এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • অন্য উড়ান

    Binary
    অন্যান্য | ০৩ মার্চ ২০১০ | ৮৮৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Binary | 66.94.87.210 | ০৩ মার্চ ২০১০ ০৯:০৬445047
  • বিয়ে করবে হিয়া। সবাই জেনে গেছে। হিয়া-ই বলে বেড়িয়েছে, চবর-চবর করে। একটা ইউনিভার্সিটি,একটা মাঝারি চওড়া নদী, নদীর উপরে গোটা দুয়েক সেতু, চারটে হাইওয়ে, পাঁচটা মাঝারি রাস্তা, অলিগলি ছিমছাম বাড়ী। পশ্চীমের এই ছোট্ট শহরে হিয়া এসেছে, এই ছয়-সাত মাস হল। কারিগরি-তে স্নাতকোত্তর চলছে ওর। ইউনিভার্সিটিতে। ছোট্ট শহরে বঙ্গভাষী হাতে গোনা। সবাই সব্বার ঘরের লোক। সব্বাই যেমন হয়। দাদা-বৌদি, কাকু-কাকিমা। তো, সব্বাইকে বলতে বাকি রাখেনি ও। কানে হেড ফোন গোঁজা বন্ধুকে চেঁচিয়ে-চেঁচিয়ে, দাদা-বৌদির বাড়ীতে উইক-এন্ডের সালমনমাছেরঝোল-মুসুরডাল-চিকেনকারির ডিনারে গিয়ে, বৌদিকে রান্নাঘরে, তড়বড় করে পরিবেশনে সাহায্য করতে করতে, তিরিশবছর এই ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করা বাঙ্গালী কাকু আর কাকিমাকে। সবাই জেনে গেছে হিয়ার বিয়ে হবে। অনর্গল কথা বলে হিয়া। রাত্তির এগারোটা পজ্জন্ত ল্যাবে থাকে। ছয়-সাত মাসেই পশ্চিমী ছাত্রী জীবন আর পশ্চিমী বন্ধুদের সাথে মিশেল পা। উইক এন্ডে ক্যাম্পি-ংএ যায়। বা ব্রাইট লেকে মাছ ধরতে। শুক্কুর বারে মাঝে মাঝে ডিস্কোতে। ফুরফুরে খুসি থাকে রোজ রোজ। ফেসবুকে দুশো বন্ধু ওর, অর্কুটে একশো চল্লিশ।

    অনিরুদ্ধ, হিয়ার হবু বর। মানে ওদের নিজদের-ই ঠিক করা। অনেক আগে থেকেই। এখন ওরা ঠিক করেছে, বিয়েটা করেই ফেলবে, এই আর কি। অনিরুদ্ধ, চাকরি করে। হিয়ার দেশের সীমানা পেরিয়ে, পাশের দেশে। আরেকটু বড়, আরেকটু ব্যস্ত, আরেকটু গোলমেলে আরেকটা পশ্চীমি শহরে। বারো ঘন্টা অফিশের কাজ করে, সময়ে-অসময়ে ফোন করে হিয়াকে, ব্ল্যাকবেরী থেকে। গল্পে-গল্পে-ই ওরা ঠিক করেছে, 'লেটস গেট ম্যারেড'। অনিরুদ্ধ-ও যায়, উইকএন্ডে, ডিস্কোতে, ফেসবুকে ওর বন্ধু একশো আশি।

    ***

    আজ ফোনে সুমনা ধরেছে হিয়াকে ,
    -- আরে, তুই সব্বাই-কে বলেছিস, আর আমি বাদ ?
    -- ধ্যাত, বাদ হবে কেন, তোমায় তো ফোন কল্লাম, তুমি ধল্লে না।
    -- বাজে বকিস না,
    -- শোনো, আমি বাজে বকি না, তোমায় বলব না এটা কি করে ভাবলে ?
    ...
    ...

    -- হ্যাঁ, তুই বলে যা
    -- কি বলব ? সেদিন তো বল্লাম, অনি, বস্টনে-এ আছে, এইচ ওয়ানে, তিন বছর।
    -- তোরা কি করবি ? মানে তোর মাস্টার্স ?
    -- না, মানে সে সব কিছু ভাবিনি।
    -- সেকি ?
    -- সেকি আবার কি ? এখনো তো আমি এখানে, অনি ওখানে, সেরকমি চলবে, মানে মাটার্স শেষ কত্তে হলে।
    -- উ:
    -- উ: কেন ?
    -- এমনি করে থাকতে পারবি ?
    -- দ্যাখো বৌদি, অনি, খুব সেনসেটিভ আর কেয়ারিং, এসব ও জানে, আর এম্নি কোন অন্যরকম কিছু হচ্ছে নাতো !!!
    -- তবু,
    -- ...
    -- যাকগে, কঁগ্র্যা !!
    -- থ্যাঙ্কু, থ্যাঙ্কু

    ***

    ডিসেম্বরে বিয়ে হয় ওদের। মেহেন্দি, শাড়ি গয়না সিন্দুরের পুঁটলি হওয়া হিয়া, চশমা চোখে-উল্টানো চুলের ধুতি পড়া, চালাক-চালাক মুখে, বোকা-বোকা চন্দন পড়া অনিরুদ্ধ, বাবা-মা-শশুর-শাশুরি,ননদ-নন্দাই, নিতবর বিচ্ছু ভাইপো, লাল-নীল তত্তথালা, রজনীগন্ধার ফুল সজ্জার খাট, বৌভাতের সিংহাসন, সাজানো গাড়ি -র ছবিতে হিয়া-র ফেসবুক ভর্তি হয়। তিন সপ্তাহ সিমলা ঘুরে, কলকাতা থেকে, একই উড়ানে ইউরোপ আসে, তারপর আলাদা আলাদা বিমানে নিজের নিজের শহরে, হিয়া ওর ইউনিভার্সিটি আর অনিরুদ্ধ কাজের শহরে। সময় বদলায় না। কেবল, হিয়া আজকাল মাছ ধরতে কম যায়, অনিরুদ্ধ-ও পাবে যায় কম। অবসর গুলোয় একটু বেশি করে সময় যাচ্ছে দুজনের ব্ল্যাকবেরী-তে। কাজ, ক্লাশ আর দুই দেশের সীমানা পেরোনোর ভীসা-র দেরীতে কেটে যায় আরো সাত-আট মাস, দুজনে থেকে যায় দুই শহরে-ই। হিয়া আজকাল কথা বলে একটু কম, অনিরুদ্ধ অপিশে একটু কম প্রোডাক্টিভ। জুলাইতে অবশ্য ওরা দুই সপ্তাহ ছুটি পায়, ট্রাভেলএজেন্সি-র প্যাকেজে ঘুরতে যায় মিশর, সেই সিমলার পর আবার, একসাথে। 'হলিডে ইন' -এর শীততাপনিয়ন্ত্রিত ঘরে কম্বলের ওমের নীচে, সাত-আট মাসের পুরোনো শরীর আবার চিনতে চিনতে, হিয়া ভাবে, 'মাস্টার্স শেষ হতে আর কত দেরী ? অনি-র দেশে ও'র কাজের সুযোগ কিরকম ?'

    আরো বারো মাস বাদে, হিয়া এখোনো সেই ইউনিভার্সিটিতে-ই। তকমাটা বদলে গেছে, মাস্টার্স থেকে পিএইচডি-র ছাত্রী-তে। অনিরুদ্ধ, এখনো, সেই অন্য শহরে, ব্ল্যাকবেরী হাতে। দুজনেই একটু-একটু অচেনা হয়ে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে। ব্ল্যাকবেরীর কথা গুলো আজকাল পুরোটাই অভিমান মেশানো। ফেসবুকে আর যায় না হিয়া। মেহেন্দি শাড়ীর ছবি গুলো মুছে দিয়েছে কবেই ।

    ***

    হিয়ার বন্ধু জুলিয়ানা, আদতে আইরিস। তিন পুরুষের ইন্মিগ্রান্ট। জুলিয়ানা-ও পিএইচডি-র ছাত্রী। দুজনার একই অধ্যাপক। প্রায় একসাথেই ল্যাবে থাকে ওরা। জুলিয়ানা। লম্বা, রোগা, ঝুঁটি বাঁধা চুল। শান্ত চোখ। আগে বিয়ে করেছিলো একবার, টেঁকেনি। এখন কোনো ছেলে বন্ধু-টন্ধু নেই। একলা থাকে। সময়-অসময়ে সাহায্য চাইলে মুক্ত মনা। হিয়ার থেকে বয়সে কিছু বড়ই হবে। মেধাবী।

    সেই শিক্ষা বছরে, বসন্তে, কিছু কারিগরি শিক্ষার ক্লাশ হয়, মজুরদের জন্য। ফিটার, মাইনার বা অন্যান্য কাজে যারা আছে, কাছে দুরে, কারখানায় বা খনিতে কাজ করে তাদের জন্য। পরিভাষায় হ্যান্ডস-অন-ক্রাস-কোর্স। হিয়াকে দুচারটে এরকম ক্লাশ নিতে হয়। জুলিয়ানা-কেও। এখানেই জুলিয়ানা-র সাথে আলাপ হয় গ্রেগরি-র। ফস্ফেট মাইনার। নর্থ ক্যারোলিনা। হা হা হাসি। ভরপেট বীয়ার। ঝুপো গোঁপ। ঝাঁকড়া চুল। তিনদিনের মাথায় জুলিয়ানা, গ্রগরির হোটেলে থেকে যায় রাতে। পরের দিনে এসে হিয়া-র কাছে গল্প করে গ্রগরির প্যাশনের কথা। নেশা ধরা চোখে । তার্পরে প্রতিদিন। দশ সপ্তাহের ক্লাশের শেষে, গ্রেগরি ফিরে যায়। নর্থ ক্যারোলিনা। জুলিয়ানা, যায় এক সপ্তাহ পরে। নর্থ ক্যারোলিনা। গ্রেগরির কাছে। একেবারে। পিএইচডির কাজ বন্ধ করে দেয়। একেবারে।

    ***
    জুলিয়ানা চলে যাওয়ার দিন রাতে বিছানায় শুয়ে, খুব, খুব, খুব কাঁদে হিয়া। খুব রাগ হয় ওর, নিজের ভারতীয় রক্তের ওপর।

    ------
    ** এই লেখা পুরোটাই কাল্পনিক, কারো সাথে মিল থাকলে তা দৈবাত
  • a | 208.240.243.170 | ০৩ মার্চ ২০১০ ১১:০৭445058
  • একঘর। বাইনারিদা আরো লেখেননা কেন!!
  • M | 59.93.241.203 | ০৩ মার্চ ২০১০ ১৬:৫৫445067
  • বাহ!
  • rimi | 168.26.215.135 | ০৩ মার্চ ২০১০ ২১:৪০445068
  • আমার জীবনের সঙ্গে তো প্রচুর মিল আছে। পাশাপাশি দুটো দেশের বদলে একটা ইন্ডিয়া আর আরেকটা এই হতচ্ছাড়া আমেরিকা, ব্ল্যাকবেরীর বদলে ইয়াহু চ্যাট, মাছ ধরার বদলে সাইকেল চড়া, সিমলার জায়গায় রাবাংলা, আর মিশরের জায়গায় হংকং বসিয়ে নিলেই একেবারে হুবহু আমার জীবন। :-)))

    দু:খের বিষয় সেই পুরাতন যুগে অর্কুট কিম্বা ফেসবুক, এমনকি গুরুও ছিল না। তবে বাংলালাইভ ছিল।
  • ranjan roy | 122.168.219.211 | ০৩ মার্চ ২০১০ ২২:৩২445069
  • বাইনারি,
    আপনার অসাধারণ দেখার চোখ, আর , হিন্দি করে বললে, সংবেদনশীল মন। আপনার সব কটি লেখায় সেই আভাস পাই। আরো লিখুন ।
  • Lama | 117.194.236.136 | ০৩ মার্চ ২০১০ ২২:৪৫445070
  • আরো চাই
  • Nina | 66.240.33.36 | ০৪ মার্চ ২০১০ ০৪:০২445071
  • খুব ভাল লাগল। আগেও যেখানেই পড়েছি মন টেনেছে । মজার কথা আমার এক খুব প্রিয় বন্ধুর (সেও দারুণ লেখে) লেখার সঙ্গে মিল মনে হওয়াতে একবার তাকে উচ্ছসিত হয়ে জানাতে সে বল্ল---বাইনারি--নারে আমি না :((
    যাইহোক, বাইনারি আরও লিখুন । ভারি সুন্দর লেখেন আপনি।
  • kaatakutu | 69.137.86.240 | ০৪ মার্চ ২০১০ ০৮:৩২445072
  • খুব ভালো লাগলো আপনার লেখা পড়ে। ছোট্টো অথচ সংবেদনশীললেখা।ভারী চমৎকার।
  • SS | 128.248.169.110 | ০৪ মার্চ ২০১০ ০৯:০৪445073
  • ভালো লাগল.... প্রত্যেকবারের মতোই।
    এর পরে আরেকবার পড়ে নিলাম 'আয়না সবুজ পরবাস' আর 'এই শহরতলি...'
  • tania | 99.51.219.52 | ০৪ মার্চ ২০১০ ০৯:৩৬445048
  • ছুঁয়ে গেল।
  • shrabani | 124.124.86.102 | ০৪ মার্চ ২০১০ ১২:৩০445049
  • খুব ভালো হয়েছে, কিন্তু ওড়া কি শেষ?
  • shrabani | 124.124.244.109 | ০৫ মার্চ ২০১০ ১১:৩৫445050
  • *************
    ভর দুপুরে শনশন করে গরম হাওয়ার হলকা বইছে। খালি পিচের রাস্তার উপর দিয়ে শোঁ শোঁ দৌড়চ্ছে রাজদূত। সামনে রডের উপর দুদিকে দুই পা ঝুলিয়ে বসে। বেশী নড়াচড়া করতে নেই, চালাতে অসুবিধে হবে। ঘাড়ের কাছে নি:শ্বাস ক্রমশ ভারী হতে থাকে, বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যায় যেন। বাবা বোধহয় পারছেনা এই গরমে তাকে নিয়ে এতটা রাস্তা সাইকেল চালাতে। হাঁটাপথে বাড়ী কত কাছে পড়ে, তারা সবাই রোজ আসাযাওয়া করে। আজ ঘুরপথে যাচ্ছে, অনেকটা দুর।

    সকাল থেকেই জানত বাবা ইস্কুলে যাবে আজকে। হেডমাস্টার চিঠি লিখে পাঠিয়েছিলেন। জানলেও যখন দুর থেকে অফিসঘরের বারান্দায় বাবাকে দেখল মাস্টারমশাইয়ের সাথে কথা বলতে তখন কেমন অদ্ভুত লেগেছিল। এমনিই হয় যখন নিজেদের পুজোমন্ডপে বা কোথাও বেড়াতে গিয়ে কোনো স্কুলের পরিচিত বন্ধু বা মাটারদের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। আসলে ওর কাছে ইস্কুল আর বাড়ী দুটো আলাদা আলাদা জগৎ। একটার মধ্যে কখনো আরেকটা চলে এলে কেমন মেলাতে পারেনা!

    স্কলারশিপের টাকা এসেছে স্কুলে, প্রথম মাসের। দেড়শ টাকা অনেক টাকা, ক্লাস ফাইভের ছোট্ট মেয়ের হাতে দেবেনা ওরা স্কুল থেকে। তাই বাড়ী থেকে বড় কাউকে আসতে বলে পাঠিয়েছিল। আজ শনিবার, স্কুলে হাফ ছুটি। বাবা আগে আগে অফিস থেকে বেরিয়ে স্কুলে এসেছে। হেডমাস্টারের ঘরে ওদের ডেকে বসাল শিবনাথ মাস্টার। বাবাকে সবাই মিলে কত ভাল ভাল কথা বলল, ন্যাশনাল স্কলারশিপ, যাতা কথা!
    একটু লজ্জা লজ্জা মুখ করে ওদের কথামত কাগজ পত্রে সই করল, ক্যাশিয়ার বাবু গুণে গুণে টাকা দিলে বাবাকে। বাবার মুখটা কি হাসি হাসি, খুব জোরে জোরে কথা বলছিল সবার সাথে। সবাই চুপ করে শুনছিল বাবার কথা আর ঘাড় নাড়াচ্ছিল। ও শুধু চেয়ারের পিছনে দাঁড়িয়ে উঁকি মেরে একবার বাবার মুখের দিকে আর একবার অন্যদের দিকে দেখছিল। কি সুন্দরই না লাগে বাবাকে, অন্যরকম, সবার থেকে আলাদা! কোঁকড়া কাঁচা পাকা চুলে ঘেরা ফরসা মুখ,চোখে মোটা কালো ফ্রেমের চশমা, সাদা ধবধবে ধুতি আর পাঞ্জাবি।

  • shrabani | 124.124.244.109 | ০৫ মার্চ ২০১০ ১১:৩৯445051
  • সেই পাঞ্জাবি এখন ঘামে জেবড়ে শরীরে জড়িয়ে গেছে। না দেখে না ছুঁয়েও ও বুঝতে পারে বাবা কুলকুলিয়ে ঘেমে যাচ্ছে। এই গরম বাতাসে কোথাও এক চিলতে ঠান্ডার আভাস নেই। মনে হয় বাবাকে বলে থামাও, একটু কোনো পুকুরধার দেখে গাছের ছায়ায় জিরিয়ে নিই, বেলা পড়লে আবার যাব। কিন্তু বলতে পারেনা। তার বাবার বলে কত শক্তি! কষ্টটা ধরা পড়ে গেছে জেনে যদি বাবার খারাপ লাগে?
    অসহায়ের মত বসে থাকে ছোট দুটো হাতে হ্যান্ডেলের মাঝখান শক্ত করে ধরে। আরও কত দূর কে জানে!
    সোজা বাড়ী যাওয়া হবেনা। রাজপুরে কালো ময়রার দোকানে মিষ্টির অর্ডার দেওয়া আছে। রাজভোগ ঠাকুরের শীতলের জন্যে, রসগোল্লা বাড়ি বাড়ি বিলোনোর জন্যে। একটু দুরে একটা কাঠগোলা দেখা গেল। রাজপুর এসে পড়ল, একটু শান্তি।

    কালোর দোকানে থামতে হবে মিষ্টি নেওয়ার জন্য, খানিকটা জিরোনো হবে যা হোক। বাজার, বাসস্ট্যান্ড পেরিয়ে ওদের বাড়ী যাবার রাস্তায় ঢুকে পড়ল ওরা। সামনেই কালেক্টরের অফিসের পাশে কালোর দোকান। ঝাঁপটা অর্ধেক নামানো। সাইকেল টা থামাতেই সে লাফ দিয়ে নামল। বাবা একপাশে সাইকেলটাকে দাঁড় করিয়ে বাইরের বেঞ্চে বসে পড়ল। পকেট থেকে সাদা রুমাল বার করে মুখ গলা ঘাড় ভাল করে মুছতে লাগল। রোদের তেজটা একটুস কম যেন। পাশের ছাইগাদায় একটা শুকনো ঘিয়ে নেড়িকুত্তা ঘুমোচ্ছিল, ওদের আওয়াজে উঠে পড়ে একটু দুরে গিয়ে কেঁউ কেঁউ করতে লাগল।

    সে মাথা নীচু করে দৌড়ে ঢুকে গেল দোকানের ভিতরে। বুড়ো কালো ময়রা একদিকে একটা মোড়ার ওপর বসে ভাঙা ডাঁটির চশমা চোখে দিয়ে ছেঁড়া চটি বই পড়ছিল। আর একদিকে তেল চটচটে কালচে সবুজ মেঝেতে গামছা পেতে দোকানের কর্মচারী ঘুমোচ্ছিল। একপাশে বড় বড় গামলায় কাগজ চাপা দেওয়া রসের মিষ্টি রাখা। কাঁচের কেসের ভেতর থরে থরে দানাদার, গজা, মাখা সন্দেশ, চিনির গুজিয়া। বাইরে এক ঝাঁক মাছি বনবন করে পাক খাচ্ছে আর মাঝে মাঝে এক আধটা গোঁত্তা মেরে কাঁচ দিয়ে ভেতরে ঢুকতে গিয়ে পড়ে যাচ্ছে।

    ওর পায়ের আওয়াজ শুনে কালো মুখ তুলে ঘোলাটে চোখে ঠান্ডা দৃষ্টিতে তাকাল, "এসে গেছ তোমরা, বাবু কই?" কালোর গলা শুনে বাবা বাইরে থেকে হাঁক দিল। সে এবার বাইরে বেরিয়ে বাবার পাশে বসল। বেলা পড়ে এসেছে, এখনও কি গরম। কাঠের বেঞ্চি যেন জ্বলন্ত উনুনের কাঠের মত তপ্ত। ময়রার দোকানের আশপাশ থেকে পচা ছানা কাটানো জলের গন্ধ বাতাসে।
    দুটো মাটির হাঁড়ি নিয়ে এল কালো। মুখ দুটো শালপাতায় মোড়া, তার ওপরে সুতলি দিয়ে বেঁধে রডে ঝোলানোর জন্যে হ্যান্ডেল করে দিয়েছে। বাবা সামনের রাস্তার ধারের টিপকল থেকে হাত ধুয়ে এসে হাঁড়ি দুটো হাতে নিয়ে যত্ন করে সাইকেলের দুদিকে ঝোলাল। বুক পকেট থেকে টাকা বার করে ময়রাকে দাম দিল। ওর খুব জল তেষ্টা পাচ্ছিল। কিন্তু রাস্তার কলে ওরা জল খায়না, বাবার বারণ আছে। বললে শুনবে "এক্ষুনি বাড়ী পৌঁছে যাবে, এখন আর বাইরে জল খেতে হবেনা।"
  • shrabani | 124.124.244.109 | ০৫ মার্চ ২০১০ ১১:৪২445052
  • বাবা সাইকেলটা নিয়ে হাঁটতে শুরু করল পিছন পিছন সে। এবার আর ওকে সাইকেলে উঠতে বললনা। ওরা একটু আস্তে আস্তে হাঁটছিল, সাবধানে। একে মাটির হাঁড়ি তায় রসের মিষ্টি। রাজপুর ছাড়িয়ে এসে ওদের গ্রামের চৌহদ্দি তে ঢুকে বাবা জিজ্ঞেস করল, "কিরে হাঁটতে পারছিস, না সাইকেলে চড়বি?" সে ঘাড় নাড়ায়, হাঁটতে কষ্ট হচ্ছেনা গরমটাও কম লাগছে।

    বাড়ী ঢুকতে ঢুকতে বিকেল হয়ে গেল। মা দুয়ারে চুল বাঁধতে বসেছিল। জেঠী দিদির চুল বাঁধছিল। ওরা পৌঁছতেই সাড়া পড়ে গেল। বাবাকে ঠাকুরঘরে মিষ্টিগুলো রাখতে বলে মা খিড়কী ঘাটে গা ধুতে গেল। এসে কাপড় ছেড়ে মন্দিরে মিষ্টি নিয়ে যাবে। ঠাকুরের শীতল দেখানো হলে তবে মিষ্টি খাওয়া ও বিলোনো।বাবা মিষ্টিগুলো ভেতরে রেখে এসে দুয়ারে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ল চোখ বন্ধ করে। দরদর করে ঘামছে। জেঠি তাড়াতাড়ি ঘরের ভেতর কুঁজো থেকে এক ঘটি জল নিয়ে এল। দিদি আগেই চালের বাতা থেকে হাতপাখাটা টেনে নিয়ে পাখা করছিল বাবাকে।
    ওর দিকে কেউ দেখছিলনা। কেউ কোনো কথাও বলছিলনা। ওর সাদা নীল টিউনিকটা গরমে ঘামে নোংরা, জুতোতে মোরামের ধুলো, চোখের কাজল ধ্যাবড়ানো। ওদের আসতে দেখে জেঠু মন্দিরের আড্ডা ছেড়ে কখন ঘরে ঢুকেছে। আস্তে আস্তে বাবার পাশে বসে বাবার হাতটা তুলে নিল। মৃদু স্বরে "ডাক্তারদা কে ডাকব একবার? প্রেশারটা বাড়ল নাকি রে?" বাবা চোখ বন্ধ অবস্থাতেই হাত নাড়ল।

    কান্না পাচ্ছিল খুব। সেও ঘেমে চান করে গেছে, ভীষণ জল তেষ্টা পেয়েছে। জুতো মোজা খোলা হয়নি। কিন্তু সেদিকে তার খেয়াল নেই। বাবার চোখ বন্ধ কেন, কিছু বলেনা কেন? বাবা কি মরে যাবে?
    মা ঢুকল ভিজে কাপড়ে। ঢুকে জেঠুকে দেখেই গামছা দিয়ে ঘোমটা টেনে বাইরে চলে গেল। জেঠি অবস্থাটা বুঝে এদিক ওদিক তাকিয়ে দড়ি থেকে একটা কাপড় নিয়ে ওর হাতে দিল। "মাকে দিয়ে আয়"। বাইরে মাকে কাপড় দিতে গিয়ে ও হাউহাউ করে কেঁদে ফেলল। মা কাপড়টা গায়ে কোনো রকমে জড়িয়ে ওর হাত ধরে বাড়ির ভেতরে ঢুকল। এতক্ষণে সবার চোখ ওর দিকে।
    "কি হয়েছে রে, ও পাগলি কাঁদছিস কেন? আজ তো আনন্দের দিন, কাঁদিস কেন?"
    বাবা এখনো শুয়ে চোখে হাত চাপা দিয়ে, জেঠু একটু ঠান্ডা জল মাথায় দিয়েছে। কোঁকড়ানো চুলগুলো ভেজা ভেজা লাগছে। কালো মোটা ফ্রেমের চশমাটা খুলে পাশে রাখা আছে। দৃশ্যটা দেখে ও আবার ডুকরে উঠল। "বাবা মরে যাচ্ছে যে"।

    এবার আর অন্য কেউ না, বাবা নিজে উঠে পড়ল ধড়পড় করে। মেয়েকে জড়িয়ে ধরল।
    -"আরে না, তোর বাবা কেন মরতে যাবে? তুই না আমার সোনার মেয়ে। ভালো মেয়েদের বাবারা কক্ষনো মরেনা। আমি কোনোদিন মরব না। কোনোদিনও না।"

    আ: কি শান্তি, কি মজা! চোখ মুছে লাফাতে লাফাতে গিয়ে জামা কাপড় ছেড়ে দুধ মুড়ি খেতে বসল। আজ পড়ার ছুটি,কাল রবিবারে সকালে বেশী করে পড়ে নেবে।
    সন্ধ্যেবেলায় একটা থালায় মিষ্টি নিয়ে সবার বাড়ী বাড়ী দিদির সাথে। সব বাড়িতে চারটে করে রসগোল্লা। যেসব বাড়িতে একটু বেশী লোক সেসব বাড়িতে বুঝে ছটা বা আটটা। লাফিয়ে লাফিয়ে যায় এবাড়ী ওবাড়ী, বাড়িতে তাদের জন্য রাজভোগ রাখা আছে, দুধরুটির সঙ্গে খাবে।

  • shrabani | 124.124.244.109 | ০৫ মার্চ ২০১০ ১১:৪৭445053
  • **************************
    হোস্টেলের সামনের রাস্তার দুদিকের কালভার্ট সদ্য সাদা কালোয় পেইন্ট করা হয়েছে রাস্তার জেব্রা ক্রসিংয়ের মত। চারদিকে ফুলের গন্ধে ম ম করছে। রাস্তার দুপাশের কৃষ্ণচূড়া আর রাধাচূড়ায় মিলে লাল হলুদে ভরিয়ে দিয়েছে চারধার। পড়ন্ত বিকেলের হাওয়ার হাল্কা উষ্ণতা আসন্ন গ্রীষ্মের কথা মনে করাচ্ছে মাঝে মাঝে। ক্লাস শেষে বিকেলে ওদের রোজকার আড্ডা জমে এই কালভার্টের ওপর। মূল টাউনশিপ থেকে দুরে একটু উঁচুতে জঙ্গলঘেরা ওদের হোস্টেল ও সেন্টার। পিছন দিকে ছোট্ট পাহাড়, নীচ দিয়ে নালা বয়ে যাচ্ছে, গাছপালা ফুলপাখি সব মিলে ছবির মত চারধার।

    এই বিকেলে এখনও কেউ নেই, আসর ফাঁকা। অন্যমনস্ক ও একা। আনমনে একটা ঘাসের শীষ ছিঁড়ে দাঁতে চেপে পাহাড়ের দিকে ডুবন্ত সুর্যের দিকে চোখ রাখে। ভাবনায় কাছে দুরের একটা রাত। অচেনা চোখের দৃষ্টিতে বাস্তব দেখা থেকে থমকে আছে ও। খেলাটা বোধহয় একটু বেশী সাহসী হয়ে যাচ্ছে।

    অনেক সময় ও বুঝতেও পারেনা ঠিক কোথায় টানতে হয় দাঁড়ি, কোথা থেকে ফিরতে হয়। সুনন্দকে মনে পড়ে। মিতুনের বয়ফ্রেন্ড। মিতুন, ওর কলেজ হোস্টেলের রুমমেট। আর্মির স্মার্টনেস আষ্টেপৃষ্ঠে জড়ানো সুনন্দর। ও এলে পুরো হোস্টেল উহ আহ করত। মাঝেমাঝে দুজনের মাঝখানে একটু স্পেস রাখতেই বোধকরি এক আধটা মিটিংয়ে মিতুন ওকেও সাথে নিত। তারপর?

    কি যেন গানটা গুনগুন করত মিতুন? ঠিক মনে নেই, কি গান কার গান! "আই স মাই লাভার ওয়াকিং অ্যাওয়ে উইথ মাই বেস্ট ফ্রেন্ড"।
    শেষ দিক গুলোতে কি নাই করত সুনন্দ। কোথা থেকে ভাল ভাল বই জোগাড় করছে, সাবজেক্টের চেনা পরিচিত খুঁজে সাজেশন নোট। ওর এত ভাল রেজাল্টের ক্রেডিটের অনেকটারই হকদার সে। বোকামি ছাড়া আর কি!
    এত পড়াশোনা, এত কষ্ট করে কোথা থেকে উঠে এসেছে সে কি ঘোমটা পরে বউ সাজতে? তাকে যেতে হবে অনেকদূর, আরও অনেক অনেক দূর। এটা কেন কেউ বোঝেনা, কারুর মাথায় ঢোকেনা কে জানে!
    মাঝখান থেকে সুনন্দটা কারোরই হলনা। কলেজের পাট শেষ হতেই মিতুনও ঝটপট বিয়ে করে ফেলল এক শাঁসালো আমেরিকাবাসী কে।

  • Blank | 170.153.65.102 | ০৫ মার্চ ২০১০ ১১:৫৮445054
  • শ্রাবনী দির গল্পটা খুব ভালো
  • shrabani | 124.124.244.109 | ০৫ মার্চ ২০১০ ১২:০৪445055
  • হোস্টেলের পিছন দিকের বারান্দার দরজাটা খুলে রেখেছিল কাল। জোৎস্না এসে চারিদিক আলোয় ধুয়ে দিচ্ছিল, ন্যাড়া পাহাড়টা যেন অপরূপ হয়ে উঠেছিল। শীনার সঙ্গে অনেক রাত অবধি গল্প করছিল আলো নিভিয়ে খাটে শুয়ে শুয়ে। শীনা নিজের ঘরে চলে যাওয়ার পরও খুলেই রেখেছিল দরজাটা। বাইরের দিকে চেয়ে চেয়ে কখন একটু ঘুম নিঝুম হয়েছিল দু চোখের পাতা। হঠাৎ জেগে চোখে চোখ, ঠোঁটে ভেজা তপ্ত অন্য ঠোঁট। এক মুহুর্ত কেমন যেন বেভুল, চাঁদের আলোতে একটু একটু করে পরিস্কার অবয়ব। অবস্থাটা অনুধাবন করেই সারা শরীরে বিদ্যুত ।

    চকিতে উঠে পড়ে দুহাতে সর্বশক্তি দিয়ে মানুষটাকে ঠেলে ফেলে সামনের দরজা খুলে বেরিয়ে উঠোনে। দাঁড়িয়ে থাকল চুপচাপ, পাশের ঘরে শীনার দরজায় নক করবে ভেবেও থেমে রইল। কিছুক্ষণ পরে ঘরে ঢুকল যখন তখন ঘর ফাঁকা। আস্তে আস্তে জলের জাগ থেকে জল খেয়ে বারান্দার দরজা বন্ধ করল।

    এই সুন্দর বিকেলে শীনার সঙ্গে নাহক কিছু কথা কাটাকাটি হয়ে গেল। মুখটা তেতো তেতো লাগছে। কালভার্টে বসা সবাইকে এখন ভাল লাগছে, সব্বাইকে, শুধু ঐ ছেলেটা ছাড়া। শীনাকে মুরুব্বি ধরেছে। সাহস কত, বারান্দা দিয়ে ওর ঘরে ঢুকেছে রাতের অন্ধকারে। নাহয় একটু বেশী বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল ইদানী,ং তা বলে? কাপুরুষ ছাড়া আর কি! শীনার ওপরও এখন বিরক্তি ধরে যাচ্ছে। কেমন যেন ষড়যন্ত্র করছে সে ওর বিরুদ্ধে। নিজে বেশ সবার সাথে রাত রাত আড্ডা মারছে, যার হোক সাথে বাজারে বা নদীর ধারে চলে যাচ্ছে , সকাল বিকেল জঙ্গলে হাঁটছে। ওর বেলায় সব অন্যরকম করে দিতে চায়, আবার ন্যায় অন্যায় শেখাতে এসেছে, বোরিং!

    সেও শুনতে চায় জঙ্গলে ঝরা পাতার ওপর রোজ আলাদা আলাদা পায়ের আওয়াজ। গোধূলিতে কৃষ্ণচূড়ায় মিশুক ভিন্ন রঙের ঘোরলাগানো চাহনি। একজোড়াই চোখ ওকে দেখবে শুধু রোজ, একটাই পায়ের চলা ওর পায়ে পায়ে, কি একঘেয়ে কি একঘেয়ে!

    বিরক্ত হয়ে হাঁটা দিল জ্বালাগাঁওয়ের দিকে একা একাই। সন্ধ্যে হয়ে গেলে এসব দিকে ভালুক বেরোয়। বেরোক গে! দেরী হলে কেউ কি আসবেনা খুঁজতে তাকে। যদি কোনো একজনও আসে? সুমিত বা অনুভব? সোজা পথে অনেকটা দুরে চলে যায়। সন্ধ্যে হয় হয়, কান খাড়া করে শুনতে চেষ্টা করে ওর নাম ধরে কেউ ডাকছে কিনা। না: আর আগে যাওয়া ঠিক না। ফিরতে শুরু করে তবে রাস্তা দিয়ে নয়, মেরি গো রাউন্ড রেল লাইন ধরে। রেলের লাইন আর রাস্তার মাঝে ঘন নয় ঝোপঝাড়।

    একটা বাঁকে এসে চোখ যায় রাস্তার দিকে, চট করে ঝোপের আড়ালে বসে পড়ে। রাস্তা দিয়ে উদভ্রান্তের মত দ্রুত গতিতে হেঁটে আসছে সেই রাতচরাটা, দৃষ্টি সামনের দিকে। ভাগ্যিস, ঠিক সময়ে লুকোতে পেরেছে! দম বন্ধ করে রাখে। নি:শ্বাসের আওয়াজ ও যেন শোনা না যায়। ছেলেটা চোখের আড়াল হতেই চট করে উঠে রাস্তা ধরে ছুটতে থাকে, এক দৌড়ে হোস্টেলের সামনে পৌঁছে দম নেয়। সাপের মত একটা নি:শব্দ নিষ্ঠুর হাসি হাসে ফেলে আসা রাস্তাটার দিকে তাকিয়ে।
  • shrabani | 124.124.86.102 | ০৫ মার্চ ২০১০ ১৪:৫৪445056
  • ************************
    জরা বঁচকে, ইয়ে মুম্বই মেরী জান! মুম্বই শহরটা যেন জাদুর দেশের মত। যবে থেকে এখানে এসেছে দিনগুলো স্বপ্নের মত কাটছে। সকাল বেলা উঠে তৈরী হতে না হতেই গেস্ট হাউসের দরজায় ছোট বাস দাঁড়িয়ে যায়। কাঁটায় কাঁটায় ঠিক আটটায় ওদের কজনকে নিয়ে পাড়ি দেয় দুরের ফ্যাক্টরীতে। তারপর সারাদিন কত নতুন নতুন জিনিস দেখা, শেখা আর লোক কত রকমের লোকের সঙ্গে পরিচয়। অনেক ব্যাচ পেরিয়ে নাকি এব্যাচে আবার মেয়েরা এসেছে। ওদের নিয়ে কৌতূহল তাই বোধহয় একটু বেশী, আদিখ্যেতাও। তাইজন্য ওদের থাকার ব্যবস্থা শহরের কেন্দ্রে ভাল গেস্ট হাউসে,ছেলেরা ফ্যাক্টরীর কাছেই কোয়ার্টার শেয়ার করে আছে।

    পাঁচটা বাজলেই মেয়েদের নিয়ে আবার বাস ফেরত যায় শহরে। স্নানটান সেরে সারাদিনের ক্লান্তি ধুয়ে ফেলে সজীব হয়ে ওঠে সবুজ প্রাণ গুলো। তারপর শুরু হয় হইচই হুল্লোড়। রোজই কাছে দুরের মার্কেট, কখনো বা গন্তব্য সিনেমা হল, ডিনার টাইমের আগে ফেরা নেই। এই ট্রেনিং পিরিয়ডটাই চাকরি জীবনের বেস্ট সময়, এখনই যত পার এনজয় করে নাও। এরপরে কাজে দায়িত্ব আসবে, জীবন আর এত কেয়ারফ্রী থাকবেনা। অল্পস্বল্প সিনিয়রদের শেখানো ফিলজফি মেনে ওরা ভেসে যায়।

    মাঝেসাঝে ছেলেরা কেউ কেউ ওদেরই বাসে চলে আসে শহর ঘুরতে, সিনেমায়। এমনিতে আজকাল ওদের বেশীরভাগকে দেখলে বড় বোকা বোকা লাগে, পথেঘাটে এত এত স্মার্ট ছেলের দল। মেয়েরা প্রজাপতির মত রঙ ছড়িয়ে ডানা মেলে দ্রুত বম্বেওয়ালি হয়ে উঠছে সাজেপোষাকে, সবকিছুতে।

    সুমিত প্রায়ই আসে বিশেষ করে পরীক্ষা বা প্রোজেক্টের সময়। ওদের ব্যাচের টপার সে, বইয়ের পোকা। ওর প্রতি সুমিতের পক্ষপাতিত্ব টা সবাই জানে। আগে এ নিয়ে গুঞ্জন হত, টুকরোটাকরা মন্তব্য। ইদানীং আর কেউ মাথা ঘামায় না। তবে সবাই বলে ওর সেকেন্ড পজিশনে থাকতে পারাটা সুমিতেরই জন্য সম্ভব হয়েছে। এই রেজাল্ট নিয়ে রেষারেষিটা ওদের মধ্যে রয়েছে কারণ ফাইন্যাল পোস্টিং কার কোথায় হবে রেজাল্টের ভিত্তিতে ঠিক হয়। প্রথম দিকে যারা থাকে তাদের মুম্বই হেড অফিসে বা কাছের ফ্যাক্টরীতে পোস্ট করা হয়, বাকিদের দুরে দুরে পাঠানো হয়, এম পি, উড়িষ্যার ভেতরে অজ জায়গায়। এবারে শোনা যাচ্ছে হেড অফিসে শুধু একটাই ভেকেন্সী, হয়ত টপারই পাবে।

    রাজেশ মেহরোত্রা, ফ্যাক্টরীতে ট্রেনী মেয়েদের চার্জে আছে। তাদের ট্রেনিং কোঅর্ডিনেটর। ওর বাবা এই সংস্থার এইচ আরের এক হোমরাচোমরা পদস্থ ব্যক্তি। বাপের দৌলতে পড়াশোনাতেও চান্স পাওয়া, বাপের দৌলতেই চাকরী। কিন্তু ফ্যাক্টরীতে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজের ভার ওর ওপর কেউ দেয়না। আড়ালে সবাই খোরাক করে। এইসব ট্রেনিং দেখা, কোনো ইভেন্টে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা, বড় বড় লোকেদের সঙ্গে ঘোরাফেরা এসবের কাজ করে। প্রোমোশন কিন্তু সবার আগে পায়।
    মেয়েদের ভার পেয়ে খুব খুশী ভদ্রলোক, বয়স বেশী না, ওদের থেকে পাঁচ ছ বছরের সিনিয়র, বিয়ে থা হয়নি এখনো। তার দেখাশোনার খোঁজখবরের ঠেলায় প্রাণ ওষ্ঠাগত সকলের। রাজেশের প্রথম থেকেই ওর দিকে একটু বেশী নজর। স্পর্ধা দেখে গা জ্বলে যায়। সাহস কত, ঐ তো উডহাউসের বই থেকে উঠে এসেছে টাইপের চেহারা!
  • shrabani | 124.124.86.102 | ০৫ মার্চ ২০১০ ১৪:৫৬445057
  • সুমিত খুব মনমরা, কার কাছে শুনেছে যে এবারে কারোরই পোস্টিং হয়ত হেড অফিসে হবেনা। চিন্তাগুলোকে ঠেলে দুরে সরিয়ে রাখলেও আর এড়ানো গেলনা। এত কান্ড করে ভাল চাকরি পেয়েও সেই কোন ধ্যাড়ধেড়ে গোবিন্দপুরে গিয়ে থাকতে হবে? সাইট ট্রেনিংএর সময় দেখেছে ওসব জঙ্গলে ঘেরা গ্রাম্য জায়গায় থাকতে থাকতে সবার মানসিকতা কেমন গ্রাম্য হয়ে গেছে। যেন বছর পঞ্চাশ পিছিয়ে যাওয়া।

    অন্য সঙ্গীনিরা অলরেডী বিয়ে থার প্ল্যানিং করে কারুর না কারুর সাথে জুড়ে যাচ্ছে। চাকরি হল এবার বিয়ে থা তারপরে ছেলেপিলে সংসার। ভগবান, এরা কেন বাঁচে! সুমিতও এদেরই মত, বসে বসে ক্যালকুলেশন করে,অনেকেই নাকি রেজিস্ট্রী করে রাখছে। পোস্টিং একজায়গায় কি ছকে করাবে, তারপরে দুজনের মাইনে যোগ করে খরচাপাতি, কবে নাগাদ গাড়ি কেনা হবে, কবে ফ্ল্যাট সব এক্সেল শীটে বানিয়ে ফেলেছে। মাঝেমাঝে চিৎকার করে উঠতে ইচ্ছে করে, যেভাবে এরা সব প্ল্যানিং করে, মরার ডেটটাও বসিয়ে দিতে পারে শীটের খোপে!

    কিন্তু চেঁচিয়ে ওঠা ওর স্বভাব নয়, যা মনে হয় ও তা কখনই বাইরে দেখায় না। হাসিমুখে সুমিতের সব প্ল্যান শোনে। ফাইন্যাল অবধি নোটস গুলোর খুব দরকার, মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। শেষমেশ ফাইন্যাল ভালোভাবেই হয়ে গেল তবে ওর আর টপার হওয়া হলনা। সেকেন্ডই রয়ে গেল। সমস্ত ডিপার্টমেন্টে ওর অবাধ গতি, সবার সাথে গিয়ে আলাপ জমিয়ে ফেলে। অন্যদের মতো হাওয়ায় কি হবে কি হবে করলে তো কিছুই হবেনা, আঙুল কামড়াতে হবে।

  • shrabani | 124.124.86.102 | ০৫ মার্চ ২০১০ ১৫:০২445059
  • এভাবেই খবর পায় রাজেশের বাবা এবারে ওদের পোস্টিং এর ভাগ্যনির্ধারক। মনকে শক্ত করে নেয়, অনেক অনেক দূর যেতে হবে, গাড়ি ঘোড়া অনেক বদলাতে হবে, উড়ো জাহাজের সাথে ছ্যাকরা গাড়ীও চড়তে হবে!

    পি জি উডহাউসের ক্যারেক্টার কেমন একটা রেকট্যাঙ্গুলার থ্রি ডাইমেন্সন আকার পায়। অফিসের বাইরে বম্বে শহরের নানা হ্যাং আউটস এ মনমতো পোস্টিং খোঁজা চলে। সেকেন্ড টপার তো কি হয়েছে, মেয়ে বলে বিশেষ ভাবে কনসিডার করা তো যেতেই পারে।
    সুমিতের আড়ালেই পট বদলায় তবু কি যেন আন্দাজ করে একটু করুণ মুখে তাকায় আজকাল। অন্য কেউ হলে হয়তো মন খারাপ করত ঐ দৃষ্টিতে, ওর কোনো হেলদোল নেই। এসব ভালবাসার কোনো গভীরতা আছে নাকি? যত্ত সব ক্যালকুলেটেড ভালবাসা।
    ভালবেসে পেরেছে তাকে টপার হতে দিয়ে নিজে সেকেন্ড হতে? সেদিক তো ঠিক রেখেছে যাতে ও বিয়ে করতে বাধ্য হয়। তার মানে বিশ্বাস করেনা, আর তাহলে ওর ই বা বিশ্বাস রাখার কি দায়!

    এদিকে আর এক জ্বালা, বিয়ে ছাড়া কেউ কথা কয় না। একটা ভাল জায়গায় প্লেসমেন্ট পেতে গিয়ে সারাজীবনের জন্যে একটা কার্টুনের সাথে পথ চলতে হবে! খবর নিয়ে দেখেছে বাপের অবসরের আর দু বছর বাকী, ততদিন ব্যাপারটাকে চাপাচুপি দিয়ে রাখতে হবে। একবার বাবা চলে গেলে ওকে আর কিছু করতে হবেনা, কোম্পানিই এই লোকটাকে তেপান্তরে পাঠিয়ে দেবে, এতকাল মাথায় বসিয়ে রাখার মাশুল হিসেবে। চাইনীজ, কন্টিনেন্টাল, সিনেমার ইন্টারভ্যালের ফাঁকে ফাঁকে চলতে থাকে বোঝানো, ওর বাবা মা গ্রামের অশিক্ষিত লোকজন। এরকম ইন্টারকাস্ট ইন্টারস্টেট বিয়েতে কতটা আহত হবে, আত্মহত্যাও করে ফেলতে পারে গ্রামে একঘরে হবার ভয়ে ইত্যাদি!

    মন্দিরে একটা এনগেজমেন্ট হয়, আংটি বদল, সবাইকে লুকিয়ে। গেস্টহাউসে ফিরে আংটি খুলে রাখে, ফেলে দেয়না দাম আছে, তবে হীরে নয়। গাড়ী বদলে গেল। ওর কিছু এসে যায়না, এরা সবাই সেই ধাপ, আর কিছু নয়। ওর লক্ষ্য অনেক ওপরে যাওয়া, অনেক উঁচুতে।
  • shrabani | 124.124.86.102 | ০৫ মার্চ ২০১০ ১৫:১২445060
  • ************************************
    আজ একবছর পরে বাড়ী ফেরা। মুম্বই মেল হাওড়া স্টেশনে ঢোকার আগে বুক ঢিপঢিপ উত্তেজনায়। শেষমেশ তার যা লক্ষ্য তাতে প্রাথমিক ভাবে সফল সে। বাবার মুখটা মনে করে বুক ভরে ওঠে। কাল কোয়ার্টারে শিফট করেই ট্রেনে উঠেছে। কি দারুন ফ্ল্যাটটা! টাউনশিপের চারপাশ সবুজে ভরা। বারান্দায় বেরোলেই দুরের পাহাড় আর লেক দেখা যাচ্ছে। মাকে চিঠিতে জানিয়ে রেখেছে ওদের এবার আসতে হবে। মা এসে সব গুছোবে। বাবা মা দেখে সব দরকার মতো কেনাকাটি করে ফ্ল্যাট সাজাবে, তাই সে কিছুই করেনি। মা বাবা বাংলার বাইরে বিশেষ যায়নি। একবারই শুধু অনেকদিন আগে পুরী গিয়েছিল, এখনো সেই গল্প করে বেড়ায় সবার কাছে। খুশীতে ঝলমলিয়ে ওঠে মুখদুটো সেই দিনগুলোর কথা মনে করে। কতদিন, কতদিন ওরা কোথাও বেড়াতে যায় না। এখানে এসে ওরা শুধু ঘুরে বেড়াবে, যা ভালো লাগে তাই করবে।

    ভালোলাগা শুধু ভালোলাগা, মন ভরে নিয়ে বাইরে পরিচিত দৃশ্যাবলীর দিকে তাকায়। মাঠ, ডোবা,কলাঝাড়, কতদিন পরে আবার এসব দেখছে সে!
    কেউ থাকবেনা জানে তবু জানালা দিয়ে চলতি প্ল্যাটফর্মের দিকে তাকিয়ে থাকে ট্রেনটা ইন করতে। মামাতো ভাইটাকে দেখে কেমন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলনা। কাউকে আসতে বলেনি ও। সঙ্গে মালপত্র বলতে তো শুধু একটা স্যুটকেস আর হ্যান্ডব্যাগ। ট্যাক্সি নিয়ে চলে যেত মামাবাড়ি। তবুও খুশী হল, মামারা দায়িত্ব দেখিয়েছে, হয়ত ভাগ্নী রোজগেরে হয়েছে বলে!
    নামতেই ভাই একটু আলতো হাসল ওর দিকে চেয়ে।
    -"চল দেরী হয়ে গেল, ট্রেন তো আধঘন্টা লেট।"
    জবাবের খেয়াল না করেই অনেক কথা বলতে বলতে বাইরে বেরোল। কতদিন প্রাণ খুলে কথা বলেনি। বাইরে সব কিছুই তো মেপেজুপে।

    ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের দিকে যেতে গেলে ভাই ওকে ঘুরিয়ে অন্য দিকে পার্কিং লটে নিয়ে গেল। একটা সাদা অ্যামবাসাডর দেখিয়ে উঠতে বলে ডিকিতে ওর মাল তুলতে লাগল।
    -"গাড়ী ভাড়া করে নিয়ে এসেছিস কেন আবার?"
    ভাবল এটা একটু বেশী হয়ে যাচ্ছে। তবু উঠে বসল একটু বেভুলের মতোই। গাড়ী মামাবাড়ির দিকে না গিয়ে শহরের বাইরে চলল যখন ও জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ভাইয়ের দিকে তাকাল।
    -"আমরা তোদের বাড়ী যাচ্ছি দিদি, পিসী পিসে চায় তুই আগে বাড়ি যাস।"
    ও:, তাহলে এটা মা বাবার ব্যবস্থা, তাই বল। দীর্ঘ একবছর মেয়েকে চোখের দেখা দেখেনি, পৌঁছনোমাত্রই মেয়েকে কাছে পেতে চায়। একটু হতাশ হল। ভেবেছিল দুদিন শহরে মামাবাড়ীতে থেকে একটু মজা করবে, প্রথম রোজগারের টাকায় শপিং করবে প্রাণভরে। থাক গে, সেসব পরেই হবে না হয়। হঠাৎ বাবা মা আর সবাইকে দেখার ইচ্ছেটা বুকের মধ্যে তোলপাড় করে উঠল। এতদিনে এই প্রথম। গাড়ীটা আর একটু জোরে যেতে পারত, রাস্তা তো ভালই!

  • shrabani | 124.124.86.102 | ০৫ মার্চ ২০১০ ১৫:৪৯445061
  • বাড়ীর বাইরে অনেক লোক কেন, কি আছে আজ?
    নাকি তার আসার খুশীতে বাবা পাড়ার সবাইকে নেমন্তন্ন করে একটা হইহই কান্ড করে ফেলেছে। মনে মনে হিসেব করে নিল পার্সে ক্যাশ কত আছে, বাবার লাগবে তো! ভাই মালপত্র নামাতে, ভাড়া মেটাতে থাকল ও ছুটে বাড়ীর ভেতরে গেল।
    একটু অন্যরকম ভীড়, ও খেয়াল করল না। নীরব চাদ্দিক, বড় তীক্ষ্ম যেন সেই নীরবতা। কে একজন ওকে সামনে নিয়ে গেল, সবাই সরে জায়গা করে দিল। ওর চোখ সামনের দিকে, এত অচেনা কেন চারধার!
    রোদছায়া মাটির দুয়ারে কে একজন যেন শুয়ে আছে, পরনে ধপধপে ধুতি পাঞ্জাবি, সাদা কোঁকড়া কোঁকড়া চুল মাথায়, চোখদুটো বন্ধ। চোখের পাতায় তুলসীপাতা, কালো ফ্রেমের চশমাটা পাশে রাখা সযত্নে।
    চোখ ঝাপসা, ঠিকমতো দেখতে পায়না। অনেক আওয়াজ, কে কি বলছে , ওর কানে ঢোকেনা।
    হাঁটুদুটোতে আর জোর নেই, দুয়ারের খুঁটিটা ধরে বসে পড়ে। ওকে ঘিরে অনেক লোক, কার হাত যেন ওর মাথায়। নানা গুঞ্জন নানাস্বরে, সব ছাপিয়ে একটাই কন্ঠস্বর ভেসে আসে যেন কোথায় কত দুর থেকে,

    "ভাল মেয়েদের বাবারা কক্ষনো মরেনা কোনোদিনও নয়। সোনা মেয়েদের বাবা। সোনা মেয়ে, ভালো মেয়ে..............."।

    ***************
    সন্ধ্যে হয় হয়। লোকজন অনেক তবু যেন কেউ নেই চারধারে। হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসেছিল দুয়ারে। একসময় চোখ তুলতেই চোখ পড়ে গেল উঠোনের এক কোণে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড় করানো রঙচটা, মরচে ধরা একটা কাঠামোর দিকে! রাজদূত!
    আস্তে আস্তে উঠে কাছে গিয়ে হ্যান্ডেল স্পর্শ করল প্রথমে, ঠিক মাঝখানটায়।তারপর দুটো হাতে শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো রডটা।
    একটা চিৎকার শুনে দু একজন ছুটে গেল।
    -"কি রে কি হয়েছে, চেঁচালি কেন?"
    ক্লান্ত ভয়ার্ত স্বর বলে ওঠে,
    -"পড়ে গেছি।"
    -"পড়ে গেছিস, কি করে, কোথায়?"
    সবাই একটু অবাক হয়। তাদের জিজ্ঞাসু মুখের দিকে কেমন একটা অদ্ভুত শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
    -"সিঁড়ি থেকে। অনেক উঁচু থেকে!"
    কেউ কিছু বুঝলনা, ধরে ধরে ঘরের ভেতরে নিয়ে গেল মেয়েটাকে। সে তখনও তাকিয়ে আছে অন্ধকার আকাশের দিকে যেন কোনো অদৃশ্য সিঁড়ি দেখছে।

    ---------------*----------------
  • Manish | 117.241.229.32 | ০৫ মার্চ ২০১০ ১৯:৩৫445062
  • এই শ্রাবনীটা একটা যাচ্ছেতাই।
    এই রকম করে কেউ গল্প লেখে। চোখ ছলছল মন উদাস।অফিসের কাজেও তো মন দিতে হবে কিন্তু পারছি কৈ।
  • Lama | 203.99.212.53 | ০৫ মার্চ ২০১০ ২০:৫৯445063
  • এরকম করে মন খারাপ করে দেওয়াটা ঠিক হল?
  • san | 203.91.201.56 | ০৫ মার্চ ২০১০ ২১:১০445064
  • :-(((((((
  • kk | 67.187.111.178 | ০৫ মার্চ ২০১০ ২২:০৯445065
  • এই শ্রাবণীদি, খবরদার এরকম আর লিখোনা!
  • ranjan roy | 122.168.228.204 | ০৫ মার্চ ২০১০ ২২:৩৭445066
  • লেখো, শ্রাবণী! এমনই লেখো। আরো অনেক লেখো। আমাদের ভেতর থেকে সব বের করে আনো।
    এইভাবে আমরা একটু একটু পরিশ্রুত হই। আমাদের করে তোল।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে প্রতিক্রিয়া দিন