এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • বন্ধু থাকো, থাকো আমার মনে

    Samran
    অন্যান্য | ০৫ মে ২০০৯ | ১৩৩১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Samran | 117.99.56.216 | ০৫ মে ২০০৯ ১৩:২৯410646
  • জীবন অরণ্যে তীরবিদ্ধ আমার পাঁজরে
    ঝর্ণার গান ঝর-ঝর আর টুপটাপ
    ও ----তুমি আবার এসো
    গান শুনে যেও আর স্নান করে যেও। (মাসুদ)

    সেদিন ঢাকা থেকে কলকাতা ফেরার পথে সকালবেলায় এয়ারপোর্টে যাওয়ার পথে সঙ্গী হল মাসুদ-কাঁকন। সারাটা পথ কাঁকন গান গাইলো, কখনও গুনগুনিয়ে, কখনও গলা খুলে। মাঝে মাঝেই গলা মেলাচ্ছিল মাসুদও। গানের ফাঁকে ফাঁকে টুকরো টুকরো কথা। আমি একটু চুপচাপ। গত একমাস ঢাকাবাসের স্মৃতি একেবারে টাটকা, কিছু সুখস্মৃতি তো কিছু তিক্ত-বিরক্তিকর, দু:খজনক। আগেরদিন সারাদিন শুদ্ধস্বরে বসে থাকা, অপেক্ষায়, কখন সুমেরুর বইটা আসবে। আসার আগে অসুস্থ বোনটাকে শেষবারের মত দেখে আসা হলো বইটার জন্য অপেক্ষায়। মনটা বেশ খারাপ। সন্ধ্যায় বন্দুকের নলই ক্ষমতার প্রকৃত উৎস-এর প্রকাশকে কেন্দ্র করে আয়োজিত অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি। একফাঁকে যে ছুট্টে গিয়ে বোনটাকে দেখে আসব ঢাকার ট্র্যাফিকের কারণে সে জো নেই।

    মাসুদ আর কাঁকন দুজনেই চারুকলার শেষ বর্ষের ছাত্র। ট্রাজেডি গত দীর্ঘ নয় বৎসর যাবৎ ওরা চারুকলায় পড়ছে। শেষবার বোধ হয় পরীক্ষা দিয়েছিল বছর তিনেক আগে। ওরা দু'জনেই আশা করছে, এ'বছরটায় বোধ হয় ওদের পরীক্ষাটা হয়ে যাবে আর ওরাও উৎরে যাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘাট, যে ঘাটে ওরা আটকে আছে গত নয়টি বছর ধরে। ইতিমধ্যেই সরকারী চাকুরীর বয়স পেরিয়ে যায় যায় করছে দু'জনেরই। কাঁকন উত্তরায় একটা স্কুলে আঁকা শেখায়, করে আরো দু-তিনটি আঁকার টিউশনি। আর মাসুদ? ঠিক জানি না। বোধ হয় কাজের চেষ্টায় ঘুরে বেড়ায় এদিক ওদিক। ওরা থাকে কাঁঠালবাগানের একটা ফ্ল্যাটে। রাত এগারটা বেজে গেলেই সেদিন দু'জ্‌নার আর বাড়ি ফেরা হয় না, থেকে যায়, থেকে যেতে হয় বন্ধুর বাড়ি- সাগরের বাড়ি। রাত এগারটা বাজলেই ওদের একতলার গেটে তালা পড়ে যায়, বাড়িতে আর ঢোকা যায় না।

    মাসুদ কবিতা লেখে, গান লেখে। সে গানে সুর বসায় কাকন। গায় কাঁকন। অদ্ভুত সুরেলা আর মিষ্টি গলা কাঁকনের। কাঁকনের কথা শুনলে মনে হতে বাধ্য, এই মেয়ে নিশ্চয়ই গান গায়। যখনই গাইতে শুরু করে, চোখদুটি মুদে আসে আপনা থেকেই । কথার মধ্যে ডুবে গিয়ে, মগ্ন হয়ে দুলে দুলে গায় কাঁকন। কাঁকন গণসঙ্গীত গয়, গানের দলের সাথে ঘুরে বেড়ায় নানা জায়গায়। বন্ধুরা যে বাড়িতে আড্ডা দেয়, সে বাড়ির রান্নাঘরের দায়িত্ব আপনা থেকেই এসে পড়ে কাঁকনের উপর। কাঁকন রান্না করে, মাঝে মাঝেই এসে আড্ডায় যোগ দেয় আর রান্না শেষ হলেই গুছিয়ে বসে গান গয়। মাসুদের লেখা গান আর লালন।

  • intellidiot | 220.225.245.130 | ০৫ মে ২০০৯ ১৩:৪৩410655
  • মাসুদ-কাঁকনের গান আমাদের শোনানোর একটা ব্যবস্থা করুন না সামরান
  • Samran | 117.99.56.216 | ০৫ মে ২০০৯ ১৪:৩০410656
  • ও যমুনা রে,
    জলের নাচন নাচাস বুকে
    আমারে তুই নে,
    আমিও তো নাচতে জানি রে----(মাসুদ)

    সাগরের সাথে আমার প্রথম দেখা আজিজ মার্কেটের সামনের ফুটপাথে। সেটা জানুয়ারী মাস, পরদিন আমার কলকাতায় ফেরা, শেষবেলার আড্ডা দিতে সঙ্গে সহব্লগার-বন্ধু ফারুক ওয়াসিফকে নিয়ে আমরা দু'জন পাঠশালায় ফিরব বলে রওয়ানা দিয়েও ফুটপাথে দাঁড়িয়ে হঠাৎ দেখা দেখা হয়ে যাওয়া এক বন্ধুর সাথে কথা বলছিল ওয়াসিফ। আমরা দু'জন একপাশে দাঁড়িয়ে, হঠাৎ দেখি সুমেরুর চোখদুটো বড়বড় হয়ে গেল, খানিকটা সন্দেহ আর খানিকটা সংকোচের সাথে সে এগিয়ে গিয়ে ওয়াসিফের বন্ধুকে জিজ্ঞেস করে, "সাগর না?' "আরে, তুই সুমেরু না!' কিল-চড়-ঘুষি সমানে খানিক চলার পর জানা গেল, সাগরের সাথে সুমেরুর শেষ দেখা হয়েছিল দশ বছর আগে, কলকাতায়। সম্ভবত সাগর তার বানানো কোনো একটা ফিল্ম নিয়ে কলকাতায় এসেছিলো আর সে নিয়ে বেশ ঝামেলায় পড়েছিল। তখনই কিংবা হয়তো তারও আগে থেকে ওরা একে অন্যকে চেনে, সেই সময় সুমেরু আর সাগর মিলে কোনোরকমে সেই ঝামেলা থেকে পার পেয়েছিল। তারপর এই সেদিন আবর দেখা, আজিজ মার্কেটের সামনের ফুটপাথে। এদের মারপিট আর তারপরের কথপোকথন শুনে আমি এবং ওয়াসিফ দু'জনেই চুপ। সাগরকে সাথে করে ফেরা হল পাঠশালায়, আমাদের অস্থায়ী আবাসে। গলায় ঝোলানো ক্যামেরা খুলে সাগর আমার ছবি তুললো, বইয়ের জন্য। মাঝরাত পার হওয়ার পর ওয়াসিফ এবং সাগর দু'জনেই বলতে, বাকি আড্ডাটা আমার বারিতে হোক। সকালে আমার ফ্লাইট, কলকাতা ফিরব, কিস্যু গোছনো হয়নি, সাগর বললো, চল না। নিয়মের জীবন কত বাঁচবা।

    সাগরকে "মোল্লা সাগর' নামে ঢাকায় অনেকেই চিনবেন। সাগর ছবি তোলে, ছবি আঁকে, সিনেমা বানায়, গান শোনে, গান সংগ্রহ করে, বাংলা সংস্কৃতি আন্দোলন নামে একটা সংগঠনের সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত, বিভিন্ন রকম কর্মশালার আয়োজন করে, সারাক্ষণই ফোন কানে কাউকে না কাউকে কখনও কিছু পরামর্শ কখনও বা কিছু যোগাড়-যন্ত্রের হুকুম করে যায়। চারুকলার প্রাক্তন ছাত্র সাগরকে সন্ধে থেকেই পাওয়া যায় ছবির হাটে। কোনো না কোনো আয়োজনে সর্বদাই ব্যস্ত থাকে সে সেখানে। কখনও কল্লোল'দার গানের আসরের আয়োজন, কখনও হাটের মেঝে জুড়ে লুডুর বোর্ড এঁকে কাঠের বিশাল ছক্কায় সাপলুডু খেলা আর তার সাথেই পর্দা টানিয়ে তাতে সিনেমা দেখানো। কখনও বা সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ঘুড়ির উৎসবের আয়োজনে মাসাধিককাল ধরে নানা রকমের, নানা আকারের রং-বেরঙের সব ঘুড়ি বানানো আর তার ফান্ড যোগাড় করার জন্যে চারুকলার ছেলে-পুলেদের নিয়ে সরা, পট আঁকা সারা বিকেল-সন্ধে জুড়ে। গানপাগল সাগর যেখানে যা গান শোনে, যার গলায় শোনে, পছন্দ হলে আর সম্ভব হলে সাথে সাথেই রেকর্ড করে নেয়, নইলে পরে দিন ঠিক করে সেখানে পৌঁছে যায় বড় ক্যামেরা সহ। পরে নিজের বানানো সিনেমায় জুড়ে দেয় সেসব গান। কারোর কারোর সাথে হয়তো মেলে না সাগরের কিন্তু যার সাথে মেলে সে তার প্রাণের মানুষ।
  • kallol | 220.226.209.2 | ০৫ মে ২০০৯ ১৫:২১410657
  • সাগরের বাসায় গেছি। সাততলার টংএ তার বাসা। দুদিকে খোলা ছাদ একখানা পেল্লায় সাইজের ঘর। তাকে ঘর না বলে হল বলাই ভালো। পাশের ঘরে সাগরের রাশি রাশি সিডি / ডিভিডি, একটা কম্পিউটার আর ঢেউএর মত ছবি।
    তার ঘরে রাত বাড়ে বন্ধু বেড়ে চলে। কাঁকন রান্না ঘরে। মাসুদ, পর্ণব, সুমেরু, সামরান, কৃষ্ণা, রবি, আরও অনেকে গোল হয়ে বসে। গান চলছে।

    একটার পর একটা গান গাইছি, আর সাগর আপনমনে মাথা নাড়ে আর বলে - বলছিলাম কি না - এক্কারে যা-ইচ্ছে-তাই।

    কাঁকনের হাতের খিচুড়ি আর ডিমভাজা - ও: সে একটা অন্যতর ব্যাপার।

    তারপর কাঁকন গান ধরল - মূলত লালন। আমি ভেসে গেলাম।

    এর বেশ কিছুদিন পরে ঢাকার পাঠশালায় সুমেরুর ডেরার পাশে আমাদের অস্থায়ী ডেরায় মাসুদ আর কাঁকন। গান সেদিন পাগল হয়ে নাচছিলো। মাসুদ কবিতা পড়ছিলো আর সেই কবিতাগুলো-ই কাঁকন গাইছিলো। পাগল হতে আর কি লাগে ? কাঁকন গাইলে মনে হয় সুর যেন কবে থেকে অপেক্ষা করেছিলো ওর জন্য। গানের ফাঁকে কাঁকন পংক্তি ভুলে গেলে মাসুদ মায়াময় উচ্চারণে ধরিয়ে দিচ্ছিল...... আমি ডুবে গেছিলাম ওদের যৌথতায়। যারা নাসিরের আবৃত্তি আর আশার গাওয়া - মেরা কুছ সমান - শুনেছে তারা কিছুটা বুঝবে। তফাৎটা পর্দা আর জীবনের।

    ভালো থাকিস তোরা............

    সামরানরে ভালো থাকিস।
  • Samran | 117.99.5.221 | ০৫ মে ২০০৯ ২২:৫১410658
  • আর যাবো না ঠাকুরবাড়ি
    আমার রাধার নাইরে শাড়ি
    সূর্য তুমি ডুবে যাও
    সূর্য তুমি নিভে যাও
    অন্ধকারে স্বর্গ আঁকো
    যে চেনে সে চিনে নেবে
    অন্ধকারে ঠাকুরবাড়ি। (কফিল আহমেদ)

    হাসান আরিফ। আবৃত্তিকার। জীবনধারণের জন্যে একটা চাকরীও করেন। তাঁর সাথে আমার-আমাদের আলাপও অদ্ভুতভাবে। ২০০৩সালে সুমেরুর বড়জ্যেঠু খুন হন নিজের চেম্বারে (তিনি ডাক্তার ছিলেন), তখন কলকাতার চলচ্চিত্রকার বন্ধু গৌতমের সাহায্যে রাতারাতি বর্ডার পেরিয়ে সুমেরু বাংলাদেশে যায়, নিজেদের বাড়িতে, ঝিনেদায়। পরে গৌতমের সাথেই গৌতমেরই পরিচিত হাসান আরিফের বাড়িতে গিয়ে গিয়ে ওঠে, ঢাকায়। দিন কয়েক ছিল সে সেখানে। তখনই আলাপ হয়, আনিস মাহমুদ, বর্তমানে সহব্লগার আনিস ভাইয়ের সাথেও। ফিরে আসার পরে, যা হয়, কিছুদিন যোগাযোগ ছিল তারপরে এতদিন আর কোনো যোগাযোগ ছিলো না কারো সাথেই। উত্তরায় সচলায়তনের ব্লগারদের সম্মেলনে আনিস ভাই চিনতে পারেন সুমেরুকে, খানিক গল্পও হয়। কী অদ্ভুত যোগাযোগ! দিন দুই পরে সন্ধের দিকে আজিজ থেকে ফেরার পথে পাঠশালার গেটে "এই সুমেরুউউউ' ডাক শুনে দু'জনেই পেছন ফিরে তাকাই, একজন মানুষ এগিয়ে আসেন, কোনো কথা না বলে জড়িয়ে ধরেন সুমেরুকে। কোথায় ছিলা-কেমন ছিলা-কবে আসলা-র পরে তাঁর নজর পড়ে আমার দিকে, সুমেরু আলাপ করিয়ে দেয় হাসান আরিফ ভাইয়ের সাথে। পাঠশালার ঘরে বসে খানিক গল্প করার পরে জানা গেল, তিনিও কুমিলার অর্থাৎ আমার দেশের মানুষ। ব্যস। জমে গেল আড্ডা। শুনলাম, নেক্সট ডোরেই থাকেন খালাম্মা, আরিফ ভাইয়ের মা। সেখানে গেলে পিঠে খাওয়া যাবে, আমাদের দেশের পিঠে। এবং আমরা পিঠে খেলাম সেখানে গিয়ে। খালাম্মা, আরিফ ভাইয়ের ভগ্নীপতি সহ আড্ডা চলল মাঝরাত অব্দি। আমি মাঝে মাঝে ভাবি, এমনও হয়! পৃথিবীটাই আসলে গোল। ঘুরে ফিরে কোথায়-কখন যে কার সাথে দেখা হয়ে যাবে কেউ জানে না।

    সেদিন তেরই মার্চ সন্ধেয় হাসান আরিফ ভাই আবার আসেন পাঠশালার ঘরে, পরদিন বন্দুকের নল-এর প্রকাশা উৎসবে তিনি পাঠ করবেন সুমেরুর বইয়ের কিছু অংশ। আমাকে বললেন, সুমেরুর নিজের লেখা থেকে পাঠ আগেই শুনেছি, আজ তুমি পড়ে শোনাও, লেখকের নিজের লেখা থেকে পাঠ শুনলে সুবিধে হয় পরে সেটা থেকে পড়তে। বসে বসে শুনলেন আমার বইয়ের থেকে দু'টি গল্প। আমি পড়ে শোনালাম।

    দৃক গ্যালারীর অনুষ্ঠানের এক ফাঁকে আরিফ ভাই বলে রেখেছিলেন, অনুষ্ঠান শেষে তোমরা দু'জন আমার অতিথি, পছন্দসই একটা জায়গায় বসে খানিক আড্ডা আর খাওয়া দাওয়া। আনুষ্ঠান শেষে অতিথিসংখ্যা বেশ কয়েকজনে দাঁড়ালো, কৃষ্ণকলি ও তার এক বন্ধু, সাগর, মাসুদ-কাঁকন ও সাগরের আরেক বন্ধু অ্যানী। ও হ্যাঁ, আরফানও ছিল। ঠিক হলো, আড্ডা হবে পাঠশালাতেই। কাবাব আর পরোটা নিয়ে এলেন আরিফ ভাই, সাগর নিয়ে এলো পানীয়। কফিল আহমেদ আবারও গান গাইলেন। এবারে গান শোনালেন কৃষ্ণকলিও। পরদিন সকালে আমার বেরুনো, বাক্সো-প্যাটরা কিস্‌সু গোছানো হয়নি কিন্তু গান আর কথা - সে যে ফুরায় না...

    কফিল আহমেদের কথা প্রথম শুনি ব্লগার বন্ধু শাপলুর কাছে। সে বছর দৃকে সিনেমা বিষয়ক একটা কর্মশালার জন্য সুমেরু ঢাকায় যায়, সঙ্গে আমি। ২০০৩এর পর সুমেরু আবার ঢাকা যায় সে'বার। ২০০৭। শাপলু আমাকে একটা সিডি দেয় কফিল আহমেদের। তাঁর কথা- তাঁর গানের কথা শুনেছি ব্লগবন্ধু ইমরুল হাসানের কাছেও। এবার সাগরের বাড়িতে যেদিন কল্লোল'দা গান করেন, সেদিন সাগর ফোনে ডাকে কফিল আহমেদকেও। সাগরের বহু স্বল্প দৈর্ঘের চলচ্চিত্রে কফিল আহমেদ গান করেছেন, সে'সব চলচ্চিত্র দেখেছি কখনও পাঠশালার ঘরে, কখনও সাগরের বাড়িতে। তাঁর গান শুনেছি সাগরের মোবাইল ফোনে- সাগরের গানের সংগ্রহ থেকে শুনেছি-দেখেছি তাঁর গানের ভিডিও। ভালো লেগেছে বলা বাহুল্য। ঢাকার বাইরে ছিলেন, আসতে পারেননি সে'দিন তিনি। আসার কথা ছিলো পাঠশালার ঘরেও, গান-আড্ডায়। রেকর্ডিংএ আটকে গিয়ে সেদিনও আসা হয়নি তাঁর। সব অপেক্ষা পুষিয়ে দিলেন কফিল আহমেদ ১৪তারিখে, দৃক গ্যালারীতে, বন্দুকের নল-এর প্রকাশনা উৎসবে, অপেক্ষমান বন্ধুদের অনুরোধে একের পর এক গান শুনিয়েছেন কফিল আহমেদ। যেটুকু বাকি ছিল, সেটুকুও পূর্ণ হয় পাঠশালার ঘরে, কৃষ্ণকলির সাথে যুগলবন্দীতে।
  • d | 117.195.46.19 | ০৫ মে ২০০৯ ২৩:২১410659
  • শাপলু মানে সবুজ বাঘ তো?
  • samran | 117.99.43.190 | ০৬ মে ২০০৯ ০৭:১০410660
  • হ্যাঁ দ,
    শাপলু মানে সবুজ বাঘ।
  • Samran | 117.99.25.206 | ০৭ মে ২০০৯ ০৯:০৭410661
  • ভালো থাইকো বন্ধু আমার এমন বিজনে
    ভালো থাইকো ভালোবাসায় বন্ধুর পরাণে
    ভালো থাইকো বন্ধু আমার এমন বিজনে
    বুকের মাঝে বন্ধুর বাড়ি, তাতে দরজা সারি সারি
    তাতে নাইকো আগল নাইকো দাড়ি। (কল্লোল দাশগুপ্ত)

    কল্লোল দাশগুপ্ত। আমাদের কল্লোল'দা। ঢাকা যাওয়ার আগেরদিন সন্ধ্যায় দৃকের অফিসে গিয়ে শুনলাম, পরদিন কল্লোল'দাও ঢাকা যাচ্ছেন ছবিমেলা দেখতে। কল্লোল'দার বহু পুরনো বন্ধু দৃক বাংলাদেশের বর্তমান ডিরেক্টর, জহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক রেহনুমা'র আমন্ত্রণে কল্লোল'দা আগেও ছবিমেলায় গেছেন শুনলাম শুভেন্দু'দার কাছে, সেদিন সারাদিনই নাকি কল্লোল'দার সাথে তিনি বাংলাদেশ হাই কমিশনে ছিলেন তিনি। দৃক ইন্ডিয়ার ডিরেক্টর শুভেন্দু চ্যাটার্জীও কল্লোল'দার পুরোনো বন্ধু ও প্রাক্তন নকশাল। কল্লোল'দার সাথে এর আগে আমার শুধু ফোনে কথা হয়েছে, দেখা হয়নি। গুরুচন্ডা৯-তে কারাগার, বধ্যভূমি-র সুবাদে কল্লোল'দা আমার কাছে এক বিশাল আকারের মানুষ, যাঁর দিকে তাকাতে গেলে ঘাঁড় অনেকটা উঁচু করতে হয়, নিজেকে অনেক অনেক ছোট দেখা যায় তাঁর সামনে। সেই কল্লোল'দাও সেদিনই ঢাকা যাচ্ছেন, যেদিন আমি যাচ্ছি, শুনে কিরকম একটা মিশ্র অনুভূতি হল। পরদিন দুপুরে ঢাকা পৌঁছেই আমি সোজা শুদ্ধস্বরে, প্রকাশকের অফিসে, সুমেরু সকাল থেকে এয়ারপোর্টে বসে ছিল বলে জরুরী মিটিংকে ঠেলে ঠেলে সন্ধেয় নিয়ে ফেলেছিল, সেই মিটিং সারতে সে গেল তার অফিসে, দৃকে। সাগর আমাকে আজিজ মার্কেটে, প্রকাশকের অফিসে পৌঁছে দিয়ে চলে গেছে ছবির হাটে, সেখানে তখন ঘুড়ি উৎসবের প্রস্তুতিপর্ব চলছে। সন্ধেয় বন্ধুবর মাহবুব লীলেনের সাথে বইমেলা। আমার প্রথম বইমেলা ঢাকায়, প্রথম একুশে বইমেলা। ঘুরে-ফিরে-দেখে একরাশ উত্তেজনা আর আনন্দে মাতাল হয়ে আবার লীলেনের সাথেই হাঁটতে হাঁটতে ছবির হাট, সেখানে সাগর অপেক্ষা করছে, আমাকে পাঠশালায় পৌঁছে দেবে বলে।

    আলাপ হল ওয়েনের সাথে। ফরাসী যুবক, কী একটা কাজে বেশ কয়েকমাসের জন্যে ঢাকায় আছে। সাগর ওয়েনের সাথে এক অক্ষরও ইংরাজী বলে না আর ওয়েন? কতটা বোঝে না বোঝে আল্লাহ মালুম কিন্তু কথা যেটুকু বলে সাগরের সাথে, বাংলাতেই বলে। এক রিকশায় তিনজন, আমি-সাগর-ওয়েন। গন্তব্য ষ্টার কাবাব। সুমেরুর ফোন নট রিচেবল। পরোটা কাবাব, চিকেন তন্দুরি আর বোরহানী। সুমেরু ফোনে জানায়, কল্লোল'দা আর কৃষ্ণা বৌদি পাঠশালার দরজায় অপেক্ষা করছেন সন্ধে থেকে। আবার এক রিকশায় তিনজন, এবার সাথে পরোটা আর কাবাবের প্যাকেট।

    কল্লোল'দার সাথে দেখা হওয়ার পর একবারের জন্যেও মনে হয়নি যে এই মানুষটাকে আমি আগে কখনও দেখিনি বা ওঁর কথা ভাবলে আমার এক ভয় মিশ্রিত শ্রদ্ধাবোধ কাজ করত। আমি রান্নাঘরে খাবার গরম করার মাঝেই গিটার খুলে কল্লোল'দার গান শুরু হয়ে যায়, উঁকি দিয়ে দেখি, ছোট্ট টেপরেকর্ডার অন করে গালে হাত দিয়ে ওয়েন চুপ করে বসে আছে, চোখ বন্ধ করে সাগর শুধু হাতের ম্যাচবক্স দিয়ে তাল মিলিয়ে যাচ্ছে গিটারের সঙ্গে। টেলিফোনের ওধার থেকে কল্লোল'দা আমাকে একদিন গান শুনিয়েছিলেন মাঝরাতে, আর কল্লোল'দার ছবি দেখেছিলাম দময়ন্তীর দেওয়া ওয়েব অ্যালবামের পাতায়, আর সামনে ছিল কল্লোল'দার লিখে যাওয়া নকশাল অন্দোলনের কথা, সেই কারাগার, বধ্যভূমি... সে'রাতে গান চলে রাত একটা অব্দি। চার ঘন্টার ওই ঘরোয়া আসরের সবটুকু তোলা থাকে ওয়েনের ছোট্ট কিন্তু শক্তিশালী ডিজিটাল টেপরেকর্ডারে। কল্লোল'দার গান, গানের পেছনের কথা, মাঝে মাঝে আমাদের কিছু কথা, সব, সব তোলা থাকে ওয়েনের সেই রেকর্ডারে। যেটুকু জায়্‌গা সাগরের মোবাইল ফোনের মেমরি কার্ডে ছিল, সবটুকু জায়গা জুড়ে নেয় কল্লোল'দার গান।

    (চলবে)

  • kallol | 122.167.12.78 | ০৭ মে ২০০৯ ১২:৩৫410662
  • ওরে সামরান..... আমার দাড়ি নিয়ে টানাটানি কেন বাবা?
    ইয়ে মানে ওটা - ""তাতে নাইকো আগল নাইকো দ্বারী""
  • d | 144.160.5.25 | ০৭ মে ২০০৯ ১২:৩৮410647
  • :)))) মাক্কালি আমি না এটাই লিখতে গেছিলাম।
    পরে ভাবলাম সামরান হেবি সেন্টি সেন্টি মুডে আছে, খিল্লি দিলে দুস্কু পেতে পারে। তাই কাটিয়ে দিলাম ।

    ভাল কথা কল্লোলদার এই গানটা আর "বন্ধু মেঘ দে ছায়া দে' এই দুটোই আমার খুব পছন্দের।
  • samran | 117.99.33.148 | ০৭ মে ২০০৯ ১৪:১৪410648
  • এ মা!! আমি দ্বারী-কে দাড়ি করে দিয়েছি!!

    ও কল্লোল'দা,
    কিসু মনে নিও না য্যান..

    দমু অবশ্য আমার টাইপো বিষয়ে ওয়াকিবহাল আছে ভালমতন, চাপ নেই:-))
  • sumeru | 119.15.152.8 | ০৯ মে ২০০৯ ১৬:৩৬410649
  • কফিল আহমেদের গান এখানে শুনতে পাবেন-
    http://www.esnips.com/web/KafilAhmedergaan

    আর কল্লোলদা অনুমতি দিলে -
    :))
  • kallol | 220.226.209.2 | ০৯ মে ২০০৯ ১৬:৫৪410651
  • দিলাম
  • intellidiot | 220.225.245.130 | ০৯ মে ২০০৯ ১৭:০৮410652
  • ধন্যবাদ সুমেরু
  • sumeru | 119.15.152.8 | ০৯ মে ২০০৯ ১৭:১২410653
  • ও কল্লোলদা, আমি যে কি খুশি হইসি। অন্যদের শুননের জন্যি সটফট করসিলাম।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন