তুষ্টু গতকাল রাতে বলছিলো - দিদিভাই,তোমার লেখা আমি পড়ি কিন্তু বুঝিনা। কোন লেখা? ঐ যে - আলাপ সালাপ -। ও, তাই বলো। ছড়া তো লিখি, তা ছড়ার কথা যে যার মতো বুঝে নেয়। কে কবে লিখেছে লোকে ভুলে যায়, ছড়াটি বয়ে চলে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। মা মেয়েকে শেখান, দাদু নাতিকে বলেন। নাকছাবিটি হারিয়ে গেছে হলুদবনে বনে, সুখ নেইকো মনে। কার নাক ছাবি, কেই বা দিয়েছিলো? এত জঙ্গল থাকতে যদি হলুদবনেই পড়ে থাকে সেটা জানা থাকতে খুঁজে পাওয়া এমনই কি অসুবিধার, সাতনরী হার নয়, কানপাশা নয়, তবু কবেকার নাকছাবিটির জন্যে মন ... ...
বেড়াল অনেকের আদরের পুষ্যি। বেড়ালও অনেককে বেশ ভালোবাসে। তবে কুকুরের প্রভুভক্তি বা বিশ্বাসযোগ্যতা বেড়ালের কাছে আশা করলে দুঃখ লাভের সম্ভাবনা আছে। প্রবাদ আছে কুকুর নাকি খেতে খেতে দিলে প্রার্থনা করে, আমার প্রভু ধনেজনে বাড়ুক, পাতেপাতে ভাত পড়বে আমিও পেটপুরে খাবো। বেড়ালকে খেতে দিলে বেড়াল নাকি প্রার্থনা করে গেরস্ত কাণা হোক আমি চুরি করে প্রাণ ভরে খাবো। হতে পারে এটা বিড়াল-বিদ্বেষীদের অপপ্রচার। তবে বেড়ালের চৌর্যবৃত্তি সুবিদিত। তবুও এই সেদিনও দেখেছি ডাকসাইটে গৃহকর্তা খেতে বসেছেন, তাঁর দাপটে নাতি পুতিরা সিঁটি ... ...
বিল্টু তোতা বুবাই সবাই আজ খুব উত্তেজিত। ওরা দেখেছে ছাদে যে কাপড় শুকোতে দেয়ার একটা বাঁশ আছে সেখানে একটা ছোট্ট সবুজ পাখি বাসা বেঁধেছে। কে যেন বললো এই ছোট্ট পাখিটার নাম বসন্তবৌরী। বসন্তবৌরী পাখিটি আবার ভারী ব্যস্তসমস্ত। সকাল বেলা বেরিয়ে যায়, সারাদিন কোথায় কোথায় যেন ঘোরে। বিকেল বেলা বাড়ী ফিরেই ঢুকে পড়ে বাঁশের খোদলে। এতো তার কি কাজ কে জানে।
বিল্টু তোতা বুবাই এদিকে পাখির জন্যে ছোট বাটিতে করে কেউ ছোলা কেউ চাল কেউ টুকরো করে কাটা ফল কি পাউরুটির টুকরো এনে জড়ো করে রাখে ছাদের কোণে। বসন্তপাখি ওসব খায়না। ... ...
এটা একটা গল্প। একটাই গল্প। একেবারে বানানো নয় - কাহিনীটি একটু অন্যরকম। কারো একান্ত সুগোপন ব্যক্তিগত দুঃখকে সকলের কাছে অনাবৃত করা কতদূর সমীচীন হচ্ছে জানি না, কতটুকু প্রকাশ করব তা নিজেই ঠিক করতে পারছি না। জন্মগত প্রকৃতিচিহ্নের বিপরীতমুখী মানুষদের অসহায় আত্মধ্বংসের গল্প এটি, আমাদের কাছে যাঁদের একটু সহমর্মিতা প্রাপ্য ছিল। পরিপার্শ্বের বিড়ম্বনায় ক্লিষ্ট মানুষ একটু সম্মান আশা করতে পারতো। মানুষ না মানুষী নিছক প্রকৃতিনির্দিষ্ট এই চিহ্নের বাইরে উড়তে চাওয়া এমনই মানুষের, প্রতিভার অকাল সমাপ্তির এই আখ্য ... ...
আগে খুব ঘুম পেয়ে যেতো। পড়তে বসলে তো কথাই নেই। ঢুলতে ঢুলতে লাল চোখ। কি পড়ছিস? সামনে ভূগোল বই, পড়ছি মোগল সাম্রাজ্যের পতনের কারণ। মা তো রেগে আগুন। ঘুম ছাড়া জীবনের কোন লক্ষ্য নেই মেয়ের। কি আক্ষেপ কি আক্ষেপ মায়ের। মা-রা ছিলেন আট বোন দুই ভাই, সর্বদাই কেউ না কেউ দুগ্ধপোষ্য এবং কাঁদুনে। বড় বোনেরা ছোটদের দায়িত্ব নিতে বাধ্য। সুতরাং খাটে পা মেলে বসে, পায়ের ওপর কোনো ভাই বা বোনকে দোলাতে দোলাতে হোমওয়ার্ক-এর জিওমেট্রি আঁকতে হতো। আমার কিছুই করতে হয় না তবু আমি পড়ি না, কেবল ঘুমাই এইসব আক্ষেপ ব্যক্ত করতে করতে মা ... ...
আমাদের যাদের বয়েস স্বাধীনতার বয়েসের পাশাপাশি তারা ছোটবেলায় প্রায়ই একটা অদ্ভুত প্রশ্নের মুখোমুখি হতাম, দেশ কই? উত্তরে যে দেশের নাম বলার রীতি ছিলো যেমন ঢাকা, কুমিল্লা, সিলেট, নোয়াখালী সব ছিলো ভারতের ম্যাপের বাইরে সবুজ এলাকায়। আবার সদ্যস্বাধীন দেশে আমরা খুব আবেগবিহ্বল গান শুনি -ভারত আমার ভারতবর্ষ স্বদেশ আমার স্বর্গ গো ..., স্বদেশের বাইরে দেশ? বন্ধুরা কেউ কেউ ছুটি ছাটায় পাসপোর্ট করে দেশে যায় - আমরা যাইনা কারণ বাবা জ্যেঠারা দেশভাগের আগেই দেশ ছেড়েছেন। দাদু ঠাকুমাও নেই। পাসপোর্টের ব্যাপার ঠিক বুঝি না ত ... ...
আগরতলা বানভাসি। দামী ক্যামেরায় তোলা দক্ষ হাতের ফটোগ্রাফ বন্যায় ভাসিয়ে দিচ্ছে ফেসবুকের ওয়াল। দেখছি অসহায়ের মতো সকাল, দুপুর বিকেল, রাত হোল এখন। চিন্তা হচ্ছে যাঁরা নীচু এলাকায় থাকেন তাঁদের জন্য। আমাদের ছোটবেলায় ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি হোত হাওড়া নদীর বুক ভরে উঠতো লালমাটিগোলা জলের প্রাচুর্যে। মাইকিং হোত, আতঙ্ক হোত, ফাজিল কোন লোক বা লোকেরা চেঁচিয়ে ভয় দেখাতো আইয়ে রে, আইয়ে। শেষ পর্য্যন্ত আমাদের ভয়ে মাখামাখি প্রতীক্ষা উপেক্ষা করে বন্যা আসতো না। ড্রেন উপচে জল ঢোকেনি কখনো। হরিগঙ্গা বসাক রোডে আমার মাতামহের পৈতৃক বাড় ... ...
ফেসবুকে সন্দীপন পণ্ডিতের মনোজ্ঞ পোস্ট পড়লাম - মনে পড়ে গেলো বাবার কথা, মনে পড়ে গেলো আমার শ্বশুর মশাইয়ের কথা। তাঁরা দুজনই ছিলেন কাঁঠালবীচির ভক্ত। পথের পাঁচালীর অপু হলে অবশ্য বলতো কাঁঠালবীচির প্রভু। তা প্রভু হোন আর ভক্তই হোন তাঁদের দুজনেরই মত ছিলো, কাঁঠালবীচি যতদিন পাওয়া যায় ততদিন আলু খেয়ে মুখ নষ্ট করবো কেন? রান্না ঘর থেকে আলু বেগুন হটিয়ে দেবার সাধ্যি তাঁদের হয়নি তা ঠিক তবে কাঁঠালবীচির সরষে কাঁচা লঙ্কা দিয়ে বাটা সেদ্ধ থেকে শুরু করে ডালনা, তরকারী, মায় সন্দেশ জিলিপি অব্দি কতো কি যে হয়। ছবি ... ...
এটি মূলতঃ তির্যকের 'রয়েছি মামণি হয়ে' ও শুচিস্মিতা'র 'সন্তানহীনতার অধিকার'এর পাঠপ্রতিক্রিয়া।
--------------------------
মা শব্দটি এখনও মহিমান্বিত । সুদূর অতীতের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা তো নেই। এখনো এমন ভাবার কোন কারণ দেখি না যে ভবিষ্যতে মা শব্দের গুরুত্ব কোমলতা এবং মহিমা কমে যাবে। আমি এও বিশ্বাস করি না যে অন্তত মানব শিশুর জীবনে বাবার ভূমিকা কম গুরুত্ব পূর্ন। তবে এই আলোচনা মায়ের বৃত্তেই সীমাবদ্ধ থাকবে। বিতর্ক এখনো এই পর্যায়ে আসেনি যে জৈবিক দিক দিয়ে শিশুর প্রাণোদ্গমে মা অথবা বাবা সমান গুরুত ... ...
আজকে কেন জানিনা ঊনকোটি পাহাড়ের কথা খুব মনে পড়ছে। নিজেদের পুরোনো জীবনের কথাও। ১৯৬৯ কি ৭০সাল। সদ্য শিক্ষকতায় ঢুকেছি। কোথায় আমার বাড়ী কোথায় ভদ্রার বাড়ী। ছোট্ট শহর কৈলাশহর। সংস্কৃতিমনষ্ক রক্ষণশীল সমাজ। আমাদের বয়স তখন কম, দেখায় আরো কম। সহকর্মীরা ভালবাসেন, হেডমিস্ট্রেসের আমরা প্রিয়পাত্রী ছিলাম। স্কুলের সব কটি ক্লাসের মেয়েরা পিকনিকে আমাদের নিয়ে যেতে চায় আমরাও সাগ্রহে যাই। ঊনকোটিতে নিরামিষ খাওয়াই প্রথা; আমরা একদিন সর্ষেবাটা দিয়ে রান্না করা ডিম নিয়ে গেছিলাম, কেউ বাধা দেয়নি। তখন পাহাড়ে কেউ থাকতোও না; ক ... ...