এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ব্যবসা - (একটি রম্য রচনা)

    goutam dutt লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ১৫ জুলাই ২০১৯ | ২৪৫৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • goutam dutt | ১৫ জুলাই ২০১৯ ১৮:৩৬384617
  • ব্যবসা -

    সে বেশ অনেক বছর আগের কথা। সালটা খুব সম্ভবত ১৯৭৬। বি কম পরীক্ষার শেষ বছর। একটা চাকরী চাই। কাকাদের দয়ায় যৌথ সংসারে দিন গুজরান। বাবা তখন বেকার হয়ে গেছিলেন। চাকরী আর পাব কোথায় ? কে দেবে ? আমি আর আমার এক বন্ধু ঠিক করলাম ব্যবসা করতে হবে। লরী ভাড়া নিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্টোনচিপ পৌঁছে দেবার কাজ। ডানকুনি রেল ইয়ার্ড থেকে চন্ডীপুর। সকালবেলা উঠে টালা খাল পাড় থেকে আগে লরী বায়না। তারপর সেই লরী নিয়ে ডানকুনি রেল ইয়ার্ডে গিয়ে স্টোনচিপ লোড করে চন্ডীপুর। যত বেশী ট্রিপ, তত লাভ। তিনদিন চলেছিল ব্যবসাটা। তারপর আবার বেকার।

    হঠাৎ আমার ওই বন্ধুর দাদা বলল যে এক কাজ কর। তোরা আগে একটা ভাল কিছু ব্যবসার স্কীম তৈরী কর। তারপর সেই স্কীমটাকে নিয়ে একজনের কাছে দাদা পাঠাবে। যদি তাঁর পছন্দ হয় তাহলে টাকার জোগাড় হয়ে যাবে।

    আমরা তো পড়াশোনা ছেড়ে ভাবতে লাগলাম কি কি ব্যবসা করা যেতে পারে। আমাদের মনে হল, ডেয়ারীর ব্যবসা করলে মন্দ হয় না। যা কথা সেই কাজ। কমার্সের ছাত্র হিসেবে ওই রকম স্কীমের হিসেব-টিসেব তখন আমাদের কাছে জলভাত। বেশ কিছুদিন পরে তৈরী হয়ে গেল প্রায় লাখ চারেক টাকার স্কীম। জমি কেনা থেকে ডেয়ারী তৈরী, গরু মোষ কেনা ইত্যাদি সব কিছু মিলে প্রায় পাঁচ-ছ পাতার ফুলস্ক্যাপ কাগজে (তখনো A4 আমরা জানি না) টাইপ করে স্কীমটায় বেশ ভাল টাকাই লাভ দেখাতে পেরেছিলাম। ডানকুনিতেই জমি কেনা হবে। ওখানে তখন জমি বেশ সস্তা। আমার মামারবাড়ী ডানকুনি। কাজেই একটু আধটু জানতাম জায়গাটার সম্বন্ধে।

    তখন বি কম পরীক্ষায় সেমিস্টার সিস্টেম চালু হয় নি। পরীক্ষার বেশ কিছুদিন দেরী। সুতরাং পুরো উদ্যমে লেগে পড়লাম।

    দাদা – মানে ওই বন্ধুর দাদা তখন পশ্মিমবঙ্গ সরকারের এক গেজেটেড অফিসার। আমাদের সব চাকরীর দরখাস্তের সাথে জমা দেবার কাগজপত্তরে ফটাফট এটেস্টেড করে দেয়। কত ক্ষমতা তার। পুরো বিশ্বাসে ভরপুর আমরা তখন।

    এরপর দাদা আর এক উঁচু পোস্টের একজনের কাছে পাঠাবে বলে স্থির করল। ঐ ডেয়ারীর স্কীমটার ব্যাপারে। তিনি বসেন ফ্রী স্কুল স্ট্রীটের এক দফতরে। মাসে দুতিনবার বিদেশ সফর তাঁর কাছে জলভাত। বিদেশ মানে বাংলাদেশ নয় – খোদ আমেরিকা। আর তিনি কলকাতার অনেক সরকারী কমিটির ডাইরেক্টর। নামটা এখন আর মনে নেই আমার। তাঁর ঐ চ্যানেলের সূত্রেই আমাদের ডেয়ারী প্রোজেক্টের টাকার ব্যবস্থা হয়ে যাবে। এই সব শুনেটুনে আমি আর আমার ঐ বন্ধু দেখা করার দিন ঠিক করলাম দাদাকে দিয়ে।

    মনের আনন্দে সেদিন এল নাইনের সেই ট্রেলার বাসের দোতলার একদম সামনের সিটে দুবন্ধুতে উঠে বসলাম। ধর্মতলার পরের স্টপেজে নামতে হবে মানে লিন্ডসে’তে। তারপর একটুখানি হেঁটে ফ্রী স্কুল স্ট্রীট। তারপর খুঁজে নেব ওনার অফিস।
    সিঁথির মোড় থেকে লিন্ডসে। সেদিন খুব সুন্দর লাগছিল। এখনকার প্রজন্মতো জানলোই না ঐ ট্রেলার বাসের দোতলার সামনের সিটে বসার আনন্দ। শ্যামবাজার – গ্রে স্ট্রীট – বীডন স্ট্রীট – হ্যারিসন রোড – বৌবাজার – স্টেটসম্যান হয়ে ধর্মতলায় মনুমেন্ট দেখা গেল। এর পরের স্টপেজে নামতে হবে।

    মে মাসের ঐ গরমের দুপুরে আমরা দু-বন্ধু পৌছলাম সেই সরকারী অফিসে। বেয়ারা এসে স্লিপ নিয়ে গেল। বসতে বলল একটা ঘরে। আমাদের দুজনের টেনশন শুরু হলো ঐ অফিসের পরিবেশে। আধা-অন্ধকার ঘরগুলোয় ডিসি ফ্যানের খটখট আওয়াজ, বড় বড় জানলাগুলোয় খসখসের ভিজে গন্ধ, টেবিলের ওপর সেই ষাট পাওয়ারের ডুম, সব মিলে একটা আধাভৌতিক শিহরণ।

    বেশ কিছুক্ষন বসবার পর ডাক পড়ল ওনার ঘরে যাবার। গেলাম দুজনে। দাদার পরিচয় পেয়ে বসতে বললেন। প্রথম দর্শনেই মনে হোল উনি একজন চৌখস মানুষ। জিজ্ঞেশ করলেন চা খাব কিনা ? খাব বলতে আবার প্রশ্ন। গ্রীন ট্রি চলবে ?

    লে হালুয়া ! সে আবার কি বস্তু । আমার বন্ধু চালাকি মেরে বোধহয় বলে উঠল যে গ্রীন টিই হোক। উনি বললেন খেয়ে দেখো – বিদেশী জিনিষ।

    তারপর গ্রীন ট্রি এল। সে আবার জলে ভিজিয়ে নিতে হবে। মানে ঐ প্রথম দেখলাম তো টি ব্যাগ। সালটা বলেছি না আগে – ১৯৭৬। চুমুক দিতেই মন খুশ্‌। সত্যি দারুন। অনেকদিন পর্যন্ত মুখে লেগে ছিল ঐ চায়ের স্বাদ।

    তারপর অনেক কথা বললাম আমরা। উনি চুপচাপ শুনে গেলেন। তারপর বললেন প্রোজেক্টটার স্কীমটা একটু দেখি। দেওয়া হোল। অল্পসল্প চোখ বুলিয়ে বললেন বাঃ। আমরা তো মনে মনে পুলকিত। আর কোনো চিন্তা নেই। স্কীম ওনার পছন্দ হয়েছে। কাজ শুরু করলেই হয় আর কি !

    এরি মধ্যে চা এর কাপ শেষ। উনি একবার হাতঘড়িটা দেখে নিলেন। আর বেশী সময় নেই মনে হোলো। বেয়ারাকে ডেকে গাড়িটাকে রেডী করতে বললেন। বুঝলাম কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।

    তোমরা তো গরু মোষ নিয়ে ব্যবসা করতে যাচ্ছ। কোনো অভিজ্ঞতা তো নেই তোমাদের। পারবে তো ?
    কেন পারবো না স্যার। আমরা তো শুধু সুপারভাইসিং করব। বাকী কাজ তো লোকজন করবে। অভিজ্ঞ লোকজন রাখব আমরা। দু জনে বলে উঠলাম।

    হুঁ বুঝলাম। ঠিক আছে। আচ্ছা তোমরা বলোতো গরুর কটা বাঁট ?

    আমাদের তো শেষ অবস্থা। কে জানে যে এমন প্রশ্ন আসবে। উনি বোধহয় বুঝে গেলেন আমাদের দম। বললেন এক কাজ করো, আগে একটু এই গরু মোষ সম্বন্ধে একটু পড়াশোনা করে নাও তারপর না হয় আর একদিন এসো। তখন দেখবো। কেমন ??

    কোনও রকমে ওনার কাছ থেকে বেরিয়ে এলাম। আমি বন্ধুকে বললাম এত কিছু থাকতে এরকম উদ্ভট প্রশ্ন কেন করলেন বল্‌তো ? ও রেগে গিয়ে বলল জানিনা তবে এবার জানতে হবে।

    মে মাসের ঐ তপ্ত দ্বীপ্রহরে দু-বন্ধু ফ্রী স্কুল স্ট্রীটে গরু খুঁজতে লাগলাম বাঁট দেখার জন্য। কিন্তু গরু কোথায় ? ষাঁড় পেলাম কিন্তু তাতে তো বাঁট দেখতে পেলাম না। মনে হোলো ছোটবেলায় তো বাবার সাথে প্রায় রোজই যেতাম এক গোয়াল থেক দুখ আনতে। গোয়ালা দুধ দুয়ে আমাদের আনা পাত্রে ভরে দিত। কিন্তু কটা বাঁট থাকতো গরুর কিছুতেই মনে করতে পারলাম না।

    গরু পেলাম না ধর্মতলায় ও । কলকাতা তখন অনেক পরিষ্কার ছিল।

    আবার সেই এল নাইনে চড়ে সিঁথির মোড়। নেমে দেখলাম সিঁথির মাঠে (এখন যেটাকে সার্কাস মাঠ বলে) একটা গরু ঘাস খাচ্ছে। দু-জনে বসে পড়ে গুনতে লাগলাম কটা বাঁট ?

    ব্যবসাটা আর হোলো না.......অনেক পরে বুঝেছিলাম ম্যানেজমেন্টের এ বি সি ডি কাকে বলে......

    **
    ©গৌতম দত্ত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন