মার্চ ও এপ্রিল পরপর দু মাসে দুজন স্বনামধন্য সমাজ ও মানবাধিকার কর্মী দীর্ঘ কারাবাসের নরক-যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। গত ৭ই মার্চ অধ্যাপক জি এন সাইবাবা প্রায় এক দশকের কারাবাসের পর নাগপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে মুক্তি পান। এর প্রায় এক মাস বাদে ভীমা কোরেগাঁও (বিকে) মামলায় ধৃত নারী ও দলিত অধিকার কর্মী, অধ্যাপক সোমা সেন জামিন পান। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এই দুজনের মুক্তি অবশ্যই স্বস্তিদায়ক, কিন্তু যা ঢের বেশি অস্বস্তিকর তা হচ্ছে তাঁদের গ্রেপ্তার, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁদের বিচার বা বিচার না-হওয়া পুরো বিচারব্যবস্থার স্বরূপকে নগ্ন করে দিয়েছে। সাইবাবার কাহিনি বহু চর্চিত, তবুও সেটাকে আমরা ফিরে দেখব এবং কোন কারণে অধ্যাপক সোমা সেন সহ ভীমা কোরেগাঁও মামলায় ধৃত অন্যান্যদের এতো বছর কারাবাস করতে হল, এবং কয়েকজনকে এখনো করতে হচ্ছে, সেটা বোঝার চেষ্টা করব। ... ...
ভোটের ঠিক আগে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি কত টাকার ইলেকটোরাল বন্ড কিনেছে এ নিয়ে কয়েকদিন আগেও সর্বস্তরের (প্রিন্ট এবং ইলেকট্রোনিক) সংবাদমাধ্যমে বেশ কিছুদিন ধরে খবর হচ্ছিল। ইলেকটোরাল বন্ড এবং ওষুধ কোম্পানির নিবিড় যোগ নিয়ে অনেক লেখা হয়েছে। শিক্ষিত জনতার একটি বড় অংশই, আশা করা যায়, এ বিষয়ে অবহিত। শুধু কিছু তথ্য প্রাসঙ্গিক হবার কারণে যোগ করা যায়। এবং, ভেবে দেখতে হবে, এর সাথে আমাদের দেশের ওষুধনীতি, নির্বাচনী রাজনীতি ও জনস্বাস্থ্যের সংযোগ আছে। ... ... হেটেরো গ্রুপসের মতো একই পরম্পরায় ইন্টাস, লুপিন, ম্যানকাইন্ড, মাইক্রোল্যাবস, টরেন্ট ফার্মা, জাইডাস ফার্মা, গ্লেনমার্ক, সিপলা ইত্যাদি কোম্পানির অফিসে প্রথমে দুর্নীতি ও আর্থিক অনিয়মের জন্য হানা দেওয়া হয় এবং এরপরে সবাই ইলেকটোরাল বন্ড কেনে কোটি কোটি টাকার। ওষুধের দামের ওপরে এর প্রভাব সহজেই অনুময়ে। দান-খয়রাতি করার জন্য এরা টাকা খরচ করেনা। ওষুধের মার্কেটিং (যার মধ্যে ডাক্তারকে দেওয়া উপঢৌকনও আছে) ইত্যাদির জন্য কোটি কোটি খরচ করে। না করলে হয়তো ওষুধের দাম সাধারণ মানুষের আরেকটু নাগালের মধ্যে থাকতে পারত। ... ...
অতএব পয়লা বৈশাখের ভোরবেলায় আমরা দুই মূর্তিমান ধানবাদ স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে দুটি লাল সুতোর বিড়ি ধরালাম। তারপর সমস্বরে বললাম "একলা বৈশাখ' ... ...
নির্বাচনী বন্ড নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাল্টে দিতে পারে আসন্ন নির্বাচনের গতিপথ। যদি এ সংক্রান্ত সব প্রশ্ন ও তার জবাব দেশের মানুষের কাছে পৌঁছয়, তবেই এমনটা হবে। মানুষ যদি বুঝতে পারে যে, রাজনীতিতে কালো টাকা দূর করার জন্য নয়, বরং কালো টাকা সাদা করার জন্য এই পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রতি পদে কেন সরকার নির্বাচনী বন্ডের পরিসংখ্যান আড়াল করার চেষ্টা করেছে তা জনগণ যদি জানতে পারে। দিবালোকে এই ডাকাতির পুরো সত্য প্রকাশ পেলে এই নির্বাচনী বন্ডের এই ব্যাপক দুর্নীতির তুলনায় বোফর্স বা ২জি-এর মতো দুর্নীতির ঘটনাগুলো ছেলের হাতের মোয়ার মত তুচ্ছ মনে হবে। অনুসন্ধিৎসু সাংবাদিকরা বোফর্সে ৬৪কোটি টাকা ঘুষের অভিযোগ করেছিলেন, যা সরকার কখনওই স্বীকার করেনি এবং আদালতে প্রমাণিত হয়নি। ... ...
দিল্লির ঐতিহাসিক রামলীলা ময়দানে ৩১ মার্চ, রবিবার "লোকতন্ত্র বাঁচাও" ব্যানারে ইন্ডিয়া জোটের সমাবেশে অভূতপূর্ব দাবিপত্র পেশ করা ভারতের গণতন্ত্রের সামনে একটি বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এই সমাবেশে উপস্থিত দেশের সমস্ত বিরোধী দলের নেতারা সর্বসম্মতিক্রমে একটি পাঁচ দফা দাবিপত্র প্রদান করেন যা আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে যে অনিয়ম চলছে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সরাসরি এই নির্বাচনে "ম্যাচ ফিক্সিং" এর অভিযোগ করেছেন এবং বলেছেন, এই ফিক্সিং বিজেপি কিছু বড় কর্পোরেটদের সহায়তায় করছে যাতে তারা নিজেদের ইচ্ছে মতো সংবিধান পরিবর্তন করতে পারে। ... ...
তিনি কিভাবে জানবেন একই ঘরে অবস্থানকারী পরিবারের সদস্যদের কাছে সম্পূর্ণ আলাদা ভিডিও আসে? কিছুতেই বুঝতে পারেন না কিভাবে একটি বাচ্চা যে মানসিক অবসাদে ভুগছে তার কাছে অজস্র ভিডিও নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে আসতে থাকে, আস্তে আস্তে যা আত্মহত্যায় পথে ঠেলে দেয়? একটা ক্লিক, একটা সার্চের থেকেই তৈরী হতে থাকে এই অ্যালগরিদিমের জাল। আর ধীরে ধীরে গ্রাস করে ফেলে অপরিণত মস্তিস্ক। কিছুক্ষণ একটা বিষয় দেখলে বা সার্চ করলে আকৃষ্ট করার উপাদান দিয়ে সময় বাড়ানো- আর বিজ্ঞাপন থেকে আরো আরো রেভিনিউ। ... ...
আমার একটা চেষ্টা থাকে, আমার পদ্ধতিতে কিছু বায়ো অর্গানিক বস্তু নষ্ট হলেও, কিছু যাতে অ্যামিনো অ্যাসিড তৈরি হয়। কোন কোন মাঠে অন্য পদ্ধতি অবলম্বন করি। কিন্তু মূল উদ্দেশ্য হল নানা ধরনের ডেটা জেনারেট করা। কোথাও কোন ডেটা নাই, পাঁচবিঘে জমিতে কতটা চুনোমাছ হতে পারে, কেউ বলতে পারে না। পুঁটি, মৈয়ে মাছে কতটা পুষ্টি কী আছে, তার কোন হিসেবও নেই কোথাও। গুণীন চ্যাটার্জি, মৃত্তিকা বিজ্ঞানী, কিছু কাজ করেছিলেন, কেঁচোর চাষ করেছিলেন, জমির উপকারে লাগবে বলে, ধান মাঠে মাছের চাষ কিছু করেছিলেন। ... ...
৫ই অগাস্ট, ২০১৯। ভারত রাষ্ট্র এবং জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের কাছে নিঃসন্দেহে একটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ দিন। ভারতের মাননীয় রাষ্ট্রপতির আদেশনামা বলে বিগত ৭০ বছর ধরে জম্মু-কাশ্মীরে লাগু থাকা ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদের ঐতিহাসিক বিলুপ্তি। শুধু তাই নয়, ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের একটি অঙ্গরাজ্য হিসেবে জম্মু-কাশ্মীরের অস্তিত্বকে বিলোপ করে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভাজন। আশ্চর্যজনক হলেও সেইসঙ্গে একথাও ধ্রুব সত্য যে, তা ঘটানো হয়েছিল কাশ্মীরকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন ও অবরুদ্ধ করে এবং কাশ্মীরী জনতাকে সম্পূর্ণভাবে অন্ধকারে রেখেই। সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদের এই অবলুপ্তির পক্ষে-বিপক্ষে তথ্যপ্রমাণ ও যুক্তিতর্ক নিয়ে কাঁটাছেঁড়ার আগে জম্মু-কাশ্মীরের ঐতিহাসিক অবস্থান এবং জম্মু-কাশ্মীরে ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০ প্রবর্তনের সূত্রপাত বিষয়ক কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা প্রবাহের সাথে আলাপচারিতা অবশ্য প্রয়োজন। ... ...
অসাম্য, হিংসা, জাতি-লিঙ্গ দ্বেষ রাষ্ট্রীয় বিচারব্যবস্থায় কম নেই। বস্তুত রাষ্ট্রীয় ন্যায় প্রতিষ্ঠাই করা হয় ‘পুলিশ’ নামক হিংসা সংগঠনটির মাধ্যমে। রাষ্ট্রের বিচার ব্যায়বহুল, নিম্নতর পুলিশ থেকে উচ্চতম প্রধান বিচারপতি সকল পেশাজীবীর জন্য রাষ্ট্র যা ব্যয় করে তা সাধারণ মানুষের কাছে অকল্পনীয়। প্রশান্ত ভূষণের এক টাকা জরিমানার পিছনে দেশের মানুষের কয়েক লক্ষটাকা নিশ্চিতভাবে খরচ হয়েছে আদালত-পদ্ধতিতে। ... ...
প্রথমে অবশ্য খবরগুলোই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। হঠাৎ মনে হয়েছিল যে এটা কি কোনো রাজনৈতিক চক্রান্ত? সামনে লোকসভা নির্বাচন, কিছুদিন আগে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেটের সরকারি অফিসারেরা মার খেয়ে এসেছেন সেই জায়গা থেকে এবং সেই অঞ্চলের রাজনৈতিক নেতা শেখ শাজাহান ফেরার, এই ঘটনাপ্রবাহ তো জানা ছিল। কিন্তু নেতা যে আসলে নেতা নন, মাফিয়া, সেই বিষয়ে আমাদের বিস্তারিত জানা ছিল না। মাফিয়ার সম্পত্তি তো আর দ্বীপের মধ্যে আকাশ থেকে পড়েনা, মাটি থেকে সেখানে গজিয়ে ওঠে না টাকার গাছ। একটু একটু করে মানুষকে শোষণ করে ফুলেফেঁপে ওঠে ক্ষমতার ধ্বজাধারী। সম্পত্তি সেখানে ধ্রুবক, শুধু তার মেরুকরণ ঘটে। ... ...
অস্বাভাবিক দামি জিনিসের উপরে সাধারণ মানুষের একটা স্বভাবসিদ্ধ বৈরিতা কাজ করে। এ অস্বাভাবিক কিছু নয়, আমরা আমাদের দৈনিক জীবনেই বুঝতে পারি। যা আমাদের সাধ্যাতীত তাকে দূরে রেখে জীবনের কঠোর পথে তৈলনিষিক্ত করার নাম স্বাভাবিক জীবন৷ যা সাধ্যাতীত তাকে দূরে রাখবার জন্যেই এই মানসিক দমন প্রক্রিয়া, ডিফেন্স মেকানিজম, আমাদের শিখতেই হয়েছে। মিউজিয়ামে রাখা আকবরের সোনার গ্লাস দেখে আমাদের চিত্ত চাঞ্চল্য হয় না, কারন সেটা সরকারের প্রপার্টি, কিন্তু পাশের বাড়ির হরিপদ যদি অডি গাড়ি কেনে তবে আমরা মনে মনে চটে উঠি। তাই একটা ক্যানভাসে এলোমেলো কটা দাগ, যা হয়তো আমার পাঁচ বছরের বাচ্চাও করে দিত, তাকে কেউ কোটি কোটি টাকা দিয়ে কিনছে, এমনটা ভাবলে একধরণের বিতৃষ্ণা জন্মানো কিছু অস্বাভাবিক নয়। ... ...
এগলি ওগলি পেরিয়ে পৌঁছলাম তাঁর সমাধির কাছে। হাওয়া দোল দেওয়া নিম গাছের ডাল , তার নিচে শুয়ে আছেন একা বিসমিল্লা খান।২০০৬ সালে ২১ আগস্ট হার্ট আ্যটাকে মারা যান । জন্ম ২১ মার্চ ১৯১৬। নব্বই বছরের দীর্ঘ জীবন তাঁর সানাইয়ের সাথে। যে সানাইকে তিনি বিয়ে বাড়ির বাদ্যযন্ত্রের তকমা থেকে বের করে বিশ্বের দরবারে তার মাহাত্ম্য প্রতিষ্ঠা করেছেন। আবার অটোতে চড়ে বসলাম, অবশেষে পৌঁছলাম ডালমন্ডি, উল্টোদিক রাস্তা পেরিয়ে সেই মসজিদ, পেছনের রাস্তা গেছে ওঁর বাড়ির সামনে। সরু গলির আরও সরু হয়ে যাওয়া ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সর্পিল চলনের মত। হারিয়ে যেতে যেতে মনে হয় সেই গলি আর সানাইয়ের সুরের ঘোরের এক ভুলভুলাইয়া যা থেকে কোনোদিনও বেরতে পারব না। খুব ঘিন্জি আর অন্ধকার গলি। কী নেই সেখানে, জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ সব চলেছে। ... ...
ভারতের মানুষের আত্মসম্মানবোধ হারিয়ে গিয়েছে। তাঁরা দেখতে পাচ্ছেন এ দেশে ধর্মের কদর রুটির চেয়ে বেশি। এ দেশে যারা প্রকৃতই আমাদের খেতে দিচ্ছেন, তাঁদের উপর নেমে আসছে অত্যাচার। এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের পেশা কী?এ প্রশ্নের উত্তরে পুরোহিত, রাজনীতিবিদ, সেনা, বিজ্ঞানী, শ্রমিক নয়, আসবে কৃষকদের কথা। কৃষকরাই আমাদের মুখে অন্ন তুলে দিচ্ছেন। আর তাঁরাই এ দেশের রাজধানীতে ব্রাত্য। এ জন্য এ দেশের শাসকমহলে কোনও লজ্জা তো নেই, বরং শাসনের অহঙ্কার রয়েছে। ... ...
রাজ্য মহিলা কমিশন থেকে প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়েছে খোঁজ নিতে। সেই প্রতিনিধি দলও পুলিশের সুরে সুর মিলিয়ে ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে গ্রামে ঘুরে ঘুরেও নারী নির্যাতনের কোনো অভিযোগই তারা নাকি পায়নি। আর অন্যদিকে মিডিয়ার সামনে মুখ খোলার অপরাধে এক অভিযোগকারী মহিলার মুখে গরম লোহার ছেঁকা দেওয়া হয়েছে, আক্রমণের মুখে পড়েছে তার শিশুসন্তান, সমাজবিরোধীদের হাতে মার খেয়ে তার স্বামী ঘরছাড়া। সন্দেশখালির নিপীড়িত মহিলারা এতটাই সন্ত্রস্ত যে আগে যারা সরাসরি মিডিয়ার সামনে মুখ খুলেছিলেন, আজ গামছার আড়ালে পরিচয় লুকাতে হচ্ছে পাছে পরিচয় জেনে আবার গুন্ডাবাহিনী বাড়িতে হানা দেয়। অন্যায্য ভাবে পুরো এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে, ইন্টারনেট বন্ধ করে সন্দেশখালিকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল, হাইকোর্টের দাবড়ানি খেয়ে সেটা খারিজ করে আবার অঞ্চল ভিত্তিক ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। ... ...
খেয়াল করলে বুঝবো, “caste” তথা জাত বিভাজন অক্ষত রইল। একে ছাত্রদের সংখ্যানুপাতে বিচার করে বার্ষিক রিপোর্টে পেশও করা হল। কিন্তু গ্রামীণ বা চলে-আসা ভারতীয় সমাজের ধরনে বিষয়টিকে উচ্চ-নীচ সামাজিক প্রভেদ হিসেবে আর বিচার করা হচ্ছেনা। এক নতুন “সেকুলার সোশ্যাল হায়েরার্কি” তৈরি হল। এর অভ্যন্তরে জাত বিষয়টি বহাল তবিয়তে বেঁচে রইল, কিন্তু একটি রোপিত আধুনিকতা বা “এনগ্র্যাফটেড মডার্নিটি”র চাদর একে পরিয়ে দেওয়া হল। মেডিক্যাল কলেজ সহ হিন্দু কলেজ বা হুগলী মহসিন কলেজের মতো উচ্চশিক্ষার যে নামী প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি হল তার অঘোষিত বাতাবরণ রচিত হল যে জাত আর প্রধান পরিচয় নয়। কিন্তু শিক্ষাঙ্গনের বাইরে প্রশস্ত আঙ্গিনায় কাঠামোটি অটুট রইল। ... ...
তাও এখনো বলা হয়নি রঙ কোথা থেকে আসে। আমি তো রঙ রাখিনি কোত্থাও। শুধু শামিয়ানা চোঁয়ানো রঙ রোদ্দুর যা নিয়ে এসেছিল। ওরাই থাকবে শুধু। দালানকোঠা পাবো আর কোথায়। শুধু তো হেঁটে যাওয়া ভাষাহীন। শব্দ থেকে চুঁইয়ে আসা অদ্ভুত টান যেন এক। ... ...
যাঁরা ব্রহ্মচারীর মতো জীবন যাপন করেন, তাঁদের উপাধি হয় ব্রহ্মচারী। একটি কম সমর্থিত মত হল, যে কেশবচন্দ্র ভারতী শ্রীচৈতন্যদেবকে বৈষ্ণবধর্মে দীক্ষা দেন। তাঁর বড়দাদা গোপালচন্দ্র ভারতী দীক্ষার পরে নিজেদের মুখোপাধ্যায় উপাধি ত্যাগ করে ব্রহ্মচারী উপাধি গ্রহণ করেন। এদের নবম বা দশম বংশধর হচ্ছেন উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী। এক অনন্যসাধারণ মেধার অধিকারী এই মানুষটির গ্র্যাজুয়েশন ১৮৯৩ সালে হুগলি মহসিন কলেজ থেকে – অংক এবং কেমিস্ট্রি নিয়ে ডাবল অনার্স, Thysetes মেডেল পান। এরপরে ১৮৯৪ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে কেমিস্ট্রিতে এমএ পাশ, সাথে গ্রিফিথ মেমোরিয়াল প্রাইজ। একই সময়ে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। এলএমএস ডিগ্রি পান ১৮৯৯ সালে। ১৯০০ সালে এমবি ডিগ্রি – মেডিসিন এবং সার্জারি দু’টিতেই প্রথম হয়ে গুডিভ এবং ম্যাকলিওডস মেডেল পান। ১৯০২ সালে এমডি পাশ করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এরপরে ১৯০৪ সালে পিএইচডি অর্জন। বিষয় ছিল “Studies on Haemolysis”। তাঁর পিএইচডির থিসিসের সংক্ষিপ্ত এবং উন্নত চেহারার নতুন গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় বায়োকেমিক্যাল জার্নাল-এ ১৯০৯ সালে “Some Observations on the Haemolysis of Blood by Hyposmotic and Hyperosmotic Solutions of Sodium Chloride” শিরোনামে। এছাড়াও ক্যালকাটা স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিন থেকে Mente মেডেল এবং এশিয়াটিক সোসাইটির উইলিয়াম জোন্স মেডেল লাভ করেন। পরবর্তী সময়ে প্রায় সম্পূর্ণ জীবন কেটেছে গবেষণার নির্ভুল লক্ষ্যে। প্রায় ১৫০টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে নেচার, ল্যান্সেট, ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল, বায়োকেমিক্যাল জার্নাল, ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ বা ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল গেজেট-এর মতো জার্নালগুলোতে। ... ...
আইনি মর্যাদার চেয়ে বড় প্রশ্ন সাংবিধানিক মর্যাদার। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী (বা সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত কোনও ব্যক্তি) কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের পৌরহিত্য করতে পারেন? আমাদের সংবিধানের বিধান স্পষ্ট: সাংবিধানিক কর্মকর্তারা ব্যক্তিগত ভাবে যেমন খুশি ধর্মীয় বিশ্বাস বা অনুশীলনে অংশগ্রহণ করতে পারেন, কিন্তু একজন পদাধিকারী হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে তা করতে বাধা দেয়। সংবিধান এও বলে যে সরকারকে সমস্ত প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম থেকে সমান দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, যে কোনও একটি ধর্মের প্রতি ঝোঁক সাংবিধানিক মর্যাদার লঙ্ঘন। ২২ জানুয়ারির আচার-অনুষ্ঠানে রাষ্ট্র ও ধর্মের মধ্যে বিভাজন রেখা ঝাপসা হয়ে গেছে। কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই দেশের অন্যান্য ধর্মের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে হিন্দু ধর্মকে। ... ...