এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বইপত্তর

  • সাত্যকি

    Milli
    বইপত্তর | ১০ জানুয়ারি ২০০৮ | ৮৬৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Milli | 131.95.121.132 | ১০ জানুয়ারি ২০০৮ ০৮:১৮393365
  • এটা একটা কল্পবিজ্ঞানগল্প, তবে এইধরনের প্লট খুব পরিচিত।
  • Milli | 131.95.121.132 | ১০ জানুয়ারি ২০০৮ ০৮:৪০393376
  • সত্যকের রোবট দুজন,নাইন্টি-টু আর হান্ড্রেডটেন যাদের উনি নান্টু আর হ্যান্ডু বলে ডাকেন, এরা দুজন এসে রুবেনকে সত্যকের পায়ের কাছে ফেলে মাথা ঝুঁকিয়ে সেলাম করে চলে গেলো। নান্টু আর হ্যান্ডু দরকার ছাড়া কখনো কোনো কথা বলে না, এরা দুজনেই অ্যাকশন-ধর্মী রোবট, কথা কম কাজ বেশী নীতি এদের।
    রুবেনকে দড়াম করে ফেলেছিলো,অল্প কাতরানি শোনা গেলো। রুবেনের জামায় এখানে ওখানে লাল দাগ,হয়তো নান্টু আর হ্যান্ডু ধরে আনার সময় মেরেছে,হয়তো রুবেন রেজিস্ট করছিলো... কেজানে!
    সত্যক রুবেনকে ধরে তুললো,সোফায় বসালো, রুবেন হাতজোড় করছিলো, ঠোঁটের কাছে কাটা, রক্ত গড়িয়ে পড়ছিলো, হয়তো যখন ফেলেছে তখন লেগে কেটেছে...করুণ গলায় রুবেন একটু জল চাইলো।
    সত্যক জল দিলো, টেবিলের উপরে বোতলেই জল ছিলো। কয়েক ঢোক জল খেয়ে রুবেন ধন্যবাদ দিলো।
    রুবেন ধরা পড়ে গেছে, এখন সত্যকের হাতের মুঠায়, সব জারিজুরি ভেঙেচুরে গেছে, কিন্তু এই অবস্থায় রুবেনকে কিকরে শাস্তি দেবে ভেবে পেলো না সত্যক। আধমরার মতন পড়ে ছিলো রুবেন। সত্যক সামনাসামনি তো আগে দেখেনি রুবেনকে, রুবেনও সামনাসামনি দেখেনি সত্যককে, যখন কথাবার্তা হতো যন্ত্রের মাধ্যমে, ইন্টার্প্ল্যানেটারি নেটোয়ার্কে, তখন ভিশনপ্লেটে দেখে এরকম বোঝা যায় নি। খুব ডাঁটওলা মনে হতো রুবেনকে, নিষ্ঠুরধরনের কাটা কাটা কথা, হুমকীর মতন কথাও বলতো, নীআস্ট প্রোজেক্টের অসাধারণ সাফল্যই হয়তো ওর অত অহংকার এর কারণ ছিলো। তখন হয়তো চেহারাও এত দুর্বল ছিলো না, সাম্প্রতিক বিপর্যয়ে হয়তো রুবেন মানসিকভাবেও খুবই দুর্বল হয়ে গেছে।
    সত্যকের মনে পড়লো কদিন আগের রুবেনের সেই হুমকী, পৃথিবী উড়িয়ে দিতে পারে এইরকম হুমকী। হঠাৎ রাগটা ফিরে এলো সত্যকের, এ ছেলে শাস্তির যোগ্য। এগিয়ে গিয়ে ওর চুলের মুঠি ধরলো সত্যক। রুবেন ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলো, কিযেন বলতে চাইলো, পারলো না। কাঁপছিলো ও, সত্যক কিছু করার আগেই অজ্ঞান হয়ে গেলো।
    সত্যক ওর মুখেচোখে জল দিলো, কেমন অনুশোচনা হচ্ছিলো। রুবেনের মুখ একদম ফ্যাকাশে, চোখ দুটো ঘোলাটে হয়ে গেছে! আগে সত্যক যখন ভিশনপ্লেটে দেখতো, তখন প্রথম চোখে পড়তো রুবেনের কালো চোখের তীব্রোজ্জল স্বচ্ছ উদ্ধত দৃষ্টি। এখন যেন সেচোখের দৃষ্টি ধোঁয়াশায় ঢাকা।
    জ্ঞান ফিরে পেয়ে কষ্টে উঠে বসে,সত্যকের কাছে মাফ চায় আগে যা করেছে তার জন্য,এখনি মাফ চায়, পরে যদি আর সময় না হয়! হয়তো আর বেশীদিন সে বাঁচবে না! রুবেন খুব অনুনয় করে বলে, সত্যকের কানে ধরা পড়ে ওর গলার স্বরের আন্তরিকতা।
    রুবেন বোধহয় আশা করেনি সত্যক বুঝবে, বার বার করে বলে, বলতে কষ্ট হচ্ছে বোঝা যায়, তবু বলে।
    তারপরে ইতস্তত: করে অনুরোধ করে, ""টিনিয়াম থেকে যদি কোনো খবর পান, একটু যদি খোঁজ নেন দয়া করে, কি হলো সেখানে... আমি কিছুই দেখতে পাই নি,ওখানে আমি তখন সবেমাত্র এসেছি টুর থেকে ফিরে, নামতেও পারিনি, তার আগেই নাইন্টি টু আর হান্ড্রেড গিয়ে...আমি বাধা দিই নি, কি হবে, আমি একদম নিরস্ত্র, তাছাড়াও রোবটের সঙ্গে কি মানুষ পারে, তবু ওরা আমায়...আহ...ওখানে কি হলো খবর পেলে আমায় একটু বলবেন দয়া করে?""

  • Milli | 131.95.121.132 | ১০ জানুয়ারি ২০০৮ ০৯:১৭393386
  • টিনিয়াম এক ছোট্টো গ্রহ, টিনি থেকে টিনিয়াম। এটা স্বাভাবিক গ্রহ নয়,যেসব অ্যাস্টরয়েডদের গতিপথ পৃথিবীর খুব কাছ দিয়ে কাছ দিয়ে গেছে,পরিভাষায় যাদের নীয়ার আর্থ অ্যাস্টরয়েড বলে,যারা বহুকাল পৃথিবীর পক্ষে খুব বিপজ্জনক ও ভয়ের ছিলো,ইম্প্যাক্টের সম্ভাবনার জন্য-- সেইসব নিকটপৃথিবী স্পেসপাথর জুড়ে জুড়ে তৈরী হয়েছে টিনিয়াম। যা ছিলো বিপদের ও ভয়ের, তাই এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে সম্পদ সুযোগ গর্ব ও ঈর্ষা।
    তবে কিনা টিনিয়াম পৃথিবীর মানুষের পক্ষে একা একা তৈরী করা সম্ভব হয়নি, এটার জন্য গ্যালাকটিক স্পনসরেরা সাহায্য করেছে, পৃথিবীর একটি ছোট্টো গ্রুপ যাদের মূল হোতা এই রুবেন, এরা ই প্রধান উদ্যোগ নিয়ে খুবই লেগে থেকে কাজটা দাঁড় করিয়েছে। প্রথমদিকে বিরোধীরা খুবই সরব ছিলো,কালক্রমে টিনিয়াম ব্যাপারটা ভালো দাঁড়িয়ে যাওয়ায়, বিরোধীদের সরব গলা আস্তে আস্তে নীরব হয়ে গেছে।
    টিনিয়াম টুকরো টুকরো অ্যাস্টরয়েড জুড়ে তৈরী,তবে চেপে একসঙ্গে গলিয়ে সলিড করে দেয়া না, আলগা চাপে জোড়া, ইচ্ছে করেই সুপরিকল্পিতভাবে অমন করা, ফলে গ্রহটার সারফেসে কেউ থাকতে না পারলেও ভেতরে বিস্তর জায়গা।সেখানে বাতাস ও আছে, বাগানও ও শস্যঘরও আছে যারা কিনা নিউক্লিয়ার প্ল্যান্টের থেকে পাওয়া শক্তিতে যে আলো জ্বলে সেই আলো থেকে ফোটোসিন্থেসিস করে। সমুদ্র না থাকলে কি হয়, বিভিন্ন জলসমৃদ্ধ কমেট থেকে পাওয়া জলও বিস্তর।সারফেসে শুকনো পাথুরে পাহাড়ী ন্যাড়া গা আর স্বচ্ছ আবরণে ঢাকা সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট! আর এইসব পাহাড়ী ঢাকনার আড়ালে আড়ালে সুরক্ষিত প্রবেশপথ,রীতিমতন পাসওয়ার্ড আর ডিএনএ আইডি মিলিয়ে ঢোকবার ব্যবস্থা।
    রুবেন ও তার ছোট্টো গ্রুপই প্রথম ওখানে থাকতে শুরু করে, কালকরমে অন্য লোকেরাও যেতে শুরু করে ফর্মালি অ্যাপ্লাই করে ও সিলেক্টেড হয়ে। এখন পপুলেশন বেশ ভালোই, সেখানে সুযোগসুবিধাও নাকি বিস্তর, ক্রমে টিনি ঐ টিনিয়াম রীতিমতন ঈর্ষাযোগ্য হয়ে পড়েছে,সঙ্গে কিছুটা ভয়েরও। ঐ অতীব দক্ষ লোকেরা যদি পৃথিবীকেই নিজেদের কলোনী করে ফেলে, এই ভয় থেকেই প্রথমে লড়াইটা শুরু হয়।
  • Milli | 131.95.121.132 | ১০ জানুয়ারি ২০০৮ ০৯:৪০393387
  • টাইপো সংশোধন: কালক্রমে
  • Milli | 131.95.121.132 | ১১ জানুয়ারি ২০০৮ ০০:১৯393388
  • মাত্র দশ বছরে এতটাই উন্নতি হয়েছিলো টিনিয়ামের যে সত্যি সত্যি অভিনিবেশ দাবী করার মতন। তার উপরে যে গ্যালাক্টিক গ্রুপ ওদের স্পনসর তারা খুব রিসোর্সফুল। টিনিয়াম সেইজন্যেও অন্যের ঈর্ষার কারণ।
    এখন সৌরজগতের বিভিন্ন হ্যাবিটেবল গ্রহে উপগ্রহে অনেক ছোটো বড়ো কলোনী আছে,নিজেদের মতন করে তারাও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জীবনযাত্রা উন্নত করার, যথাসম্ভব জ্ঞানবিজ্ঞানচর্চার উন্নতি করতে, সকলে মিলে পৃথিবীর সঙ্গে যৌথ প্রচেষ্টায়। কিন্তু টিনিয়াম এইভাবে বাইরের স্পন্সর পাওয়ায় এই সৌর-অ্যালায়েন্স নীতিতে একটা বিরাট চিড়,সেইজন্যেই নীতিগতভাবে অনেকেই টিনিয়ামের বিপক্ষে।
    টিনিয়ামের পক্ষে যুক্তি ছিলো পুরো প্রোজেক্টটাই অসম্ভব হতো বাইরের সাহায্য না পেলে, পৃথিবী আর অন্যান্য কলোনীর সমস্ত রিসোর্স কাজে লাগালেও ওটা করা কঠিন হতো, এবং অন্যসব জায়গার উপরে চাপ পড়তো এই প্রজেক্টের ভার বইতে গিয়ে।তাই যাদের আছে সম্পদ ও শক্তি ও প্রযুক্তি তারা দিয়েছে,অনেক কষ্টে তাদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে, এতে খারাপ কি হলো?
    বিরোধীপক্ষ বলে তারা কি এমনি এমনি দেবে? নিশ্চয় কোনো মতলব আছে, পরে আদায় করবে সুদে আসলে।
    এইরকম অনি:শেষ তক্কবিতক্ক চলতে থাকে আর টিনিয়ামও একটু একটু করে গড়ে উঠতে থাকে, শুরুর সময় রুবেন একদম তরুণ, ওর সহযোগী বন্ধুরাও। এখন দশবছর কেটে গেলেও ওরা একদম প্রায় সেইরকমই আছে, হয়তো ভালোবাসার কাজ আর সেই কাজ নিয়ে প্রচন্ড উদ্যম উদ্যোগের মধ্যে থাকলে সময় তাদের কাছে হেরে যায়, কেজানে!
    টিনিয়ামের ভেতরে কোনো ক্ষতি হয়, বিস্ফোরক শুধু বাইরের কিছু সোলার প্ল্যান্ট বিধ্বস্ত করেছে,এই খবর পাবার পরে রুবেন একটু বোধহয় শান্তি পেয়েছে, ক্লান্ত হেসে ধন্যবাদ দিলো সত্যকের হাত দুহাতে ধরে নিজের কপালে ঠেকিয়ে।
    ক্ষতগুলোতে অ্যান্টিসেপ্টিক লাগিয়ে দিতে দিতে সত্যক রুবেনের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, রুবেনের চোখ বন্ধ, নইলে নিশ্চয় অপ্রস্তুত হয়ে যেতো। রুবেন এত ক্লান্ত অবস্থায় আছে যে ক্ষমা চেয়ে রেখেছে আগেই চোখ খোলা রাখতে না পারার জন্য। সম্ভবত রুবেন একটা ঘোরের মধ্যে আছে,গভীর ক্লান্তির ঘোর। এরকম আগে কাউকে দেখে নি সত্যক, কিছুক্ষণ আগে ওর সঙ্গে নিষ্ঠুরতা করেছে ভেবে খারাপ লাগছিলো সত্যকের। আস্তে আস্তে ওর কপালে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে কেমন অদ্ভুত লাগে প্রৌঢ় সত্যকের,মনে হয় সম্পূর্ণ অনাত্মীয় এই ছেলেটির সঙ্গে হয়তো কোনো যোগ আছে তার।
  • Milli | 131.95.121.132 | ১১ জানুয়ারি ২০০৮ ০০:২৫393389
  • কারেকশান: ভেতরের কোনো ক্ষতি হয় নি
  • arjo | 24.214.28.245 | ১১ জানুয়ারি ২০০৮ ০৮:১৬393390
  • একটু ভাসিয়ে দিলাম।
  • d | 192.85.47.2 | ১১ জানুয়ারি ২০০৮ ১৬:০৫393391
  • হুম্‌ম্‌
  • Milli | 131.95.121.132 | ১২ জানুয়ারি ২০০৮ ২১:১৩393392
  • রাত্রে খুব জ্বর এলো রুবেনের। জ্বরের ঘোরে ছটফট করে কিসব বলে যায়, সত্যকের অচেনা একটা ভাষায়। কিছু বুঝতে পারে না সত্যক, কিন্তু প্রলাপের জড়ানো কথাগুলোর মধ্যে ভয়, কষ্ট আর ক্লিষ্ট আর্তভাব কানে ধরা পড়ে। পাশে বসে ওর কপালে বরফ দিতে দিতে সত্যকের দুশ্চিন্তা হয়।
    কাছেই রয়েছে সত্যকের ঘরের কাজে সাহায্যকারী রোবট থার্টি সেভেনএ, একে সত্যক তার্তিয়ানা বলে, থার্টিসেভেনএ কে নানাভাবে রিল্যাক্সড জিভে উচ্চারণ করে করে এই সুবিধেজনক ডাকনামটি পেয়েছে সে।
    তার্তিয়ানা দেখতে কিন্তু মানুষের মতন নয়, খুবই রোবটের মতন, সিলিন্ড্রিকাল ধাতব শরীরের উপরে গোল পলিমারমাথা,তা থেকে নানারকম এক্সটেশন কর্ড এদিক ওদিক বেরিয়ে আছে,হাতের মতন চারটে জিনিস আছে কিন্তু তার ডগায় আঙুল নেই,সরু হয়ে যাওয়া শুঁড়ের মতন ডগা, অথচ টুক করে সেই শুঁড়ে জড়িয়ে যেকোনো জিনিস তুলে আনতে পারে। সত্যকের নির্দেশ মতন কখনো ফ্রিজ খুলে বরফ,কখনো জল কখনো তোয়ালে এসব নিয়ে আসছে তার্তিয়ানা। তার্তিয়ানার চোখ কান ইত্যাদি সব কিছুর জন্যেই সূক্ষ্ম সেন্সর আছে, যাকিনা মানুষের চোখকান ইত্যাদির থেকে অনেক ভালো কাজ করে।

  • Milli | 131.95.121.132 | ১৩ জানুয়ারি ২০০৮ ০১:২৬393366
  • পাশের ঘরে ক্যাবিনেট ভর্তি নানাধরনের ওষুধ, সত্যক একবার উঠে গিয়ে সেখান থেকে ওষুধ নিয়ে এলো,এসে দেখলো তার্তিয়ানা দিব্যি ওর কপালে বরফ বুলিয়ে যাচ্ছে! সত্যক আসতেই সরে গিয়ে জায়গা করে দিলো। সত্যক রুবেনকে অল্প জাগিয়ে ওষুধ খাওয়ানোর মিনিট পাঁকেকের মধ্যেই শান্ত ঘুমের মধ্যে তলিয়ে গেলো সে, আর ভুল বকছে না।
    জ্বর আসার আগে সত্যক ওকে জিগিয়েছিলো কাউকে খবর দিতে হবে কিনা,কোথায় আছে জানানোর জন্য,হয়তো তারা চিন্তা করবে। রুবেন খুব দীনভাবে বলছিলো তাহলে খুব ভালো হয়, টিনিয়ামের গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করে সে জানিয়ে দিতে চায় সত্যকের এখানে সে ভালো আছে, সত্যক যদি চান পুরো কথোপকথন শুনতে পারেন, কোনোকিছু গোপন করতে চায় না রুবেন, কোনোরকম ক্ষতিকর সংবাদও চালাচালি করতে চায় না। টিনিয়াম কখনোই পৃথিবীর প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বন্ধুত্ব চায়। কেন যে লড়াই শুরু হলো...
    সত্যক বাঁকা হেসে কইলেন,""গত হপ্তাতেও তো অন্যরকম কথা শুনলাম তোমার থেকেই।বাকীদের কথা তো বাদই দিলাম।"" সত্যকের মনে পড়ছিলো ওর হুমকী ধরনের কথাগুলো, ওদের টেকনোলজি পৃথিবীকে জলশূন্য বায়ুশূন্য করে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে...এইসব।
    রুবেনের মুখ ধূসর হয়ে গেলো শুনে, এমন করে মাফ চাইতে লাগলো যে সত্যকের খারাপ লাগলো। বলছিলো,""আমি...আমি আপনার সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করেছি। আমি তখন বুঝতে পারিনি। দায় এড়াতে চাইছি না, অন্যেরা দায়ী নয়, সব দোষ আমার। আপনি যা শাস্তি দেবেন...যা আপনার ইচ্ছা...আমাকে যদি আপনি ক্রীতদাসও করে রাখেন, তাতেও কিছু ক্ষতি নেই। যা খুশী করবেন, যা আপনার ইচ্ছা... শুধু তিনমাস পরপর গ্যালাক্টিক স্পসরদের কাছে যেতে হবে এক হপ্তার জন্য,ঐটুকু সময় ছেড়ে দেবেন...টিনিয়ামে আমার কাজ ইউনিক না, অন্যেরা করতে পারবে, কিন্তু যে চারজন প্রধান স্পন্সর,ওরা আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে নেবে না...আহ, কথা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছে... ""বলতে বলতে নীলচে হয়ে যাচ্ছিলো রুবেনের মুখ,কথা না শেষ করেই অচেতন হয়ে গেছিলো।
    তারপরে জ্বর। সত্যকের নিজেকে একটু দায়ী মনে হচ্ছিলো, তখন ঐভাবে না বললেই হতো...দুর্বল শত্রুর উপরে অত্যাচার করার মধ্যে নিষ্ঠুরতা খুব বেশী। শত্রু? আহ, রুবেন কি সত্যকের শত্রু? যতবার ওর মুখের দিকে তাকায় ততবার তাহলে সত্যকের ভেতরটা এমন বৃষ্টিতে ভিজে যায় কেন?
    টিনিয়ামে অবশ্য সত্যক এর মধ্যেই যোগাযোগ করে জানিয়ে দিয়েছে রুবেন এখানে আছে,ভালোই আছে।ওর সহযোগী বন্ধুরাও যেরকম শোনা গেছিলো আগে আসলে সেরকম নয়, খুব সুন্দর ভদ্র গলায় কথা বললো, পোলাইট ব্যবহার। তবে এখন দয়ে পড়েছে তাই, পরে কি মূর্তি ধরে কেজানে!

  • Milli | 131.95.121.132 | ১৮ জানুয়ারি ২০০৮ ০২:৫৮393367
  • পরদিন রুবেনের অবস্থা একটু ভালোর দিকে। সকাল বেলাতেই সত্যক টিনিয়ামে যোগাযোগ করিয়ে দিলো,ওর বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে রুবেন নিশ্চিন্ত হয়েছে। আর নিশ্চিন্ত হয়েছে বলেই খানিকটা কম বিপর্যস্ত দেখাচ্ছে ওকে।
    যাই হোক, একসঙ্গে ব্রেকফাস্ট করার সময় সত্যক কথা বলতে বলতে ওর কাছে জানতে চাইছে গ্যালাকটিক স্পনসরদের ওখানে আসলে কিরকম কাজ করতে হয়,কেন ওকে ছাড়া অন্য কাউকে নেবে না প্রধান স্পনসরেরা। সত্যকের সন্দেহ হচ্ছিলো আগেরদিন রুবেনের এমন একজস্টেড অবস্থা ছিলো আসলে ওখানের কাজের জন্যই।
    রুবেন একদম অল্প খাবার নিয়েছে, সামান্য দুধ আর খই আর একটা কলা। আস্তে আস্তে খেতে খেতে বললো, ওখান থেকে ফিরে এসে দুদিন শুধু বিশ্রাম করি, অল্প কিছু খাই। টিনিয়ামে জানে ওরা, এই দুইদিন ছুটি দেয় আমায়। স্পনসরদের ওখানে কাজ খুব কড়া ধরনের, একবিন্দু শক্তি অবশিষ্ট থাকেনা, সব যেন নিংড়ে নেয়। সে হোক গে, একজনের এতটুকু দাম দেওয়ায় যদি এতটা সাহায্য পাওয়া যায়, সেইটুকু দেওয়াই উচিৎ।
    সত্যকের মন আরো ভিজে আসে,না জেনে ঐ অবস্থায় ওর উপরে চোটপাট করেছে বলে আরো খারাপ লাগে।কিন্তু মাফ চাইতে গেলে রুবেন খুব অপ্রস্তুত হয়ে যায়, বলে,""না না না না, আপনি কেন মাফ চাইবেন? আপনার কাছে আমার অপরাধের সীমা নেই, ক্ষমার অযোগ্য সব ভুল, এরমধ্যে আপনি নিজে মাফ চেয়ে আমার অপরাধ আর বাড়াবেন না। আপনি এত দয়ালু বলে ভরসা হয় কম শাস্তিতেই হয়তো তরে যাবো। নাইন্টি টু আর হান্ড্রেডটেন যখন ধরে আনছিলো, আমার তখন এমনিতেই আধামরা অবস্থা, মনে হচ্ছিলো কিজানি কি হবে, কিন্তু আপনি এত যত্ন করলেন...আমাদের ওখানে একবার যদি যান বেড়াতে, তাহলে আমার সাধ্যমত আতিথ্য করবো... যাবেন কি?""
    সত্যকের কেমন লাগছিলো,পাছে রুবেনের সামনে আবেগ প্রদর্শন করে ফেলে সেই ভয়ে ঠাট্টা করলো,""ও বাবা! আজ একি কথা! কাল যে বললে ক্রীতদাস হয়ে আমার এখানেই নাকি থেকে যাবে? এখন দেখি আবার আমাকেই নেমন্তন্ন করছো!"" বলেই হো হো হো হো করে হেসে ফেললো সত্যক, রুবেনের কনফিউজ্‌ড হয়ে যাওয়া মুখ দেখে।
  • Milli | 131.95.121.132 | ১৮ জানুয়ারি ২০০৮ ০৭:২১393368
  • রুবেন কিন্তু হাসেনা, সত্যক সত্যি কথাই বলছে মনে করে আস্তে আস্তে খুব বিনীত গলায় বলে,""হ্যাঁ, ঠিকই তো! আপনি যদি আমায় রাখতে চান...আমার তো কোনো আপত্তির কথাই ওঠে না, আপনার কাছে কাজ করতে পারলেই আমি ধন্য হই, কিন্তু ঐযে তিনমাসে একবার এক সপ্তাহের জন্য...""
    সত্যক হাসতে হাসতে বলে,""আরে রুবেন, কালকে যা বলেছ বলেছ, জ্বরের ঘোরে বলে সেসব কাটিয়ে দেওয়া যাবে। আজ আর এসব বোলো না, লোকে শুনলে কি ভাববে? ক্রীতদাস আবার কি কথা? এসব বর্বর প্রথা কবেই তো মানুষ কাটিয়ে উঠেছে।এসব প্রথা ট্রথা টানতে টানতে আদৌ এই মহাকাশজয়ী অবস্থায় পৌঁছানোর কথা কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারতো?""
    রুবেন অল্প হাসে, বলে, ""না না তা তো বটেই। সেই পুরানো আমলের মতন না, এমনিই। সেই পুরানো আমলে তো খুব বীভৎস সব প্রথাট্রথা... আমি সেসব ভাবিনি, এটা এখনকার মতন। কেউ আসলে তো জানবে না,বলবেও না, শুধু আপনি আর আমি জানবো। আমার লোকেদের বলবো এমনি আপনার কাছে কাজ করি।""
    সত্যক মিচকি হাসে, বলে, ""ওরেবাবা, কত কায়দা। তা, পুরানো আমলের মতন হলেই বা আটকাচ্ছে কে? কেউ তো জানবে না! শুধু তুমি আর আমি। তখন কিরকম হতো বলে তোমার মনে হয়?""
    রুবেন ঘাবড়ে গেছে, এমনিতেই বেচারা বোঝে না কখন সত্যক ইয়ার্কি করছে আর কখন সিরিয়াস নোটে কথা কইছে। খুব কনফিউজ্‌ড হয়ে গিয়ে বলে,""অ্যাঁ,আপনি সত্যি সেরকম করতে চান নাকি?""
    ""কিরকম করতে চাই?""
    রুবেনের মুখ ঝাপসা হয়ে যায়, বলে,""ঠিক আছে যদি ওভাবে চাবকাতে চান...তাও ঠিক আছে, বেশী কেটে দেবেন না,তাহলেই হবে। আর যদি খুব বেশীরকম কেটে যায়, তাহলে কিছু ওষুধ দেবেন।"" আরো কিসব বলে যায়,কথা অস্পষ্ট লাগে, সত্যক উঠে ওকে ধরে ফেলে বোঝে আবার জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে রুবেন। জড়ানো গলায় ভুল বকে যায়,""ওরাও দিয়েছিলো ওষুধ, খুব অসুখ হয়েছিলো তো আমার! এত মারলো সবাই মিলে, আমি নিই নি, কত করে বললাম, বিশ্বাস করলো না। ""

    সত্যক রুবেনকে ধরে ধরে নিয়ে শুইয়ে দেয়, চিকিৎসক-রোবট বার্ডনকে সিগ্ন্যাল দিয়ে নিয়ে আসে।বার্ডন রুবেনকে পরীক্ষা করে ওষুধ্‌পত্র ইঞ্জেক্ট করে সত্যককে আশ্বস্ত করে যায় যে আশু বিপদের সম্ভাবনা নেই।কিন্তু আসলে রুবেনের জন্য কোনো মনোবিদ প্রয়োজন, ওর কোনো একটা গভীর মানসিক সমস্যা আছে যেটার মূল আসলে হয়তো ওর খুব ছোটোবেলার কোনো ঘটনা। এর বেশী বার্ডনের ক্ষমতায় নেই, মন-বীক্ষণে ওর স্পেশালিটি নেই।
  • Milli | 131.95.121.132 | ১৯ জানুয়ারি ২০০৮ ০৬:৫১393369
  • সত্যক পরেরদিনের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট করলো মনোবিদ হুয়ান জো এর সঙ্গে,তিনি এসে পরীক্ষা করবেন রুবেনকে। ইনি রোবট নন,মানুষ। হুয়ান জো প্রথিতযশা মনোবিদ, এর সার্ভিস পাওয়া সোজা নয়। কিন্তু সত্যকের সঙ্গে পরিচয় ছিলো বলে পরদিন ই পাওয়া গেলো।
    ডক্টর হুয়ান এসে রুবেনের সঙ্গে আলাপ পরিচয় করে নিজেকে সত্যকের বন্ধুস্থানীয় পরিচয় দিয়ে ঘন্টাদুই গল্প করে চলে গেলেন। এটাই ওনার স্টাইল, ডাক্তার হিসাবে বিশেষ করে মনোবিদ হিসাবে এলে নাকি পেশেন্ট ডিফেন্সিভ হয়ে পড়ে, তাই উনি অন্য পরিচয়ে প্রথমদিন গল্পগাছা করে পেশেন্টের কাছের মানুষ হয়ে নেন। তারপরের সিটিং এ আরেকটু গভীরে যান, এটা দীর্ঘমেয়াদী ব্যাপার। তবে রুবেন যেহেতু এখন অনেকদিন সত্যকের এখানে থাকবে, তাই অসুবিধা কিছু নেই।

  • Jay | 90.200.160.142 | ১৯ জানুয়ারি ২০০৮ ২৩:৪৮393370
  • উপরে তুলি?
  • tan | 131.95.121.132 | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ০২:৪১393371
  • এই গল্পটাও আবার এগোবে বলে আশা রাখি।
  • Milli | 131.95.121.132 | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ২৩:৪৬393372
  • রুবেন মেঝেতে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে, অল্প অল্প গোঙাচ্ছে আস্তে আস্তে। একটা তোয়ালের উপরে মুখ রেখেছে, তোয়ালেটায় রক্ত। মাঝে মাঝে কাশছে,মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে।
    সত্যক দেখে ঘাবড়ে গেলো,কি হয়েছে ওর? এইতো কিছুক্ষণ আগেও তো পুরো স্বাভাবিক ছিলো, কাজ করছিলো সত্যকের সঙ্গে,বিকেল পাঁচটা বাজলো দেখে দুজনে একসঙ্গে কফি খেতে উঠলো তারা। কফি খেয়ে রুবেন সত্যকের কাছে ছুটি চাইলো,বললো,""আমাকে আজকে ছুটি দিন,শুধু আজকে।অন্যদিন এত তাড়াতাড়ি ছুটি চাইবো না। দয়া করে ছুটি দিন।"" ওর গলার স্বরে খুব অনুনয় ছিলো,কিন্তু মুখ দেখে বোঝা যায় নি অসুস্থবোধ করছে বলে। সত্যক তৎক্ষণাৎ ছুটি দিয়েছিলো,হুয়ান জো সত্যককে কয়েকদিন আগে বলেছে রুবেন কিছু অনুরোধ করলে যেন সত্যক অরাজী না হয়। ও মর্মান্তিক প্রয়োজন ছাড়া অনুরোধ করবে না,ও এমনই। সত্যকের মনে ছিলো। এমনিতে মাসখানেক আছে এখানে, সত্যকের কাছে কাজ করে, কাজ খুব ভালোকরেই করে, সত্যক আর ও মাঝে মাঝে মাঝরাত অবধি কাজ করে, রুবেন কোনোদিন বলে না ছুটি দিতে। সত্যক যখন নিজে বলে,""ঠিক আছে এবারে থামানো যাক,কালকে সকাল সকাল শুরু করা যাবে আবার।কেমন?"" তখন রুবেন ঘুমাতে চলে যায় নিজের ঘরে। আজকে কি হলো হঠাৎ করে? ঘন্টাখানেক আগে ছুটি নিয়ে চলে এলো, সত্যকের একটা কি জিজ্ঞেস করার ছিলো বলে সে এসেছে ওর এখানে, এসে দেখে এই। মরে যাচ্ছে নাকি ছেলেটা?
    প্রথমদিনের পর থেকে যথাসম্ভব ভালো ব্যবহার করে সত্যক, ঠাট্টা করেও কিছু কঠিন কথা বলে না, রুবেন নিতে পারে না, সত্যি ভাবে। সত্যক এত ভালো ব্যবহার করলেও রুবেন সবসময় কিছুটা কুঁকড়ে থাকে, হুয়ানজো অবশ্য সত্যককে আলাদা করে বলেছে যে রুবেন কিছুটা অন্তর্মুখী, তাই তাড়াহুড়ো না করে আস্তে আস্তে বন্ধুত্ব তৈরীর চেষ্টা করতে হবে। এদিকে রুবেন এতই ক্রীতদাস-সিন্ড্রোমে পড়ে আছে, যে স্বাভাবিক বন্ধুত্ব তৈরী সত্যকের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। অথচ ওকে কেন এত আপন মনে হয় সত্যকের? যুক্তি নেই কিছু, তবু।
    কাছিয়ে গিয়ে বসে সত্যক, রুবেন তোয়ালেতে মুখ মুছে উঠে বসে, অল্প হাসির চেষ্টা করে বলে,""আপনি চিন্তা করবেন না, এরকম আমার হয়, অনেকদিন থেকেই। সেই অনেক ছোটো বয়স থেকে। বছরের এই দিনটায় বিকালে। শুধু বছরে একদিন,একটু পরেই কমে যাবে। আপনার অসুবিধা করছি,মাফ করে দেবেন।"" রুবেন ক্লান্তভাবে আবার শুয়ে পড়ে। ওর চোখের এমনিসময়ের উজল দৃষ্টি আবার সেই প্রথমদিনের মারখাওয়া ঝাপসা ঝাপসা চোখ হয়ে গেছে,সত্যকের মনের মধ্যে মোচড় লাগে। আহা, কিজানি হয়েছে ওর!
    একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার রুবেন আস্তে আস্তে থেমে থেমে কষ্ট করে বলে,""ডাক্তার কিছু ধরতে পারে না, প্রথম এরম যখন হলো, মা ভয় পেয়ে ডাক্তারকে বাড়ীতে ডেকে আনলো, তিনি এসে যখন দেখলেন তখন আর রক্ত পড়ছিলো না। উনি তবু দেখে টেখে ওষুধ দিয়ে গেছিলেন। তারপর থেকে প্রত্যেকবছর এইদিন এরকম হয়,রাত্রে অল্প সুপ খেয়ে ঘুমাই আধামরার মতন, পরদিন সব ঠিক হয়ে যায়, কিন্তু খুব ক্লান্তি লাগে। টিনিয়ামে ওরা জানে, পরদিন ছুটি দেয় আমায়। স্পনসরদের কাছে যাবার স্কেজুলের মধ্যে যাতে এইদিনটা না পড়ে, সেরকম করেই স্কেজুল করা। পরেও অনেক ডাক্তার দেখানো হয়েছে, কেউ কিছু বলতে পারেনা।"" এতটা কথা বলার পরিশ্রমে আবার রুবেন কাশতে থাকে, আবার এক ঝলক রক্ত পড়ে, তোয়ালেতে মুছতে মুছতে ও আবার মাফ চায় যেন কত অপারাধ করে ফেলেছে।
    সত্যক ওর মাথায় একটু হাত বুলিয়ে বলে,"" আরে মাফ চাও কেন? তুমি কথা বোলো না তো, চুপ করে থাকো একটু। আমি হাত বুলিয়ে দিই।কথা বোলো না এখন,পরে শুনবো সব।""

  • Milli | 131.95.121.132 | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ০১:০৮393373
  • খানিকক্ষণের মধ্যেই স্টেবল হয়ে গেলো রুবেনের অবস্থা, বারে বারে ধন্যবাদ দিলো সত্যককে, সত্যক ওকে ধরে তুলে সোফায় বসালো। তারপরে সোফায় শুইয়ে দিয়ে বললো,""চুপ করে শুয়ে থাকো, আমি সুপ নিয়ে আসছি। জল নিয়ে আসছি। একদম উঠো না কিন্তু।""
    কয়েকমিনিটের মধ্যে ফিরে এলো সত্যক, সঙ্গে তার্তিয়ানা, তার একাধিক শুঁড়ে নানা জিনিস, সুপের বাটি,জলের বোতল, ফোল্ডিং টেবিল...এসব হরেক জিনিস। এসেই চটপট সোফার পাশে টেবিল পেতে, টেবিলঢাকনা বিছিয়ে,ঢাক্‌না দেয়া সুপের বাটিগুলো রেখে পাশে ভাঁজকরা পেপারন্যাপকিন চামচ এসব রাখলো, জলের বোতল রাখলো।তারপরে সুপের ঢাকনাগুলো তুলে নিয়ে বাও করে চলে গেলো। গরম সুপের থেকে ধোঁয়া উঠছে, সঙ্গে রুচিকর ঘ্রাণ।
    তার্তিয়ানার কাজ একেবারে নিঁখুত ও সুসম্পূর্ণ। রোবটেরা অবশ্যইও ভুল করে না, মেকানিকাল ফেলিওর বা পাওয়ারসাপ্লাই এ গন্ডগোল না হলে কাজ অসমাপ্তও রাখেনা।
    রুবেন উঠে বসেছিলো, চেয়ার টেনে নিয়ে সত্যকও বসলো,বললো,""পাছে আমি না খেলে তুমি একা একা না খাও তাই আমি ঠিক করালাম নিজেও আজকে সন্ধ্যায় সুপ খাবো।"" সত্যক হাসলো, রুবেনও হাসে। বলে,""আপনাকে ধন্যবাদ দিয়ে আর কি বোঝাতে পারবো! আপনি যা করছেন, এত কেউ কোনোদিন করে নি আমার জন্য।""
    সত্যক হেসে বলে,""অতিরঞ্জন। তোমার মা অনেক বেশী করেন নি?""
    রুবেনের মুখ লাল হয়ে গেলো হঠাৎ,তারপরেই ভাটায় জল নেমে যাবার মতন সব লাল মিলিয়ে গিয়ে সাদা। হোঁচট খেতে খেতে বললো,"" হ্যাঁ মা...মাতো অনেক... হ্যাঁ,তাতো ঠিক...সেকথা না,সেকথা না, আমি অন্য কারুর কথা বলছিলাম।""
    ""ঠিক আছে, আগে খাও,তারপরে কথা হবে।""
    দুজনে সুপ শেষ করে তারপরে কথা শুরু করে, সত্যকই জিগায়,""রুবেন, তোমার বাবার কথা তো কখনো বলো না।""
    রুবেন বিষন্ন গলায় বলে,""আমি বাবাকে দেখিনি। আমি জন্মানোর আগেই বাবা...""কথা শেষ করে না সে।
    সত্যক ভয় পেয়ে যায়, নাজেনে এই সেন্সিটিভ ছেলেটাকে আবার একটা কষ্টে ফেললো নাকি ভেবে।""আমি জানতাম না, জানতাম না মাফ করো। অন্য কথা বলি। তোমাদের টিনিয়ামে সবকিছু আন্ডারগ্রাউন্ডে ভেবেই কেমন অবাক লাগে,সূর্য তারা না দেখে তোমরা দিনের পর দিন থাকো,মিস করো না সেসব? ""
    ""না না, আসলে শহরের অধিবাসীরা যাতে পৃথিবীর মতনই দিনরাত্রির আবর্তন দেখতে পায়,তারাখচিত আকাশ দেখতে পায়,সেজন্যে সেসবের কৃত্রিম প্রোজেকশানের ব্যবস্থা আছে একাধিক প্ল্যানেটেরিয়ামে,আর সত্যি সত্যি দেখতে চাইলেও পারে, কিছু কিছু টাওয়ার আছে, তবে সত্যি বলতে কি যারা অভ্যস্ত হয়ে গেছে, তারা আর এসব বিশেষ মিস করে না।টাওয়ারে কালেভদ্রে বাচ্চাদের নিয়ে যায় স্কুল থেকে,বাচ্চারা খুবই এনজয় করে তারাভরা আকাশ।""
    সত্যক শুনতে শুনতে উৎসাহিত,বলে,"" একবার দেখার ইচ্ছা হয়।""
    উৎফুল্ল আগ্রহে রুবেন বলে,""যাবেন একবার? ""
  • Milli | 131.95.121.132 | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ০০:৫৯393374
  • ""ভাবছি যাবো একবার। তুমি তোমার স্পনসরদের ওখান থেকে পরের ট্রিপটা সেরে ফিরলেই দুজনে একসঙ্গে টিনিয়ামে যাবো। কি, নেবে তো তখন আমায় তোমার সঙ্গে?""
    ""অবশ্যই অবশ্যই, আপনি গেলে আমি... আমরা সবাই খুব খুশী হবো। যেই ক'দিন আপনি ওখানে থাকবেন, আমি অন্য সব কাজ থেকে ছুটি নিয়ে আপনাকে সব ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাবো, আপনার যাতে কোনো অসুবিধা না হয় তার জন্য আমি যথাসাধ্য করবো।""বলতে বলতে খুব আবেগাপ্লুত হয়ে যাবার ভয়ে বোধহয় থেমে গিয়ে মুখ নীচু করে পেপার ন্যাপকিনে মুখ মুছতে লাগলো রুবেন।
    সত্যক হেসে বলে,""দেখবো কেমন বানিয়েছ তোমরা কৃত্রিম গ্রহ, টুকরোটাকরা স্পেসরক জুড়ে জুড়ে ভেতরে এক অতুলনীয় জগৎ-সাংবাদিকরা এরকম লেখে। ওরা বাড়িয়ে বলে কিনা নিজের চোখে দেখে আসি তবে।"" সত্যক হো হো হাসে।
    রুবেনের দিকে তাকিয়ে থাকে সত্যক,হাল্কা চেহারার এই ছেলেটা এতটাই যে অব্যাপারেষু ব্যাপার করে ফেলতে পারে,আগে থেকে না জানা থাকলে কিছুতেই কি বিশ্বাস হতো তার?
    একটু প্রশংসা করতে ইচ্ছে করে সত্যকের,কিন্তু সামনে বলা যায় নাকি? বললে টোমাটোর মতন লাল হয়ে যাবে হয়তো রুবেন। নয়তো ভাববে ঠাট্টা করছে সত্যক, ধূসর হয়ে যাবে ওর মুখ।
    এত ধকলের পরে আর ওসব ভালো হবে না ভেবে সত্যক উঠে পড়ে, বলে,""ঠিক আছে তুমি ঘুমাও, কালকে সকাল সকাল কাজ শুরু করবো। শুভ রাত্রি।""
  • Milli | 131.95.121.132 | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ০৭:৩৮393375
  • সত্যককে রাতে ঘুমিয়ে পড়ার আগে ফোন করে রুবেন, ""স্যর, কালকে সকালে যদি তাড়াতাড়ি না উঠতে পারি, যদি দেরি হয়...আগে থেকে মাফ চেয়ে রাখছি। আসলে এরকম যেদিন হয়, তার পরদিন খুব ক্লান্তি লাগে, মাথায় ব্যথা...আমি তবু যাবো, কিন্তু যদি ঠিক সময়ে না পারি..."" রুবেনের গলা কাঁপছিলো।
    ""ওহ্‌হো, তখন মনের ভুলে বলে ফেলেছি কালকে কাজ। না না রুবেন, আসতে হবে না। কালকে ছুটি তোমার। বুঝেছ? কালকে তোমার কাজ করতে হবে না।ভালো লাগলে কালকে বাগানে বেড়াবে,আমিও তোমার সঙ্গে বেড়াবো।""সত্যক হাসলো।
    রুবেন খুব কৃতজ্ঞ গলায় বলে, ""থ্যাংক ইউ। আপনি খুব ভালো। আপনার অনেক ভালো হবে, দেখবেন।""
    ""হোহোহো,তাই নাকি? অনেক ভালো হবে? আর আমি যে এত ভালো, তা তো আগে জানতাম না।""
    ""আমি...আমি আপনার কাছে আরেকটা অনুরোধ করলে রাখবেন?""
    ""কি অনুরোধ? রাখার মতন হলে রাখবো অবশ্যই।""
    ""জানালা দিয়ে আকাশ দেখা যায় এমন কোনো ঘরে ঘন্টাখানেক থাকতে দেবেন? আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে কেন জানি। আপনি হয়তো ভাববেন ন্যাকামো, বন্ধ গ্রহে থাকি...কিন্তু বিশ্বাস করুন...আহ, মাত্র আধা ঘন্টা...""
    ""আমি আসছি রুবেন, এক্ষুনি আসছি। ফোন রেখে দাও,সেরকম ঘরে তোমাকে আজকে রাতে কালকে রাতে সব রাতে থাকতে দেবো। তারা দেখতে চাও, আগে কেন বললে না?""
    খানিকক্ষন পরেই সত্যক আর রুবেন হাজির সবচেয়ে উপরতলায় গোল ছাদ ওলা ঘরে,ছাদটা স্বচ্ছ,দক্ষিণের বড়ো বড়ো জানালা দিয়ে হাওয়া আসছে ফুরফুর করে,বড়ো খোলা ছাদ ঐ গোলঘরের চারপাশ ঘিরে ছড়ানো।
    রুবেন অবাক,মুগ্‌ধ ও বাকরুদ্ধ। মেঝেতে বেছানো মাদুরে শুয়ে পড়ে অস্ফুটে ধন্যবাদ দিলো,সত্যক ঘরের ক্ষুদ্র বাতিটি নিভিয়ে দিতেই তারামায় রাত্রি ঘিরে এলো। কালো আকাশে আলোর দাগ টেনে দিয়ে জ্বলে উঠলো একটা উল্কা।
    ""এমন তারাঘর...আহ, কী সুন্দর!আগে কেন জিগ্গেস করিনি! ঈশ!""
    নক্ষত্রালোকে আবছা দেখা যায় রুবেনের মুখ, সত্যক দেখতে দেখতে ভাবে কেন এমন আত্মীয় মনে হয় এই সম্পূর্ণ অনাত্মীয় ছেলেটাকে?
  • Milli | 131.95.121.132 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ০০:০১393377
  • রুবেনকে তারাঘরে একা রেখে সত্যক নেমে গেলো নিজের ঘরে,যাবার আগে কম্বল বের করে দিয়ে বললো,""শেষরাত্রে শীত লাগলে কম্বল গায়ে দিও। আমি এখন গেলাম। এনজয় ইয়োরসেল্ফ।।""
    রুবেন আধো-ঘুমের মধ্য থেকে কইলো,""অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনার তুলনা নেই।""
    সত্যক কইলো,""ধন্যবাদ গৃহীত হলো। শুভ রাত্রি।"

    পরদিন রোবট ডাক্তার বার্ডন রুবেনকে খুব ভালো করে পরীক্ষা করে বললো,""আগেরদিন হেমারেজ হয়ে থাকলেও কোনো চিহ্ন নেই। খুবই মিস্টেরিয়াস। আপনি বলছেন বলেই বিশ্বাস করছি, নইলে সন্দেহ অবধি করতাম না।""

    হুয়ানজোর আসার তারিখ কদিন পরে, তবু সত্যক ওঁকে ফোন করে জানিয়ে রাখলো ঘটনাটা। উনি বললেন, ""চিন্তার কিছু নেই,আমি আগামীকালই যাবো, একটা আগের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ক্যান্সেল হয়ে গেছে। রুবেনের কেসটা বেশ জটিল, এত ই®¾ট্রাভার্ট পেশেন্টদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা বেশ চ্যালেঞ্জিং। আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করছি সত্যক, তুমি ঘাবড়িও না।""
    ধন্যবাদ দিয়ে সত্যক ফোন অফ করলো।

    পরদিন দুপুরবেলা বাগানে গাছের ছায়ায় পিকনিক,রোদ্দুর খুব উজল,আকাশ স্বচ্ছ নীল। গরম খুব বেশী না। তার্তিয়ানা সবকিছু সাজিয়ে দিয়ে গেছে।
    মাদুরে বসে অরেঞ্জ জুস খেতে খেতে গল্প করছে সত্যক আর রুবেন আর হুয়ানজো। একটু পরেই পিকনিকের খাওয়া শুরু করবে।
    ""ঠিক কি হয়েছিলো বলোতো?"" হুয়ানজো জিগায়।
    সত্যক বলে সে এসে কি দেখেছিলো।
    রুবেন কিছু বলে না। নীরবে কমলালেবুর রসে অল্প অল্প চুমুক দিতে দিতে দূর আকাশে চিলের চক্র দেওয়া দেখে। ওকে নিয়ে এঁরা চিন্তিত হচ্ছে বলে হয়তো ওর ভালো লাগে না।
    ""রুবেন, তোমার কি মনে আছে কি হয়েছিলো এইদিনে? কিছু হয়েছিলো কি? অনেক ছোটো থেকে এরকম হচ্ছে বলেছ, নিশ্চয় কিছু ঘটেছিলো যার পর থেকে এরকম শুরু হয়েছে।""
    রুবেন শুকনো মুখে বলে,""মনে নেই। শুধু মনে আছে অনেক ছোটোবেলা থেকে এরকম হয়। থাক না এসব। আমরা অন্য কথা বলি?""
    ""আচ্ছা আচ্ছা,এসব থাক।অন্য কথা বলি।""হুয়ানজো তাড়াতাড়ি বলে,""রুবেন, তোমার ঐ কাজের বাইরে অন্য কিছু করতে ইচ্ছে করে না? ঐ প্রোজেক্টে যখন যুক্ত হও নি, তখন কি হতে চাইতে? ""
    রুবেন অল্প হাসে,""আগে আমি এসব ভাবিই নি, তখন ভাবতাম গিটার বাজিয়ে গান গাইবো,গানের দল থাকবে, আমরা গান লিখবো, সুর দেবো,অনুষ্ঠানে বাজাবো...সব পাগলামি।""
    ""কেন, পাগলামি কেন?""
    ""আজকাল এসব আর কারা এমনি করে? নিঁখুত গাইয়ে-বাজিয়ে রোবটেরা আছে, তাদের দল আছে, অনুষ্ঠান তো তারাই করে। লোকে শুনে খুশীও হয়।""
  • Milli | 131.95.121.132 | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ০২:৩৭393378
  • গুছিয়ে গল্প করার মুডে বসলেন হুয়ানজো, কইলেন,""আচ্ছা রুবেন,সেইসব দিনের কথা বলো দেখি, শুনি। তোমাদের বন্ধুবান্ধবের দলটা কেমন ছিলো? তারা সকলেই গানবাজনা করতে চাইতো নাকি কেউ কেউ অংক টংকও করতে চাইতো? পরে তারা কে কি হলো? তোমার সঙ্গে ওদের যোগাযোগ আছে? ""
    কমলালেবুর রসে ছোট্টো চুমুক দিয়ে অনুত্তেজিত নিরাসক্ত গলায় রুবেন বলে,""আমাদের সেরকম দল বলতে যা বোঝায় তা ছিলো না। আসলে মা ট্রান্সফার হয়ে হয়ে এক শহর থেকে অন্য শহরে চলে যেতো বলে সেরকম দীর্ঘমেয়াদী বন্ধু তো হয় নি। পরে হাইস্কুলের সময়...সেখানে থাকার সময় মা আর ট্রান্সফার নিতো না, সেখানে একটা বন্ধুদল হয়েছিলো। তারা একেকজন একেক রকম, কেউ সারাক্ষণ অংক কষতে আর ধাঁধা মেলাতে ভালোবাসতো, কেউ নানারকম সায়েন্স মডেল বানিয়ে বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিতো, আবার কেউ এসব দুচক্ষে দেখতে পারতো না, কবিতা পড়তো আর গান গাইতো।"" কথা শেষ করে হাসে রুবেন।গেলাসে আবার চুমুক দেয়। কিন্তু মনে হয় অত কথা কইতে ওর বিশেষ ইচ্ছে করছে না।
    ""তুমি কড়া পানীয় খাও না, তাই না?"" হুয়ানজো জিগান। হুয়ানজো নিজে তেতোধরনের মৃদু উত্তেজক পানীয়ে চুমুক দিচ্ছিলেন।
    রুবেন আস্তে করে বলে,"" খাই,কখনো সখনো। আজকে ইচ্ছে করছে না।""
    ""তারমানে তোমার জিনিসটা ভালো লাগে না,তাই না? এই আমি যেটা খাচ্ছি, সেই জিনিস খেয়েছ কখনো?""
    ""না,খাই নি।কিন্তু প্লীজ বলবেন না ট্রাই করতে। আগে থেকেই ক্ষমা চেয়ে রাখছি "না" বলতে হবে বলে।"" রুবেন হাসে কথাটা বলেই।
    ""ছোকরা, তুমি ভারী চালাক হে। বলবো না ট্রাই করতে,তুমি বরং তোমার হাইস্কুলের সেই বন্ধুদলটার কথাই বলো।""
    ""সে আর কি বলবো? কয়েকজনের সঙ্গে এখনো যোগাযোগ আছে, বাকীদের সঙ্গে আর নেই।""
    ""তোমার ইচ্ছে করে না সেই যোগাযোগ হারানো বন্ধুদের খুঁজে বের করতে? ""
    ""না:। আমি বর্তমানে বাস করি, তাকিয়ে থাকি ভবিষ্যতের দিকে। তবু অতীত আমাকে কিছুতেই ছাড়ে না,কিছুতেই ছাড়ে না। কেন এমন হয় বলতে পারেন হুয়ানজো? যা আমি প্রাণপণে ভুলতে চাই, কেন পারি না ভুলতে?""
    রুবেনের মুখ খুব ক্লিষ্ট হয়ে গেছে হঠাৎ,রক্তশূন্য ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে।
    হুয়ানজো তাড়াতাড়ি কথা ঘোরালেন, বললেন, ""আরে খাওয়া শুরু করা দরকার তো! এত এত ভালো ভালো খাবার ঠান্ডা হয়ে গেলে স্বাদের অর্ধেকই চলে যায়। ঠান্ডা করে লাভ নেই,কইহে সত্যক কি বলো? বিসমিল্লা বলে শুরু করে দেয়া যাক?""
    সত্যক হেসে কন, ""হ্যাঁ হ্যাঁ,আমিও তো তাই বলতে যাচ্ছিলাম। আমি ভাবি কখন কাটলেটে কামড় দেবো আর তোমরা দুটিতে খালি বকবকই করে যাচ্ছ!""
    তিনজনেই হাসিতে গড়িয়ে পড়ে খাওয়া শুরু করে দিলো।
  • Milli | 131.95.219.104 | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ ০৩:৩০393379
  • কদিন কেটে গেছে, সত্যক আর রুবেন সারাদিন একসঙ্গে কাজ করে কাজ করে ক্লান্ত হয়ে গেলে সত্যক নিজেই একসময় বলে,""আর তো পারা যায় না,চলো চা আর ঝালমুড়ি খেয়ে আসি।"
    সন্ধ্যার চা-ঝালমুড়ির আড্ডা বেশ ভালো লাগে মনে হয় দুজনেরই,কোনো কোনোদিন এর সঙ্গে থাকে বড়ো বড়ো সিঙারা। কোনোদিন চায়ের সঙ্গে ঝালমুড়ি থাকে না, থাকে কচুরি আলুরদম। সত্যকের শেফ-রোবটের নাম শেফু,সে এত ভালো রাঁধে, এত ভালো রাঁধে যে একদিন রুবেন বলেই ফেললো, "স্যর,আপনার শেফুর জন্যই আমার এখানে বাকী জীবনটা কাটিয়ে দিতেও খারাপ লাগবে না।"
    একমুঠো ঝালমুড়ি মুখে দিয়ে চিবোতে চিবোতে সত্যক ইয়ার্কি করে কইলো,"তা জানি। এদের জন্যই তোমার কোনোরকমে সহ্য হয়ে যায়, নইলে শুধু আমি থাকলে মনোকষ্টেই এতদিনে অর্ধেক হয়ে যেতে। আমি কিনা স্লেভড্রাইভার আর তুমি স্লেভ, রোজ তো তোমায় ছেঁচা দিই আর ছ্যাঁকা দিই, এছাড়া দাসমালিকরা আর কিই বা করতে পারে বলো?" হেসেই বলেছিলো সত্যক,কিন্তু রুবেন নিভে গেলো একেবারে,মুড়িও আর নিলো না, চা অর্ধেক খাওয়া হয়ে গেছিলো,বাকীটাও খেতে হবে,তাই চুমুক দিলো, কিন্তু ওর মুখ দেখে সত্যকের মনে হলো হঠাৎ চা টা চিরতার রস হয়ে গেছে!
    "আরে সত্যি না, ইয়ার্কি করে বললাম,তুমি কিরকম মানুষ,ইয়ার্কি বোঝো না?"
    রুবেন কিছু বলে না, নীরবে চায়ে চুমুক দেয়, মুখ নীচু করে রাখে।
    ""কি হলো, মুড়ি আর খাবে না?"
    "মাফ করুন, আর ইচ্ছে করছে না।"
    "ছি ছি তোমার খাওয়া নষ্ট করে দিলাম। তাহলে আমিও আর খাবো না। শেফু, এই শেফু, এসব নিয়ে যাও।"সত্যকের গলা খুব চড়া শেষ লাইনে।
    রুবেন আস্তে আস্তে বলে,""ঠিক আছে খাবো,ইচ্ছে না করলেই বা কি। আপনি আপসেট হয়ে যাচ্ছেন,খুব খারাপ হচ্ছে। আমি শুরুতেই তো বলে নিয়েছিলাম আপনার ইচ্ছাই শেষ কথা।"
    ""এই তো ভালো ছেলে। শেফু, এখনি নিতে হবে না রে, আমরা এখনো খাওয়া শেষ করিনি।"
    রোবট শেফ এসে দাঁড়িয়েছিলো আদেশ পেয়ে,সে এখন অন্যরকম নির্দেশ পেয়ে রাগ-রাগ মুখে বললো,""আপনারা মানুষেরা খুব গন্ডগোলের জীব। কি যে বলেন আর কি যে করেন কোনো মাথামুন্ডু নেই।"
    শেফুর এমন সিরিয়াস মন্তব্য শুনে হাসতে হাসতে সত্যক আর রুবেনের পড়ে যাবার মতন অবস্থা।
  • Milli | 131.95.121.132 | ০৩ মার্চ ২০০৮ ০৯:০৭393380
  • এদের এত হাসতে দেখে খুব অবাক হয় শেফু, সে বিশেষ হাসে টাসে না, যুক্তিবুদ্ধি দিয়ে রান্না করা ছাড়া অন্য কিছুই সে বিশেষ পছন্দ করে না। অথচ শেফুর ভোকাবুলারি খুব সমৃদ্ধ,বিষেষ নির্দেশ দিয়ে সত্যক ওর নির্মাতাগ্রুপকে শেফুর উচ্চমানের ভোকাবুলারি দিতে বলেছিলো।
    সেফু এদের হাসতে দেখে বিরক্ত হয়ে বলে, ""আদিখ্যেতা দেখে বাঁচি না, এত হাসির কথাটা কি বললাম আমি? এই মানুষ জীব যে কি আজব জীব খোদায় মালুম।"" বলতে বলতে একটা হতাশ ভঙ্গী করে চলে যাচ্ছে শেফু আর রুবেন ও সত্যক দুজনের হাসতে হাসতে বিষম টিষম খেয়ে একেবারে লড়াদশা অবস্থা!
    দুজনে আবার গল্প করতে করতে খাচ্ছে মহানন্দে,তর্তিয়ানা কোত্থেকে ওদের জন্য দুখানা তোয়ালে নিয়ে হাজির! সত্যক অবাক,রুবেন আরো বেশী,এরকম তো হবার কথা না। নির্দেশ দেওয়া না থাকলে রোবট কি করে নিজে নিজে কাজ করবে?
    সত্যকের কিন্তু হঠাৎ মনে পড়ে যায়,সে আগে থেকে একটা প্ল্যান করে বেমালুম ভুলে গেছিলো।এখন লাফিয়ে উঠে বললো,""চলো সাঁতার কাটি বাগানের পুকুরে। আগামীকালের পরদিন তো আবার তোমার হাইপারড্রাইভের জন্য তৈরী হতে কন্ডিশনিং সেন্টারে চলে যেতে হবে। তারপরে তোমার স্পনসরদের ওখান থেকে ফিরতে ফিরতে হপ্তা ঘুরে যাবে।ফিরে কদিন বিশ্রাম নিয়েই তো আবার আমাকে টিনিয়াম দেখাতে নিয়ে যাবে। এরম সাঁতার কাটার সুযোগ আর বিশেষ মিলবে না,চলো।""
    সবুজ বাগানে অপূর্ব পুকুর,দুজনে সাঁতরাতে সাঁতরাতে এপার ওপার করে ফেললো কয়েকবার। জলসিক্ত মুখে হাসতে হাসতে রুবেন বললো,"ঈশ,যদি রোজই এমন করা যেতো! ছোটোবেলা সাঁতার ক্লাবে অনেক সাঁতরেছি, লোকে আমায় বলতো মাছখোকা, তারপরে কবে থেকে যেন সেসব বন্ধ, মাছখোকা জল ছেড়ে মহাকাশে রওনা হলো।" দুজনের সম্মিলিত হাসির আওয়াজে পাড়ের বকগুলো বিরক্ত হয়ে পাখা মেলে উড়াল দিলো।

  • Milli | 131.95.121.132 | ০৬ মার্চ ২০০৮ ০৪:৪৩393381
  • রুবেন ফিরে এসেছে সফর শেষে, আগেরবারের মতনই ক্লান্ত, নি:শেষিত। সত্যকের মনে হলো ক্লান্তির একটা জ্বরতপ্ত ঘোরের মধ্যে যেন রুবেন আসছে। পোর্ট থেকে ওকে নিয়ে আসার জন্য দুজন রোবট পাঠিয়েছিলো সত্যক, নাইন্টি-এইট আর হান্ড্রেডটোয়েন্টিকে। ওরা দুজনে যত্ন করে ধরে ধরে নিয়ে এলো। রুবেনের চোখ সেই আগেরবারের মতন ঘোলাটে, মুখ ফ্যাকাশে। তবু সত্যকের দিকে তাকিয়ে হাসলো, হাত বাড়িয়ে দিলো। ওর বাড়ানো হাতটা নিজের দুহাত দিয়ে ধরে সত্যকের প্রথমদিনের কথা মনে পড়ে মনটা মুচড়ে উঠলো। নান্টু আর হ্যান্ডু ওকে এনে দমাস করে আছড়ে ফেলেছিলো সত্যকের পায়ের কাছে, ও কেমন কাতরে উঠেছিলো হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
    ওর খাবার ও বিশ্রামের ভালো ব্যবস্থা করে দিলো সত্যক। রুবেন খুব সংকোচের সঙ্গে ক্ষমা চায় কদিন কাজ করতে পারবে না বলে,সত্যক হেসে বলে, হ্যাঁ, ক্রীতদাস কাজ না করতে পারলে কি হয় জানো? মালিক তাকে খুব পানিশমেন্ট দেয়, চাবকে চাবকে ছাল তুলে দেয় পিঠের, লোহার রড তাতিয়ে ছ্যাঁকা দেয়। তোমাকে দেবো নাকি?
    রুবেন জামার বোতাম খুলতে খুলতে উঠে বসে, বলে, উপুড় হয়ে শুই, আপনার যত ইচ্ছা মারুন। ছ্যাঁকা দিতে চাইলে তাও দিতে পারেন....কিন্তু কোথায় মারবেন? আসলে আমার আগে থেকেই ... দেখুন না কতগুলো জায়গা পোড়া.... ওরা এমন করে....আমি আহ আহ.....সামনের দিকে কিছু করেনি, আপনি নাহয় সামনে মারুন,আমি চিৎ হয়ে শুই? " রুবেন কাঁদছিলো।
    সত্যক শিউরে উঠলো ওর খোলা পিঠ দেখে, পোড়া দাগ, চাবুকের আঘাতের চিহ্ন...পিঠ জুড়ে। হাতে টাতেও কিছু কিছু। আস্তে আস্তে ওকে ছুঁয়ে সত্যক অস্ফুট গলায় বললো, ওরা তোমাকে মারে?
    রুবেন ফ্যাসফেসে গলায় বলে,"আগে এত মারতো না, এবারে খুব বেশী মারলো, তিনজনে এত কষ্ট দিলো, চতুর্থজন এসে দেখে ওদের বাধা দিলো, বললো মরে যাবে তো! ওষুধ দিলো। পরেরবারের জন্য ছুটি দিয়েছে,তিনমাস পরে আর না, আবার ছমাস পরে যেতে হবে...বলেছে আর এমন করবে না। আমি আর কি বলবো...ঐ ভালো জন ওষুধ দিলো...আপনি কাউকে যেন বলবেন না, কেউ জানে না, বন্ধুদের বলিনি...ওরা জানলে আমায় যেতে দেবে না। মাকেও বলিনি...প্লীজ আপনি কাউকে বলবেন না।"
    সত্যক রুবেনকে আস্তে আস্তে শুইয়ে দিয়ে ওর মাথার চুলগুলোকে আস্তে আস্তে হাত চালিয়ে চালিয়ে এলোমেলো করে দিতে দিতে বললো,"তুমি ঘুমাও রুবেন। কাউকে বলবো না। উহ, এভাবে কেউ মারে? তুমি না গেলে হয় না রুবেন? ওরা এভাবে তোমাকে অত্যাচার করে... এতো কোনোভাবেই জাস্টিফাই করা যায় না, তুমি আর না গেলে পারোনা?"
    রুবেন ক্লান্ত হাসে,বলে,"না গেলে ওরা আর একটুও সাহায্য দেবে না, আর ওরা না দিলে টিনিয়াম...থাকগে, একটা মানুষ একটু কষ্ট পেলে বাকীরা যদি ভালো থাকে...টিনিয়ামে অনেক গরীব মানুষ এখন ভালো আছে, আগে এখানে, মাফ করবেন,আমি সমালোচনা করছি না, আগে ওরা পৃথিবীতে কষ্টে থাকতো, কোথায় থাকে কি খায় কিছুরই নিশ্চয়তা ছিলো না, নিরুপায় হয়ে ওরা মাঝে মাঝে আইন ভাঙতো, তখন ওদের খুব অত্যাচার করতো রক্ষীরা....এখন ওরা ভালো আছে টিনিয়ামে।"
    ""ঠিক আছে, তুমি ঘুমাও এখন রু,ঘুমাও।""
    রু শুনে চোখ খুলে ফেলে রুবেন, বলে,""আমাকে রু বললে? মা মাঝে মাঝে বলে...আহ, তুমি খুব ভালো। ঈশ, মাফ করুন, তুমি বলে ফেলেছি। আপনি খুব ভালো,আপনার ভালো হবে অনেক।""
    ""তুমিই বোলো, আপনি বোলো না আর।""
    ""আচ্ছা।""
    রুবেন ঘুমিয়ে পাড়ে।
  • Milli | 131.95.121.132 | ০৬ মার্চ ২০০৮ ০৪:৪৫393382
  • কারেকশান: ঘুমিয়ে পড়ে।
  • Milli | 131.95.121.132 | ০৭ মার্চ ২০০৮ ০৪:৫৭393383
  • সত্যক এইমাত্র নেমে অবাক হয়ে দাঁড়ালো। মহাকাশপোষাকে সে সর্বাঙ্গ মোড়া, রুবেনও তাই। ঝকঝকে রোদে টিনিয়ামের পাথুরে সারফেস ঝিকিয়ে উঠছে, কিছু কিছু সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট ইতিমধ্যে রিকনস্ট্রাকটেড হয়ে গেছে, খুব কাছেই একটা। স্বচ্ছ ডোমের ভিতরে পাপড়ির মতন যেন মেলে আছে শতশত সবুজ আর লাল সোলারসেলের সুন্দর সাজানো ব্যবস্থা। পাথুরে সারফেস বাতাস দিয়ে ঘেরা নয় পৃথিবীর মতন, চাঁদের মতন বায়ুহীন। তাই আকাশ কালো, সূর্য যেখানে সেদিকে তাকানো যায় না এত ঝিকঝিকানো, কিন্তু অন্যদিকে তাকালে তারাদের দেখা যায় ধূলিহীন তীব্রতায় ঝকঝক করছে। সত্যক নানা কাজে চাঁদে গেছেন কয়েকবার,তাই মিল পান, কিন্তু এখানে তার অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে, ঠিক বোঝানো যাবে না কেন।
    কাছের পাহাড়ের আড়াল থেকে দুজন রোবট এগিয়ে এসে ওদের সামনে দাঁড়ায়। রুবেনের সঙ্গে বার্তাবিনিময় হচ্ছে, সত্যক বুঝতে পারে,কিন্তু কি বার্তা বুঝতে পারে না। হয়তো এই রোবটরা বিশেষ সাংকেতিক ভাষা ছাড়া বলে না, সাধারণ ভাষা হয়তো এদের ব্যবহারের উপায় দেওয়া হয়নি সিকুরিটির জন্য।
    কথা হয়ে গেলে রুবেন সত্যকের দিকে ঘুরে দাঁড়ায়, যোগাযোগ মডিউলে অনুরোধ করে সঙ্গে আসতে। রোবট দুজন সত্যকের সামনে এসে মাথা নুইয়ে অভিবাদন করে কিন্তু কিছু বলে না। কিজানি হয়তো এরা এভাবেই এরা অতিথিকে অভ্যর্থনা করে।
    সত্যকের মজা লাগে। রুবেন আবার অনুরোধ করে সঙ্গে আসতে। সত্যক একবার ভাবে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তাকে, বাগে পেয়ে হয়তো শোধ নেবে। কিন্তু তাতে তার দুশ্চিন্তা হয় না। সে একবার ভাবে, সে নিজে তো রুবেনকে যথাসম্ভব যত্ন করেছে,মাঝে মাঝে শুধু একটু ঠাট্টা করে ভয় দেখিয়েছে, আসলে তো কিছু করেনি। এরা যদি তাও শোধ নিতে চায়, নিক গে।
    রুবেনের সঙ্গে পাহাড়ের দিকে চলতে চলতে সত্যকের অদ্ভুতভাবে মনে পড়ে অনেকদিন আগে...তখন সত্যকের তরুণ বয়স, তখনো পড়শোনা চলছে...এইরকম একটা ন্যাড়া পাথুরে দেশে সে বেড়াতে গেছিলো এক বন্ধুর সঙ্গে...ঠিক বেড়ানো নয়, একটা ফিল্ডওয়ার্কের মতন ছিলো প্রোজেক্টে... আহ, সে কতকাল আগের কথা! অদ্ভুত এক জ্যোৎস্নায় একবার তারা দুজন হেঁটেছিলো অনেক অনেক দূর!
    সত্যকের নিজের জীবনটাকে মনে হচ্ছে একটা শব্দহীন নির্জন পাথুরে দেশ...অথচ সেদিন সেই জ্যোৎস্নায় সেরকম মনে হয় নি...মনে হয়েছিলো সবুজ বাগানের মতন হবে জীবনটা...তাতে নদী থাকবে,পাখির কাকলি থাকবে...
    সব যোগাযোগ হারিয়ে গেছে... সে ব্যস্ত হয়ে পড়লো...সবচেয়ে অবাক ব্যাপার হলো...সেই বন্ধুটা উধাও হয়ে গেলো কোনো ঠিকানা না রেখে...
    চমক ভেঙে সত্যক দেখে রুবেন কোড মিলিয়ে গুহার দরজা খুলছে, খুলে নিজেই অল্প ঝুঁকে সত্যককে স্বাগতম জানায় টিনিয়ামে,হাত বাড়িয়ে দেখায় ভিতরের দিকে, সত্যককে ভেতরে যেতে অনুরোধ করে।
  • rimi | 168.26.191.117 | ২৪ মার্চ ২০০৮ ২২:৩১393384
  • তারপর???
  • Milli | 161.141.84.239 | ১৫ মে ২০১৩ ০৪:৪৭393385
  • পাঁচ বছর কেটে গেছে!!!!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে প্রতিক্রিয়া দিন