মালিক! মুখে অনেকটা হাসি এনে বলল, মালিক করে কখনও! আমাদের দেড় মাসের টাকা কিছুতেই দেবে না। একটা গোটা মাস আর দিন পনেরো কাজ করেছিলাম। শেষে অনেক ঝামেলা ঠামেলা করে খাওয়া দাওয়ার খরচ সব কেটে রেখে দিল। অনেক কম দিয়েছিল। আমাদের কয়জনেরটা যোগ দিলে প্রায় এক লাখের উপর টাকা মেরে দিল। বাসের ভাড়াও তো অনেক। বাস ভাড়া নিল এক লাখ পঁচাশি হাজার। কোথা থেকে জোগাড় করব অতো টাকা! সবার টাকা মিলিয়েও তো অত টাকা নেই। বাড়িতে সব ফোন করলাম। আমার বৌ ধার করে টাকা পাঠালো। এই উত্তম মণ্ডলের বৌ কানেরটা বন্দক দিয়ে টাকা পাঠালো। মধুর বাড়ি থেকে সুদে টাকা ধার নিল। সব ঠিকাদারের একাউন্টে দিল। সে আমাদের টাকা দিল। আমার বৌকে অবশ্য সুদ দিতে হয়নি। এমনিই টাকা ধার পেয়েছিল। কপাল ভালো বলেন দিদি! ... ...
ভোগান্তি হয়েছিল অবিদুল্লাহেরও। ওর চোখ টেনে কী যে দেখেছে, জামার উপর চক দিয়ে দাগ টেনে দিল। ওকে টেনে একদিকে নিয়ে গেল আরও কীসব পরীক্ষা করতে। এইসব প্রশ্ন, তত্ত্বতালাশ পেরিয়ে জার্মান কসাই, ইহুদি দর্জি, জাপানি সুসি কারিগর, নরওয়ের চাষি, পোলান্ডের সিগার কারখানার কর্মী সবাই নেমে গেল। তারা কেউ যাবে পেনসেলভেনিয়া, কেউ মিশিগান, কারো রাস্তা ভার্জিনিয়ার দিকে। রয়ে গেল শুধু বারো জন চিকনের ব্যাপারি। আর দুজন চিনা। চিনাদের ব্যাপারটা আরও গোলমেলে, চাইনিজ এক্সক্লুসান অ্যাক্টে ওদের এই দেশে ঢোকাই এখন মুশকিল। তার উপর ওদের কথাও কেউ সহজে বুঝতে পারে না। ... ...
২০১৪ সালের অক্টোবর নাগাদ তুরস্কে যখন যাই তখনও ইস্তাম্বুল বিমানবন্দর প্রচণ্ড বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠেনি। যদিও দক্ষিণ পূর্ব সীমায় অবস্থিত নিমরুত পাহাড় থেকে পাঁচ ছ ঘন্টার মধ্যে এসে পড়েছে আইসিস, সীমান্তে জোর যুদ্ধ চলছে। আমাদের শেষ পর্যন্ত আর নিমরুত অবধি যাওয়া হয়নি, যুদ্ধ কাঁটাতার টপকে এদিকে চলে আসতে পারে এই আশঙ্কায়। উষ্ণ প্রশ্রবণ আর চোখ ধাঁধানো পুরাতত্ত্বের পামুক্কালে থেকে দিনভর গাড়িতে মৌলানা জালালুদ্দীন রুমির স্মৃতিবিজড়িত কোনিয়া যাওয়ার পথে এক গ্রামে গাড়ি দাঁড়ালে হঠাৎ করেই চোখে পড়েছিলো পথের পাশে বইয়ের দোকান। সেখানে মোল্লা নাসিরুদ্দীন (তূর্কীতে নাসিরুদ্দীন হোজা) তাঁর প্রিয় গাধার পিঠে চেপে বইয়ের মলাটে হাজির। আকসাহির বলে যে ছোট শহরে তাঁর মৃত্যু হয় ও সমাধি, তার খুব কাছে এসে পড়েছি আমরা। নাসিরুদ্দীন এমন এক চরিত্র, যাঁর মধ্যে ইতিহাস ও কিংবদন্তী মিলেমিশে এমনভাবে জট পাকিয়ে আছে যে একটার থেকে অন্যটা আলাদা করা যায়্না। ... ...
রাস্তার ধারেই বাড়ি ছিল আমাদের। তখন গ্রামের কাঁচা রাস্তা। বর্ষায় জঘন্য কাদা। গরমে এই ধুলো। আর হেমন্তে সে মাখামাখি থাকত শিশিরে। একদিন একটা লোক, সঙ্গে চটপটে লোকের দশজনের একটা টিম, যারা ফিতে দিয়ে রাস্তা মাপছিল। যারা সরকারি রাস্তার জায়গা দখল করে বাড়ি করেছে, তাদের বাড়ি ভেঙে রাস্তা বের করে নেবে সরকার। আমাদের মাটির ঘরের অর্ধেকটা ভাঙা পড়বে। কানে পেনসিল গোঁজা লোকটা জানিয়ে দিল। দাদু বলল, একশ বছর আগের এই আমাদের মাটির ঘর। এখন এই তুমি দুদিনের ছোকরা এসে বলছ ভেঙে দেবে? ব্রিটিশ আমলের ঘর কি এখন ভাঙা যায়? সরকারি লোক গম্ভীর মুখে বলে, মাপে যা বেরিয়েছে, সেটা আমি কেবল জানিয়ে গেলুম। এবার প্রশাসন বুঝবে। ... ...
ভার্চুয়াল ক্লাসরুম বা আপিসঘরে দৃশ্যমানতা কিঞ্চিৎ উচ্চস্তরের, মানে পর্দার ক্যামেরার নজর ব্যক্তির উর্ধাঙ্গটুকুতেই সীমাবদ্ধ। ‘বিলো দ্য বেল্ট’ ইনফরমাল হলে সমস্যা নেই। বাঁকুড়ার গামছার সঙ্গে শার্ট-টাই-ব্লেজার পরে উচ্চপর্যায়ের মিটিং চলছে দেখলে অতএব ভিরমি খাওয়া নিষ্প্রয়োজন। মিটিং-ধারী দাঁত খিচিয়ে বলবেন, "তাতে কোন মহাভারতটা অশুদ্ধ হচ্ছে ,শুনি! আমি তো আর এই পোশাকে সমুদ্রসৈকতে সেলফি তুলতে যাচ্ছিনা।" ক্যামেরা চালু করা যে ক্লাসে জরুরি নয়, তার ড্রেস কোডে আবার রংচটা, ফুটোফাটা ভেন্টিলেটেড গেঞ্জিও নাকি চলতে পারে। তা বলে পরীক্ষার দিনেও? দইয়ের ফোঁটা অবসোলিট হয় হোক, পাটভাঙা জামাটুকু তো অন্তত পরবে! ... ...
"বিদ্যাসাগর একাকী বিচ্ছিন্ন নিঃসঙ্গ ট্র্যাজিক নায়ক। আমার পছন্দের মহাপুরুষ। যাঁর কথায় কাজে ফাঁক নেই, ফাঁকি নেই। কিন্তু উপরের বইটি আমার সযত্নে লালিত এতদিনের বিশ্বাসের গোড়া ধরে টান দিয়েছে। বিভিন্ন তথ্য ও বিশ্লেষণ দিয়ে দেখাতে চাইছে যে উপরের অনেকগুলো আখ্যান ভক্তজনের তৈরি মিথ, অতিকথন বা প্রেক্ষিত থেকে আলাদা করে টেনে মানে করা, চটজলদি সিদ্ধান্ত নেয়া।" - দেবোত্তম চক্রবর্তীর গ্রন্থ “বিদ্যাসাগর: নির্মাণ-বিনির্মাণ-পুনর্নির্মাণের আখ্যান” বইটির পাঠপ্রতিক্রিয়া, লিখছেন রঞ্জন রায়।। ... ...
সেই সকালে, বাবুদা যে দিন দু’টাকা চেয়ে আমাকে বিড়ম্বনায় ফেলে দিয়েছিলেন, আমার হাতে সে দিন অনেক টাকা৷ কিন্তু আমার নয়, স্কুলে এনসিসি-র অনুষ্ঠানের জন্য সহপাঠীদের চাঁদার টাকা৷ রবিবার সকালে এনসিসি স্যারের হাতে তুলে দেওয়ার কথা৷ সাত-পাঁচ না ভেবে, একটু যেন দয়াপরবশ হয়ে স্কুলে ঢোকার মুখে, চার ধারে কেউ কিছু বুঝতে না-পারে, এমন ভাবে বাবুদার হাতে পাঁচ টাকার একটা নোট গুঁজে দিয়ে হাঁটা দিলাম৷ ... ...
p>অনলাইন ক্লাস ইস্কুলের বিকল্প হতে পারবে না কোনওভাবেই - তা প্রথম থেকে জানা ছিল। কিন্তু অনলাইন ক্লাস যতটা সীমাবদ্ধ হয়ে থাকল গত পনেরো ষোলো মাসে - ততটা সীমাবদ্ধ হয়ে যাবারও বোধহয় কথা ছিল না। বিশেষ করে যত ঘরে স্মার্ট ফোন আছে, ইন্টারনেট ডেটা প্যাক যতটা সস্তা হয়েছে আগের চেয়ে তার হিসাব নিকাশ করলে মনেই হয় যে অনলাইন ক্লাস যতটা সীমাবদ্ধ হয়ে থেকেছে, তার চেয়ে প্রসারিত হতে পারত। কেন অনলাইন ক্লাস আরো খানিকটা প্রসারিত হতে পারল না সেই আলোচনা একটা স্বতন্ত্র বিষয়। সেখানে স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেটের ডেটা প্যাক, কানেকশান ও গতির সহজলভ্যতা এসবের প্রশ্ন আছে, ছোটদের মনঃসংযোগের প্রশ্ন আছে, শিক্ষাদপ্তরের পরিকল্পনার খামতি নিয়েও প্রশ্ন যে একেবারেই নেই তাও নয়। কেন এতদিনেও বিভিন্ন শ্রেণির বিষয়ভিত্তিক ক্লাস মেটেরিয়াল এক জায়গায় রাখার একটা ওয়েব সাইট ও অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ তৈরি করে ফেলা গেল না, যেখানে ছাত্রছাত্রীরা তাদের সময় সুযোগ মত ঢুকতে পারত আর দেখে নিতে পারত তাদের পাঠ্য বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনও ভিডিও, ছবি, চার্ট, ম্যাপ, গ্রাফ, লেখা ইত্যাদি তা বোঝা দুষ্কর। ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্ন রাখার আর উত্তর পাওয়ার জায়গাও সেখানে রাখা যেতে পারত, ওয়েব পোর্টালটিকে ইন্টার্যাকটিভ করে তোলার অনেক সুযোগ তো প্রযুক্তি করেই দিয়েছে। তবুও সেই সুযোগকে ব্যবহার করে নেবার দিকে শিক্ষা দপ্তর এগোলেন না। এই অতিমারীকে মোকাবিলা করে এই সময়ে শিক্ষাকে কিছুটা হলেও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজটা যে এক একটি বিদ্যালয় ও তার শিক্ষক শিক্ষিকাদের বিচ্ছিন্ন উদ্যোগের বিষয় নয়, সেই উদ্যোগ যতই আন্তরিক হোক না কেন শেষ পর্যন্ত একটি কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা ও পরিকাঠামো এই বিপুল সমস্যার মোকাবিলায় জরুরি - তা শিক্ষা দপ্তর বুঝে উঠতে পারেন নি বলেই মনে হয়। এই সমস্ত নানা ধরনের বিষয় ছাড়াও অন ক্লাইস ক্লাস সংক্রান্ত সমস্যাটা অনেকটাই অর্থনৈতিক। ... ...
জলধর বলে একদিন, সবই তো হচ্ছে জয়িদি, কিন্তু টীচারের কী হবে ! স্কুলে এখন এতোগুলো বাচ্চার জন্যে রান্না করতে হয় রোজ, তাছাড়া গেস্ট হাউজের ঘরগুলোও তো প্রায়ই ভর্তি থাকে আজকাল। বান্দোয়ান থেকে নিমাই নামের একজনকে নিয়ে এসেছে জলধর, সে রঘুনাথকে সাহায্য করে। তাছাড়াও লকি-শুকি। এমনকী প্রতুলবাবুও এগিয়ে আসেন সাহায্য করতে, কাজেই অসুবিধে হয় না। পুকুরপাড়ে লাউ কেন, এখন কুমড়ো আর বেগুনও হচ্ছে, গাছপালা যা লাগানো হয়েছিলো সবই বাড়ছে তরতর কোরে ! গেটের উল্টো দিকে লকিশুকিদের জমিতে তৈরি গোয়ালে এখন আরও কয়েকটা গোরু, এমনকী মোষও দুটো! সবই হচ্ছে জয়িদি, স্কুলের টীচারের কী হবে? ... ...
বিষয় নির্বাচন, ঘটনাবহুল দ্বন্দ্ব-সংঘাতপূর্ণ সেই বিষয়কে পর্বে পর্বে বিন্যস্ত করা, চরিত্রনির্মাণ, তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক এবং সংঘাতের চিত্রণ, বিশেষত নারীচরিত্রের রহস্য, সৌন্দর্য, সংকীর্ণতা এবং মহত্বের অসাধারণ উন্মোচন, নদী-জল ভিত্তিক জীবনের ছবিকে তার নিজস্বতায় প্রতিষ্ঠিত করা এবং সর্বোপরি জীবনকে জয় করা এবং তাকে প্রতিষ্ঠার জন্য জোটবদ্ধ লড়াইয়ের অনিবার্যতা - এ সবই অসামান্য স্বাভাবিকতায় প্রতিষ্ঠিত এই উপন্যাসে। লেখকের মুন্সিয়ানার মূলে আছে এই নিপীড়িত, নিঃস্ব মানুষগুলোকে খুব কাছ থেকে দেখে পরম মমতা এবং ভালবাসায় তাদের আত্মীয় করে নেওয়া। নইলে এই উপন্যাস রচনা করা সম্ভব হত না। বিশেষত ওপার বাংলার মানুষের কথ্য ভাষার এমন নিপুণ ব্যবহার গভীর বন্ধুত্ব ছাড়া কিছুতেই সম্ভব নয়। গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়ার উপলব্ধ সত্য যে কত খাঁটি তা অসিত কর্মকারের এই গভীর এবং নিবিড় কর্মে ছত্রে ছত্রে প্রতিফলিত। একেবারেই ত্রুটি নেই,এ কথা আমি বলব না। রাজনীতি, দল এই প্রসঙ্গগুলো এসেছে তবে তাৎপর্যপূর্ণভাবে নয়। সে যাই হোক, অসিত কর্মকার তাঁর যে সৃষ্টি আমাদের উপহার দিলেন তার জন্য আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ থাকব। ... ...
তবে শেষপাতে বলতেই হয়, কলকাতার পথঘাটের আনাচে কানাচে যতটা স্বচ্ছন্দে বিহার করেছেন হার্ট, লোক বা সংস্কৃতি নিয়ে তাঁর ধারণা ততটাই অস্বচ্ছ, অস্পষ্ট এবং নেড়াতথ্যের ভারে জর্জরিত। কাহিনি উঠে আসে না সেই থেকে; বড়জোর কিছু কিছু টুকরো ছবি দেখতে পাওয়া যায় বড়জোর। যেমন জানা যায়, ইংরেজদের আসারও আগে পর্তুগিজদের শুরু করা ক্রীতদাস প্রথা কিভাবে কোম্পানির শাসনকালেও বহাল তবিয়তে ছিল, ১৭৮৯ সন অব্দি। দাসপ্রথার সঙ্গে জড়িত বর্বরতার প্রতীক বা অমানবিকতার ইতিহাস, কোনোকিছুই মান্য হয় নি সেকালে। দিব্যি চলেছে দৈনিকে দাস কেনাবেচার, বা পালিয়ে গেলে সেই কারণে দেওয়া বিজ্ঞাপন। কেউ দাস কিনলে কাছারিতে রেজিস্ট্রেশন করাতে হতো সেই দাসের। তারপর নিংড়ানো শুরু। ... ...
ম্যানগ্রোভ যেভাবে বেঁচে ওঠে বেড়ে ওঠে, দুই মেরুপ্রদেশ বাদ দিলে পৃথিবীর সর্বত্রই যেখানে নোনাজল আছে, খাঁড়ি এলাকা আছে সেখানে ম্যানগ্রোভ আছে। ম্যানগ্রোভ নিজেই সেই ব্যবস্থা করে নিয়েছে, নদীর যদি একটুকরো চর পড়ে থাকে বা নদীবাঁধ যদি কাঁচা হয় তাহলে। যে প্রয়োজনীয় ম্যানগ্রোভগুলো বাঁধকে সুরক্ষা দিতে পারে, মাটিকে ভাঙনের হাত থেকে বাঁচাতে পারে, সেগুলো ম্যানগ্রোভ নিজেই করে নিতে পারে। তারপরেও গাছ লাগানোর প্রশ্ন আসছে? সেটার কারণ হচ্ছে ওই গাছগুলো আমরা কেটে ফেলি। আঞ্চলিকভাবে হোক আমাদের সচেতনতার অভাবে হোক আমরা গাছগুলো কেটে ফেলি ব'লে--- আবার সেখানে গাছ লাগানোর প্রশ্ন আসছে। ... ...
টোটো উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষজনের সঙ্গে ভুটানের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। প্রতি মঙ্গলবার টোটোপাড়ায় হাট বসে। দোকানিরা পসরা সাজিয়ে সার সার দিয়ে বসে পড়েন টোটোপাড়ার গৌরবহীন হাটে। অনতিদূরের ভুটান থেকেও ক্রেতারা হাটে আসেন। রোজগারের হাতছানিতে টোটোরাও নিত্যদিন ছুটে যান ভুটানে। কেউ যান এলাচ ছাড়ানোর কাজে, কেউ বা সুপারি ছাড়ানোর কাজে, কেউ কেউ আবার অন্যান্য দিনমজুরের কাজের খোঁজে। ভুটান থেকে দিনে মাথাপিছু ৩০০ টাকার মতো আয় হয়। এই পরিপূরক নির্ভরশীলতার মাধ্যমেই নিবিড় সখ্য গড়ে উঠেছে টোটো আদিবাসী জনজাতি এবং সংলগ্ন ভুটানি মানুষজনের মধ্যে। ... ...
"বিদ্যাসাগর একাকী বিচ্ছিন্ন নিঃসঙ্গ ট্র্যাজিক নায়ক। আমার পছন্দের মহাপুরুষ। যাঁর কথায় কাজে ফাঁক নেই, ফাঁকি নেই। কিন্তু উপরের বইটি আমার সযত্নে লালিত এতদিনের বিশ্বাসের গোড়া ধরে টান দিয়েছে। বিভিন্ন তথ্য ও বিশ্লেষণ দিয়ে দেখাতে চাইছে যে উপরের অনেকগুলো আখ্যান ভক্তজনের তৈরি মিথ, অতিকথন বা প্রেক্ষিত থেকে আলাদা করে টেনে মানে করা, চটজলদি সিদ্ধান্ত নেয়া।" - দেবোত্তম চক্রবর্তীর গ্রন্থ “বিদ্যাসাগর: নির্মাণ-বিনির্মাণ-পুনর্নির্মাণের আখ্যান” বইটির পাঠপ্রতিক্রিয়া, লিখছেন রঞ্জন রায়।। ... ...
সৌমেন বৈরাগীর গলায় উত্তেজনা। অসিত মাইতির কথার মাঝেই বলতে শুরু করে দিয়েছে। আমি ছিলাম দিদি। আমি… আমি… একদম ওই স্পটে গেছিলাম। আমি শুধু একলা না, এই সুন্দরবনের প্রায় একশ দেড়শ লোক তখন ওই বাগানের রাস্তায়। আমাদের আগেই ক’জন বেড় দিয়েছিল ওদের। আমি ছিলাম কয়েকজনের পিছনে। একজনে দেখতে পেয়ে গেছিল জঙ্গলের মধ্যে কি একটা বড় বস্তার মতো টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে ক্রেনের ড্রাইভার আর মালিকের লোক। দেখেই সেই লোকের সন্দেহ হয়। তাইতো চিৎকার দিয়ে ডাকে। আমরাও সেই ছুট মারি। ওখানে জমা হয়ে আমরাও বেড় দিয়ে দাঁড়াই। বের হতে দেইনি তক্ষুণি ওইখান থেকে। দেখি জানেন বস্তার মধ্যে একটা লাশ! জানেন সেইটা আমাদের এই বালিরই লোক। এই বিরাজনগরেরই। এই পাশের পাড়ারই মানুষ। অভিলাশা মণ্ডল। ওই মালিকের লোক ড্রাইভার অভিলাষার লাশ বস্তায় পুড়ে জঙ্গল দিয়ে গায়েব করে দিচ্ছিল। ... ...
তার দৌড় ছিল খিদিরপুরের জাহাজঘাটা অবধি। একটা বড় বাক্স ভরে গেলেই একদিন নৌকায় করে হুগলি নদী পেরিয়ে পৌঁছে যাও কলিঙ্গা বাজার। খিদিরপুর। কলিন লেন, টার লেনে জাহাজে মাল চড়ানোর জন্য বসে আছে চিকনদারি কাজের ব্যবসাদার। মাল পাঠাবে নিউ অরলিন, চার্লেস্তান, সাভানা আর কীসব খটমটো নামের সব জায়গায়। আলেফ সেসব হদিশ জানত না তখন। কে বিক্রি করে কাকে তাও না। আলেফের চাচা মোকসাদ আলি আগে এই কাজ করত, তারপরে চলে গেল ওই দেশে। তার কাছেই শুনেছে সে নাকি বসেছে এখন নিউ ইয়র্কের ডকে। মাল পৌঁছালে চলে যায় তার কাছে কি তার মত আরও সব লোকজন যে যেখানে আছে। চাচা যে এরপর তাকেও সঙ্গে নিতে চাইবে তখনো খবর ছিল না আলেফের। ... ...
সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সেই উনচল্লিশটি বিধান বিস্তৃত হল। জেফ্রি আমাকে বোঝালেন সেটি খুবই সহজ ছিল। এই ধরো বিজলি/ইলেক্ট্রিসিটি। সুইচ টিপলে আলো বা অগ্নির উৎপাদন হল। প্রাথমিক উনচল্লিশটি বিধানে আগুন জ্বালানো মানা। তাই এটির বারণ। মোজেসের আমলে মোটর গাড়ি, বিজলি বাতি, হাওয়াই জাহাজ, স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেট, ফ্রিজ বা ওয়াশিং মেশিন ছিল না। সাবাথের রীতি নীতি অনুসারে বাতিল হল গাড়ি চালানো বা চড়া, বিজলি বাতি জ্বালানো বা নেভানো টেলিভিশন দেখা ফোন করা বা ধরা। বই পড়তে পারেন অবশ্যই। তবে আইপ্যাড বা স্মার্ট ফোনে নয়। তার সুইচ অন করাটা একটা কাজ! ... ...
“কোথায় যান কাজ করতে? উত্তরে বললেন, লেবারি করতে যাই। সেকি এখানে নাকি! সে তো বিদেশ! রাজ্যের বর্ডার পেরিয়ে পেরিয়ে ওরা যখন পশ্চিমবঙ্গ থেকে দিল্লী মুম্বাই কেরালা ত্রিপুরা লেবার হয়ে চলে যায় সেই দুরের রাজ্যটা ওদের কথায় ‘বিদেশ’। “ - পশ্চিমবঙ্গের নানা জেলা থেকে দেশ বিদেশে লেবার হয়ে যাওয়া আসা আটকে পড়া বাঁচা মরার কথা নিয়েই শুরু হচ্ছে ধারাবাহিক ‘লেবারের বিদেশ যাত্রা’। ... ...
কখনো কখনো আমার চিন্তাদের দেখতে পাই আমি। রোজ না। ওদের মেজাজ-মর্জি হলে তবেই। ব্যপারটা কোনো নিয়ম মেনে চলেনা। মেজাজ-মর্জি নিয়ম মেনে চলার ধার কখনোই ধারে নাকি? যখন দেখতে পাই তখন অদ্ভুত এক জগতে ঢুকে পড়তে হয়। আমি দেখি একজন চিন্তা ঠিক ধূপের ধোঁয়ার মত বইছে। অমনি নীলচে-গাঢ় সাদা রং। একটা পাতার আকৃতি নেয় যেন। পাতার কিনারার রেখা ছোটছোট অক্ষর দিয়ে আঁকা। কোন ভাষা তা পড়তে পারিনা আমি। কোনো চিন্তা সাইফার হুইলের মত । সমকেন্দ্রিক অনেকগুলো চাকতি। তামাটে চকচকে ধাতব রং। একেকটা চাকতিতে একেক রকম চিহ্ন আঁকা। কোনোটা সময়ের দিকে ঘোরে, কোনোটা তার উল্টোদিকে। ... ...
লোহিতসাগর বড় চঞ্চল হয়ে উঠেছিল। ফিনিসিয় নাবিক, টায়ারের রাজা সকলের সাহায্যে রাজা সলোমনের বাণিজ্যের কী দাপট! শেবার তো সবই আছে পণ্য আছে, নৌকা আছে, পণ্যের বাজার আছে। কিন্তু এখন বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে খোদ সলোমন। শেবার বণিকেরা দূর দূর দেশে আগের মত সহজে চলে যেতে পারছে না। না জলে, না স্থলে। তাদের মশলা তাদের রজন সুগন্ধি, নিজেদের দেশে নয়, দূর দূর দেশে এসব পণ্যের প্রবল চাহিদা! নিজেদের দেশে কে কিনবে এসব? তাদের স্বচ্ছন্দ বাণিজ্যে এক অদৃশ্য প্রাচীর তুলে দিয়েছেন সলোমন! দেশের সম্পদ সমৃদ্ধি বাড়বে কী করে যদি বাণিজ্য ঠিকমত না হয়? ... ...