এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পুপে | 1278.198.67.98 | ১৫ জুন ২০১৮ ১৪:১২377375
  • সে এক পুঁচকে পাকা অথচ শান্তশিষ্ট মেয়ে ছিল, তার জীবনে উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটত না সচরাচর। তার উপরে সে ছিল খুব ঘুমকাতুরে। খুব তাড়াহুড়ো করে করলে ঠিক যতটুকুন সময় লাগা উচিত দাঁত মেজে চান সেরে ভাত খেয়ে জামা কাপড় পরে তৈরি হতে, ঠিক সেইটুকুন সময়কে ইশকুল যাবার ভ্যান আসার সময় থেকে বিয়োগ করলে ঘড়িতে যটা বাজবে, সেই সময়ে সে ঘুম থেকে উঠত। সেই বাড়িতে হৈহল্লা কেউ করতনা, মাস্টারমশাইদের বাড়ি ছিল সেটা -“বাড়িতে তিন তিনটে ছেলে মেয়ে থাকে, কেউ কোনোদিন বুঝতে পারবে?” (একজনের ক্লাস ওয়ান, তো একজন মাধ্যমিকের প্রস্তুতি নেয় আর একজনের কলেজ শেষ, তাহলেই বুঝে দেখুক সবাই তারা কিভাবে হৈহল্লা করবে! )। এহেন পরিবেশে একদিন ব্যতিক্রম ঘটলো, হয় সেটা ছুটির দিন ছিল, নাকি উত্তেজনায় সেদিন সে স্কুলেই যায়নি তা গল্প বলিয়ের মনে নেই। সকালবেলা সে জানতে পারল ফুটবল খেলতে গিয়ে তার বড়দাদার নাকি হাত ভেঙ্গে গ্যাছে! বকাঝকা খেয়ে বড়দাদা হাত প্লাস্টার করাতে ডাক্তারখানায়। বাকি সকলে চিন্তিত হলেও সে কিন্তু উত্তেজিত (এবং উল্লসিত!?)।

    কারোর হাত ভেঙ্গে যাওয়ায় এমন উত্তেজনার বেশ কয়েকটা কারণ আছে, এক নম্বর কারণ- সেই বাড়িতে খেলাধুলোর তেমন পার্ট নেইকো, সবাই মন দিয়ে লেখা পড়া করে, খেলাধুলো বড়দাদাই খানিক করত, কিন্তু খেলতে গিয়ে একেবারে হাত ভেঙ্গে আসার মধ্যে একটা বেশ ইয়ে ব্যাপার আছে। তাও আবার বাইসাইকেল কিক মেরে! দু নম্বর কারণ, এর আগে যে উল্লেখযোগ্য হাত ভাঙ্গার ঘটনাটি এ বাড়িতে ঘটেছিল তেমন রোমাঞ্চকর ঘটনা সিনেমার স্ক্রিপ্ট- রাইটার রাও চট করে ভেবে পাবে না। বাথ্রুমে অমনি পিছলে পড়ে কবজি ভাঙল, বা ধরা যাক সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে নিজেরই হাতের ওপর পড়ে গিয়ে বুড়ো আঙ্গুল ভেঙ্গে ফেলল কেউ - অমন আঁতিপাতি ঘটনা তাদের বাড়িতে ঘটেই থাকে, তা নিয়ে সে অত মাথা ঘামায় না। হাত ভাঙ্গার গল্প হবে এমন, যা নিয়ে বছর কুড়ি পরেও লিখতে বসে কারোর কুল্কুলিয়ে হাসি পাবে; তদ্দিন অব্ধি যদি ধৈর্য না-ও থাকে, হাত ভাঙ্গার পর অন্তত মাস খানেক কাকু জেঠু কাকী পিসে মাসি মামা জেঠি মেসো, এমনকি সদ্যপরিচিতদের-ও ব্যাখ্যান করে সে গল্প বলা যাবে, এমনকি অভিনয় করে দেখিয়ে হাততালি ও কুড়নো যাবে।

    সেই গল্পে থাকে ভিলেন - এক ছাপোষা কিন্তু বুদ্ধিমান চোর, যে দুপুরবেলা গেরস্ত ঘরে সবাই ঘুমোচ্ছে ধরে নিয়ে উঠোনে মেলে রাখা কিছু রং উঠে যাওয়া বা না যাওয়া বাড়িতে পড়ার শাড়ি, সাদার ওপর পেনের আঁকিবুঁকি কাটা বা চকচকে নতুন বাচ্চামানুষের ফ্রক, প্রায় ন্যাতা হতে চলা আরামের লুঙ্গি অথবা মাড় দিয়ে কাচা কড়কড়ে পড়াতে বসার মাস্টারমশাইয়ের লুঙ্গি ইত্যাদি চুরি করতে এসেছে। গল্পে থাকে সেই বাড়ির বড় বৌ - যিনি কি কুক্ষণে খাওয়া দাওয়া সেরে সেই সময়েই হয় আচার কিম্বা ভেজা চুল শুকোতে, কিম্বা উঠোনের ওপারের বাড়ির গোস্বামী গিন্নির সাথে চাট্টি কথা কইতে উঠোনে এসেছেন। এসে তিনি দেখছেন, সুন্দর নিপুণ পুঁটুলি বেঁধে গরমের ঠা ঠা রোদে খটখটে শুকিয়ে যাওয়া জামা কাপড় মাথায় নিয়ে একজন চলে যাচ্ছে! আতঙ্কে তাঁর গলা দিয়ে স্বর বেরোবে না বেরবে না হয়েও শেষ অবধি “চোর চোর” চিৎকার টা তিনি করে উঠতে পারেন। বেচারা চোরের এখন অবধি প্রায় নিখুঁত চৌর্যবৃত্তিতে এমন একটা বাধা পড়ে যাওয়ায় সে পুঁটুলিসমেত দৌড় লাগায়, কিন্তু যে পথে এসেছে সে পথ যে ফেরার পথ নয়! উঠোনের পাঁচিলটির ওপারে হিন্দি ইশকুলের খোলা বারান্দা গোছের (উল্লেখ্য এই ইশকুলে পড়তে আসা ছেলে মেয়েদের প্রায়শই টিফিন পিরিয়ডে বাগানের জবাফুল ইত্যাদি ঘুষ দিয়ে এবং তাদের ‘বড়দের’ গল্পে অংশগ্রহণ করে ঘুমকাতুরে মেয়েটা হিন্দি বলতে শিখেছিল)। এই পাঁচিলের বিশেষত্ব হল ইশকুলের দিক থেকে টপকে আসা যতটাই সোজা, এই মাস্টারমশাইদের বাড়ি থেকে টপকে ওপারে যাওয়া ততটাই কঠিন। কারণ ওপারে ইস্কুলবাড়ির ভিত উঁচু করে করা বলে পাঁচিলের নাগাল পাওয়া সোজা, এমনকি তাতে বসে টিনেজার ছাত্রছাত্রীরা দুটি সুখ দুঃখের গল্পও করতে পারে (এই অপসংস্কৃতির হাত থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করতে পাঁচিলের মাথায় কালে কালে পেরেক গেঁথে দেয়া হয়েছিল, তবে সে অন্য গল্প)। পাঁচিলের এপারে কিন্তু বাগান, অনেকটা নিচুতে জমি , তাই এদিক থেকে বড় মানুষদের প্রায় মাথা সমান উঁচু পাঁচিল। চোর বাবাজী বড়ই বেগ পেতে লাগল পাঁচিল টপকে ওপারে যেতে।

    এমন সময়ে এই গল্পের অন্যতম মুখ্য চরিত্রের আসরে প্রবেশ- ওই খুদে মেয়েটার বাবা, এই মুহুর্তে আতঙ্কিত বড় বউয়ের দেওর। এখানে বলে রাখা দরকার যে, ছাত্র পড়ানো এবং পেটানো ছাড়া এই বাড়ির কিছু কিছু সদস্যের একটি বৈশিষ্ট্য হল “চোর” শব্দটি তাঁদের ক্ষেত্রে টনিকের মত কাজ করে, তাঁরা ঘুমের মধ্যে চোরকে বাড়ি লুটপাট করে নিয়ে যেতে দ্যাখেন, ঘুমের মধ্যেই চেঁচান; জেগে থাকলে, সে যে অবস্থাতেই থাকুন, লুঙ্গি কষে “চোর” শব্দের উৎপত্তিস্থলের দিকে লাঠি/পাইপ হাতে দৌড়ন। চোরের বড়ই দুর্ভাগ্য যে সে একটি ইশকুল ছুটির দিন বেছে নিয়েছে, মাস্টারমশাইয়ের বাড়িতে সবাই উপস্থিত; দুর্ভাগ্য খুদে মেয়েটারও - এমন রক্তগরম করা ঘটনাসমূহ সে কিছুই জানতে পারছে না, সে তখন মন দিয়ে পাশের বাড়িতে আঁকা শিখছে। বাঘের ক্ষিপ্রটায় লাফ দিয়ে তার ‘বাপি’ উঠোনে এসে পড়ল, চোর কোনমতে পাঁচিল টপকাচ্ছে, বাপিও পাঁচিল টপকাচ্ছে, এই ধরে ফেলল প্রায়... হাত পিছলে গেল, চোর গায়ে জবজবে করে তেল মেখে এসেছে (চোরের বুদ্ধির প্রথম পরিচয়)। এইবার রেগে গিয়ে অমিতাভ বচ্চনকে লজ্জা পাইয়ে একটা ঘুষি ঝাড়ল বাপি, চোরটা মাথা পেতে নিল মাস্টারমশাইয়ের ঘুষি, চকচকে ন্যাড়া মাথা ( চোরের বুদ্ধির দ্বিতীয় পরিচয়)। “উঃ, বাবা রে” !

    সন্ধেবেলা বাপি তার দাদার সাথে ডাক্তারখানায় বসে, হাত ভেঙ্গে গ্যাছে! খুদে মেয়েটা আঁকা শিখে এসে যখন সব শুনল, ততক্ষণে সব অ্যাকশন খতম। কিন্তু তারপর যত লোকে বাপিকে জিজ্ঞেস করেছে “হ্যাঁ রে, হাত ভাঙল কি করে?”, বাপিকে একদম কিচ্ছুটি বলতে না দিয়ে হুবহু ছবির মত বর্ণনা যখন খুদেটা দিয়েছিল, কেউ কিন্তু বুঝতেও পারে নি এসব সেকন্ড হ্যান্ড! হুঁ হুঁ বাবা, ঘুমকাতুরে হলে কি হবে, এদিকে সেয়ানা!

    যাই হোক, পাঠক ভুলে যাবেন না, এ কিন্তু চোর ঠ্যাঙানোর গল্প নয়, এ গল্প নানারকম জমকাল হাতভাঙার গল্প, যার বাকিটা থমকে আছে বড়দাদার বাইসাইকেল কিকে। তো হয়েছিল কি বাইসাইকেল কিকটা বড়দাদা একদম রোনাল্ডোর মত মেরে গোলকিপারকে হুব্বা করে গোলটা তো করে দিয়েছিল, কিন্তু পড়েছিল নিজের হাতের ওপর। বাথরুমে হড়কে নিজের হাতের ওপর পড়ার চাইতে এইভাবে নিজের হাতের ওপর পড়া কতটা গৌরবের ব্যাপার তা বুঝতে না পারলে এই গল্প পড়াই আপনার বৃথা। বাড়ি এসে একটু ব্যথা করছে না গোছের হাবভাব নিয়ে ওই ফুটবল খেলতে গিয়ে হাতটা একটু ভেঙ্গে গেল বলা, ভাই বোনেদের হাঁ করে প্রতিটা কথা গেলা এবং শ্রদ্ধামিশ্রিত চোখে তাকিয়ে থাকা উপভোগ করা - এসব কার জীবনে রোজ রোজ ঘটে! গোলের উত্তেজনায় খুদে মেয়ের বড়দাদা টের পেতেও সময় নিয়েছিল যে হাতটা বুঝি ভেঙ্গে গেল। বাড়িতে এসে ঠাণ্ডা মাথার বড়দা খুব শান্ত হয়ে সবাইকে জানিয়েছিল - দেখেই বুঝলাম তারপর যে কব্জির হাড়টা ভেঙ্গে গেছে! ততদিনে সেই মেয়েটা একটু উঁচু ক্লাসে পড়ে, বড়দার প্লাস্টার করা হাতে স্কেচপেন দিয়ে আঁকিবুঁকি কাটা, “বাইসাইকেল কিক” লিখে একটা তীরচিহ্ন দিয়ে প্লাস্টার করার কারণ বোঝান ইত্যাদি কাজে ছোড়দাকে সাহায্য করার মত বড় সে তখন। সে তখনো ছোটবেলার মত বকরবকরে ওস্তাদ, গল্প বলায় ওস্তাদ। সে গল্প বলে, আবার বাক্সে যত্ন করে জমিয়েও রাখে; যাতে করে অনেক অনেক দিন পরে সেই বাড়ি সেই পাঁচিল সেই বাগান থেকে অনেক অনেক দূরে একজন মন খারাপের সময় সেই বাক্সটা মাঝে মাঝে খুলে দেখতে পারে- খুললেই বাক্স ভর্তি গল্প হুড়মুড় করে ছড়িয়ে পড়ে, হাত ভাঙ্গার গল্প, রাত জেগে নামতা শেখার গল্প, সোয়েটারের গল্প, মায়ের সাথে মারপিটের গল্প, পা টিপে টিপে চলার গল্প, দাদুর সাথে বসে বসে রেডিওতে শোনা ধাঁধার উত্তর বের করার গল্প...। গল্পগুলো আবছা হয়ে বাক্স থেকে কপ্পুরের মত মিলিয়ে যাওয়ার আগে এক এক করে গল্পগুলো লিখতে থাকে সে।
  • পুপে | 1278.198.67.98 | ১৫ জুন ২০১৮ ১৪:১৩377386
  • আর কার কি ছোটবেলার গল্প মনে পড়ে লিখে ফেলুন এই টইতে।
  • π | ১৫ জুন ২০১৮ ২০:১৪377390
  • আরে, খুকীর গল্প দারুণ তো!!
  • Du | 237812.58.121212.30 | ১৬ জুন ২০১৮ ০১:৪২377391
  • ওরে বাবারে মরে গেলাম রে এ গল্প আগে কখনো পড়িনি তো ঃ))))
  • বিপ্লব রহমান | ১৬ জুন ২০১৮ ০৪:৫৮377392
  • উফ! সে কি উত্তেজনা! বাপির হাত ভাংগার গল্পটি সেরম থ্রিল।

    তারপর??
  • বিপ্লব রহমান | ১৬ জুন ২০১৮ ১৩:১০377393
  • গুরুব্লগে একবার লিখেছিলাম। সেটাই এখানে কপি-পেস্ট করে দিচ্ছি। :)
    ~`~~~~~~~~~

    সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস~

    এই জন্মদিনে ট্রেনে চেপে বাড়ি যাচ্ছি মা'র সংগে দেখা করতে। সেই কোন ছোটবেলায় কয়লার ট্রেনে করে বাড়ি যেতাম! তারপর নানা এসি বাস এল, রাস্তা হলো, ঘাট হলো, উন্নয়ন আর হলো না। বার বার শৈশবের কথা মনে পড়ছে।

    খুব ছোট বেলায় একবার দাদুবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছি। তখন আমার বয়স কত আর হবে, ধরা যাক, ছয় কি সাত। দাদু বাড়ি হচ্ছে সিরাজগজ্ঞের এক প্রত্যন্ত গ্রামে। তিনি ছিলেন ব্রিটিশের এক জাঁদরেল দারোগা। তার বাড়িটা খুব সুন্দর, একবারে ব্রিটিশ আমলের লাল ইটের খিলান করা একতলা পাকাবাড়ি। বাড়ির সামনে দিগন্তজোড়া সর্ষে ফুলের ক্ষেত।

    এক অলস দুপুরে সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেলাম সেই সর্ষেফুলের ক্ষেতে। জীবনে সেই প্রথম সর্ষে ফুল দেখা। আমি তো একসঙ্গে এতো ফুলের সমারোহ দেখে খুশীতে একেবারে আত্নহারা। আর না চাইতেই হলুদ হলুদ ফুলের রেনু লেগে যাচ্ছে আমার চোখে, মুখে, এমনকি নীল ফানেলের শার্টেও।...

    ভাবলাম, কিছু ফুল ছিঁড়ে পকেটে করে নিয়ে যাই, বাড়ির সবাইকে দেখাবো আমার এই মহা আবিস্কার।

    হঠাৎ কোথা থেকে যেনো বোমারু বিমানের মতো উড়ে এলো আশ্চর্য সুন্দর ঝাঁক ঝাঁক সোনালী রঙের কিছু পোকা। সেইসব পোকা দেখেও আমি ভীষণ খুশী। আবার ভাবলাম, এসব পোকাও কিছু ধরে নিয়ে যাই, বাসার সবাইকে দেখাবো।

    অনায়াসে ধরেও ফেললাম কয়েকটাকে, পকেটে পুরতে থাকি সে সব আবিস্কার।

    আসলে সেই সব পোকা ছিলো মৌমাছি ঝাঁক, হুলে যার তীব্র বিষ!

    এদিকে একপাশে দাঁড়িয়ে আমার কাণ্ড কারখানা অবাক হয়ে দেখছিলো এক হতদরিদ্র কৃষাণ। সে ছিলো দাদুবাড়ির বাঁধা দিনমজুর, কামলা আর কি।

    আমাকে কিন্তু সে ঠিকই চিনেছে, আমি শহর থেকে বেড়াতে আসা এক পুঁচকে, ডাক সাইটের মিজান দারোগার নাতি -- ইত্যাদি ।

    সেই কামলা এক দৌড়ে আমাকে মৌমাছির কবল থেকে 'উদ্ধার' করে কোলে করে পৌঁছে দেয় দাদু বাড়ি।

    বোকা চাষা অতি ক্ষমতাধর গ্রাম্য জোতদারের একেবারে শেষ উত্তরসূরীকে চিনেছিলো ঠিকই। কিন্তু ব্যাটা খবর রাখেনি হায়, বালক মনের তীব্র উল্লাসের!

    ধূসর শৈশবের সেই স্বপ্নমাখা টুকরো স্মৃতির পাজল, এই আমি এখন এত বছর পর আবার জোড়া দিতে বসেছি। জাগতিক বিবিধ কর্দমাক্ত নোংরামি+বিবমিষার বাইরে আমি সমস্ত মনোসংযোগ সংশ্লেষিত করেছি, গ্ল্যাক্সো বেবী মিল্ক, ওভালটিন হট চকলেট, আর ক্রিম ক্র্যাকার বিস্কুটের সৌরভমাখা আনন্দময় দিন ফিরিয়ে আনবো বলে।...
  • ফুটকি | 2345.110.125612.169 | ১৬ জুন ২০১৮ ২২:২৩377394
  • আমার ছোটবেলার সবথেকে বড় সমস্যা যেটা ছিল তা হল, আমি বড়ই দুর্ঘটনাপ্রবণ ছিলাম।
    সকালে বাবা অফিস যাবে, খেতে বসেছে, চিৎকার শুরু, নাকে বোতাম ঢুকিয়ে ফেলেছি। তখন ক্লাস ওয়ান বা টু। কোনোমতে নাক ঝেড়ে টেড়ে বোতাম বেরোলো।
    বিকেলে খেলতে গেছি। খানিক পরে মার কাছে খবর গেল, মুনকে নিয়ে ডাক্তারখানায় যাওয়া হচ্ছে, কাকিমা তুমি যাবে? মা তো পড়িমড়ি ছুটলো। মেয়ের কি হল জানতে। গিয়ে দেখল আমি রবির ( রবি না হলেও আমার থেকে বছর ১৫ বড় এবং মিঠুনের মত নাচে পাড়ার সেলিব্রিটি। সবাই তাকে রবি বলে,আমিও) সাইকেলে বসে। অতুল জ্যেঠু চেষ্টা করে আমার পায়ের তলা থেকে একটা বেঁকে ঢুকে যাওয়া তার বার করছে। সেটা মারাত্মক ভাবে ঢুকে যাওয়ায় টেনে বেরোচ্ছে না। আমি সেই অবস্থায় তাঁকে গাইড করে যাচ্ছি, এবার ডানদিকে এবার বাঁদিকে। মা এসে হতভম্ব ভাব কাটতে কাটতেই হঠাৎ তার বেরিয়ে গেল। তারপর অতুল জ্যেঠিমা এসে একটা টেট ভ্যাক দিয়ে দিলেন। তিনি নার্স ছিলেন। মা ভ্যাবাচাকা অবস্থায় আমাকে নিয়ে বাড়ি ঢুকলো।
    সারা পাড়া পেয়ারা গাছে চড়লাম। পড়ে হাত ফুলিয়ে বাড়ি ঢুকলাম আমি।
    পরের দিকে ওই হাত পা কাটা অবস্থায় মা এমন পিটিয়ে দিত যে সোজা বাড়ি ফিরতাম না। আশপাশের বাড়ি থেকে ডেটল, লাল ওষুধ লাগিয়ে বাড়ি ঢুকতাম।
  • π | ১৬ জুন ২০১৮ ২৩:৪১377395
  • আরে এইসব আক্সিডেন্টের গল্প পড়ে কত গল্প মনে পড়ে গেল!
  • পুপে | 1278.198.67.98 | ১৭ জুন ২০১৮ ০২:১০377396
  • সিরাজগঞ্জ এপিসোডটা তো দারুণ। বাকি পাজল্গুলো জোড়া লাগলে এখানে সাজিয়ে দিয়ে যাবেন! :)
    তার পর আর কি, চোর ঘুষি খেয়ে পুঁটলি ফেলে চোঁ চা দৌড়।

    ফুটকিদি, পপিন্স-ও এমনি নাকি? :-o
  • পুপে | 1278.198.67.98 | ১৭ জুন ২০১৮ ০২:১১377376
  • পাই-দি, মনে পড়ে গেলই যখন এক-দু পিস বলে যাও।
  • বিপ্লব রহমান | ১৭ জুন ২০১৮ ০৮:১৪377377
  • বাপ্রে!

    ফুটকির কি সাংঘাতিক এক্সিডেন্টাল শৈশব! একেই বুঝি "বাচ্চা ভয়ংকর, কাচ্চা ভয়ংকর" বলে? :পি

    পাই দিদি,

    এইবার আপনার গল্পের ঝাঁপি খুলুন; জনতার দাবি।
  • বিপ্লব রহমান | ১৯ জুন ২০১৮ ০৬:৩১377378
  • সাইকেলবাজী
    ---------------------
    সাতের দশকে ঢাকার মোহাম্মাদপুরে প্রাইমারি ইস্কুলে পড়ি। খুব দুষ্টু না হলেও শান্তিশিষ্ট লেজ বিশিষ্ট ছিলাম না একেবারেই।

    মা ছিলেন রেডিও অফিসের আপার ক্লার্ক। ছুটির দিনে (তখন রোববার) অফিসের পিয়ান মামুরা সাইকেল চড়ে আসতেন। তারা বাজার সদাই করে দিতেন। গ্রামের বাড়ি থেকে আমার জন্য নিয়ে আসতেন আম-কাঁঠাল বা মৌসুমের কোনো ফল। তাদের কাছে নানা আব্দার ছিল আমার।

    তবে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল পিয়ন মামুদের সাইকেল। ইয়া বড় কালো চকচকে চায়নিজ সাইকেলের কোনটির নাম- হারকিউলিস, কোনটির নাম- ফনিক্স।

    বালক বেলায় সিটে বসে ওইসব প্রকাণ্ড সাইকেলের প্যাডেলের নাগাল পাওয়ার প্রশ্নই আসে না। ব্রেক কষে মাটিতে পা ঠেকিয়ে নামার বা ব্যালান্স করা তো দূরের কথা।

    তবু সাইকেলবাজীতে এতোটুকু বিঘ্ন ঘটেনি। তেমন কিছুই নয় দুই হাতল ধরে খানিকটা দৌড়ে স্পিড তুলে সাইকেলে দুই চাকার মাঝের ত্রিকোন রডের ভেতরে পা গলিয়ে হাফ প্যাডেল মেরে সাইকেল চালাতাম।

    পাড়ার কোনো এক বড় ভাই বোধহয় অভিনব এই কায়দাটি শিখিয়েছিলেন। এই কসরতে সাইকেল চালানোর সমস্যা একটাই, খুব বেশী স্পিড দেওয়া যেত না। আর ব্রেক কষলে লাফিয়ে নামতে হতো। :)

    চোখ বুজলে মাইনাস চশমার, হাফ প্যান্ট পড়া, হাফ প্যাডেলে সেই বালকটিকে যেন এখনো দেখতে পাই!...

    আরো কিছু পরে তিন চাকার বেবি সাইকেল ও বড়দের বিশাল আকৃতির সাইকেলের বাইরে মাঝারি আকৃতির রঙ-বেরঙের হাল্কা চাইনিজ সাইকেল বাজারে আসে। এ সব সাইকেলের সিট ও হাতল উঁচু-নিচু করে হাইট অ্যাডজাস্ট করা যেতো।

    যখন হাই স্কুলে পড়ি, তখন অনেক সহপাঠীই এই রকম সাইকেলে করে স্কুলে আসতো। একেকদিন তাদের কারো সাইকেল ধার করে কিছুটা হাত মকশ করতাম।

    বাড়িতে অনেক বায়না করেও ওই রকম একটি সাইকেল পাইনি। আসলে অত দামি জিনিষ কিনে দেওয়ার সামর্থ বাবা-মার ছিল না। বরাবরই স্কুল-কলেজে পায়ে হেঁটে যাতায়ত করতাম। রিকশা বা বাসে চড়ার কথা কখনো ভাবিনি। শুধু মাত্র ফাইনাল পরীক্ষার সময় কখনো রিকশা ভাড়া পেতাম।...
  • ফুটকি | 2345.110.125612.58 | ১৯ জুন ২০১৮ ০৬:৫৬377380
  • হেহেহেহে। পপিন্স আমার থেকে ঢের বেশি শান্ত। ভদ্রলোক টাইপ।
    আর সত্যিই আমি ওই "বাচ্চা ভয়ংকর" ক্যাটেগোরীতে আসবো। :-)
  • ফুটকি | 2345.110.125612.58 | ১৯ জুন ২০১৮ ০৬:৫৬377379
  • হেহেহেহে। পপিন্স আমার থেকে ঢের বেশি শান্ত। ভদ্রলোক টাইপ।
    আর সত্যিই আমি ওই "বাচ্চা ভয়ংকর" ক্যাটেগোরীতে আসবো। :-)
  • বিপ্লব রহমান | ১৯ জুন ২০১৮ ১৮:৩৩377381
  • আরেকখানি কপি-পেস্ট, আরেক টই হইতে
    ~~~~~~~~~~
    হট প্যাটিস!
    -----------------
    সাতের দশকে শৈশবের সেই অপূর্ব স্বপ্নপুরীর ঢাকায় সন্ধ্যা নামিবা মাত্র বিচিত্র সব হকারের দল আমাদের কচিকাঁচাদের পড়াশুনা মাথায় তুলিবার জন্য যেন মরিয়া হইয়া উঠিত।

    লোডশেডিং সেই কালে অহরাত্র বিষয়। তাই বিকাল হইবামাত্র আমাদের অন্যতম ডিউটি ছিল বাসার ছোট-বড় সব হ্যারিকেনের চিমনী পরিস্কার করিয়া, সলিতা, কেরোসিন ইত্যাদি ঠিকঠাক করা।

    তখনো ঢাকায় সাপ্লইয়ের গ্যাস চালু হয় নাই। কেরোসিনের চুলাই ছিল ভরসা। কেরোসিন দুর্মূল্য হইলে নকশাল বড়ভ্রাতা (গত বছর প্রয়াত, মানব ভাই) স্টেনগান ঠেকাইয়া ব্ল্যাকারদের কাছ হইতে দুই ড্রাম কোরোসিন আনিয়াছিলেন, এখনো মনে আছে। ইহার পরেও মা জননী ব্যাক আপ হিসেবে খড়ির তোলা উনুনের বন্দোবস্ত রাখিয়াছিলেন।

    এখন এই সোলার চার্জার, ইলেক্টিক চুল্লি বা মাইক্রো অভেনের যুগে খুব রূপকথা মনে হইতেছে কী? আমার নিজেরই প্রযুক্তির এই উল্লম্ফনে ঘোর কাটে না!

    শিবের গীত অনেক হইয়াছে, এখন বিষয়ে আসি।

    একেক সন্ধ্যায় সুর করিয়া দুলিয়া দুলিয়া নামতা পড়িবার কালে লোড শেডিং আবশ্যক ছিল। সঙ্গে সঙ্গে আগে হইতে শিখা কমাইয়া রাখা হ্যারিকেন ঘরে ঘরে জ্বলিয়া উঠিত। চালু হইতো গ্রাম হইতে আনা বাহারী নকশা তালপাখা! তাহার কোনটিতে লজ্জাবনত ঘোমটা পড়া বালিকা বধূর মুখোচ্ছবি, কোনটিতে নৌকা বাইচ, কোনোটিতে ফুল-ফল-লতা-পাতা আঁকা থাকিত। পড়ায় ফাঁকি দিবার জন্য, দুষ্টুমী করিবার জন্য কতোদিন রেডিও অফিসের কেরানী মা-জননীর কাছে সেই হাতপাখার ডাঁটির বাড়ি খাইয়াছি!

    তো বিদ্যুতে বিঘ্ন ঘটিবার মাত্র হ্যারিকেন ঘিরিয়া জড়ো হইতো নানান ধরণের আলোর পোকা। উঁই পোকা উড়িয়া আসিবামাত্র মা তাহার কলিকাতার ইস্কুলের শিশুশ্রেণীর বচন কহিতেন, ‘উলি পোকার পাখা গজায়, মরিবার তরে!’

    আর আমাদিগের মন চলিয়া যাইতো জানালার বাহিরে, সেই হকার, লোড শেডিঙের ঢাকার গলিপথে গামছা বাধা আলোকোজ্বল আশ্চর্য কাঁচের বাক্স কাঁধে, মুখের কাছে হাত গোল করিয়া কেবলই হাঁকিয়া চলিয়াছে, ‘এই হট প্যাটিস! আছে হট প্যাটিস! নেবেন হট প্যাটিস?’…

    আর কিছুই না, সব্জির পুর দেওয়া মুচমুচে প্যাটিস মাত্র, ছোটগুলো টাকায় দুইটি, বড়গুলো টাকায় একটি মেলে। এই সুখাদ্যের আকর্ষণ তাহার আধার বাক্সে। কাঁচের চৌকোনা বাক্সের আলোকজ্জ্বল বাক্সখানিই ছিল আসল আকর্ষণ!

    মা জননীর আঁচল ধরিয়া, অনবরত ঘ্যানঘ্যান করিয়া, এমনকি কখনো হাতপাখার ডাঁটির বাড়ি স্বীকার করিয়া আমরা হকার ডাকিয়া খবরের কাগজের চৌকো টুকরায় কিনিতাম একেকটি বেহেশতি মেওয়া-- হট প্যাটিস! বাড়ির চায়ের কাপে হকার মামু দিতেন তেঁতুল গোলা, হালের সস বলিতে যাহা বোঝায়, তাহাই।

    আবারো কৈশরের বারান্দায় উঠিবামাত্র ডিকোড করিয়াছিলাম ‘হট প্যাটিস রহস্য’।

    সে আর কিছুই নহে, একটি আনুভৌমিক টিনের বাক্সের তিনদিক কাটিয়া কাঁচ বসানো হইতো ভেতরের খাদ্য বস্তুটিকে (হট প্যাটিস) দৃশ্যমান করিতে। প্রয়োজনে ভেতরে জ্বালানো হইতো ছোট্ট একখানি মোম।

    বাক্সখানির ছাদের ঘরে ছোট ছোট ঝিরি ফুটা থাকিত হাওয়া চলাচলের জন্য। আর ‘হট প্যাটিস’ সত্য সত্যই ‘হট’ রাখিবার জন্য বাক্সের তলদেশে থাকিত এক ড্রয়ার। সেই টিনের ট্রে খানিতে রাখা হইতো গনগনে কাঠকয়লা, যাহা আবার সচল রাখিতো তুষের অভাবে সেই স’মিলের কাঠের গুড়া!
  • বিপ্লব রহমান | ২৭ জুন ২০১৮ ০০:২৫377382
  • *সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ:

    এই লেখার সমস্ত ঘটনা ও চরিত্র বাস্তবিক। বাস্তবতার সহিত অমিল নিছকই কাকতালীয় মাত্র!
    ~~~~~~
    শিরোনামহীন
    আম পাতা জোড়া জোড়া

    তৎকালে লোকে প্রেমকে লাইন বলিতো। আমাদিগকে বলা হইয়াছিলো, ইহা ভালো নয়। ভাবেসাবে আমরা বুঝিয়াছিলাম, লাইন একটি বখাটেপনা, সামাজিক অপরাধ বিশেষ। …

    এই ঢাকা তখন সেই ঢাকা ছিলো না। ফুলবাড়িয়াতে ছিলো রেল স্টেশন। রিকশাই ছিলো সর্বত্র জনপ্রিয় বাহন। ইপিআরটিসি’র লাল দোতলা বাস বিআরটিসি হইয়াছে মাত্র। বাবার হাত ধরিয়া সেই দোতলা বাসে চাপিয়া মিরপুর-ফুলবাড়িয়া ভ্রমন করিয়া জীবনকে মনে হইয়াছিলো সার্থক। রমনা পার্কের দোলনায় আবার কবে চড়িবো, সেই ভাবনায় ছোট্ট শিশু মন কতই না রঙিন স্বপ্ন আঁকিয়াছিলো। …কিন্তু ‘ছেলেধরা’ নামক আতঙ্কে আমাদের ঘরে বন্দি থাকিতে হইতো। গ্রাম হইতে আসা ‘কামলা’ অমুক ভাইয়ের হাত ধরিয়া ইস্কুল-বাসা-দোতলা বাসার ছাদ অবধি ছিলো আমাদের দৌরাত্ন।

    আমরা শিশু পাঠ্যে পড়িয়াছিলাম:

    আম-পাতা জোড়া জোড়া
    মারবো চাবুক চলবে ঘোড়া
    ওরে বুবু সরে দাঁড়া
    আসছে আমার পাগলা ঘোড়া…

    এবং

    হাতেম ভাই হাতি চড়ে,
    বাঘ-ভাল্লুক শিকার করে …

    এবং

    আমাদের ছোট নদী
    চলে বাঁকে বাঁকে…

    আর ‘সিলভার বেলস-এর রাইম:

    টুইঙ্কেল টুইঙ্কেল লিটল স্টার…

    ফ্রাস্টেশন! ফ্রাস্টেশন!

    তৎকালে রাজ্জাক-শাবানা, ববিতা-জাফর ইকবাল হিট করিতে শুরু করিয়াছে। বড় ভ্রাতা ও ভগ্নিগণ ‘সিনেমা’ , ‘চিত্রালী’ , ‘বিচিত্রা’ পড়িবার জন্য হা-পিত্যেশ করিতেন।

    তাহাদের বিনোদনের জন্য বলাকা, মধুমিতা, গুলিস্তান সিনেমা হল ছিলো আদর্শ। বায়না ধরিয়া, তাহাদের হাত ধরিয়া হাফ টিকিটে দু-একটা সিনেমা দেখিতে গিয়া জানিয়াছি, সাদা-কালো চলচ্চিত্র তখন ‘বই’ হইয়া উঠিয়াছিলো। ইহাতে লাইনের গুনগান থাকিলেও নায়ক-নায়িকার জাপ্ট-জাপ্টির বাইরে ঘনিষ্টতা বুঝানো হইতো দুইটি পাখি উড়িয়া যাইবার অথবা হংস-মিথুন জলকেলি দৃশ্য দ্বারা। এইসব বইতে অবশ্য ‘উজ্জত লুটিয়া লইবার’ দৃশ্য শাড়ির আঁচল টানিয়া ব্লাউজ ছেঁড়া অবধি গড়াইতো!

    তখন কী আর জানিতাম ছাই, লাইন ছাড়া গাড়ি চলে না। অথবা কবি যেমন বলেন, ভালবাসা কৃষিকাজ নহে, ইহাতেও রহিয়াছে যুদ্ধরীতি, ইহারও কুটনীতি, হিসাব-কিতাব আছে।…

    লম্বা চুল রাখিয়া, বেল-বটম প্যান্ট পড়িয়া, ‘মোর’ সিগারেট ফুঁকিতে ফুঁকিতে প্লাস্টিকের লং প্লে রেকর্ডারে বড় ভ্রাতা শুনিতেন আজম খান:

    ফ্রাস্টেশন! ফ্রাস্টেশন!
    জ্বালা, জ্বালা, জ্বালা শুধু মনেরই,
    জ্বালা, জ্বালা, জ্বালা শুধু প্রাণেরই।…

    সে সময় নূরা পাগলা হাইকোর্টের মাজারে নাকি আস্তানা গাড়িয়া তরুণ প্রজন্মের ভেতর গাঁজার মজা ছড়াইয়াছিলেন। তাহার ছালাটি নাকি নিলামে বিকিয়াছিলো ১০০ টাকায়! আজাম খান আবার গাহিয়াছিলেন:

    হাইকোর্টের মাজারে
    কতো ফকির ঘোরে
    কয়জনা আসলও ফকির?

    প্রেমেরও বাজারে
    কতো প্রেমিক ঘোরে
    কয়জনা আসলও প্রেমিক?…

    এসো লড়বে যদি

    সে যাহাই হোক। এই সবই ব্লগর ব্লগর, মূল কথনের বাই-লাইন মাত্র।

    পাঠকের হয়তো মনে পড়িবে, তৎকালে আমাদের কচিকাঁচাদের প্রায় হাতের নাগালের বাইরে ছিলো গল্প-উপন্যাস। পাঠ্য বইয়ের বাইরে ইহাদের বলা হইতো ‘আউট বই’। তো নাটক-নভেল বা আউট বই আমাদের জন্য ছিলো দুস্প্রাপ্য। ইহারা সবই মা, খালা, মাসি-পিসিরাই দখল করিয়া রাখিতো। মলাট দিয়া পড়া হইতো নিহার রঞ্জন, আশুতোষ, ফাল্গুনী, নিমাই ভট্টাচার্য…। অন্যান্য পত্র-পত্রিকার সহিত বাবা নিয়মিত রাখিতেন ‘উল্টোরথ’। রবিবার ছুটির দিনের দুপুরে আকাশবানী কলিকাতার নাটক শোনা হইতো পান-দোক্তা মুখে লইয়া। রেডিও টিউনিং-এ আমার বিশেষ দক্ষতা ছিলো।

    সেই সময় আমরা যাহারা ইঁচড়ে পাকা, অক্ষর চিনিবামাত্র বই গিলিতে শুরু করি, তারা শিশুপাঠ্য তেমন কিছু না পাইয়া শুরু করিয়াছিলাম বড়-ভাইবোনোর পাঠ্যবই পাঠ। বিজ্ঞানের বইয়ে ফিতা কৃমি, জবা ফুলের পরাগায়ন, ব্যাঙ ও আরশোলার শরীর ব্যবচ্ছেদ — ইত্যাদি ছবি দেখিয়া, লেখা পড়িয়া, খানিকটা অস্পষ্ট বুঝিয়া ও বেশীরভাগই না বুঝিয়া নানান প্রশ্নবানে বড়দের উত্যাক্ত করিতাম এবং ‘গোবেট’ এর মতো উপাধীতে অহরহই চিহ্নিত হইতাম।

    মনে পড়িবে নিশ্চয়ই, বড়দের ওই পাঠ্য বইয়ে শরৎবাবুর নতুনদা’র গল্পখানি বেশ লাগিয়াছিলো। তাহাতে একটা লাইন ছিলো অনেকটা এই রকম:

    আমি ডাকিলাম, নতুন দা! নতুন দা এক গলা পানিতে হইতে জবাব দিলেন, এই যে। তাহারপর নৌকায় উঠিয়া তিনি হাহাকার করিয়া উঠিলেন, আমার ড়্যাপার? পাম্প শ্যু?…

    তাহার এই দুরাবস্থার কথা কল্পনা করিয়া মনে মনে খুশী হইয়াছিলাম। এখন বোঝ ব্যাটা অহেতুক পাওয়ার দেখাইবার ফল!

    তৎকালে বিশ্ববিখ্যাত মুষ্ঠিযোদ্ধা মোহাম্মাদ আলি এই পোড়া শহরে পদধূলি রাখিয়াছিলেন। ঢাকা স্টেডিয়ামে মোহাম্মাদ আলির প্রদর্শনী দেখিয়া বড় ভ্রাতা বাড়ির উঠানে ( জ্বি মশাই, উঠান। তখনও ঢাকার এক তলা – দোতলা বাড়িতে এই উঠান ও চৌবাচ্চা বস্তুটি একেবারে বিরল ছিলো না।) বালুর বস্তা ঝুলাইয়া, ঘুষোঘুষি প্র্যাকটিস করিয়া দুই হাতে ফোস্কা ফেলিয়াছিলেন। মোহাম্মাদ আলির মুসলমান হইবার কাহিনী লোকমুখে ফিরিতো। তখন মাস দুই ধরিয়া রেডিও গান বাজিয়াছিলো:

    সে মোহাম্মাদ
    সে মোহাম্মাদ আলি
    এসো লড়বে যদি।…

    my-pix-biplob

    কি চমৎকার দেখা গেলো

    ভোরবেলা বাবা রেডিওতে বিবিসি’র খবর শুনিতেন। সকাল সকাল আব্দুল আলীম গান ধরিতেন:

    চিরদিন পুষিলাম এক অচিন পাখি
    ভেদ পরিচয় দেয় না আমায়
    ওই খেদে ঝরে আঁখি।

    পোষা পাখি চিনলাম না
    এই দুঃখ তো গেলো না
    আমি উপায় কি করি?

    একবার চেনাল পেলে চিনে নিতাম
    যেতো মনের ধুক-ধুকি।…

    অথবা

    দুয়ারে আইসাছে রে পাল্কি
    নাইওরে দ্বার খোলো রে খোলো মুমিন
    আল্লা-রসুল সবে বলো।…

    বিস্মৃত আরেক শিল্পীর নাকী গলার আরেকটা গানের কথা মনে পড়িয়া যায়:

    শুনো মমিন মুসলমানো
    করি আমি নিবেদনো
    এ দুনিয়া ফানা হবে জেনেও জানো না।

    ইস্রায়েল ফেরেশতা যবে
    শিঙ্গাতে ফুকিবেন তবে
    ইয়া নফসি, ইয়া নফসি পড়িবেন সবাই।

    নেকী লোক আছেন যারা,
    নূরের ছায়া পাবেন তারা। …

    আরো পরে ইস্কুলের নীচু ক্লাসে থাকিতেই সাদা-কালো টিভি আসে পাশের বাড়িতে। দুই পাল্লার সাটার দেওয়া সেই টিভি দেখিতে সন্ধ্যা বেলায় ভীড় জমাইতাম মেঝেতে মাদুর পাতিয়া। টারজানের ডাক অবিকল নকল করিয়া বাড়ি মাথায় করিতাম। ‘ক্যাসপার–দি কার্টুন শো’ ছিলো জীবনের অধিক প্রিয়।

    হঠাৎ একেকদিন চাল ভাজা, বাদাম ভাজা, হট প্যাটিস ও ফুচকাই ছিলো আমাদের ফার্স্ট ফুড। মাথায় করিয়া বিক্রি হওয়া বরফ ও কুলপি আইসক্রিম, ‘তারপরেতে কী হইলো? রাজা বলো-মন্ত্রী বলো’ বুলিসহ হাতল ঘোরানো বায়েস্কোপ, কালো কাপড়ের আস্তরের ভেতর মাথা ঢুকাইয়া তাৎক্ষনিক ছবি তুলিয়া দিতে সক্ষম ভ্রাম্যমান বক্স ক্যামেরাম্যান, গাছ তলার নাপিত, সার্কাসের ওয়ান ম্যান শো, বিহারী বানরওয়ালা প্রমুখগণ বিনোদন বিলাইতো প্রচুর।

    সেই সময় ছাদে উঠিয়া বাল্ব গুঁড়া করিয়া ভাতের মার সহযোগে সুতায় মাঞ্জা দিয়া ঘুড়ি উড়াইবার আনন্দ ছিলো। শবে বরাত কী চাঁন রাত্রে দোকান হইতে বোমা-পটকা কিনিয়া পাড়া কাঁপানো ছিলো স্বাভাবিক। কিশোর বাংলা, বিজ্ঞান সাময়িকী, শাপলা-শালুক, শিশু–ইত্যাদি সাময়িকী পড়িবার জন্য আমাদের আহাজারীর অন্ত ছিলো না। লুকাইয়া সেই বেলায় দস্যু বনহুর, দস্যু বাহারাম, কিরিটি রায়, কুয়াশা এবং কিঞ্চিত পরে মাসুদ রানাও পড়িয়াছি।

    এই সব করিতে করিতে আমাদের শৈশবকাল ঘুচিতে থাকে। আমরা কলেজে উঠিয়া কোনো কোনো ক্লাস মেটের প্লে-বয় ম্যাগাজিনের উত্তেজক ছবি দেখিয়া থাকিবো। ইহার পর রাতারাতি জানিবো নর-নারীর প্রেমলীলার গোপন রহস্য। বন্ধুদের কারো বাসায় ভিসিপিতে দেখিবো নীল ছবি।

    পাপা ডোন্ট প্রিচ, আই অ্যাম নট আ বেবি

    তৎকালে সতিত্ব বলিয়া একটি অস্পষ্ট কথা শুনিয়াছিলাম; কিন্তু শিশু বেলায় ইহার অর্থ বা মর্ম কোনটাই বুঝি নাই। কিশোরী গৃহপরিচারিকা আলেয়া বু’কে লইয়া আমরা কচিকাঁচার দল ছড়া কাটিয়া তাহাকে উত্যাক্ত করিতাম:

    আলেয়া, আলেয়া, ডাক পারি,
    আলেয়া গেছে কার বাড়ি?

    হঠাৎ একদিন সেই আলেয়া বু’কে লইয়া বাড়ির বড়রা রূদ্ধদ্বার বৈঠকে বসিলেন। হাত পাখার ডাঁটি দিয়া সে বেচারাকে খানিক মারধোর করা হইলো। ভাতের সন্ধানে পাষানপুরিতে আসা ফর্সাপানা গাঁয়ের মেয়ে, আমাদের আলেয়া বু’ ফোঁপাইয়া কাঁদিয়াছিলো মাত্র। প্রতিবাদ করে নাই। তাহাকে আমার বাবা ডাক্তার-চিকিৎসা করাইয়াছিলেন। তবে শিগগিরই তাহাকে ছাড়াইয়া দেওয়া হইয়াছিলো।

    বুদ্ধি পাকিবার পর বুঝিতে পারি, ওই সতিত্ব নাশ করিবার দায়ে আলেয়া বু’র ওপর গঞ্জনা আসিয়াছিলো। গলির কোনো বখাটে তাহার সঙ্গে গোপনে লাইন করিয়া বেড়াইতো। বিবাহ করিবার লোভ দেখাইয়া তাহাকে বাড়ির বাহির করিয়া যুবক কিছুদিন এদিক-সেদিক ঘুরিয়া আমোদ-ফূর্তি করিয়া বেড়ায়। পরে একদিন তাহাকে আবার গলির মুখে ছাড়িয়া দিয়া কাটিয়া পড়িয়াছে!

    বড় ভ্রাতার নকশাল-ব্লাড ওই লোফারকে শিক্ষা দিবার জন্য নাচিয়া উঠিয়াছিলো; কিন্তু অনেক করিয়াও তাহার সন্ধান মিলে নাই।…

    এই বেলা আরো বুঝিয়াছি, তৎকালে সতিত্ব নামক ওই অদৃশ্য মহার্ঘ্যটিকে রক্ষা করিবার জন্যই বুঝি অভিভাবকগণ ‘লাইনের’ ওপর খড়গহস্ত ছিলেন। সেই বেলা গর্ভ নিরোধক বড়ি ও বেলুনও প্রসারিত হয় নাই, তাই লাইন লইয়া এতো বাড়াবাড়ি, সতিত্ব লইয়াও এতো কড়াকড়ি।

    এই বেলা বুঝি, এইকালে উচ্চবিত্ত-মধ্যবিত্ত-নিম্ন-মধ্যবিত্ত গর্ভনিরোধক হাতের নাগালেই পাইয়াছে। তাহারা ইস্রায়েল শিঙ্গাটির মিথটিকে ‘বড়দের রূপকথা’ ভাবিতে শিখিয়াছে। তাহার ডিজুস, পিতা-মাতার অঢেল কড়ি উড়াইতে মোটেই নয় কঞ্জুস। হনুমানের ন্যায় পশ্চিমা অনুকরণ> হনুকরণে তাহারা পোশাক-আশাক, চলন-বলন, ফার্স্ট ফুড, পার্টি, বয়/গার্ল ফ্রেন্ড, চিন্তন ও শিক্ষনে পশ্চিমা হইতেছে। ইহা যেন সেই বিদ্যাসাগর মশাই কথিত: ‘দিশি কুত্তার বিলিতি ডাক!’

    ইহার ফলে ক্রমেই সতিত্বের ধারণা হইতেছে ক্ষীণতর; লাইনে উঠিয়াই নায়ক-নায়িকা লাগামহীন; সতিত্ব দূর-অস্ত! আরো বুঝিয়াছি, এই বেলায় লাইন ছাড়া গাড়ি চলে না। নির্ঘাত তাহার পরের কথাসমূহ অনুরূপ:

    মক্কাতে ইঞ্জিনখানা তার
    বাগদাদে বগিখানা
    ওদের খেলা ওরাই বোঝে
    আমরা কিছু বুঝি না
    বুঝি না, বুঝি না।

    লাইন ছাড়া যে গাড়ি চলে না।…

    —---

    মূল লেখাটি এখানে : https://blog.mukto-mona.com/2010/07/04/8469/
  • Du | 7845.184.90012.64 | ২৭ জুন ২০১৮ ০২:২৪377383
  • নানারকম ছোটবেলার গল্প পড়তে ভালো লাগছে।
  • বিপ্লব রহমান | ২৭ জুন ২০১৮ ০৭:০৭377384
  • *সংশোধনী:

    মস্তক টিকায় "বাস্তব" ও "কাকতাল" হইবে।
  • বিপ্লব রহমান | ২৭ জুন ২০১৮ ১১:৪০377385
  • সাপের খেলা, বানর নাচ
    -------------------------------------
    প্রাইমারীতে পড়িবারকালে একাই পথ চিনিয়া হাটিয়া বাড়ি ফিরিতাম। দুরত্ব নেহাত কম ছিল না। ছয়-সাত কিলোমিটার তো হইবেই।

    তখন ঢাকার মোহাম্মদপুর এতো ঘিঞ্জি এলাকা হয় নাই। রাশি রাশি ফ্ল্যাট বাড়ি, চকচকে দোকান, ফাস্টফুড, কফিশপ ইত্যাদি কিছুই ছিল না। এমন কি চারতলার বেশী উঁচু বাড়ি খুঁজিয়া পা্ওয়াই ছিল দুস্কর। তখনো একতলা ও লাল টালি ছাওয়া বাংলো টাইপ ঘর সেই এলাকায় প্রচুর দেখা যাইতো। আর ছিল বিপুল সংখ্যক আটকে পড়া উর্দুভাষী পাকিস্তানী, যাহাদের ‘বিহারী‘ বলিয়া ডাকা হইতো।

    তো ইস্কুল হইতে ফিরিবার সময় কাঁচা বাজার পড়িত। দুইপাশে নানান রকম দোকানের পসরা দেখিতে দেখিতে কখন রাস্তা ফুরাইয়া আসিত, টের পাইতাম না।

    বাজারের পাশেই ছিল বিশাল একখানি পরিত্যাক্ত মাঠ (এখন ‘শহীদ শাকিল পার্ক‘)। শর্টকার্ট মারিবার জন্য একেকদিন সেই পাঠ পার হইবার সময় বিশাল কৃষ্ণচূড়া গাছের নীচে থমকিয়া দাঁড়াইতাম। ‘জংলি ছাপা‘র শাড়ি পরিয়া, উঁচু খোপায় জবা ফুল গুঁজিয়া ছিপছিপে চেহারার বেদেনীরা সাপের ঝাঁপি খুলিতো।

    সাদাকালো টিভি বা সিনেমার বাইরে সেই প্রথম বেদেনীর দল, বীন বাজাইয়া সাপ খেলা, তাহাদের নানান রকম জটিবুড়ি অষুধ, মাদুলি বিক্রি ইত্যাদি দেখি।

    এখনো মনে আছে, পদ্ম গোখরা সাপ দেখিয়া এতখানি ভীত-সন্ত্রস্ত হইয়াছিলাম যে, ওই রাত্রে দুঃস্বপ্ন দেখিয়াছিলাম।

    একেকদিন ওই মাঠেই বিহারী বানরওয়ালা খেলা দেখাইতো। খেলার মধ্যে ডুগডুগির তালে বানর নাচই প্রধান।
    আরেকটি খেলা ছিল অনেকটা এই রকম: স্বামী মরিয়াছে, তাই স্ত্রী মাথা চাপড়াই আহাজারি করিতেছে। একজোড়া বানর ইহার অভিনয় করিত। পুরুষ বানরটিকে শার্ট-প্যান্ট ও মেয়ে বানরটিকে শাড়ি পরানো হইয়াছিল। বানরওয়ালার ডুগডুগির তালে উহারা মুকাভিনয় খুব খারাপ করে নাই!

    ওই বানর খেলায় প্রচুর আমোদ পাইয়াছিলাম।

    স্বীকার করি, শিকলবন্দী পশুজীবনের কষ্ট বালকমন বোঝে নাই। এমন কি ঝাঁপবন্দি সাপের কষ্ট!
  • বিপ্লব রহমান | ১২ জুলাই ২০১৮ ২২:৫০377387
  • এই টইতে কেহ নাই? কাহারো ছোটবেলার দুঃখ সুখ স্মৃতি নাই??

    আজব!!
  • | 236712.158.8990012.177 | ২৯ আগস্ট ২০১৯ ২২:০৩377389
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই প্রতিক্রিয়া দিন