এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • দেবলীনা | 237812.69.90067.111 | ২৭ আগস্ট ২০১৯ ০৭:২৩384111
  • কিছুদিন আগেই ব্রাজিলের রাস্তায় লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড় মনে আছে? না থাকলে মনে করুন। গুগল করুন। ৩০% কাট হয়েছিল ব্রাজিলের এডুকেশন বাজেট। মনে করে দেখুন, এই প্রেসিডেন্ট কি করেছিল। আর তাই, আজকের জ্বলন্ত আমাজন দেখে ঘাবড়াবেন না। এতো হবারই ছিল। বেশ কয়েক বছর ধরে অনেক বিজ্ঞানীরা যা বলছে, সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে এই গর্ধভটি পৃথিবীর তোয়াক্কা না করে বিসনেস এক্সপ্যান্ড করছে।

    আমাজন কিন্ত আজকে জ্বলছে না। জ্বলছে বহু যুগ ধরে। অনেক সুকৌশলে আমাজানের জ্বলে পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া দেখতে হচ্ছে আমাদের। আমাদের, মানে বিজ্ঞানীদের। আমাদের, মানে প্রকৃতি নিয়ে এখনো যারা একটু আধটু ভাবনা চিন্তা করার ক্ষমতা রাখি, তাদের। আমাদের, যারা এখনো বেঁচে থাকার, মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার স্বপ্ন দেখি, তাদের।

    কি হচ্ছে এই ব্রাজিলে? আসুন, একটু আলোচনা করি।

    আলোচনা শুরুর আগেই সৎ বৈজ্ঞানিকের মতো এই লেখার সমস্ত দায়ভার নিজের বলে দাবি করে নিচ্ছি। মতামত সম্পূর্ণ নিজের, যদিও পাবলিশড রিসার্চ আর্টিকেল থেকেই এই মতামতের শুরু। শেয়ার করতে হলে নির্দ্বিধায় করবেন।

    আমাদের পৃথিবীতে টিকে থাকতে গেলে আজকের দিনে এনার্জি সব থেকে দরকার। বিদ্যুৎ, এবং গাড়ির জ্বালানি। এই দুই ধরণের এনার্জির জন্য আজকের দিনে পৃথিবীতে যত বিসনেস ডিল অথবা যুদ্ধ।তবে গত ১০-১৫ বছরে এই বিসনেস মডেল একটু হলেও পরিবর্তন ঘটেছে। কে কতটা দখল করতে পারবে, তার থেকে কে কতটা তৈরী প্রোডাক্ট মার্কেটে আন্তে পারবে, তার ওপর জোর যাচ্ছে বেশি। উদাহরণ স্বরূপ, ২০০৩ নাগাদ আমেরিকায় জৈব প্রণালীতে তৈরী ইথানল ম্যান্ডেটরি করা হয় সব গ্যাসোলিন গাড়িতে মেশানোর জন্য, অন্তত ১০% এবং ১৫% অব্দি। আমেরিকার সাথে সাথেই আরেকটি দেশ এই ইথানল তৈরী এবং গাড়ির জ্বালানিতে ব্যবহার করায় সক্ষম হয়, সেটি হলো ব্রাজিল। পৃথিবীর বায়োফুয়েল উৎপাদনের ৮৫% কৃতিত্ব যায় এই দুই দেশের।

    তবে ব্রাজিল ইথানল জ্বালানি ব্যবহার করছে প্রায় ৪০ বছর। তিন ধরণের উৎপাদন পদ্ধতির মধ্যে ব্রাজিলের আখের রস থেকে তৈরী ইথানল সব থেকে এফিসিয়েন্ট। আর আমেরিকায় সেটি তৈরী হয় ভুট্টার থেকে। একটু কঠিন, তবে উৎপাদন করার ক্ষমতা অনেক সময়েই সহজলভ্য ফিডস্টকের ওপর নির্ভর করে। এই ক্ষেত্রেও তাই। ব্রাজিলের গভর্নমেন্ট হেভি সাবসিডি দিয়ে এই এথানলের ব্লেন্ড ক্রমাগত ২২% (১৯৯৩), ২৫% (২০০৭), এবং বর্তমানে ২৭% (২০১৫) করেছে।ব্রাজিলে বেশ কিছু কোম্পানি ১০০% ইথানলে চলতে পারে এমন গাড়িও বের করে ফেলেছে। অথচ আমেরিকা এই ব্লেন্ড পার্সেন্ট ১০% এর থেকে বাড়াতে সক্ষম হয়নি। নানা কারণ আছে তার জন্যে, সেসব নাহয় আপাতত থাক। বায়োফুয়েলের আরেকটি উপকরণ সোয়াবেন, যার থেকে ডিজেল উৎপাদন হয়। আমেরিকার সাথে টেক্কা দিয়ে ব্রাজিল এই সয়াবিনের উৎপাদনও বাড়িয়ে দিয়েছে।

    কিন্তু এই ইথানলের আখ বা বায়োডিসেলের সোয়াবিনের জোগাড় দেবে কে? ট্রপিকাল ক্লাইমেট উৎপাদনের জন্য এক্কেবারে পারফেক্ট। আর গভর্নমেন্টের সাবসিডি লাভ করবার জন্য প্রচুর চাষি লেগে পড়েছে এই দুটি উৎপাদনের জন্য। এবং, হ্যাঁ বন্ধুগণ, এই সুগারকেন এবং সোয়াবিনের জন্যই আজকে আমাদের আমাজোনিয়া পুড়ছে।সায়েন্সের ভাষায় একে বলা হয় ইনডাইরেক্ট ল্যান্ড ইউস চেঞ্জ। আগুন লাগিয়ে গাছ পুড়িয়ে ল্যান্ড তৈরী হচ্ছে চাষের জন্য। খবরে হয়তো দেখবেন ব্রিজের গল্প, রাস্তার গল্প, কিন্তু আসলে এই সব চাষের জমি তৈরী।

    এবার অনেকেই বলেন, ক্ষতি কি? অনেক বিজ্ঞানীও বলেন, গাছ সরিয়ে গাছ লাগানোই তো হবে, কার্বন সিংক। ক্ষতি কি?

    ক্ষতি আছে। একটু তলিয়ে দেখেন কিছু গবেষকেরা। এবং যেই পরিমান কার্বন ডাইঅক্সাইড আমাজানের জংলী গাছপালা শুষে নিতে পারে, তা আমাদের ব্রাজিলিয়ান সুগারকেন ইথানল বা সয় বায়োডিজেল পারেনা। উপরন্তু চাষের জন্য যেই পরিমান কার্বন ডাইঅক্সাইড খরচ হয় ট্র্যাক্টর বা ট্রান্সপোর্টে, সেই সংখ্যা শুষে নেয়া কার্বন ডাইঅক্সাইড থেকে অনেক গুনে বেশি। এইটে খুব সহজ হিসেবে নয়, এবং যারা হিসেবে করে, তাদের আওয়াজ উঠতে দেয়া হয়না বিস্বসবুজায়নের মার্কেটে। কারণ, পৃথিবীকে "সবুজ" জ্বালানি দিয়ে রাঙিয়ে দেয়ার ধুম আজকে বিশ্বের সব দেশে।

    আমেরিকা খুব বুদ্ধিমানের মতো ২০১১-১৩ থেকে এই বায়োফুয়েল ইন্ডাস্ট্রিতে টাকা ঢালা কমিয়ে শেল অয়েল আর গ্যাসে মুভ করেছে। ২০০৮এর একটি সাইন্স ম্যাগাজিনে আর্টিকেল শেয়ার করেছি, পড়তে পারেন। এনার্জি ইন্ডিপেন্ডেন্সর জন্য স্বনির্ভর জ্বালানি উৎপাদন, এবং বিশ্ববাজারে ক্রুডের দাম এক ঝটকায় কমিয়ে ফেলার জন্য বেশ কিছুটা দায়ভার আমেরিকার। বাকিটা শেষ রক্ষা করার চেষ্টা সৌদি করেছিল, উৎপাদন বাড়িয়ে দাম কমিয়ে আমেরিকার শেল প্রযুক্তিকে ইকোনোমিক্যাল হওয়ার থেকে আটকানোর চেষ্টা। হয়নি। প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি মুখ বুজে সহ করে নিতে হয়েছে সৌদিকে এর জন্য। এবং মাঝখান থেকে ইরান মার্কেট ওপেন হওয়ায় মধ্য এশিয়া এবং চিনে প্রচুর মার্কেট পেয়ে গেছে।

    তবে এই "গ্রীন" ওয়াশিং আমাদের দেশেও হচ্ছে। সুধীজন, সাবধান। আমাদের মোদী সরকার ২০১৪ থেকে ২০১৮র মধ্যে ১০টি বায়োফুয়েল কারখানা নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন। এবং প্রযুক্তিগতভাবে সবথেকে অসফল টেকনোলজি বেসিসে এই কারখানা তৈরী হবে। টাকা করা পাবে, ভগবান জানে। আপনারা জানতে পারলে, আমাকে জানাবেন। আর দেখবেন, এইসব ভুয়ো ফুয়েল তৈরী করতে গিয়ে যেন আমাদের সুন্দরবন বা গির ফরেস্ট যেন সাফা করা না হয়। বুকের ফুশফুশের জন্য প্রাণ দিয়ে আগলে রাখবেন আপনার অরণ্যকে।

    https://news.mongabay.com/…/u-s-ethanol-may-drive-amazon-d…/
    https://www.sciencedirect.com/…/arti…/pii/S0264837716309607…
    https://www.cifor.org/publications/…/WPapers/WP68Pacheco.pdf
    cepal.org/…/ev…/files/documento_joaquim_bento_usp_brasil.pdf
    https://www.sciencedirect.com/…/artic…/pii/S0961953414000312
    https://science.sciencemag.org/content/319/5867/1238
    https://www.sciencedirect.com/…/artic…/pii/S026483771300210X
    https://www.sciencedirect.com/…/artic…/pii/S0301421510005732
  • আলোচনা | 236712.158.453412.81 | ২৭ আগস্ট ২০১৯ ১৪:১৪384112
  • খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটা নিয়ে আরও আলোচনা হওয়া উচিৎ। এখন পরিবেশ একটা মেনস্ট্রীম ইস্যু। তার একটা কারণ যেমন পরিবেশ নিয়ে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি, আর একট কারণ এটাও যে পরিবেশ নিয়ে কনসার্ন নতুন বিনিয়োগের একটা জয়গা তৈরী করেছে। ফলে সত্যিকারের পরিবেশবান্ধব কাজ হচ্ছে নাকি পরিবেশের দোহাই দিয়ে কেবল ব্যাবসাই হচ্ছে - সেগুলোকে বোঝা এবং আলাদা করতে পারা জরুরি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন