াও ভারতের মশলাদার খাবারও তাঁর বিশেষ পছন্দের ছিলনা। বাবর পছন্দ করতে মধ্য এশিয়ার ঝলসান মাংসর পদ। বাবরপুত্র হুমায়ুন কিন্তু ভক্ত ছিলে পারসিক পোলাও থেকে হালকা মশলাদার রান্নার। আকবরের সময়ে ভারতীয় রান্না, পারসিক রন্ধনপ্রণালী আর মধ্য এ ... ...
আমার বাড়ির কাছেই ছোট একটা বার আছে। আমরা বলি স্টিভের ভাঁটিখানা - স্টিভস ব্রিউয়ারি। যদিও স্টিভ মদ বানায় না, কিন্তু ওটাই আদরের নাম হয়ে গেছে। আমরা কজন আধবুড়ো লোক প্রতি শনিবার সকালে গলফ খেলে স্টিভের দোকানে ঢুকে দুয়েক পাত্র বিয়ার সেবন করে বাড়ির পথ ধরি। এ আমাদের অনেকদিনের অভ্যেস। স্টিভ ভিয়েতনামের যুদ্ধে লড়াই করেছে। এখানে যুদ্ধফেরতদের ভেটারেন বলে। স্টিভ হল ভিয়েতনাম ভেটারেন। যুদ্ধের পরে বীতশ্রদ্ধ হয়ে প্রায় পিসনিক হয়ে যায়। নিজে ওহায়োর ছেলে, কিন্তু ওর বেস ছিল স্যান্টা বারবারা। সেখানে থাকার সময়েই বারবারা বল ... ...
বেতাল পঞ্চবিংশতি বর্ষে পড়ল। বেতালের তবলচী বাবা তার মাথায় চাঁটি মেরে বললেন, "পঁচিশ বছরের দামড়া। এখনও ষষ্ঠী আর নবতালের ফারাক শিখলি না। তোর নাম আজ থেকে বে-তাল। দূর হয়ে যা আমার চোখের সামনে থেকে। তোকে ত্যজ্যপুত্র করলাম।" বেতাল তখন ক্ষোভে-দুঃখে তার যে বেগুনি ফুলহাতা-গেঞ্জি আর প্যান্ট ছিল, সেই পরে এক বস্ত্রে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল। খালি ক্ষোভের প্রকাশ হিসেবে প্যান্টের ওপর একটা কালো জাঙিয়া পরে নিল। লজ্জায় মুখ ঢাকতে বোনের হিজাবটা নিল আর বাবার শখের সানগ্লাসটা।
বেতাল মনের দুঃখে এক জাহাজে চেপে বসল। জা ... ...
আমি মার্কিন দেশে আসি পিএইচডি করার নাম করে। প্রথম দু বছর থাকতাম একটা দু বেডরুম অ্যাপার্টমেন্টে চারজন। পরেশ, ভাবিন, জয়েশ আর আমি। পরেশ বম্বের ছেলে, আমাদের এক বছর আগে এসেছে। ভাবিনও বম্বের। তবে গুজরাটি। আর জয়েশ আহমেদাবাদের গুজরাটি। আমাদের অ্যাপার্টমেন্টে আসবাব বলে কিছু ছিলনা। এদেশে একটা রীতি আছে। পুরনো জিনিস - সে আসবাবই হোক কি টিভি হোক কি মাইক্রোওয়েভ হোক - ব্যবহারযোগ্য থাকলে লোকে "ফ্রি" বলে একটা কাগজ সেঁটে বাড়ির সামনে রেখে দেয়। যদ্দিন না গারবেজের ট্রাক এসে ওগুলো নিয়ে যাচ্ছে, অন্য কেউ প্রয়োজন থাকলে স্ ... ...
অন্য লোকের স্বপ্নে আসে ভগবান, সিনেমা স্টার, ছেলেবেলার বন্ধু নিদেন ইশকুল-কলেজের কড়া মাস্টারমশাই। কবি হলে প্রেমিকা-টেমিকা, একেবারে কবিতাশুদ্ধু। " বাসস্টপে দেখা হলো তিন মিনিট, অথচ তোমায় কাল স্বপ্নে বহুক্ষণ ..." ইত্যাদি। আর আমার স্বপ্নে আসেন যমরাজ। যমরাজ মানে শমন, কৃতান্ত। ভাল্লাগে না মাইরি।
আর আসবেন তো আসুন, মোষের পিঠে চেপে স্টেজ লেফট দিয়ে ঢুকে ভয়-টয় দেখিয়ে স্টেজ রাইট দিয়ে বেরিয়ে গেলেন - সে একরকম। কিংবা যাত্রাদলের যমরাজের মতন বালা-হাতে আখাম্বা হাত কোমরে দিয়ে চোখ পাকিয়ে বুহাহাহা করে অট্টহাস ... ...
একদিন কিঞ্চিৎ সকাল-সকাল আপিস হইতে বাড়ি ফিরিতেছি, দেখিলাম রাস্তার মোড়ের মিষ্টান্নর দোকানের সম্মুখে একটি জটলা। পাড়ার মাতব্বর দু-চারজনকে দেখিয়া আগাইয়া যাইলাম। বাইশ-চব্বিশের একটি যুবক মিষ্টির দোকানের সামনের চাতালে বসিয়া মা-মা বলিয়া হাপুস নয়নে কাঁদিতেছে আর তাহাকে ঘিরিয়া বারো-তেরো জনের একটি জটলা গোল হইয়া সান্ত্বনা দিতেছে। কেহ বলিতেছে, "মা কী আর কারুর চিরদিন থাকে?" কেহ বলিতেছে, "ভাবছিস কেন, আমরা তো আছি।" কেহ বলিতেছে, "চল, চল, বাড়ি চল।" ইহার মধ্যে আবার একজনের রসিকতা পাইয়া গেল, "ভাবছিস কেন, আরেকটা মা আসব ... ...
আমি না ক্রিকেটে ওপেন করতাম আর উইকেট-কিপিং করতাম। এবং স্কুল-পাড়া লেভেলে খুব খারাপ করতাম না। সিএবির ইন্টার-স্কুল ক্রিকেট - যাকে সামার ক্রিকেট বলা হত - সেই টুর্নামেন্টে একবছর শুধু খেলিইনি, একটি গুরুত্বপূর্ন ম্যাচে ক্রিটিকাল টাইমে মিড-অনে দাঁড়িয়ে একটি হাই-ক্যাচ ফেলে টিমকে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে দেবার কৃতিত্বও অর্জন করেছিলাম। যদিও তার বদলে সিএবি আমাদের বিনি-পয়সায় কি অতি-অল্পমূল্যে টেস্ট ক্রিকেটের টিকিট দিয়েছিল। সেই একবারই রঞ্জি স্টেডিয়ামে বলে খেলা দেখেছি। কিন্তু বাবারও বাবা থাকে। পাড়ার ক্রিকেটে পিকলু ... ...
কৈফিয়তঃ জন্মদিন-মৃত্যুদিনে লেখা নাবানো ফেসবুকাব্দের একটি অসুখ বিশেষ। এটি সেই অসুখের সিম্পটম। একমাত্রা সেভিং গ্রেস, লেখাটি অগাস্ট মাসের।
বাংলা ছবি আর কিছু না হোক চরিত্রাভিনেতাদের নিয়ে জগতসভায় গিয়ে শ্রেষ্ঠ আসনের জন্যে কম্পিটিশনে নাবতে পারে। চরিত্রাভিনেতারাই ছবির বুনিয়াদ, যার ওপর মূল অভিনেতারা নিজেদের অভিনয়ের ইমারত তৈরি করেন। সে ইমারত হর্ম্য হবে না প্রাসাদ হবে না কুটীর হবে তা স্থির হত মূল অভিনেতার অভিনয়ের জোরে। কিন্তু সে ইমারত কতটা টেঁকসই হবে তা নির্ভর করে ইমারতের ভিতের জোরের ওপর - অর্থাৎ ... ...