এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বইপত্তর

  • জন্মের মাটি

    indraaNee
    বইপত্তর | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ | ১৪২৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • indraaNee | 202.128.112.253 | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ২১:৫১398699
  • 'ভোর হবার মুখে আবছা অন্ধকারে ট্যাক্সি এসে হর্ন দেয়। ঘুম অনেক আগেই ভেঙেছিল গায়ত্রীর। সারা রাত বরং ভালো ঘুমই হয়নি তার, এমন এক ঘড়ি ধরে যাত্রার কথা থাকলে চাপা উদ্বেগে যেমন অনেকেরই বার বার ঘুম ভেঙে যায় তেমনই। অন্ধকার থাকতেই স্নান সেরে নিয়েছে সে। সুটকেস আর ব্যাগ তো দু-দিন আগেই গোছানো হয়ে গিয়েছে-গায়ত্রী আর সুধীনের দুটো আলাদা সুটকেস, একটা কিটস ব্যাগ, যার যার নিজস্ব হাতব্যাগ ও কাঁধের ঝোলা। ভোরের বনগাঁ লোকাল ধরবে শিয়ালদা থেকে, সকাল ৫-৩৫ এর গাড়ি।'
    ঠিক এইভাবেই শুরু হয়েছে শান্তা সেনের 'জন্মের মাটি' উপন্যাস। এমনই বিশদ, এমনই খুঁটিনাটি আর শুরু থেকেই যাত্রাপথের সুরটি বেঁধে দেওয়া যেন।
    শান্তা সেনের প্রথম উপন্যাস 'পিতামহী' বরিশালের সেই পঞ্চাশের দাঙ্গার সময় , এক বৃদ্ধার কলকাতায় চলে আসার আখ্যান।'জন্মের মাটিতে' সেই বৃদ্ধার পৌত্রী প্রৌঢ়া গায়ত্রী চলেছে বাংলাদেশে-ঢাকা হয়ে বরিশাল যাবে সে-পঞ্চাশের দাঙ্গার পরে যেখানে আর কোনদিন পা রাখে নি সে-সেই দেশের বাড়িখানি একবার দেখতে যাওয়া-বনগাঁ লোকাল ধরে তারপর সীমান্ত পেরিয়ে।
    সমগ্র লেখাটির উপজীব্য যাত্রাপথের বিশদ, অবশ্যম্ভাবী স্মৃতিচিত্রগুলি, এবং আজকের বাংলাদেশ। যদিও ঘটমান বর্তমানের বর্ণন এই উপন্যাসে তবু অদ্ভূত এক রোমন্থনের স্বাদ গোটা লেখায়-এত সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশদ-ফিরে ফিরে যেন নেড়ে চেড়ে উল্টে পাল্টে দেখে নেওয়া এই অভিযানের দিনগুলি- যাত্রাপথের কটু, তিক্ত,কিম্বা মধুর স্বাদ আরো একবার পেতে চাওয়া, কিম্বা এক অনতিক্রম্যকে বারেবারে স্পর্শ করে পরিমাপ চাওয়া-বুঝতে চাওয়া সেই নিতান্ত অনতিক্রম্যতা আপাত: কি চিরন্তন।
  • indraaNee | 202.128.112.253 | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ২১:৫৫398710
  • গাঙচিল থেকে প্রকাশিত বইটি গত বইমেলা নাগাদ। যোগেন চৌধুরীর করা প্রচ্ছদ, সযতন মুদ্রণ।দাম দেড়শো টাকা।
  • i | 202.128.112.253 | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ২২:২৭398720
  • গায়ত্রী এর আগে কোনো সীমান্ত দেখে নি। প্রতিটি মুহূর্ত বিষাদময়। জিজ্ঞাসার। স্মৃতিময়তার।
    "... বনগাঁতেই এখন ট্রেনের লাইন শেষ। কোথায় গেল খুলনা পর্যন্ত টানা সেই লম্বা রেললাইন?...কোনো মানুষের যেমন কনুই থেকে হাত ছঁটা হয়ে যায় বা কেউ ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটে, ছেঁটে ফেলা পা নিয়ে, তেমন এই পথ খন্ড হয়ে গেছে দেশের আস্ত শরীর থেকে। এই পথে কোনো মানুষের আর এগোনো নেই।'
    কিম্বা,"... নো-ম্যানস্‌ ল্যান্ড পেরিয়ে কাঁটাতারের বেড়া, তার মাঝখান দিয়ে প্রশস্ত ফটক।...একজন লোক একটা লম্বা খাতা খুলে সকলের পরিচয়াদি লিখে রাখছে।...সীমান্ত পেরিয়ে এই লোকটিই বাংলাদেশের মাটিতে গায়ত্রীর দেখা প্রথম বাংলাদেশী। গায়ত্রী যখন এ দেশের মানুষ ছিল, তখন কি এ-ও ছিল এই দেশে?তারা কি কখনও একই সময়ে একই দেশের মানুষ ছিল?...গায়ত্রী তো সবাইকে বলে এসেছে, সে তার দেশে যাচ্ছে। তবে এ ছেলেটি তার দেশের লোক না ভিনদেশী? এ কি শুধু 'বাংলাদেশী?'
    সে সময় কলকাতায় প্লেগের গুজব। সেই নিয়ে কিছু নাটকীয় মুহূর্ত তৈরী হয়ে যায়। পড়ছি, শুনুন-
    'গায়ত্রীদের পেছনেই এসে গিয়েছে আর এক প্রবেশকারীর দল। সেই দলে অনেক মহিলা। খাবার আছে কি না এই প্রশ্নের উত্তরে মহিলারা বলেন, 'আছে, শুধু কয়টা লাড়ু।' 'লাড়ু?লাড়ুও নিতে পারবেন না, ফ্যালাইয়া দ্যান সব।'...মহিলারা আকুল হয়ে পড়েন-'শুধু তো মোটে দুই কৌটা লাড়ু, আর তো কিছু না, পোলাপানের হাতে দেওনের লইগ্গা।' খাটো শরীরে মোটা পেটে টাইট করে বাঁধা বেল্ট এক সান্ত্রি হেলেদুলে কয়েক পা এগিয়ে এসে দাঁড়ায়। পোজ নিয়ে সে পথের উপরে দাঁড়িয়ে ঘাড় উঁচু করে কথা বলে, যেন নাটকের মঞ্চে অভিনেতা... 'আপনে কি প্রন্মাণ করতে পারবেন যে ঐ লাড়ুর মইধ্যে কোনো প্লেগের বীজাণু নাই? পারবেন প্রমাণ করতে? তা যদি না পারেন, তাইলে আপনারে ঐ লাড়ু সব ফ্যালাইয়া দিতেই হইব।'... সুধীন দু-পা ঘুরে এসেছিল, বলে, 'ও-দিকে একজন দেখি মরিয়ার মতো আপেল কামড়াচ্ছে। সঙ্গে প্রচুর আপেল ছিল, সব ফেলে দিতে হবে, প্রানে ধরে তা পারছে না, খেয়ে নিচ্ছে হাউ হাউ করে, অনেক আপেল'।
  • i | 202.128.112.253 | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ২২:৪১398721
  • সীমান্ত থেকে ট্যাক্সিতে যশোর রোড ধরে যশোর।রাস্তা ঝকঝকে, মসৃণ। সেখান থেকে বাসে ঢাকা।গায়ত্রী জানতে চায়' এই বাসটাই কি টানা ঢাকায় চলে যাবে , না বদল-টদল আছে?' সুধীন বলে,'পদ্মার পাড়ে গিয়ে খেয়া পার হতে হবে, সেই গোয়ালন্দে একবার। খেয়া পেরিয়ে আবার অন্য বাস।' গোয়ালন্দ!... আজ দেখা হবে গোয়ালন্দের সঙ্গে!'
    অথচ পদ্মার পাড়ে যখন বাস এসে থামে আর ছোটো ছেলের দল তাদের মাল বইবে বলে রোগা রোগা হাত বাড়ায়-'আমারে দ্যান, আমারে দ্যান', বাস থেকে নেমে গায়ত্রী কোনো বড় স্টিমারঘাটই দেখতে পায় না।নদী সরে গেছে, গোয়ালন্দ এখন নদী থেকে বেশ দূরে। এই জায়গা দৌলৎদিয়া।
    সেখান থেকে লঞ্চে আরিচাঘাট। বাসে সোজা ঢাকা। গাবতলি।ট্রাক, লরি, ট্যাক্সি, রিকশা আর বেবি ট্যাক্সি-মানে অটো আর কি।

  • i | 202.128.112.253 | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ২৩:১২398722
  • ঢাকায় নাজমা, মোহন, শাহদাত, জসিম..কমল মিল্টনদের সঙ্গে মতিঝিল , ইউনিভার্সিটি, রমনা, পুরানা পল্টন...
    গায়ত্রীর স্মৃতির সুতোয় টান-...'পুরানা পল্টন, রমনা, মগবাজার, গেন্ডারিয়া, বাংলাবাজার- এসব এত চেনা নাম। রমনার মাঠ আর লেক, বেশ বড় লেক আছে না রমনায়? কোন এক বাঙাল রসিকতা করে পদ্য তৈরী করেছিল-আমি কমু না/ কোথায় আমার যমুনা/রমনায় আর ঢাকুরিয়া গেলে ল্যাকে পাবা তার নমুনা।'
    কদিন শুধু সাহিত্য আলোচনা, নিমন্ত্রণ রক্ষা আর গান। রবীন্দ্রনাথের গান-'...গায়ত্রী বলল, ' তোমাদের কাছে রবীন্দ্রনাথের গান একটা অন্য ব্যাপার যা পশ্চিমের বাংলায় বসে বোঝা যায় না.. কি গান তুললে আজ আসিফ?' 'তুললাম-এই-দাও হে হৃদয় ভরে দাও, বাজাও আমারে বাজাও, আজি মর্মরধ্বনি কেন জাগিল রে-এই কয়টাই।গাইলাম খুব নিচু স্কেলে, উঁচু জায়গা ছাইড়্যা দিলাম।'...আসিফ গুনগুন করে নিচুতে গলা নামিয়ে গায়-'আজি মর্মরধ্বনি.. আসিফ থেমে যায় আর মোহন গলা ছেড়ে গাইতে থাকে 'কোন ভিখারি হায় রে।'... আসিফ আবার ধরে, দু জনে গলা মিলিয়ে গায়।...সিঁড়ি বেয়ে তারা নেমে আসে। মোহন গুনগুন করে গাইতে থাকে 'আজি মোর অন্তরমাঝে সেই পথিকের পদধ্বনি বাজে।' রবীন্দ্রনাথের গানে, চকিতে চকিতে ঘুম ভেঙে যাওয়ার সুর রাতের প্রহরে গুঞ্জিত হয়, মর্মরধ্বনি বাজতেই থাকে...'
  • i | 202.128.112.253 | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ২৩:৩১398723
  • নাজমা-মোহনদের বাড়িতে আরো একটি দিন ।কদম ওদের বাড়িতে চা করে, রান্না করে,কাপড় ধোয়। কদমের সঙ্গে গায়ত্রীর সামান্য কথাবার্তা শুনুন একটু। কদম বলে,...'আমার এক ফুফাতো বইন গেছিল কইলকাতায়, ছয় মাস আছিল।'
    'তুমি কখনও যাও নি তো? এবার যেও। আমাদের বাড়িতে থাকবে। তার আগে পাসপোর্ট করে নিও।'
    'ঐডা করনের ঝামেলা আছে না?'
    'আছে।তবে যেতে হলে করতেই তো হবে। জানো কদম, আগে এই ঢাকা আর কলকাতা একই দেশ ছিল। তখন কোনো পাসপোর্ট লাগতো না'
    'একই দেশ আছিল?' হায় আল্লা! তয় ভেন্ন হইল ক্যান?'
    ...'একই দেশ আছিল? ঢাকা থিকা সিধা কইলকাতায়, অ্যামনেই যাওয়া যাইত?'

    আর একটি কথোপকথন শোনাই।মোহন আর গায়ত্রীর কথা-
    সুধীন বলে,...'বা: ঐ ফুলদানিতে এত ফুল? কে সাজিয়ে রেখেছে আজ?'গায়ত্রী বলে।'কে আর? বাবু শ্রীযুক্ত মোহন মহম্মদ মকসুদ আলি শাহেব নিশ্চয়।'
    'ঐ একটা নাম! যেখানেই যাব, পাসপোর্টে করে নিয়ে যেতে হবে!'
    'জন্মাবে মুসলমান হয়ে, নাম রাখবে ব্রাহ্মণ পন্ডিতের, তা কি করে হবে?' গায়ত্রী মোহনের দিকে তাকিয়ে বলে, 'তোমার তো পরজন্মও নেই, নইলে বলতাম জন্মান্তরে বিশ্বম্ভর চক্রবর্তী কি বিরূপাক্ষ হালদার কিছু একটা হয়ে জন্মিও।'
    'বাব্বা:, এমন খটোমটো সংস্কৃত নামের দরকার নাই, একটা সাধাসিধা সহজ নাম, একটা বাংলা নাম থাকলেই কি সুন্দর হয়, তাই না? শুধুই বাংলা নাম।'
  • i | 202.128.112.253 | ০১ মার্চ ২০০৮ ০০:২১398724
  • সমস্ত গাড়ির নম্বরপ্লেটে বাংলা ভাষা, বাংলা সংখ্যামালায় দেওয়া নম্বর- "ঢাকা-মেট্রো-ক-১২৩৪...এইরকম। গাড়ির নির্দেশও বাংলায়-ভেঁপু বাজান, থামুন, আস্তে চালান,সংকেত দিন কিম্বা এবার আসুন।
    স্মৃতিসৌধর সামনে এসে দাঁড়ায় গায়ত্রী।'সমস্ত জমিটা জুড়ে বড়ো বড়ো গাছ দাঁড়িয়ে আছে আর আছে ছড়ানো মুসায়েন্ডা।.... গোলাপী রঙের গুচ্ছ গুচ্ছ ফুল। একটু এগোলেই সামনে এসে দাঁড়ায় স্মৃতিসৌধ। ... বিশাল চ্‌ত্‌বরের মাঝখানে উচ্ছ্বসিত ফোয়ারা।... পায়ের তলায় একাত্তরের গের্নিকা।'... মণিদা বলেন অনুর কথা।....'আমার ফুফাতো ভাই অনু, রংপুরের ছেলে, মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেয়... পাকিস্তান বাহিনী সারেন্ডার করার ক-দিন আগে পর্জন্ত তার খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল। তারপর আর হদিশ নেই....বিয়ে করেছিল ছেষট্টী সালে,... তিয়াত্তর সালে এক সময় তার এক চাচাতো ভাইএর শালা রঁজুর সথে বিয়ে হয়ে যায় অনুর বউ দিলারার। বিয়ের থিক একদিন পরে অনু বাড়িতে ফিরে আসে... পরএর দিন সকলের ঘুম থেকে ওঠার আগে, অন্ধকার থাকতেই সে কোথায় চলে যায়...'... গয়ত্রীর মনে পড়ে, বাহাত্তরের গোড়ায় কোনো এক সময়ে আনন্দবাজার পত্রিকাতে দিনের পর দিন একটা বিজ্ঞাপন বের হত, একটি বালিকার ছবি দিয়ে। ফর্শা, রোগা, শান্ত চেহারার এগারো-বারো বছরের একটি মেয়ে, শাদা ফ্রক পরা, শাদা রিবন মাথায় বাঁধা, নাম মধুমিতা সাহা, যশোর থেকে আসবার পথে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে,... অনেকদিন টানা বেরিয়েছিল বিজ্ঞাপনটি।... সিমেন্ট-কংকৃতে গেঁথে রাখা সেই সময় এখানে।"
  • dd | 58.68.82.178 | ০১ মার্চ ২০০৮ ০০:৪১398725
  • ক্যানো নাক গলালাম?
    পাছে তুমি ভাবো কেউ পড়ছে না, কেউ এনজয় করছে না। সেইজন্যে। পাকামী করে।
    যদি উৎসাহ হারিয়ে ফ্যালো।
    আসলে সবাই দমবন্ধ করে বসে আছে পরের পোস্টিঙের জন্য। আম্মো।
    আমি আবার অ্যাজমার রুগী - খেয়াল রেখো।
  • Paramita | 216.10.193.21 | ০১ মার্চ ২০০৮ ০০:৪৬398726
  • :)

    আমিও কান পেতে আছি জানিয়ে গেলাম।
  • indraaNee | 202.128.112.253 | ০১ মার্চ ২০০৮ ০১:০৬398700
  • এবারে লঞ্চে চাঁদপুর। সেখান থেকে স্টীমারে বরিশাল।বুড়িগঙ্গা বেয়ে যেতে যেতে গায়ত্রী দেখে ধলেশ্বরীকে তারপর শীতলক্ষ্যা।গায়ত্রীর স্মৃতির অমোঘ অবগাহনে রূপসা, কীর্তনখোলা, আড়িয়াল খাঁ। এক সময়ে লঞ্চের গতি কমে আসে।'হঠাৎ গায়ত্রী দেখে বিপরীত পাড় থেকে এক লম্বা চিপছিপে নৌকো দ্রুত গতিতে আশছে, ঢেউকে ধাক্কা দিয়ে দিয়ে। নৌকো বাইছে দু-জন মাঝি, একজন জোয়ান, আরেকজন বয়স্ক।... এ তো প্রায়ই দেখত, বছরে অন্তত একবার, তার বাল্যে ও কৈশোরে। হঠাৎ তার বুক তোলপাড় হয়-ও অছিমদ্দি, ও খালেদ, কত কাল, কতকাল তোমাদের মুখ দেখি না। তোমরা আছো, এখনও আছো!'

    চাঁদপুর থেকে বরিশাল।
    'ইংরেজের হাতে পত্তন হওয়া এই শহর... এর বাইরে আর এক বিস্তীর্ণ বরিশাল-... পর্তুগিজ আর নগ দস্যুদের আক্রমণেও অনাহত মাটির উর্বরতা, শস্যশালিনী খেতের মাথায় জলভরা মেঘ, পাড়-ভাঙা নদীএর স্রোত.. হোগলা আর বেতের ঝাড়, গাব-নিসিন্দা-হিজল-কাঁঠালের বন। তার আড়ালে এক নিভৃত বরিশাল। সেখানে টিনের বেড়া টিনের চাল দেওয়া বাড়ি, তার উঠোনে ধান শুকোয়, চালতা-জামরুল গাছ...ভেসে যায় বাজকুড়ালের ডাক।... কাঠের জ্বালে গুড়-নারকেলের পাকে নাড়ুর গন্ধ বাতাসে, নবান্নর চালমাখা দিয়ে তৈরি চন্দ্রকেতু পিঠে কলার পাতায়।' আধুনিক বরিশাল শহরে অবশ্য মালয়েশিয়ার হাল্কা শৌখীন বাসন-গৃহস্থের ঘরে।মহিলাপরিষদের জেলাস্তরের সম্মেলন-ইউনিফর্ম ফ্যামিলি কোডের প্রস্তাবনা।একটি কলেজে পড়া আধুনিক মেয়ে গায়ত্রীকে প্রশ্ন করে, বরিশাল শহরে।'আচ্ছা, কলকাতায় কি মেয়েরা বোরখা পরে? স্কুলে-কলেজে বোরখা পরে যায়?'... আমাদের এদিকে এখন মেয়েদের উপর বোরখা চাপানোর চেষ্টা চলছে। নানা রকম কথা হয়। আমাদের মা-চাচি-নানি-দাদি কেউ কখনও বোরখা পরে নি। ....'গায়ত্রী তাদের বেগম রোকেয়ার অবরোধবাসিনীর কথা বলে। বলে মহিলা সংগঠনের কথা। আধুনিক প্রজন্ম রাজনীতিতে উৎসাহিত নয়-আলাপচারিতায় বোঝে গায়ত্রী।হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়েও নানা কথা উঠে আসে ঢাকায়, চাঁদপুরে, বরিশালে।..
    'এখানে হিন্দুদের দেশত্যাগ চলছে সমানে। কী পরিবেশে আমাদের থাকতে হয় তা বাইরে থেকে কেউ বুঝবে না। মুক্তিযুদ্ধের পরে একতা আশা হয়েছিল, রাষ্ট্র বোধ হয় সেকুলার হবে.... , নিরূপমা বলে।...
    সুনীল বলে, আমরা অবশ্য দেশ ছাড়ার কথা ভাবি না।... বাংলাদেশ যে তৈরী হ'ল তার জন্য হিন্দুদের ত্যাগ কি কিছু কম? তবু এ দেশ যেন আমাদের দেশ না।'... রিয়াজ বলে, এটাই সত্য কথা, হিন্দুরা কোথাও ভরসা পায় না। একজন হিন্দু যদি দেশ ছাড়ে, আরো একজন হিন্দু আরো ভয় পায়, দেখে সে আরো একলা হইয়া গেল। তবু, যার যেখানে দেশ সেখানেই তারে থাকতে হয়। তিন কোটি হিন্দু এই দেশের, কখনও কইল না এ আমার দেশ, এখানে আমাদের থাকতে দিতে হবে...'

  • i | 202.128.112.253 | ০১ মার্চ ২০০৮ ০১:৩৯398701
  • শেষ পর্ব-গন্তব্যে পৌঁছনো। সত্যি কি গন্তব্যে পৌঁছবে গায়ত্রী? কি দেখবে সেখানে? জন্মের ভিটা? সেই খাল?বাল্যসখা সুজন এখনও বসত করে সেই গ্রামে?আদৌ চিনতে পারবে সে গ্রামের পথ? সেই সব চিহ্নগুলি?
    বইটি পড়ে নিন, পাঠক।
    আমি শুধু আর সামান্য অংশ পড়ে শোনাবো।
    'এবার কালীখোলা শেষ। তারা নেমে পড়েছে ধানক্ষেতের মধ্যকার পায়ে চলা পথে। সরস সজল ধানখেত-বহুদূর ঢেউ খেলানো। ধানগাছেরা কোমর ছাড়িয়ে উঠে দুলছে বাতাসে... জনহীন আদিগন্ত শস্যখেত। এক মুহূর্ত স্থির হয়ে দাঁড়ায় গায়ত্রী, এই স্তব্ধতার ভাষা শোনে। এই জল কথা বলে। মাটি পায়ের পাতায় হাত বুলোয়.... পিতৃভূমি। জন্মের মাটি।...
    শুভ বলে, 'একটু দাঁড়াও তো মাসি, এই রাস্তার শেষে তোমার একটা ছবি তুলি।'
    সেই শূন্যকে মাথায় রেখে গায়ত্রী দাঁড়ায়, তার ছবি তোলা হয়। পেছনে ফিরে তাকালে , ধানক্ষেতের শেষে গাছপালার সারি দিয়ে ঢাকা তার গ্রামটির প্রান্ত আর একবার দেখে নেওয়া যায়। গায়ত্রী তা জেনেই সামনে হাঁটে। শুভ তার ব্যাগের মধ্যে ক্যামেরাটা রাখে, তারপর বলে, 'মাসি দেখতে পাচ্ছ, এখনও দেখা যায় তোমার গ্রাম? তাকাও, দ্যাখো।'
    গায়ত্রী আর ফিরে তাকায় না।"

    পরদিন সে ঢাকা থেকে ফের বাসে ওঠে। সীমান্তে চলে যায়।

    দেশভাগ- উদ্বাস্তু- ছিন্নমূলের ইতিহাস- স্মৃতিচারণ- দলিল দস্তাবেজ- মিথ কিম্বা সত্যাসত্য-'জন্মের মাটি' কি সেই তালিকায় একটি নাম যুক্ত হ'ল শুধু? নাকি আজকের ছিন্নমূলদের জন্মের মাটি খুঁজে ফেরার অবিরত নিষ্ফল প্রয়াসকে মনে করাবে গায়ত্রীর এই যাত্রা?
    আপনিই বিচার করুন, হে পাঠক।
  • nyara | 67.88.241.3 | ০১ মার্চ ২০০৮ ০১:৪২398702
  • এই শান্তা সেন কি বেথুনের বাংলার অধ্যাপিকা শান্তা সেন, অরুণ সেন যাঁর স্বামী?
  • i | 202.128.112.253 | ০১ মার্চ ২০০৮ ০১:৪৪398703
  • হ্যাঁ
  • arjo | 168.26.215.54 | ০১ মার্চ ২০০৮ ০১:৪৭398704
  • খুব ভালো লাগছে। অপেক্ষা করে থাকছি এক একটা পোস্টের জন্য।
  • arjo | 168.26.215.54 | ০১ মার্চ ২০০৮ ০১:৫৩398705
  • শেষ পোস্টটা এই পড়লাম। ইন্দ্রাণী দারুণ লাগল।
  • dd | 58.68.82.178 | ০১ মার্চ ২০০৮ ০১:৫৪398706
  • অরুন? সেন? অরুন সেন? অ্যাঁ?
    নাম পদবী আর দুয়ের কম্বিনেশন খুবই কমন। তাও ও।

    কস্মিন কালেও কি বদ্ধোমান টাউন ইশ্‌কুলে পত্তেন? ঐ অরুন সেন ?
  • Du | 67.111.229.98 | ০১ মার্চ ২০০৮ ০১:৫৮398707
  • এই লেখাটার রিভিউ তোমার হাতই চাইছিল, ইন্দ্রাণী ।
  • tan | 131.95.121.132 | ০১ মার্চ ২০০৮ ০২:৩৫398708
  • অপূর্ব! খুব সুন্দর।
    ধন্যবাদ ও অভিনন্দন।
  • pragati | 121.246.71.76 | ০১ মার্চ ২০০৮ ১৪:১৭398709
  • মুগ্‌ধ হয়ে পড়লাম।

    একটুও কম না, একটুও বেশী না --- ভীষণ ভালো একটি আলোচনা।
  • § | 122.162.95.23 | ০২ মার্চ ২০০৮ ০০:২৯398711
  • টুপি খুললাম।
  • Tirthang | 98.216.49.156 | ০২ মার্চ ২০০৮ ০৪:১৯398712
  • বা:!
  • Tim | 204.111.134.55 | ০২ মার্চ ২০০৮ ০৬:০১398713
  • বেশ কয়েকদিন পরে এসে মন ভরে গেল। অসাধারন হয়েছে লেখাটা।
  • Blank | 59.93.196.69 | ০৩ মার্চ ২০০৮ ০০:৪৭398714
  • দারুন
  • Suhasini | 203.123.181.130 | ০৩ মার্চ ২০০৮ ১১:০৭398715
  • অসামান্য রিভিউ। ধন্যযোগ ইন্দ্রাণী।
  • mita | 129.33.49.251 | ০৪ মার্চ ২০০৮ ০০:০১398716
  • কতদিন পরে তোর লেখা পড়লাম। কি ভালো লিখেছিস রে!
  • ranjan roy | 122.168.69.172 | ০৮ মার্চ ২০০৮ ২৩:১৯398717
  • খালি ভাবছিলাম--ইন্দ্রাণীকে ই-মেল করবো---অনেকদিন লেখা দেখছিনে। এমন সময় এই রিভিউ- মনটা ভরে গেল। কিন্তু আলাদা পূর্ণাঙ্গ লেখা চাই।
  • dimpu | 117.99.7.70 | ০৯ মার্চ ২০০৮ ০০:৩০398718
  • কি যে লিখি----বুঝতে পার্ছি না।
  • Sanda | 195.229.236.216 | ০৭ এপ্রিল ২০০৮ ২২:১০398719
  • আমি এপাড় বাঙ্গলা বা পশ্চিম বাঙ্গলা বা কলকাতা-র দিকের, তবু আমার চোখে জল। কতোদিন, কতো বছর, আমার যাওয়া হয়নি আমার গ্রাম, আমার দেশের বাড়ি! জানিনা এই জন্মে আর হবে কি না!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল প্রতিক্রিয়া দিন