এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • প্রতিমা সেনগুপ্ত | 7845.15.560123.30 | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৫০381603
  • ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭

    কি জানি হয়েছে? গতকাল রাত্রে শোবার পর মম এসে আমার পাশে শুল। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিত দিতে, নিজের মুখটা আমার মাথায় রাখল। একটু বাদে আমার কপাল বেয়ে কি একটা কান পর্যন্ত গড়িয়ে নামল। হাত দিয়ে দেখলাম জায়গাটা ভেজা লাগছে। পাশ ফিরতেই মম উঠে বসল। মমের দু’চোখে জল। মম কাঁদছিল। মমের চোখের জল আমার কপালে গড়িয়ে পড়ছিল। আমি দু’হাতে মমকে জাপটে ধরে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কি হয়েছে মম? তুমি কাঁদছ কেন?’
    মম মাথা নেড়ে বলল, ‘কিছু না। তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়। কাল সাড়ে ছ’টায় ম্যাথ টিউশন রয়েছে, মনে আছে তো।’

    ৩ জানুয়ারি, ২০১৮

    আমি কিছু বুঝতে পারছি না। গত দু–তিন সপ্তাহ ধরে পাপা আর মম কেবলই, সকালে নয় বিকালে কোন না কোন ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছে। সকালে মমকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘মম তোমরা রোজ কোথায় ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছ?
    মম বলল, ‘আমার শরীরটা ভালো নেই। তুমি ম্যাথের এইচ ডাব্লিউ গুলো সব শেষ করে, বায়োলজি ফিফথ চ্যাপ্টারটা পড়ে রাখবে। আমি এসে পড়া ধরবো।’

    ৯ জানুয়ারি, ২০১৮

    বিকালে স্কুল বাস থেকে নেমে আমি আর রোরো, রাস্তা পার হয়ে বিল্ডিং–এর লিফটের সামনে দাঁড়ালাম। রোরো থাকে ফিফথ ফ্লোরে, আমরা সেকেন্ড ফ্লোরে।
    গত বছর অ্যাপার্টমেন্টে সরস্বতী পূজোর দিন, রোরো আমাকে আলাদা করে ছাদের এক পাশে ডেকে নিয়ে গেল। তারপর পকেট থেকে বার করল ওপোর একটা ঝকঝকে, গোল্ডেন কালারের স্মার্টফোন। রোরোর পাপা ওকে কিনে দিয়েছে। থার্টি টু জিবি ইন্টারনাল মেমোরি, থ্রি জিবি ৱ্যাম, সিক্সটিন মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ফেস ক্যামেরা, অনেকগুলো নতুন গেম আছে। সঙ্গে জিও–র নেট – রীতিমতো দৌড়চ্ছে। সত্যি, সত্যিই সেদিন রোরোর উপর ভারি হিংসা হয়েছিল। ক্লাস এইটে পড়ে। এখনই নিজের একটা স্মার্টফোন আছে। মমকে কত বলেছি, কিনে দেওয়া দূরে থাক, নিজের আসুস–টা আমাকে ধরতে পর্যন্ত দেয়না। একটু টেনে নিয়ে গেম খেললেই চিৎকার। ব্যাটারি শেষ হয়ে যাবে। ঐ পুরনো মান্ধাতা আমলের বোতাম টেপা নোকিয়া–টা আমার পাতে পড়েছে। মাঝে মাঝে মনে হয় ছুঁড়ে ওটাকে ডাস্টবিনে পাঠিয়ে দেই।
    স্কুলের ফেস্টের দিন ওটা নিয়ে গিয়েছিলাম। একবার ভুল করে পকেট থেকে বার করেছি। পাশ থেকে ওয়েন্দ্রিলা ঠোঁট বেঁকিয়ে জিজ্ঞাসা করল, ‘এই অ্যান্টিক পিস–টা কোথা থেকে জোগাড় করলি।’ সঙ্গে সঙ্গে ওটাকে প্যান্টের হিপ পকেটে চালান করে দিলাম।
    লিফটম্যান অজিত কাকু লিফটে নেমে আমাদের নিয়ে উপরে চলল। আমাকে তিন তলায় নামিয়ে, রোরোকে নিয়ে উপরে উঠে গেল। আমাদের ফ্ল্যাটের দরজাটা ভেজানো ছিল। ঠেলে ঢুকে ড্রইং রুমের সোফায় স্কুল ব্যাগ রেখে – জুতো খুলছিলাম। পাশের ঘর থেকে মমের গলার শব্দ পেলাম। মম ফোনে কারুর সঙ্গে কথা বলছিল। জুতো ছেড়ে পাশের ঘরে যেতেই দেখলাম মম চেয়ারে বসে। কানে ফোন, দু’চোখ দিয়ে জল পড়ছে। মম কাকে জানি বলছিল, ‘যদি আর দুটো বছরও বাঁচি, টিটোর স্কুলিংটা কমপ্লিট করে যেতে পারবো।’
    মম কি বলছে? কোথায় যাবে? আজকাল মম খালি কাঁদে। আমার একটুও ভালো লাগেনা।

    ১৪ জানুয়ারি, ২০১৮

    রাত্রে খেয়ে নিজের ঘরে শুয়ে পড়েছি। ড্রইং রুমের ল্যান্ড ফোনটা বাজছিল। রাত্রে খাবার পর সবাই শুয়ে পড়লে, পাপা অনেক রাত পর্যন্ত ড্রইংরুমে বসে থাকে। আগে পাপা–মম রাত্রে খেয়ে, নিজেদের বেডরুমে গিয়ে টিভি দেখত। আজকাল মম খেয়েই পর পর অনেকগুলো ওষুধ খায়। তারপর ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। পাপা ড্রইং রুমে বসে একটার পর একটা সিগারেট খেয়ে চলে। রোজ। একদিন মম বলেছিল, ‘রোজ রোজ কি শুরু করেছো?’
    পাপা বলল, ‘বাড়ি–অফিস সামলে, রোজ ডাক্তারদের ফেস করা, একটার পর একটা ভাইটাল ডিসিশন, আমি আর পারছি না। আমাকে যে করেই হোক চালু থাকতে হবে।’
    ফোনটা আবার বাজল। পাপা ফোনটা ধরে কি যেন শুনল, তারপর খুব গম্ভীর গলায় বলল, ‘অনকোলজিস্টের সঙ্গে কথা হয়েছে। ডঃ দত্ত এখন কলকাতায় বেস্ট। ম্যামোগ্রামের রিপোর্ট ভালো না। কম্বিনেশন থেরাপি টাটায় করাবো। অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট করছি। ফ্লাইটের টিকিট নিয়ে সমস্যা হবে না।’
    ম্যামোগ্রাম শব্দটার মানে কি? কাল সকালেই পাপাকে জিজ্ঞাসা করতে হবে।

    ২১ জানুয়ারি, ২০১৮

    ম্যামোগ্রাফি শব্দটার মানে অক্সফোর্ডের ডিকশনারি থেকে জানা গেলেও, মমের হঠাৎ কি হল যে ম্যামোগ্রাম করতে হল – সেটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। আজ সকালে পাপা আমাকে বলল, পাপা আর মম কয়েক দিনের জন্য মুম্বাই যাবে। আমার স্কুল চলছে। আমি কয়েকটা দিন পিসিমণির বাড়ি গিয়ে থাকবো আর ওখান থেকেই স্কুল করবো। আমার মুড অফ হয়ে গেল। পাপা–মম বেড়াতে যাবে, আমাকে নিচ্ছে না – এটা কেমন ব্যাপার! ট্যুর করার এটা কোন সময় হল? সামার ভ্যাকেশনে করতে পারতো।

    ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

    মম–পাপা সেই কবে গেছে, এখনও ফেরার নাম নেই। পিসিমণি বলছিল, ‘মাকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে গেছে পাপা।’ ডাক্তার তো কলকাতাতেই দেখানো যেতো। কাল জিওগ্রাফির প্রজেক্ট জমা দিতে হবে। এই বাড়িটায় পিসো, পিসিমণি আর টিনটিন দাদা থাকে। পিসিমণি বলেছে, ‘তুই টিনটিনের কম্পিউটার থেকে প্রিন্ট বার করে নিস।’ নিজেদের বাড়ি – আমার রুমটা – কম্পিউটর – মম – পাপা সবাইকে খুব মিস করছি।

    ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

    গতকাল মম–পাপা রাত্রে ফিরেছে। আমি আজ স্কুল করে বাড়ি ফিরলাম। কতদিন পর নিজের বাড়ি ফিরছি। লিফটে উঠতেই অজিত কাকু জিজ্ঞাসা করল, ‘এতদিন কোথায় ছিলি। তোকে দেখিনি কেন?’ কোন মতে পিসিমণির বাড়ির কথা বলে, ফ্লোরে পা দিয়ে দরজার কলিং বেলটা চেপে ধরলাম। মম দরজা খুলে দাঁড়ালো। আমি মমকে জাপটে ধরলাম। মম আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। মমকে কি রকম যেন লাগছে, ভীষণ রোগা আর ফ্যাকাসে। এতো খারাপ দেখতে লাগছে কেন? – বুঝতে পারলাম না।
    বিকালে মমকে স্কুলের সমস্ত আপডেটস্ দিলাম, স্কুল ডায়েরি দেখালাম। পাপা পরে এলো। পাপাকে কত কিছু জিজ্ঞাসা করার আছে। ডিসকভারির একটা স্পেস প্রোগ্রাম নিয়ে অনেক কিছু জানার ছিল। কিন্তু পাপাকে ভীষণ মোরোজ মনে হল। মম খুব আস্তে আস্তে কথা বলছিল। ওদের যে কি হল?
    কিছুক্ষণ পরে মম গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল। আমি মমের ঘরের দিকে যেতে যাব, পাপা আমাকে হাত ধরে টানতে টানতে আমার ঘরে নিয়ে এলো। নিচু গলায় বলল, ‘মমের শরীর ভালো নেই, তুমি এখন মমের কাছে বেশী যাবে না। ওকে বেশী কথা বলে ক্লান্ত করবে না। মম যতক্ষণ ঘুমবে, একদম ডিস্টার্ব করবে না। কাল থেকে রান্না করার জন্য একজন মাসী আসবে। খাবার, টিফিন যা দরকার ওঁকে বলবে। মমকে ডাকবে না।’
    আমি পাপাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘মমের কি হয়েছে পা!’
    পাপা বলল, ‘ওঁর শরীরটা ভাল নেই। ওকে রেস্ট নিতে হবে।’
    এতদিন পরে মম আর পাপা বাড়ি ফিরল। আমার কত কথা বলার ছিল। কিছুই বলা হল না। মম আমার সাথে ভালো করে কথা না বলে, কি খাবি? – জিজ্ঞাসা না করে ঘুমিয়ে পড়ল। পাপা আগে কত বিষয়ে গল্প করত। ডিসকভারি, জিওগ্রাফি চ্যানেল নিয়ে কথা বলত, ম্যাগাজিন আর কমিক্স বুক নিয়ে আসতো। এবার মুম্বাই থেকে আমার জন্য কিছুই আনেনি। আমার এতো রাগ হল – ওদের সঙ্গে আর কথাই বলবো না ঠিক করেছি।

    ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

    স্কুল ছুটির পর গ্রাউন্ডে নামতেই রোরো জিজ্ঞাসা করল, ‘তোদের এক্সাম রুটিন দিয়ে দিয়েছে।’ মাথা নেড়ে না বলে বাসে উঠে দু’জনে পাশাপাশি বসে পড়ি। রোরো বলল, ‘আমার খুব কষ্ট হচ্ছে তোর জন্য।’ অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কেন?’ রোরো বলল, ‘কাল মা বলছিল, আন্টির ক্যান্সার হয়েছে। টাটা থেকে কেমো নিয়ে এসেছে। এবার রেডিওথেরাপি হবে।’
    আমি সারা রাস্তা রোরোর সঙ্গে আর একটাও কথা বলিনি। আমার প্রচণ্ড রাগ হচ্ছিল। মমের ক্যান্সার হয়েছে, এই কথাটা পা–মম কেউ আমাকে একবারও বলেনি। রোরোর কাছ থেকে এই কথাটা শুনতে হল?
    ফ্ল্যাটের বেল টিপতেই ছায়া মাসী দরজা খুলল। আজ সকালেই এসেছে। আমাকে জুতো খুলতে দেখে এক গ্লাস জল এনে বলল, ‘জল খাও।’ আমি কোন কথা না বলে মমের ঘরে গিয়ে পিছন ফিরে শুয়ে থাকা মমকে জোর ধাক্কা দিলাম। ডাকলাম, ‘মম।’ না, মম চোখ খুলল না।
    পিছন থেকে ছায়া মাসী বলল, ‘বৌদি ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়েছে। ওঁকে এখন ডেকো না।’
    সাড়ে সাতটায় পাপা অফিস থেকে ফিরল। মম তখনও ঘুমাচ্ছে। পাপাকে চা করে দিয়ে ছায়া মাসী চলে যেতেই, আমি ড্রইং রুমে পাপার পাশে গিয়ে বসলাম। পাপাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘পা – মমের ক্যান্সার হয়েছে?’
    পাপা একটু চুপ করে থেকে জিজ্ঞাসা করল, ‘তোকে কে বলল?’
    আমি বললাম, ‘রোরো! আন্টি ওকে বলেছে।’
    আমি পাপার কাছে ঘেঁসে বসে বললাম, ‘মম কি আর বাঁচবেনা পা?’
    পাপা মুখের কাছ থেকে চায়ের কাপটা নামিয়ে বলল, ‘তুইতো নিউজ শুনিস, সাইন্স চ্যানেল দেখিস। রোজ কত নতুন টেকনোলজি বেরোচ্ছে। কখন কোনটা কাজে লেগে যায়, কে বলতে পারে? মন খারাপ করার কিছু নেই টিটো। মেডিক্যাল সাইন্স অনেক অ্যাডভান্স হয়েছে। আমরা শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করবো – কেমন।’
    আমি পাপার গায়ের সঙ্গে মিশে বসে ছিলাম, সারা সন্ধ্যা। পাপা আমার পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। আজ কিন্তু পাপা আমাকে পড়তে বসার জন্য একবারও তাড়া দেয়নি।

    ৫ মার্চ, ২০১৮

    পাপা আজ অফিস ছুটি নিয়েছে। মম তো টানা কিছুদিন ধরে স্কুলে যাচ্ছে না – লিভেই রয়েছে। পা, মমকে তৈরি হতে বলছিল। স্কুল যাবার আগে মমকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তোমরা কোথায় যাচ্ছ।’
    মম বলল, ‘ডাক্তার দেখাতে।’
    আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘পা ছুটি নিয়েছে কেন? ঠিক করে বল, কোথায় যাচ্ছ?’
    মম চুপ।
    পা বলল, ‘আমি তো তোমাকে আগেই বলেছি টিটো, টেকনোলজি অনেক এগিয়ে গেছে, আমরা সব রকম চেষ্টা করবো। আজ মমের রেডিওথেরাপি শুরু হবে।’
    স্কুলে টিফিনের সময় জো–কে দেখলাম, ক্যান্টিন থেকে হটডগ কিনে খাচ্ছিল। আমি ওর কাছে যেতেই বলল, ‘খাবি।’ মাথা নেড়ে বললাম ‘না’। ওর পাশেই বসে পড়লাম। একটু পরে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘জো – তোর ঠাম্মির ক্যান্সার হয়েছিল না?’
    জো মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ।
    জিজ্ঞাসা করলাম, ‘রেডিওথেরাপি হয়েছিল?’
    জো মাথা নেড়ে বলল, ‘কেমো। খুব কষ্ট হয় জানিস। ঠাম্মি কিছু খেতে পারতো না। মাথার সব চুল উঠে টাকলু হয়ে গিয়েছিল।’
    আমি আস্তে আস্তে উঠে চলে এলাম ক্লাসে। আমার আর স্কুলে থাকতে ভালো লাগছিল না।
    বিকালে বাড়ি ফিরে, ব্যাগটা সোফায় নামিয়ে রেখেই মমের কাছে চলে গেলাম। মমকে ডাকলাম, আস্তে করে। মম কোন উত্তর দিল না, চোখও খুলল না। আমি ড্রইং রুমে ফিরে এলাম। মম বলে, ‘বাইরের থেকে এসে জুতো খুলে, জায়গায় রেখে ঘরে ঢুকবে।’ আজ জুতো না খুলেই মমের রুমে চলে গিয়েছি। মম জাগা থাকলে ঠিক বলতো, ‘ব্যাড বয় হয়ে যাচ্ছ টিটো।’
    রাত্রে পাপা অনেক চেষ্টা করেও মমকে কিছু খাওয়াতে পারলো না। কেবল বমি পাচ্ছে।

    ২৩ এপ্রিল, ২০১৮

    ম্যাথ টিউশন শেষ হয়ে গেছে। ব্যাচের বন্ধুরা প্রায় সবাই চলে গেল। মম তখনও আসেনি। কয়েকদিন হল মম স্কুলে জয়েন করেছে। আমাকে বলেছিল স্কুল ফেরত নিতে আসবে। স্যারের নেক্সট ব্যাচ শুরু হয়ে গেছে। স্যার বারান্দায় চেয়ারে বসে অপেক্ষা করতে বললেন। আমার নোকিয়াটা পকেট থেকে বার করে পাতি স্নেকটাই খেলছিলাম। মম কিছুক্ষণ পরে এসে জিজ্ঞাসা করল, ‘অনেকক্ষণ বসে আছিস?’ মাথা নাড়লাম। এপ্রিল মাসের গরমেও মমের মাথায় স্কার্ফ বাঁধা। রেডিওথেরাপি চলছে। কানের পিছনে আর মাথার পিছনে, ঘাড়ের কাছে কিছু চুল আছে। কিন্তু মাথার সামনের দিকটার সব চুল উঠে গেছে। বাইরে বেরোলেই স্কার্ফ বেঁধে চলাচল করতে হয়।
    যে দিন থেরাপি থাকে, বাড়ি ফিরে মম আর কিছুই খেতে পারেনা। বিছানায় শুয়ে কেবল এপাশ ওপাশ করতে থাকে। আমি মমের মাথার কাছে বসে থাকি। জিজ্ঞাসা করি, ‘মম কিছু খাবে? কিছু দেব?’ – মম শুধু জল চায়। কিন্তু জলও বেশী খেতে পারে না। কেবলই, ওয়াক্! ওয়াক্! – করে।
    আজ বাড়ি ফিরে মমের স্মার্ট ফোনটা চাইলাম। মোবাইলটা মম ধরতে দিতে চায়না। আজ একবারেই বলল, ‘খেলগে যা।’ দু’টো নতুন গেম ডাউন লোড করেছি। ‘প্রজেক্ট আইজিআই’–টা হেভি ইন্টারেস্টিং।

    ১১ মে, ২০১৮

    গত পরশুদিন থেকে মমের শরীর খুব খারাপ। চোখ–মুখ সব হলুদ হয়ে গেছে। কিছু খেতে পারছে না। গতকাল রাত্রে পাপাকে জিজ্ঞাসা করলাম। পা বলল, ‘জন্ডিস! খুব খারাপ ধরনের জন্ডিস। লিভারকে অ্যাফেক্ট করেছে। বডি কোন খাবার নিতেই পারছে না।’

    ১৪ মে, ২০১৮

    খুব সকালে পাপা আমাকে ডেকে তুলল। বলল, ‘টিটো, মমকে নার্সিংহোমে নিয়ে যেতে হবে, অ্যাম্বুলেন্স বলা হয়েছে। পিসিমণি এখনই এসে পড়বে। ওঁর কাছে খেয়ে নিয়ে স্কুল চলে যেও। আমরা এখনই বেরবো। মমের সঙ্গে দেখা করে এসো।’
    আমি বেসিন থেকে ফ্রেশ হয়ে, মমের ঘরে গেলাম। মম বিছানার বালিশে হেলান দিয়ে বসে ছিল। মমের কাছে যেতেই, মম হাত নেড়ে আমাকে কাছে টেনে নিলো। মম খুব জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে। আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে, খুব টেনে টেনে – প্রায় শোনাই যায় না এরকম স্বরে বলল, ‘পাপার কথা শুনবে কিন্তু।’ আমি মমকে জড়িয়ে ধরে ছিলাম। মমের বুকের ভীতর কি রকম সাঁই সাঁই শব্দ হচ্ছিল। আমার কেমন জানি ভয় করছিল। দু’জন সাদা অ্যাপ্রন পরা লোক একটা হুইল চেয়ার নিয়ে এসেছিল। ওটাতে মমকে বসিয়ে একজন লিফটে নেমে গেল। পিসিমণি ছিল। কিন্তু আমার কেন জানি ভীষণ খালি খালি লাগছিল।
    স্কুল থেকে ফেরার পর ছায়া মাসী ছিল বাড়িতে। পাপা অনেক রাত্রে ফিরল। আমি ড্রইং রুমের সোফায়, পাপার কাছে গিয়ে বসলাম। পাপা চোখ বুজে, চুপ করে বসে ছিল। আমি পাপার দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘পা – মম কেমন আছে?’ পাপার দু’চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল গাল বেয়ে। আমি তাড়াতাড়ি দু’গালের উপর হাত রেখে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘পা – কাঁদছ কেন?’
    একটু পরে পাপা চোখ খুলল। আস্তে আস্তে বলল, ‘গতকাল রাত্রে, সামান্য একটু সুজি জাল দিলাম। মম সুজিটা ভালো বাসে। কত চেষ্টা করলাম। তিন চামচ সুজিও খাওয়াতে পারলাম না।’

    ১৬ মে, ২০১৮

    গতকাল বিকালে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে দেখি পিসিমণি বসে আছে। বিকালের টিফিন করে, ফ্ল্যাট লক করে পিসির সঙ্গে ওঁর বাড়ি চলে এসেছি। অনেক রাত্রে পা ফোন করেছিল, নার্সিংহোম থেকে। বলল, মম একই রকম আছে। পাপার সঙ্গে কোন কথা বলেনি। শুতে চলে গেলাম।
    আজ অনেক রাত্রে পিসিমণি আর পিসো নার্সিংহোম থেকে ফিরে – নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিল, মমকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে।

    ১৭ মে, ২০১৮

    সকাল সাড়ে আটটা। আমি স্কুল ড্রেস পরে তৈরি। একটা ফোন এলো। ফোনটা রেখে পিসিমণি আমার কাছে এসে পিঠে হাত রাখল। আমি পিসির দিকে তাকালাম। পিসিমণি বলল, ‘মম নেই টিটো।’
    মানে? গতকাল পাপা আমাকে বলল, আজ বিকালে আমি নার্সিংহোমে গিয়ে মমের সঙ্গে দেখা করবো!
    আমি সোফায় চুপ করে বসে রইলাম। পরে পিসিমণির সঙ্গে নার্সিংহোমে গেলাম। ওয়েটিং জোনে বসে ছিলাম। বড়মামা, ছোটমামা, মাসিমণি, মেসো সবাই একে একে এলো। সবাই চুপচাপ বসে ছিল। পাপাকে দেখতে পাচ্ছি না। পিসিমণি বলল, ‘পাপা নার্সিংহোমের অফিসিয়াল ফর্মালিটিতে ব্যস্ত’।
    অনেকক্ষণ বসে থাকার পর পাপা এসে বলল, ‘বাইরের দিকের লিফটটার কাছে চল। ওদিক দিয়ে স্ট্রেচারে করে নামিয়ে দেবে।’ আমরা সবাই লিফটের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এক সময় লিফটটা খুলে দু’জন সাদা অ্যাপ্রন পরা লোক একটা স্ট্রেচার আমাদের সামনে এনে রাখল। স্ট্রেচারে সাদা চাদরের উপর মম শুয়ে ছিল। গায়ে সাদা চাদর ঢাকা। আমি সবার পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ পিসিমণি সবাইকে সরিয়ে আমাকে টানতে টানতে এনে মমের সামনে দাঁড় করিয়ে দিল। মমের মুখটা কি প্রচণ্ড ফোলা আর ধপ ধপে সাদা। হাত দুটো বুকের কাছে ভাঁজ করা। সে দুটোও ভীষণ ফোলা। হাতের আঙুলগুলো ফুলে ডাবল হয়ে গেছে। আমার খুব কান্না পাচ্ছিল। কিছুক্ষণ পরে পিসিমণি আমাকে পিছনে টানল। আমি পিছিয়ে গেলাম। স্ট্রেচারটা নিয়ে নার্সিংহোমের বাইরে রাস্তায়, ডেড বডি নিয়ে যাবার কাঁচের গাড়িতে মমকে তুলে দিল। বড় মামা, মাসী, পিসো সবাই মমের বুকের উপর সাদা রজনীগন্ধার মালা দিচ্ছিল। পাপা অনেকগুলো ধূপকাঠি এক সাথে জ্বালাবার চেষ্টা করছিল। কিন্তু বারবার হাওয়ায় দেশলাই কাঠিটা নিভে যাচ্ছিল। আমি গাড়িটার কাঁচের দেওয়ালের পাশের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এখান থেকে কাঁচের ভিতরে শুয়ে থাকা মমের মুখটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। মমের মুখের উপর প্রচুর রোদ এসে পড়ছে। কেউ খেয়াল করছে না! মম–তো একটুও রোদ সহ্য করতে পারে না, মাইগ্রেনের যন্ত্রণা হয় বলে সানগ্লাস ছাড়া কখনও রোদে বেরত না।
    পাপা, পিসো আর বড়মামা গাড়ির সামনের দিকে উঠে পড়ল। আর গাড়িটা ছেড়ে দিল। পিসো একবার গাড়ির জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে বলল, ‘বল হরি ......’
    গাড়ির অন্যদিকের জানলাটা দিয়ে পাপা অনেকগুলো খই ফেলে দিল মাটিতে। কিছুক্ষণ পরে লেফ্ট টার্ন নেবার পর গাড়িটা আর দেখা গেলনা।
    তার মানে, মমের সঙ্গে আমার আর কোন দিনও দেখা হবে না।

    ৫ জুন, ২০১৮

    অনেকগুলো দিন চলে গেল। মম চলে যাওয়ার পর রোজ লোকজন আসছিল পাপার সঙ্গে দেখা করতে। এখন বাড়ি ফাঁকা। মমের অনেক জিনিসপত্র, ড্রেস – সালোয়ার, শাড়ি অনেক কিছুই একটা অরফানেজে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। বেডরুমে এখন একটা ছবি ঝুলছে। পা রোজ সকালে সাদা রজনীগন্ধার মালা দেয়। রজনীগন্ধার গন্ধটা আমার একটুও ভালো লাগেনা। মম চলে যাওয়ার এক সপ্তাহ বাদে, পা মমের আসুসের স্মার্টফোনটা আমাকে দিয়ে বলল, ‘টিটো, এটা আজ থেকে তোমার। তবে একটা কথা মনে রেখো, এটা শুধু ফোন না। এটা মমের স্মৃতি। যত্ন করে ব্যবহার করবে কেমন।’
    এখন অনেক রাত্রি। পাপা আজকাল আর রাত্রে বসে বসে সিগারেট খায়না। এগারোটা বাজলেই, ঘুমের ওষুধ খায়। তারপর আমার ঘরে এসে, আমার খাটে একপাশ দিয়ে শুয়ে পড়ে। এখন পা আর ও ঘরে শোয় না। কিন্তু আমার কিছুতেই ঘুম আসেনা। পা ঘুমিয়ে পড়লেই আমি বিছানা ছেড়ে উঠে এসে ড্রইং রুমের সোফায় বসে থাকি। ডায়রিটায় মনের কথা লিখি। মমের ঘরে যেতে ভালো লাগেনা। ঘরটা খালি, মম নেই। মম আর কোন দিনও ঐ ঘরটায় আসবেনা।
    মমের সেলফোনটা ঘাঁটি। গেমস খেলতে ইচ্ছা করেনা। এটাতে এখন নেটও নেই। ফোনটা আমার খুবই ফেভারিট। কিন্তু মমের বদলে এটা চাইনি। এটার চেয়ে মম অনেক বেশী ইম্পরট্যান্ট। মমকে ছাড়া একদিনও চলছে না। আমার ফেভারিট বাটার পনির আর মটন রেজালা কে বানিয়ে দেবে? কত প্রাইভেট কথা ছিল, পাপাকে সব কিছু মোটেই বলা যাবে না।
    ছ’মাস ধরে মম অসুস্থ। পা–কে কতবার জিজ্ঞাসা করেছি, পা বলেছে – বেস্ট ডাক্তারেরা মমকে দেখছে। মেডিক্যাল সাইন্স অনেক উন্নত হয়ে গেছে। তাহলে মম চলে গেল কেন? স্টেজ টু ক্যান্সার কি সারে না? পা বা ডাক্তারদের কোন ভুল হয়নি তো? নাকি মমই কোন ট্রিটমেন্ট নিতে পারছিল না? নাকি জন্ডিস? মম এতো তাড়াতাড়ি, হট্ করে চলে গেল! মমের কি খুব কষ্ট হচ্ছিল? আমি বুঝতেই পারলাম না। আর লিখতে পারছি না। চোখ দু’টো বুজে আসছে। ডায়েরিটাকে বন্ধ করে পাশে রেখে, সোফাতেই শুয়ে পড়লাম।
  • | 453412.159.896712.72 | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১১:১১381604
  • ..........
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন