এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • বইঘর না জিমঘর?

    SANKET DHAR লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ১৭ অক্টোবর ২০১৯ | ২৫৫৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • SANKET DHAR | ১৭ অক্টোবর ২০১৯ ১১:০৬388339
  • বইঘর না জিমঘর?
    সংকেত ধর
    যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় সব পক্ষই নিজ নিজ কদর্য কীর্তির পরিচয় রেখেছেন। জেএনইউ-এর মতো যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ও ছাত্ররাজনীতির পীঠস্থান। রাষ্ট্রের যেকোনও অশুভ উদ্যোগের বিরুদ্ধে এখানের তরুণ রক্ত অহিংস প্রতিবাদ করে, দেশকে আন্দোলিত করে , নানা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলে। এতদিন এই দেশ তাই দেখে আসছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে যাদবপুরের সমাবেশ চরিত্রগতভাবে আলাদা ছিল। এ বিষয়ে প্রায় সকলেই একমত। সেই সমাবেশে হিংসা ছিল, সঙ্গে মিশে ছিল প্রতিশোধস্পৃহাও। এই সত্যিটা যাদবপুরের ছাত্রছাত্রীরা এখনও উপলব্ধি করতে পেরেছেন কিনা তা অস্পষ্ট। সেদিনের গন্ডগোলে মন্ত্রীর প্রশ্নের উত্তরে এক ছাত্র বলেছিল সে নকশাল। গন্ডগোলের পর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সামনে ছাত্রছাত্রীরা নানা সময় দাঁড়িয়েছে। কিন্তু নরম সুর বা অহিংসার ভাষা তাদের মুখে শোনা যায়নি। দেবাঞ্জন বল্লভ যিনি মন্ত্রীর চুলের মুঠি ধরে টেনেছেন, তার মুখেও শোনা যায় কাউন্টার ভায়োলেন্সের কথা। ঘটনার অনেক পরে এই প্রতিক্রিয়াগুলো স্নায়বিক উত্তেজনার রেশ থেকে দেওয়া, না এটাই তাদের নতুন পন্থা তাও অস্পষ্ট। তবে এই কথা বলা যায়, কেন্দ্রের শাসকগোষ্ঠীর সাম্প্রতিক কার্যকলাপ এই প্রকৃতির চিন্তাধারায় স্রোত এনেছে। যে আফিম তারা ছড়িয়েছে, তার প্রভাব দেশবাসীর রক্তে পড়ছে, বোঝা যাচ্ছে। কারও রক্তে তা পাশবিক উল্লাসের আগুন জ্বালাচ্ছে, কারও রক্তে ভয়ঙ্করতম প্রতিবাদের আগুন। মন্ত্রীর সঙ্গে বিবাদে সেই প্রতিবাদের আগুনের ঝলকানি দেখা গেল। আসলে এখানেই ফ্যাসিবাদী ছকের সাফল্য। এ এমনই ছক যা নিজের স্নায়ু ঠান্ডা রেখে বাকি সবার (যারা তাকে সমর্থন করছে ও যারা করছে না প্রত্যেকের) মানুষের বুদ্ধিশুদ্ধিই আউলে দেয়।
    অনেকের মতে, মারের বদলে মার, আঘাতের বদলে পাল্টা আঘাত, এমন নীতিই এখন অবলম্বন করা উচিত। এখানেই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। চোখের বদলে চোখ দেখানোর এই নতুন স্ট্র্যাটেজিই কি এখন স্বাধীনতা রক্ষার একমাত্র অস্ত্র? গলা টিপে ধরবার জমানায় যারা এখনও প্রশ্ন তোলে, তর্ক করে, শুভবোধগুলো বারবার জাগিয়ে দেয়, তাদের হঠাৎ এমন মতি কেন? এমন সিদ্ধান্তে এগিয়ে চলার সময় ভুললে চলবে না, ফ্যাসিজমের শাসনে গায়ের জোরেই সব হয়। সেখানে নীতি বা নৈতিকতার কোনও স্থান নেই বরং রয়েছে খুব সূক্ষ ধূর্ত আঁতাত। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সেখানে যেকোনও বিপ্রতীপ অবস্থানকে নষ্ট করে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। গণতান্ত্রিক কাঠামোর জামা পরে থাকায় ভারতে ফ্যাসিবাদ প্রকট হয়ে উঠতে পারছে না। পাশাপাশি জনতা এমনই জনার্দন যে গণতন্ত্রের কাঠামোই কেন্দ্রীয় শাসক দলের হাত শক্ত করেছে। দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ তাদের সমর্থনে ভোট দিয়েছে। এই অবস্থায় যখন যাদবপুরের ছাত্রছাত্রীরা কাউন্টার ভায়োলেন্সের কথা বলে, বলে পাল্টা আঘাত ফিরিয়ে দাও, তখন সংশয় হয় এ কি আদৌ সঠিক পথ? গায়ের জোরে সবকিছুর মীমাংসা করা যায় এমন ফাঁকই তো শাসক দল অবিরত খুঁজে চলেছে। মার, আঘাত, কাউন্টার ভায়োলেন্স এই শব্দগুলো এই ফাঁকটা তৈরি করে দেবে না তো? ভোঁতা বুদ্ধির মানুষের কাছে এই শব্দগুলোর সরল অর্থই স্পষ্ট। জাতীয় জীবনে এই সময়টা এমনই অসহিষ্ণু যে প্রতিবাদীরা স্নায়ু হারালে আরও ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠতে পারে। সন্ধ্যে হতেই যাদবপুরে এবিভিপির ধ্বংসলীলা কি ছাত্রছাত্রীদের একবারও নতুন করে ভাবাচ্ছে না? গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মূল কেন্দ্রবিন্দু বাহুশক্তি হলে তাকে তো আর ‘আন্দোলন’ পরিভাষাটি দিয়ে ব্যক্ত করা যায় না। অধিকার রক্ষার অস্ত্র যদি আঘাত পাল্টা আঘাতের নীতি হয়, তবে ছাত্রছাত্রীদের রাজনীতির শিক্ষা কোথায় নেওয়া উচিত? বইঘরে না জিমঘরে? মানুষের তমোগুণকে চাপা দিয়ে রাখে তার শুভচিন্তা, হিতকর আচরণ। বর্তমানে পরিস্থিতিতে মানুষের অন্ধকার দিকটাই প্রতিনিয়ত জাগিয়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে, তার নীতিবোধ, মানবিক বৈশিষ্ট্যগুলো চাপা দিয়ে। গণ মগজ ধোলাইয়ের নীতিই গত কয়েকবছর ধরে হীরক রাজার হাত শক্ত করেছে। যাদবপুরের ‘আঘাত’পন্থী চিন্তাধারা সেই ধোলাইযন্ত্রের উন্নতিসাধন করবে না তো? এখন সময় মানুষের শুভবোধগুলোকে জাগিয়ে তোলার। আর আঘাত-প্রতিঘাতের দ্বারা তা সম্ভব নয়। ‘গোরা’য় গোরার মুখ দিয়েই রবীন্দ্রনাথ বলছেন, অভিভাবকের শাসন তাও মানা যায়, কিন্তু পাহারাওয়ালার শাসন মানা যায় না। আজ শুভ ও অশুভ দুই শক্তিপক্ষই পরস্পরের চোখে পাহারাওয়ালা। তাই পাহারাওয়ালার লাঠির নীতি অবলম্বন করলে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার আন্দোলন রূপ নিতে পারে সারভাইভাল অফ দি ফিটেস্টের লড়াইয়ে। সেই দিন কিন্তু বড়ো ভয়ঙ্কর।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন