“শুয়োরের বাচ্চা জনগণ, / বছর বছর নির্বাচন?” --সব তো হল। বোমা বাঁধা, কামানের গোলা, এক ঘুসিতে একটা ছেলের ঠোঁট ফাটিয়ে দেওয়া, বই পোড়ানো, স্যারের হাত থেকে বেত কেড়ে নেওয়া; আর কিছু বলার নেই? ... ...
বেড়ালের মুখে সুকান্ত আর চারুদার কথা? হাত বাঁধা হলে কি হয়, পা তো খোলা। আর বেড়ালটা বেশ কাছে ঘেঁষে এসেছে। সজোরে চালানো লাথিটা খাটের লোহার পায়ায় একটু ছুঁয়ে গেল। না, বেশি ব্যথা লাগে নি। কারণ লাথিটা--মনে মনে যেমনই ভেবে থাকি না কেন-- 'সজোরে' চলে নি। পায়ে কোমরের পাওয়ার হাউস থেকে সেই শক্তিটা এল না। আর বেড়ালটা জানলার তাকে উঠে গা-জ্বালানো মুচকি হাসি হাসতে লাগল। বলল-- লক্ষ্মীছেলে! ... ...
বেড়ালটা আবার এসেছিল।কাল রাত্তিরে। জানলা দিয়ে দিব্যি গলে চলে এল। আমার খাটের পাশে ওষুধপত্তর ও নার্সের চার্ট রাখা ছোট সাদামত বিধবা টেবিলটার ওপর কেমন যেন অলস ভঙ্গিতে উঠে বসল। আমাকে দেখতে লাগল। পিত্তি-হলুদ চোখ। আমি হাত নেড়ে তাড়া দেব, সে সুযোগ নেই।হাত জোড়া আছে খাটের পাশে স্ট্যান্ড থেকে ঝোলানো রক্তের বোতলে। ব্লাড ট্রানসফিউশন। আগের কেমো হয়ে যাওয়ার পর প্লেটলেট কাউন্ট নাকি কমে গেছে ... ...
দুদিন পরে শংকর এসে হাজির হল আমার অস্থায়ী ডেরায়। আমার হাতের তৈরি কালো চা খেয়ে মুখ ভেটকে বলল -- সামান্য চা টাও ঠিক করে বানাতে পারিস না। তোকে নন্দিতাবৌদি আশকারা দিয়ে মাথায় তুলেছিল। পরে বুঝেছে যে এমন অপদার্থ লোককে মাথায় রাখলে বোঝা বাড়ে, তাই নামিয়ে দিয়েছে। আমি মুচকি হাসি। কিন্তু কোথায় যেন খচ্ করে লাগে ... ...
অমন হাইটের শংকর, কিন্তু ওর বাবা বীরেশবাবু ছিলেন মেরেকেটে পাঁচ দুই। তাই ভিড়ের মধ্যে চোখে পড়তেন না। একদিন লম্বু অরবিন্দনগরের আড্ডায় অনুযোগ করল--রমেন, তোর ব্যবহারে বাবা দুঃখ পেয়েছে রে! বলেছে রমেন রাস্তায় দাঁড়িয়ে সিগ্রেট খায়, আমার বলার কিছু নেই। কিন্তু আমাকে দেখে একটু আড়াল করলেও তো পারে! লুকোনোর চেষ্টাও নেই, ফুকফুক করে ধোঁয়া ছেড়েই চলে। ... ...
বাগানের নারকোল গাছগুলো নেই। ওদের শেকড়ের চোরাগোপ্তা আক্রমণে নাকি পাঁচিলটা পড়ে গিয়েছিল। আছে সুপুরিগাছগুলো। তাতে সুপুরির গোছা ঝুলছে গলগন্ডের মত। বাগানে গোলাপগাছের সংখ্যা কিছু কমেছে। কোথায় সেই লতানে গোলাপগুলো এবং সাদা-হলুদ গোলাপের দল? আর বাঁশদ্রোণী বাজার থেকে কেনা চৌ এন-লাই গোলাপ! চৌ এবং তাঁর নামে রাখা গোলাপ সবই কবে বিবর্ণ হয়ে ঝরে গেছে। ... ...
সমস্ত ঝড় একদিন থেমে যায়। সব পাখি একসময় ঘরে আসে। কিন্তু কেউ কেউ ঘরে ফেরেনি। কেউ কেউ স্বপ্নভঙ্গের বেদনা বুকে নিয়ে জীবনভর অপেক্ষা করে, হয়ত কোন একদিন ঘুর্ণি হাওয়ায় উড়ে আসা শালপাতায় ভর করে ডাক আসবে ফেরারি ফৌজের ... ...
শুনছেন, ইচ্ছে করলে আমার টেবিলে এসে বসতে পারেন। ঢের জায়গা আছে। একটা লোকের আর কতটুকু জায়গা চাই? না, না, আমার কোন অসুবিধে হবে না। হ্যাঁ, হ্যাঁ, আপনি চাইলে চুপটি করে বসে থাকতে পারেন, আমিও তাই। তবে কি জানেন, কথা বলা আর চুপ করে থাকা-- দুটোই একসঙ্গে করা যায়। এটা খুব কম ... ...
এটি নেহাতই গপ্পো; এখানে যদি কোন ঘটনা বা কারো নাম দেখে আপনাদের পরিচিত কাউকে মনে পড়ে তো জানবেন তা নেহাৎই কাকতালীয়। ট্রেন একটা স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে অনেকক্ষণ থেমে আছে। কিন্তু হরিদাস পালের চোখে যেন আঠা লেগে আছে, খুলতেই চাইছে না। এসি-থ্রির কোমল ঠান্ডায় শেষরাতের জম্পেশ ঘুম আর কি কি সব আহ্লাদী স্বপ্ন! ও আরেকবার কম্বলটা ভাল করে টেনে নিল। কিন্তু কামরার মধ্যে আলো বড় বেশি, আর লোকজনের কথাবার্তা যেন বেড়েই চলেছে। এই সাতসকালে কেন ... ...
কিছুদিন আগে গত হয়েছেন হিন্দি সাহিত্যের বিশিষ্ট লেখক শ্রীলাল শুক্লা। তীক্ষ্ণ ব্যংগাত্মক দৃষ্টি আর সুগভীর জীবনবোধ তাঁর উপন্যাসগুলোয় আলাদা স্বাদ এনেছে। স্বাধীনতাপরবর্তী উত্তরভারতে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় তাঁর রচনার বিষয়। তাঁর চলার পথ আলাদা। চাবুক চালিয়েছেন কিন্তু মুখে লেগে আছে হাসিটি। ১৯৬৮তে প্রকাশিত তাঁর "রাগ দরবারী" উপন্যাসটি সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার প্রাপ্ত। ১৯৯১ এর মধ্যেই দশম সংস্করণ জনপ্রিয়তার বিরল উদাহরণ। পাঠক অনুভব করবেন প্রথম বা দ্বিতীয় অধ্যায় শেষ হতে না হতেই শিবপালগঞ্জ নামক গ্রামটি গো-বলয়ের সমগ্র গ্রামজীবনের প্রতিভু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার আধখেঁচড়া অনুবাদে যদি কোন পাঠকের মনে মূল হিন্দি বইটি পড়বার আগ্রহ জাগে তাহলেই আমার শ্রম সার্থক। ... ...