আউটডোর জিনিসপত্র – সে খেলাধূলাই হোক বা ট্রেকিং বা হাইকিং সবকিছুতেই বিশাল ইন্টারেষ্ট ছিল এককালে। তবে আজকাল সেই ইন্টারেষ্ট কিছুটা হলেও কমে এসেছে, বিশেষ করে যদি একসাথে ডরমিটারি-তে থাকতে হয় যেখানে খানিক দূরেই জুতো-জামাকাপড়-ব্যাগ রাখা থাকবে। এর কারণটা বিশেষ কিছু নয় – জুতো এবং মোজার গন্ধ। তা সে নিজের জুতো-মোজাই হোক বা অন্যের। নিজেরটা যদিও নাক চেপে সহ্য করে নেওয়া যায়, কিন্তু অপরের জুতো-মোজার গন্ধে একেবারে অন্নপ্রাশনের ভাত উঠে আসে। ... ...
যদি গুগুল সার্চ করেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী দেশ – তো মনে হয় না প্রথম দশে আপনি মলটা দেশের নাম পাবেন – সেখানে দেখবেন ফিনল্যান্ড এবং অন্যান্য স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দেশগুলিরই আধিক্য। কিন্তু এই সুখীর সংজ্ঞার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ বা আমরা যাকে বলি ‘আনন্দে’ বেঁচে থাকা তা ঘুলিয়ে ফেললে চলবে না। তেমন লিষ্টী বানাতে হলে প্রথম বিশ্বের দেশগুলির মধ্যে মলটার নাম একেবারে প্রথম দিকে থাকবে। বিশাল আনন্দে এবং টেনশন ফ্রী জীবন কি ভাবে কাটাতে হয় এদের কাছ থেকে শেখা যেতে পারে। ... ...
সমন্বিত ইতালির দ্বিতীয় রাজা প্রথম উমবার্তো এবং তাঁর স্ত্রী রাণী মার্গারিটা নেপলস্ ভ্রমণে আসবেন বলে ঠিক হল ১৮৮৯ সালে। চারিদিকে হই হই লেগে গেল – থাকা ইত্যাদি তো ঠিক আছে, কিন্তু রাণী এখানে এসে খাবেন কি! তো ডাক গেল তখনকার নেপলসের বিখ্যাত পিৎজা বানানো শেফের কাছে – পিজারিয়া ব্র্যান্ডির রাফায়েলে এস্পোসিতো। তাঁকে বলা হল তুমি বাপু নানা রকম পিৎজা বানিয়ে রাজা রাণীকে পরিবেশন কর। আর গতানুগতিক জিনিস না বানিয়ে, মাথা ঘামিয়ে নতুন কিছু বানাও। রাফায়েলে এস্পোসিতো বানালেন বেশ কিছু রকমের পিৎজা - তিনি একটা পিৎজা বানালেন লার্ড, কাচ্চিয়াকাভাল্লো, এবং বেসিল দিয়ে, একটা বানালেন ছোট ছোট মাছ দিয়ে, আর একটা বানালেন ট্যামাটো, মোজারেল্লা এবং বেসিল সহযোগে। এই শেষের ডিসটি তখনো নেপলস্-এর বাজারে পরিচিত ছিল ‘পিৎজা আলা মোজারেল্লা’ নামে। এবং এই পিৎজা খেয়েই রাণী কুপোকাত – বিশাল ভালোবেসে ফেলে ডিক্লেয়ার করে দিলেন যে এটাই তাঁর সবথেকে প্রিয় পিৎজা। ... ...
বেশী বেড়ালেও বিপদ, আবার কম বেড়ালেও। অন্তত ভ্রমণ সংক্রান্ত কিছু মিথ বা অতিকথন বা ভ্রান্ত ধারণা গড়ে তুলতে। বেশী বেড়ানো মানেই বেশী জানা নয়, আর পুরোপুরি ঠিক জানা তো নয়ই। কিন্তু হয় কি বেশী বেড়ালে আমাদের মধ্যে অনেকসময় একটা ভ্রান্ত ধারনা চেপে বসে যে আমি যেটা জানি বা যার মুখোমুখি হয়েছি, সেটাই চরম সত্যি! এর বাইরে আর কিছুই হতে পারে না। আমার অভিজ্ঞতার বাইরেও যে অন্য কেউ অন্য ভাবে সমগ্র জিনিসটা দেখতে বা অনুভব করতে পারে, সেটা মানতেই চাই না আমরা – এতটাই সঙ্কীর্ণমনা এবং অধৈর্য্য হয়ে উঠি অনেক সময়। আর এই ব্যাপারগুলোই বেশীর ভাগ সময় জন্ম দেয় ‘মিথ’ এবং ভ্রান্ত ধরণার। এর কিছু কিছু ব্যাপার হয়ত ক্ষেত্র বিশেষে সত্যি, কিন্তু সেগুলোই একমাত্র সত্যি নয় বা চিরন্তন সত্য নয়। তেমন কিছু বিষয় নিয়েই ভাবলাম আজকে কিছু লিখি ... ...
সেদিন ক্রিস আমাকে ওয়ার্ডেন অফিসে ডেকে পাঠালে ঢুকে দেখলাম বাকি কথাবার্তা প্রায় শেষ, ক্রিস এবার ফেঁদেছে তার সেই বিখ্যাত প্রশ্ন নতুন বোর্ডারের সামনে – “ক্লজ নাম্বার ৮টা ঠিক বুঝে নিয়েছো তো?” বলাই বাহুল্য আমাদের প্রত্যেককে, মানে যারা এই বাড়িতে থাকতে এসেছিলাম, তাদের সকলকেই এই প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয়েছিল প্রথম দিন। সেই ক্লজ্টা ছিল এই মর্মে যে ওই বাড়িতে থাকাকালীন বিবাহ সম্পর্কহীন শারীরিক ইন্টু-মিন্টুতে জড়ানো যাবে না! এবার প্রশ্ন উঠতে পারে যে ক্রিস আমাকে ডেকে পাঠাতো কেন আর এমন অদ্ভূত ক্লজেই সই করতে হত কেন সেই বাড়িতে থাকতে হলে! এটা জানতে গেলে একটু হালকা ব্যাকগ্রাউন্ড জেনে নিতে হবে বাড়িটির সম্পর্কে। ... ...
আমি খুঁজে দেখার চেষ্টা করেছিলাম পৃথিবীর কোন দেশের টুরিষ্টদের সবচেয়ে বদনাম – কিন্তু সমস্যা হল এই র্যাঙ্কিং এর তো কোন নির্দিষ্ট নিয়ম নেই, আর তা ছাড়া নিজের দেশকে কে আর খারাপ বলতে চায়! তবুও দেখেছিলাম যে শিষ্টাচার বিহীন টুরিষ্ট কিছু কিছু দেশের নামের পুনরাবৃত্তি হয়েছে – যেমন ইংল্যান্ডের ছেলে ছোকরাদের। যারা ফুটবল নিয়ে মাথা ঘামান তাঁরা জানেন যে সেই ফুটবল ফলো করতে গিয়ে নানা দেশে ঘুরে এই ভাবে এরা হুজ্জুত বাধিয়ে বেড়ায়! এদের তো ‘ফুটবল হুলিগান’ ও বলা হয়। এছাড়া আছে রাশিয়ান টুরুষ্ট – এদের ব্যবহার নাকি খুব খারাপ – জার্মান টুরিষ্টদের নাম আছে, অষ্ট্রেলিয়ানদের নাম আছে তালিকায় – চাইনীজ টুরিষ্টরা তো আছেই - এবং বেশ কিছু তালিকায় ভারতীয় টুরিষ্টদের নামও আছে শিষ্টাচার মেনে চলে না বলে। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি। ... ...
আমাদের একান্নবর্তী পরিবারের পুজো বলে ঠাকুর দালানে পুজোর কাজে সাহায্য করার লোকের অভাব হয় না। পিসিমণি বা বড় দিদিরা ঠাকুর দালানে বসে ফল কাটা কুটি করে – আর ওপাশে কম বয়েসীরা ফুল ইত্যাদি দিয়ে মালা গাঁথে, চন্দন বাঁটে বা বেল গাছের ডাল থেকে সুন্দর করে নরম দেখে তিনটি করে বেলাপাতা গুলি সাজিতে সাজিয়ে রাখে। চন্দন দুই প্রকারেরই থাকে – শ্বেত এবং রক্ত চন্দন। আর বলাই বাহুল্য ঠাকুরের জিনিসে যারা হাত দেবে তাদের অবশ্যই স্নান করে কাচা জামা কাপড় পরে আসতে হবে। হাসি, ঠাট্টা, গল্প করতে করতে কাজ হয়। ছোট বেলায় এই দালানে খুব একটা বসে থাকার সময় থাকত না এই সময় – কিন্তু বড় হয়ে বিদেশ থেকে ফিরে গেলে এমন সময়টাই খুব সদব্যবহার করা যেত সবার সাথে ক্যাচ-আপ করার জন্য। ... ...
লৌহ স্তম্ভ কেন ক্ষইছে না তা খুঁজতে গেলে কি কি জিনিস টার্গেট করবে গবেষকরা? প্রথম ধারণা করা হবে যে আবহাওয়ার একটা ব্যাপারটা আছে। মানে যেখানে এই স্তম্ভ খাড়া ছিল আগে এবং এখন দিল্লিতে, সেখানে বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা কি স্তম্ভের জন্য ভালো ছিল? অর্থাৎ বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশী নেই – শুকনো বাতাস! যেই কারণে দীঘার হোটেলের বারান্দার গ্রীল কলকাতার হোটেলের গ্রীলের থেকে অনেক বেশী তাড়াতাড়ি ক্ষয়। দ্বিতীয়ত, সেই প্রায় ষোলশো বছর আগে যারা বানিয়েছিল ওই স্তম্ভ তারা কি ধাতুর সাথে অন্য কিছু স্পেশাল মিশিয়েছিল? তৃতীয়ত, ধাতুর সাথে বানাবার সময় কিছু না মেশালেও পরে কি স্তম্ভকে সুরক্ষা দেবার জন্য তাতে কিছু্র প্রলেপ বুলিয়েছিল? ইত্যাদি ইত্যাদি। ... ...
শত্রুপক্ষের ওরা আমাদের চারিদিক থেকে ঘিরে ধরেছিল – আমরা গিয়ে আশ্রয় নিলাম জঙ্গলের মধ্যে সেই বিস্তীর্ণ জলাভূমিতে। একটানা সারাদিন, এমনকি গোটা সপ্তাহ ধরেও এক গলা জলে দাঁড়িয়ে থাকা অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। আমাদের দলে ছিল একজন রেডিও অপারেটর মেয়ে যে মাত্র কয়েকমাস আগে মা হয়েছে। সেই বাচ্চার তখনো স্তন্যপান করার বয়স, কিন্তু ওদিকে মেয়েটির বুকে দুধ নেই – খেতেই পাচ্ছি না আমরা দিনের পর দিন তো কি করে বুকে দুধ আসবে! আর তাই দুধ না পেয়ে বাচ্চাটা মাঝে মাঝেই কেঁদে উঠছিল। কিন্তু তখনকার পরিস্থিতিতে বাচ্ছার কান্না ছিল আমাদের কাছে অত্যন্ত বিপদজনক – কারণ শত্রুপক্ষ যদি একবার কান্না শুনতে পেয়ে যায় তাহলে কেউই বাঁচব না আর – আমাদের তিরিশ জনের দলের একজনও নয়। আলোচনা করে নিজেদের মধ্যে এক সিদ্ধান্ত নেওয়া হল – গেলাম সেই মেয়েটির কাছে – তার দিকে তাকালাম – কিন্তু আমাদের মধ্যে কেউই মুখ ফুটে বলতে পারল না কমান্ডারের সিদ্ধান্তের কথা। কিন্তু মেয়েটি ততক্ষণে নিজেই বুঝতে পেরে গিয়েছিল – বাচ্চাটিকে যাতে করে বেঁধে সে বহন করছিল সেটা ধীরে ধীরে নামালো – ... ...
ডাঙ হায়াঙ নিরর্থ এক বিখ্যাত হিন্দু পুরোহিত ছিলেন সেই সময়কার – তিনি তানহা লট ছাড়াও বালিতে আরো বেশ কিছু মন্দির স্থাপন করেছিলেন তাঁর সেই তীর্থ যাত্রার সময় – যে যাত্রাপথে তিনি জাভা থেকে বালি দ্বীপে এসেছিলেন। বালিতে পোঁছবার পর নাকি নিরর্থ নিজের ভিতর থেকে ভগবানের নির্দেশ পেয়েছিলেন কোথায় কোথায় মন্দির স্থাপন করতে হবে – আর সেই নির্দেশ পালন করেই তিনি মন্দির স্থাপন করেন তানহা লট-তেও। ... ...